তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৮

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৮
নীল মণি

ইউভি, আহান… মেজোমা পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পরেই আমি ইউএস ব্যাক করছি।”
জায়নের গলায় স্পষ্ট সিদ্ধান্তের সুর।
তার কথা শেষ হতেই, রুমে যেন মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধতা নেমে এলো। তারপর সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে ইউভি চমকে উঠে বলে উঠল,
“কি বলছো ভাইয়া? মাথা ঠিক আছে তোমার? এভাবে হঠাৎ করে আবার চলে যাবে?”
সাগর তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠল,
“মাথা ঠিক থাকলে ঘুমের ওষুধ খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকত? তোকে দেখেই মনে হচ্ছে, মামা ঘুমের ওষুধ খাইয়া পুরাই বিগড়াইছোস। তুই কি… সু*সাইড করতে গেছিলি?”
একটু থেমে রাগ দেখিয়ে বলল,

“তাইলে আরেকটু বেশি খাইতে পারতি!”
জায়নের চোখে একরাশ ঘৃণা ও শূন্যতা। সাগরের দিকে না তাকিয়েই বলল,
“আমি আত্মহত্যা করতে যাব কেন? আমার মাথা তখন ঠান্ডা করা দরকার ছিল, তাই খেয়েছি। আমি শান্ত না থাকলে হয়তো… কাউকে অশান্ত করে দিতাম।”
এই কথায় রুমের পরিবেশ আরও গম্ভীর হয়ে উঠলো। আহান অবাক চোখে চেয়ে বলে উঠল,
“কি সব বলছিস জায়ন? শেষ করে দিতি! ইউএস যাবি! এসব কথা তোকে মানায়? একটু খুলে বলবি, এসব কি বলছিস?”
এদিকে পলাশ আবার গলা শক্ত করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আর আহান, তুই বলছিলি না এই হা****ম জাদা রাতে কীসব বলছিলি — ‘আমায় ও চাইলো না’, ‘একটু চাইলে কি হতো?’ এসব… আর জায়ন তোর “ও”তো ওই পি…”
পলাশ জায়নের কথা কটাক্ষ করে টেনে নিতে যাচ্ছিল,
“পি…র…”
কিন্তু শেষ করার আগেই জায়ন গর্জে উঠল। চোখে আগুন, কপালে রক্তশিরা ফুলে উঠেছে। ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের হাত থেকে সেলাইন লাইনের ক্যানুলা খুলে ছুড়ে ফেলল।
টপ টপ করে রক্ত গড়িয়ে গেল বিছানায়…….
তারপর যেন গর্জে উঠল,

“আমি ওই নামটা আর শুনতে চাই না! কারো মুখে যদি ওই নাম বা ওর সাথে সম্পর্কিত কিছু শুনি, আমি কিন্তু….. এই আবরার জায়ন আজ থেকে ওর নামটাও শুনতেও চায় না কারো মুখ থেকে।”
আকাশ চমকে গিয়ে বলে উঠল,
“ভাইয়া, কি এমন হলো যে যার জন্য তুমি কাল পর্যন্ত দুনিয়া জ্বালাতে রাজি ছিলি, আজ তার নামটাও শুনতে চাইছো না? এতটা বদলে গেলি এক রাতেই?”
ইউভি তখনো কোনো কথা বলছে না। সে শুধু তাকিয়ে আছে জায়নের দিকে, স্থির দৃষ্টিতে। চোখে প্রশ্ন, ভেতরে বিস্ময়।
মনে মনে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে তার —
“কি এমন ঘটলো ভাইয়ার সঙ্গে? যে বোনের জন্য পাগলের মত করত সে আমার বোনকে পর্যন্ত এখন দেখতে চায় না।”

