তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৪ (২)

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৪ (২)
নীল মণ

রাতের ঝড় পেরিয়ে ভোরের আলো আস্তে আস্তে ছুঁয়ে দিচ্ছে মালদ্বীপের নীল সমুদ্র। কাঁচের জানালা ভেদ করে ঢেউয়ের মিষ্টি শব্দ ঘর জুড়ে বাজছে, আর সেই শব্দে দু’টো ক্লান্ত শরীরের ঘুম ভাঙছে আস্তে আস্তে।
আরোহী হালকা নড়তেই শরীরের যন্ত্রণা মনে পড়ে গেলো, মুখ লাল হয়ে উঠলো একসাথে রাগ আর লজ্জায়। হঠাৎই চোখ বড় করে আকাশকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল,
হঠাৎই একটা বালিশ জোরে ছুঁড়ে মারল আকাশের দিকে

__ “কু**ত্তার বাচ্চা, এইটারে তুই বাসর বলিস?”
আকাশ তখন ঘরের এক কোনায় দাঁড়িয়ে গোমড়া মুখে, ভয়ে ভয়ে নিজের নখ কাটছে। মনে হচ্ছে যেনো কোনো অপরাধে ধরা পড়েছে।
আরোহী আবার চেঁচিয়ে উঠলো,
__”এ এই খাবিসের বাচ্চা, জবাব দিস না কেন? ও আল্লাহ গো এটা কি ছিল”
আকাশ ধীরে ধীরে মাথা নিচু করে এসে আমতা আমতা করে বলল,
__ “সোনা আ আমার কো কোন দোষ নাই। বড় ভাইয়া কি একটা চকলেট খাওয়ালো তারপর থেকে মাথা ঠিক ছিল না আমি কিছুই জানি না সোনা, বিশ্বাস করো।”
এই কথা শুনে আরোহীর চোখ আরও বড় হয়ে গেলো। সে মুহূর্তেই লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল, দরজার দিকে এগিয়ে আকাশকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে গেলো।
__হুঁ! নাটক বাদ দেও, সব প্ল্যান তোমারই ছিল। আমার সামনে নাটক করে লাভ নাই। বের হয়ে যা, এখনই বের হয়ে যাও রুম থেকে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আকাশ হতভম্ব হয়ে দরজার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গেলো, গলা কাঁপিয়ে বলল,
__”সোনা, প্লিজ রাগ করে না, আমি তোমাকে একেবারেই কষ্ট দিতে চাইনি।”
আরোহী আর শুনলোই না। ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে দিলো আর বলল,
__”চুপ কর, একটাও কথা বলবি না। বের হয়ে যা, নইলে আমি মাথা ফাটিয়ে দেব তোর।”
আকাশ একদম ফ্যাকাশে মুখ করে বাইরে বেরিয়ে গেলো। দরজা বন্ধ হতেই সে মাথা চুলকে বিড়বিড় করে উঠলো,
__ “ইশ্! এই মেয়ের কাছে পারা যায় নাকি? কি করতে যে ভাইয়ার কাছে গেছিলাম ।”
অন্যরুমে সকালের নিভু আলো ধীরে ধীরে থাই-গ্লাস আর পাতলা পর্দা ভেদ করে ভেতরে ঢুকছিল। বাইরে সমুদ্রের নীল ঢেউয়ের শব্দ যেনো সকালের ঘুম-ভাঙানো ঘন্টাধ্বনি হয়ে বাজছিল নিঃশব্দে। সেই আলো এসে সোনালী আভা ফেলে দিলো অনন্যার মুখে। ঘুমের আবেশে ভারী হয়ে থাকা চোখপাপড়ি আস্তে আস্তে নড়ে উঠলো, অনন্যার চোখ ধীরে ধীরে আধখোলা হলো।

চোখ মেলতেই যা দেখলো, তাতে তার বুক ভরে উঠলো এক অচেনা কিন্তু উষ্ণ সুখে। ইউভি ঠিক তার পাশেই শুয়ে আছে অনুর উরুর ওপর ভর দিয়ে, এক হাত কনুইয়ে ভর করে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে হাতের মুঠোয়। তার ঠোঁটের কোণে সেই চেনা দুষ্টু-মিষ্টি হাসি, আর চোখের দৃষ্টিতে কেমন এক উন্মত্ত প্রশান্তি। যেনো রাতভর অশান্তির পর সকালের আলোতেও সে শুধু অনন্যাকে নিয়েই বাঁচতে চায়।
অনন্যা হালকা লজ্জায় গালে হাত রাখলো, তবু চোখ সরাতে পারলো না। এক মুহূর্ত পরই ইউভি সামান্য ঝুঁকে নাকের সঙ্গে নাক ঠেকিয়ে দিলো। সেই ছোঁয়াতেই অনন্যার শরীর কেঁপে উঠলো। ইউভির কণ্ঠ নরম, তবুও ভরা ভালোবাসার দৃঢ়তায়,

