তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬২

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬২
নীল মণি

_” তোর শশুর শা* বলছি , তোর বউ এর বাপ ।”
ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসা সেই বিরক্তি যুক্ত গম্ভির কণ্ঠস্বর।এই কথাটা শোনার পর জায়নের বুক যেন মুহূর্তেই কেঁপে উঠল , আর ফোন দেখার ও দরকার পড়ল না কল টা কে করেছে ।হাত থেকে মোবাইল সরে মেঝেতে পড়ে গেল, আর জায়ন স্থির হয়ে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে রইল ।ঠোঁটে চেপে রাখা অস্বস্তি, আর বুকের ভেতর ধপধপ করা অদ্ভুত ভয়।
আর তিয়াশা জায়ন এর এই অবস্থা দেখে ভ্রু কুচকে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে মৃদু পায়ে এগিয়ে এসে ফোনটা তুলে নিল। পরক্ষণেই স্ক্রিনে চোখ পড়তেই বোঝা গেল,তার আব্বু কল করেছিলেন। এক মুহূর্তেই সে জেনে গেল জায়নের এই অস্বস্তির আসল কারণটা।
তিয়াশা জায়ন এর হতে ফোন টা দিয়ে ফিস ফিস করে বলল,

__” ঠিক হয়েছে , এবার শশুর কে সামলাও ।”
ওই মুহূর্তে জায়নের চোখ যেন আগুন ছড়িয়ে উঠল। সে বুঝে গেল, তার বউ তাকে ব্যঙ্গ করছে, খোঁচা মারছে, আর সেটাই যেন তাকে আরও অস্থির করে তুলল। ফোনটা আবার কানে নিয়ে সে কেমন আমতা আমতা করে বলল,
__”হ্যাঁ মেজ চাচু, বলো…”
ফোনের ওপাশ থেকে প্রণয় সাহেবের কণ্ঠ যেন বজ্রাঘাত করল,
__” শশুরবাবা বলা শেখ , নইলে মান সম্মানের তো
পুরো বদ হজম করে দিচ্ছিস। এবার আমার মেয়ে টাকে আমার কাছে নিয়ে আয় জন্মদিন এর দিন মেয়ে
টার মুখ টা পর্যন্ত এখনো দেখলাম না । অপদার্থ ।”
যে জায়ন কাউকে পাত্তা দেয় না, নিজের ইচ্ছেতেই চলেসে আজ স্তব্ধ, ভেঙে পড়া ছাত্রের মতো দাঁড়িয়ে আছে। শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না, বুক কাঁপছে, গলাটা শুকিয়ে আসচে একেই হয়ত বলে জামাই শ্বশুরের সম্পর্ক। শেষে কোনোমতে জড়ানো গলায় বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

__” জী জী শশুর বাবা , একটু পরে আসছি রাখলাম
বায় ।”
জবাবের অপেক্ষা করল না জায়ন সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিয়ে যেন অনেক বড় এক চাপা বোঝা নামল বুক থেকে। গভীর শ্বাস ফেলল, যেন প্রাণ ফিরে পেল।
কিন্তু এদিকে তিয়াশা সে আর থামতেই পারছিল না। হাসতে হাসতে গাল লাল হয়ে গেছে, চোখে পানি এসে গেছে। জায়ন দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সেই রাগে ভরা দৃষ্টি, সেই চাপা আগুন যেন তাকে পুরো গ্রাস করে ফেলবে।
বউ কে টাইট দেওয়ার জন্য হঠাৎই এক ঝটকায় সে এগিয়ে এল, ঠোঁটে বাকা হাসি নিয়ে, আর তিয়াশার শাড়ির খোলা কোমর জড়িয়ে ধরল। গায়ে তখনো শুধু কালো ট্রাঙ্কস, তবুও সেই পুরুষালি শক্তির বাঁধনে তিয়াশার বুক কেঁপে উঠল, জায়নের গলা ভেজা, ভারী,

__” সোনা আমাদের যেন কি বাকি ছিল , আসো কোর্স
টা পুরো করি ।”
তিয়াশার চোখ বড় বড় হয়ে উঠল, বুক কেঁপে গেল। ইস, কেন যে সে হাসতে গেল?এখন তো পুরো বিপদে পড়ল। কাঁপা গলায় ফিসফিস করে বলল,
__” লেট হয়ে যাচ্ছি আমরা ফ্রেশ হয়ে আসো।”
কিন্তু জায়ন কে সে থামাতে পারল না। ঠোঁটে শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে সে হঠাৎ তিয়াশার নরম উদরে আঙুল বুলিয়ে দিল, সুড়সুড়ি দিতে লাগল। সেই ছোঁয়াতেই তিয়াশার নিঃশ্বাস আটকে এলো, শরীরে শিহরণ বয়ে গেল। চোখ বুজে ফেলল সে, যেন অদ্ভুত এক ঘোরে ভেসে যাচ্ছে।
তারপর আরও কাছে ঝুঁকে এসে জায়ন তার কানে গরম নিঃশ্বাস ছাড়ল, গলা নামিয়ে কর্কশ অথচ নেশামাখা স্বরে বলল,

