তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৪

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৪
নীল মণি

_”বা** যদি কোনও এক্সাক্ট কারণ না দিস, তাহলে তোর যে কি হাল করব ঠিক নেই , এতবার কল দেওয়া বার করব আমার রোমান্সের টাইমে ,মাথা ঠিক রাখতে পারবো না।”
জায়নের চোখ দুটো ঠিক যেন জ্বলন্ত কয়লার মতো,
গলায় আগুনে কাঁপুনি, দাঁতে দাঁত পিষে ফোনের ওপাশে থাকা মানুষটাকে গর্জে উঠেই ধুয়ে দিল সে।
এদিকে তিয়াশা এখনো মিরর এর সামনে স্ল্যাবে আধভেজা কেশে, তিয়াশা নীরবে বসে।তবে চুপচাপ নয়,ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি।
জায়ন যে ভাবে রিঅ্যাক্ট করছে…
তাতে মনে মনে বলেই উঠতে ইচ্ছে করল

__”অসভ্য সবাইকে জানাতে হয় কি রোমান্সের কথা…”
শরীর জ্বলছে, মন কাঁপছে আজ তিয়াশার নিজের মধ্যেই যেন আগুন লেগে আছে। শুধু শোনা গেল জায়নের সেই রাগে ফুটন্ত অথচ রসিক গলা,
__”ওকে আসছি। কি বা** প্রেম করিস, যে ফোনে কাপাকাপি করিস রাখ, যাচ্ছি একটু পরে”
এই বলে জায়ন ফোনটা কপাল চুলকে ছুঁড়ে মারল বিছানায়।তারপর এক গভীর শ্বাস নিয়ে ধীর পায়ে আবার ফিরল তিয়াশার কাছে।কিন্তু এবার যেন আরও অন্যরকম, , কিন্তু এবার স্পর্শের ধরনটা পাল্টে গেছে।
সে নিজের এক পা তিয়াশার দুই পায়ের মাঝে রেখে দাঁড়াল,আর তিয়াশা বসে থাকা অবস্থায় এক উরু আটকে জায়নের দুই পায়ের মাঝে, তৎক্ষনাৎ দুজনের শরীরেই কেঁপে উঠল শিহরণ।
জায়নের দুই হাত স্ল্যাবের ওপর, ঘিরে ধরেছে তিয়াশাকে।
আর ওর নাক স্পর্শ করছে তিয়াশার বুকের ত্বক…
তিয়াশা চোখ বুজে গলা পেছনে ফেলল,নিজের দুই হাতের আঙুল গুঁজে দিল জায়নের চুলের ভেতরে…কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__”কো… কোথাও যাবে তুমি?”
জায়নের চোখে আগুন, ঠোঁটে মৃদু কামনার তৃষ্ণা।
জায়ন তিয়াশার কোমর আর টেনে কাছে আনল,
ওর শরীরের উষ্ণতা মিশে গেল তিয়াশার স্পন্দনে।
তার আঙুল এবার নেমে গেল তিয়াশার উন্মুক্ত উরুতে
হাত বেয়ে বাড়তে লাগল ওপরে, যেন ধীরে ধীরে আগুন জ্বালাতে চাইছে ওর ত্বকে।
__”এরকম বউ রেখে যেতে মন চাইছে না জান…
কিন্তু তোর বান্ধবী আর আমাদের ভাই কেস খেয়েছে বাপের কাছে…তাই যাওয়ার আগে তোকে একটু… লুভে নেই।”
এই বলে সে হাত চালিয়ে দিল তিয়াশার নাইট ড্রেসের ভেতরে…জায়ন এর আঙুলের নরম খেলা যেন শিউরে তুলল তিয়াশার পুরো শরীর।ওর ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছে ঘাড়ের বাঁক, কানের লতিতে,একেকটা চুম্বন যেন আগুন হয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে তিয়াশার সমস্ত স্নায়ু।
জায়নের হাত এবার ওর শরীরের ভেতরের মানচিত্র চিনে নিচ্ছে চোখ বন্ধ করেই।তিয়াশার নাইট ড্রেসটা আর কোন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।
ওর ত্বকে আঙুল চালিয়ে জায়ন নিচু হয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

__”তুই জানিস না… তুই কেমন জ্বালিয়ে দিস আমাকে।
এই শ্বাস, এই গন্ধ… সবকিছু আমার হুঁশ উড়িয়ে দেয়।”
তিয়াশা তখন চোখ বন্ধ করে নিজের নখ দিয়ে জায়নের পিঠ আঁচড়ে দিচ্ছে,ওর শরীর কাঁপছে, ঠোঁট থেকে চাপা একটা আর্তনাদ বেরিয়ে এল,তিয়াশা ফিসফিসিয়ে বলল,
__”প্লীজ তুমি এমন করো না… ”
জায়নের ঠোঁট এবার গিয়ে থামল তিয়াশার বুকের ঠিক মাঝ বরাবর,ওখানে একেকটা চুম্বন দিয়ে, জিভের ছোঁয়ায় তিয়াশাকে তুললো কাঁপিয়ে,আর তিয়াশার শরীর তখন ছটফট করছে যেন সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছে না।তারপর জায়নের হাত আরও গভীরে, আরও অভ্যন্তরে…
তিয়াশা ছটফট করে উঠে ওর গলায় পড়ল,
জায়ন এর কাঁধে ঠোঁট চেপে ধরল, যেন কাঁপনগুলো না দেয়।
জায়নের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে, বুকটা ওঠানামা করছে দ্রুত গতিতে,তবু নিজেকে সামলে নিয়ে সে তিয়াশার কান চেপে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,

__”তোর প্রতিটা দম আমি চাই ,কিন্তু এখন যেতে হবে বেবি। দেখে আসি কি কেস খেয়েছে তারপর রাতটা কেমন কাটবে, সেটা শুধু তুই আর আমি জানবো।”
তারপর ওকে আলতো করে কোলে তুলে খাটের ওপরে বসিয়ে দিল,তিয়াশা তখনও ঘোরের মধ্যে চোখে কুয়াশা, ঠোঁটে আধভাঙা হাসি।জায়ন কাবার্ড খুলে একটা কালো বোরখা বের করল,আর ঠিক তখনই তিয়াশা অবাক হয়ে একটু কাঁপা কণ্ঠে বলল,

__” আমিও কি যাচ্ছি তোমার সঙ্গে? তাহলে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই?”
জায়ন বোরখা পরাতে পরাতে বলল ,চোখ না তুলে ঠাণ্ডা গলায় বলল,
__” উহম, না বেইব তোকে ওই বাসায় রেখে আমি যাব।ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে না ,বাসায় ফিরে খাবার নিয়ে সোজা উপরে গিয়ে দরজা লক করে দিবি আর অপেক্ষা করবি, ঘুমালেও কিন্তু জাগিয়ে তুলবো মনে রাখিস ।”
তিয়াশা লজ্জায় একটু মিটমিট করে তাকিয়ে মুখ লাল হয়ে উঠল লজ্জায়,ওর ঠোঁটের কোণে লুকোনো হাসি ফুটে উঠল,

__” এত অর্ডার কেন দেও ?আর আমি তোমার সঙ্গে যাই না আরোহী র হয়তো আমাকে লাগবে ?”
জায়নের মুখ সঙ্গে সঙ্গেই গম্ভীর হয়ে উঠল,
সে তিয়াশার গাল চেপে টেনে ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে,দৃষ্টিটা আটকে রেখে একটানে বলল,
__” তোকে একমাত্র আমার লাগবে , আর কারো নাম
নিবিনা নেক্সট টাইম সে ছেলে হোক বা মেয়ে।”
এই অধিকার মিশে থাকা গলায় যেন সমস্ত ঘরটা কেঁপে উঠল।তিয়াশা কিছু বলার আগেই জায়ন তাকে শক্ত করে বুকে টেনে নিল,আর তারপর কোলে তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল,পেছনে ফেলে রেখে গেল ঘরে কামনার উত্তাপ,আর সামনে টেনে নিল এক রাত,যেখানে শুধু ওরা দুজন,
আর একটি অন্ধকারে জ্বলে ওঠা ভালোবাসা।

ঘরের বাতাসটা ভারী, নিঃশ্বাস ফেলতেও যেন শব্দ হয়।
ঘরের ঠিক মাঝখানে রাখা সিংহাসনের মতো চওড়া সোফায় বসে আছেন মোজাম্মেল চৌধুরী ।একজন কঠিন মেজাজের মানুষ, মুখে থমথমে নীরবতা, চোখে আগুনের মতো রাগ।চোখজোড়া লাল হয়ে আছে, আর দাঁত দুটো এমনভাবে চেপে ধরে রেখেছেন,
মনে হয় যেন এখনই বিস্ফোরণ হবে।পাশেই দাড়ানো ওনার স্ত্রী রাবেয়া বেগম , উনি ও রাগান্বিত চেহারায় তাকিয়ে আছে আরোহীর দিকে।
সামনের মেঝেতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর আরোহী,মাথা নিচু, চোখ মাটিতে, ঘাম মুখে।চারদিক নিস্তব্ধ, আর মোজাম্মেল সাহেবের গলার নিচ থেকে উঠে আসা ভারী নিঃশ্বাস।
হঠাৎ সেই নীরবতা চিরে গর্জে উঠল এক বজ্রপাতের মতো কণ্ঠ,