জায়ন এবার নিচু গলায়, কিন্তু শিরায় বিষ মিশিয়ে বলল,
“আমি আজো দুনিয়া জ্বালিয়ে দেব, কিন্তু ওকে পাওয়ার জন্য না। যেন সে কারো দিকে ফিরেও চাইতে না পারে, তার জন্য। আর শোন, শেষবার বলছি— কেউ যদি আবার ওর নাম তোলে, তার সঙ্গে আমার সমস্ত সম্পর্ক চিরতরে শেষ!”
এইবার ইউভি মাথা নিচু করে আস্তে বলল,
“ভাইয়া… বনু বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। কাল রাত থেকে এক মুহূর্তও তোমার দরজার সামনে থেকে সরেনি।”
এই কথাটা যেন ঘি ঢেলে দিল আগুনে। জায়নের মুখ তাতেই আগুনের মতো জ্বলে উঠল।
চোখে আগুন, কণ্ঠে জ্বালা –
“ইউভি, আমি তোকে পাঁচ মিনিট সময় দিলাম,ওকে নিয়ে এখান থেকে চলে যা — আমার সামনে যেন তোর ওই পাষাণ বোন আর না আসে। যদি চাস তোর বোন বেঁচে থাক , তাহলে দূরে রাখ ওকে তা না হলে আমি ওকে মেরে ফেলব… আর সঙ্গে আমিও মরব।”
তার এমন কথা শুনে সবার মুখ ফ্যাকাশে। ইউভি কিছু বলতে যাচ্ছিল,

“ভাইয়া…”
কিন্তু জায়ন তীব্র কণ্ঠে কেটে দিয়ে বলল —
“ইউভি, পাঁচ মিনিটের এক মিনিট শেষ।”
এই হুমকি শুনে আর দাঁড়াতে সাহস করল না ইউভি। মাথা নিচু করে দ্রুত বেরিয়ে গেল।
পালাশ রীতিমতো চমকে উঠে বলল,
“তোর মাথায় আসলে সমস্যা হয়েছে জায়ন…”
কথা শেষ করার আগেই আহান বলে উঠল,
“তুই ভুল বুঝছিস জায়ন। আমরা নিজের চোখে দেখেছি গতকাল তি…”
কিন্তু তার কথাও জায়ন থামিয়ে দিল, কণ্ঠে বিষাক্ত ক্ষোভ –

“সম্পর্ক রাখতে চাইলে আগে তোর কথাগুলা গিলে ফেল… না হলে তুইও বাদ পড়বি, আহান।”
এরপর আর কেউ কিছু বলল না। ঘরজুড়ে নেমে এলো নিঃশব্দ আতঙ্ক।
” সাগর একটা ভালো দেখে হোটেল বুক কর ৩ দিনের জন্য।”
জায়ন এর এই কথায় সাগর প্রশ্ন করল —
” হোটেল কেন? কার জন্য ?”
জায়ন এত প্রশ্নের উওর আর দিতে চায় না তার নিজের বুকে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন তার মধ্যে এইসব বিরক্ত লাগছে ।

“এত প্রশ্ন করিস কেন তোরা ভাই? যেটা করতে বলেছি কর।”
জায়নের কণ্ঠে ছিল একরকম বিরক্তি আর ক্লান্তি।
আকাশ থেমে গেল না। তার ভেতরের কেমন একটা অস্বস্তি যেন মাথা চাড়া দিল, তাই সাহস করে বলেই ফেলল —
“ভাইয়া, তুমি বাসায় ফিরতে চাও না?”
জায়ন মুখ ঘুরিয়ে একদম সোজা কথায় উত্তর দিল, চোখে কোনোরকম দ্বিধা ছিল না —
“না। মেজো মা ঠিক হওয়া পর্যন্ত এইখানেই একটা হোটেলে উঠবো। তারপর ঢাকা ফিরে ওইদিনই ইউএস ফিরতে চাই। তুই আর ইউভি আমার কিছু জরুরী ডকুমেন্ট ঢাকার বাসায় রেখেছি, সেগুলো দিয়ে যাবি।”
আকাশ আর কিছু বলল না। মাথা নিচু করে শুধু হালকা করে ‘হ্যাঁ’ বলার মতো মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল সে বুঝে গেছে।
তবে তার মনটা বোঝে নি— বোঝে নি সাগর, আহান, আর পলাশের মনও।
সবাই যেন একসাথে থমকে গেল। এত বছর পর যার জন্য অপেক্ষা ছিল, সেই প্রিয় বন্ধুটি যখন কাছে এসেছে— তখন আবারও তাকে হারানোর আশঙ্কায় চারপাশটা ভারী হয়ে উঠল। মনে হলো, এক অদৃশ্য বিচ্ছেদের ঢেউ ছুঁয়ে গেল তাদের বুক।