__”গুড মর্নিং পাখি, ঘুম হলো?”
অনন্যা চোখ নামিয়ে মিষ্টি হেসে, অল্প দ্বিধা আর অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে বলল,
__”গুড মর্নিং হাজবেন্ড। হয়ত আপনার পাশে একটু বেশিই ভালোই ঘুম হয়েছে।”
ইউভির বুক ভরে গেলো সেই কথায়। সে হাত বাড়িয়ে অনন্যার এলোমেলো চুল সরিয়ে দিলো, আঙুলের ডগায় গালের মোলায়েমতা ছুঁয়ে নিয়ে নরম কণ্ঠে বলল,
__”লাভ ইউ পাখি।”
অনন্যার ঠোঁটে হালকা কাঁপন উঠলো, চোখে জল চিকচিক করে উঠলো। সে নিজের সমস্ত লাজভরা হৃদয় দিয়ে জবাব দিলো,

__”লাভ ইউ হাজবেন্ড।”
এই ছোট্ট দুটো শব্দেই যেনো সবকিছু থমকে গেলো। বাইরে সমুদ্রের ঢেউ, ভেতরে মোমবাতির হালকা গন্ধ, সকালের নরম আলো সব যেনো তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে দাঁড়ালো।
এভাবেই কথাগুলো একে একে গলে গিয়ে তাদের শরীর, মন, ভালোবাসাকে আবারও জড়িয়ে নিলো। সেই মিষ্টি সকালের হাসি-ঠাট্টা মিলেমিশে আবারো তাদের দুজনকে টেনে নিয়ে গেলো সেই উষ্ণ আবেগমাখা মুহূর্তের ভেতর যেখানে তারা দুজন ছাড়া আর কিছুই নেই।

সূর্যের আলো তখন মাথার উপর ঝলমল করছে। আকাশে একটিও মেঘ নেই, যেনো পুরো দিগন্ত শুধু নীল রঙে আঁকা। মালদ্বীপের দুপুরের আলো অন্যরকম এত উজ্জ্বল, এত স্বচ্ছ যে চোখে পড়লে বুক ভরে যায়। সমুদ্রের জল দুপুরের রোদের তীব্রতায় গাঢ় নীলচে আভা নিয়েছে, আর যেখানে অগভীর, সেখানে একেবারে পান্না সবুজ, কাঁচের মতো স্বচ্ছ। ঢেউয়ের গায়ে সূর্যের আলো পড়ে ঝিকমিক করছে লক্ষ লক্ষ সোনালী কণা, যেনো প্রকৃতি তার বুকভরা মুক্তো ছড়িয়ে দিয়েছে।

সৈকতের সাদা বালি দুপুরের রোদে যেনো রুপোর মতো ঝলমল করছে। খালি পায়ে হাঁটলে সেই বালি জ্বালা ধরিয়ে দেয়, অথচ সমুদ্রের জলে নামলেই উল্টো— ঠাণ্ডা, স্নিগ্ধ, শরীরকে জুড়িয়ে দেয় এক অপার শান্তিতে। দুপুরবেলা ঢেউ ভারী হয়, কিন্তু তার সেই গর্জনও কেমন শান্ত ছন্দময়, মনকে এক অদ্ভুত নেশায় ভরিয়ে দেয়। দূরে নীল আকাশ আর নীল সমুদ্র মিলে একাকার হয়েছে। মাঝেমধ্যে সাদা পালতোলা নৌকা ছুটে যাচ্ছে, অথবা জেট-স্কি জল কেটে ফেনার রেখা আঁকছে। কোথাও ডলফিন লাফিয়ে খেলছে, তাদের হাসি যেনো সমুদ্রের হাসির প্রতিধ্বনি।
এই অপার সৌন্দর্যের মাঝেই তিয়াশা যেনো খাঁচার পাখি। তার বুক জ্বলে যাচ্ছে রাগে, আর চোখে যেনো আগুনের শিখা। কাঁপা কণ্ঠে সে ফেটে পড়লো,

_”খা খাবিশের বাচ্চা, সরো এখান থেকে,এত জোর কই থেকে আসে তোমার?”
তিয়াশার শরীর কাঁপছে, বুক উঠানামা করছে। কিন্তু জায়ন যেনো অন্য এক জগতে। তার কাছে তিয়াশার চিৎকার, রাগ, ভয় কিছুই পৌঁছাচ্ছে না। সে এক কান দিয়ে শুনছে, আরেক কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে। একহাত দিয়ে তিয়াশার কব্জি চেপে ধরে রেখেছে, তার নিঃশ্বাস গাঢ়, ভারী, কামনায় ভরা। রুমের ভেতর যেনো শুধু তাদের শরীরের উত্তাপ, উন্মাদনার ছন্দ।
তিয়াশা হঠাৎ কেঁপে উঠে কাঁপা স্বরে মিনতি করলো,

