তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৫
নীল মণি
হঠাৎ করেই জায়নের সেই বোমা ফাটানো ঘোষণার পর মুহূর্তের মধ্যে রমরমে, হাসি-ঠাট্টায় ভরা পরিবেশ জমাট বরফের মতো স্তব্ধ হয়ে গেল। একেকটা চোখ যেন থেমে গেছে, নিঃশ্বাসগুলো ভারি হয়ে উঠেছে।
অনন্যার বুকের ভেতর খুশির ঢেউ উঠলেও সেই ঢেউয়ের সঙ্গে গা-হাত-পা কাঁপানো ভয়ও মিশে আছে। যেন সুখের দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়িয়ে গেছে অনিশ্চয়তার দেওয়াল।
সবাই একরকম শকড। ইউভির ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটা প্রথমে আলো ছড়ালেও, পরবর্তী পরিস্থিতির আঁচ পেতেই তার গলা শুকিয়ে গেল, হাতের তালু ঠান্ডা হয়ে এলো। চোখের কোণে আনন্দ, অথচ মনে অজানা শঙ্কার মেঘ ঘনীভূত।
এরই মধ্যে প্রান্তিক সাহেবের গর্জন যেন বজ্রপাতের মতো ফেটে পড়ল,
__” ভেবেছিলাম হয়ত শুধরে গেছ? কিন্তু আমাদের ই ভুল , কিসব বলছো মাথা ঠিক আছে?”
তার কণ্ঠে রাগ, অবিশ্বাস আর হতাশার মিশেল। কিন্তু সেই মুহূর্তে মেহজাবীন বেগমের ঠোঁটে ফুটে উঠল হালকা হাসি। সে যেন ভেতরে ভেতরে বুঝে ফেলেছে তার ছেলে একবার কিছু বলে দিলে, সে কথা সে পূর্ণ করে ছাড়বে। ।সে কি করে ভাবলো তার ছেলে এরকম টা করবে ইউভির সঙ্গে ।
এদিকে এতক্ষণ নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা নাজিমও খবরটা শোনার পর ঠোঁটের কোণে হাসি চাপতে পারল না। সুযোগ বুঝে আকাশ আর ইউভির পাশে গিয়ে দাঁড়াল, যেন এই অদ্ভুত পরিস্থিতির নীরব সমর্থক হয়ে উঠল।
অন্যদিকে তাহসান সাহেব দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করছে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__ ” আমি কি করে ভাবলাম এই ছেলে শান্তি বয়ে আনছে বাসায় , এ তো আমার পেছনে বাঁশ দেওয়ার
তালে ছিল ,আমি কিনা এই হতচ্ছাড়ার প্রশংসা করছিলাম,ইস আমার ফুলের মত ওই টুকু মেয়ে টা তাও আবার ওই ইউভির সঙ্গে । একদম না একদম না,
কিন্তু এই বদজাত জায়ন যদি বড় ভাই আর মেজ ভাই কে মানিয়ে নেয় তখন কি হবে ?”
তাহসান সাহেব এর যেন মুখের বাতি নিভে গেল। তার চোখেমুখে অস্থিরতা স্পষ্ট, মনে হচ্ছে যেন হঠাৎ করে তার নিজের হাতের মুঠো থেকে নিয়ন্ত্রণ ছুটে যাচ্ছে।
কিন্তু প্রণয় সাহেব চুপচাপ। তার ঠোঁটে এক ধরনের নীরব হাসি, যেন জায়নের প্রস্তাবটা তার খারাপ লাগেনি। পাশেই রুহেনা বেগম, সুরাইয়া বেগম আর আয়েশা বেগম একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝিয়ে দিলেন এ প্রস্তাবে আপত্তি করার কোনো কারণ তারা দেখছেন না।
__” কেন বাবা এতে মাথা ঠিক বা বেঠিক এর কি আছে , ইউভি অনু কে পছন্দ করে । অনুর ও তো বিয়ে দেবে একদিন না একদিন , আর আমার ভাই এর থেকে অনুর জন্য ভালো ছেলে একটাও দেখি না ।”
ঠিক সেই সময় জায়নের গলা দৃঢ়ভাবে ভেসে এলো।
জায়ন এর কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই তাহসান সাহেবের চোখ বড় বড় হয়ে উঠল, কপালের শিরাগুলো স্পষ্ট হয়ে গেল। তিনি যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, হঠাৎ করেই আবার চিৎকার করে উঠলেন,
__”কি ই ই ই ,ইউভি আমার মেয়ে কে পছন্দ করে মানে ? ইয়ারকী হচ্ছে নাকি ?
ঘরজুড়ে আবার এক ঢেউ উত্তেজনা, বিস্ময় আর গোপন আনন্দ ছড়িয়ে পড়ল প্রতিটা মুখে আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়ার ছাপ, কিন্তু সবার মনেই এখন একটা প্রশ্ন এখন কী হবে?
