তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৫
নীল মণ
তিয়াশা শুয়ে আছে বিছানায় গায়ে হালকা কমফোর্টার, চোখে এক অদ্ভুত স্বস্তি আর মুখে লজ্জায় লাল হওয়া হাসি। ডাক্তার বাবু তাকে চেক করে ধীরে ধীরে বাইরে বেরিয়ে এলেন। তিয়াশার ঠোঁটের কোণে তখনো মৃদু হাসি খেলা করছে এক অদ্ভুত নতুন জীবনের স্বপ্নে ভরা হাসি।
ডাক্তার সাহেব দরজা খুলে বেরোতেই করিডোরে দাঁড়ানো পরিবারের সবাই একসাথে এগিয়ে গেলেন। প্রত্যেকের মুখে চিন্তার ছাপ মেহজাবীন বেগমের চোখ লাল হয়ে আছে উদ্বেগে, প্রণয় সাহেব আর প্রান্তিক সাহেব বারবার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছেন, রূহেনা আর সুরাইয়া বেগমের বুক ধকধক করছে।
মেহজাবীন বেগম মমতা মাখা অসহায় মুখে জিজ্ঞেস করলেন,
__”কি হয়েছে ডাক্তার বাবু?”
ডাক্তার সাহেব একগাল উজ্জ্বল হাসি নিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন,
__”যান ভাবি, মিষ্টি নিয়ে আসুন বাসায় নতুন সদস্য আসতে চলেছে।”
কথাটা শোনার সাথে সাথেই চারপাশ যেন উৎসবে ভরে উঠল। মেহজাবীন বেগমের চোখ ভিজে গেল আনন্দের অশ্রুতে। ছেলের অংশ, তাদের রক্ত, তাদের উত্তরাধিকার এই পৃথিবীতে আসতে চলেছে এই চিন্তায় বুক ভরে গেল। ওনার চোখ দিয়ে টলমল অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে, আর সেই মুহূর্তে মনে হলো তিনি দাদু হওয়ার সবথেকে বড় স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছেন।
রূহেনা বেগম, সুরাইয়া বেগম, প্রণয় সাহেব, প্রান্তিক সাহেব, তাহসান সাহেব সবার মুখেই খুশির আলোর ঝলক। ছোটরা যেমন লাফিয়ে ওঠে আনন্দে, বড়রাও যেন সেইরকম খুশিতে ভরে উঠলেন, শুধু আবেগের ভারে হয়তো সেটা চেপে রাখলেন।
এই সময় মেহজাবীন বেগম আবেগে ভেজা চোখে রূহেনা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
__”ওরে মেজ, আমি দাদু হচ্ছি! আমার এত দিনের স্বপ্ন আজ সত্যি হলো।”
রূহেনা বেগমও ভেজা চোখে, কণ্ঠে আবেগ চেপে ধরে উত্তর দিলেন,
__”সত্যি বড় আপা, আমিও তো নানু হচ্ছি। বৃষ্টির সময় আমি তার পাশে ছিলাম না, এই অনুভূতি তখন অনুভব করতে পারিনি। কিন্তু আমার তিয়াশা মা সেই অনুভূতি অনুভব করিয়েছে।”
পাশে দাঁড়ানো সুরাইয়া বেগম তখন হাসিমুখে ছুটে এসে দুই বোনকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
__”বড় আপা, মেজ আপা আমি তো নানু, দাদু দুটোই হচ্ছি! তোমাদের থেকে আমার খুশি বেশি।”
এমন কথা বের হতেই তিন গিন্নীর হাসি আর আনন্দে বাড়ির বাতাস ভরে উঠল। হাসতে হাসতে, চোখের জল ফেলে, তারা যেন এক খুশির মেলায় ডুবে গেলেন।