__”ঠিক বলেছিস জান দেরি হয়ে যাচ্ছে তাই আর কি……”
একটু থেমে আবারো বলে উঠলো,
__”তুই তো জানিস আমার ওই ওয়ান আওয়ার, টু আওয়ার এ পোষায় না। আমি যখন শুরু করি, তখন তোকে পুরোপুরি আস্বাদন না করা পর্যন্ত শান্তি পাই না। আই ওয়ান্ট টেস্ট এভরিথিং অ্যাবাউট ইউ, সো রিল্যাক্স বেবি,ওয়েট ফর নাইট।”
বলেই সে তিয়াশাকে একেবারে অবশ করে রেখে উপরে চলে গেল, ফ্রেশ হতে।
কিন্তু জায়নের সেই স্পর্শ, সেই গরম নিঃশ্বাস, সেই কণ্ঠস্বর সব যেন তিয়াশার ভেতর গভীর আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। শরীরের ভেতর এখনো গত রাতের ব্যথা রয়ে গেছে, তাই সকাল থেকেই সে রাগে ফুঁসছিল। কিন্তু এই মানুষটা কীভাবে যেন তার সব রাগ গলিয়ে দেয়, বুকের ভেতর নতুন ঝড় তোলে, এমন এক ঝড় যা তিয়াশাকে প্রতিবার ভাসিয়ে নিয়ে যায় নিজের অজান্তেই।

তিন বছর আগে যে কিশোরীর সাথে অভিমান করে আবারও বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিল জায়ন, আজ সেই কিশোরী হয়ে উঠেছে তার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য। বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে অগণিত স্বপ্ন দেখেছে সে এক হাতে পরিশ্রম, অন্য হাতে বুদ্ধিমত্তা নিয়ে গড়ে তুলেছে এক বিশাল সাম্রাজ্য। অসংখ্য নির্ঘুম রাত
এবং একাগ্রতা মিলে দাঁড় করিয়েছে *Ainsoft Sunlight Technology*একটা নাম, একটা প্রতীক, যা তার অস্তিত্বের মতোই শক্তিশালী।
আজ সেই স্বপ্নেরই আরেকটা অধ্যায় যোগ হলোনিজের মাটিতে, ঢাকায়।কিন্তু এই অফিসের উদ্বোধন, আলো ঝলমলে সাজসজ্জা কিংবা ব্যবসার সাফল্যের আনন্দ এসবের চেয়ে জায়নের চোখে আজ আরও বড় কিছু আছে, আজ যেহেতু তিয়াশার জন্মদিন। আর এই নতুন ব্রাঞ্চটাই সে ঠিক করেছে সেই কিশোরী কে উপহার দেবে।
জায়ন এর মার্সিডিজটা এসে দাঁড়াল এক বিশালবহুল ভবনের সামনে। চকচকে কাঁচে মোড়া বিল্ডিং, আর তার শীর্ষে ঝলমলে থ্রীডি লোগো,

__”Ainsoft Sunlight Technology”। জায়ন এর পাশে বসা তিয়াশার চোখে ভরা প্রশ্ন, এখানে তারা কী করছে? মহারানী এখন বাস্কেটের মধ্যে তিয়াশার কোলে চোঁখে মুখে প্রশ্ন তা জায়ন বুঝতে পেরেই একটু বাকা হাসি দিল , তিয়াশা নিজের কৌতুহল চাপিয়ে রাখতে না পেরে বলেই উঠল,
__” আমরা এইখানে কি করছি?”
জায়ন কোন জবাব না দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে অপর প্রান্তে এসে দরজা খুলে তিয়াশার হাত ধরে নামিয়ে নিল , তারপর সেই হাত শক্ত করে নিজের আঙুলে মুড়ে নিয়ে স্লাইডিং গেট পার করে প্রবেশ করল ভবনের ভেতর।
পকেট থেকে বের করল পাসওয়ার্ড কী, তারপর হঠাৎ পিছন থেকে তিয়াশার কাঁধে মুখ গুঁজে দিল এরপর তিয়াশার দুই হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে পাশওয়ার্ড কি টা তিয়াশার হাতে গুজে দিয়ে অনাবিল কোমলতা নিয়ে বলে উঠলো,

__”এগেইন হ্যাপি বার্থডে জান, শুধু ফুল জুয়েলারী মহারানী নয় ,আজ আমি আমার স্বপ্নের এক টুকরো
দিলাম আমার স্বপ্নের মালিক কে ।”
চোখ ভিজে উঠল অজান্তেই। মনে হলো বুকের গভীরে জমে থাকা আবেগগুলো যেন বাইরে বেরিয়ে আসছে। মাথার ভেতর নিঃশব্দে ভেসে এলো তার ভালোবাসা, গর্ব মেশানো একটি দীর্ঘশ্বাস,
__”ও আল্লাহ, তুমি কেমন মানুষ আমার জীবনে পাঠালে? এই মানুষটার ভালোবাসা থেকে শুরু করে সবকিছু কেন এত অস্বাভাবিক, এত অতিরিক্ত?কেন প্রতিটি কথায় অতিরিক্ত অস্বাভাবিক ভালোবাসার ছাপ লেগে থাকে? কেন সে প্রতিদিন আমাকে নতুন করে অবাক করে, কেন তার ভালোবাসার গভীরতা আমার সামলানো এত কঠিন হয়?”
তিয়াশা যখন সেই অদ্ভুত ভাবনার সাগরে ডুবে আছে, হঠাৎই জায়নের পরিচিত কণ্ঠস্বর কানে এসে বাজ,
__” কিটি গেট টা খোল জান তাড়াতাড়ি , বাসায় ফিরতে হবে না?”
শব্দটা তিয়াশাকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। সে ধীরে ঘুরে তাকাল, চোখের ভেতর তখনো ভিজে থাকা প্রশ্নের ছায়া। ঠোঁট কেঁপে উঠল, কিন্তু সে কেবল একটাই প্রশ্ন করতে পারল,

