তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৩৯

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৩৯
নীল মণি

জলপরী, তোমার সেই আল্টিমেটামের ডেটটা… একটু কি বদলানো যায় না, সোনা?”
আকাশ ফোনটা হাতে নিয়েই গম্ভীর গলায় বলল,
ওপাশ থেকে ঠান্ডা জবাব এলো,
“এক সপ্তাহ থেকে এখন চার দিন কেটে গেছে। আর আপনার হাতে আছে মাত্র তিন সূর্যোদয়। পাশের বাড়ির পটলা কিন্তু ফ্রেশ মেকআপে রেডি হয়ে বসে আছে। চিন্তা করবেন না রাঙ্গা মূলো।”
আকাশ যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো,

“তুমি কি চাও ও আলু পটলটাকে আমি নিজ হাতে খুন করি? দ্যাখো কিন্তু, আমার সহ্য শক্তিরও একটা লিমিট আছে।”
আরোহী হালকা গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,
“ঠিক বলেছেন সব কিছুর ই একটা লিমিট আছে ৩ বছর হয়ে গেলো এখনো এগোতে পারলেন না , আমার বেবি টার বিয়ে পর্জন্ত হয়ে গেলো আর আমার প্রেম টাই ঠিক ঠাক হলো না ।তাই এসব আজাইরা কাজ না করে যেটা করার সেটা করুন আর যদি না করেন ওটা আপনার একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। ”
” জলপরী এরকম করেনা সোনা ।আমার ও তো কত স্বপ্ন আছে তাই না সোনা ?”
” আপনার স্বপ্ন আপনি রাখুন , আচ্ছা এসব ছাড়েন

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কালকে আপনি নিতে আসবেন না কি আমি একাই চলে যাব?”
আকাশ এবার সত্যিই ঘাবড়ে গেলো। গলাটা একটু কোমল করে বলল,
“এই না না না… একা একা কিছুতেই বেরোবে না। আমি নিয়ে যাব। তুমি তো জানো, আমার একটা মাত্র জলপরী… আর বাকি সব সবজিরা তো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নো রিস্ক”
আরোহী এবার একটু মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে আজ রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিও রাঙ্গা মূলো, না হলে কাল সকালেই জলপরীটা সাগরে ডুব দিয়ে দেবে।”
আকাশ ফোনটা এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে নিজে নিজে বলল,
“ওরে বাবা এই মেয়ের প্রেমে পড়ে আমি কোন দুঃশাসনের পাল্লায় পড়লাম।”

জায়ন চলে যাওয়ার পর তিয়াশার চোঁখ গেল টেবিলের উপর, একটা বক্স এর উপর । একটা
ফোনের বক্স , তিয়াশা বুঝতে পারছে না এই নতুন
ফোনের বক্স টা এখানে কি করছে ?
একটু অবাক ই হলো —
এদিকে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে জায়নের মনে পড়ছে কিছুক্ষন আগের মুহূর্ত । তার বাচ্চা বউ এর কণ্ঠের সেই ধোঁয়াটে মাদকতা, চোখের ভাষায় অচেনা দুঃসাহস, জায়ন কে পিষে ফেলার ক্ষমতা —
শরীর বেয়ে জলের ধারা পড়ছে একটানা, ভিজে চুল থেকে টুপটাপ ঝরে পড়ছে অস্থিরতা। বুকের গভীরে জমে থাকা আগুন যেন সেই ঠান্ডা জলের মাঝেও নিভছে না বরং প্রতিটি ফোঁটায় তা আরও দাউ দাউ করে জ্বলছে। বারবার মনে পড়ছে ,

তিয়াশার চোখে সেই দুষ্টু হাসিটা, গলার কাছে চেপে ধরা দম আটকানো নিঃশ্বাস, শরীরের উত্তাপে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ যা তাকে পাগল করে দিচ্ছে ।
জায়নের বুকের ভেতর থেকে যেন কিছু একটা আঁচড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে, আগুনের মতো সেই মুহূর্তটা পোড়াচ্ছে তাকে একটা দিকে তীব্র আকর্ষণ, অন্যদিকে সেই তিন বছর আগের রাতের কথা সব মিলে তাকে অসুস্থ করে তুলছে।
হঠাৎ জায়ন নিজের ঠোঁট কামড়ে, চোখ বন্ধ করে চাপা গলায় বলে উঠল —
“উফফফ্… I’m gonna mad, কিটি, আমাকে মারার
জন্য তোর কোন অস্ত্র লাগবে না , তুই নিজেই এক অস্ত্র বউ।”
ওর কণ্ঠে রাগ নেই, হিংস্রতা নেই, আছে কেবল পাগলামি…একটা মিষ্টি পাগলামি, একটা প্রেমে পাগল হওয়া পুরুষের গলার আওয়াজ।