এদিকে তাহসান সাহেব ওই কথা বলেই ইউভির দিকে এমন তীব্র দৃষ্টি দিলেন, যেন চোখ দিয়ে সোজা বুলেট ছুঁড়ছেন। মুহূর্তেই ইউভির মেরুদণ্ডে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। সে কোনো কথা না বলে নাজিম আর আকাশের পিছনে সরে দাঁড়াল, যেন দুজনকে ঢাল বানিয়ে নিলো।
আকাশ প্রথমে ইউভির হঠাৎ পিছিয়ে যাওয়া দেখে ভুরু কুঁচকালো। চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
__”আরে ইউভি ভাই করো কি আমাদের পেছনে? কী করছো বলতো? আমাদের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে কি ভেবেছো, আমরা দুইজন ব্যারিকেড হয়ে যাবো নাকি? সামনে কি যুদ্ধ লাগছে?”
ইউভি তখন মাথা সামান্য নিচু করে, ঠোঁট কামড়ে, বুকের ভেতর কাঁপুনি লুকানোর চেষ্টা করছে। কণ্ঠে হালকা কম্পন, কিন্তু কথায় মিশে আছে নিজের ভয়কে লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা,
__”দেখিস না আমার হবু শ্বশুর কেমন বুলডোজারের মতো চাহনি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনই এসে আমাকে রোলার চালিয়ে চেপে দেবে।”
আকাশ ইউভির কথায় ভেতরে ভেতরে হেসে উঠলেও, নিজের অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে গিয়ে মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে গেল। গতরাতে নিজের শ্বশুরের রাগান্বিত দৃষ্টি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিল। সেই স্মৃতি জিভের ডগায় নিয়ে এসে বলে উঠল,
__”ঠিক বলছো ইউভি ভাই দেখো দেখো এই শ্বশুর নামক অসুর গুলো কেমন যেন ভিলেন’ ‘দীপজল’ হয়ে ওঠে। কেন ভাই এত সুন্দর হ্যান্ডসাম হাঙ্ক জামাই পাচ্ছ সেই না দেখে মুখ গুলা দেখো কেমন পঁচা বেগুনের মত করে রেখেছে ।,”
নাজিম ওদের কথায় হেসে ফেলে, ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে যোগ দিল,
__”আরে শালা বাবু আর সম্বন্ধী, তোমরা একটু সান্ত্বনা নাও আমার আর জায়নের শ্বশুর কিন্তু মোটেই এমন না। তেজ আছে ঠিকই, কিন্তু তোমাদের শ্বশুরদের মতো লোহার রড গিলেছে এমন মুখ নয়।”
ইউভি সঙ্গে সঙ্গেই মুখ ঘুরিয়ে নাজিমের দিকে তাকিয়ে কৌতুক মিশিয়ে বলে উঠল,
__”আরে নাজিম ভাই, আমার বাপ মানে তোমাদের দুজনের শ্বশুর তেজ কম বলেই আমার বাপ ওই জায়নের বাপের কথার ঝড় দেখে নাই। নইলে দেখো, আকাশের শ্বশুরের কালকে কীভাবে ধুতি খুলে দিল বড় ভাই।
ইউভি শ্বাস নিয়ে, ভ্রু কুঁচকে তাহসান সাহেবের দিকে একবার তাকিয়ে আবার বলল,
__”আর আমার শ্বশুরের দিকে ভালো করে তাকাও
কেমন মনে হচ্ছে না পাখি তার দুই নম্বর ওনার মুখেই সেরে গেছে।”
তিন জনেই এই পরিস্থিতিতে মিট মিটিয়ে হাসছে ।
জায়ন এবার হালকা থেমে, চোখে একরাশ আবেগ মিশিয়ে, বাবার দিকে এমন ভঙ্গিতে তাকাল যেন চোখের ভাষায় মাটি নরম করে ফেলবে। কণ্ঠ নরম, কিন্তু ভেতরে লুকোনো সেই আত্মবিশ্বাস টের পাওয়া যাচ্ছে,
“বাবা,অনুর এইচএসসি শেষের আগে কোন কিছুই হবে না। ও যতদূর পড়াশোনা করতে চায়, ততদূর করবে এই নিয়ে কেউ কোন কথা বলবে না। আর বাবা, আপনি নিজেই বলেন আমাদের ইউভি কি খারাপ অনুর জন্যে? ইউভি কিন্তু লাখে একটা , তাই না বাবা? এমন ছেলে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।”
জায়ন খুব ভালো করেই জানে এবার তার বাবা “না” বলতে পারবেন না। কারণ সে এমন জায়গায় ছক্কা দিয়েছে, যেখানে বাবার মন গলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। ভালো করেই জানে এবার তার বাবা না কিছুতেই বলতে পারবে না সে এমন জায়গায় খোচা দিয়েছে।
আকাশ আর ইউভি মুখ হাঁ করে তাকিয়ে আছে—এমন নাটকীয় অভিনয় যে তার ভাই করতে পারে, সেটা তো তারা কল্পনাই করেনি। সত্যি বলতে, দর্শকের মতো বসে থাকলেও, এই দৃশ্য দেখে যে কারও চোয়াল নিচে পড়ে যাবে।