__” এখানে কেউ নেই কেন?”
জায়ন কিছুক্ষণ নিরব রইল। যেন বুকের ভেতর থেকে প্রতিটি শব্দ বের করার আগে তাকে গুছিয়ে নিতে হচ্ছে। তারপর এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ধীরে, গভীর স্বরে বলল,
__” আগামীকাল থেকে অফিস শুরু হবে , পরিবারের সবাই কে নিয়ে শুরু করবো । আজকের দিন টা শুধু মাত্র আমার জান এর জন্য ,কারণ তুই ই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমার স্বপ্নের প্রতিটি অধ্যায়ের শুরু আমি চাই তোর নাম দিয়ে হোক তোর উপস্থিতি দিয়ে হোক ।আগের বার তোকে পায়নি তবুও তোকেই খুঁজে নিয়ে ছিলাম।”
জায়ন এর এই স্বীকারোক্তি শুনে তিয়াশার বুকটা যেন আবার কেঁপে উঠল, মনে হলো পৃথিবীর সব শব্দ থেমে গেছে, শুধু জায়নের এই কথাগুলোই বাতাসে অনন্তকাল ধরে ভেসে থাকবে। মুহূর্তেই সে জায়নের হাত ছেড়ে দিয়ে ছুটে গেল গাড়ির সামনে,হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল জায়ন। বুকের ভেতর অচেনা ব্যথা খচখচ করতে লাগল ,তবুও সে তিয়াশার দিকে দ্রুত পা বাড়িয়ে বলল,

__” কি করছিস জান ? এরকম ছুটলী কেন ? আমার
ছোঁয়া কি তোর এত অপছন্দ? যে সবসময় পালাতে চাস? আমাকে এভাবে দূরে ঠেলে দিতে চাইছিস?”
কিন্তু তিয়াশা তখনো নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে কোম্পানির নামের দিকে তাকিয়ে। “Sunlight , sunlight” শব্দটা যেন তার বুকের ভেতর কেঁপে কেঁপে উঠছে। এ নামের ভেতর লুকিয়ে আছে তার অস্তিত্ব, তার পরিচয়। যে মানুষটাকে সে একদিন নিছক অভিমানী ভেবেছিল, সেই মানুষটা তার নাম দিয়ে নিজের স্বপ্নের সাম্রাজ্য শুরু করেছে তিন বছর আগে থেকে । চোখের পাতা ভিজে গেল অশ্রুতে, বুকের ভেতর হাহাকার নয়, বরং এক অদ্ভুত ভালোবাসার ভার জমে উঠল,

“এই মানুষটা আর কত চমক দেবে আমাকে? আর কতবার তার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে? সব ভালোবাসা কি সত্যিই এতটা অসাধারণ হয়?”
মুহূর্তের মধ্যেই তিয়াশা ফিরে তাকালো জায়নের দিকে, তার বুক দুলে উঠছিল এক অব্যক্ত আবেগে। শক্ত করে ধরল জায়নের হাত, তারপর ছুটে গিয়ে সে পাসওয়ার্ড কী টিপে মেইন দরজা খুলে আবার বন্ধ করল। ঠিক সেই মুহূর্তেই মাথা উঁচু করে দুই হাত দিয়ে জায়নের মুখ নামিয়ে তার ঠোঁ*টে নিজের ঠোঁ*ট বসিয়ে দিল।
এই হঠাৎ পদক্ষেপে জায়ন মুহূর্তেই চমকে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই সেই চু*ম্বনের গভীরতা, সেই বেপরোয়া আবেগ তাকে পাগল করে তুলল। সে এমনিতেই নিজেকে সামলাতে পারেনা এই মায়াবী রমনীর সামনে
সেখানে বউ নিজেই যখন নিজেকে নিঃশর্তভাবে সঁপে দিচ্ছে তার হাতে, তখন নিজের ভেতরের আগুনটা সে আর কীভাবে সামলাবে? নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠছে, সারা শরীর কাঁপছে, বুকের ভেতরকার ঝড় যেন বাইরে ফেটে পড়ছে। অন্যদিকে তিয়াশাও ডুবে যাচ্ছে তাদের সেই উন্মাদনায়, এক অনন্ত চুম্বনের গভীরে।
জায়নের হাত তিয়াশার শাড়ি পরা কো*মর ঘিরে ধরল আরও শক্ত করে। সেই উন্মুক্ত কো*মরে আঙুল ছুঁয়ে যেন নিজের সম্পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করল সে। কয়েক মুহূর্ত পর তিয়াশা শ্বাস নিল ভারী কণ্ঠে, ঠোঁট সামান্য সরিয়ে কোমল, নেশামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

__” তুমি যে ভাবেই আমায় স্পর্শ করো না কেন ? সেই স্পর্শ তে আমি পুড়তে চাই , তোমার সব ছোঁয়ার শেষ পরিণাম আমিই থাকতে চাই , তোমার সব স্পর্শ যেন আমার শরীরে শুধুমাত্র তোমার নাম লিখে রেখে যায় । সেই ছোঁয়া যদি ভিন্ন ও হয় তবুও আমি আমার সারা জীবনে তোমার ছোঁয়াই পেতে চাই বর। কারন #তোমার_ছোঁয়ায়_আসক্ত_আমি , তুমি আমার একমাত্র প্রণয় যেই প্রণয়ের ভেলায় আমি সারাটা জীবন ভাসতে চাই।”
প্রতিটি শব্দ জায়নের বুকে বজ্রাঘাতের মতো আঘাত করল। তার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরা তিয়াশার কথায় আগুনের মতো দাউদাউ করে জ্বলে উঠছে। সে আর থামতে পারল না। উত্তেজনায় ফিসফিস করে বলে উঠল,

__”জান তুই কি তোর এই ওয়ার্ড দিয়ে আমাকে মারতে চাস? তুই জানিস না তুই আমার কাছে কি? তোর এইসব কথা গুলো কি পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।”
তিয়াশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই জায়ন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আবারও এক ঝড়ের মতো তিয়াশার ঠোঁ*টে নিজের ঠোঁ*ট বসিয়ে দিল। অপ্রস্তুত হলেও তিয়াশা মুহূর্তেই ভেসে গেল সেই আকস্মিক ছোঁয়ায় নিজেকে বিলিয়ে দিল নিঃশর্তভাবে।