__”ছা ছাড়ো না প্লিজ?”
জায়ন সেই মুহূর্তেও হেসে, গলা ভারী নিঃশ্বাসে ভরে বলল,
__”বেড ভাঙবো তারপর।”
কথাটা শুনে তিয়াশার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তার বুকের ভেতর যেনো ঝড় উঠলো। সে তীব্র গলায় কেঁদে উঠলো,
__”মা মানে কি? থা থাই গ্লাস ভেঙে শান্তি হয়নি?”
কিন্তু জায়ন তখন অন্ধকার কামনার জগতে ডুবে আছে। তার ঠোঁট ঝড় তুলছে তিয়াশার বুকে, গলায়, কানের পাশে। তিয়াশার শরীর ভিজে উঠছে, কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসছে। আর ঠিক তখনই পাগলের মতো জায়ন বলে উঠলো,
__”আকাশ যদি ভাঙতে পারে তবে আমি কেন পারবো না?”
তিয়াশার মুখ দিয়ে শব্দ বেরোলো না আর। শরীর কেঁপে উঠছে, ঠোঁট কাঁপছে, চোখে জল টলমল করছে। পুরো রুম জুড়ে শুধু নিঃশ্বাসের শব্দ, ভাঙচুরের পর মিশে যাওয়া উন্মাদনার গর্জন।

***পাঁচ ঘণ্টা আগে ফ্ল্যাশব্যাক।***
সকালের আলো যখন তাদের রুমে ঢুকছে, তখন পুরো ঘর এলো মেলো। থাই গ্লাসের টুকরো ছড়িয়ে আছে মেঝেতে, বিছানার চাদর জট পাকানো, আর সেই চাদরের নিচে দুটি আধা উন্মুক্ত শরীর পেঁচিয়ে আছে একে অপরের সাথে।
জায়নের চোখ খুললো সবার আগে। চোখ খোলার মুহূর্তেই সে দেখলো তার পুরো পৃথিবীকে তিয়াশা ঘুমিয়ে আছে তার বুকে মুখ গুঁজে। জায়নের ঠোঁটে খেলে গেল এক দুষ্টু হাসি। ধীর কণ্ঠে ডাক দিলো,
__”জান ওঠ, আমার একা একা ভালো লাগছে না।”
দুই তিনবার ডাকার পর তিয়াশা ধীরে চোখ মেললো। তার কণ্ঠ ঘুমজড়ানো, মিষ্টি অভিমান মেশানো,

__”একটু তো ঘুমোতে দাও?”
জায়ন হাসতে হাসতে তিয়াশাকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলল,
__”সাত দিন আমার কথা মত হবে বলেছিলি জান।”
তিয়াশা চোখ সরিয়ে মুখ বাঁকিয়ে নিচু স্বরে বলল,
__”তোমার কথামতোই তো চলছে। সরো এখান থেকে, এই রুমের অবস্থা ঠিক করাও আগে। আমার যেমন অবস্থা করেছো, রুমের অবস্থাও তেমন করেছো।”
জায়ন খিলখিল করে হেসে হঠাৎ বিছানা থেকে উঠে তিয়াশাকে কোলে তুলে নিলো। তিয়াশা চমকে উঠলো,
__”কি কি করছো?”
জায়ন ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি রেখে বলল,

__”শাওয়ার নিতে হবে না? নিজে তো দাঁড়াতেও পারবে না।”
তিয়াশা লজ্জায় গলায় গলা চেপে বলল,
__”আর এই অবস্থার জন্য কে দায়ী?”
জায়ন কিছু না বলে শুধু চোখ নামিয়ে হাসলো। নিজের বুকের সাথে তিয়াশার ছোট্ট শরীরটাকে জড়িয়ে নিয়ে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে।

কিছুক্ষণ পর, যখন জায়ন তিয়াশাকে যত্ন করে রেডি করিয়ে দিলো নিজে রেডি হলো, ব্রেকফাস্ট অর্ডার করে নিজের হাতে খাইয়ে আবার পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো তখন তিয়াশার মুখে এক অদ্ভুত ক্লান্তির ছাপ লেগে রইল। শরীরের অবসাদ যেন তাকে বিছানার সঙ্গে আটকে রেখেছে, কিন্তু জায়নের মধ্যে সেই মুহূর্তেও একরকম তৃপ্তি, একরকম আত্মবিশ্বাসের ঝিলিক ছিল। তিয়াশার কপালে চুমু খেয়ে যখন সে দরজার দিকে এগোলো, মনে হচ্ছিল যেন তার ভেতরকার জোয়ার একটু শান্ত হলো, তবুও তার চোখের কোণে খেলে গেলো এক ধরনের চোরা হাসি।
জায়ন বেরিয়েই সোজা হোটেলের লবির দিকে নামলো। চারিদিক ঝকঝকে, সাদা মার্বেল মেঝেতে রোদের আলো পড়ে চকচক করছে, ছাদের ঝাড়বাতি আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তার পায়ের শব্দ, বুকের ভেতরের ভারী শ্বাস যেন পুরো পরিবেশকে বদলে দিল।