“আব্বু, আমি বড় আব্বু, বড় আম্মু, তিয়াশা, রায়ান, রিক— সবাইকে বাসায় দিয়ে আবার আসছি,”
ইউভির এই প্রস্তাবে প্রণয় সাহেব একটু মাথা দুলিয়ে শান্ত কণ্ঠে বললেন —
“বেশ ভালো সিদ্ধান্ত।”
কিন্তু এই ভালো সিদ্ধান্ত বললেই যে তা সবাইকে খুশি করে তা কি সত্যি?
একটা মেয়ের মন তীব্র অস্থিরতায় কাঁপছে। বাইরে কিছু বলছে না সে, কিন্তু তার ভিতরটা চিৎকার করছে—
তার মন মানতে পারছে না।

সে তার জায়ন ভাইয়ের মুখটা দেখতে পেল না ঠিকমতো, এমন কেন হচ্ছে?
কেন অজানা অস্থিরতায় তার বুকের গভীরে এক প্রবল চঞ্চলতা ভর করছে,
কেন যেন মনে হচ্ছে, সময় যত এগোচ্ছে, তার জায়ন ভাই যেন ধীরে ধীরে দূরে চলে যাচ্ছে–
“না না ভাইয়া আমি যাবো না। আমি আম্মুর কাছে থাকবো। আমি যাবো না—”
হঠাৎ করেই তিয়াশা বলে উঠল। কণ্ঠে কান্না চেপে রাখা একরাশ জেদ।
প্রান্তিক সাহেব সঙ্গে সঙ্গেই বললেন —

“না আম্মু, এখন তোমাকে যেতেই হবে। তুমি আসতে চাইছিলে, নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন আর শুনবো না।”
তিয়াশা আর কোনো কথা বলল না। বলার মতো সাহসটুকু তখনো জন্মায়নি তার, সে বলতে পারবে —
“না, আমি যেতে চাই না। আমি শুধু একবার জায়ন ভাইকে দেখতে চাই। একবার তাকে তার ভুলটা ভাঙিয়ে দিতে চাই…”
এই একটুখানি চাওয়া— সেটুকুও পূর্ণ হলো না তার।
বাসায় ফেরার আগে একবার জায়নের সঙ্গে দেখা করতে কেবিনে এলেন মেহজাবীন বেগম ও প্রান্তিক সাহেব। চোঁখ গেল ছেলের হাতের দিকে— সেলাইনের পাইপটা খোলা। ছুটে গিয়ে ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে বড় বড় চোখে তাকিয়ে মেহজাবীন বললেন,

“এ কী অবস্থা? এটা খোলা কেন? আহান, ডাক্তারকে ডাক তো!
জায়ন মায়ের মুখে চিন্তার ছাপ দেখে হালকা হাসিতে বলল,
— “মা, কিছু হয় নাই। এই সামান্য একটু ব্যথা। ঠিক হয়ে যাবে। আর এত প্যানিক করো না। বরং, তোমাদের সঙ্গে আমার কিছু দরকারি কথা আছে।”
সাগরদের দিকে তাকিয়ে জায়ান ইশারা করতেই তারা বাইরে চলে গেল।
“বাবা, মা– তোমাদের সঙ্গে কিছু কথা আছে।”
জায়ানের গলায় ছিল এক কঠিন সিদ্ধান্তের ছায়া।
কিন্তু তার আগেই মেহজাবীন বেগম কেঁপে কেঁপে বলে উঠলেন—
“আজ ছিল তোর বিয়ের দিন। অথচ এখন আমরা সবাই হাসপাতালে। বুঝতেই পারিনি বৃষ্টি আম্মু এভাবে চলে যাবে। ইউভি বলেছে, সে নাকি কারো হাত ধরে বাড়ি ছেড়েছে…”

