তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৭
নীল মণি
সময় তখন সন্ধ্যা ছটা পাঁচ ঢাকার অভিজাত রিসর্টের গেমিং সেকশনের উজ্জ্বল আলোতে দাঁড়িয়ে আছে জায়ন, আকাশ, ইউভি, জেমস, নাজিম, আহান আর সাগর।
জায়ন, আহান আর জেমস পুল টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাতে স্টিক, চোখে খেলার তীব্র মনোযোগ। ঠিক তাদের পাশেই আকাশ আর সাগর ব্যস্ত টেবিল টেনিস খেলায় বল যেন এক মুহূর্তের জন্যও থামছে না। আর ইউভি আর নাজিম পাশে দাঁড়িয়ে, হাতে কফির কাপ, দু’জনই দর্শক হয়ে খেলাটা উপভোগ করছে।
হঠাৎ বলের ফাঁকে আকাশ মুখ তুলে বলল, কণ্ঠে সামান্য চিন্তার সুর,
__”ভাইয়া… আমার না কেমন যেন লাগছে। বা চোখটা বারবার লাফাচ্ছে। মনে হচ্ছে অদ্ভুত কিছু হবে আজ।”
জায়ন একটু কিছু বলতে যাবে, কিন্তু সাগর টেবিল টেনিসের ব্যাট নামিয়ে, মুচকি হেসে মজার ভঙ্গিতে বলল,
_”আরে বা চোঁখ লাফানো ভালো বুজঝ ছোট ভাই,
এতে দৃষ্টি ভালো হয় , দূরের জিনিষ আর ভালো করে দেখতে পারবা।”
সাগর এর কথায় আকাশ ভ্রু কুঁচকে হেসে বলল,
__ “কেন সাগর ভাই? আমি কি কানা নাকি?”
সাগর একদম নির্লিপ্ত মুখে বলে উঠল,
__ “না ন তুমি তো কানা না, তুমি ব্লাইন্ড। কানা কেন হবে?”
সাগরের এই ঠাট্টায় আকাশ খানিকটা চমকে তাকাল,
__ “আরে সাগর ভাইও আর চাটতে হবে না, মনে হচ্ছে সত্যিই কিছু একটা হবে।”
এদের কথা শুনে বাকিরা সবাই হো হো করে হেসে উঠল। এমনকি জায়নের ঠোঁটের কোণেও এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এর মাঝেই ইউভির ফোন বেজে উঠল। সে স্ক্রিনে একবার তাকিয়ে হালকা হাসল, তারপর গেমিং রুম থেকে বেরিয়ে গেল কথা বলতে।
ঠিক সেই সময় জায়নের ফোনে মেসেজ পপ-আপ হলো। সে ফোন পকেট থেকে বের করে স্ক্রিন অন করতেই চোখ কপালে উঠে গেল। স্ক্রিনে কিটি ক্যাট এর মেসেজে ভেসে উঠলো ,
__”ড্যাডি, আই মিস ইউ। তোমায় ছাড়া আমার একটুও ভালো লাগছে না।”
‘ড্যাডি’ শব্দ টা দেখতেই জায়ন কেশে উঠলো ,জায়নের চোখ হঠাৎই বড় হয়ে গেল, স্ক্রিনে ভেসে ওঠা মেসেজ দেখে গলা শুকিয়ে এল। ঠোঁট সামান্য ফাঁক হয়ে, প্রায় ফিসফিস স্বরে নিজের মনে বলল,
__ “বউ কী বলে ড্যাডি? মাথা ঠিক আছে তো? নাকি আমারই মাথা ঘুরে যাচ্ছে?”
তার ভেতরে অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছে, মনে হচ্ছে বুকের ভেতরের হার্টবিট যেন কানে ধাক্কা দিচ্ছে।
এরপরই আবার ফোনটা হালকা কেঁপে উঠল নতুন মেসেজ।
__ “মাই ড্যাডি, প্লিজ কাম সুন ,তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
এই শব্দগুলো যেন সরাসরি জায়নের রক্তে আগুন ঢেলে দিল। বুকের ভেতর ধুকপুকানি এতটা জোরে বাড়ল যে মনে হচ্ছে চারপাশের সবাই তা শুনতে পাবে। গলায় হালকা শুকনোভাব, কিন্তু ঠোঁটের কোণে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে এক দুষ্টু হাসি। মাথার মধ্যে চিন্তা ঘুরছে,