অন্যদিকে প্রান্তিক সাহেবের মুখে এক অদ্ভুত গর্বের ঝিলিক। হয়তো মেহজাবীন বেগমের থেকেও বেশি খুশি তিনি, কিন্তু পুরুষেরা তো তেমন প্রকাশ করতে পারেন না। তাই খুশি চেপে রেখে প্রণয় সাহেবকে কোলাকুলি করে বললেন,
__”তাহলে মেজো ভাই, আমি দাদা হচ্ছি আর তুই নানা। কিন্তু এ সুখের ভাগ কিন্তু আমি বেশি পেতে চাই—আমি কোনো কথা শুনবো না।”
প্রণয় সাহেব একগাল হেসে জবাব দিলেন,
__”বড় ভাই, আপনার আগে কখনোই কথা বলিনি। কিন্তু এবার কিন্তু ছাড় হবে না। আমারও সমান ভাগ চাই।”
এই কথার সাথে সাথে প্রান্তিক সাহেব, প্রণয় সাহেব, তাহসান সাহেব তিনজনেই হো হো করে হেসে উঠলেন। পুরো বাড়ি আনন্দের রঙে রঙিন হয়ে গেলো।
এদিকে অনন্যা চুপিসারে তিয়াশার কাছে চলে গেল। তিয়াশা বিছানায় বসেই খোলা দরজা দিয়ে সবার খুশি দেখছিল, চোখ ভিজে যাচ্ছিল আবেগে। যেন চারপাশের প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অশ্রু তার হৃদয়ে গিয়ে মিশে যাচ্ছিল।
হঠাৎ তিন গিন্নী একসাথে ছুটে এলেন রুমে। তিয়াশার কপালে আলতো চুমু খেয়ে দোয়া পড়লেন। মেহজাবীন বেগম আর রূহেনা বেগম স্নেহে ভরা কণ্ঠে বললেন,
__”আম্মু, আজ থেকে কিন্তু একদম দৌড়ঝাঁপ করবে না। চুপচাপ বসে থাকবে, আর ভালো-মন্দ খাওয়া-দাওয়া করবে।”
তিয়াশা মাথা নাড়লো, ঠোঁটের কোণে এক মিষ্টি লাজুক হাসি। ভেতরে ভেতরে তার শরীরে নতুন এক অনুভূতির জন্ম হচ্ছে একদিকে আনন্দ, অন্যদিকে এক নতুন ভয়, এক নতুন চাওয়া-পাওয়া।
রূহেনা বেগম তখন হঠাৎ বলে উঠলেন,
__”আমার জায়ন বাবাকে খবর দিতে হবে তো।”
কথাটা শুনতেই তিয়াশা চমকে উঠলো। তার মুখে লজ্জার রঙ চেপে গেলো, গাল টকটকে লাল হয়ে গেল। মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে বলল,
__”আম্মু, ওনাকে আমি পরে জানাবো। তোমরা এখন বলো না।”
তার এই কথা শোনামাত্রই সবাই মুচকি হেসে ফেললেন। বুঝতে বাকি থাকলো না, তিয়াশা তার হৃদয়ের সব আবেগ লুকিয়ে রাখতে পারছে না।
মেহজাবীন বেগম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, বাকিরাও কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে একে একে বেরিয়ে গেলেন।
রুম ফাঁকা হতেই তিয়াশা নিঃশব্দে নিজের পেটের ওপর হাত রাখলো। ঠোঁটে লাজুক মিষ্টি হাসি খেলে গেল। আস্তে করে বললো,
__”এই যে পাপার ব্লাড লাইন তোমার পাপা তোমার কথা জানতে পারলে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। খুশিতে তোমার জন্য পুরো দুনিয়া এক করবে।”
তার চোখ ভিজে এলো আনন্দে। যেন অদৃশ্য এক টানে সে আরও গভীরভাবে বাঁধা পড়ে গেল জায়নের সঙ্গে এবার শুধু স্ত্রী নয়, এবার সে এক মায়ের আসনে।