বুকের ভেতরটা চেপে ধরে আছে যেন —
“তুই যদি আবার একটা বারও ঐভাবে আমার দিকে তাকাস, কিটি… আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারব না।”
শাওয়ারের নিচে ভিজে থাকা শরীরটা যতটুকু শুকিয়েছে, ঠিক ততটাই এখনও টলটল করছে জলের ফোঁটা। জায়ন কাবার্ড থেকে একটা ধূসর ব্যাগি ট্রাউজার টেনে নিয়ে গায়ে চাপিয়ে নিল। বাকি দেহজোড়া এখনো খালি, তরতাজা, ভেজা, উষ্ণ। তোয়ালে দিয়ে ভিজে চুল ঘষতে ঘষতে সে সোজা নিচে নেমে গেল, এই অর্ধনগ্ন অবস্থা তেই।
ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখতে থাকা তিয়াশার চোখ হঠাৎ জায়ন কে দেখে বড় বড় হয়ে গেল।
হার্টবিট যেন বুকে নয়, কানে বাজছে ধক ধক ধক।
চোখ সরাতেই পারছে না।চওড়া কাঁধ, পেট বরাবর নিখুঁত সিক্স প্যাক অ্যাবস্, লোমহীন মসৃণ ত্বক আর সেই জল টপকানো দৃশ্য যেন তিয়াশার বুকের ভেতর প্রজাপতির ঝাঁক তুলেছে। জায়ন এর বুকের কাছে দেখা যাচ্ছে ট্যাটু কিছু একটা লেখা তিয়াশা বুঝতে পারছে না
কি লেখা এত দুর থেকে।
এর মধ্যেই টিভি থেকে ভেসে আসলো এক গানের আওয়াজ

” ফিরসে একবার উজাড় যাতে হ্যায়,
ফিরসে একবার উজাড় যাতে হ্যায়,
চল তেড়ে ইশক মে পর যাতে হ্যায়
চল তেড়ে ইশক মে পর যাতে হ্যায়
ফিরসে একবার বিখার যাতে হ্যায়,
ফিরসে একবার বিখার যাতে হ্যায়,
চল তেড়ে ইশক মে পর যাতে হ্যায়
চল তেড়ে ইশক মে পর যাতে হ্যায়………
এক ভাবে তাকিয়ে আছে চোঁখে একরাশ অনুভব নিয়ে।এই পুরুষ তো তার সখের পুরুষ এখন যে তার নিজের স্বামী , ওর সেই বাঘের বাচ্চা —

এভাবে, এত বেখেয়ালি হয়ে, এতটা আনফেয়ারলি হট হয়ে সামনে হেঁটে আসছে ।
জায়ন গিয়ে থামল কিচেন কাউন্টার-এর সামনে। এক হাত মার্বেল স্ল্যাবের ওপর ঠেসে দাঁড়িয়ে, অন্য হাতে কফি মেশিনে পানি ঢালছে। পেছনের দিকে পুরো দৃশ্যটা যেন কোনো ম্যাগাজিন কাভার । চওড়া কাঁধের নিচে সেই বাটারফ্লাই শেপ যা জিম করে তৈরি করা হয় একটা নিপুণ ভাস্কর্যের মত।
আর কোমরের নিচে শিথিলভাবে বসে থাকা ট্রাউজার।
সেই যে মুখ টা হা হয়েছে তিয়াশার সেভাবেই রয়েছে।
তিয়াশার মনে হচ্ছে জায়ন না, যেন কোনো রোমান্স নভেলের লাইভ কভার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
তার গলাটা শুকিয়ে এসেছে, শাড়ির আঁচল খসখস করে উঠে যাচ্ছে বুকের ধকধকানিতে। চোখ সরাতে চাইছে কিন্তু পারছে না।
মন বলে উঠছে —

“এই লোকটা আমার বর? আমার?”
“আল্লাহ এরকম ভাবে সামনে আসলে তো আমার বরের লজ্জাহরন করতে বাধ্য হব।”
“একটু সাহস করে যদি গিয়ে… না না, ধুর।”
জায়ন তখনো জানে না, তার পিছনে বসে থাকা বউটার চোখে সে কী ঝড় তুলছে। ওদিকে তিয়াশার দৃষ্টির স্পর্শে যেন পুরো কিচেন ঘরটা গরম হয়ে উঠেছে, ছড়িয়ে পড়ছে এক অজানা উত্তাপ।
তিয়াশা ঠিক করল, আজ আর না চুপ করে থাকা যায়।
তিয়াশার পায়ের পাতাগুলো যেন আপনা থেকেই উঠছে…
তারপর?
জায়ন কফি মাগ এ কফি ঢালতে ঢালতে কানে ভেসে আসলো তার কিটি ক্যাট এর আকুল কণ্ঠস্বর —

” বর…..”
চোখেমুখে ভাঁজ পড়ে গেল জায়নের, এক ধরণের চাপা অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ল রক্তের ভেতর। মনে মনে বলল —
“এই রে আবার শুরু করবে না তো ? বউ প্লিজ ডাকিস না ,বুঝিস না তুই এরকম করলে আমার রাগের আল্লাহ্ হাফেজ হয়ে যাবে । কোন মতেই তাকাস না জায়ন কোন মতেই না।”
“বর, শোনো না?”
কিন্তু পরক্ষণেই আরও একবার সেই কণ্ঠস্বর শুনে জায়নের ভ্রু কুঁচকে উঠল —
” কি বলে এই মেয়ে, তুমি করে ডাকছে যে ।”
আমাকে মারার পাঁয়তারা করছে? ওহ গড
বাঁচাও আমায় ।”
শরীরের ভেতর কী এক বিস্ফোরণ ঘটে যাচ্ছে ।
হঠাৎ জায়ন এর মনে হচ্ছে তার বউ তার খুব পাশে খুব কাছে সে অনুভব করতে পারছে।
পেছনে ঘুরে তাকাতে গিয়েও নিজেকে স্থির রাখল, কিন্তু যখন তিয়াশার প্রশ্ন ভেসে এলো–
“এই ফোনটা কার? ওখানে ছিল।”