এই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
প্রান্তিক সাহেব কঠোর গলায় বলে উঠলেন—
“ওই মেয়ের নাম যেন আর এই বাড়িতে না ওঠে। যে মেয়ে পরিবারের কথা না ভেবে অন্যের হাত ধরে পালিয়ে যায়, তার নাম উচ্চারণও নিষেধ।”
জায়ান বিস্ময়ে বলল—
“বাবা, কী বলছো এসব? হয়তো তোমাদের এই শাসনের ভয়েই সে নিজের দাবিটা রাখতে পারেনি।”
“আমি কিছু শুনতে চাই না। যা বলার, বলো। এই নিয়ে আর একটা কথাও না।”
জায়ান নিজের আবেগ দমন করে শান্ত স্বরে বলল—
“আমি ইউএস ব্যাক করছি। তিন-চার দিনের মধ্যে একটা জরুরি কাজ এসেছে। আমাকে যেতেই হবে।”
এই কথা শুনে দুজনেই থমকে গেলেন।
মেহজাবীন বেগম কাঁপা গলায় বললেন–

“কোন কাজ? কেন যাবি? তো তোর তো যাওয়ার কথা ছিল না! এখন আবার কী এমন এলো যে যেতে হবে?”
তুই তো সব ছেড়ে দেশে ফিরছিলি! এখন আবার কেন যাবি?”
প্রান্তিক সাহেব বললেন–
“ইউএস থেকে তো এমন কোনো ডাকে আসার কথা না, যে তোকে হঠাৎ যেতে হবে?”
জায়ান জবাব দিল–
“এইটা আমার পার্সোনাল কাজ, বাবা। অফিসের সাথে রিলেটেড না। আমার নতুন গেমিং প্রজেক্টের কাজ। দেশে আসার আগে তোমার সাথেই তো আলোচনা করেছিলাম।”
মেহজাবীন বেগম রেগে গিয়ে বললেন–
“যে কাজই হোক না কেন, আমি যেতে দেবো না! সব বাতিল করে দে। আমি আমার ছেলে ছাড়া দশ বছর কাটিয়েছি, আর না!”

প্রান্তিক সাহেব কিছু ভেবে বললেন–
“যেতে দাও ওকে, বাধা দিও না বেগম।”
“না, আমি যেতে দিবো না কিছুতেই না!”
“মা, প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। আমাকে যেতেই হবে। না গেলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।”
এক মা ছেলের ক্ষতি হোক তা কখনো চায় না তাই না পেরে ছেলের কাছে হার মানতে হলো।
“আমি এই দুদিন মেজ মায়ের কাছেই থাকতে চাই তাই এখানেই একটা হোটেলে উঠবো। বাসায় যাওয়া হবে না আমার । সাবধানে থেকো তোমরা ভালো থেকো। ”
“বাসায় যাবে না মানে এটা আবার কেমন কথা আমরাও তো আসবো মেজোকে দেখতে।”
“আমি এখানেই মেজো মা এর কাছে সারাক্ষণ থাকতে চাই তার জন্য যাব না । তোমরা যাও আমিও একটু পরে এই রুম থেকে বেরোবো। আমার অস্বস্তি হচ্ছে, এই রুমে থাকতে।
উনারা জানেন এই ছেলে যখন একবার বলেছে তাহলে তাকে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব তাই আর কিছু না বলে ছেলের সঙ্গে একটু দুহাত দিয়ে জড়িয়ে আদর করে চলে গেলেন।
কিন্তু তারা জানলেন না–

তাদের কঠিন ছেলে আবারো পরিবার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। নিজের প্রিয় কিশোরীর মুখটাকে এড়াতে, যাতে রাগে কিছু ভুল না করে বসে— তারই জন্য।
ওদিকে প্রান্তিক সাহেব যেতে যেতে মেহজাবীন বেগমকে বললেন,
“আটকি ও না বোধহয় বৃষ্টির চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না ও। হয়তো বৃষ্টি-ই ছিল ওর ভালোবাসা…”
“ইউভি ভাইয়া, আমি একবার একটু জায়ান ভাইকে দেখে আসবো?”
কাঁপা কন্ঠে অনেক সাহস নিয়ে তিয়াশা তার ভাইয়ের সামনে প্রস্তাবটা রাখল। কিন্তু ইউভি সরাসরি জানিয়ে দিল না এসে যেতে পারবে না তাকে এখন বাসায় ফিরতে হবে।

সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন তারা আবারও রাঙ্গামাটির বাগান বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়িতে যেখানে আজকে আনন্দের উল্লাস হতে চলেছিল সেখানে আজকে নেমে পড়েছে সবার মুখে এক কালো ছায়া। মানুষের জীবনে কখন কি থেকে কি হয়ে যাবে তা কারো জানা নেই তাই জীবনের প্রতিটা মুহূর্তকে সময় দেওয়া উচিত সেই মুহূর্তটাকে বাঁচা উচিত কারণ কাররে জানা নেই পরবর্তী মুহূর্তে তাদের জন্য কি হতে চলেছে বা কি হবে।

বাসায় পৌঁছাতেই বাসায় থাকা সবাই ছুটে এলো তাদের কাছে। সবার চোখ মুখেই এক চিন্তার ছায়া। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কারো ঘুম হয়নি রাতে। আরোহী এসে জড়িয়ে ধরল তিয়াশা কে।
সুরাইয়া বেগম হাত ধরে নিয়ে গেলেন মেহজাবিন বেগমকে ওনার রুমে
ইউভি রুমে যাওয়ার আগে তিয়াশা কে বলল তার রুমে একবার আসতে।
তিয়াশা জানেনা হঠাৎ তার ভাইয়ার এরকম তাকে ডাকার কারণ কি। তিয়াশা তার ভাইয়ের আদেশ মেনে চললে ইউভির পিছন পিছন ।
তিয়াশা কিছু না বলেই তার ভাইয়ের পেছন পেছন হাঁটল।
রুমে গিয়ে ইউভি ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইল। তিয়াশাও পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইউভি বলল—

“জায়ান ভাই ইউএস ফিরে যাচ্ছে। দু’দিন পরেই। আম্মু ঠিক হলেই উনি রওনা দেবে।”
এই কথা শুনে তিয়াশার চোঁখ-মুখে যেন অন্ধকার নেমে এলো। সে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল।
পেছনে তাকিয়ে ইউভি দেখল—
তার বোনের চোখ বেয়ে নীরব জল গড়িয়ে পড়ছে। কোনো শব্দ নেই। এই চঞ্চল মেয়েটা এত নিঃশব্দ কেন?
তবে কি…?
“ওনাকে আটকাও ভাইয়া…”
তিয়াশা ফিসফিস করে বলল।
“আমার ক্ষমতা নেই আটকানোর।”
“কেন নেই ভাইয়া?”

“হয়নি কোনোদিন, হবেও না। তিনি আমার বড় ভাই— তাঁর আদেশ আমার মাথার উপরে।”
এইসব কথার মাঝেই ইউভি বলল —
” আমি জানি ভাইয়া যাওয়ার ইউ এস যাওয়ার পেছনের কারন টাও তুই । ভাইয়া আমাকে সব বলে জানিস এমনকি তোকে যে পাগলের মত ভালবাসে তাও বলেছে ।”
ইউভির এই কথায় তিয়াশার চোঁখ বড় বড় হয়ে গেল —
” শুধু আমি না আকাশ আর ভাইয়ার বন্ধুরাও জানে , তুই অনেক ছোট বোন তাই তোকে বলত তুই নাকি ওনার বাচ্চা হবু বউ। ”
ইউভির এক একটা কথায় তিয়াশার হৃদয় এর এক একটা তার ছিঁড়তে যাচ্ছে অনর্গল বেড়িয়ে আসছে চোঁখের জল ।
একটু ম্লান হাঁসি দিয়ে ইউভি তার কথা চালিয়ে যেতে বলল —