বিকেল থেকে পুরো চৌধুরী বাড়ির ভেতর যেন অদ্ভুত এক খুশির বন্যা বইছে। ঘরের গিন্নিরা, ছোটরা, আত্মীয়স্বজন যার যার কানে খবর পৌঁছে গেছে যে চৌধুরী বাড়িতে আসছে নতুন প্রজন্ম, জায়ন বাবা হতে চলেছে, তিয়াশা মা হতে চলেছে। খবরটা যেন ছড়িয়ে পড়তেই প্রত্যেকের চেহারায় আলাদা আলাদা আলো ফুটে উঠেছে। আয়েশা বেগম অবাক হয়ে বারবার বলছে
__”এত তাড়াতাড়ি?” ,
কেউ খুশিতে চোখ ভিজিয়ে দিচ্ছে, কেউ আবার দুষ্টুমি ভরা মুচকি হাসি নিয়ে তিয়াশার দিকে তাকাচ্ছে। ইউভি, আকাশ, আরোহী, আয়েশা বেগম প্রত্যেকে যার যার মত করে আনন্দটা বুক ভরে নিচ্ছে, কেবল অজানা একমাত্র জায়ন সে এখনো কিছুই জানে না।
সন্ধ্যা নামতেই অফিস থেকে ফেরে সে। বাসার ভেতরে পা দিতেই অদ্ভুত এক অস্বস্তি যেন চারদিক থেকে তাকে ঘিরে ধরে। গিন্নিরা তার দিকে এমন এক মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে যেন বুকের ভেতরে হাজারটা আশীর্বাদ একসাথে ঝরে পড়ছে। অনন্যা, ইউভি, রায়ান সবার মুখে সেই রহস্যময় মুচকি হাসি। কারো চোখে রাগ নেই, শুধু একরাশ নরম স্নেহ আর চাপা আনন্দ। জায়নের কপাল ভাঁজ পড়ে যায়। সে অভ্যস্ত নয় এই ধরনের চোখে পড়ার, বরং ভেতরে ভেতরে সন্দেহ জন্মায় কেন সবাই হঠাৎ এরকম আচরণ করছে? অস্থির হয়ে আর এক মুহূর্ত দাঁড়ায় না, পা বাড়িয়ে চলে যায় নিজের রুমে।
ভেতরে ঢুকতেই চোখ আটকে যায়। তিয়াশা বিছানায় শুয়ে আছে, গভীর ঘুমে। এতটা সময়ে, এত অল্প বয়সে, এই অবেলায় ঘুমাচ্ছে জায়নের বুক ধক করে ওঠে। তাড়াতাড়ি ল্যাপটপ ব্যাগটা নামিয়ে রেখে ছুটে যায় তিয়াশার পাশে। চোখে ভয়ের ছায়া, হাঁটু গেড়ে বেডের পাসে বসে ভ্রু কুঁচকে কণ্ঠটা একেবারেই নরম হয়ে আসে,
__” জান , জান এখন ঘুমোচ্ছো? শরীর খারাপ?”
সেই কণ্ঠ তিয়াশার কানে পৌঁছাতেই সে আস্তে চোখ খোলে। ক্লান্ত চোখের কোনে এক ঝলক হাসি, অথচ বুক ভরা গোপনীয়তা। ভেতরে ভেতরে সে ভাবছে
__”আমার মানুষটা বাবা হতে চলেছে, অথচ সে জানেই না। জানলে যে কি করবে, আল্লাহই জানে।”
সেই ভাবনা লুকিয়ে রেখে শুধু এক কোমল হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
__” মাথা টা যন্ত্রণা করছিল বর, তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম। তুমি চিন্তা করো না।”
জায়ন তখনও ব্যস্ত তার চিন্তায়। কপাল ভাঁজে যেন দুশ্চিন্তার ছায়া ঘনীভূত হচ্ছে। তবুও মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়, কপালে আলতো চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বলে,