ম্যানেজারের ডেস্কের সামনে দাঁড়াতেই ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন। চশমার ফাঁক দিয়ে ভীত-আতঙ্ক মেশানো চোখে তাকিয়ে আছেন। জায়ন কোনো ভণিতা না করে সরাসরি বলল থাই গ্লাস ভাঙার ঘটনা।
সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজারের চোখ প্রায় কপালে উঠে গেলো। তার ঠোঁট কাঁপতে লাগল, হাতের কলম প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। আমতা আমতা করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
__” স্যার আ আপনি কি যুদ্ধ করেছেন?”

জায়নের ঠোঁটের কোণে তীক্ষ্ণ বাঁকা হাসি খেললো। ভ্রু কুঁচকে, ঠান্ডা অথচ হুকুমের মতো স্বরে সে বলে উঠলো
__” সেটা আপনায় বলতে হবে? আর যা ড্যামেজ হয়েছে তার ডাবল কম্পেনসেশন দিয়ে দিচ্ছি। আর বাকি ছয় দিনেও অনেক ড্যামেজ হতে পারে তার কম্পেনসেশন আপনি আগেই পেয়ে যাবেন।”
কথাগুলো যেন শীতল ছুরি। ম্যানেজারের মুখ হাঁ হয়ে গেল, কোনো উত্তরই খুঁজে পেলেন না। জায়ন পিছন ঘুরে হেঁটে চলে গেল, পায়ের শব্দ ধপ ধপ করে বাজতে লাগল মেঝের উপর।
ম্যানেজার তখনো হতভম্ব দাঁড়িয়ে। মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলেন,

__” এত দাপট বাবা রে শুধু শুধু কি হাই লেভেল থেকে এই রিসর্ট বুক হয়েছে?”
এরই মধ্যে এক স্টাফ ছুটে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে সে বলল,
__” স্যার, এক জন গেস্ট তার রুমের বেড ভেঙে ফেলেছে?”
ম্যানেজার তখন নিজের ভাবনার ভেতর ডুবে ছিল, আনমনা হয়ে উত্তর দিল,
__” ওহ আচ্ছা।”
কিন্তু পরের মুহূর্তেই কথাটা মাথায় ঢুকতেই তার চোখ প্রায় বেরিয়ে এল। হঠাৎ চিৎকার করে উঠলেন,
__” কি ই ই?”
স্টাফ মাথা নিচু করে, প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল,

__” জী স্যার।”
ম্যানেজারের মুখ লাল হয়ে গেল। রাগে গজগজ করতে লাগলেন,
__” হচ্ছে কি এখানে? একজন থাই গ্লাস ভাঙছে, একজন বেড ভাঙছে যুদ্ধ ক্ষেত্রে এসেছে নাকি!”

এদিকে, অপর প্রান্তে জায়ন নিজের রুমের দিকে ফিরছিল। দরজার সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো সেখানে মেঝেতে বসে আছে আকাশ। মুখে অসহায়তা, কাঁধ ঝুলে পড়েছে। চোখে অভিমান মিশে থাকা কষ্ট।
জায়নের চোখ সঙ্গে সঙ্গেই কুঁচকে গেল। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে পকেটে হাত গুঁজে আকাশের সামনে দাঁড়াল। গলা খাঁকারি দিয়ে, ভয়ংকর শান্ত অথচ কটাক্ষভরা স্বরে বলে উঠলো,
__” এখানে কি বা*ল ফেলাতে বসে আছিস?”
আকাশ মাথা নিচু রেখেই রইল। কিছুক্ষণ পর করুন গলায় উত্তর দিল,
__” বউ রুম থেকে বের করে দিছে।”
কথাটা শুনতেই জায়নের ভ্রু আরও কুঁচকে গেল। কপালে ভাঁজ, ঠোঁটে বিদ্রূপ। রাগ চাপতে না পেরে সে বলে উঠলো,
__” তো অন্য কোথাও গিয়েমর, আমার রুমের সামনে থেকে সর। তোর বোনকে চিৎকার করাবো, ফোট এখান থেকে।”

এইবার আকাশ মাথা তুলে তাকালো। চোখে অভিমান, কণ্ঠে ক্ষোভ মিশিয়ে বলে উঠলো,
__” তুমি কি কাজটা ঠিক করলা বড় ভাই? কি চকলেট খাওয়ালে যে নিজের বাসরে আমি খাট ই ভেঙে ভেলছি।”
জায়নের ঠোঁট কাঁপলো, তারপর এক চিলতে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো। মাথা একটু ঘুরিয়ে আবার আকাশের চোখে চোখ রেখে ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে বললো,
__” ওই হর্নি চকলেট না খাওয়ালে তো বিছানা পর্যন্ত ও যেতে পারছিলিস না। বরং আমার রোমান্সে ১৩ বাজাচ্ছিলিস। আর তুই বেড ভেঙেছিস? তাহলে আমাকেও ভাঙতে হবে। ফোট তাড়াতাড়ি।”
আকাশ এবার গভীর অভিমান নিয়ে বলল,
__” তোমার ঐ চকলেটের তেজে এখন বউ ছুঁতে দেওয়া তো দূরে থাক বলছে রুমের বাইরে থাকতে।”
হঠাৎই আকাশ যেন কিছু মনে পড়ে চমকে উঠলো। অবাক দৃষ্টিতে জায়নের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো,

