তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫২

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫২
নীল মণি

_”আকাশ ভাইয়া আমরা সবাই এখানে কেন আসলাম?আমরা তোমাদের বাসায় যাব না ?”
তিয়াশা হঠাৎ করেই আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল, যেন সারাটা বিকেল ধরেই মনে জমে থাকা
এক দুষ্টু মিষ্টি ভয় কাজ করছে , সেই ভয়েই পালিয়ে এসেছে সবার সঙ্গে । শরীর এ এখনো ব্যথা রয়েছে ।
আজ সন্ধ্যায় সবাই চৌধুরী বাসা থেকে একসঙ্গে বেরিয়ে আশরাফ সাহেব আর আয়েশা বেগম তাদের বাসায় চলে গেছেন কিন্তু বাচ্চারা যায় নি ।আকাশ কোথায় যেন নিয়ে এল তাদের একদম চেনা জায়গা, অজানা নয় মোটেই।শুধু নাজিম বাদে সবাই ঠিক বুঝে গেছে কোথায় এসেছে তারা ।
তিয়াশার কথায় আকাশ একবার কপাল চুলকে, একটু হাসির আভায় বলল,

__”আরে ভাবি কাম বনু ভালো করে তাকিয়ে দেখ সামনে কাদের বাসা, আর তুই কি বোরখা পরে
চোখ ও বন্ধ করে নিয়েছিস নাকি ?”
আকাশের কথায় যেন হাওয়ায় হালকা খুনসুটির সুর বেজে উঠল, কিন্তু তিয়াশা কিছু বলার আগেই অনন্যা জিজ্ঞেস করে উঠল,
__” আপু তুমি বোরখা কেন পরে আছো ?”
হায় রে কি প্রশ্নের মুখমুখী হতে হলো । কি করে বলবে
তিয়াশা যে সে সারাদিন বোরখা কেন পরা? ভীষন বাজে পরিস্থিতিতে এক চোরাগোপ্তা অস্বস্তি, নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখা সত্য।তবে ভাগ্যিস, এর মাঝেই বৃষ্টি হালকা হেসে কথাটা নিজের মতো করে মুড়িয়ে দিল, এরমধ্যেই বৃষ্টি বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__” আরে আমাদের ভাইয়া চায় না ও কাউকে মুখ দেখাক। বুঝলি অনু ?”
যাক তিয়াশা জম বাঁচা বাঁচলো এই যাত্রায় , মনে যেন এক প্রশান্তি ঢেউ খেলে উঠলো , তবে মনের মধ্যে চলছে ভয়ের ঝড় । এই ভাবে বাঘের বাচ্চা কে না জানিয়ে আসলো। অবশ্যই ওনার ভয়ে এসেছে আর তার ও খুব ইচ্ছা হচ্ছিল সবার সঙ্গে আনন্দ করতে । তার জামাই এত কেন ব্যতিক্রম বুঝে উঠতে পারে না সে নিজেই।
এদিকে অনু একটু ভ্রু কুঁচকেই তাকিয়ে আছে তিয়াশার দিকে, তার কেন যেন এই কথাটা হজম
হচ্ছে না। এর মধ্যেই আরোহী ছুটে এল বাইরে ।
এসেই আকাশ কে বলে উঠলো —

” আরে তুমি বাসার সামনে কি করছ ? আব্বু দেখলে সমস্যা হবে , এই ভাবে তুমি যে আমায় নিচে ডাকো
যেদিন আব্বু দেখবে বুঝতে পারবে ।”
আরোহী তখনও আশেপাশে কেউ আছে কি না খেয়াল করেনি। আকাশ চোখ ইশারা করতেই তার দৃষ্টি ধীরে ধীরে সবার দিকে ঘুরে গেল ইউভি, বৃষ্টি, নাজিমের কোলে রেজোয়ান, অনন্যা, মারিয়া, রায়ান… আর একজন, যাকে দেখে ঠিক চিনে উঠতে পারছে না। একজন বোরখা পরা মেয়ে— পুরো মুখ ঢাকা, কেবল দু’চোখ দেখা যাচ্ছে, তাও যেন নেটের জালের আড়ালে ঝাপসা।
সবাইকে এক এক করে সালাম জানিয়ে আরোহী সেই অচেনা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আকাশকে বলল নিচু গলায়,

__”রাঙামূলো বেবি, ওইটা কে? একটু পরিচয় করিয়ে দেবে না?”
আর তার আগেই, আরোহীর গায়ে একটা হালকা ঘুসি দিয়ে যেন আড়াল ভেদ করে ঝড় এসে পড়ল তিয়াশার কণ্ঠে,
__”নিজের বেবি কেও চিনিস না হারামজাদি?”
তিয়াশার কণ্ঠস্বর শুনতেই আরোহী অবাক হয়ে গেল।
মনে মনে ভাবতে লাগল এই মেয়ে বোরখা পরে কেন আছে ?শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে তাও নেটের জালের আড়ালে । অমনি তিয়াশার হাত ধরে আরোহী বলে উঠলো ,
__ ” বেবি তুই বোরখায় কেন ? হঠাৎ বোরখা পরার ইচ্ছে কেন হইলো তোর ?”
পাশ থেকে অনন্যা দুষ্টুমিতে চোখ টিপে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল ,
__” আরে রুহি আপু আমাদের জায়ন ভাই তার বউ কে