জায়নের মনে সামান্য এক স্বস্তির রেখা খেলে গেল,ফোন নিয়ে এসেছে? যাক, এবার বাঁচা গেল।
কিন্তু যখন জবাব দেওয়ার জন্য জায়ন মুখ তুলে তাকাল—
চোখ ছলকে উঠল, যেন কেউ বুকের মধ্যে বজ্রপাতের সৃষ্টি ঘটালো —-
সবুজ শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে রাখা, তিয়াশার কপালে বিন্দু বিন্দু নোনাজলের ফোঁটা, চোখ মুখ লালচে। শাড়ির ফাঁক গলে তার কোমল উদরের রেখা—
কোনো এক প্রাচীন ভাস্করের হাতের কাজ যেন।
এদিকে তিয়াশার চোখে পড়ল জায়ন এর গলায় কালচে লাল দাগ টার দিকে যার চিএকর সে নিজেই ।
ভেবেই একটু মুচকি হাসি দিল —

জায়ন এর কন্ঠে এক নিঃশ্বাস টান, কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠল —
” তো তোর, আমি চাই না আমার বউ ওই বাসার টাকায় কিছু ইউজ করুক । ”
একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারো বলল —
” ফোনে যদি অন্য কোন পুরুষের নাম্বার…….
পুরো বাক্য শেষ হওয়ার আগেই তিয়াশা খুশিতে ঝাঁ**পিয়ে পড়ল জায়ন এর বুকে, ঝুলে পড়ল জায়ন এর গলায় , জায়নের হাত থেকে মগ ছিটকে পড়ে টাইলস ঘেরা মেঝেতে চুরমার হয়ে গেল।
কফির গরম ছিটে ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু জায়নের হৃদস্পন্দনের কাছে সে কিছুই নয়।
জায়ন এর উন্মুক্ত বুকে তার বউ এর শরীরের ছোঁয়া
লাগতেই কেঁপে উঠলো,

আর অসম্ভব তার পক্ষে নিজেকে সামলানো,
নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার শেষ বাঁধনটাও যেন ছিঁড়ে গেল — —
তিয়াশার কানে ভেসে আসলো জায়ন এর কাপা কাপা কন্ঠে হাস্কি স্বরে বলা শব্দ —
” রো রোদ……, তোর জীবনে অনেক কিছুই হয়তো তুই ভুলে গেছিস তাই আমি চাই তুই নেক্সট দশ মিনিট ও ভুলে জাস।”
তিয়াশা কোনো উত্তর দিল না,
” I am contro**lless right now bou, I want to tas*te
You , i am sorry.”

জায়ন তৎক্ষনাৎ এক টানে তিয়াশা কে কোলে তুলে নিজের অ**ধরের অধিকারে নিয়ে নিল তিয়াশার পাতলা কোমল গোলাপী অ**ধর জোড়া ,
তিয়াশা প্রথমে কেঁপে উঠলেও পরে আর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেনি।
বরং জায়নের গলার চারপাশে বাহু জড়িয়ে ধরল–
নিঃশব্দে জানিয়ে দিল, তার সম্মতি ।এক মুহূর্তের দেরি না করে জায়ন তিয়াশার কো*মরে শক্ত করে হাত রেখে
কিচেনের স্ল্যাবের উপর বসিয়ে দিল নিঃশব্দে, প্রথমে শুধু ঠোঁ**টের কিনারা, তারপর ধীরে ধীরে আরও গভীরে—
তিয়াশার ঠোঁ**ট কাঁপছিল…
কিন্তু পিছিয়ে যায়নি।

বরং সে নিজে থেকেও এক আধবার জায়নের ঠোঁ**টে চাপ দিল–
অন্তত যে কষ্টগুলো এতদিন ধরে জমে ছিল, সেগুলোর জবাব দিচ্ছিল এই চুম্ব**নেই।
ছিলনা কোন হিংস্রতা ছিল শুধু মৃদু, কোমল, অথচ ক্রমে যেন উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল প্রতিটা সেকেন্ডে। জায়ন এর এক হাত ছিল তিয়াশার আলগা খোপা চেপে ধরে অন্য হাত তিয়াশার পিঠ ঘুরে মেদহীন কো**মরে এসে শক্ত করে চেপে ধরল তাকে,

তার পর সেই কোমল শাড়ির ভাঁ*জের ফাঁকে আঙুল*গুলো এক আশ্রয় খুঁজছিল যেন।
মার্বেল স্ল্যাবের উপর বসা তিয়াশার দে**হটা একটুখানি কাঁপল,
তবুও সে ছাড়েনি… , দাবানলের মতো চু**ম্বনে ভরিয়ে দিল তিয়াশার ঠোঁ*ট। ধীরে ধীরে জায়নের ঠোঁ*ট নেমে এলো তিয়াশার গ**লার দিকে–
প্রথমে হালকা ছোঁ*য়া, তার পর যেন এক পাগল উন্মাদনার ঢেউ।
তিয়াশার গ**লার প্রতিটি কোণে, কণ্ঠের রেখায়, কাঁধের কাছে
জায়ন চু**মু এঁকে দিচ্ছে একের পর এক—
ঠিক যেন বৃষ্টি নামছে এক ভেজা জ্যোৎস্নার রাতে,
প্রেম আর তৃষ্ণার অপূর্ব এক মিশেলে।
তিয়াশার নিঃশ্বাস এলোমেলো, শরীরটা একটুখানি কেঁপে উঠছে প্রতিটি স্পর্শে।
জায়নের হাত এখন ওর পিঠ ঘিরে শক্ত হয়ে আছে,
আর ঠোঁট—
সে তো জলের মতো গলে যাচ্ছে ওর গলার উপর,