এদিকে তাহসান সাহেব জায়নের দিকে এমন দৃষ্টি ছুঁড়লেন, যেন চোখ দিয়েই টেনে এনে গিলে ফেলবেন। কিন্তু জায়নের তাতে কিছু যায় আসে না বরং চাচুর এই রাগী মুখ দেখে সে মুচকি মুচকি হাসছে ।
কিন্তু জায়ন এর এই মুচকি হাসি তে তাহসান সাহেব এর দাঁত কিড়মিড় দিয়ে উঠল , তাহসান সাহেব মনে মনেগজরাচ্ছে ,
__ ” ওড়ে বদজাত এখন আমার বড় ভাইয়ের এই ভাবে
মাথা নষ্ট করছে , এই সব কটা কে তো এই বাসা থেকে
ডিভোর্স দেওয়া উচিত ।”
জায়নের কথায় প্রান্তিক সাহেবের চোখে একটু নরম ভাব ফুটে উঠল। বাকিরা হয়তো জায়নের আসল কৌশল বুঝতে পারেনি, কিন্তু তাহসান সাহেব, ইউভি, আর আকাশ ঠিকই বুঝে গেছে এটা ছিল সরাসরি আবেগের খোঁচা।
প্রান্তিক সাহেবের মনে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন। তিনি ভাবছেন
__”সত্যিই তো, অনুর জন্য ইউভির থেকে ভালো ছেলে আর কোথায় পাব? বয়সের কথা যদি দেখি—আমার নিজের ছেলে বৌমার মধ্যে বারো বছরের তফাৎ, সেখানে ইউভি আর অনুর মধ্যে তো মাত্র আট বছরের পার্থক্য। তেমন সমস্যা তো নয়।”
গলার স্বর খানিকটা নরম করে অবশেষে বললেন,
__” জায়ন সে তো না হয় বুঝলাম আমাদের ইউভি বাবা অনু কে পছন্দ করে কিন্ত অনু মামনি কি পছন্দ করে ইউভি কে ?”
এই কথা শোনা মাত্রই অনু একেবারে চমকে উঠল। বুকের ভেতর যেন ধুপধুপ করে কাঁপছে। সে কি করে বলবে তার বড় আব্বু, মেজ আব্বু, আর আব্বুর সামনে যে সে শুধু পছন্দই করে না, বরং মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে? এত সাহস কি আছে তার?
এই সময় ইউভি আড়চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে, আকাশ কে আর নাজিমকে আধা সিরিয়াস, আধা চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল
__”নাজিম ভাই… আকাশ আমার পাখি আবার তার বাপের ভয়ে উল্টে দৌড়াবে না তো?”
ইউভির চোখের দৃষ্টি অনুর উপর স্থির কেমন এক নীরব আশ্বাস খুঁজে ফেরে সেখানে। কিন্তু ইউভির কথায় নাজিম হেসে উত্তর দিল,
__”আরে সম্বন্ধী, আমার বউ তো আমার সঙ্গেই পলায়ন করেছিল। আর আমার মেজো শালী মানে তিয়াশা ওর তো জায়ন ছাড়া কোন গতি ছিল না। জায়নের সঙ্গে না গেলে হয়তো বাসায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যেত। আর আমার ছোট শালীর উপর ভরসা রাখো বুঝলে? ও কিন্তু পা পিছলে পড়ে যাবে না।”
কিন্তু তাহসান সাহেব ইউভির দিকেএক তীক্ষ্ণ, গর্জনমিশ্রিত দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলেন , ঠোঁটের কোণায় ধীরে ধীরে উঠে এলো এক বিজয়ীর হাসি, সে ভালো করেই জানে তার মেয়ে কখনোই রাজি হবে না ইউভি কে বিয়ে করার জন্য ।
হঠাৎ প্রান্তিক সাহেব শান্ত স্বরে অনুকে ডেকেই বসলেন। ড্রয়িং রুমের সমস্ত চোখ ওই সুক্ষ্ম মুহূর্তটায় অনুর দিকে ঝুঁকল। অনু মাথা নীচু করে ধীর পায়ে উঠে এসে প্রান্তিক সাহেবের সামনে দাঁড়াল হৃদয়ের ভিতর হাজারো শব্দ, কন্ঠে কেবল কম্পমান নীরবতা।
প্রান্তিক সাহেব সামান্য এগিয়ে এসে কোমল কণ্ঠে বললেন,
__” ছোট মামনি আমি জানি তুমি এখনো ছোট , তোমার পড়াশোনার কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না ।
একদিন তো তোমাকে বিয়ে দিতেই হবে আমাদের ইউভি খুব ই ভালো, সে তোমাকে ভালো রাখবে । তুমি
কি চাও তার সঙ্গে নতুন জীবনের হাত ধরতে ? তোমার
সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা একবার দুবার ভুল করেছি আমাদের সন্তান দের কাছ থেকে তাদের সিদ্ধান্ত জানতে চাই নি , তাই আজ তোমায় আমি জিজ্ঞেস করছি ।”
প্রান্তিক সাহেব এর কথায় অনুর মনে যেন ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে ,বুকের ধুকধুক আরো বাড়তে লাগলো, গলায় অচল কিছু আটকে গেল। কিন্তু সে তার আব্বুর দিকে তাকাতেই ভয়ে জড়সড় হয়ে উঠছে , হাত ঘামে ভিজে উঠেছে।কি বলবে সে ?