__”বউয়ের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নাকি? না কি আমারই মাথা আজ পাগলামিতে ডুবে যাচ্ছে?”
তিয়াশাকে কল দিল কিন্তু তিয়াশা কল কেটে দিয়ে ,
মেসেজ দিল ,
__” নো কল ড্যাডি, অনলি মেসেজ।”
জায়ন বাকা হেসে ফোনে আঙুল চালিয়ে ধীরে ধীরে রিপ্লাই টাইপ করল, যেন প্রতিটি অক্ষর তার কামনার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে,
__ “জান এরকম ডাকিস না আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছি।”
ঠিক তখনই আকাশের ফোন বেজে উঠল। আকাশ একপাশে সরে গিয়ে ফোন কানে নিল। ওপাশে কে কী বলছে শোনা গেল না, কিন্তু তার মুখে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল এক অদ্ভুত রহস্যময় হাসি যেন কোন গোপন সুখবর শুনেছে।
এদিকে জায়নের চোখ কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ফোনের স্ক্রিন ছেড়ে যাচ্ছে না। আবার মেসেজ ভেসে উঠল,
__”আমার এখন মন চাইছে আমার ড্যাডি আমার উপর সব কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলুক।”
এই লাইন পড়তেই জায়নের বুকের ভেতর যেন বিস্ফোরণ ঘটল। শ্বাস ভারী হয়ে গেল, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠল। চোখের কোণে কামনার ঝিলিক যেন ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে। সে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচু স্বরে টাইপ করল,
__ “জান, তুই অসুস্থ এরকম করিস না। নইলে এক্ষুনি চলে এসে কিন্তু খুব ব্যথা দেব।”
ঠিক তখনই গেমিং রুমের দরজা ঠেলে ইউভি ফিরে এল, কণ্ঠে তাড়াহুড়োর ছাপ,
__”ভাইয়ারা আমায় যেতে হবে এক্ষুনি তোমরা থাকো।”
আহান কপাল কুঁচকে হাত তুলে থামাতে চাইল,
__ “আরেহ ছোট ভাই, এত তাড়া কিসের? কোথায় যাচ্ছিস?”
ইউভি দরজার দিকে এগোতে এগোতে একবারও পেছনে তাকাল না, শুধু ফেলে গেল তাড়াহুড়ো ভরা শব্দগুল,
__ “খুব জরুরি দরকার পরে দেখা হবে আহান ভাই।”
কিন্তু জায়নের কাছে এসব শব্দ যেন পানির শব্দের মতোই শুনছে বটে, কিন্তু তার ভেতরে কোনো ঢেউ তুলছে না। তার মন পুরোপুরি আটকে আছে ফোনের দিকে।মেসেজ না আসায় অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। হয়তো ভেবেছে আর মেসেজ আসবেনা তাই আঙুল দিয়ে ফোন স্ক্রিনে হালকা চাপ দিয়ে সে পকেটে রাখতে যাবে, ঠিক তখনই আবার ভেসে উঠল নতুন মেসেজ,