__” আচ্ছা ভাইয়া, তুমি তার মানে ওই চকলেট খেয়েই তেজ দেখাও… আজকে বুঝলাম।”
কথাটা শুনে জায়নের মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো। দাঁত চেপে, গলা ভারী করে বলে উঠলো,
__” তোর মত হুদাই এর পুরুষ নাকি আমি যে আমার ওইসব বাল ছাল চকলেট লাগবে।”
এক মুহূর্ত থেমে, চোখ আধবোজা করে, ভেতরের দমক সামলে নিঃশ্বাস ফেলল। তিয়াশার কথা মনে পড়তেই ঠোঁটে নরমতা ফিরে এলো। গভীর স্নিগ্ধতায় বলল,
__” আহা… আমার বউ হলো নিজেই আস্ত চকলেটের কারখানা। দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে।”
মুহূর্তের জন্য যেন স্বপ্নে হারিয়ে গেল সে। কিন্তু পরক্ষণেই ফিরে এলো নিজের স্বভাবে। দাঁত কিড়মিড় করে, কটাক্ষভরা গলায় আকাশকে বললো,

__” বালের পুরুষ তুই, বউ বের করে দিয়েছে তাই এখন আমার পেছনে কুরকুরি করছিস। জলদি বিদায় হ।”
আকাশের মুখে অপমানের ছাপ ফুটলো, কিন্তু তবুও নিজের লজ্জা গিলে নিয়ে বলল,
__” তাইলে আরেকটা চকলেট দাও আমিও গিয়ে বউরে চিৎকার করাই।”
জায়ন এবার ধৈর্য হারালো। ক্ষুব্ধ অথচ শীতল স্বরে গর্জে উঠলো,
__” ফোট শা*লা, আমার ভাই হয়ে এইসব বলছিস? হুদাই মার্কা মুখ নিয়ে সর। আর আজকে দরজা ভেঙে রুমে ঢোক। যা ভাঙতে ইচ্ছা করে তাই ভাঙ, শুধু আমার মুডটা ভাঙ্গিস না। ম্যানেজার বাড়াবাড়ি করলে এই হোটেল ই কিনে নেব।”
কথাগুলো শুনে আকাশের মাথা ঘুরে গেল। বুক ধড়ফড় করতে লাগল। এক মুহূর্তও দাঁড়াল না, হনহনিয়ে চলে গেল নিজের রুমের দিকে।

রুমে ঢুকতেই জায়ন দেখলো তিয়াশা বিছানায় শুয়ে আছে, চুপচাপ, চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। তখনই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকে ইউভির কণ্ঠ ভেসে এলো,
__” ভাইয়া স্কুবা ডাইভিং করতে যাবেনা?”
জায়নের উত্তর ছিল সোজাসাপ্টা, দ্বিধাহীন,
__” না বউ এর ভাইরাস জ্বর হয়েছে। রুম থেকে বেরোনো যাবে না। তোরা যা আমি যেতে পারব না।”
ওপাশ থেকে ইউভি অবাক গলায় বলে উঠলো,
__” কি বলো বনুর ভাইরাস জ্বর হয়েছে? মানে ভাইরাল জ্বর তাই তো? ওকে আমি আসছি তোমাদের রুমে বোনকে দেখতে।”
কিন্তু জায়ন সঙ্গে সঙ্গে গলা ভারী করে বিরক্তি ঝরিয়ে বললো,

__” একদম আমার রুমের কাছে আসবিনা, নইলে তোদেরও ভাইরাস লেগে যাবে। ছয় দিন এই রুমের কাছা কাছি আসবিনা।”
ফোন কেটে দিলো হঠাৎ করেই, আর কোনো ব্যাখ্যা দিল না।
তিয়াশা এবার জায়নের দিকে কপাল কুঁচকে তাকালো। চোখে রাগ, ঠোঁটে তিরস্কারের রেখা। তারপর বলে উঠলো,
__ “আমার ভাইরাস জ্বর হয়েছে? শয়তান লোক? আমি ঘুরতে যাব, নিয়ে চলো। রুমের মধ্যে ভালো লাগছে না আর।”
জায়ন ধীর পায়ে তার কাছে এগিয়ে এলো। মৃদু আলোয় তার মুখে ভয়ংকর দৃঢ়তা। তিয়াশার চিবুক ধরে ঠোঁটে বাঁকা হাসি রেখে ধীরে ধীরে বলল,
__” মিসেস তিয়াশা, রোদ এই সাত দিন না তো আপনি বাইরের রোদ দেখার সুযোগ পাবেন। না তো রাতের অন্ধকার।”
কথাটা শুনেই তিয়াশার চোখে নেমে এলো আতঙ্কের ছায়া। বুক ধড়ফড় করতে লাগল, শরীর কেঁপে উঠলো। সে বুঝলো, জায়নের ইচ্ছার বাইরে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব।