এর মধ্যেই পিছন থেকে কারো শক্ত দুই ভরসার হাত অনুর কাধে স্পর্শ করল , আর ভেসে আসলো এক
বিশ্বস্ততা যুক্ত ধীম কণ্ঠস্বর ,
__” এদিক ওদিক তাকাতে হবে না , ভরসা রাখ ,তোর পেছনে তোর এই বড় ভাই আছে ।”
এই শব্দটার মধ্যেই অনুর চোখে অশ্রু চোখ ছলছল করে উঠল। বড় ভাইয়ের স্পর্শ আর কণ্ঠে ছড়িয়ে থাকা নিশ্চয়তা তাকে কিছুটা হলেও স্থির করল। প্রান্তিক সাহেবের মুখে শান্তি ফুটে উঠল, যেন তিনি মেন্টর জনে পছন্দের উত্তর পেয়ে গেলেন।
তাহসান সাহেবের চোখে তখনও রাগের আগুন জ্বলছে তিনি ভেতরে ভেতরে বলছেন, “এই বদজাত আমার মেয়ের মাথা নষ্ট করছে” কিন্তু জায়নের দৃঢ়তা, অনুর মৌন সংকল্প এবং প্রান্তিক সাহেবের নম্র অনুরোধ সব মিলিয়ে ব প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তাহসান সাহেব একটু ঢং করেই বললেন,
“বড় ভাই, আমার মনে হয় জায়নের ভয়ে অনু এই কথা বলছে; জায়ন তোকে ধমক দিয়েছে, তাই না?”
অনু কাঁপতে কাঁপতে মুখ খোলার চেষ্টা করল। সে জানত নিজের ভেতরের সবার কাছে প্রকাশ করা কঠিন বড় আব্বু, মেজো আব্বু, আর বাঁধাধরা পরিবারের মাঝে নিজের ছোট্ট ভালোবাসার কথা বলা ভীষণ সাহসের পরীক্ষা। কিন্তু বড় ভাইয়ের উপস্থিতি, সেই সমর্থনের স্থির হাত দেখে সে কণ্ঠে কাঁপা অথচ সোজা সুরে বলে উঠল,
“না, না, আব্বু বড় ভাই কিছু বলেনি। আমি আমার মন থেকেই বলছি। যদি আপনাদের ও বড় ভাইদেরও মনে হয় ইউভি ভাই আমার জন্য সঠিক, তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।”
অনুর এই কথা শোনা মাত্রই ইউভির চোঁখ খুশিতে ভিজে উঠল, তার এত দিনের ভলোবাসা পরিপূর্ণতা
পাচ্ছে অবশেষে । কিন্তু তাহসান সাহেব এর চোখে
দেখা যাচ্ছে শেষ আশ্বাস টুকো ভেঙে যাওয়ার
ব্যর্থতা।
প্রান্তিক সাহেব হঠাৎ এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো, তারপর প্রণয় সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
__” কিরে মেজো, তোর কোন আপত্তি নেই তো?”
প্রান্তিক সাহেবের কথায় প্রণয় সাহেব এর কথায় এক গাল হাসি দিয়ে জবাব দিল,
__ ” আরে না বড় ভাই আমি তো অনেক খুশি ,অনু মা কে আমার ইউভির জন্য অনেক পছন্দ । আমার ছোট জামাই যে এত ভালো সিদ্ধান্ত নেবে ভাবতেই পারেনি ।”
জায়ন যেন শ্বশুরের মুখে এই প্রথম বার জামাই শুনে
একটু খুশিই হল। টিশার্ট এর কলার ঠিক করতে করতে একটু কেশে নিল ।
এর মধ্যেই প্রণয় সাহেব তাহসান সাহেব এর দিকে তাকিয়ে বলল ,
__” কি রে তুই মুখ এরকম আম শুঁটকির মত কেন করে
রেখেছিস তোর কি আমার ইউভি কে পছন্দ না ?”
তাহসান সাহেব মনে মনে রাগে বিড়বিড় করছে ,
__” না একদম পছন্দ না , ইস আমার বাচ্চা মেয়ে টা
ওই আধ দামরা বদমাইস ইউভির সঙ্গে , আবার জিজ্ঞেস করছে ?”