__”আমি তোমার জন্য সুস্থ বর ,আমি চাই তুমি চলে আসো।”
জায়ন ঠোঁট কামড়ে, প্রায় গর্জন মিশ্রিত ফিসফিসে বলে টাইপ করল,
__”আর ইউ শিওর, বেব?”
রিপ্লাই দেরি হওয়ায় অস্থিরতা তাকে পাগল করে তুলল। এক হাতে নিজের চুল চেপে ধরেছে, শ্বাসপ্রশ্বাস যেন আগুনের তাপে আরও ভারী হয়ে উঠছে।
হঠাৎ আবার মেসেজ। এবার শুধু শব্দ নয় একটা ছবি।
তিয়াশা সেই পরিচিত নাইট ড্রেস পরে, ঠোঁটে দুষ্ট হাসি একটা সেলফি পাঠিয়েছে। ছবির নিচে লেখা,
__ “টু মাচ শিওর, ড্যাডি এরকম শিওর কখনো হইনি।”
এখন আর এক মুহুর্ত সে এখানে থাকতে পারবে না, কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘামের দৃশ্যমান, গলার আদাম আপেলস বারবার ওঠা নামা করছে, ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে ,জায়নের চোখে তখন শুধু কামনার নেশা। ঠোঁট চেপে, যেন নিজের মধ্যে প্রতিজ্ঞা বাঁধল,
__”বউ আজকে তোর চিৎকার সারা রাতেও থামাতে দেবো না।”
সেই মেসেজ আর ছবি। আর কোন শব্দ, কোন মানুষ, কোন পরিবেশ তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সে আর এক মুহূর্তও দেরি করল না কেউ কিছু বোঝার আগেই তাড়াহুড়ো পায়ে, প্রায় হন হনিয়ে দরজার দিকে এগোল। মুখে কোন কথা নেই, শুধু তীব্র এক অস্থিরতা। দরজা ঠেলে বাইরে চলে গেল।
তারপর বেশি সময় লাগল না কিছুক্ষণ পর আকাশও আড়াল থেকে কথা বলে বেরিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে, ঠোঁটে এক হাসি এনে সবাইকে বিদায় জানাল। তার পদক্ষেপেও ছিল এক ধরনের অদ্ভুত তাড়াহুড়ো, যেন কোথাও খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাকে ডাকছে।
গেমিং রুমে এখন বাকি চারজন ইউভি নেই, জায়ন নেই, আকাশ নেই।তারা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করল হঠাৎ সবাই এভাবে ব্যস্ত হয়ে কোথায় চলে যাচ্ছে?
জেমস ভ্রু কুঁচকে চারপাশে তাকাচ্ছিল, আহানও কিছুটা অবাক। ঠিক তখনই নাজিমের ফোন বেজে উঠল স্ক্রিনে ‘বৃষ্টি’ নামটা জ্বলজ্বল করছে।
নাজিম ফোন কানে তুলতেই ওপাশ থেকে দ্রুত কিছু বলার শব্দ শোনা গেল, কিন্তু স্পষ্ট নয়।
নাজিমের মুখে হঠাৎই চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল,
“বাবু তো দুপুর পর্যন্ত ঠিকই ছিল হঠাৎ ডিসেন্টারি হল?”
কণ্ঠে স্পষ্ট উদ্বেগ, চোখে কপালের মাঝ বরাবর ভাঁজ।
ওপাশে আবার কিছু বলল বৃষ্টি এইবারও বাকিটা স্পষ্ট শোনা গেল না।নাজিম গভীর শ্বাস নিয়ে জবাব দিল, __”ঠিক আছে আমি আসছি।”
ফোন রেখে নাজিম ধীরে ধীরে মুখ ঘুরিয়ে বাকি তিনজনের দিকে তাকাল, যেন এক মুহূর্তে মন থেকে গেমের আনন্দ মুছে গেছে। শান্ত গলায় বলল,
__ “আমার ছেলের ডিসেন্টারি হয়েছে… আমাকে এখনই যেতে হবে।”
বলে আর সময় নষ্ট না করে ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেল। Gaming room এর ভেতরে তখন এক ধরনের ফাঁকা ভাব। সাগর কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, তারপর হঠাৎ গলা নামিয়ে, কপাল কুঁচকে বলল,
— “ভাই আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে কোথাও যেন বড়সর স্কাম হইতাছে।”
তার গলায় ছিল দ্বিধা, কিন্তু চোখে দৃঢ় সন্দেহের ছাপ।
সাগরের কথা শুনে জেমস হেসে ফেলল, হাসিতে সামান্য অবজ্ঞা মিশে,