চুম্বনের সেই আগুন এক মুহূর্তের জন্যও স্থির রইল না, এগিয়ে গেল একে অপরকে লিফটের দিকে, ভেতরে গিয়ে লিফ্টের দরজা বন্ধ হতেই তাদের ঠোঁ*টের লড়াই আরও গভীর, আরও তীব্র ,তিয়াশার নিঃশ্বাস কেঁপে উঠছে, আঙুল কাঁপতে কাঁপতে জায়নের শার্টের বোতাম খু*লে দিল , জায়ন তা বুঝতেই হাঁটু গেড়ে বসে ঠোঁ*ট ছুয়ে দিল তিয়াশার উন্মুক্ত উদরে , তিয়াশা নিজেকে সামলাতে না পেরে চোখ বন্ধ করে খামচে ধরলো জায়ন এর চুল ।তাদের দুজনের ভারী শ্বাসের উষ্ণতা লিফ্টের চার দেয়াল ছুঁয়ে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। যেন এক অদৃশ্য টর্নেডো ঘুরছে ভেতরে প্রলোভনের, আকাঙ্ক্ষার, অসহ্য উ*ত্তেজনার।

জায়নের হাতের ঝড় থামছে না।,শাড়ির আঁচল এক ঝটকায় স*রিযে দিল , আর তার আঙুল গলে যেতে লাগল তিয়াশার শরী*রে। সে তিয়াশাকে পেছন ঘুরিয়ে নিয়ে ব্লা*উজের হু*কের দিকে হাত বাড়াল। তিয়াশার পিঠ উ*ন্মুক্ত হতেই জায়ন এর আঙুল পিঠ স্পর্শ করল তিয়াশার শ্বাস আরও তীব্র হয়ে উঠল ,জায়ন এর ঠোঁ*ট ভিজিয়ে দিতে লাগল তিয়াশার উন্মুক্ত পিঠ। ঠিক তখনই লিফ্ট এসে থামল তৃতীয় তলায় জায়ন এর অফিস রুমের সামনে ।
এক মুহূর্ত দেরি না করে জায়ন তিয়াশাকে নিজের কোলে তুলে নিল, যেন পৃথিবীর সব শক্তি তার ভেতরে জমা হয়েছে, ভারী নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে চোখে চোখ রেখে লিফ্ট থেকে বেরিয়ে গেল, সোজা অফিস রুমে।
দরজা বন্ধ হতেই সে তিয়াশাকে শুইয়ে দিল টেবিলের উপর। তিয়াশার চোখে ছিল মাতাল ঘোর, ঠোঁট চাপা আর হাতের চুরির শব্দ। সেই শব্দ যেন জায়নের ভেতরের আগুনে তেল ঢেলে দিচ্ছে , নিজের শার্ট ছুঁড়ে ফেলে দিল , সঙ্গে ছুঁড়ে দিল তিয়াশার কাপর,ঝাঁপিয়ে পড়ল সে।তিয়াশা জায়ন এর গলা জড়িয়ে কাঁপা কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল,

__”প্লিজ কষ্ট দেবে না।”
জায়ন তিয়াশার হাত দুটো ছাড়িয়ে নিজের এক হাতের মধ্যে তিয়াশার দুই হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে তার মাথার উপর চেপে রাখল। চোখে ছিল এক উন্মাদনা, এক অপ্রতিরোধ্য আকাঙ্ক্ষা,পাগলের মতো গলায় মুখ ডুবিয়ে ফিসফিস করে বলল,
__”আই ডোন্ট নো, বেইব… বাট আই উইল ট্রাই।”
তারপর আর কিছুই থামল না।শ্বাসের ভারে, স্পর্শের ঝড়ে, আর দুজনের শরীরের গভীরতম প্রলোভনে ভরে উঠল সেই রুম। প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি নিঃশ্বাস, প্রতিটি গোঙানি সাক্ষী রইল তাদের ভালোবাসার সেই উন্মাদ পরিণতির সবচেয়ে তাদের এই গভীর ভালোবাসার স্মৃতির অমর সাক্ষ্য আজ থেকে অফিস রুম ও ।

সকাল গড়িয়ে দুপুরের আলো অনেক আগেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ চৌধুরী বাসার ডাইনিং টেবিলে তখনও খালি প্লেট সাজানো, রান্নাঘর ভরপুর সুগন্ধে মুখরিত পোলাও, রোস্ট, ডিম কারি , ইলিশ পাতুরি , পায়েশ , চিংড়ি ভর্তার সঙ্গে আরো অনেক রকমের ভর্তা , কোরমা, গোস্ত ,শাহী ফিরনি, কেক সবই সাজানো মেজো মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে। বেলুনে আর ফুলে ভরে উঠেছে পুরো ড্রয়িংরুম, দেয়ালে ঝুলছে রঙিন ফেস্টুন,সবাই একসঙ্গে অপেক্ষা করছে শুধু একটা হাসির জন্য, একটা আগমনের জন্য।

কিন্তু সেই দুজনের জায়ন আর তিয়াশার কোনো খবর নেই।ফোনে ফোনে দেওয়া হচ্ছে বারবার, রিং বাজছে, কিন্তু ওপাশে নীরবতা।অপেক্ষার ভারে সময় যেন দাঁড়িয়ে আছে।আজ প্রান্তিক সাহেব এর সঙ্গে প্রণয় সাহেব ও গজগজ করছেন, মুখে অস্থিরতা আর বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট, বাসার গিন্নীরা পর্যন্ত হয়রান হয়ে আছে , মেহজাবীন বেগম রুহেনা বেগম , সুরাইয়া বেগম এর মুখের ছাপ স্পষ্ট ।
আকাশ ও আরোহী কে নিয়ে অনেক্ষন আগে পৌঁছে গেছে।কিন্তু যাদের আসার কথা আগে তাদেরই কোন খবর নেই ।
আর সহ্য হলো না প্রান্তিক সাহেব হঠাৎ করেই ধমক দিয়ে উঠলেন ইউভি আর আকাশকে,