প্রতিটি চুম্বনে যেন বলছে–
“তুই শুধু আমার, কিটি ক্যাট… “”
তিয়াশার চোখ বন্ধ, ঠোঁট ফাঁক করে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো,
তার গলার ভেজা চিহ্নগুলো জায়নের উন্মত্ত ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইল।
চুম্ব**ন আর আলতো নিঃশ্বাসের মাঝখানে,
কোনো বাক্য উচ্চারিত হচ্ছিল না,
তবুও তাদের শরী**র আর হৃদয় যেন পরস্পরের ভাষা পড়ে নিচ্ছিল নিখুঁতভাবে।
এই চুম্ব**নে ছিল না শুধু ভালোবাসা—
ছিল দাবির চিহ্ন, ছিল আত্মসমর্পণের ছায়া।
কিছুক্ষণ পর জায়ন হঠাৎ করেই তিয়াশার কাছ থেকে নিজেকে আলগা করে নিল। এক নিঃশ্বাসে বলে উঠল—
“ভুলে যাস।”

তারপর আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে হাঁটা দিল সিঁড়ির দিকে।
তিয়াশা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে, মনে মনে ফিসফিস করে উঠল–
“ভুলে যাচ্ছি না বরং মনে রেখে দেব আজীবন। আমার বর যে এত রোমান্টিক, তা তো কখনো জানতাম না… আমি তো ভাবতাম, অসভ্য রাগী একটা বাঘের বাচ্চা।
দাঁড়াও বর তোমার রাগের যদি বারোটা না বাজাই তো দেখো ।”
সিঁড়ির ধাপে পা রাখছে জায়ন, ঠিক তখনই তিয়াশা পিছন থেকে বলে উঠলো–
“ফোন থেকে আমি অনলাইন শপিং করতে পারি?”
জায়ন গম্ভীর গলায় জবাব দিলো– “হ্যাঁ।”
“কিন্তু টাকা তো নেই।”

তিয়াশার সোজাসাপটা বক্তব্যে জায়নের মুখে এক হালকা হাঁসি খেলে গেল। সে নিচু গলায় বলল–
“দেনমোহরের কথা ভুলে গেছিস? আমার সব কিছুই তোর। আমার রুমে বুক শেলফের ওপরে পার্স আর কার্ড রাখা আছে, পাসওয়ার্ড আমাদের বিয়ের তারিখ। আমি শাওয়ারে যাচ্ছি, নিয়ে নিস।”
তিয়াশা অবাক চোখ বড় বড় করে বলল— “আপনি তো এখনই শাওয়ার থেকে এলেন।আবার যাচ্ছেন?”
জায়ন মনে মনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল– “গাঁ*ধার বাচ্চা আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে এখন প্রশ্ন করছে।”
তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে, স্বাভাবিক ভাব নিয়ে বলল–
“ইচ্ছে হয়েছে তাই। আর হ্যাঁ, কাল তোর ভাইয়া রা আরোহী আর অনু আসবে।”
এই বলে আর একবারও ফিরে না তাকিয়ে উঠে গেল সিঁড়ি ধরে।
তিয়াশা যেন লাফিয়ে উঠল খুশিতে–

“ইস কতদিন পর আমার নিজের মানুষ গুলো কে দেখতে পাব।”
তারপর সে ধীরে ধীরে গেল জায়নের রুমে প্রবেশ করল।
জায়ন শাওয়ার নিচ্ছিল বুক শেলফ থেকে কার্ডটা হাতে তুলে নিয়েই ফিরতে যাবে নজরে পড়ল বুক শেলফ এর অনেক বইয়ের মধ্যে রাখা এক টাইটেল এর কিছু বই —
” God of mi**lace, God of ru**in, God of w*”rath”
কেমন যেন একটা কৌতূহল ছুঁয়ে গেল তিয়াশার হৃদয়। নিজের অজান্তেই সে ‘God of Wr**ath’ বইটা হাতে তুলে নিল, পাতাগুলোর গন্ধে যেন জায়নের রাগী অথচ রহস্যময় উপস্থিতি ছড়িয়ে ছিল।
বইটা বুকে চেপে ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল তিয়াশা, আর নিজের রুমে গিয়ে বইটা টেবিলের ওপর রাখতেই মুখে সেই পুরনো চেনা, দুষ্টু কিন্তু মায়াবী হাসিটা ফিরে এল–
ফোন টা হাতে নিয়ে সেটিং করে সবকিছু, অনলাইন এ কি কি যেন অর্ডার দিল । ঠোঁটের কোণে দেখা গেল এক রহস্যময় হাসি ।

ডিনার করতে এখনো সময় আছে তাই ভাবলো বই টা একটু পড়া যাক।
প্রথমে বিরক্তি, তারপর কয়েকটি পাতা উল্টাতেই চোখে মুখে ছায়া নেমে এলো। চোখ চলে গেল চড়ক গাছে, কপালে ভাঁজ, ঠোঁটে শুষ্কতা। এক ঝটকায় বইটা ছুঁড়ে ফেলল বিছানায়।
গা, হাত, পায়ে কেমন অস্থিরতা। শরীর যেন নিজে থেকেই উত্তেজনার রেশে ঘেমে উঠছে। বুকের গভীরে নামহীন একটা টান, যেটা ছড়িয়ে যাচ্ছে শিরায় শিরায়। কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে আবারো বইটা হাতে নিল তিয়াশা। কাঁপা কন্ঠে বলে মনে মনে বিড়বিড় করল —
“বর আমার আর বাসর এর ইচ্ছে নেই আপনার সঙ্গে”
ঘাম আর চিন্তার ধোঁয়ায় যেন মিশে গেছে ঘরটা। শরীরের প্রতিটা কোষ যেন কাঁপছে এক অদ্ভুত তৃষ্ণায়।
কিছুক্ষন পর ডিনার এর সময় তিয়াশা শুধু জায়ন এর দিকে তাকিয়ে আছে ।
এর মাঝেই ভেসে এলো এক গভীর কণ্ঠস্বর
” খাবার আমার মুখে না প্লেটে তাড়াতাড়ি শেষ করে ঘুমাতে যে ।”
তিয়াশা তারাতারি খেয়ে উপরে চলে গেল নিজের রুমে।।