__” তাহলে রেস্ট করো জান , মেডিসিন নিয়েছো?”
তিয়াশা ছোট্ট মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। জায়নের ভেতরে অদ্ভুত এক দ্বৈত আবেগ কাজ করছে। একদিকে রাগ আগের মতো নেই, কিছুটা নরম হয়েছে, কিন্তু পজেসিভনেস সেটা এখনও আগের মতোই তীক্ষ্ণ। তবুও বউয়ের প্রতি স্নেহের বাঁধন যেন বারবার তাকে নরম করে তোলে। ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে তিয়াশার হাতে তুলে দেয়। মুহূর্তেই তিয়াশার মুখে হাসির ঢেউ খেলে যায়, খুশিতে বসে পড়ে। দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,
__” আচ্ছা তুমি রোজ আমার জন্য এগুলো কেন আনো?”
জায়ন ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে মাথায় হাত বোলায়, স্নেহে ভরা কণ্ঠে বলে,
__” আমার বউ টা তো বাচ্চা, আর বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তো আনতেই হয়।”
কথাটা শুনে তিয়াশার বুক ধক করে ওঠে। তার ভেতরে গোপন আনন্দে বুক ফুলে যায়। “তুমি জানোই না যে আমার ভেতরে তোমারই ব্লাড লাইন বেড়ে উঠছে, আর আমাকে এখনো বাচ্চা বলছো বর!” মনে মনে ফিসফিস করে ভাবে সে। মুখে কিছু না বলে হেসে দেয়, আর সেই হাসি চোখেমুখে এত ঝলক নিয়ে আসে যে জায়ন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
__” এরকম ভাবে হাসছিস কেন বউ? আমার মুখে কি কিছু লাগানো?”
তিয়াশা দুষ্টুমি করে তার মুখ দুই হাতে চেপে ধরে পাউট করে বলে,
__” বর আজকে রাতে আমাদের ওই বাসায় যাবে?”
জায়নের ঠোঁট বাঁকা হয়ে যায়, চোখে দুষ্টু ঝিলিক। ভেতরের কৌতুহল সন্দেহ সব মিলেমিশে মুহূর্তে বদলে যায় খুনসুটিতে। ফিসফিস করে বলে,
__” কেন আমার বউ কি আজকে কি ঐ বসাতে ইন্টিমেট হতে চায়? কোন ব্যাপার না, তুই তো জানিস তোর বর যেখানে মন চায় সেখানে রাজি হয়ে যায়।”
তিয়াশা ভ্রু কুঁচকে তার মুখ টেনে ধরে, মিষ্টি রাগে বলে ওঠে,
__” সব সময় এত নষ্ট মাথা নিয়ে কেন ঘোরো? যাবে কিনা বলো?”
জায়ন এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়। ভেতরে কৌতূহল, অবাক হওয়া হঠাৎ কি ভুত চাপলো বউয়ের মাথায়? তবুও তার কাছে বউয়ের খুশি সবচেয়ে বড়। ঠোঁটে একরাশ মৃদু হাসি নিয়ে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,
__” জী ম্যাম, আপনার কথা না রাখলে যে আমি নিজেই শান্তি পাবো না।”
সেই মুহূর্তে তিয়াশার চোখেমুখে এমন এক ঝকঝকে আলো জ্বলে ওঠে, যেন পুরো পৃথিবীটা তার হাতে এসে গেছে। বুকের ভেতর লুকানো গোপন খবরটা মনে করে এক অদ্ভুত উত্তেজনা আর খুশিতে সে গলে গলে যায়। দু’জন কিছুক্ষণ একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সেই খুশিকে চুম্বনে রূপান্তরিত করে। তারপর জায়ন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায়, আর তিয়াশা মাথা নামিয়ে লজ্জায় মৃদু হাসি দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
বাড়ির বাইরে সবাই তখনও আলো ঝলমল হাসি নিয়ে গোপনে গোপনে খুশির ফিসফিস করছে। আর ঘরের ভেতরে, এই দুই মানুষের মাঝে বোনা হচ্ছে এমন এক সুখের পরত, যা এখনো জায়নের কাছে অজানা, কিন্তু শিগগিরই যা তার জীবনের সবচেয়ে বড় দোয়া হয়ে আসবে।
জায়ন বনানীর বাসাটা তখন পুরোপুরি ভাবে সারপ্রাইজ এ পরিণত হয়েছে। চারজন ডেকোরেটর একসাথে কাজ করছে, ফেয়ারী লাইট ঝুলছে, বেলুন দিয়ে সাজানো হচ্ছে প্রতিটা কোণা। ঘরভর্তি আনন্দের আভা, চারদিকেই ব্যস্ততার ছাপ। এই ব্যস্ততার মাঝেই আকাশ দাঁড়িয়ে আছে এক হাতে কোমর চেপে, অন্য হাতে ডেকোরেটরের কাজ তদারকি করছে। মুখে দুষ্টু হাসি, চোখে টিপটিপে কৌতুকের ঝিলিক।