লুকায় রাখতে চায় হি হি হি।”
অনুর মুখের হাসি দেখে যেন কারও হৃদয়ে কাটা পড়ে গেল।কেউ একজন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে, মনে মনে ভাবছিল সবাই কত নিখুঁতভাবে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে, সব সম্পর্ক যেন মসৃণ আর গোছানো শুধু তার সম্পর্কেই কেন অগোছালো হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। সে তো এত কিছু চায় না শুধু চায় তার হৃদাতপাখি তার হৃদয় এই বাসা বাধুক । সেই সকাল থেকে ইউভি ও আর একবার নিজে থেকে অনুর সঙ্গে কথা বলতে যায় নি।
এদিকে অনুর কথায় আরোহী একটু অবাক ই হলো।এইসবের মাঝেই আরোহী একটু গম্ভীর হয়ে বলল অনুকে,
__” অনু আমার সঙ্গে একটু আয় তো ।”
তারপর তিয়াশার দিকে ফিরে বললো ওকে ও যেতে ।
তিনজন একটু আড়ালে যেতে চাইল, ঠিক তখনই আকাশ বলে উঠল,
__” ওইদিকে কোথায় যাও জলপরী ? আমি আসবো সোনা ?”
আরোহী অমনি এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো

__ ” তোমাকে কি আমি ডেকেছি?”
আকাশ এক মুহূর্ত চুপ করে গেল। তার চেহারায় ভেতরের কৌতূহল জমে থাকলেও কিছু বলল না, কারণ জানে এই রমণীর রাগে আগুন ধরলে সামনে থাকা সব ইজ্জত এর ফালুদা হয়ে যাবে।
ওদিকে ইউভি, বৃষ্টি, নাজিম, রায়ান, মারিয়া সবাই পাশের ছোট্ট ক্যাফেটারিয়ার দিকে এগিয়ে গেল। আকাশও নিরবে তাদের সঙ্গে গেল।
__” পর্দা ওঠা ।”
আরোহী সামনে দুই হাত গুজে ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।
এই হঠাৎ আরোহীর এরকম কথা শুনে তিয়াশা চমকে উঠলো, কি করতে যে এসেছিল ওদের সঙ্গে , বাসায় থাকলেই ভালো হত, এখন কি করবে ? তিয়াশা কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠলো —

__”মানে মানে ?”
__” মানে পর্দা তোল ।”
__” আ আমি পর্দা কেন তুলবো? আমি পর্দা তুলতে পারব না।”
__ ” ও আচ্ছা তুলবি না তাহলে?”
এদিকে অনু বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে এখানে ?
তারা এখানেই বা কেন আসলো সবার আবডালে।
মাথায় যেন ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই তিয়াশা
বলে উঠলো —

__” না”
বলতে না বলতেই আরোহী নিজেই তিয়াশার পর্দা
খুলে দিল । পর্দা খুলতেই দুজনের চোঁখ কপালে উঠে
গেলো । আর এদিকে তিয়াশা লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল। তিয়াশার গলায় কোথাও বাদ দেয় নাই জায়ন নিজের চিহ্ন রাখতে । অনু তো ঐখানেই বসে পরল। আরোহীর চোখ
বড় বড় হয়ে এখনো চমকে আছে । আরোহী কাপা কাপা কণ্ঠে বলে উঠলো —
” ভা ভাই তোর গলায় তো পুরো ছাপা কারখানা
তৈরি হইসে । ”
তিয়াশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে সে শুধু এখন পালাতে চায় , ছটপট করছে । এর মধ্যেই আরোহী বলে উঠল —

__” অনু রে আমায় ধর রে।”
অনু তো তখন থেকেই হকচকিয়ে বসে, মনে মনে ভাবছে এটাই যদি বিয়ে হয়, তাহলে আমার বিয়ের ইচ্ছা এখানেই চিরতরে শেষ। এর মধ্যেই অনু কাপা কন্ঠে বলে উঠলো,
__” আপুরা আমার বিয়ে করার সব ইচ্ছা পালিয়ে গেলো গো । আমি করব না বিয়ে ।”
এর মধ্যেই তিয়াশা বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
__ ” তোরা থামবি প্লীজ? এখান থেকে চল , ভালো লাগছে না আমার । আমি বসবো একটু শরীর খারাপ লাগছে।”
আরোহী আর অনু কোন কথা বললো না , শুধু চুপচাপ
তিয়াশার কথা শুনে ওরা ইউভি দের কাছে যেতে লাগল। ততক্ষনে তিয়াশা ভালো করে বোরখা টা বেঁধে নীল ।নিজের ভিতরে একরকম গুটিয়ে নিল নিজেকে।
ওদের কাছে যেতেই সবাই বসে পড়ল চেয়ার এ, আরোহী দের বাসার সামনেই ক্যাফে । তিয়াশা বৃষ্টি সবাই আছে । তাই আরোহীর আব্বু দেখলেও সমস্যা নেই তাই বিনা চিন্তায় ওদের সঙ্গে যোগ দিল।
হঠাৎ করেই ইউভির বেজে উঠলো , স্ক্রিনে নাম উঠলো
‘বড় ভাই ‘ । ইউভি কল টা রিসিভ করতেই বলল —