অন্যদিকে, আকাশ যেন নিজের রাগ আর হটকারিতার প্রকাশকে আর ধৈর্যের সঙ্গে ধরে রাখতে পারছিল না। এক মুহূর্তের মধ্যে সে লাফ দিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। সত্যি লাথি মেরে দরজা ভাঙলো, কাঠের অংশ কুঁড়িয়ে পড়লো। দরজার সঙ্গে সঙ্গে ঘরটা কেঁপে উঠলো।
ঘরের মধ্যে থাকা আরোহী চমকে উঠলো। হঠাৎ সেই দমবন্ধানো অনুভূতি তাকে জড়িয়ে ধরলো। হাত পা কাঁপতে কাঁপতে সে বলল,

__”এখানে কি করছ? আর দরজা ভাঙলে কেন?”
আকাশ চোখে আগুন, মুখে গম্ভীর ভঙ্গি, কণ্ঠে কড়া তীক্ষ্ণতা নিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এল আরোহীর দিকে। চোখ লাল হয়ে উঠেছে, যেন রাগ আর অভিমান একসাথে জ্বলছে। গম্ভীর কণ্ঠে সে বললো,
__”বউ এখানে আমি কি বাইরে রে থাকবো?”
মুহূর্তের এই উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎ আকাশের ফোন বেজে উঠলো। সে অবশ্যম্ভাবী ভঙ্গিতে ফোন রিসিভ করলো।
__”হ্যা ইয়ভি ভাই, বলো?”
ওপাশ থেকে ইউভির কণ্ঠ ভেসে এলো, উদ্দীপনা ও উত্তেজনার মিশ্রণ,
__”কখন বেরোবি স্কুবা ডাইভিং করতে?”
আকাশের চোখে ঝলক, ঠোঁটের কোণে হালকা বাঁকা হাসি, কিন্তু কণ্ঠে দৃঢ়তা, সে জবাব দিল,
__”বউ এর ম্যালেরিয়া হইসে, বউ রে নিয়ে রুমে থাকতে হবে। এক সপ্তাহের আগে ফোন দিবা না। তুমিও যাইয়ো না, টাটা, গুড নাইট।”
ফোন কেটে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আকাশের দৃষ্টিতে অদ্ভুত এক তীব্রতা ভেসে উঠলো। ধীর পায়ে সে আবার আরোহীর দিকে এগোতে লাগলো।
আরোহী, কাঁপা কণ্ঠে, হাত পা গুটিয়ে বলল,

__”কা, কার ম্যালেরিয়া হয়েছে? আর তুমি এভাবে কে কেন এগোচ্ছ? আ আবার কোন চকোলেট খেয়েছ নাকি?”
আকাশের চোখে অদ্ভুত নেশার ঝিলিক, মনে হচ্ছিলো যেন ধীরে ধীরে রাগ, লালসা আর সুরঙ্গ একত্রিত হচ্ছে। সে ঝুঁকে পড়লো আরোহীর দিকে, ধীরে ধীরে তার গলায় মুখ ডুবিয়ে ডুবিয়ে বলল,
__”এখন হুসেই আছি, আর কখনো চকলেটের দরকার পড়বে না।”

আরোহীর শরীর কেঁপে উঠল, হৃদয় দ্রুতগতিতে ধকধক করতে লাগলো। মনে হলো সময় থমকে গেছে, চারপাশের আলো, শব্দ, বাতাস সব মিলিয়ে একটি মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে আছে। রাগ, উত্তেজনা, আবেগ সবই মিলেমিশে যেন ঘরে ভেসে উঠল। আরোহী আর নিজের অনুভূতি সামলাতে পারছে না, এবং আকাশের দৃষ্টিতে সে এক অদ্ভুত আকর্ষণ অনুভব করলো ভয় আর উত্তেজনা মিশ্রিত, এক ধরনের অদ্ভুত ক্ষমতা যার সঙ্গে তাকে লড়তে হচ্ছে।
মালদ্বীপের রিসর্টের নিজেদের রুমে তিয়াশা ফ্রন্ট ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে ছিল। বাতাসে সমুদ্রের নরম গন্ধ, হালকা বাতাসে তার চুল ঢেউ খেলাচ্ছে। এক হাউস কিপার এসে রুমের সব কিছু সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিয়ে চলে গেল। রুমের শান্তি যেন আরও গভীর হয়ে গেল।