কিন্তু এইকথা মুখ থেকে বের করার সাহস নেই তার ভাই দের সামনে । তাই না চাইতেও মুখে একটু হাসি নিয়ে বলল ,
__” না না মেজ ভাই আমার কোন আপত্তি নেই ।”
তারপর ইউভির দিকে তাকিয়ে দাঁত দাঁত চিপে গজগজ করে বলে উঠল,
__” ইউভির মত ছেলে তো আমার মেয়ের জন্য খুঁজলেও পাবো না ।”
কিন্তু তাহসান সাহেব জায়ন এর দিকে তাকাতেই জায়ন এক বাকা হাসি দিয়ে উঠল। যেই হাসি ছিল
গা জ্বালানো , মুহূর্তেই জ্বলে উঠলো তাহসান সাহেব।
কিন্তু এখন তাহসান সাহেব এর এই তাকানো তে ইউভির কিছু যায় আসেনা । সব কিছুরই মাঝে ইউভি কাঁপা কণ্ঠে, চোখে কৃতজ্ঞতা আর শিশুসুলভ আনন্দে মুচকি দিল তার দিকে তাকিয়ে আকাশ আর সে একসাথে হাতের ইশারায় বলল, শব্দ না-থাকলেও হৃৎস্পন্দন আর চাহনিতে ছিল একটুকরো
__ ” উই লাভ ইউ ভাই , ”
কিন্তু জায়ন পাত্তা দিল না ,কিন্তু তারা পারলে যেন এই মুহূর্তে পারলে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে জায়ন এর উপর । এই ড্রয়িং রুমের বাতাস টা পুনরায় যেন আবারো মিশে উঠলো নতুন খুশিতে ।
মেহজাবীন বেগম সুরাইয়া বেগম রুহেনা বেগম আয়েশা বেগম একে অপরকে খুশিতে জড়িয়ে ধরছে ।
কিন্তু এইসব খুশি কেন তাহসান সাহেব এর কাছে বিশের মত লাগছে , সুরাইয়া বেগম এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করল ,
__” নিজের ঘরেই মীরজাফরের বসবাস, তাহলে
আমার পোলা গুলো কেন দেবে না আমার পেছনে
আছোলা বাঁশ।”
এই আনন্দের মাঝেই তিয়াশা ধীর পায়ে সিঁড়ির রেলিং এর সাহায্যে নিচে নামছে কারন শরীর এখন অনেকটাই দুর্বল । জায়ন মানা করেছিল, কিন্তু একা ঘরে বসে থেকে তিয়াশার যেন প্রাণ ওষ্ঠাগত। জায়ন চলে আসার পর থেকেই এক অদ্ভুত একঘেয়েমি আর কৌতূহল পেয়ে বসেছে।
হঠাৎ সিঁড়ির মোড়ে এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল ড্রয়িং রুমে সবাই খুশিতে ভরপুর। মুখে মুখে হাসি, চোখে ঝিলিক। দৃশ্যটা দেখে তিয়াশা যেন আরও অবাক।
তখনই তার চোখ পড়ল সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জায়নের উপর। পেছন থেকেই চুপিচুপি বলে উঠল ধীর কণ্ঠে,তিয়াশা
__ “বর, এখানে কী হচ্ছে?”
হঠাৎ পিছনে তার বউ এর কণ্ঠ শুনে চমকে উঠে জায়নের ভ্রু কুঁচকে গেল । ধীরে ঘুরে তাকিয়েই সে যেন থমকে গেল,তার বাচ্চা বউ দাঁড়িয়ে আছে সিঁড়ির উপর, সবার দিকে তাকিয়ে, গায়ে একরকম নরম আলো পড়েছে। মুহূর্তেই জায়নের চোখে রাগের ঝিলিক নেমে এলো।
দুই হাত কোমরে রেখে, দাঁতে দাঁত চেপে গলা নামিয়ে বলল,
__”মানা করেছিলাম না নিচে আসবি না? তুই একটা কথা কেন শুনিস না বলত?”
তিয়াশা ঠোঁট সামান্য ফাঁক করে কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু জায়ন একটুও সুযোগ দিল না। পায়ের শব্দ না করেই এগিয়ে এসে তাকে হঠাৎ কোলে তুলে নিল।
__”আরে কী করছো? সবাই দেখবে তো” তিয়াশা লজ্জা মিশ্রিত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল, গলা কেঁপে উঠছে।
“দেখুক। আমার বউ, আমার কোলে ,এই নিয়ে কে কী ভাবল আমার যায় আসে না , আর সবার এখন অভ্যাস করে নেওয়া উচিত ?” জায়নের গলায় সেই দাপট, যেটা তিয়াশার বুকের ভেতরটা হালকা কাঁপিয়ে দিল।
তিয়াশা মাথা নিচু করে, জায়নের প্রশস্ত বুকের সঙ্গে, আর এই প্রশস্ত বুক তার পুরো পৃথিবী, তাই জায়ন এর দিকে মায়াবী দৃস্টিতে তাকিয়ে অদূরে কণ্ঠে বলল,