সকালের সূর্যটা আজ একটু হেলে পড়েছে পূর্বের জানালায়। চৌধুরী বাড়ির সাদা রঙের পর্দাগুলো সেই আলোয় ধুয়ে উঠেছে সোনালি আভায়। পাখিদের কলকাকলি, দূরের আজান, আর রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা জিরে ফোড়নের গন্ধ। সব মিলিয়ে এক ঘরোয়া অথচ নীরব সকালে রূপ নিচ্ছে চৌধুরী বাড়ি।
বারান্দার কর্নারে সাজানো কনক্রিট টপে রাখা মানিপ্ল্যান্টগুলো বাতাসে দুলছে —
এই চৌধুরী বাড়ির সকালের সৌন্দর্য শুধুই আলো আর গন্ধে নয়, তার আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে সেইসব নীরব অভিমানে, টুকরো টুকরো ভালোবাসায়, আর প্রতীক্ষার প্রতিধ্বনিতে।
তিন গিন্নি তখন রান্নাঘরে প্রতিদিনের মতই ব্যস্ত।
মেহজাবীন বেগম ডাল মাখাচ্ছেন, সুরাইয়া বেগম সবজি কুটছেন, আর রুহেনা বেগম পরোটা ভাজার তোড়জোড়ে।
ঠিক সেই সময় রান্নাঘরের দরজায় ভর দিয়ে হঠাৎ ঢুকল ইউভি। হঠাৎ ইউভি রান্না ঘরে এসে বলল —

“ছোট আম্মু একটা কথা ছিল ? ”
সবাই যেন ইউভির কথায় একটু কৌতূহল নিয়েই পিছনে তাকালো , তিন গিন্নির চোখ একসাথে ছানাবড়া।যে ছেলে সামান্য পানি নেওয়ার জন্যও রান্না ঘরে আসে না , সে আজ রান্নাঘরে কি করছে —
সুরাইয়া বেগম বলে উঠলেন —-
” হ্যাঁ ইউভী বাবা বলো ।”
ইউভি একটু গলা খাঁকারি দিয়ে, মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল —
“আসলে… বনু, রায়ান আর অনন্যার সঙ্গে দেখা করতে চায়… যদি পারমিশন দেন, তবে আমি ওদের একটু নিয়ে যাই?”
সুরাইয়া বেগম সরাসরি উত্তর না দিয়ে চেয়ে রইলেন মেহজাবীন বেগম-এর দিকে। চোখে ছিল একটাই প্রশ্ন
“কী বলব আপু?”

মেহজাবীন বেগম মুখে হালকা শান্তির হাসি নিয়ে বললেন —
“নিয়ে যা, কিন্তু তোর বড় আব্বুরা ফেরার আগেই ফিরিয়ে আনবি, বুঝলি তো?”
ইউভির মুখটা যেন খুশিতে জ্বলে উঠল।
বলে –
“ওকে বড় আম্মু, ঠিক আছে।”
ইউভি হাঁটা শুরু করতেই পেছন থেকে মেহজাবীন বেগম হঠাৎ ডাকলেন –
“ইউভি—”
পায়ের গতি থেমে গেল। হঠাৎ কেমন বুক ধুকপুক করে উঠল, মনে মনে ভাবল —
“আবার কি যেন মানা করে না বসেন…”
কিন্তু না।
মেহজাবীন বেগম হেঁটে এসে হঠাৎই আদর করে ইউভিকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
নরম, কিন্তু দৃঢ় গলায় বললেন —
“রাতে আর কখনও অনন্যার রুমে যাবি না।
যেদিন বুক ফুলিয়ে বলতে পারবি, ‘আমি অনন্যাকে ভালোবাসি’, সেদিন বলব না কিছু।এখন কার মত তাহলে পরবর্তীতে তোর মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে না ।”
ইউভির শরীরটা থমকে গেল। গলা শুকিয়ে এল, চোখে যেন হালকা জল টলমল করল।
সে কিছুই বলতে পারল না।

মেহজাবীন বেগম আবারো নিজের কাজে ফিরে গেলেন রান্নাঘরে।
সুরাইয়া আর রুহেনা বেগম দু’জনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন—
তাঁদের দিকে তাকিয়ে মেহজাবীন হেসে বললেন -+
“আর এমন করে তাকাস না। একটু আদর করলাম তো ছেলেটাকে।”
ইউভি এবার সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে যেতে লাগল।
মনটা কেমন অদ্ভুত দুলছে।
মাথার মধ্যে ঘুরে ফিরে একটা কথাই —
“তার মানে বড় আম্মু… কাল রাতে পাখির রুমের কাছেই ছিলেন”
চোখের সামনে আবছা হয়ে গেল চারদিক। মনের মধ্যে কোথাও একটা আলো ফুটে উঠল, আর কোথাও একটা লুকিয়ে থাকা ভয়…
কিন্তু তার মধ্যেই যেন এক স্বস্তি —