” জানিস তুই আমার নিজের বনু তাও বলে আমি যেন তোকে বড় ভাবি বলি, আকাশ ও যেন তোকে ভাবি বলে । ভাইয়ার করা নির্দেশ তার বন্ধু রা তোকে যেন আপু ডাকে । তোর পাশে কোন ছেলেকে দেখলে কেমন পাগলের মত করে জানিস।
তোকে এক পলক দেখার জন্য কেমন ছটফট করত
যা দেখে আমি নিজেই ভয় পেতাম , কিন্তু এখন সেই ভাইয়া তোর নাম শুনতে চায় না , কেন বোন?”
বজ্র পাতের মত বাজ পড়ল তিয়াশার মাথায়। বুকে ব্যাথা করছে খুব তার , এত কষ্ট কেন হচ্ছে ?
ইউভির মুখে এক উদাসিনতা, তার বোনের চেহারা যে অন্য কিছু বলছে । সে আবারো বলে উঠলো

” বল না বনু সেই ভাইয়া কেন এখন তোর নাম শুনতে চাইছে না? তোকেও দেখতে চাইছে না।”
তিয়াশা কিছু বলতে পারছে না , সে যে বাক্যশূন্য হয়ে গেছে কি বলবে সে? কিছুই তো তার আর বলার নেই? তার বুঝি সব শেষ হয়ে গেল? কিন্তু কেন কিছু তো এখনো শুরুই হয়ে পারল না।
ইউভি তিয়াশার দুই বাহু ধরে উঠিয়ে দাঁড় করালো। শান্ত কণ্ঠে বললো আমাকে বল বোন প্লিজ বল। যে মানুষটা আমাকে সব বলে কিন্তু সে আজ এটা বলল না কেন সে চলে যাচ্ছে? কিন্তু আমি জানি তুই জানিস আমাকে বল আমার সোনা বোন
প্লিজ বল?
তিয়াশা নিজেকে আর আটকাতে পারল না তার ভাইয়াকে জড়িয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে কেঁদে বললো —

” ভাইয়া উনি আমাকে ভুল বুঝেছেন , সেই ভুল বোঝাবোঝির ঠিক করার সময়টুকুও আমায় দিলো না ভাইয়া দিলো না ।”
“তোর কি কষ্ট হচ্ছে বনু ?”
“আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া, আমার অসুস্থ লাগছে ভাইয়া । উনি এখন আমাকে আর ভালোবাসেন না ভাইয়া আমাকে ঘৃণা করে।”
ইউভি তার বোনের এই অবস্থা দেখে বুঝে গেল যে তার বোনও তার ভাইয়ার জন্য ততটাই ভালোবাসা জমিয়েছে নিজের বুকে—
” এখন আমি আটকাবো কি করে ভাইয়াকে সে তো কোন কথাই শুনতে চাইছে না । কি করব বল? ”
কান্নার শব্দ একটু ধীর হয়ে আসলো , তার বোনকে বুকে আগলে নিল , কানে এসে লাগল একটা কথা।
তিয়াশা চোখ মুছে ধীরে বলল—

“আমি অপেক্ষা করবো…
ওনার ঘৃণার মাঝে, আমি খুঁজে নেবো ভালোবাসার ছায়া।
আমি জানি, উনি আমাকে ভুলবেন না।
আমি অপেক্ষা করবো… আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।”
ইউভি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকিয়ে রইল বোনের দিকে।
এতটুকুই বলতে পারল শুধু—
“তুই সত্যিই বড় হয়ে গেছিস, বনু…”
ইউভি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল —
“আটকাবি না ভাইয়া কে ? ”
” আমি আটকাতে গেলে সে নিজের আরো ক্ষতি করবে , তাই আমি অপেক্ষা করবো আমি জানি উনি আমাকে ভুলবেন না আমি জানি।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৭

চোঁখ মুছতে মুছতে ভাইয়ার বুক থেকে মাথা সরিয়ে মনে মনে বলল —
তুমি কষ্ট দিতে চাও দিয়ে যাও , তুমি ঘৃণা দিতে চাও দিয়ে যাও । কিন্তু একদিন তুমি আমায় আবারো ভালবাসা দেবে ,
তাই হবো #তোমার_ঘৃণায়_আসক্ত_আমি
কিন্তু আমি আবার ও তোমায় ভালবাসায় আসক্ত করবো একদিন আমার শখের পুরুষ।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here