__”তুমি আয়েশার ছেলে হয়ে এইভাবে রাতের বেলা আমার মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বেড়াচ্ছ? তোমার মামা রা জানেন তুমি এভাবে রাতের অন্ধকারে বখাটে ছেলে দের মত প্রেম করে যাচ্ছ ?”
প্রতিটি শব্দ যেন মেঝেতে আছড়ে পড়ল।ঘরের দেয়াল কেঁপে উঠল যেন, আরোহীর চোখে জল চিকচিক করে উঠল।আকাশ থ হয়ে গেল চোখ তুলেও তাকাতে পারছে না,কণ্ঠ শুকিয়ে এসেছে, অথচ বুকের ভেতরটা আগুনের মতো জ্বলছে।
মোজাম্মেল চৌধুরীর আঙুল উঠল আকাশের দিকে,
চোখ রক্তবর্ণ, ঠোঁট থরথর করে কাঁপছে রাগে।

__”তোমার মা ছিলো আমার ছোট বোনের মত ,তোমার মামা আমার ছোটবেলার বন্ধু, সে সব সম্পর্কের মান রেখে তোমাকে এই পাড়ার লোক দিয়ে এখনো মার খাওয়ায় নি।”
তারপর তাঁর দৃষ্টি সরল আরোহীর দিকে,
__”আর তুমি? তোমাকে স্বাধীনতা দেওয়ার এই দাম দিলে ? রাস্তায় দাঁড়িয়ে ….. ছিঁ।
আরোহীর চোখ দিয়ে এবার জল পড়তে লাগল,
কিন্তু সে কিছু বলছে না শুধু মাথা নিচু করে আছে।
এমন সময় আকাশ কাঁপা গলায় একটু সামনের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
__” শ্বশু.. মানে আঙ্কেল… আমরা ভুল করিনি। আমি আর আরোহী…একটা অন্যরকম অনুভবে জড়িয়ে পড়েছি। এটা যদি অপরাধ হয়,তাহলে শাস্তি আমাকেই দিন ওকে কিছু বলবেন না।”
ঘরের পরিবেশ এবার আরও ভারী হয়ে উঠল।
মোজাম্মেল সাহেব ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন।
উঁচু কণ্ঠে না, কিন্তু আরও শীতল এক গলায় বললেন,

__”ভালোবাসা যদি এতই পবিত্র হয়, তাহলে কেন লুকিয়ে করছো?”
ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন ঘরের বাতাসটা আরও ভারী হয়ে এসেছে,
কলিং বেলের ঝনঝন শব্দে যেন থেমে গেল সবাই।
রাবেয়া বেগম এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন,
চোখেমুখে অস্বস্তি তবু স্বভাবগত সৌজন্যতা নিয়ে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেলেন দরজার দিকে।
দরজা খুলতেই সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা দুজনকে দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল তাঁর।
সামনে ইউভি আর তার পাশে ঠান্ডা চোখ, চাপা চেহারা,একটা গা ছমছমে ব্যক্তিত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জায়ন। ইউভি অনেক বারই এ বাসায় এসেছে , সমস্যা হল জায়ন সেদিন বিয়ের দিন ওই কান্ডর পর সবাই যেন তাকে দেখে আটকেই ওঠে। কিন্তু গতকাল বউ কে নিয়ে যা করেছে নিজের বিয়েতে তা এনাদের পাগলামি ছারা আর কিছু না ।
দুজনেই সম্মান দিয়ে সালাম জানালো।রাবেয়া বেগম কিছুটা দ্বিধা নিয়ে হলেও বললেন,

__”আসো ভিতরে আসো।”
ওরা ঘরে ঢুকতেই যেন একসাথে সব চোখ তাদের দিকেই ঘুরে গেল।আর মোজাম্মেল চৌধুরী…
উনি চেয়ারে বসা অবস্থা থেকে একটু উঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন,চোখ গেল জায়নের দিকে…চোখ কপালে উঠে গেল ঠিক তখনই।
কারণ এ ছেলেকে তিনি ভালো করে চেনেন। আগে কখন ও যদি ভালো ছেলের উদাহরণ দিতে হত নির্দ্বিধায় জায়ন এর নাম নিত, কিন্তু তিয়াশার সেই বিয়ের রাতে পুরো পরিবারকে একরকম উল্টে দিয়েছিল এই ছেলেটাই।তীব্র স্মৃতি ভেসে উঠল মনে চোখে ব**ন্দুকের ঝিলিক,আর হৃদয়ে সেই অজানা আতঙ্ক।
চোখে স্পষ্ট বিরক্তি নিয়ে ঠাণ্ডা গলায় বললেন,

__”তোমরা এখানে কেন?”
ঠিক তখনই এক অদৃশ্য স্বস্তির ঢেউ আকাশের বুকে ফিরে এলো।দুটো পরিচিত মুখ দেখে মনে হল যেন বুকের উপর থেকে কেউ পাথর সরিয়ে নিয়েছে।
আকাশ তো জানে, ভাইয়া মানে জায়ন ওর উপস্থিতি মানে নির্ভরতা, ওর থাকার মানে “সব ঠিক হয়ে যাবে।”
আকাশ চোখ তুলে চুপচাপ তাকাল ইউভির দিকে।
একটা ছোট্ট চোখের ইশারায় যেন অনেক কথা বলে ফেলল,
__”ধন্যবাদ… সত্যিই বাঁচালে, ভাইয়া।”
জায়নের চোখে ছিল না কোনো মেকি ভদ্রতা,শুধু এক ঝলক তাকিয়ে নিয়ে গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে রইল,
যেন কথা বলার জন্য নয়, দেখার জন্য এসেছে।
আর ইউভি একটু এগিয়ে এসে শান্ত গলায় বলল,

__”আঙ্কেল, আমি আর ভাইয়া একটু কথা বলতে এসেছি। আকাশ আর আরোহীকে নিয়ে।”
মোজাম্মেল সাহেব কিছুক্ষণ স্থির হয়ে তাকিয়ে রইলেন ইউভির দিকে।তাঁর মুখের একপ্রান্ত শক্ত হয়ে উঠল, ঠোঁট চেপে রইলেন,মোজাম্মেল সাহেব একটু থেমে স্পষ্টভাবে বলে উঠলেন,
__”দেখো ইউভি, আমি এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা করতে চাই না। সম্মানের খাতিরে সম্পর্কের খাতিরে এখনো কিছু বলিনি তোমার এই ভাই কে ।”
তাঁর কণ্ঠে ছিল একরকম অবজ্ঞা, এবং গলার ভারি স্বর বুঝিয়ে দিল,এই আলোচনা এখানেই শেষ এটাই তাঁর অবস্থান।ঠিক তখনই পাশ থেকে জায়নের কপালটা একটু কুঁচকে উঠল।চোখে একরকম ঠান্ডা আগুন, ঠোঁটে একটুখানি বাঁকা হাসি।
সে ধীর গলায়, কিন্তু কাঁটা যুক্ত সুরে বলল,

__”কেন, এই কথা বললেই আপনার দাদ হাজার প্রবলেম হবে নাকি? আর সম্মান , সম্পর্ক ঐটা আপনি আপনার কাছে রাখেন ওই দিয়ে আমাদের কোন কাজ নেই।”
ঘরটা মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেল।শুধু এক একটা নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে যেন।মোজাম্মেল সাহেব বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে তাকালেন জায়নের দিকে।
উনার চোখে অবিশ্বাস, অভিমান আর ক্রোধ মিশে এক অদ্ভুত ছায়া আর কেন জানেনা কপালে জমে উঠছে বিন্দু বিন্দু ঘাম ।
আরোহী ভয়ে একটু পিছিয়ে গিয়ে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল, ওর হাত পা কাঁপছে চোখে জল জমে উঠেছে। আকাশ তো একেবারে গলে গেল মাটিতে। মনে মনে চাপা কণ্ঠে বলছে,

__”ডাকলাম সমাধান করতে, কিন্তু ভাইয়া তো নতুন বিপদ ডেকে আনছে।আজই মনে হয় শ্বশুর আব্বা তিন কবুলের আগে তিন তালাক শুনিয়ে দিবে।”
মোজাম্মেল সাহেব মনে মনে ভাবছে এই ছেলের আজ ই কেন আমার বাসায় আসতে হল। তবুও মনে সাহস যুগিয়ে একটু গর্জে উঠল আরেকটা কণ্ঠ,ধর্ম, রক্ত ও সম্মান মিলিয়ে যার কণ্ঠে অভিমান ,
__”জায়ন,এতটা অভদ্র কেন তুমি?তুমি কি তোমার বাপ চাচার মুখ ডুবিয়ে রাখবে ?”
ঘরটা যেন হঠাৎই আরও ভারী হয়ে উঠল,দেয়ালের ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে এগোচ্ছে, কিন্তু শব্দটা যেন অস্বাভাবিক জোরে কানে বাজছে।
মোজাম্মেল সাহেবের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে, আর চোখের কোণে জমে থাকা রাগ এতটাই তীক্ষ্ণ যে, মনে হয় কেউ এগিয়ে এলে সেই দৃষ্টিতেই কেটে যাবে।
ইউভি এতক্ষণ ধরে নিজের ধৈর্যের রাশ টেনে রেখেছিল, কিন্তু বড় ভাই যতই লাগামহীন হোক, তার বড় ভাই কে কেউ হেয় করুক এটা সে মেনে নিতে পারবে না।তাই সে নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঠান্ডা ভঙ্গি ভেঙে, এক নিঃশ্বাসে ঝাঁঝালো স্বরে বলে উঠল,