__”ঠিক আছে… রাগ করো না… কিন্তু বলো তো, কী হয়েছে?”
জায়ন সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে তার চোখের দিকে একবার তাকাল , তাকাতেই বুকের মধ্যে কি যেন শিউরে উঠলো, নিজের ঠোঁট কামরে কোণে বাকা হাসি টেনে বলল,
“কিটি ক্যাট, ডোন্ট লুক অ্যাট মি লাইক দিস , তোর শরীর খারাপ দেখবোনা কিন্তু। আর এমনিতেই আমার একটা রাত উইথ আউট ডিজার্টে কেটেছে তাই সাবধান বউ ।”
জায়নের কথা শুনে তিয়াশার গাল লাল হয়ে উঠল। মাথা গুঁজে দিল তার বুকে, যেন এভাবে লুকিয়ে ফেলতে পারবে নিজের লজ্জা।বুকের মধ্যে যেন হঠাৎ একটা উষ্ণ ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল।রুমে ঢুকে জায়ন দরজা লক করে দিল। তারপর ধীরে এসে তাকে সোফায় বসিয়ে,তার আঙুলের স্পর্শে যেন নীরবে জড়িয়ে রইল যত্ন আর অধিকার। তিয়াশা চোখ মেলে তাকিয়ে, আবারও কৌতূহল মেশানো গলায় প্রশ্ন করল,
__”বলবে তো, সবাই কেন এত খুশি?”
জায়নের ঠোঁটের কোণে একটুখানি বাঁকা হাসি ফুটল, সেই হাসি যেন কিছু গোপন আনন্দ লুকিয়ে রাখছে। সে ধীরে ঝুঁকে এসে তিয়াশার চিবুকটা আঙুলের ডগায় তুলে নিল চোখে চোখ রেখে বলল
__”জানেমন ,তোমার দুই ভাইয়ের গতি করে দিয়ে আসলাম।”
তিয়াশার ভ্রু কুঁচকে গেল, ঠোঁট সামান্য ফাঁক হয়ে গেল অবাক হয়ে। মাথার মধ্যে যেন প্রশ্নের ঘূর্ণি উঠল এটা কেমন কথা , সে একটু সামনে ঝুঁকে, কণ্ঠে অস্থিরতা নিয়ে বলল,
__”মানে?”
জায়নের চোখে তখন দুষ্টুমি ভরা ঝিলিক। সে ধীরে হাত বাড়িয়ে তিয়াশার কপালে এক আঙুলের নরম স্পর্শ রাখল, যেন খেলার ছলে বোতাম টিপছে। তারপর মৃদু গলায় ঠাট্টা করে বলল,
__”ভাইদের মতো, আমার বউয়ের মাথাতেও দেখি গরুর ঘাসে ভরা।”
এই কথা শোনার সাথে সাথেই তিয়াশার চোখ বড় হয়ে গেল। ঠোঁট চেপে এমন এক দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল জায়নের দিকে যেন চোখ দিয়েই তীর ছুড়ে মারবে। কিন্তু পরের মুহূর্তেই মুখ ঘুরিয়ে নিল, অভিমানী ভঙ্গিতে। জায়ন তবু ও মজা পাচ্ছিল বউয়ের এই ছোট্ট বাচ্চামি তার চোখে অপূর্ব লাগে। হাসতে হাসতে সে এগিয়ে এসে কোমল গলায় বলল,
__”বউ, তোমার ভাইদের বিয়ে ঠিক করে আসলাম,তাদের পছন্দের মানুষের সঙ্গে।”
তিয়াশার চোখে মুহূর্তেই আলো জ্বলে উঠল। সমস্ত রাগ, অভিমান যেন গলে গেল এক নিমিষে। সে ঝট করে এগিয়ে এসে দুই হাত দিয়ে জায়নের গলা জড়িয়ে ধরল। গলায় প্রশান্তি আর আনন্দ মেশানো কণ্ঠে বলল