সময় তখন প্রায় বারোটা ছুঁই ছুঁই —
তিয়াশা আজ সকাল থেকেই বেশ ফুরফুরে মেজাজে।কতদিন পর তার প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হবে–
এই ভাবনাতেই মুখে লেগে আছে একরাশ হাসি।
রান্নাঘরে বুয়া ব্যস্ত নানারকম মুখরোচক নাস্তা তৈরিতে পরোটা ডিম ভাজি,কাটলেট,লুচি দম আলু , চিকেন স্যান্ডউইচ আরো অনেক কিছু থাকছে মেনুতে।
জায়নও আজ বিরলভাবে বাসাতেই আছেন, তবে মুখে কিছু না বললেও ভিতরে ভিতরে সে ও অনেক টা খুশি।
একটু পরেই দরজার কলিং বেল বেজে উঠল।
তিয়াশা ছুটে গিয়ে দরজার লক খুলে দিল, পেছন থেকে জায়নও এগিয়ে এলো সদর দরজার দিকে।
দরজা খুলতেই এক মুহূর্তের জন্য নিঃশব্দ হয়ে গেল চারপাশ।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইউভি, আকাশ, মরিয়া, রায়ান, অনন্যা, আরোহী আর পরি।
তিয়াশার চোখের কোনা ভিজে উঠল, হাসিমুখে অঝোরে চোখ থেকে জল গড়াতে লাগল।
সে সঙ্গে সঙ্গে ইউভিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল, যেন দীর্ঘদিনের জমে থাকা অনুভূতির বিস্ফোরণ ঘটল এই একটি আলিঙ্গনে।
ইউভিও নিজের আদরের বোনের মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলল, “ভালো আছিস বনু ?…”

” হ্যাঁ ভাইয়া ”
তারপর একে একে অনন্যা, আরোহী, পরি ,মারিয়ার বুকে মুখ লুকিয়ে দিল তিয়াশা।
আরোহীর চোখেও দেখা গেল জল, অনন্যা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল, যেন কেউ ওর চোখের জল দেখে না ফেলে।
কিন্তু যখন তিয়াশা এগিয়ে গেল আকাশ আর রায়ানকে জড়াতে, ঠিক তখনই পিছন থেকে জায়নের গম্ভীর গলা শুনতে পেল–

“স্টপ, ব্যাস অনেক হয়েছে ওদিকে আর পা বারাবি হাত তো একদম ই না।”
এই বলে তিয়াশাকে টেনে নিল নিজের কাছে ।
হঠাৎ করেই সবার নজর জায়ন এর দিকে যেতেই
চোখ পড়ল জায়ন এর গলায় , সবাই বুঝতেই পাড়ছে তবে জিজ্ঞেস করার সাহস নেই।
রায়ান হালকা একটু মজা নিয়েই প্রতিবাদ করল, “বড় ভাইয়া, আমি তো আপুর ছোট ভাই”
জায়ন ধপাস করে রায়ানের মাথায় একটা টোকা মেরে বলল,
“তুই এখন প্রাপ্তবয়স্ক ,আর তাছাড়া আমি ঠিক করবো, আমার বউ কার কাঁধে কাঁদবে। ইউভি একমাত্র এলাও, কারণ সে আমার সম্বন্ধী।”
আকাশ হেসে বলে উঠল, “আমি ও তো তোমার সম্বন্ধী বড় ভাই। আমাকেও তো এলাও দেওয়া উচিত হি হি”
রায়ানও তাল মেলাল,

“আর আমি তো তোমার শা*লা ভাইয়া । আপু, আয় আমার বুকে আয়।”
এই বলে তিয়াশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল রায়ান —
এ কথা শুনেই জায়নের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল।
সে এক ঝটকায় রায়ানের কলার ধরে পেছন দিকে টেনে বলল, “দুজনেই বেরো এখনই, আমার বউয়ের চারপাশ থেকে।”
রায়ান মুখ চিপে বলল, “আচ্ছা ভাইয়া আর কিছু করছিনা, চুপ করে বসে থাকবো।”
এদের এই দৃশ্য দেখে সবাই হেসে লুটোপুটি খেতে লাগল।
আকাশও কম যায় না। সে আবার দাঁত বের করে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলল,

“আমার জলপরী তো এখানেই আছে, আমি অন্য কোথাও থাকব কীভাবে বলো বড় ভাই ?”
আরোহী চোখ কুঁচকে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“উফ রাজ্যের নাটক আপনার কাছে তাইনা, ভাইয়া দেন তো এক্ষুনি বের করে দেন এই নাটকবাজ টাকে”
এই বলে আরোহী জায়নের দিকে তাকাতেই আবারো একবার সবাই হো হো করে হেসে উঠল —
শুধু আকাশের মুখটাই লম্বা হয়ে রইল। সে মুখে না বললেও মনে মনে বলল—
“হায় আল্লাহ্, শেষে কিনা মীরজাফরের মাইয়ারে ভালোবাসলাম ।”
রান্নার বুয়া আর তিয়াশা সবাই কে জুইস দিয়ে দিল।
হঠাৎ কলিং বেল আবারো বেজে উঠলো।
তিয়াশা উঠে যেতে যাবে, ঠিক তখনই গাম্ভীর্য-মাখা কণ্ঠে জায়ন বলে উঠলো —
“ওখানেই বসে থাক। জেমস এসেছে আমি খুলছি ।”
তার কণ্ঠে এমন এক অধিকারবোধ, যেন জগতের সমস্ত দায়িত্ব সে একাই বহন করে।
আর তিয়াশা এক হাতে জুইস এর গ্লাস ধরে, অন্য হাতে কুশন চেপে বসে পড়লো,কিন্তু মুখে লুকিয়ে রাখা যায় না এক চিলতে হাসি।
আরোহী সঙ্গে সঙ্গে গোঁ গোঁ করে বলল —
“ইসসস, দেখছিস পরি, ভাইয়া কি যে পজেসিভ। সত্যি বলতে কি, বিয়ের পরও যদি কেউ এভাবে নিজের করে রাখে… হায়রে রোমান্স।”
পরি হেসে হেসে চোঁখ গোল করে বলল —