__”আঙ্কেল, আমরা তো ভালোভাবে এই ব্যাপারটা মেটাতে এসেছিলাম । আপনি এমনভাবে আমাদের পরিবার নিয়ে কথা বলতে পারেন না।”
তার গলায় তীব্রতা ছিল, কিন্তু তাতে ছিলও একরকম সম্মানের বাঁধা যেটা মোজাম্মেল সাহেব চিনতে পারলেন।তবুও, তাঁর গম্ভীর স্বর অপরিবর্তিত থাকল,
__”আমি তোমাকে কিছু বলতে চাইছি না, ইউভি। তুমি আমার ভাই সমান বন্ধুর ছেলে। কিন্তু তোমার এই গুণধর বড় ভাইয়ের অভদ্রতামি আমি মেনে নেব না।”
এই কথাটাই যেন গিয়ে গেঁথে বসলো জায়নের বুকে,
সে এতক্ষণ নিজেকে অনেক কন্ট্রোল করে কথা বলছিল, মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছিল, কারণ জানে নিজের রাগ একবার বেরিয়ে গেলে তা কেবল কথা নয়, আগুনের মতো ছড়াবে।কিন্তু এই মানুষটা যেন বারবার কাঠি দিয়ে ঘাঁটছে,আর জায়নও ঠিক সেই কাঠিটাই এবার নিজের হাতে নিয়ে ভাঙতে চাইল।
সে ধীরে সোফায় বসে পড়ল, সামনের দিকে ঝুঁকে দুই হাঁটুর উপর হাত রাখল, আর চোখে সেই আধা-ঠান্ডা আধা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলল,

__”আমি তিন বছর আগেই ভদ্রর আগে চন্দ্রবিন্দু লাগিয়েছি। আর একটা কথা আছে, জানেন তো? পাগলে পাগল চেনে, কুকুরে চেনে ভাদ্রমাস।”
এই কথায় ঘরের বাতাস কেঁপে উঠল।
আকাশ নিজের অজান্তেই কপালে হাত চাপল মনে মনে শুধু প্রার্থনা করল যেন এখানেই বিস্ফোরণ না ঘটে। আকাশ বরাবার ইউভির দিকে তাকাচ্ছে ,ইউভি আড়চোখে তাকিয়ে ভাইকে ইশারা করল, “চুপ থাক”কিন্তু ততক্ষণে কথার তীর ছুটে গেছে।
মোজাম্মেল সাহেবের বুকের ভেতর যেন গরম লোহা ঢেলে দেওয়া হলো।তিনি ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

__”তুমি আসলে কী বোঝাতে চাইছ?”
জায়ন এবার ঠোঁটের কোণে একরকম বিদ্রূপী হাসি টেনে সামনে ঝুঁকল, হাতের কনুই উরুর উপর শক্ত করে চেপে আঙুলে আঙুল গুজে ধীরে ধীরে বলল,
__”মেয়ের হবু শ্বশুরবাড়ির লোক এসেছে, আর আপনি তাদের দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। জানেন বিড়াল দেখলেই বোঝা যায় সে দুধ চুরি করবে, তেমনি কিছু লোক আছে যাদের দেখলে বোঝা যায় ভদ্রতার লেকচার দেবে, কিন্তু নিজের কাজে এক চামচ ভদ্রতাও মাপবে না।”
তার কণ্ঠে ছিল না তীব্র চিৎকার ছিল বরফ ঢাকা ছুরির ধার, যা নিঃশব্দেই কেটে দেয়। আর সেই হাসি… সেই বিরক্তির হাসি যেন ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিপক্ষের সম্মানের উপর আগুন ঢেলে দিল।মোজাম্মেল সাহেবের গায়ে যেন শিরশিরে আগুন লেগে গেল ,অপমানের তীব্রতায় তাঁর বুক ফুলে উঠছে, কিন্তু মুখে সেই গাম্ভীর্যের মুখোশ এখনো শক্তভাবে আটকে আছে। মনে মনে ভাবলেন এই ছেলের সামনে মুখ খোলা মানে নিজের লুঙ্গি খোলা। এসবের মধ্যেই
ইউভি একটু ধমকানোর সুরেই বলে উঠলো,

__” আঙ্কেল আপনি চাইলে পরিস্থিতি এখনো নরমাল করতে পারেন ।
ইউভির কথা শুনে মোজাম্মেল সাহেব কাঠের সোফার হাতল এত জোরে চেপে ধরেছেন যে কাঠের কড়কড় শব্দ বেরিয়ে আসছে, কপালের শিরাগুলো টেনে উঠেছে, চোখে অগ্নি ঝলকানি, দাঁতের ফাঁক দিয়ে হালকা শ্বাস বের হচ্ছে। বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ যেন উথালপাথাল ঢেউয়ের মতো ছুটে আসছে জায়নের দিকে। ঠোঁট শক্তভাবে চেপে ধরে, গলা ভারী করে বললেন,
__”সব বখাটে গুলো আমার বাসায় জমা হয়েছে।”
জায়ন এর চোখে বিদ্রুপের হাসি, ঠোঁটের কোণ বেঁকে আছে, যেন প্রতিটা শব্দ দিয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেবে। ভেতরে ভেতরে তার ধৈর্য্যর বাঁধ ভাঙছে, কিন্তু মুখে তাচ্ছিল্যের ছাপ স্পষ্ট। মাথা একটু সোজা করে ধীর গলায় বলল,
__”আপনার কমপ্লিমেন্টে আমার মিডল ফিঙ্গার, আমার ভাইয়ের শ্বশুর মশাই। কিন্তু কথা যেহেতু আমার ভাইয়ের, সেহেতু আমি আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই।”

কপালের ভাঁজ আরও গভীর হয়ে গেল, চোয়াল শক্ত হয়ে আছে মোজাম্মেল সাহেবের , শরীর ভিজে উঠছে এক চিন্তায় কিন্তু তবুও মেয়ের খাতিরে চিন্তা বাদ দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে একটু কাপা কাপা গলায় বললেন,
__”তুমি কে যে তোমার প্রশ্নের উত্তর দেব?”
ভেতরে ভেতরে হালকা হাসি খেলে যাচ্ছে, কিন্তু চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। বুকটা সামান্য ফুলিয়ে নিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে বলল,
__”আপনার হবু জামাইয়ের বড় ভাই।”
মোজাম্মেল সাহেব ভ্রু কুঁচকে এমনভাবে তাকালেন যেন এই মুহূর্তে ছুটে এসে গালে চাপড় বসিয়ে দেবেন রাগে ,এই ছেলের কত বড় সাহস ভাবা যায় । গলার স্বর কেঁপে উঠল রাগে,
__”চাপকে তোমার গাল লাল করে দেব।”

জায়ন বিদ্রুপ হাসি সরিয়ে , ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে লাগল , যেন চোখের ভেতরে আলাদা এক ঝিলিক খেলে যেতে চাইছে । দৃষ্টি সোজা রেখে কিন্তু স্বরে ইচ্ছে করেই হালকা টান টেনে, কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে চোখে এক ধরনের কটাক্ষ মিশিয়ে দিল। বুকের ভেতর গর্বের সাথে সাথে একটা খুনসুটির আনন্দ ঢেউ তুলছে। মাথা সামান্য দুলিয়ে, গলায় সেই দুষ্টু ভরসা মিশিয়ে বলল,

__”সরি, আমার গাল লাল করার জন্য বাসায় আমার বিশ্বসুন্দরী বউ আছে। ”
জায়ন এর কথা শুনে মোজাম্মেল সাহেব ,রাবেয়া বেগম আর আরোহীর মুখ হা হয়ে গেল, আরোহীর কান্না কাটি এই কথা শুনে হঠাৎ ই বন্ধ হয়ে গেল , অবশ্য সে কিছু টা হলেও জায়ন কে জানে কিন্তু এই পরিস্থিতি তে দাড়িয়ে সে হয় তো অবাক ই হল। বাকি রইল দুই জন ইউভি আর আকাশ ওরা এখন জায়ন এর এই লাগামহীন বেপরোয়া কথাবার্তায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে।
জায়ন একটু থেমে শার্ট এর কলার হালকা সরিয়ে বলে
উঠল,
__”এই যে দেখেন, একটু আগে গলাটাও লাল করে দিয়েছে। আহা… বউয়ের কথা বলতেই কেমন যেন বুকে ড্যান্স শুরু হয়ে গেল, যেন সে নাম শোনামাত্রই হৃদপিণ্ডও প্রেমে পড়ে গেছে। আল্লায় বউ একটা দিয়েছে মাইরি।”
জায়ন এর এই মোজাম্মেল সাহেব মুহূর্তের জন্য শব্দ হারিয়ে ফেললেন। চোখ বড় বড় হয়ে গেল, মুখে অবিশ্বাস আর বিরক্তির ছাপ একসাথে ফুটে উঠল, বুকের ভেতর রাগের ঢেউ আছড়ে পড়ছে, কিন্তু শব্দ আটকে আছে গলায়।
জায়ন পায়ের উপর পা তুলে প্রশ্ন করা শুরু করলো,