__ “ব্রো, ডোন’ট ইউজ ইউর ব্রেন টু মাচ।”
তার ভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছিল সে বিষয়টিকে একদম পাত্তা দিচ্ছে না।
আহানও কথায় যোগ দিল, সাগরের কাঁধে হালকা চাপ দিয়ে মজা করে বলল,
__ “একদম ঠিক বলেছো, হাফ-বিদেশী ভাই।”
তার হাসিতে ছিল ঠাট্টা, কিন্তু চোখে যেন সামান্য কৌতূহল লুকিয়ে আছে যা সে প্রকাশ করতে চাইছে না।
এদিকে তিয়াশা নিজের ঘরে বসে যেন ভেতরটা জ্বালিয়ে ফেলছিল। জায়ন একটু আগে একটা মেসেজ দিয়েছিল সে রাস্তায় , একটু পরেই পৌঁছাবে,রাগে শরীরের প্রতিটা শিরা গরম হয়ে আছে। মন বারবার একই প্রশ্নে করছে।একজন মানুষ কতটা নির্দ্বিধায় মিথ্যে বলতে পারে? চোখের সামনে এত মিথ্যা কথা গুছিয়ে বলে গেল। আজকে সে আর চুপ থাকতে পারবে না ? আজ ফিরুক… একে একে সব মিথ্যে বলা বের করে দেবে।
তার চোখে তীব্র ক্ষোভ, ঠোঁটে কাঁপা কাঁপা দৃঢ়তা
অসভ্য মানুষ তো ছিল কিন্তু আজ বুঝলাম, এর সঙ্গে মিথ্যে বাদী ও আছে, শুধু তিয়াশা এরকম আরও তিনজন রাগে গজরাচ্ছে । আজকে সব কটার কপালে দুঃখ আছে
চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে তখনও প্রাণবন্ত আড্ডা জমে আছে, তবে সেটি একান্তই কর্তাদের আসর। গিন্নীরা ব্যস্ত রাতের খাবারের আয়োজন নিয়ে। রান্নাঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে মাংসের মশলার মনমাতানো গন্ধ, পোলাওয়ের ঘি-র সুবাসের সঙ্গে মিশে আছে পায়েস আর পিঠে পুলির মিষ্টি ঘ্রাণ। আজকের এই আনন্দঘন মুহূর্তে কর্তাদের বিশেষ আবদার ঘরে যেন অবশ্যই পিঠেপুলি তৈরি হয়।
বাড়ির তিন গিন্নী ও আয়েশা বেগম, সঙ্গে গৃহকর্মী হাফিজার মা সবাই মিলে রান্নাঘরে হাত ব্যস্ত রেখেছেন। ওদিকে ড্রয়িং রুমে তিন কর্তা ও আশরাফ সাহেব ডুবে আছেন চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে গভীর আলোচনায়। আলোচনার বিষয় অনন্যার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ হলেই ইউভি আর অনন্যার পারিবারিক মিলনবন্ধনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হবে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামীকালই মোজাম্মেল সাহেবের সঙ্গে বসে আকাশ ও আরোহীর নতুন জীবনের পথচলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। তবে মতের কিছু পার্থক্যও আছে। আশরাফ সাহেব চান ছেলের বিয়ে যেন দ্রুতই হয়, কিন্তু আয়েশা বেগমের যুক্তি আকাশের এখনও এম.বি.বি.এস. শেষ হতে দুই বছর বাকি, তাই কিছুটা সময় নেওয়াই ভালো।
এইসবের মাঝেই হঠাৎ ইউভি বাসায় প্রবেশ করল,
ওকে দেখে মুহূর্তের জন্য যেন ঘরে নীরবতা নেমে এল সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে-মনে প্রশ্ন জেগে উঠল,
__”এখানে এখন ইউভি কী করছে?”
__”সবার তো কালকে আসার কথা ছিল তাহলে ইউভি একা কেন?”
ইউভিও স্পষ্ট বুঝতে পারছিল, দরজায় পা রাখা মাত্রই সে প্রশ্নের ঝড়ে পড়তে যাচ্ছে। অথচ আসার পথে এসব কিছুই মাথায় আসেনি সে তো কেবল তার হৃদয়পাখির মিষ্টি তলবের সাড়া দিয়ে ছুটে এসেছে।
এরই মাঝে রান্নাঘরের দিক থেকে মেহজাবীন বেগমের স্নিগ্ধ অথচ কৌতূহলভরা স্বর ভেসে এল,
__ “কিরে বাবা, তোদের তো কাল আসার কথা ছিল! তুই একা হঠাৎ? বাকিরা কোথায় তাহলে?”
ইউভির বুকের ভেতরটা কেমন যেন ধকধক করে উঠল। মাথায় তেমন কোনো গল্পও প্রস্তুত নেই। কী বলবে, কীভাবে বলবে এই দোটানায় দাঁড়িয়ে আছে।