জায়ন ধীরে ধীরে তিয়াশার দিকে এগিয়ে এল। তার হাত অজান্তেই তিয়াশার বাঁকানো কোমর শক্ত করে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে নিজের কাছে টানল। ঠোঁট টা তিয়াশার কানের কাছে রেখে ফিসফিস করে বলল,
__”বেইব, স্টাডি কন্টিনিউ করতে চাস? নাকি কুইট করতে চাস?”
এই হঠাৎ প্রশ্নে তিয়াশা হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ ছোট ছোট করে জায়নের দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে, ভয় আর উত্তেজনা একসাথে তার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
__”স্টাডি কেন করবো না? অবশ্যই করবো।”
তিয়াশার কথা শেষ হতেই জায়ন এক ঝটকায় তিয়াশা কে কোলে তুলে বলে উঠলো,
__” এক বছর পরে আবার শুরু করিস স্টাডি বেইব।
আমার ব্লাড লাইন চাই । চল এই ছয় দিনেই প্রোসেস
কমপ্লিট হওয়া চাই।”
তিয়াশা জায়ন এর কোলের মধ্যে হাত দুটো জায়ন এর গলা জড়িয়ে হকচকিয়ে বলে উঠলো,

__” মা মানে।”
জায়ন তীব্র গতিতে তিয়াশা কে বিছানায় বসিয়ে , তিয়াশার শরীরের সব জা*মা কাপর ছুঁড়ে ফেলে দিলো, খুলে দিল নিজের পড়নের নিজের ট্রাউজার আর টিশার্ট।
উন্মুক্ত শরী*রে জায়ন বেড থেকে তিয়াশা কে বাচ্চা দের মত কোলে তুলে নিয়ে সোফায় বসতে বসতে হাস্কী কন্ঠে বলল ,
__” টুডে ইউ ক্যান টপ অন মি বেইব। বিকজ আই নিড অল ইওর এনার্জি।”
তিয়াশার চোখ বড় হয়ে উঠল। সে নিজেও বুঝতে পারল না কেন তার হৃদয় এত দ্রুত ধক করছে। ফিসফিস কণ্ঠে বলল,

__”আ… আ আমার এত এনার্জি নেই, বর, প্লীজ ছাড়ো।”
জায়ন বাকা হাসি দিয়ে ঠোঁট কামরে বলে উঠলো ,
__” আই বুস্ট ইওর এনার্জি বেবী গার্ল। বিকজ আজকে বেড ভাঙতে হবে “।
তারপর ধীরে ধীরে জায়ন তিয়াশার হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিল। চোখে চোখের মিলন, নরম হাসি, অদ্ভুত উত্তেজনা সব মিলিয়ে তিয়াশার মন যেন নাচতে লাগল। সে কাঁপছিল, কিন্তু তার কাঁপানো ছিল ভয় নয়, বরং হৃদয়ের গোপন আনন্দের কম্পন।
নিজের ঠোঁট দিয়ে তিয়াশার সর্ব শরীর ভেজাতে লাগল, তিয়াশার শরীর ও কেঁপে উঠলো জায়ন এর স্পর্শে। তিয়াশা জানেনা এত শারী*রিক কষ্টের মধ্যেও যখন ই এই লোক টা স্পর্শ করে তখন ই এরকম অনুভূতি কেনো?
হঠাৎ তিয়াশার শরী*র ঝাঁ*কিয়ে জায়ন আবার বসিয়ে দিল নিজের উপর আর তিয়াশার চি*ৎকার বেজে উঠলো পুরো রুম জুরে। জায়ন নিজের ভারী নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে উঠলো,

__” ইয়েস বেইব ইয়েস, দ্যাটস মাই গার্ল।”
***”ফ্ল্যাশ ব্যাক এন্ড****
এই মাঝ সমুদ্রে এই কাঁচে মোরা রুমে বেজে উঠছে এক রমনীর চিৎকার আর এক বত্রিশ বছর পুরুষ এর গোঙানী।
.সেই মুহূর্তে সময় যেন থমকে গেল। ঘরের নীরবতা, চোখের আলাপ, নরম স্পর্শ সবই এক অদ্ভুত আবেগঘন সুরে মিশে গিয়েছে। তিয়াশার হৃদয় এক অজানা আনন্দে ভরে উঠল, আর জায়নের চোখে সেই আনন্দের প্রতিফলন স্পষ্ট।

মালদ্বীপের সাত দিনের সেই ছুটি যেন ওরা তিনজনের জন্য এক স্বপ্নের জগত। সমুদ্রের ঢেউ, রোদ ও হাওয়ার সাথে সময় কেটে গিয়েছে যেন বাতাসও তাদের গল্প শুনেছে। ওই সময়ে হোটেলের কোনো স্টাফ বা ম্যানেজার ওদের কাছাকাছি যেতে পারেনি। কখন সূর্য ডুবে গেছে, কখন রাত নেমেছে, কখন সকাল হয়েছে সকলেরই জানা নেই। শুধু ওই তিন দম্পত্তি জানে, কিভাবে তারা মালদ্বীপের সাত দিন একে অপরের সঙ্গে কাটিয়েছে, এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা হয়ে রয়ে গেছে।