__”হ্যাঁ তো ভাইয়ের হবু শ্বশুর মশাই, আমার ভাই কি নেশা করে?”
মোজাম্মেল সাহেব কপালে হাত ঠেকাতে ঠেকাতে বিরক্তির স্বরে বললেন,
__”আমি কি করে জানবো?”
জায়ন বিন্দুমাত্র বিরতি না দিয়ে সরাসরি বলল,
__”আমার ভাই কি মেয়ে বাজি করে?”
মোজাম্মেল সাহেব এরকণ্ঠে একই রাগের সুর, ভ্রু উঁচিয়ে তীক্ষ্ণভাবে বললেন,
__”আরে বাবা, আমি কি করে জানবো?”
জায়ন হঠাৎ করেই দেখা যাচ্ছে চোখে চাপা রাগের আগুন, কিন্তু ঠোঁটে ঠাট্টার রেশ। ধীরে ধীরে উচ্চারণ করল,
__”আমার ভাই কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের ইভ টিজিং করে?”
এই ছেলে তাকে কেন এই প্রশ্ন করছে ? বুঝে উঠতে পারছে না । মোজাম্মেল সাহেব হাত ছুঁড়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে উত্তর দিলেন,

__”আমি কি তোমার ভাইয়ের পাহারাদার যে আমি জানবো?”
জায়ন ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে, কণ্ঠে কড়া সুর মিশিয়ে চোখে রাগের ঝলক দেখিয়ে সামনে রাখা কাচের টেবিল এ এক থাপ্পর দিয়ে বসল , শব্দটা পুরো ঘরে বেজে উঠল ,তারপর দৃঢ় স্বরে বলে উঠলো,
__”আপনি যখন কিছুই জানেন না, তাহলে কোন সাহসে আমার ভাইকে বখাটের উপাধি দেন?”
মোজাম্মেল সাহেবের ভয়ে ঠোঁট কাঁপছে কিন্তু শব্দ বেরোচ্ছে না। চোখে বিরক্তির আগুন, তবু ভেতরে কোথাও একটা কেঁপে দিয়ে উঠছে। বুকের ভেতর এক অদ্ভুত অস্বস্তি গুমরে উঠছে,যেন নিজের ক্ষমতা হঠাৎ করেই ফুসস হয়ে উড়ে গেছে ।

এই দৃশ্য দেখে আরোহী আর রাবেয়া বেগমের বুক হঠাৎ কেঁপে উঠল। গলায় শুকনো ভাব, হাত দুটো অজান্তেই আঁকড়ে ধরলেন ওড়নার প্রান্ত। মনে হলো, পরিস্থিতি যেন যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ হয়ে উঠতে পারে, আর সেই বিস্ফোরণ থেকে তাদের কেউই রেহাই পাবে না। ঘরের ভেতরের ভারী নীরবতা এখন এমন যে, কারও হৃদস্পন্দনের আওয়াজও যেন স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।
এর মধ্যেই কখন যেন আকাশ ইউভির পাশে গিয়ে দাড়াল,আকাশ আস্তে করে মাথা ঘুরিয়ে ইউভির দিকে তাকাল, চোখে একটু দুষ্টু ঝিলিক। ঠোঁট প্রায় নড়াচড়া না করেই ফিসফিসিয়ে বলল,

__” ইউভি ভাই, আমার মনে হয় শ্বশুরের গলা শুকায় গেছে… পানি দিয়ে আসব নাকি?”
ইউভি একবার মোজাম্মেল সাহেবের লাল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে, তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে হালকা ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর দিল,
“তোর শ্বশুড় আগে নিজের ধুতি সামলে নিক… পরে ঠান্ডা পানি দিবি।”
আকাশ হেসে গলা নিচু করল, কিন্তু হাসি চেপে রাখতে গিয়ে তার কাঁধ কাঁপছে। হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে আবার ফিসফিসিয়ে বলল,
“হি হি ইস হবু শ্বশুড় আমার এইয়া বল না , তারপর কেননা বউ তেজ দেখাইল। এক কাজ করি বরফ মিশানো লস্যি দিয়ে দিই… এক ঢোঁকেই শান্তি।”

ইউভি ঠোঁট কামড়ে হাসি চাপল, যেন দু’জনেই বুঝে গেছে এই ঝড়ের মধ্যে হাসা সবচেয়ে বড় বখাটেমি।
জায়ন এবার উঠে দাঁড়িয়ে দুটো পকেটে হাত রেখে
মোজাম্মেল সাহেবের দিকে এগিয়ে গেল , তারপর ওদিকে না তাকিয়ে দরজার দিক মুখ রেখে চোখে আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট রেখে বলে উঠলো,
__”ভাই আমার ভদ্র, আর দুই বছর পরেই পরিপূর্ণভাবে ডাক্তার তৈরি হবে। ওর যা সম্পত্তি আছে, আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী খাইয়ে রাখতে পারবে। ছেলে হিসাবে আপনার যেমন জামাই চাই, তার থেকেও পারফেক্ট আমার ভাই। ”
জায়ন এবার আরোহীর দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠল,

__”সব থেকে বড় কথা ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে । আরোহী আমার বোনের মত আমার ভাই খারাপ হলে আমি নিজেই বাধা দিতাম ।তাই যদি আপনার ওই সো কলড সম্মান নষ্ট করতে না চান
তাহলে ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যাবেন, পরিবারের সবাইকে পাঠিয়ে দেব ,আপনি ভদ্রতা দেখালে আমিও অভদ্রতা দেখাবো না । নইলে আপনার জানা আছে আপনার বাড়ি থেকে আপনার মেয়েকে ওঠাতে এক মিনিট সময় লাগবে না আমার। আমি নিজের বাপ চাচাকে সম্মান করি না, সেখানে আপনি কোথা কার কোন হরিদাস পাল , যার কথা ভেবে ছেড়া যাবে আমার বাঁ*।”

জায়ন এই বলে হালকা একবার মাথা কাত করে আকাশ আর ইউভির দিকে তাকাল, চোখে সেই চেনা ইশারা, এবার গুটাও মালপত্র, যেতে হবে।
জায়ন এর বোঝাতে দেরি হলেও ওদের ইশারাটা বুঝতে দেরি হল না, ওরা দুজনেই দ্রুত পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল , যেন ভেতরের টানটান পরিস্থিতি আর না বাড়ে।
দরজার কাছে গিয়ে জায়ন হঠাৎ থেমে গেল। ধীরে হালকা ঘুরে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ, চুপচাপ বসে থাকা মোজাম্মেল সাহেবের দিকে তাকাল। মুখে এক তাচ্ছিল্য মেশানো শান্ত হাসি ফুটিয়ে। গলায় ব্যঙ্গ আর আত্মবিশ্বাসের মিশেল ঢেলে বলল,

“আর হ্যা,আমার শ্বশুরের কাছে আমার ইমেজটা যেন আর খারাপ না হয়।”
কথাটা যেন বাতাসে ঝুলে রইল, ঘরের নীরবতা ভেদ করে সরাসরি মোজাম্মেল সাহেবের গলায় আঘাত করল। মনে মনে ভাবছে ,
__” ধমকি দিল না কি হুমকি দিল ?”
তারপর কোনো কথা আর না বাড়িয়ে, সেই বাঁকা হাসি মুখে রেখেই গটগট শব্দে বেরিয়ে গেল জায়ন, যেন পায়ের আওয়াজও রাগ আর গর্বের ঘোষণা দিচ্ছে।
আরোহীদের অ্যাপার্টমেন্টের গেট পেরোতেই জায়নের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল।এক লাফে এগিয়ে গিয়ে সে আকাশের মাথায় এক থাপ্পর বসিয়ে দিল।
আকাশ হঠাৎ চমকে উঠে মুখ কুঁচকে ব্যথায় কুকিয়ে উঠল,

__ “আহ্”
জায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, চোখে জ্বলজ্বল করছে বিরক্তির আগুন। দাঁত চেপে বলল,
__ “কি বা**লের প্রেম করিস ? যা সামলাতে এই রাতে আমার আধা রোমান্স ফেলে আসতে হয়?”
কথা শেষ হবার আগেই ইউভিও আকাশের মাথায় এক ধপাস গাট্টা দিয়ে যোগ করল,
__“আরো খা, শা**লা,শা**লা আগুনে পানি ঢেলে আসতে হয়েছে আমার।”
আকাশ দু’হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল, মুখটা ব্যথায় বেঁকে গেল। বিরক্তি নিয়ে বলল,
__ “আরেহ ভাইয়ারা, এইটা আমার মাথা, আলুর বস্তা না। বড় ভাইয়ের রাগ তো বুঝলাম, কিন্তু তুমি কোন আগুনে পানি ঢালার কথা বলতেছো, ইউভি ভাই?”