প্রণয় সাহেব সোফায় হেলান দিয়ে একটু বিরক্ত সুরে বলে উঠলেন,
__ “আরেহ, কী রে? তোর বড় আম্মুর প্রশ্নের উত্তর দিবি না?”
ওদিকে দুপুরের মত তাহসান সাহেবের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন সরাসরি ইউভির চোখ ভেদ করে যাচ্ছিল করাতের মত ধারালো সে দৃষ্টি থেকে ইউভি চোখ সরিয়েই রাখল।
কিছুটা গলা খাঁকারি দিয়ে, মুখে বিব্রত হাসি নিয়ে সে বলল,
__ “আসলে কালকে অফিসে একটু জরুরি কাজ আছে, বড় আম্মু। তাই চলে এলাম আমি।”
কথাগুলো শেষ করে আর দাঁড়ায়নি। যেন যত দ্রুত সম্ভব এই প্রশ্নের বৃষ্টি থেকে বাঁচতে চাইল। সিঁড়ি বেয়ে তাড়াহুড়ো করে উপরের তলায় উঠে গেল।
প্রান্তিক সাহেব ওর পিঠের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
__ “আগামীকাল আবার অফিসে কী এমন জরুরি কাজ আছে, হুম?”
সন্দেহটা মুখে পুরোপুরি না ফুটালেও ভ্রু কুঁচকে রইলেন। মুহূর্তেই আবার তারা আগের আলোচনায় ফিরে গেলেন, তবে কৌতূহলটা পুরোপুরি মিলিয়ে গেল না।
ইউভি নিজের ঘরের দিকে না গিয়ে সোজা চলে গেল ছাদে। চারপাশে শুধু রাতের অন্ধকার, দূরের আলো ঝাপসা হয়ে আসছে। শহরের গুঞ্জন ধীরে ধীরে মিলিয়ে গিয়ে শুধু নিজের হৃদস্পন্দনের শব্দটা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। আজকের রাত তার জন্য অন্য রকম এমন রাতের জন্যই তো সে সবকিছু ফেলে এখানে চলে এসেছে।
প্রায় পনেরো কুড়ি মিনিট পরে জায়ন ও বাসায় প্রবেশ
করল কিন্তু সে এক মিনিট ও নিচে দাঁড়ায় নি, ড্রয়িং রুমে বসা সবাই তার দিকে তাকিয়ে হা করে তাঁকিয়ে রইল কিন্তু সে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা উপরে উঠে গেল। মেহজাবীন বেগম তো ডেকেই বসলেন কিন্তু পেছন না ঘুরে সে শুধু বলে গেল ,
__” মা প্লীজ আজকে আমায় ডিস্টার্ব করবে না।”
সবাই ভেবেই পারছে না হচ্ছে কি চলছে কি।
তিয়াশা নিজের রুমেই বসে আছে , হঠাৎ বাইরে
থেকে নক করল , আর চেনা কণ্ঠস্বর ভেশে এল,
__” জান তাড়াতাড়ি দরজা খোল , আর এক সেকেন্ড ও সহ্য হচ্ছে না ।”
তিয়াশার চোখে ধূর্ত ঝিলিক, দাঁতে দাঁত চিপে ধীম গলায় বলে উঠলো,
__” আমার ও তো এক সেকেন্ড সহ্য হচ্ছে না ।
আজকে যদি এই বাঘের বাচ্চা দৌড় না করাই, তাহলে
আমিও তিয়াশা রোদ চৌধূরী না।”
এই ভাবনার মাঝে আবারো ভেসে আসলো জায়ন এর কন্ঠস্বর,
__” জান এক মিনিট তেরো সেকেন্ড হয়ে গেল। খোল তাড়াতাড়ি ।”
____যেই স্বরে ছিল অস্থিরতা , গলায় নিখাদ ব্যাকুলতা, যেন এক তৃষ্ণার্ত পথিক মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে
তিয়াশা ঠোঁটের কোণে চতুর হাসি টেনে নিল। বিরক্তিটা গিলে ফেলল, মুখে এমন মিষ্টি অভিনয়ী হাসি আনল, যা দেখে শয়তানও ফাঁদে পা দেবে। ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল, যেন প্রতিটি পদক্ষেপে অপেক্ষার আগুন আরও বাড়ছে।দরজা খুলতেই জায়নকে দেখল চোখে কাঁচা কামনার তীব্রতা, শ্বাসপ্রশ্বাস অস্থির। তিয়াশা নাটকীয় মাথা সামান্য কাত করে মোলায়েম, সিডিউসিং কণ্ঠে বলল,