__” হ্যা বড় ভাই বলো? ”
বড় ভাই নাম শুনতেই একজনের হওয়া বেরিয়ে গেলো। মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠল , তিয়াশার হঠাৎ করেই গা হাত পা ঘামতে শুরু করলো। যেন শরীর ভেতর থেকে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে।ইউভির
কন্ঠ আবারো কানে এসে পৌঁছালো ,,
__ ” এই তো ভাই আরোহী দের বাসার সামনে ক্যাফে তে আছি ”
ওপাশ থেকে কিছু সোনা গেল না , কিন্তু ইউভি বলল —
__” ওকে ভাই ঠিক আছে আসো।”
ব্যাস হয়ে গেল, ভয়ে তিয়াশা আরোহীর হাত চেপে বসল । এদিকে আরোহী বুঝতে পারছে না , হঠাৎ তিয়াশা এই ভাবে হাত কেন চেপে ধরেছে।
আরোহী অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,

__”কি হলো তোর? হঠাৎ করে এইভাবে ধরলি কেন?”
আকাশের ছায়া ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, নরম আলোয় মুখগুলো আরও গভীর হয়ে উঠছে।
সন্ধ্যার বাতাসে ক্যাফের সামনের কাচের জানালাগুলো কাঁপছে হালকা ঠাসে, ভিতরে জমেছে এক অদ্ভুত চাপা কোলাহল।
তিয়াশা বসে আছে একটু আড়ালে, মুখ নিচু, গলা ঢেকে রাখা কালো বোরখার ভেতরেই যেন গুম হয়ে গেছে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই, কিন্তু ওর বুকের মধ্যে যেন একেকটা ঢেউ উঠছে অস্পষ্ট ভয়, অপরাধবোধ, আর অনিচ্ছা মেশানো অনুভব। সারাদিন এভাবে মুখ ঢেকে থাকতে হবে, এ কথা সে সকালে নিজেকেই বলেছিল। কিন্তু এখন যখন জানে সেই মানুষটা এই মুহূর্তে চলে আসবে সবকিছু যেন অকারণে দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছে।
এর মধ্যেই রায়ান একটু হেঁসে বলে উঠলো —

__ ” আরে তিউ আপু ভাইয়ার কথা শুনতেই এত কাপা কাপি করো কেনো?কে বলেছিল তোমায় আসতে?”
সবাই এই শুনে একটু ঘাবড়ে গেল, সত্যি ই তো ভাইয়া আসবে না বলেছিল তবুও তিয়াশা এসেছে , কি হবে কে জানে ।
এর মধ্যেই নাজিম বলে উঠলো —
” আরে বনু চিন্তা করো না আমরা আছি তো।”
হঠাৎ ইউভি আর বৃষ্টি হেসে উঠলো , ইউভি জবাব
দিলো –

__” থাক নাজিম ভাই, ভাইয়ার চেহারা দেখলেই তোমার হওয়া উড়ে যায় আর বলতে হবে না।”
ইউভির কথায় নাজিম এর একটু সত্যির সঙ্গে মুখোমুখি হল তাই নড়েচড়ে বসল । সত্যি সত্যি
সে জায়ন কে দেখলে যে কিছু বলতে পারবে না
তা সে যানে ।
এর মধ্যেই রায়ান এর পাশে বসে থাকা মারিয়া একটু মুখ ভেঙ্গিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠলো —
__” আপু আমাদের বাসায় যাবে তোমার সমস্যা কোথায় জল্লাদের বাচ্চা রায়ান ভাই?”
টেবিল এর তলা দিয়ে মারিয়ার হাতে আস্তে চিমটি কেটে রায়ান একটু ঝুঁকে মারিয়ার কানে কানে বলল ,
__ ” নেক্সট টাইম জল্লাদের বাচ্চা বললে , বয়স দেখবো না সত্যি সত্যি জল্লাদ দেখতে পাবি । আর আমার মুখে মুখে কথা বললে চড়িয়ে সব দাঁত ফেলে দেবো শাকচুন্নির বাচ্চা।”
এর মধ্যেই বৃষ্টি বলে উঠলো মারিয়া আর রায়ান কে দেখে ,

__ ” তোরা কি ফিস ফিস করছিস রে?”
বৃষ্টির কথায় রায়ান বলে উঠলো,
__” কিছু না আপু এই শাকচুন্নির শিক্ষার অভাব তাই
বলছিলাম ওরে টিউশন দেব।”
মারিয়া আবারো মুখ বেকিয়ে বিড়বিড় করল —
” হুঁ ওনার টিউশন নেওয়ার জন্য আমি যেন বসে আছি।”
হঠাৎ করে ক্যাফের বাতাসটা যেন থমকে গেল।
সবার মধ্যেই এক অজানা সঙ্কোচ আর চাপা উত্তেজনা।ইউভির ফোনে শেষ কথা শোনা মাত্রই সবাই যেন জায়ন এর প্রতীক্ষায়।তিয়াশার বুকের ভেতর এমনভাবে ধুকধুক করছিল।