__”সত্যি?”
জায়নের দৃষ্টি নরম হয়ে এলো সেও তিয়াশাকে কোমর জড়িয়ে ধীরে মাথা নাড়ল, ঠোঁটে স্নেহমাখা হাসি,
“হুমম… বউ।”
এই কথা শোনার সাথে সাথেই তিয়াশা বুক ভরে শ্বাস নিল, মনে হল চারপাশে যেন বসন্ত নেমে এসেছে। চোখ বন্ধ করে, সমস্ত অনুভূতি ঢেলে দিয়ে খুশিতে জায়নের ঠোঁটে নরম চুম্বন দিয়ে দিল যেন এই মুহূর্তটুকুই তার ছোট্ট পৃথিবী।
কন্ট্রোলহীন জায়ন এতক্ষণ বউয়ের শরীরের কথা ভেবে নিজেকে ধরে রেখেছিল। কিন্তু তিয়াশার সেই ছোট্ট, অপ্রস্তুত চুমুই যেন তার ভেতরের সমস্ত বাঁধ ভেঙে দিল। মুহূর্তেই তিয়াশাকে শক্ত করে জড়িয়ে এক ঝটকায় সোফায় শুইয়ে দিল সে। তিয়াশা হঠাৎ চমকে উঠল, বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়ে গেল।
জায়নের চোখে তখন এক অদ্ভুত মাদকতা গভীর, জ্বলন্ত, আর তাতে মিশে আছে অবদমিত কামনার ছায়া। ঠোঁটে এক ফিসফিসে, গাঢ় কণ্ঠে সে বলল,
“বলেছিলাম না সাবধান থাকতে, এবার কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই। দায় একেবারে আমার বউয়ের।”
তিয়াশা কিছু বলার আগেই জায়ন নিজের ঠোঁট চেপে ধরল তার ঠোঁটে। প্রথমে ধীর, দাবিদার স্পর্শে নিচের ঠোঁট আয়ত্তে নিল, যেন সময়কে থামিয়ে দিতে চাইছে। তিয়াশার শ্বাস গুলিয়ে গেল, অথচ সে নিজেকেও আটকে রাখতে পারল না ধীরে ধীরে জায়নের উষ্ণতায় গলে গেল, নিজেকে মিশিয়ে দিল তার চুম্বনে।
তার হাত উঠল জায়নের গলার চারপাশে,আঙুলগুলো স্পর্শ করল শক্ত কাঁধ, আর তিয়াশার এই সম্মতি ই যেন জায়ন কে উন্মাদ করে দিল ।জায়ন ততক্ষণে তার ঠোঁটের প্রতিটি ক্ষণিক পরশকে নিজের করে নিচ্ছে একবার গভীর, একবার ধীরে, আবার একবার তীব্র দাবিতে।
হঠাৎ, উন্মাদ এর তাড়নায় জায়ন তিয়াশার শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিল। উষ্ণ, মাদকতাময় হাত ছুঁয়ে গেল তিয়াশার কোমল ত্বক প্রতিটি ছোঁয়া যেন তিয়াশার শিরায় বিদ্যুৎ বয়ে দিল।
তিয়াশা তখন সম্পূর্ণ ভাসছে না মাটি আছে পায়ের নিচে, না সীমানা আছে চারপাশে। শুধু জায়নের স্পর্শ, জায়নের শ্বাস, আর সেই উষ্ণতার ঢেউ যা তাকে একেবারে নিজের করে নিচ্ছে।
প্রায় কুড়ি মিনিট পর ঠোঁট আলগা করল জায়ন। শ্বাস টেনে ছাড়ছে বারবার, কণ্ঠ ভারী হয়ে গেছে। চোখ ভরা তৃষ্ণা নিয়ে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলল,
“বউ আর পারছি না। একটু ব্যাথা দিলে, তুই কি কষ্ট পাবি?”
তিয়াশা কিছু বলল না। শুধু মুখ ঘুরিয়ে একচিলতে হাসি ছুঁড়ে দিল সেই হাসির মানে জায়ন খুব ভালো করেই বুঝে গেল।
সে আবারও তিয়াশার মধ্যে ডুবতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই বাইরে থেকে কে যেন দরজায় নক দিল। মুহূর্তে জায়নের মুখে রাগের ছায়া নেমে এল। দাঁতে দাঁত চেপে নিচু গলায় বলল,
“বাঁ**… কোথাও শান্তি নাই।আমার রোমান্সের টাইমে মিরগির ব্যামো হয় সবার। প্রাইভেসির কোনো মান সম্মান নাই।”
তিয়াশা তার এই ভঙ্গি দেখে মুচকি হেসে ফেলল। জায়ন রাগে তার উপর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তিয়াশার শাড়ি ঠিক করে নিজেকেও একটু গুছিয়ে নিল, তারপর দরজার দিকে পা বাড়িয়ে দিল।
দরজা খুলতেই সামনে ইউভিকে দাঁড়ানো দেখে জায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল আরো,
“ভাই, তোদের সমস্যা কি? না বল, কি এত জরুরি? ভেবেই নিয়েছিস বল আমার রোমান্সে
তোরা চন্দ্রবিন্দু না লাগানো পর্যন্ত শান্তি পাবি না।”
একটানা বলে যাচ্ছে জায়ন, আর ইউভি হাঁ হয়ে তাকিয়ে আছে, মনে মনে ভাবছে এই লোকের রোমান্স ছাড়া আর কিছু মাথায় আসে না নাকি রাত নাই দিন নাই সকাল নাই দুপুর নাই আছে শুধুই এনার রোমান্স? তাই একটু সাহস নিয়েই বলল