__” ওয়েলকাম ড্যাডি।”
এই ‘ড্যাডি’ শব্দটা এতদিন শুধু ফোন আর মেসেজে শুনে জায়ন অস্থির হয়ে উঠত। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে এক মায়াবতী রূপসী, যার চোখে আগুন আর ঠোঁটে বিষমাখা মধু। এক মুহূর্তও নষ্ট করতে চাইল না।দরজা থেকেই যেন হিংস্র শিকারীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল তিয়াশার উপর। তিয়াশা মুহূর্তেই বুঝে গেল এই কন্ট্রোল লেস লোক কে কোন পরিকল্পনা করা অসম্ভব।
জায়ন ভেতরে ঢুকেই পেছন দিয়ে দরজাটা লক করে দিল। এক হাত দিয়ে কোমর শক্ত করে জড়িয়ে নিল তিয়াশাকে, অন্য হাতে মাথার পেছনে টেনে নিয়ে গলায় মুখ গুঁজে দিল। তার গলায় উষ্ণ নিঃশ্বাসের ধাক্কা আর কণ্ঠে উন্মাদনার ফিসফিসানি
__” বেইব ইউ লুক সো গুড , ইউ মেক মি ক্রেজি
বেবী গার্ল ।”
তিয়াশার বুকের ভেতর ধকধক করছে, ঘাড়ের পেছন দিয়ে শিহরণ নেমে যাচ্ছে মেরুদণ্ড পর্যন্ত। এই ঘ্রাণ… এই স্পর্শ তাকে পাগল করে দিচ্ছে। কিন্তু না এখনই ভেঙে পড়লে হবে না।
অনেক কষ্টে শ্বাস সামলে, কণ্ঠ নরম রেখে বলল,
__”আগে শোনো তো… এরকম করো না।”
কিন্তু জায়ন যেন শুনছেই না। তার ঠোঁট তিয়াশার গলার নরম ত্বকে ভিজে ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে, কণ্ঠে গভীর, অনিয়ন্ত্রিত কামনার কম্পন,
__” নো, আই এম আউট অফ কন্ট্রোল জান ।”
তিয়াশা দাঁত চেপে মনে মনে গজরাল,
__” এইসব কন্ট্রোললেস ব্যাটার সঙ্গে প্ল্যান করা মানে রকেটের উপর বসে দাবা খেলার চেষ্টা।”
হঠাৎই সে চিমটি কাটল জায়নের বাহুতে ততক্ষণে তার গায়ের তাপ তিয়াশার হাতকেও পোড়াচ্ছে। কষ্ট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল, এবার চোখে দৃঢ়তা,
__”একদম চুপচাপ দাঁড়াবে। এত কিসের তাড়া? আমি কি পালিয়ে যাচ্ছি?”
জায়ন রোমান্সে বাধা পেয়ে ক্ষুব্ধ কিন্তু চোখে ম্লান বেদনা নিয়ে বলল,
__”আমাকে দেখে বুঝছিস না কিসের তাড়া? আয় না, বউ…”
শেষ কথায় অদ্ভুত এক টান, যেন তার বুকের ভিতরকার সব অস্থিরতা উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে।
তিয়াশা এবার হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, এক রহস্যময় হাসি দিয়ে তার হাত ধরে টেনে সোফায় বসিয়ে দিল। জায়ন হতবুদ্ধি তার ছোট্ট বউ ।
জায়ন বসে আছে সোফায়, তার চোখে দ্বিধা বুঝে উঠতে পারছে না, তার ছোট্ট বউ আসলে কী করছে।
তিয়াশা হঠাৎই দৃঢ় কণ্ঠে, কিন্তু ভেতরে মিষ্টি শাসনের সুর মিশিয়ে বলল,
“একদম চুপচাপ বসবে তুমি। আমার কথা মানতে এত কষ্ট হচ্ছে নাকি?”
জায়ন কিছু বলার আগেই তিয়াশা ঘুরে দাঁড়াল, যেন কিছু নিয়ে আসবে। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই জায়নের হাত এগিয়ে এল এক ঝটকায় তাকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে নিল।
তিয়াশার চোখ লালচে হয়ে উঠল, রাগ আর বিস্ময়ের মিশেলে বলল,
“একটু অপেক্ষা করতে তোমার এত অসুবিধা হয়? ধৈর্য বলে কিছু নেই তোমার?”