এর মধ্যেই ক্যাফেটেরিয়ার সামনে গিয়ে থামলো জায়নের বাইকটা। ধূসর এডিডাস ট্রাউজার, সাদা টি-শার্ট, চোখে চশমা চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, তাকে দেখলেই একটা অদ্ভুত ফ্রেশনেস লাগে আলাদা এক উপস্থিতি। বাইক থেকে নামার মুহূর্তেই যেন আশেপাশের প্রতিটি চোখ তাকে অনুসরণ করলো।
চাবিটা আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে জায়ন এক নির্লিপ্ত ফ্রী স্পিরিট মুডে এগিয়ে গেল ইউভি আর নাজিমের পাশে, যেন তার জীবনে কোনো বোঝা নেই, কোনো বাঁধন নেই।আর একবারও ফিরেও তাকালো না ওই বোরখা পরা মেয়েটার দিকে যে কিনা তার বউ, তারই রোদ।

তিয়াশা চুপচাপ বসে, বুকের ভেতরটা ধীরে ধীরে ভারী হয়ে উঠছে। অজান্তেই তার চোখ ছুটে গেল জায়নের দিকে।
সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে, জায়ন এর মুখে
একটু হাসি , বউ পাগলা জায়ন এর কি হলো বউ এর পাশে না বসে অন্য কোথায় গিয়ে বসল।
তিয়াশাকে উপেক্ষা করে জায়ন সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল ,
__” কিছু অর্ডার দিয়েছিস ?”
আকাশ একটু কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

__ “হ্যাঁ ভাই, সবার জন্য পিৎজা আর কোল্ড কফি অর্ডার দিয়েছি। কিন্তু তুমি ঠিক আছো তো?”
জায়ন হাসিমুখে গালে হাত বুলিয়ে বলল,
__ “আমার আবার কী হবে? আমি তো ফুল ফুর্তিতে আছি রে ভাই।”
এই হাসির শব্দগুলো তিয়াশার বুকের মাঝখানে তীক্ষ্ণ কাঁটার মত বিঁধে যাচ্ছিল।ফুর্তি?ফুল ফুর্তি?
কী এমন ঘটেছে যার জন্য ফুল ফুর্তিতে আছে।
এই মানুষটা সারারাত পাশে ছিল,এখন তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না? রাগে টগবগ করে ফুটছে তিয়াশা
নাজিম তখন মজার ছলে বলল,
__ “তা ভাই, তোর এত ফুর্তির কারণ কী? বল দেখি।
নাজিম বৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে আবার জায়ন এর দিকে ফিরে বলল,
__” তোর বোন রে যবে দিয়ে বিয়ে করেছি সব ফুর্তি শেষ হয়ে গেছে আমার ।,”
তার কথা শুনে হালকা হাসির ঢেউ উঠলো টেবিলজুড়ে।বৃষ্টি এক ঝলক চোখে তাকালো নাজিমের দিকে তীব্র বিদ্যুৎ খেলে যাওয়ার মতো।

কিন্তু সেইসব মুহূর্ত থেকে দূরে এক অন্য জগতে ডুবে আছে তিয়াশা।
তার চোখ দুটো ক্রমাগত খুঁজছে সেই চোখদুটোকে…
কিন্তু জায়ন যেন ঠিক করেই এসেছে আজ তাকে দেখবে না, একটুও না।
তিয়াশার মন জুড়ে তখন নিঃশব্দে বয়ে চলেছে এক অদৃশ্য সন্ধ্যা রাত।
তখন জায়ন ওদের সকল হাসি ঠাট্টার মাঝেও একটুখানি থেমে, নিজের সেই জায়গাটা শক্তভাবে দাবি করল । চোখে একরকম দাবদাহ, ঠোঁটে কঠিন দৃঢ়তা, আর কণ্ঠে এমন এক স্থির ধমক যে মুহূর্তেই হাওয়া পাল্টে গেল,

__ ” তোর ফুর্তি যদি আমার বোনের জন্য , তাহলে
অলওয়স যে রাস্তা দিয়ে এসেছিস আমার বোন ,
আর লিটল বয় কে রেখে বিদায় হতে পারিস।”
জায়নের গলা এতটাই ঠাণ্ডা অথচ হাড় গলানো, মনে হচ্ছিল ভিতরটা থই থই করছে রাগে কিন্তু তা প্রকাশ নয়, বরং এক অনড় গম্ভীরতায় ছুরি চালিয়ে দিল যেন।
নাজিম সঙ্গে সঙ্গে মুখের হাসি মুছে নিয়ে একটু কাঁপা গলায় বলল ,