ইউভি থমকে গেল। মুখ ফসকে কথা বেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখন যদি খুলে বলে, আজ রাতে এই আকাশ তাকে গ্যাস বেলুন বানিয়ে ওরাবে । সে তো তার বড় ভাইয়ের মতো লাগামহীন না,তারপরও মনের ভেতর চাপা অস্থিরতা। মুহূর্তেই কথা ঘোরানোর চেষ্টা করল। আকাশের মাথায় আরেকটা হালকা থাপ্পর মেরে বলল,
__ “এদিক তো হল, এখন বল দেখি আমাদের পরিবারকে কি করে সামলাব?”
জায়ন তখন ইউভির দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। সেই দৃষ্টির মানে ইউভি মুহূর্তেই বুঝে গেল। ভেতরে ভেতরে ধরা পড়ার অস্বস্তি থেকে মাথায় হাত চুলকে নিজেই বিড়বিড় করে বলল,
__ “বড় ভাইয়ের সামনে আ করলেও বুঝে যায়। ‘আসসালামুআলাইকুম’ বলছি না ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলছি ।”
এর মধ্যেই আকাশ দাঁত বের করে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,

__ “হে হে, আমি কিছু জানি না… আমার বড় ভাই আছেনা, হি হি হি।”
কথা টা শোনা মাত্রই জায়নের ভ্রু কুঁচকে গেল, ঠোঁটের কোণে বিরক্তি আর চাপা হাসি মিলেমিশে এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি তৈরি হল। এক মুহূর্ত ওর চোখে রাগের ঝলক দেখা গেল, কিন্তু তার ভেতরেই লুকিয়ে ছিল সেই বড় ভাইয়ের স্বভাবসুলভ দায়িত্বের স্নেহমাখা খুনসুটি। আকাশের দিকে হেলে, গলার স্বর একটু নিচু করে, কিন্তু কড়া ভঙ্গিতে বলল,

__“এইসব হুদাই পানা ছেড়ে বাসায় যাও। আমার এখন তোদের আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করতে গেলে নিজের বিবাহিত জীবনে অমাবস্যা লেগে যাবে। গুড নাইট।”
কথাটা ইউভিকে লক্ষ্য করেই বলা, তা বোঝার জন্য কারো অত বুদ্ধি লাগল না।
ওই রাতে মোজাম্মেল সাহেবের বাসায় একরাশ ঝড় তুলে তিন ভাই বাইক স্টার্ট দিল, আর ঝড়ের গতিতেই মিলিয়ে গেল নিজেদের গন্তব্যের পথে।

“মা, রোদ খেয়েছ?”
বাসায় ফিরেই নিচে থেকে ওয়াশ বেসিনে হাতওমুখ ধুয়ে, হালকা ক্লান্তি নিয়ে ধুয়ে নিল।জায়ন সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল।
মেহজাবীন বেগমও প্লেটে ভাত তুলে দিতে দিতে মাথা নাড়লেন,
__“হ্যাঁ, মেজো আম্মু তো বাসায় ফিরেই খাবার নিয়ে সোজা রুমে চলে গেল। পরে ডাকতে গিয়েছিলাম, কিন্তু সাড়া দেয়নি।”
মায়ের কথা শুনে জায়নের মনে প্রথমেই এল, হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। প্লেটে চোখ রেখে, চামচ দিয়ে ভাত মেশাতে মেশাতে স্বাভাবিক গলায় বলল,

— “মা, একটু ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে ,কালকে তো শুক্রবার সবাইকে থাকতে বলো, আর ফুপিদেরও ডেকে নিও।”
ছেলের এই হঠাৎ গম্ভীর সুরে খানিক অবাক হয়ে মেহজাবীন বেগম প্রশ্ন করলেন,
__ “মেজো আম্মু কে নিয়ে,কিছু হয়েছে নাকি আবার? মেজো আম্মু তো আয়েশা দের বাসায় গেল তো ফিরিয়ে আনলি কেন? একটু সবার সঙ্গে না হয় মজাই করত। ”
জায়ন এবারও প্লেটের দিকে দৃষ্টি রেখেই, মায়ের চোখে না তাকিয়ে শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলল,

__ “না অন্যকিছু । আর তোমার যদি ইচ্ছে হয়, বলো আমি না হয় কদিন তোমায় ফুপির বাসায় রেখে আসব, ওদের সঙ্গে মজা করো। কিন্তু আমি ছাড়া আমার বউ কোথাও যাবে না।”
এই কথা বলেই জায়ন শেষ লোকমা ভাত খেয়ে, পানি খেল, তারপর চেয়ার ঠেলে উঠে সোজা হ্যান্ড ওয়াশ করে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।
পিছনে দাঁড়িয়ে প্লেট হাতে মেহজাবীন বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, মনে মনে বিড়বিড় করলেন,

__ “এই ছেলের সঙ্গে কি আর কোনো কথা বলা যাবে না, দুদিন একটু মেজো আম্মুর জন্য টাইট দিতে পেরেছিলাম , এখন টাইট দিতে গেলে বিশ্ব যুদ্ধ শুরু করে দিবে।”
জায়ন নিজের রুমে ঢুকতেই দেখতে পেল, পুরো ঘর অন্ধকার, কেবল টেবিল ল্যাম্পের নরম হলুদ আলোয় বিছানাটা ঝাপসা হয়ে আছে। আর সেই আলোয় তার কিটি ক্যাট ঠিক যেন গুটিসুটি মেরে থাকা একটা ছোট্ট বিড়ালছানার মতকমফোর্টার জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
ওকে দেখে জায়নের ঠোঁটের কোণে একটা মুচকি হাসি ফুটল। ধীরে ধীরে টিশার্ট খুলতে খুলতে সে বিছানার দিকে এগোলো। টিশার্টটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বাকা হাসি নিয়ে একটু জোরে বলল,

__ “বউ ঘুমালেও ছাড় নেই কিন্তু তোর… তাড়াতাড়ি ওঠ।”
কোনো সাড়া নেই।ভ্রু কুঁচকে বিছানায় উঠে সে তিয়াশার গায়ের কমফোর্টারটা সামলে নিজেও ভেতরে ঢুকে কোমর জড়িয়ে নিজের কাছে টেনে নিল তিয়াশাকে। আর তখনই…
তার শরীর হঠাৎ ছ্যাঁত করে উঠল একটা অস্বাভাবিক তাপ।চোখ বড় হয়ে গেল জায়নের। হাত কপালে নিয়ে দেখল, তিয়াশার শরীর আগুনের মতো গরম।
তার গলার স্বর হঠাৎ কেঁপে উঠল,

__”বেইব… বেইব…।”
সে তাড়াতাড়ি উঠে বসে তিয়াশাকে কোলের ভেতর গুটিয়ে নিল। দুহাত দিয়ে মুখটা ধরে কাঁপা গলায় ডাকতে লাগল,
__ “জানবাচ্চা… চোখ খোল, শোন আমার কথা… প্লিজ চোখ খোল , কষ্ট হচ্ছে খুব ?”
কোনো সাড়া নেই।জায়নের বুকের ভেতরটা ধড়ফড় করে উঠছে, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। যেন মাথায় কিছুই কাজ করছে না।
একটু পরে কিছু ভেবে ওকে আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেল করিডোরে। মা আর চাচীকে দেখতে পেয়েই প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
__ “মা মেজো মা বাসায় প্যারাসিটামল থাকলে … কুইক উপরে দিয়ে যাও, আমার মেডিসিন বক্স ওই বাসায় পড়ে আছে।”

কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই আবার ঘরে ঢুকে পড়ল, ফেলে গেল কেবল মায়েদের চোখে বড় বড় প্রশ্নচিহ্ন।
মেহজাবীন বেগম দেরি করলেন না, ছেলের মুখের ভয় দেখে ছুটে গেলেন নিজের রুমে।
এদিকে জায়ন থার্মোমিটার দিয়ে তিয়াশার শরীরের তাপমাত্রা মাপল-১০৩°। তার নিঃশ্বাস কেঁপে উঠল, এক সেকেন্ডও দেরি না করে বাথরুমে গিয়ে বালতিতে পানি ভরল, একটা মগ নিয়ে এসে তিয়াশার মাথা বিছানার প্রান্তে নামিয়ে আলতো করে পানি ঢালতে লাগল।
তার হাত কাঁপছে, ঠোঁট কেঁপে উঠছে,

__ “সোনা… খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?
তিয়াশা কোনো উত্তর দিল না শুধু মুখ টা এদিক ওদিক করল ।এই সময় মেহজাবীন বেগম আর রুহেনা বেগম উপরে এসে ঘরে প্রবেশ করলেন । তিয়াশার এই অবস্থা দেখে দুজনের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।রুহেনা বেগম তাড়াতাড়ি এসে তিয়াশার গায়ে হাত দিয়ে প্রায় চিৎকার করেই বললেন,
__”বাবা ,ওর তো গায়ে আগুন জ্বলছে।”
মেহজাবীন বেগমও উদ্বিগ্ন গলায় বললেন,
__ “কি বলিস মেজো? মেজো আম্মু তো একদম ঠিক ঠাকই তো ছিল… এতক্ষণে জ্বর হল কিভাবে?”
জায়ন কোনো উত্তর দিল না। সে এক দৃষ্টিতে শুধু পানি ঢালতে লাগল, যেন অন্য কারো কণ্ঠস্বর তার কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
মেহজাবীন বেগম একটু কাতর গলায় বললেন,