সে হঠাৎ ইউভির দিকে তাকিয়ে মজা করে বলে উঠলো,
__” দেখলা ইউভি ভাই আমাদের বড় ভাই দান লাগায় দিলো বাপ হতে যাচ্ছে , তুমিও লাগাও তুমি কেন বসে থাকবে?”
কথাটা যেন মুহূর্তেই চারপাশে বাতাসে দুষ্টুমি ছড়িয়ে দিল। ইউভি একটু থমকে গেলো, ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত মুখে তাকালো আকাশের দিকে। যেন মনে মনে ভাবছে
__”এই ছেলের মুখটা একদিন ও বন্ধ থাকে না।,”
কণ্ঠে চাপা বিরক্তি আর দৃঢ়তা নিয়ে উত্তর দিলো,
__” তোর ইচ্ছা হলে তুই দান লাগা, খাট ভাঙার রেকর্ড করেছিস এখন বাবা হওয়ার রেকর্ড ভেঙে দে । বছরে বছরে দান লাগাবি । আমার বউ এখনো ছোট এখনো এসব ভাবার দেরি আছে।”
ইউভির গলায় সেই স্বাভাবিক ভারী রাগী ভাবটা থাকলেও, মুখে একরকম গাম্ভীর্য মাখা হাসি লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু আকাশ কথাটা শুনেই হাবুডুবু খেতে লাগলো লজ্জায়। মুখটা একেবারে লাল টকটকে হয়ে গেল, মনে হলো যেন কারো সামনে ধরা খেয়ে গেছে। নিচের দিকে তাকিয়ে মাটিতে চোখ রেখে চুপ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো, যেন ভেতরে ভেতরে নিজের বোকা কথার জন্য আফসোস করছে।
আর ইউভি? সে চুপ করে থাকার লোক না। আকাশের লজ্জার ভাব দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো। সেই হাসির শব্দে ডেকোরেটর ছেলেগুলোও চোরা দৃষ্টি বিনিময় করে একটু মুচকি হাসলো। আকাশের মাথায় যেন আরও গরম জল ঢেলে দিল সেই হাসি।
আকাশ লজ্জা আড়াল করতে গলা খাঁকারি দিয়ে তাড়াতাড়ি বিষয় ঘোরালো,
__” ঠিক আছে ঠিক আছে বাদ দাও এখন বনু যে কাজ দিছে সেটা কমপ্লিট করো।”
কথাটা বললেও তার কণ্ঠে নার্ভাসনেস ধরা পড়ে যাচ্ছিলো। হাত নাড়াচ্ছে এদিকে সেদিকে, যেন নিজের কথা গিলে ফেলতে চাইছে।
ইউভি তখনও থামেনি। ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে, ঠোঁট বাঁকিয়ে দুষ্টু এক হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
পুরো পরিবেশে তখন এক অদ্ভুত খুনসুটি মাখা আনন্দ ভর করেছে। একদিকে আকাশের লজ্জা, অন্যদিকে ইউভির টিপিক্যাল দুষ্টুমি, আর তার সাথে ঘরের চারদিকের আলো ঝলমলে সাজসজ্জা সব মিলে যেন এক চিরচেনা পারিবারিক খুশির চিত্র ফুটে উঠলো।
চৌধুরী বাড়িতেই রাতের খাবার শেষ করে কোন রকম ঘরোয়া জামা পরেই জায়ন আর তিয়াশা তাদের কালো রঙের ঝকঝকে মার্সিডিজে চেপে বনানীর বাসার দিকে রওনা দিলো। সারা পথ তিয়াশার মুখে এক অদ্ভুত দুষ্টু হাসি লেগে আছে, যেন বুকের ভেতর কোনো বিশাল গোপনীয়তা লুকিয়ে রেখেছে সে। অন্যদিকে জায়ন গাড়ি চালাতে চালাতে বারবার তিয়াশার দিকে তাকাচ্ছে কিছুটা অবাক, কিছুটা কৌতূহলী, আবার কিছুটা বিরক্তও, কারণ সে টের পাচ্ছে তিয়াশা কিছু একটা প্ল্যান করেছে কিন্তু মুখে কিছুই বলছে না।