“আমি এতদিন শুনেই গেছি… আজ লাইভে দেখে মনটাই পুড়ে গেল,ইস… আমার জীবনেও যদি এরকম একটা হট কন্ট্রোলিং বর থাকতো।”
তিয়াশা তখন চোখ তুলে পরির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল —
” কন্ট্রোলিং জামাই থাকা যে কত প্যারার তা, হলে বুঝতি , তবে যাই হোক সাবধান করে দিচ্ছি, আমার জামাই এর দিকে একদম তাকাবি না … আমি কিন্তু একদম কম ঝাল না।”
“চুপ কর প্যারা , ওর জন্যই তো ভাইয়ার গলায় ওই অবস্থা । আমরা কি বুঝিনা, ইস কি করেছিস ভাইয়ার অবস্থা ”
আরোহির কথায় তিয়াশা কটমট করে বলে উঠলো —
” একদম চুপ , মেরে দাঁত ভেঙে দেবো তোদের।”
মিট মিট করে হেসে যাচ্ছে আরোহী আর পরি ।
এর মধ্যেই জায়ন এর পেছনে জেমস হাতে অনেক গুলো প্যাকেট নিয়ে বাসায় ঢুকছে , জায়ন এর হাতেও
কিছু প্যাকেট —

জায়ন বাইরে থেকেও কিছু খাবার অর্ডার করিয়েছে,
পিজ্জা ,বার্গার আরো অনেক কিছু ।
পরি হঠাৎ থমকে গেল।
তার চোখ স্থির হয়ে গেছে জেমসের চওড়া কাঁধে, হালকা দাড়ি, সানগ্লাসে আটকানো চুলে–
হঠাৎ করেই পরি তিয়াশার হাত চেপে জিজ্ঞেস করলো —
” তিয়াশা এই দেশী বিদেশী মিক্সার টা কে রে ?,”
তিয়াশা পরির কান টেনে বলল —
” কেন রে তুই কি করবি জেনে ওই দেশী বিদেশী মিক্সার টা কে।
এর মধ্যেই আরোহী বলে উঠলো —
” আরে বুঝোস না তুই পরি কেন জিজ্ঞেস করছে ? ”
এই বলেই একটু মুচকি হেসে উঠলো —

এদিকে রায়ান আর মারিয়া আবারো সেই টিভির রিমোর্ট নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে সব সময় কার মত । রায়ান মনে মনে খুশি হলেও মারিয়া ভিসন চটে গেছে ।
এইসব চলাকালীন অনন্যা আর ইউভি পরস্পরের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থাকে।কারো কিছু বলার দরকার হয় না।তাদের চোখেই যেন সব কথা লেখা থাকে।
এদের দেখে আকাশ এক কোণে বসে থাকা অবস্থাতেই ফোঁস করে উঠলো মনে মনে —
“সবাই যার যার প্রেমে ডুবে, আমার জলপরী আজ চোখ তুলে তাকায় না। হায় আল্লাহ এই নাটক আর সহ্য হয় না।”
এইসব চোখে পড়ল তিয়াশার ,

তিয়াশা ভালো করে দুজনের দিকেই দৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পারল– এদের মধ্যে কোন স্বাভাবিক নজরের খেলা হচ্ছে না ।
তিয়াশা হঠাৎ করেই অনুর হাতে কোনুই মেরে তার ভাইয়ার দিকে একবার তাকাল ।
ইউভি সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নিল , ইস বোনের হাতে ধরা পরার লজ্জায় এদিক ওদিক করছে ।
তিয়াশা একটু হেসে অনন্যার কানের কাছে এসে বলল —
” কি রে বনু আমি তোর গা দিয়ে কেমন ভাবি ভাবি গন্ধ
পাচ্ছি ।”
অনু লজ্জায় সোফা ছেড়ে চলে গেল রান্না ঘরে ।
সব প্যাকেটগুলো টেবিলে নামিয়ে রেখে জায়ন
ইউভি দের পাশে গিয়ে বসলো ।
আর জেমস? তার নজর ইতিমধ্যে বুঝে গেছে, কেউ একজন তাকিয়ে আছে তার দিকে। একটু ভ্রু তুলে হাসল।
আর পরির তো চোখ খুলে যাচ্ছে যেন —

“ওই বিদেশী লোকটা যেন সরাসরি কপালে তাকিয়ে হাসছে রে।”
আরোহী চুপচাপ হেসে ফিসফিস করে বলল —
“শোন পরি, সাবধানে খেলিস। এই বিদেশী লাইন খুব স্লিপারি।”
এই নিয়ে চললো তিন জনের মধ্যে হাসা হাসি।
ইউভি ও ঠিক নজর কাটিয়ে যেতে লাগল কিচেনের দিকে অমনি আকাশ বলে উঠলো —
” মান সম্মান খাইয়ো না বড় ভাইয়ার বাসা এইটা ।”
ইউভি বিরক্তি নিয়ে বলল —
” নিজে খালি পান্তা হয়ে বসে আছিস বলে জলে যাচ্ছে বল।”
জায়ন ও আর চুপ রইলো না —
” আমার বাসা শুধু মাত্র আমার বউ আর আমার জন্য ,