__”” আরেকবার কল দেও তোমাদের ওই বেআক্কেলে বড় ভাইকে।ও কি ভেবেছে? নিজের ইচ্ছে মতো সব করবে, আমরা মানুষ না নাকি? আমরা কি এই বাড়ির দেয়ালে টাঙানো ছবি নাকি যেন থাকার পরও থাকার কোনো মানেই নেই?””
তার গম্ভীর গলায় ঘর যেন কেঁপে উঠল। ইউভি আর আকাশ দুজনেই একেবারে থ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, ভয়ে বুক ধুকপুক করছে।
আরোহী আর অনন্যা আবার ভিন্ন মুডে ,তারা মুখ চেপে হাসি চাপছে। জানে, জায়ন ভাই কেন দেরি করছে?
এদিকে প্রণয় সাহেবও নিজের রাগ চেপে রাখতে পারলেন না। গম্ভীর মুখে দাঁত চেপে বিড়বিড় করতে লাগলেন,

__”শুধু কি বে আক্কেল বললেই চলবে? দিন দিন তো বেহায়াপনার সব সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে! আল্লাহ জানেন আমার মেয়ে এখন কোথায়, কী অবস্থায় আছে।”
ঘরে অস্থিরতার এক ভারী আবহ জমে উঠল।
একদিকে রাগ, অন্যদিকে অপেক্ষা, আর ভেতরে লুকানো অদৃশ্য ভালোবাসা সব মিলে সেই দুপুরটা যেন এক অদ্ভুত ঝড়ো সময়ে আটকে গেল।
প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর অবশেষে সদর দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল জায়ন আর তিয়াশা। দুজনের হাত শক্ত করে জড়ানো, আর তাদের সঙ্গে নতুন অতিথি

__”মহারানী”। ছোট্ট বাস্কেট থেকে মাথা উঁচিয়ে টিপ টিপ চোখে চারদিকে তাকাচ্ছে সে।
তিয়াশার মুখে ক্লান্তির ছাপ, চোখে মুখে মিশ্রিত লজ্জা আর সংকোচ।, অথচ জায়নের ঠোঁটে তখনও সেই বাঁকা মুচকি হাসি, বারবার তিয়াশার দিকে তাকিয়ে যেন অদ্ভুত আনন্দ খুঁজে নিচ্ছে।
কিন্তু ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই তারা বুঝে গেল, সময়মতো না আসার জন্য গোটা ঘর জুড়ে জমে আছে রাগ আর বিরক্তির ভারী আবহাওয়া। চারপাশে নিস্তব্ধতা, সবার মুখ গম্ভীর।
তিয়াশা এক মুহূর্তেই আঁচ করতে পারল বিপদ, ফিসফিস করে জায়নকে বলল,
__”বলেছিলাম না, তাড়াতাড়ি আসতে? এবার কি হবে?”
জায়ন ঠোঁট কামড়ে দুষ্টুমি ভরা গলায় উত্তর দিল,

__”আমার কি দোষ।নিজেই তো আমায় পাগল করলি,আমি তো আগেই বলেছি, আমার সময় লাগে।”
তিয়াশার গাল টকটকে লাল হয়ে গেল, সে লজ্জায় মুখ ঘুরিয়ে নিল, সত্যি এই লোকটার মুখে কিছু আটকায় না।
ঠিক তখনই বাসার সবার দৃষ্টি পড়ল বাস্কেটের দিকে।
মহারানী তার টিপটিপ চোখ মেলে তাকাতেই অনন্যা, আরোহী আর মারিয়া হঠাৎ ঝাঁপিয়ে এসে তিয়াশার হাত থেকে বাস্কেটটা নিয়ে ফেলল। তারা তিনজনেই একসঙ্গে উচ্ছ্বাসে বলে উঠল,
__”ওয়াও, কি কিউট”
ঘরের পরিবেশ মুহূর্তের জন্য হালকা হয়ে উঠলেও, প্রান্তিক সাহেব মুখ গম্ভীর করে গজগজ করতে লাগলেন। মনে মনে বিরক্তি জমে উঠল তাঁর গলায়—

__”কোথায় নাতি নাতনি নাচানাচি করব সেখানে কুকুরের বাচ্চা নিয়ে নাচানাচি,এ আবার কেমন উদ্ভট ব্যাপার?”
এদিকে জায়ন প্রণয় সাহেব এর দিকে তাকাতে পারছে
না সকালের লজ্জায় , জায়ন এর কিছু যায় আসে না কিন্তু শশুর বলে কথা । একটু লজ্জা না দেখালে হয়।
প্রণয় সাহেব গম্ভির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জায়ন এর দিকে কিন্তু জায়ন যেন সেই দৃষ্টি এড়াতে চাইছে।
প্রান্তিক সাহেব নিজের বিরক্তি আর চেপে রাখতে পারলেন না। ভারী গলায় জায়নের দিকে তাকিয়ে কঠোর স্বরে বলে উঠলেন,

__”আমরা কি মানুষ না? না তুমি আমাদের মানুষই ভাবো না? সময় নিয়ে কোনো জ্ঞান বোধ আছে তোমার? আজ মেজো আম্মুর বিশেষ দিন, সবাই অপেক্ষা করছে, তুমি ভেবেছো কি এসবের কথা ? হাতির পাঁচ পা দেখেছো নাকি? শোনো, এ বাড়িতে এসব চলবে না, এই আমি বলে দিলাম।”
ঘরটা আবার ভারী হয়ে গেল।
প্রান্তিক সাহেব এর খোঁচা মারা কথা।কথাগুলো শুনে জায়ন এবার আর চুপ করে থাকতে পারল না এবার এক দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, চোখেমুখে বিরক্তি আর অভিমান মিশে আছে,