__ ” এ এই আমি ওইটা কখন বললাম না না আমি আমার চন্দ্রাবতী বৃষ্টি কে নিয়ে মেলা সুখে আছি ভাই।”
বৃষ্টিতবু সে শেষ করতে না করতেই পাশে বসা বৃষ্টি মুখটা ঘুরিয়ে ঠোঁট গোল করে বিরক্ত গলায় বলে উঠল
— “ভাইরে ঝাঁজি দিতে না দিতেই আমি চন্দ্রাবতী হয়ে গেলাম, ওড়ে নাজিমের বাচ্চা বাসায় চল একবার তুই।”
নাজিম আর কিছু বলল না চুপ হয়ে গেল , জানে কিছু
বললেই এই দুই ভাইবোন তাকে পিষে ফেলবে। আর এখানে সব শত্রুপক্ষ।

একটু পরে জায়ন যখন সবার জন্য কোক আনতে উঠল, তখন পাশে টেবিলে বসা দুই অচেনা মেয়ে একে অপরকে চোখ টিপে হাসল আর ঠিক জায়নের পেছন পেছন গুটি গুটি পায়ে ফ্রিজের দিকে এগিয়ে গেল। চুল খোলা, ঠোঁটে হালকা লিপগ্লস, মুখে অকারণ হাসি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তারা কারো দৃষ্টি কাড়ার চেষ্টা করছে।
আর কে না জানে, সেই চেহারাটার মালিক আবরার জায়ন চৌধুরী।
সে তো এমনিতেই মেয়েদের ক্রাশলিস্টে থাকে টপে।

জায়ন ফ্রিজ খুলে একটার পর একটা ক্যান বের করছে, সঙ্গে মেয়েদের সঙ্গে কি যেন ফিসফিস, হালকা হাসি এমনভাবে কথা বলছে যেন পুরো ক্যাফেটেরিয়া জুড়ে শুধু তারা তিনজনের মেজাজই আলো করে রেখেছে।হঠাৎ করেই ক্যান দুটো খুলে দিল তাদের হাতে, আর ওই মুহূর্তে ক্যাফেটেরিয়া টেবিলের একপ্রান্তে বসে নজর গেল সবার কিন্তু একজন বোরখার আড়ালে বসে থাকা তিয়াশার চোখ যেন একধরনের তীক্ষ্ণ লেসার রশ্মি ছুঁড়ে দিল ওই দুই অপরাধীর দিকে, মনে হচ্ছে ওই চোখ দিয়েই শেষ করে দিবে। উঠল দাউদাউ করে , মনে হচ্ছে এখনি মেয়ে দুটো কে গিলে খাবে ।

জায়ন আবারো টেবিল এর কাছে এসে সবাই কে কোক দিল । দিলো না শুধু তার রমনী কে ,
সবাই অবাক হয়ে যাচ্ছে বার বার জায়ন এর কীর্তি দেখে । এই বউ পাগলা মানুষ টা হঠাৎ কিছু ঘণ্টার মধ্যে বদলে গেল । এদিকে তিয়াশা দাঁতে দাঁত কিড়মিড় দিয়ে উঠছে মনে হচ্ছে এখনি জায়ন এর মাথা ফাটিয়ে ছাড়বে । এর মধ্যেই ইউভি নিজের কোল্ড ড্রিংকস টা তিয়াশার দিকে এগিয়ে দিয়ে
বলল —
__” নে বোন এইটা ধর ।,”
তিয়াশার চোঁখ বোরখার আড়ালে তখন ও জায়ন এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে। তার কণ্ঠস্বর গম্ভির
ও অভিমানে ভরা ,
__” খাবো না , তুমি খাও।”
যেন ফুস করে উঠল ,ওই এক লাইন, কিন্তু কণ্ঠে যেন ঝাঁঝ, লবণ আর মরিচে ভাজা রসুন একসঙ্গে ঝাঁকে পড়ল।সবাই একটু ঘাবড়ে গেল কিন্তু জায়ন এর মধ্যে কোন রিয়াকশন নেই।
তিয়াশা তখন নিজেকে এমনভাবে সামলে রেখেছে, যেন এখনি লিপস্টিক তুলে জুতো খুলে ফ্লাইং কিক মারবে।
ঠিক তখন ই জায়ন এর ফোন বেজে উঠলো , ফোন টা আসতেই জায়ন একটু মুচকি হাসি দিয়ে কল রিসিভ করল ,

__” ইয়েস মিস বিউটিফুল জুলি ।”
এই এক বাক্যেই চারপাশ ঠান্ডা থেকে তপ্ত হয়ে গেল।
তিয়াশা মনে মনে ভাবছে ,
__”জুলি কে? বিউটিফুল কেন?আর আমি তাহলে কি ?
ওপাশ থেকে কি বলছে সোনা যাচ্ছে না, কিন্তু জায়ন এর কথায় সবাই ওর দিকে তাকিয়ে পরল। এই ছেলে
নিজের বউ এর সামনে অন্য মেয়ে কে বিউটিফুল বলছে। নিজের জানেজা কি নিজেই খুদতে চাইছে?
বোরখার আড়ালে বসে থাকা তিয়াশা… সে তখন রাগে এমন মুখভঙ্গি করছে, যেন আর এক সেকেন্ডেই “মিস বিউটিফুল জুলি” নাম শুনলেই চামচ ছুড়ে ফোন ভাঙবে। টেবিলে রাখা প্লেটের পাশ থেকে এক কাটা চামচ তুলে হাতের সব জোর লাগিয়ে এমনভাবে ঘষতে লাগল, যেন সেটা দিয়ে ‘জায়ন চৌধুরী’ মুখ থেকে ‘ জুলি’ নাম টা চিরতরে কেটে দিতে চায় ।জায়নের মুখে আবার ভেসে উঠল সেই মারাত্মক ‘স্মাগ’ হাসিটা,