জায়ন এক গভীর নিশ্বাস নিল, তার হাত তিয়াশার কোমরে শক্ত হয়ে জড়িয়ে গেল, চুলের ভেতরে মুখ গুঁজে দিয়ে আস্তে, কাতর স্বরে ফিসফিস করল,
__”শুধু কষ্ট হচ্ছে না অনেক কিছু হচ্ছে ভেতরে, এমন কিছু যা ভাষায় বোঝানো যায় না।
__”তুমি যদি আমাকে এই দুই মিনিট না দাও, আমি কিন্তু আমি কিন্তু সব কিছুতেই পানি ঢেলে দেবো প্লিজ, ড্যাডি”
তিয়াশা মুখ পাউট করে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,
যা দেখে জায়নের ঠোঁটের কোণে এক শয়তানি হাসি ফুটল, কিন্তু সে বাধ্য ছেলের মতো হাত ছেড়ে দিল।
তিয়াশা কভার্ড খুলে একটা লম্বা সাটিন রিবন বের করল, পিছন দিয়ে এসে হঠাৎ জায়নের চোখে বেঁধে দিল।
জায়ন অবাক হয়ে হেসে উঠল,
“কী করছিস জান? নিজের কোনো ফ্যান্টাসি পূরণ করতে যাচ্ছিস নাকি?”
তিয়াশা এক অদ্ভুত উন্মাদনা মেশানো স্বরে বলল,
__”হ্যাঁ বর এবার তোমার সঙ্গে এমন কিছু করব যা তুমি কল্পনাও করোনি। আর তুমি কিন্তু আমায় থামাতে পারবে না।”
জায়নের হাসি এবার আরও গভীর হলো, মনে মনে ভাবল,
__”আচ্ছা, আমার বউ বুঝি রাত জেগে ডার্ক রোমান্স উপন্যাস পড়ে এইসব শিখে ফেলেছে। গুড, ইন্টারেস্টিং জান।”
তিয়াশা এবার আরেকটা রিবন নিয়ে জায়নের হাতদুটো মুঠো করে বেঁধে দিল।
জায়ন যেন আনন্দে ভেসে গেল, হাসিমুখে বলে উঠল,
__”বউ, এই প্রোসেস তো আমার করার কথা, তুই করছিস? বাট আই এম ইমপ্রেসড, জান। আজ তুই আমাকে শেষ করে দিস প্লিজ, জান।”
তিয়াশা ঠোঁটে বাকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
“তোমাকে এমন কিছু করব, যা তুমি নিজেও বুঝতে পারবে না বর।”
সে বেড সাইড টেবিল থেকে একটা কাচের গ্লাস হাতে নিল, যা এতক্ষন জায়ন এর নজরে পড়েনি ধীরে ধীরে এসে জায়নের কোলে বসল। জায়নের শরীর কেঁপে উঠল তার আচরণে,
তিয়াশা গ্লাস ঠোঁটের কাছে ধরে নরম অথচ ইঙ্গিতপূর্ণ কণ্ঠে বলল,
“এই জুসটা আগে খাও, জান।”
জায়ন একটু অবাক হয়ে মনে মনে আওড়ালোএই সময় আবার জ্যুস কেন আবার ? আর তর সইছে না তো । তাই একটু বলে উঠলো,
__” জান এই সময় জ্যুস কেন ? আর এটা জ্যুস না অন্য কিছু আমি তো দেখতেই পারছি না ।”
তিয়াশা নাটকীয় ভঙ্গিতে, সামান্য রাগের ইঙ্গিত দিয়ে বলল,
“তোমার আমার ওপর বিশ্বাস নেই? আমার ইচ্ছা হলো তোমাকে জুস খাওয়ানোর, তুমি খাবে না?”
জায়ন মনে মনে ভাবল এই মুহূর্তে বউ যদি রেগে যায়, তবে সত্যিই সব শেষ হয়ে যাবে।সে হেসে মাথা নাড়ল,
“জান, তুই যদি বিষও দিয়ে দিস, তবুও আমি খেয়ে নেব।”
সে গ্লাস ঠোঁটে নিল, এক চুমুক নামতেই গলা জ্বলে উঠল। চোখ বাঁধা অবস্থায়ই পানি গড়িয়ে পড়ল চোখ বেয়ে বুকের ভেতর শ্বাস আটকে গেল।তিয়াশা তখনই কোল থেকে উঠে গেল, মুখে মুহূর্তেই বদলে রুদ্রমুখী ধারণ করল।
জায়ন কষ্টে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৫৬
“পা… পানি… উফ… ঝাঁ… ঝাল… বউ… পানি…”
আর তখনই ওদিক থেকে তিয়াশার কণ্ঠ গর্জে উঠল,
__”মিথ্যেবাদী বদমাইশ যাও… রিসোর্টের সুইমিংপুল থেকে পানি গিলে আসো”
জায়ন বউ এর কথা শুনে পুরো থ থ….