__”বাবা, আমার বউয়ের বিশেষ দিনে আমারও কিছু করণীয় থাকতে পারে। এত বছর তোমরা অনেক সময় পেয়েছো, আমি পাইনি। তাই আমি আজ সময় নিয়েছি। ভালো না লাগলে বলো, আমি আমার বউ নিয়ে এখুনি চলে যাচ্ছি। আমার বেশি কথা শোনার অভ্যাস নেই।”
এক নিমিষে পুরো ঘর জমে গেল। নিস্তব্ধতায় যেন কারও শ্বাসের শব্দও শোনা যাচ্ছিল।
তিয়াশা ভয়ে কুঁকড়ে গেল, বুকের ভেতর ধকধকানি যেন কান ফাটানো আওয়াজ তুলছিল। চোখ বন্ধ করে ধীর গলায় ফিসফিস করে স্বামীর কানে বলল,

__কোনো ঝামেলা করবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি ,এক্ষুনি চুপ করবে।”
ঠিক তখনই তাহসান সাহেব সুযোগ বুঝে আগুনে ঘি ঢালার মতো মন্তব্য ছুঁড়ে দিলেন,
__”দেখো বড়ভাই, দেখো,কেমন তোমার মুখের ওপরই মুখে মুখে কথা বলছে।”
তার কথায় ঘরে আবারো শোরগোল উঠল।নাজিম রায়ান ইউভি আর আকাশ এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেল, তারপর মুচকি হেসে ইউভি তিন জনের কানে কানে ফিসফিস করে বলল
__”দেখছিস? কেমন আমার শ্বশুর বড় আব্বুর কান ভাঙাচ্ছে।”
ঠিক তখনই জায়নের ঠোঁটে ফুটে উঠল সেই চেনা বাকা হাসি। তার চোখে ভয় নেই, আছে একরাশ দাপট আর দৃঢ়তা। দৃঢ় গলায় বলল সে,

__”হ্যাঁ ছোট চাচু, আমি মুখে মুখে কথা বলি, কী করবো? বউকে অনেক ভালোবাসি তো, তাই একটু বেশিই মুখ চলে।”
মুহূর্তেই সবার চোখ জায়নের দিকে ঘুরে গেল। চারদিক নিস্তব্ধ, যেন সময় থেমে গেছে। সবার চোখে মুখে একটাই প্রশ্ন এই ছেলে কি আর সুধরবে না কোন দিন?
হঠাৎ জায়ন থেমে এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলল
__”চাচু, কাল সন্ধ্যায় তোমায় বনানীর এক রেস্টুরেন্টে দেখলাম। তোমাদের বন্ধুদের তো আমি চিনি, কিন্তু ওই দুই মহিলাকে আগে কখনও দেখিনী….”
শব্দগুলো যেন বাজের মতো আঘাত করল ঘরে।
এক নিমেষে তাহসান সাহেবের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ঠোঁট কাঁপতে লাগল, বুকের ভেতর শ্বাস আটকে এলো। ঘরে নেমে এলো গুমোট নীরবতা।
আর তখনই সুরাইয়া বেগমের চোখ দুটো অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠল। তাঁর দৃষ্টি ছুটে গিয়ে গিয়ে আছড়ে পড়ল স্বামীর মুখে। সেই দৃষ্টিতে এমন আগুন, যা মুহূর্তেই ভস্ম করে দিতে পারে একজন মানুষকে। ঘরে থাকা সবাই বুঝে গেল এবার আর রক্ষা নেই।
তাহসান সাহেব মনে মনে কাঁপতে কাঁপতে বিড়বিড় করে উঠলেন,

_”হায় আল্লাহ, আজ তো আমি জবাই হয়ে যাব, কেন যে ওই বদমাশ ছেলের জন্য মুখ খুলতে গেলাম।”
অন্যদিকে ইউভি নাজিম রায়ান আর আকাশ আর নিজেদের সামলাতে পারল না। হেসে একে অপরের দিকে তাকাল। আকাশ মুখ বুজে ধীর গলায় ইউভিকে বলল,
__”দেখলে তো ইউভি ভাই ?তোমার শশুর মৌচাকে ঢিল মেরে কী কাণ্ড ঘটাল, আজ শেষ।”
বাকা হাসি দিয়ে রায়ান বলে উঠলো,
__” ঢিল ছুড়লে কামড় তো খেতেই হবে আব্বু কে । ”
ঘরের আবহাওয়া একসঙ্গে রঙ বদলাতে লাগল।
রাগে ভারী, হাসিতে হালকা, অস্বস্তিতে চেপে ধরা, আর রহস্যে টানটান।
তিয়াশা জায়নের শার্ট টেনে নিয়ে ধীরে, কাঁপা কণ্ঠে বলল,

__”এই বদমাইসি টা কেন করলে? ছোট আম্মুর দিকে তাকাও, মনে হচ্ছে এক্ষুনি চাচুর জবাই করবে।”
জায়নের চোখে তখনো খেলা করছে একরাশ দুষ্টুমি। ঠোঁটে সেই চেনা বাকা হাসি রেখে সে উত্তর দিল,
__”আমার পেছনে লাগতে আসলে এরকমই হবে। তুই চুপ থাক, কারো কথা ভাবতে হবে না এত। শুধু আমার আর ‘মহারানীর’ কথা ভাববি , আর ভবিষ্যতে আমাদের ব্লাড লাইনের কথা। বাকিদের তো সবাই আছে ভাবার।”
তিয়াশার গাল লাল হয়ে উঠল লজ্জায় আর রাগে, কিন্তু মুখে কোনো উত্তর দিতে পারল না।
পরিস্থিতি ঠিক করতে, টানটান আবহ ভাঙতে হঠাৎ মেহজাবীন বেগম এগিয়ে এলেন। মাতৃত্বভরা হাসি দিয়ে চেষ্টা করলেন পরিস্থিতি সামলাতে।তিয়াশার হাত ধরে কোমল গলায় বললেন,