__” ওকে মিস বিউটিফুল জুলি উই ক্যান টক লেটার, হোয়েন আই রিচ হোম , দেয়ার ইজ নো বাডি ক্যান
ডিস্টার্ব আস, হেয়ার ইস টু মাচ নোয়েসি বিউটিফুল।”
এই শুনে আকাশের মুখ থেকে কোল্ড্রিংস চারিদিকে
ছড়িয়ে পড়ল।
ইউভি তো বলেই ফেলল জায়ন এর কানে ফিস ফিস করে ,
__ ” খু*ন হইতে চাও নাকি ভাইয়া ?”
ইউভির দিকে তাকিয়ে ধিম গলায় জবাব দিল —
__” ইচ্ছা তো করছিল তোর বোন কে খু*ন করতে ,

কিন্তু তারপর ভাবলাম নিজেই নিজের খু*নের ব্যবস্থা করি। বউ আমার ভয়ে ফুপির বাসায় যাচ্ছিল । দেখবি
এবার নিজেই আমার পিছন পিছন বাসায় যাবে।”
এই বলে জায়নের মুখে একটা বাঁকা, বিপজ্জনক হাসি খেলে গেল।
ইউভি তখনো নিজের কান ঝাঁকাচ্ছে, যেন বুঝে উঠতে পারছে না, এই কথা আদৌ সে ঠিক শুনেছে কিনা।
এদিকে আরোহী বান্ধবীর এই ভাবে চামচ নাড়ানো দেখে ভয়ে কেঁপে উঠল , ফিসফিস করে বলে উঠলো
__” দোস্ত চিল কন্ট্রোল।”
তিয়াশা চেহারার রাগী দ্যুতি রেখে সে কাঁপতে কাঁপতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল —

__” কন্ট্রোল এর মাইরে ১০৮ ”
এদিকে তিয়াশা গজ্রাচ্ছে মনে মনে বলছে কথা বলাচ্ছি
তোর বাসায় গিয়ে । চিটিং বাজ বাসায় বউ থাকতে বিউটিফুল বলা হচ্ছে। এই সব ভাবনার মধ্যেই তিয়াশা রুড কন্ঠে ছুঁড়ে দিল একটি বাক্য —
__” ভাইয়া আমি ফুপির বাসায় যাব না , আমাকে আমাদের বাসায় ছেড়ে দেবে । ”
এর মধ্যেই বৃষ্টি বলে উঠলো —
__” কেন রে কি হল ?”
তিয়াশার সোজা সাপটা উত্তর,

__” শরীর খারাপ লাগছে তাই ।”
জায়ন আবারো ইউভির কানে কানে আবারো ফিস ফিস করে বললো —
__” দেখলি কি বলেছিলাম। আমার কাজ শেষ আমি যাচ্ছি , আমার বউ কে সাবধানে বাসায় ছেড়ে দিবি।”
এই বলে আবারো সেই বাঁকা হাসি, ইউভি পুরোই হতবাক । তখনো বোকার মতো তাকিয়ে আছে, মুখে শুধু একটাই ভাব।
__” ওকে তোরা এনজয় কর , আমার বাসায় যেতে
হবে । ”
এই বলে জায়ন উঠতে যাবে, হঠাৎ পেছন থেকে সেই
মেয়ে দুটোর মধ্যে এক জন এসে বলল ,
__” ভাইয়া আপনার ফেসবুক আইডি টা দিয়ে গেলে
ভালো হত ।”

ব্যাস সব ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিল তিয়াশার , হঠাৎ চেয়ার এক ঝটকায় ছুঁড়ে উঠে দাড়াল তিয়াশা ।
ওদের টেবিল এ থাকা এবার সবাই ঘাবড়ে গেল অনেক , ক্যাফেটেরিয়া যেন মুহূর্তে থেমে গেল, নিঃশব্দ।জায়নের চোখ বড় বড় , এমন কি জায়ন নিজেও এবার একটু দমে গেল। সে তো ভাবে নাই মেয়ে গুলো এই কান্ড করবে । তিয়াশা এগিয়ে গেল মেয়ে টার দিকে , সামনে দিয়ে শুধু পর্দা টা একটু উঠালো ।
এবার সবার নজর গেল ওই র*ক্ত গলা চোখে , এমন
কি মেয়ে টাও ঘাবড়ে গেল । অমনি এক চিৎকার ছুঁড়ে মারল তিয়াশা —

__” বান্দীর বাচ্চা তোর আইডি চাই , আমি দিচ্ছি তোকে আইডি। যার আইডি চায়ছিস আমি তার তিন কবুল বলা বউ।আইডি তো আমি,তুই কী ভাবছিস, কোক খাইয়ে প্রেম জমবে?এই আমি এখন তোর মাথায় কোল্ড ড্রিঙ্ক ঢেলে দিই।”
এই বলেই পাশে থাকা ক্যান মাথায় ঢেলে দিল মেয়ে টার।
ইউভি তাঁরাতারি ছুটে আসলো , সঙ্গে রায়ান আর আকাশ ,
__”বনু বনু এরকম করিস না সবাই দেখছে।”
__” আপু কুল কুল , এরকম করেনা প্লীজ ”