__ “ও জায়ন… ডাক্তার আঙ্কেলকে ডাকব? আর পানির মগটা দে না, আমরা দিচ্ছি….”
জায়নের কণ্ঠ এবার নিচু হলেও দৃঢ়,
__ “ওষুধ রেখে যাও মা… ডাক্তার দরকার হলে আমি নিজেই নিয়ে যাব। তোমরা যাও, প্লিজ।”
রুহেনা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
__ “কী বলছিস বাবা? এই অবস্থায় ওকে রেখে যাব কিভাবে?”
জায়ন এবার পানি ঢালা থামিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল, চোখে এমন দৃষ্টি দিল যাতে কথা থেমে গেল দু’জনের।
ঠাণ্ডা অথচ কাঁপা কণ্ঠে বলল,
__”আমি ওকে স্পঞ্জ করব। তোমরা শুধু ওষুধ রেখে যাও… দয়া করে এখন কেউ ঘরে থেকো না।”
মেহজাবীন বেগম কিছু বলতে যাচ্ছিলেন,

__ “আমরা করে দি, তুই তো ….”
কিন্তু বাক্য শেষ হওয়ার আগেই জায়নের চোখের সেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাদের গলায় শব্দ আটকে দিল।দুজনই ধীরে ধীরে পেছনে সরে গেলেন।জায়ন আবার তিয়াশার দিকে ফিরে বসে পড়ল, মগে পানি তুলে আলতো করে তার কপালে ঢালতে লাগল যেন সারা দুনিয়া থেকে ওকে আড়াল করে রাখতে চায়।
জায়ন ধীরে ধীরে একটা ভেজা ছোট তোয়ালে নিয়ে তিয়াশার কপাল, গলা, শরীর,দুই হাত এমনকি পায়ের পাতাও যত্ন করে মুছতে লাগল। হাতের আঙুল কাঁপছে, তবু তোয়ালেটা যত্ন করে চালাচ্ছে যেন কোনো ক্ষতিগ্রস্ত কাচের ওপর আলতো করে হাত বুলাচ্ছে।
একসময় তিয়াশার চোখের পাতা ধীরে ধীরে কেঁপে উঠল। আধখোলা চোখে অস্পষ্টভাবে তাকাল জায়নের দিকে, জায়ন তাকাতেই তার বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেল। হঠাৎ সে এক দীর্ঘ, ভারি নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রায় ঝুঁকে এসে তিয়াশাকে নিজের বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরল।
কাঁপা গলায়, খুব নরম অথচ তাড়াহুড়ো মেশানো স্বরে বলল,

__ “ওহ আল্লাহ…, অবশেষে চোখ খুলেছিস জান।,শোন, প্লিজ একটু মুখটা খুলবি,মেডিসিন দেব।”
তিয়াশা ঠোঁট হালকা নাড়াল, কিন্তু কোনো শব্দ বেরোল না। শুধু মাথা খুব ধীরে এদিক ওদিক নাড়ল সম্ভবত ওষুধ খাওয়ার মতো শক্তি নেই। কেমন করে যেন তিয়াশা অবশেষে সামান্য মুখ খুলল।
জায়ন এক হাত দিয়ে মাথা সামলে, অন্য হাতে খুব আস্তে করে প্যারাসিটামলটা মুখে দিল, তারপর গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

__ “এখন একটু পানি খা… ভালো লাগবে জান, বিশ্বাস কর।”
ওষুধ খাওয়ানো শেষ হতেই সে তিয়াশাকে নিজের একটা টিশার্ট পরিয়ে আবার তিয়াশাকে নিজের বুকে টেনে নিল, যেন সেই বুকের ভেতরটা তিয়াশার জন্য নিরাপদ আশ্রয়।সারা রাত জায়ন এই ভাবে তিয়াশাকে বুকে জরিয়ে রাখল ,চোখের পাতা একবারও বন্ধ করল না।
তিয়াশার শরীরের তাপমাত্রা ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেপেছে, থার্মোমিটার একপাশে রাখতেই আবার কপালে হাত দিয়ে দেখছে কখন তাপ কমে।ক্লান্তি, ভয়, আর ভালোবাসা সব মিলে জায়নের চোখ লাল হয়ে উঠেছে।

রাতের টানা অস্থিরতা শেষে সকালের মিষ্টি হাওয়া পর্দা দোলাচ্ছে হালকা শব্দে,, আর সূর্যের আলো থাই গ্লাস এর পর্দা ভেদ করে ঘরে ঢুকে পড়ছে।
তিয়াশা হালকা চোখ মেলে প্রথমেই গায়ে লাগল জায়নের বুকের উষ্ণতা তারপর দেখল সে জায়নের বুকের ওপর শুয়ে আছে। তার গায়ে শুধু জায়নের বড়সড় একটা টিশার্ট, তাও ভেজা ভেজা ঠান্ডা অনুভূতি দিচ্ছে। মুহূর্তের জন্য বোঝার চেষ্টা করল,কখন যে এখানে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে তার খেয়াল নেই।

জায়নের বুকের ওঠানামা যেন তাল মিলিয়ে দিচ্ছে তার নিঃশ্বাসে। এক হাতে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে, সারা রাতের পাহারাদারি শেষে ভোরের দিকে সামান্য ঘুমিয়ে পড়েছে।চোখের নিচে কালি, ঠোঁট শুকিয়ে গেছে , চুলগুলো এলোমেলো, ঠোঁটের কোণে ক্লান্ত অথচ তৃপ্তির ছাপ, আর চোখের পাতায় একদম হালকা ঘুমের ভার।
তিয়াশা এক মুহূর্ত স্থির হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল একটা অদ্ভুত শান্তি লাগছে বুকের ভেতর। বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির, হালকা আলো আর সকালের নীরবতা সব মিলে মনে হচ্ছে পৃথিবীটা যেন শুধু ওদের দুজনের জন্য থেমে আছে।

তিয়াশা জায়নের বুকে আলতো নাড়াচাড়া করতেই, জায়নের ঘুম ভাঙল ধক করে। চোখ দুটো আধো নেশামাখা, তবুও আতঙ্কের ছাপ ভেসে উঠল মুখে। এক ঝটকায় তিয়াশাকে নিয়ে উঠে বসল, হাত দিয়ে তিয়াশার কপাল ছুঁয়ে, গলা মুখ ঘেঁষে শরীরের তাপমাত্রা মেপে নিল, এক মুহূর্ত থমকে শ্বাস ছেড়ে দিল –জ্বর নেই আর।
কাপা কাপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,
__”এখন ঠিক লাগছে জান?”
তিয়াশা তার বুকের কাছে আরও সেঁধিয়ে এল, যেন আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে, তারপর আস্তে বলল,
__ “রাত খেতে খেতে হঠাৎ খুব খারাপ লাগছিল। শুয়ে পড়েছিলাম তারপর কী হলো আর কিছু মনে নেই, বর।”
জায়ন এক লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল, মনে হলো বুকের ভেতর জমে থাকা পাথরটা একটু সরে গেছে। কপালের ভাঁজ ধীরে ধীরে মুছে গেল। সে তিয়াশার মুখ দু’হাত দিয়ে ধরে কপালে নরম চুমু দিল।
__ “রাতে তো তোর জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছিল, জান ।এতটা গরম ছিল শরীর যে আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তুই টের পাসনি, বাচ্চা?”

তিয়াশা চোখ নামিয়ে মাথা নাড়ল, আর জায়ন ওকে বুকের কাছে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল যেন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, এই মানুষটাকে আর এক মুহূর্তের জন্যও কষ্টে ফেলবে না।
সকালবেলা তিয়াশাকে দেখে গেছেন বাড়ির প্রায় সবাই। কেউ এসে মাথায় হাত বুলিয়েছে, কেউ কপালে হাত দিয়ে আশ্বস্ত হয়েছে। সবারই মনে একরকম স্বস্তি হয়তো জায়নের সারারাতের যত্নই তিয়াশাকে এত তাড়াতাড়ি সুস্থ করেছে।

তিয়াশাকে ফ্রেশ করিয়ে দিয়ে, চুল আলতো করে শুকিয়ে দিয়ে, ওকে বিছানায় শুইয়ে রেখে জায়ন সোজা রান্নাঘরের দিকে হাঁটা দিল ,চৌধুরী বাড়ির রান্নাঘরে ঢোকার মুহূর্তেই চমক ,তার মা চাচীরা যানে তাদের ছেলে বিদেশ থাকায় বিদেশী টুকি টাকি রান্না সে নিজেই করতে জানে , কিন্তু এ বাড়িতে, এই বিশাল রান্নাঘরের থ্রেশহোল্ড সে কোনোদিন পেরোয়নি। ফলে চৌধুরী বাড়ির রান্নাঘরে বড় ছেলের হঠাৎ প্রবেশ দেখে মায়েদের চোখ ছানাবড়া। তার ওপর বাড়ির কর্তা দের কাছে এই দৃশ্য যেন চৌধুরী বাড়ির একেবারে অভাবনীয় দৃশ্য। জায়ন কোনো দিকে না তাকিয়ে মন দিয়ে স্যুপ বানাতে ব্যস্ত। চিকেন, ভেজিটেবল, হালকা মশলা প্রতি নাড়াচাড়ায় যেন বউয়ের জন্য মমতা মিশিয়ে দিচ্ছে। একসময় গরম গরম স্যুপ তৈরি হলো