__”যা আম্মু, রেডি হয়ে আয়। নিজের ঘরে যা দেখ, তোর বড় আব্বু ,মানে তোর শশুর আব্বু নিজে হাতে তার বৌমার জন্য বাছাই করে শাড়ি এনেছে।”
তিয়াশা ধীর পায়ে উপরে যেতে লাগলো, ঠিক সেই মুহূর্তে জায়নের কপালে রাগের ভাঁজ জমে উঠল। ভ্রু কুঁচকে সে একেবারে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো
__”কেন মা? আমার বউয়ের জন্য বাবা কেন শাড়ি কিনবে ? আমার বউয়ের শাড়ি আমি কিনবো, আমি দিবো। আমার জিনিস আমি ছাড়া আর কেউ কেন কিনবে?”
এই অপ্রত্যাশিত কথায় ঘরের সবাই যেন হাঁ হয়ে গেল,
এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো সময় থেমে গেছে।
প্রণয় সাহেব লজ্জায় মাথা নিচু করলেন, রুহেনা বেগম তার ছোট জামাই এর কাণ্ড দেখে হাসবে না মাথায় হাত দেবে বুঝে উঠতে পারছে না , সুরাইয়া বেগম এখনো তাহসান সাহেব এর দিকে এক রুদ্রমুখী দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে , যা তাহসান সাহেব কে ভয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছে ।
মেহজাবীন বেগম তাকিয়ে রইলেন রাগ আর বিরক্তিতে। আবার অনন্যা, আরোহী, বৃষ্টি, মারিয়া তারা মুখ টিপে হেসে ফেলল, যেন এই দৃশ্য তাদের কাছে অদ্ভুত মজার লাগছে।
কিন্তু প্রান্তিক সাহেব আর চুপ থাকতে পারলেন না,
তার মুখ রাগে লাল হয়ে উঠল, শিরা উপশিরা ফুলে উঠেছে। কপাল চাপড়ে বিরক্তির সুরে গজগজ করে উঠলেন,

__”মেহজাবীন তোমার অপদার্থ ছেলে কে মুখটা বন্ধ করে রাখতে বলো। আমার বউমাকে আমি কী দেব, সেটা ওকে বলতে হবে? কি আজেবাজে কথা এগুলো।”
জায়ন কিছু বলার জন্য ঠোঁট খুললো, কিন্তু তার আগেই তিয়াশা হাত নেড়ে চোখের ইশারায় তাকে থামিয়ে দিল। চোখেমুখে স্পষ্ট বার্তা,
__” একদম চুপ”
বউ এর কথা শুনে আর কিছু বলল না ।
তিয়াশা ধীর পায়ে উপরে যেতে লাগল , পেছন পেছন
জায়ন ও একটু মুচকি হাসি দিয়ে উপরে যেতে লাগল,
ঠিক তখনই প্রণয় সাহেব হঠাৎ গলা চড়িয়ে বলে উঠলেন,

__” তুমিও কি শাড়ি পড়বে নাকি যে পেছন পেছন
যাচ্ছ , এদিকে এসে বোসো ।”
শব্দগুলো শুনে জায়ন একেবারে থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
চোখেমুখে স্পষ্ট বিরক্তি ফুটে উঠল, কিন্তু শশুরকে জবাব দেওয়া যাবে না।শুধু দাঁত চেপে নিঃশব্দে সবার দিকে তাকাল।
প্রণয় সাহেবের খোঁচা শুনে চারপাশের পরিবেশ হঠাৎ হালকা হয়ে গেল।অনন্যা, আরোহী, বৃষ্টি আর মারিয়া এদের হাসি আর আজকে থামবে না ।
নাজিম তো জোরে হেসেই ফেলল, কিন্তু জায়নের তীক্ষ্ণ কটমট দৃষ্টি পড়তেই তার গলা শুকিয়ে গেল। অমনি মুখ নিচু করে নিরবে বসে রইল, যেন হাসিটাই অপরাধ হয়ে গেছে।
এবার প্রণয় সাহেব আবার বললেন চার মেয়েকে উদ্দেশ্য করে,

__”তোমরাও যাও আম্মু, তোমরাও তৈরি হয়ে এসো।”
শব্দগুলো এতটাই দৃঢ় অথচ কোমল ছিল যে, মেয়েরা কিছু না বলে মাথা নেড়ে উপরের দিকে উঠে গেল।
কিন্তু তাদের পেছন পেছন রায়ান, আকাশ, নাজিম আর ইউভিও নীরবে যেতে লাগল।
ঠিক তখনই হঠাৎ বজ্রপাতের মতো প্রান্তিক সাহেবের গম্ভীর কণ্ঠস্বর আছড়ে পড়ল,
__”তোমরা কোথায় যাচ্ছ?”
চারজন একই সাথে থমকে গেল, যেন মাটিতে পেরেক গেঁথে দেওয়া হয়েছে। তাদের চোখেমুখে দ্বিধা, ভয় আর বিভ্রান্তি একসাথে জড়ো হয়ে গেল।
আকাশ গিলে গিলে কথা খুঁজে বের করে বলল,
__”বড় বড় মামু, রেডি হতে যাই”
কথার মাঝেই তার কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে গেল, যেন নিজেই নিজের অজুহাত বিশ্বাস করতে পারছে না।
প্রান্তিক সাহেব তখন আর কিছু বললেন না, কিন্তু প্রণয় সাহেবের কঠিন দৃষ্টি তাদের বুক কাঁপিয়ে দিল।
তিনি ধীরে ধীরে কিন্তু কড়া গলায় বলে উঠলেন,