কে কার কথা শোনে, তিয়াশার চোঁখ দিয়ে আগুন বেরোচ্ছে।এবার জায়ন এর ও গলা শুকিয়ে আসছে । মেয়েটা এক ধাক্কায় এক কদম পিছে, মুখে থতমত ভাব।চারপাশে লোকজন হাঁ করে তাকিয়ে,
আরোহী, বৃষ্টি, মারিয়া থ হয়ে দাঁড়িয়ে, মুখে চাপা উত্তেজনা।
নাজিম ফিসফিস করে বলল ,
__”যেমন জামাই তেমন বউ ।”
এবার তিয়াশা কোমরে দুই হাত দিয়ে আবার ও বলে উঠলো,
__” সুন্দর ছেলে দেখলে জীব লক লক করে , বান্দির
বাচ্চা চুল ছিঁড়ে কাঁচা বেচে ফেলব।তোকে পুঁতে রাখব ক্যাফেটেরিয়ার গেটের সামনে।”
এই বলে মেয়ে টার চুল টানতে যাবে , অমনি জায়ন
পেছন থেকে কোমর ধরে টেনে নিল ,

__” বউ বউ ব্যাস ব্যাস এরম করে না জান, চল চল । ওই মেয়ে টার চুল তুলে ফেলবি তো তুই।”
এই সোনা মাত্রই তিয়াশার রক্ত আর গরম হয়ে উঠলো
এবার ওই কোলের মধ্যে তিরিং বিড়িং অবস্তায় ঘুরে জায়ন এর চুল টেনে ধরল ,
__” তোর ওর চুলের জন্য মায়া হচ্ছে বদজাত, বাসায়
বউ থাকতে অন্য মেয়েদের দিকে হেসে হেসে কথা বলিস । কানের পাশ দিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলিস—
‘ইয়েস মিস বিউটিফুল জুলি।’আর আমায় দেখে খেজুর মুখ ।আমায় কাঁচকলা আর ওদের কোল্ড ড্রিঙ্কস।তুই কি ভাবিস আমি কিছু বুঝি না?”

জায়ন ওই অবস্থায় তিয়াশা কে নিয়ে ওর সেই ঝড় তোলা মেজাজ নিয়েই ক্যাফেটেরিয়া ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল,
যেতে ক্যাফেটেরিয়ার লোক দের ইশারায় সরি বলে।
আর নিজেদের লোক দের দিকে তাকিয়ে বলল ,
__” ভাই আমার বউ এর মাথায় জিন ভর করেছে ।
আমরা গেলাম গুড নাইট।”
তিয়াশা তখনো পেছনে কাপতে থাকা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠল ,
__”বান্দির বাচ্চা, তোকে যেখানেই দেখব,
তোর চুল তো ছিঁড়বই ,সঙ্গে তোর সেই লকলকে চোখের দৃষ্টিও ছিঁড়ে ফেলে দিব।”

ক্যাফেটেরিয়ার ঘরময় তখন হালকা গরম, নীরব উত্তেজনার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে বাতাসে। দর্শকদের নিঃশ্বাস যেন একটু ভারী হয়ে উঠেছে কেউ চোখ চাউনি সরিয়ে নিচ্ছে, কেউ ঠোঁট কামড়ে হাসি চেপে রাখছে।আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে ইউভি, আকাশ আর রায়ান ওদের মুখে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন। নিজেদের বোনের এই আকস্মিক কান্ড দেখে ভেতরে ভেতরে জ্বলছে লজ্জায়, কিন্তু মুখ নিচু করে রাখলেও চোখের কোণে লুকানো হাসিটা যেন থামানো যাচ্ছে না।কারো দিকে তাকালেই মনে হচ্ছে চারপাশের লোকজন চোখ দিয়ে ছিদ্র করে দিচ্ছে, অথচ তিয়াশার সেই ‘ধুন্ধুমার নায়িকা মোড’ দেখে ভাইয়েদের মুখে কেবল একটাই অনুভূতি।
অনন্যা তো আর চুপ থাকতে পারল না। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে অর্ধেক হাসি চেপে, অর্ধেক দুঃখে বলে ফেলল,
__”বড় আপু, আমার তো মনে হচ্ছে আজ জায়ন ভাইয়ের কপালে সত্যিই দুর্ভাগ্যের কালো রেখা জেগে উঠেছে। ”
বৃষ্টি কিছু বলে না, চোখে একটা বিস্ময়ের ঝিলিক। তার দৃষ্টিটা তখনো অনেক দূরের গেটের দিকে,
“যেখানে সদ্য ঘটে যাওয়া কান্ডটা যেন বাস্তব না, কোনো ফিল্মের সিন। তিয়াশা যা করল, সেটা বিশ্বাস করা তো দূরের কথা, মানতে পারছে না।”