নিজেদের রুমে গিয়ে নিজের হাতে তিয়াশাকে খাওয়াল, তারপর মেডিসিন দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে করা নির্দেশ যেন নিচে না নামা হয় । এর মধ্যেই আয়েশা বেগম আশরাফ খান মারিয়া বৃষ্টি নাজিম ও তাদের সন্তান রেজওয়ান যে কিনা ইউভির কোলে ,অনু রায়ান আকাশ ও এসে হাজির । কারন ইউভি আকাশ যখন ই সকালে শুনেছে জায়ন ভাই সবাই কে দেকেছে তখন বুঝেই গেছে আজকের আলোচনা আকাশ কে নিয়ে ।
সকাল গড়িয়ে দুপুর। আজ শুক্রবার, তাই বাড়ির কোনো কর্তা অফিসে যাননি। বাড়িটায় এখনো বিয়ের পরের সেই মিষ্টি উষ্ণ গন্ধ নতুন শাড়ির রেশ, ফুলের গন্ধ, আর কেমন যেন আনন্দের পরশ মিশে আছে বাতাসে।
ড্রয়িং রুমের হলঘরে সারি সারি সোফায় বসে আছেন পরিবারের বড়রা চৌধুরী বাড়ির কর্তারা, সঙ্গে বাসার দুই জামাই আশরাফ খান, নাজিম পাশে অন্য সোফায় বসা আয়েশা বেগম এবং বাড়ির গিন্নিরা। সবাই যে যার মত কথা বললেও চোখেমুখে স্পষ্ট একটাই প্রশ্ন হঠাৎ জায়ন সবাইকে কেন ডেকেছে?

কেউ খোলাখুলি জিজ্ঞেস করছে না, কিন্তু বাতাসে কৌতূহল যেন ঘন হয়ে আছে।
কাল থেকে স্বাভাবিক ভাবে থাকার চেষ্টা করলেও এখন সবাই কে একসঙ্গে দেখে এদিকে আকাশের অবস্থা শোচনীয় মুখে ভান করা স্বাভাবিকতা, কিন্তু ভেতরে ভয় গা ঘেঁষে বসেছে।চুপচাপ বসে থাকা তার স্বভাব না ফলাফল, সে বারবার উঠে এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে, কপাল মুছছে, আবার বসছে, আবার উঠে যাচ্ছে।
ইউভি প্রথমে কিছু না বললেও ধীরে ধীরে বিরক্ত হয়ে পড়ছে। চোখ টিপে আকাশকে বসতে ইশারা করল।
রায়ান অনু বৃষ্টি মারিয়া সবাই রেজওয়ান এর সঙ্গে ব্যস্ত ড্রইং রুমের এক পাশেই।
এদিকে জায়ন এখনো উপরেই। সুরাইয়া বেগম একবার গিয়ে ডেকেও এসেছেন।
জায়ন নিচে নামতেই একবার আকাশ আর ইউভির দিকে তাকাল , তারপর গিয়ে বসল সবার পাশে ।
প্রান্তিক সাহেব পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ।

__” তা হঠাৎ এই জরুরি তলব এর কারণ কি জানতে পারি ?”
প্রান্তিক সাহেব এর গম্ভির স্বরে বলে কথা জায়ন এর কানে আসতেই , সে একটু ঠিক ঠাক করে বসতে বসতে বলল,
__” সেই কারন বলার জন্যই তো সবাই কে একসঙ্গে থাকতে বলেছি।”
আকাশ এর কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছে , ইউভির কানে
কানে ফিসফিস করল ,
__” ইউভি ভাই এই বড় ভাই এইভাবে সবাই কে কেন আসতে বলল ,আমার হবু শ্বশুর যা ভয় পেয়েছে তাতে তো উনি মুখ খুলতো না আমিও আমার প্রেম টা চালিয়ে যেতাম ।”
ইউভি এক ঝাপর মেরে আকাশ কে বসাল, একটু দাঁত চেপেই বলল ,
__” মগজের ঘিলু এখন না ঘূলিয়ে ভবিষ্যত এর জন্য
রেখে দে । আর চুপ চাপ বসে থাক বড় ভাইয়ের প্রতি
ভরসা রাখ আমার অঢেল ভরসা ।”
বাড়ির শান্তিপূর্ণ ড্রয়িং রুমে হঠাৎ জায়নের কণ্ঠস্বর ভেসে উঠল, এমন প্রশ্ন যার ছোঁয়ায় বাতাসে জমে থাকা শান্তি মুহূর্তের জন্য ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল,

__”মেজো চাচু, ইউভির বিয়ে কবে দেবে?”
মুহূর্তেই সবাই তাকিয়ে রইল, চোখের সামনে যেন সময় থমকে গেল।বিশেষ করে ইউভি আর অনন্যার হৃদয়ে এক অদ্ভুত খোঁচা লাগল, যেন কোন অনিচ্ছাকৃত সত্য কেবল তাদেরই কাছে জানানো হলো।অনন্যার বুকের গভীরে একটা শিহরণ বয়ে গেল, হঠাৎ করেই যেন কেউ সেই অদৃশ্য ছুরি দিয়ে গাঢ় একটি ক্ষত রেখে গেছে।ড্রয়িং রুমের আকাশ থমথমে হয়ে উঠল, কথা যেন আটকে গেল, শ্বাস থেমে গেল ।
প্রান্তিক সাহেব ছেলের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছেন, চোখে বিরক্তি আর অনিশ্চয়তার মিশ্রণে যেন ভাবছেন,
__”এই ছেলে হঠাৎ আবার কি করতে চলছে? ওর মনের ভেতর ঠিক কি চলছে?”
মেহজাবীন বেগমের মুখেও অস্বস্তি, কারণ তিনি ভালো করেই জানেন ইউভি আর অনুর কথা, আর সে কথা জায়ন ও জানে তবে ?

প্রণয় সাহেব আশরাফ খানের সঙ্গে কথা বলছিলেন, কিন্তু জায়নের প্রশ্ন শুনতেই তাঁর দৃষ্টি ঝটপট সেদিকে চলে এল।সবাই যেন অপেক্ষা করছে জায়নের পরবর্তী কথার জন্য।
এদিকে ইউভির মুখ থম থমে জায়ন এর দিকে দৃষ্টি রেখে রাগে গজ গজ করে আকাশ এর হাত চেপে বলে উঠল,
__” এই আকাশ বড় ভাই তো তোর আর আরোহীর কথা বলার জন্য সবাই কে ডাকল , এর মধ্যে আমি
কৈ থেকে আসলাম? ”
আকাশ একটু ব্যাঙ্গ করেই বলল ,
__” আমি কি করে জানব , বড় ভাই কখন কি করে আল্লায় যানে। আর তাছাড়া তোমার তো বড় ভাই এর প্রতি অঢেল ভরসা ।”
এসবের মাঝেই হঠাৎ প্রণয় সাহেব একটু হাসি মাখা কণ্ঠেই বলে উঠলেন,

__”সবে তো তোদের বিয়েটা হয়েছে, কিন্তু ভালো মেয়ে পেলে ওর বিয়ে দিয়ে দেব।”
এই কথা শুনে অনন্যা আর ইউভি দুজনেই কিছুক্ষণ জন্য অচেতন হয়ে রইল। মন ভারী হয়ে গেল, চোখে অজান্তেই জল চলে এলো, মনে হচ্ছিল যেন একরাশ আবেগ বুকে ধাক্কা খেয়ে থমকে গেল।
__” আসলে বাবা চাচু আমি এক মেয়ে দেখে রেখেছি , কিন্তু মেয়ের বয়স অল্প তবে আমাদের ইউভির সঙ্গে খুব মানাবে। পরিবার ও খুব ভালো আমাদের মতোই ,যদি তোমরা রাজি থাকো তাহলে কথা আগে তোমাদের সামনে রাখতে পারি ?”