__”ভাই, বনু অসুস্থ, তাই দেখতে আসছি, আর একটু দরকার তাই তোমাকেও ডাকতে এলাম।”
জায়ন দাঁতে দাঁত চেপে, ঠোঁট বাঁকিয়ে, ইউভির দিকে এমনভাবে তাকাল যেন এখনই গিলে খাবে,
__”বোনকে পরে দেখিস। আমি পরে আসব। এখন বিদায় হ।”
ইউভি মাথা নেড়ে ঠোঁট কামড়ে হালকা হেসে বলল,
__”না ভাই, এক্ষুনি আসতে হবে। আমরা ছাদে আছি,”
এই বলেই ইউভি তাড়াতাড়ি দ্রুত বেগে পা বাড়াল ছাদের দিকে, যেন বড় ভাই মানা করার সুযোগই না পায়।
ইউভির দৌড়ে চলে যাচ্ছে , তখন জায়ন এর রাগি কন্ঠস্বর ভেসে এল ,
__” শা** মীরজাফরের দল, তোদের জ্বালায় আমি বউ নিয়ে দেশ ত্যাগ করব । আর তোদের বিয়ের পর যেন কলিকাতা হার্বাল ওয়েল এও যেন কাজ না দেয়।”
জায়ন রাগে গজগজ করতে করতে দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকল দরজা বন্ধ করতেই জায়নের মুখ কালো হয়ে গেল, চোখ রাগে লাল। গজগজ করতে করতে ঘরে ঢুকে দুই হাত কোমরে দিয়ে দাঁতের মাঝ দিয়ে ফুসে রাগ বের করতে করতে বলল,
__”তোর ভাইরা রোমান্সের সময়ে সাপের মত এসে সব নষ্ট করে দিয়ে যায়।একদিন আমার হাতে খুন হবে, আই অ্যাম ড্যাম শিওর”
তিয়াশা তখন তার এই ভঙ্গি দেখে , ঠোঁটের কোণে টিপে রাখা এক দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
__”আমার ভাইয়ারা কি আপনার চাচা লাগে, স্যার?”
তার কণ্ঠে মজা, কিন্তু চোখে হালকা খুনসুটির ঝিলিক। জায়ন ভ্রু কুঁচকে তাকাল বুঝে গেল, এই মেয়েটা এখন ইচ্ছে করেই তার রাগকে খোঁচাচ্ছে।
এই বলেই তিয়াশা উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, কিন্তু শরীরটা হঠাৎ দুর্বল লাগায় বসে পড়ল, জায়ন তা দেখে এক ঝটকায় এগিয়ে এসে তার হাত ধরে বলল,
“শরীর খারাপ লাগছে জান? সরি, সরি বাচ্চা, দেখছিস তো, বলেছিলাম উঠবি না। এদিকে আবার তুই আমাকে উস্কে দিয়েছিস।”
তিয়াশা মৃদু কণ্ঠে বলল,
_”হুম… হঠাৎ করেই একটু দুর্বল লাগছে।”
জায়ন তৎক্ষণাৎ তাকে কোলে তুলে বিছানার হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল।
__”এক পাও নড়বি না, বউ। জানিস, গত রাতে তোকে ওই অবস্থায় দেখে আমার কি অবস্থা হয়েছিল? নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।”
তিয়াশা চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে আছে । এই মানুষটা এত ভালোবাসে কেন তাকে সামান্য জ্বরে এক রাতেই নিজের এমন অবস্থা করেছে। হঠাৎ কৌতূহল থেকে বলে ফেলল,
“বর, আমার এই সামান্য জ্বরে তোমার এই অবস্থা… তাহলে আমি যদি কোনো কারণে মরে..”
“ঠাসসস…..
পুরো বাক্য শেষ করার আগেই, এই চার দেওয়ালে বেজে উঠল এক শব্দ , শব্দের সাথে সাথেই তিয়াশার মাথা ঘুরে গেল , ছোট্ট গালে জায়নের থাপ্পড় বেজে উঠল এমন জোরে যে সে বিছানায় হেলে পড়ল। ব্যথায় গাল চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠল, চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
তিয়াশা সামনে তাকাতেই দেখল জায়নের চোখ জ্বলছে আগুনে, মুখে ভয়ঙ্কর রাগ। বুক কেঁপে উঠল তার। কেন যে এই কথা বলল সে?
জায়ন ঝুঁকে এসে তার মুখ চেপে ধরে রাগে গর্জে উঠল,
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৪
__”কু**ত্তা*র বাচ্চা,নেক্সট টাইম ওই শব্দ মুখে আনবি তো, আমি নিজে হাতে তোর জানাজা পড়ে দেব। শা*লা হা**রা**মির বাচ্চা কত বড় সাহস তোর, ওই ওয়ার্ড মুখে আনিস।”
এক ঝটকায় তার মুখ ছেড়ে দিয়ে গটগট করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল জায়ন।
তিয়াশা চোখের পানি মুছতে মুছতে দাঁত কামড়ে ফিসফিস করল,
__”মায়া দয়া হীন লোক, বললাম শরীর খারাপ লাগছে তবুও এত জোড়ে মারল । এবার কাছে আসলে হয় সব রোমান্স ঘুচিয়ে দেব। ইবলিশের বাচ্চা ।”