অনু কিন্তু আমার বোন ভাইয়ের সামনে তার বোনের পেছনে যাচ্ছিস , ভয় নাই ।”
ইউভি একটু ঠোঁট উল্টে হেসে জবাব দিলো —
” আচ্ছা তাহলে আমিও আমার বোন কে আমার বাসায় নিয়ে যাই বড় ভাই।”
জায়ন অগ্নি দৃস্টিতে তাকালো ইউভির দিকে , দাঁতে দাঁত চিপে বলল —
” আর একবার বললে লা*থি মেরে বের করবো। আর ভুলে যাচ্ছিস ও আমার বউ।”
ইউভি আর কিছু বলল না , জানে বললে আর ছাড় নেই ,তাই সোজা চলে গেল কিচেনের দিকে।
এদিকে আকাশ ফিস ফিস করে জায়ন কে বলল —
“ভাইয়া আমায় একটু হেল্প করবা?”
এই কথা শুনে একবার ভ্রূ কুঁচকে তাকালো আকাশের দিকে —
আকাশ এই দেখে বলল —

“প্লিজ ভাইয়া এভাবে তাকিও না, আমার জলপরী আমায় আল্টিমেটাম দিয়েছে , তার আর দুদিন বাকি আমি কি করবো আমি জানিনা।”
জায়ন একটু বিদ্রুপ হাসি হেসে বলল–
” এই কয় বছরে যখন কিছু করতে পারলি না তখন তোর জলপরীর আসা ছেড়ে দে।”
” ভাইয়া প্লিজ একটু হেল্প করো, এরম বলো না মরেই যাব ।”
” আচ্ছা আজ সন্ধ্যায় দেখা কর বলছি । এখন তাড়াতাড়ি বিদায় হ তুই ।”
যাই হোক আকাশ যেন একটু বুকে বল পেল —
“জায়ন ভাইয়া…”
আরোহীর কণ্ঠে একরাশ সংকোচ, কিন্তু চোখে স্পষ্ট ভয়।
জায়ন ডাইনিং টেবিলের দিকে এগোতেই আরোহী হাতটা চুলকে নিয়ে বলল —
জায়ন আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলল —

” হুমম বলো বোন।”
” আসলে ভাইয়া তিয়াশা ভার্সিটি যেতে পারবে ? আসলে আর দু’মাস পরই তো এক্সাম…”
চারপাশটা হঠাৎ করেই চুপচাপ।
জায়নের চোখে এক মুহূর্তের থেমে যাওয়া।
তিয়াশা চুপচাপ বসে, সে যেন জানে না কী উত্তর আসবে, কিন্তু বুকের ভিতরে যেন নদীর ঢেউ খেলছে।
জায়ন একটু চুপ করে থাকল। তারপর গম্ভীর স্বরে বলল —
“হ্যাঁ, যেতে পারবে।”

তিয়াশার নিঃশ্বাস যেন আটকে গিয়েছিল, হঠাৎ করেই সে আবার নিঃশ্বাস নিতে পারলো।
চোখের কোনায় একটা ছোট্ট অশ্রুকণা জমে উঠলো আনন্দে।
জায়ন তখন আরও যোগ করল–
“তবে যদি সে আমার কোনো কথা অমান্য করে…
তাহলে সব বন্ধ হয়ে যাবে।”
তিয়াশার আবার ভয়ে বুক টা কেঁপে উঠলো।
তবুও তিন জনে একটু খুশি হলো।
দুপুরের খাবার পর্ব শেষে সবাই বিদায় নিয়েছে।
ড্রয়িংরুম এখন নিঃস্তব্ধ।
একটা অদ্ভুত খালি খালি ভাব চারদিকে।
তিয়াশা জানে না কেন, আবার মনটা একটু খারাপ লাগছে।
আজ সকালের খুশির মুহূর্তগুলো এক এক করে মুছে যেতে লাগল স্মৃতির সাদা পাতায়।
আর উপরে…

জায়ন, তার বর, তার গম্ভীর রাজা, নিজের ঘরে চলে গেছে অনেকক্ষণ হলো।
কোনো ডাক নেই, কোনো খোঁজ নেই।
তিয়াশা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ নামিয়ে আনতে না আনতেই– টিং টং
আবারো কলিং বেল বেজে উঠলো।
সে একটু চমকে উঠে দরজার দিকে ছুটে গেল।
লক খুলতেই দাঁড়িয়ে থাকা এক ডেলিভারি ম্যান তার হাতে ছোট্ট একটা পার্সেল দিল, কোনো কথা না বলে মাথা নুইয়ে চলে গেল।

তিয়াশা দরজা বন্ধ করে পার্সেলটা হাতে নিয়ে তাকাল।
চোখে-মুখে এক রকম রহস্যময় দুষ্টুমির ছাপ।
ঠোঁটের কোণে গাঢ় এক মুচকি হাসি এঁকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল —
“দাঁড়ান বর… এবার তো কোথাও যাবার জায়গা পাবেন না।”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৩৮

পার্সেলটা নিয়ে সে পা বাড়াল নিজের রুমের দিকে।
চোখে তার সেই পুরনো জেদি চাহনি।
কাঁধে পড়ে থাকা চুলের ভাঁজে যেন বাতাসও থমকে দাঁড়ায়।
কে জানে, তার এই পার্সেল আর পরিকল্পনায় আবার কী হতে চলেছে জায়নের সঙ্গে…

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৪০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here