সেই সাত দিন পেরিয়েছে, আর পেরিয়ে গেছে এক মাস। আরোহী এখন নিজের বাসায় থাকে, আকাশ মাঝে মাঝে ওর কাছে যায়। দিনের আলো বা রাতের আঁধার কেউ জানে না তারা কেমন সময় কাটায়, শুধু অনুভূতি এবং আবেশ বোঝার ভাষা।
এদিকে, অনু আর রায়ান এবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। আজ প্রকাশ হলো এইচএসসি ফলাফল। পুরো পরিবারের মনটা একটানা উত্তেজনায় কাঁপছে। অনু তার রেজাল্ট দেখার সঙ্গে সঙ্গেই হাসি ধরে রাখতে পারল না এ-প্লাস-প্লাস! পরিবারের সবাই উচ্ছ্বসিত, বিশেষ করে ইউভি। কিন্তু চমক অপেক্ষা করছিল রায়ানের রেজাল্টে।
যখন রায়ানের রেজাল্ট ফাঁস হলো, ইউভি ও অনু একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল, ভয় আর কৌতূহল মিশিয়ে। ঠিক সেই সময়, তাহসান সাহেব পেছন থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

__”ফেইল করেছে বুঝি? জানাই ছিল কোন দিন বা রেজাল্ট ভালো করলো?”
পরিবারের সবাই অবিলম্বে চুপ হয়ে গেল। মুখে চিন্তার ছাপ।
এবং তখনই ইউভি পরিবারের সবাইকে জানিয়ে দিল,
__”রায়ান গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছে।”
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো পরিবার চমকে উঠল। আনন্দ, গর্ব, কৃতজ্ঞতা সবই চোখে ভাসতে লাগল। অল্প কিছুক্ষণও না, সবাই এই মুহূর্তে আবেগের জোয়ার অনুভব করল। কিন্তু রায়ান নিজেই চুপচাপ সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল। দরজা বন্ধ করে নিজে একাকী দাঁড়িয়ে বলল,
__”আমি পেরেছি, শাকচুন্নি, আমি পেরেছি। তোকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এত বড় যে নিজেকে সব রকম ভাবে প্রমাণ করতে চাই।”

অন্যদিকে, জায়ন আজ অফিসে ব্যস্ত। তিয়াশা বাড়িতে থাকলেও আজ তার শরীর একটু খারাপ লাগছে। তবুও মনে মনে সে ঠিক করেছে, আজ জায়নের জন্য রান্না করবে ইউ টিউব দেখে। রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সে নিরলসভাবে নিজের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে।
মেহজাবীন বেগম সেটা লক্ষ্য করলেন এবং মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
__”কিছু লাগবে, আম্মু?”
তিয়াশা হাত চুলকাতে চুলকাতে রান্নাঘরে গিয়ে ধীরে ধীরে বলে উঠলো,
__”আসলে বড় আম্মু, আজ আমি ওনার জন্য রান্না…”
পুরো বাক্য শেষ করতে পারল না রান্না ঘরে রাখা কাঁচা মাছের তীব্র গন্ধ তাত্ক্ষণিকভাবে তিয়াশার গা ঝরিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে সে রান্নাঘরের পাশে থাকা বেসিনের দিকে ছুটে গেল এবং বমি করতে লাগল।
সেই দৃশ্য দেখে সুরাইয়া বেগম, রুহেনা বেগম এবং মেহজাবীন বেগম সঙ্গে সঙ্গেই তত্পর হয়ে ছুটে গেল তার পাশে। রুহেনা বেগম পানি ছিটিয়ে তিয়াশাকে সাহায্য করতে লাগলেন। ভয়, চিন্তা এবং মায়ার মিশ্রণ চোখে দেখা যাচ্ছিল।
“কি হয়েছে মা, হঠাৎ?”

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৪

রুহেনা বেগম হু-চু আওয়াজে প্রশ্ন করলেন।
তিয়াশা কোনো জবাব দিতে পারল না। মাথা ঘুরছে, দেহ দুর্বল। মেহজাবীন বেগম সঙ্গে সঙ্গে ধরলেন, যাতে সে পড়ে না যায়। পরিবারের সবাইর মুখে চিন্তার ছাপ। রুহেনা বেগম চিৎকার করে বললেন,
__”কেউ ডাক্তার ডাকো! আমার মেয়ের কি হলো?”
সেই মুহূর্তে ঘরটি যেন আবেগের এক প্রবাহে ভেসে উঠল ভয়, যত্ন, দায়িত্ব, এবং পরিবারের একজোট অনুভূতি।

তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৫ 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here