__”তোমাদের উদ্দেশ্যে কি তৈরি হওয়ার কথা বলেছি? এদিকে এসে সবাই বসো।”
তাহসান সাহেব এর কণ্ঠস্বর পেতেই ইউভি মনে মনে ভাবছে আজ তার আব্বু কি তার শ্বশুরের মুখ দেখে ছিল , যে এরকম দজ্জাল শশুড় শশুর ব্যবহার করছে।
শব্দগুলো কানে গিয়েই যেন হাতকড়া হয়ে গেল।
কোনো প্রতিবাদ করার সাহস হলো না কারও।
এক এক করে সবাই এসে সোফায় বসল।এমনকি একসময় যে জায়ন পেছন পেছন উঠে যেতে চাইছিল, সেই জায়নও মাথা নিচু করে গিয়ে সবার সাথে বসে পড়ল।
ঘরের ভেতরে হঠাৎ চাপা এক নিস্তব্ধতা নেমে এলো।
কেউ কথা বলছে না, শুধু দৃষ্টি আর শ্বাসের শব্দ ভেসে আসছে।
ঠিক সেই সময়, সবার অজান্তে তাহসান সাহেব ধীরে ধীরে সুরাইয়া বেগমের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন।
কণ্ঠস্বর প্রায় ফিসফিস, ভাঙা গলায় বললেন,

__”রায়ানের আম্মু, আসলে…….”
কিন্তু কথার শেষটুকু গিলে ফেলতে হলো তাকে,
কারণ সুরাইয়া বেগম দাঁতে দাঁত চেপে, চোখেমুখে আগুন নিয়ে হঠাৎ নিচু স্বরে ঝড়ের মতো বলে উঠলেন,
__”একবার ঘরে চলেন। বন্ধু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তাই না? আজ আপনাকে পাঠাবো হাসপাতালে।”
এই কথাগুলো শুনেই তাহসান সাহেবের বুক শুকিয়ে গেল, গলা যেন একেবারে আটকে গেল।শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল ঘরের মাঝখানেই তিনি ভেঙে পড়বেন।
এদিকে প্রান্তিক সাহেব আবারো কথা বললেন, এবার জায়নের দিকে তাকিয়ে,

__”নতুন কোম্পানি তো কালকে থেকে শুরু করবে। সেদিকে একটু বেশি করে ধ্যান দাও। আর কোনো কিছু লাগলে বলবে।”
জায়ন এতক্ষণ পর্যন্ত মাথা নিচু করে বসেছিল।মনে হচ্ছিল, চারপাশের সব দৃষ্টি, সব কথা, সব চাপ একসাথে তার গায়ে আছড়ে পড়ছে। কথা বলার জন্য যখন মাথা তুলে বাবার দিকে তাকালো, তখন প্রান্তিক সাহেব যেন নিজের ছেলের দিকে একবার তাকাতেই তাকাতেই অবাক হয়ে গেল না পেরে অপ্রস্তুত হয়ে লজ্জায় একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।লজ্জায় যেন তার চোখ জ্বলে উঠছিল।
আর প্রণয় সাহেব তো গলা খাঁকারি দিয়ে সেখান থেকে লজ্জায় চলেই গেলেন, একেবারেই যেন দম বন্ধ হয়ে আসছিল তার।
জায়ন বুঝতে পারছে না তার বাবা , চাচা এরকম কেন করছে ? ভ্রু কুচকে কোন কিছু না ভেবেই বলে উঠলো,

__” আসলে বাবা আমি একাই সব সামলে নিয়েছি, আগেও নিয়েছি তোমারা শুধু কাল উপস্তিত থেকো।”
এরমধ্যেই জায়ন লক্ষ করল নাজিম হা করে জায়নের দিকে তাকিয়ে আছে।আকাশ আর ইউভি মিটমিট করে হাসছে, কিন্তু সেই হাসিতেও স্পষ্ট মজা নেওয়ার ছাপ।
রায়ান তো মাথায় হাত দিয়ে অস্থিরভাবে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কি করে বড় ভাইকে এখান থেকে উঠাবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
জায়নের বুকের ভেতর তখন ভয়ানক অস্বস্তি জমে উঠছে।চারপাশে এই সব দৃষ্টি, এত চাপা হাসি, এত ভর্ৎসনা, এত অস্বস্তি সব মিলে যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।শ্বাস নিতেই কষ্ট হচ্ছে, বুকের ভেতর ঝড় বইছে।
ঠিক তখনই প্রান্তিক সাহেবের শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠস্বর ছুরির মতো নিস্তব্ধতাকে কেটে দিল,

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬১

__”আমার মনে হয় তোমার এখন ফ্রেশ হয়ে আসার দরকার। ফ্রেশ হয়ে এসে কথা বললে ভালো হবে।”
বাবার কথা শুনে এবার জায়ন ও হা হয়ে গেল।
ড্রয়িং রুমে তখনও নিস্তব্ধতা,রাগ, হাসি, বিরক্তি, লজ্জা সব মিলিয়ে ঘরটা যেন এক বিশাল নাট্যমঞ্চে পরিণত হয়েছে।
জায়ন গট গট করে উপরে চলে গেলো ,চোঁখ মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ,নিজের রুমের দড়জা খুলে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শার্ট খুলতে যাবে তখন নিজের গলার দিকে আর শার্ট এর কলার এর দিকে নজর পড়তেই মাথায় হাত চলে গেলো, আর মুখ থেকে বেরোলো একটাই বাক্য ,
__” ওহ শিট , বা* বা* বা একটা বা* আমি*”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৬৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here