বাসার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই জায়ন এর চোখ কপালে উঠল। সারা বাড়ি আলো, ফুল আর সাজসজ্জায় ঝলমল করছে। দেয়ালে ঝুলছে সোনালী আর নীল ফেয়ারি লাইট, টেবিলের ওপর সাজানো সুগন্ধি মোমবাতি, চারপাশে এক উৎসবের আবহ। এ দৃশ্য দেখে জায়ন হা হয়ে গেলো। অবিশ্বাসের চোখে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো
__” কি ব্যাপার জান ? বাসা এরকম সাজানো কেন ? কি করতে চাইছিস বউ ?”
তিয়াশা এক গাল খুনসুটি মাখা হাসি দিয়ে জায়ন এর হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো ভেতরের দিকে। তার চোখে মুখে সেই চিরচেনা আদুরে চাহনি, তবে আজ সেখানে একটু রহস্যও মিশে আছে। হেঁটে যেতে যেতে দুষ্টু ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
__” কোন কথা বলবে না, সোজা আমাদের রুমে যাবে আর রেডি হয়ে নিচে আসবে, কোন প্রশ্ন করবে না।”
জায়ন আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, ভ্রু কুঁচকে রাগ-অভিমান মেশানো গলায় কিছু প্রশ্নও ছুঁড়তে চাইছিল, কিন্তু তিয়াশা ওর পিঠে ঠেলা মেরে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিলো। অবশেষে কিছু না বলে অনিচ্ছায় মানতে হলো জায়নকে।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর, সময় তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো এক অপরূপ পুরুষ। ডার্ক ব্লু টাক্সেডো, চকচকে ব্র্যান্ডেড জুতো, হাতে দামী ঘড়ি, চুল সাজানো যেন রোজকার সেই নিখুঁত কার্ল, আর শরীর থেকে ভেসে আসছে মাদকতা ছড়ানো পারফিউমের ঘ্রাণ। প্রতিটা পদক্ষেপে যেন পুরো বাড়ি থমকে দাঁড়িয়েছে।
নিচে দাঁড়িয়ে থাকা তিয়াশা থমকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে এক অদ্ভুত আবেগ, মনে মনে ফিসফিস করছে,
__” পাপার ব্ল্যাড লাইন, দেখতে পাচ্ছো কত হ্যান্ডসাম তোমার পাপা।”
তিয়াশাও কম যায় না, নাইট ব্লু গাউনে সে আজ যেন একেবারে ফেয়ারী কুইন। তার লম্বা খোলা চুলে হালকা ঢেউ, ঠোঁটে মৃদু হাসি, চোখে ঝিলিক সব মিলিয়ে জায়নের নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসলো। নিচে নেমে মাত্র এক সেকেন্ডও দেরি করলো না, এক ঝটকায় তিয়াশাকে জড়িয়ে ধরে আবেগভরা গলায় বলে উঠলো,