সবাই যখন আয়েশা বেগমের বাসায় পৌঁছেছে, তখন যে যার মতো ফ্রেশ হতে রুমে ঢুকে পড়ল। রুমের কোন কমতি নেই, সদস্য মাত্র চারজন। তার মধ্যে আকাশ তো প্রায়ই চৌধুরী বাড়িতেই থাকে।
আজও আকাশ বাড়ি ফেরেনি বলেছে, একটু পরে ফিরবে, তার “জলপরী”র সঙ্গে একটু মন খুলে গল্প করে আসবে।
এইদিকে, আকাশের রুমেই ফ্রেশ হচ্ছিল ইউভি। একটু পর রুম থেকে বেরিয়ে এল শরীরে শুধু সাদা টাওয়াল জড়ানো, জল টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছে সুঠাম শরীর বেয়ে। দরজা খুলে বের হতেই হঠাৎ বিছানার দিকে চোখ পড়তেই ইউভির শরীর হিম হয়ে গেল।
তড়াক করে আরেকটা টাওয়াল টেনে নিল নিজেকে ঢাকার জন্য, চোখ বড় বড় করে বলে উঠল,

__”পা-পাখি? তুই এখানে? এখন? ক-কি করিস?”
বিছানায় বসে থাকা অনন্যা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। তারপর কিছু না বলে এক পা, এক পা করে ইউভির দিকে এগিয়ে এলো। ইউভি হতবাক এই মুহূর্তে তার শ্বাসটাও যেন আটকে আসছে।
অনন্যা সামনে এসে থেমে গেল। চোখে চোখ রেখে হালকা গলায় বলল,
__”সরি ইউভি ভাই।”
__”কে… কেন পাখি?”
অনন্যা এবার একটু কোমল চোখে তাকিয়ে বলল,
__”আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম।”
ইউভি একটু বাকা মুখ ঘুরিয়ে হালকা হাসল,

__”তুই তোর সেই সন্দেহ নিয়েই নেহার কাছে গেছিলি… আমার কথা একটুও বিশ্বাস করিসনি, তাই না?”
অনন্যা এবার আরেকটু এগিয়ে এলো, আর ইউভির শরীর থেকে উষ্ণতা যেন ছড়িয়ে পড়ছে সারা ঘরে। সে নিচু স্বরে বলল,
__”না … আমি নেহা আপুর কাছে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। আমি আমার মানুষটাকে বিশ্বাস করেছি।”
এই কথায় ইউভির চোখে এক ঝিলিক খেলে গেল। মিষ্টি অথচ গভীর মাদকতার দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
__”কতটা বিশ্বাস করিস, পাখি?”

অনন্যা এবার আর এক পা দূরেও নয়। সরাসরি ইউভির বুকের সঙ্গে নিজের শরীরটা আলতোভাবে মিশিয়ে গলা জড়িয়ে ধরল।মুহূর্তেই ইউভি চমকে উঠলো, এ কি ঘটলো তার সঙ্গে , তার শিরায় শিরায় যেন বিদ্যুত চমকে উঠলো । এক অন্যরকম শিহরন জেগে উঠলো , তারপর মাথা তুলে ইউভির গালে একটা কোমল চুমু এঁকে দিল ,অনুর ঠোঁটের আলতো ছোঁয়াটা ঠিক যেন ইউভির সবকটা চিন্তাকে মুহূর্তেই স্তব্ধ করে দিলো। মুহূর্তটা কোনো বাজে নাটকের মতো নয়, বরং ঠিক যেন একটানা চলতে থাকা বুকের ভেতরকার দৌড় থেমে গিয়ে হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া একটা সন্ধ্যা।সে কিছু বলতে পারলো না। চোখ বড় বড় করে শুধু চেয়ে থাকলো অনুর দিকে যেন এই মেয়েটা এখন আর তার চেনা সেই ঝগড়াটে, আদুরে বাচ্চা অনু না, বরং একটা ঝড়, যে তার সমস্ত অহংকার, রাগ, যুক্তি সব উড়িয়ে একটুকরো চুমুতে তাকে হার মেনেছে।

তার বুকের বাঁ পাশ যেন জ্বলে উঠেছে ধীরে ধীরে, কিন্তু সে আগুন পোড়ায় না,শুধু উষ্ণ করে । ঠিক তখন অনু মুচকি হেসে ফিসফিস করে বলল,
__”ঠিক এত্তটা।”
এটা বলেই অনন্যা ছুটে পালাতে যাবে, কিন্তু হঠাৎ তার হাতটা শক্ত করে টেনে ধরল ইউভি। বুক ধকধক করছে তবুও এক অদ্ভুত শীতল স্থিরতা।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫১

অনন্যা ঘুরে তাকাতেই ইউভি এক ঝটকায় তাকে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে দিল। চোখে চোখ রেখে গম্ভীর গলায় বলল,
__”আগুন লাগিয়েছিস পাখি, এখন নিভিয়ে যাবি।”
এই বলে মুহূর্তেই তার ঠোঁট বসিয়ে দিল অনন্যার ওষ্ঠে। দুই হৃদয়ের মাঝখানে তখন শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ, আর বাইরের পৃথিবী নিশ্চুপ।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here