জায়নের কথায় তিন কর্তার মুখে স্বাভাবিক ভাবেই হাসি ফুটে উঠল। সাথে ছিল আশরাফ খান, রুহেনা বেগম, সুরাইয়া বেগম আর আয়েশা বেগমের মুখেও মৃদু হাসির ঝিলিক, যেন এই খবর তাদের মনেও কিছুটা প্রশান্তি এনে দিয়েছে। কিন্তু বাকিরা, যারা অনন্যা আর ইউভির সম্পর্ক জানে, তাদের মুখে হাসি নেই তারাই বুঝতে পারছিল যে বড় ভাইয়ের এই হঠাৎ আবদারটা কতটা গুরুত্ব বহন করছে। অন্যদিকে বৃষ্টি আর রায়ান চুপচাপ বসে আছে, মনে যেন বিশ্বাসের ঘোর বেঁধে গেছে, সত্যিই কি এমন হবে? তাদের চোখে অদ্ভুত একটা সংশয় আর অবিশ্বাস মেশানো ভাব কাজ করছে। আর অনুর চোখে পানি টলমল করছে , যা পাশের বৃষ্টি আর রায়ানও লক্ষ করেছে। এসব মাথায় ঢুকছে না শুধু মারিয়ার সে রেজওয়ান কে নিয়েই ব্যস্ত।
এরপর প্রান্তিক সাহেব একটু উৎসাহ নিয়েই বললেন,

__”বেশ ভালো খবর ।তোমার আর মেজ আম্মুর বয়সের এত তফাৎ থাকা সত্ত্বেও, তোমাদের দুজন কেই একে অপরের সঙ্গে বেশ মানিয়েছে। আগে বুঝিনি, এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”
তিনি থেমে একটু হাসলেন, প্রণয় সাহেবের দিকে তাকিয়ে আরও বললেন,
__”কি বলিস মেজ? মেয়ে ভালো, পরিবার ভালো আর কি চাই? ইউভির বয়সও হয়েছে, বিয়ের কথা ভাবার সময় এসেছে।”
প্রণয় সাহেবও এক টুকরো হাসি দিয়ে বললেন,

__”বড় ভাই, তুমি যখন বলেছো, আমি আর কী বলব! তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা।”
এদিকে তাহসান সাহেব এক গাল হেসে বললেন,
__”মেয়ে অল্পবয়স হলেই ভালো, আমি আমার রায়ানের জন্যও খুব তাড়াতাড়ি অল্পবয়সের মেয়েই আনব, যদি বড় ভাই রাজি থাকো।”
এই কথা শোনা মাত্রই রায়ানের রক্ত গরম হয়ে উঠল।
এমনিতেই বড় ভাইয়ের হঠাৎ ইউভি ভাইয়ের বিয়ের কথা শোনা মাত্রই মাথা গরম হয়ে যায় , বোনের সঙ্গে যতোই ঝগড়া হোক, তাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারবে
না ,হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে, রাগের মুখ নিয়ে, দুই হাত কোমরে গুঁজে বলল,

__”আব্বু, আমার বিয়ের চিন্তা এখন করো না। আর সময় হলে বিয়ে করব আমি ,তোমরা কেন মেয়ে খুঁজবে?
আমার বউ আমি নিজে খুঁজে নেব। ”
এই কথা বলে সে ড্রয়িং রুম ছেড়ে রায়ান উঠে গেল উপরে,তাহসান সাহেবের মুখ লম্বা হয়ে গেল, সবার মধ্যে চমক এবং মিশ্রিত উদ্বেগের ছাপ পড়ল।
সুরাইয়া বেগমও এই ছেলের আচরণ দেখে দিন দিন
দুশ্চিন্তায় পড়ছেন।
তাহসান সাহেব দাঁত কিরিকিরি করে একটু জোরে বললেন,

__”দিন দিন অপদার্থ তৈরি হচ্ছ, চাপকে তোমার গাল লাল করে দিবো”
প্রান্তিক সাহেব একটু ধীম স্বরেই বললেন,
__”রাগ করিস না, বয়স তো কম, এরা কী বুঝবে?”
এদিকে জায়ন মাথা নিচু করে হালকা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
__”দ্যাটস মাই ভাই, গ্রেট আয় এম ইমপ্রেসড ছোট ভাই।”
তারপর ইউভি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বলল,
__”বাকি গুলো জাস্ট ইডিয়ট, গাধাদের দল একসঙ্গে বসে ঘাস চিবাচ্ছে, আর আমার পিন্ডি চটকাচ্ছে।”
ইউভি এক ভাবে তাকিয়ে আছে তার বড় ভাই এর দিকে , আকাশের কানে রাগান্বিত চেহারায় ফিস ফিস
করে বলল ,

__” আমি আজ নিজ চোখে মির্জাফর দেখলাম রে আকাশ ।”
__” আরে ইউভি ভাই অঢেল বিশ্বাস রাখো ব্যাস হি হি আর অন্য কোথাও বিয়ের জন্য তৈরি হও ।”
__” সবার আগে তোকে জবাই করবো ।”
__” আগে নিজে জবাই থেকে তো বাঁচো হি হি ।”
আকাশ আর ইউভির এই ছোট্ট যুদ্ধ চলছিল তখন, হঠাৎ প্রণয় সাহেব ঠোঁটে হাসি রেখেই আবার প্রশ্ন করলেন,
__”তো মেয়েটা কে রে জায়ন?”
জায়ন মাথা একটু সোজা করে বলল,
__”হ্যাঁ চাচু, বলছি, কিন্তু তার আগে একটা কথা জানাতে চাই।”
প্রান্তিক সাহেব আগ্রহ নিয়েই বললেন,
__”কি কথা?”

একবার প্রান্তিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে জায়ন আশরাফ খানের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,
__”আসলে বাবা, ফুফা আকাশ আর আমাদের মেজ চাচুর বন্ধুর মেয়ে, মানে আমার বউ এর বান্ধবী আরোহী আর আকাশ এরা দুজনেই একে অপরকে পছন্দ করে। যদি তোমরা রাজি থাকো…”
কথা শেষ করতে পারল না, তার আগেই আশরাফ খান খুশিতে লাফিয়ে উঠলেন,
“আরে বাপ কি খবর শোনালি আমি কতদিন থেকে এমন খবরের অপেক্ষায় ছিলাম ,আমার ছেলে কোন মেয়ে পছন্দ করেছে আ হা ”
খুশির উত্তেজনায় প্রান্তিক সাহেবের কাছে ছুটে গিয়ে বললেন,
__”বড় ভাই, প্লিজ মানা করবেন না, আপনার কাছে একটাই আবদার আমার এত বছরে ।”
আয়েশা বেগম ও খুব খুশি, স্বামী স্ত্রী দুজনেই চেয়ে ছিলেন ছেলে নিজের পছন্দে মেয়ে পছন্দ করুক , আর আরোহী কে তারা ভালো ভাবেই চেনে, এত সুন্দরী মেয়ে যে তার ছেলের পছন্দ করেছে ভাবতেই আরো অবাক হয়ে যাচ্ছে খুশিতে।

নিজের বাবার এই কান্ড দেখে আকাশ নিজেই হতবাক,
সে শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছিল । আশরাফ খান এর এই পাগলামি দেখে সবাই মুচকি মুচকি হাসছে। এমনকি
প্রান্তিক সাহেব নিজেও হাসছে ।
প্রান্তিক সাহেব হাসিমুখ নিয়েই বলে উঠলেন ,
__” ঠিক আছে ঠিক আছে এবার তুমি শান্ত হয়ে বসো।
ইউভির শরীর আগুনে ঝলসে উঠছে আর আকাশের গাল জুড়ে হাসির ছড়াছড়ি। সে কখনোই ভাবেনি যে তার বড় ভাই এমন সুন্দর, সহজ এবং স্পষ্টভাবে তাদের সম্পর্ক স্বীকৃতি দেবে। হঠাৎ আকাশ মুখ ফুটে বলল,

__”সত্যি ইউভি ভাই, এখন বড় ভাইকে চুমু খাইতে ইচ্ছে করছে।”
__” আকাশের বাচ্চা কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিস না।”
এই কথা ইউভি দাঁত চিপে আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিল।
আকাশ ইউভির রাগ বুঝে চুপ করে গেল। নিজের তো
হিল্লে হয়ে গেল কিন্তু ইউভির জন্য খারাপ লাগছে।
ঠিক সেই মুহূর্তে প্রান্তিক সাহেব জায়নের দিকে তাকিয়ে বললেন,
__”আর এখন বল তো সেই মেয়ের ব্যাপারে!”
তাহসান সাহেব ও দাঁত বের করতে করতে বললেন,

__” সত্যি ভাইয়া কদিন ধরে জায়ন এর এত সব পাগলামি কাণ্ড দেখে ভুলেই গেছিলাম আমাদের জায়ন ও এত দায়িত্বশীল আর সুবিবেচক হতে পারে।”
আশরাফ খান হাসতে হাসতে তাহসান সাহেবের সাথে তালে তাল দিলেন। অনেকদিন পর ছেলের প্রশংসা শুনে প্রান্তিক সাহেবের মন গদগদ হয়ে উঠল। প্রণয় সাহেবও নিজের জামাইয়ের এই প্রশংসা শুনে খুশি।
তাহসান সাহেব আবার বললেন ,
__” হ্যা রে জায়ন তাড়াতাড়ি বল রে মেয়ে কোথাকার?
আমাদের বউমা কেমন তা দেখতে যেতে হবে না ।
জায়ন একটু বাঁকা হাসি দিয়ে ট্রাউজার এর দুই পকেটে হাত দিয়ে তাহসান সাহেব এর সামনে গিয়ে
বলল,

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৩

__” চাচু বউমা দেখতে যেতে হবে না , তোমার ছেলের জন্য অল্প বয়সী মেয়ে আনার জায়গায় আমাদের ইউভির জন্য তোমার অল্প বয়সি মেয়ে টা দিয়ে দিও।”
এদিকে জায়ন এর কথায় সবাই চমকে উঠলো, যতটা
না চমকে উঠলো তার থেকে বেশি হাসি ফুটে উঠল ইউভির মুখে ।
কিন্তু তাহসান সাহেবের জায়ন এর কথা ঠিক ঠাক মাথায় গেল না , তাই বলে উঠলো,
__” হ্যা ঠিক বলেছিস জায়ন। আমার মেয়ে টা….
কিন্তু কথা বুঝে উঠতেই চোখ উঠে গেল কপালে ,বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে উঠলো,
__” কি ই ই….

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here