__” জান ইউ লুক র্যাবিসিং, কি চায়ছিস জান আমি পাগল হয়ে যাই? তুই এত রোমান্টিক কবে হলি জান?”
তিয়াশা হেসে জায়নের হাত ছাড়াতে ছাড়াতে মিষ্টি দুষ্টুমিতে ভরা গলায় বললো,
__” আমার বর হলো রোমান্টিক কিং, তাহলে আমি কি কিছু তার থেকে শিখতে পারি না?”
জায়ন চোখ সরু করে আরও শক্ত করে তিয়াশার হাত ধরলো, বুকের সাথে টেনে নিয়ে মৃদু রাগ আর আদরে মিশ্রিত স্বরে বললো,
__” কোথায় যাচ্ছ বউ? রোমান্স করবো না?”
তিয়াশা কেমন যেন কিশোরী হাসিতে খিলখিল করে উঠলো। জোর করে জায়নের হাত ছাড়িয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চলে গেলো কিচেনের দিকে। কয়েক সেকেন্ড পর ফিরে এলো হাতে ছোট্ট একটা কেক, যার ওপর জ্বলছে একখানা ক্যান্ডেল। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে জায়নের সামনে কেকটা ধরতেই সে চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো,
__” হ্যাপী বার্থ ডে বর।”
জায়নের মুখে হা-বকা ভাব। বিস্ময়ে ডাগর চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
__” আজ আমার বার্থডে? আর আমি ই জানিনা?”
তিয়াশা নরম হাসি ছড়িয়ে দিলো, চোখে ভালোবাসার ঝিলিক, কণ্ঠে মাতৃত্ব আর সঙ্গিনীর মায়া মিশে বললো,
__” আমার বার্থডে মনে করার জন্য তুমি আছো। আর তোমার বার্থডে মনে করার জন্য আমি আছি বর।”
জায়নের বুক হঠাৎ ধক করে উঠলো। ভিতরে ভিতরে সে হাসছে, আবার আবেগে ভেসেও যাচ্ছে। মনে মনে বলছে,
__”এই মেয়েটা সত্যিই পাগল করে দেয় আমায়। আমার জীবনের সেরা পাওয়া তো সে নিজেই।”
তীব্র হাসি আর বেজে উঠা ধড়াধড় করার সুরে পুরো ঘরটা ভারি হয়ে নেমেছিল। বাতাসে কেকের মিষ্টি গন্ধ; মোমবাতির নরম আলো তিয়াশার মুখে জমে থাকা রহস্যময়তা আরও তুলে দিচ্ছিল। জায়ন দাঁড়িয়ে রয়ে গেল ততক্ষণে সারা শরীরে কৌতূহল আর আগ্রহ মিলে এক অদ্ভুত উত্তেজনা ভেসে উঠলো। তিয়াশার ছোট্ট কাঁধে হালকা ঝাপটা পড়ল, চোখে অপ্রকাশিত আনন্দ; আর ওর ওই একটুকু সংযমিত হাসিটা জায়নের বুকটা চোয়ালে চাপিয়ে দিল সবকিছু যেন ঠিক এখানে, এই মুহূর্তেই থমকে থাকে।
তারপর জায়নের ঠোঁট আনন্দভরা, এক মিষ্টি দুষ্টু হাসি দিয়ে ফোটে উঠল,
__” তাহলে আমায় তো স্পেশাল গিফ্ট ও তোমার দেওয়া দরকার জান ?”
তিয়াশা টেবিলে কেক রেখে, বুকে মাথা রাখে তার কণ্ঠে ভালোবাসা আর খেল্লোলের মিশেল, ফিসফিসে বলল,
__” সব পাবে হয়তো তোমার লাইফের বেস্ট গিফ্ট পাবে কিন্তু তার আগে কেক টা কাট করো ।”
__” আমার লাইফ এর বেস্ট গিফ্ট তো তুই জান ।”
__” এর থেকেও বড় গিফ্ট বর।”
জায়নের চোখে কৌতূহলের আগুন ফোটে উঠল মনে মনে ভাবলো, “বেস্ট গিফ্ট কী এমন কিছু যে তিয়াশা লুকিয়ে রেখেছে?”আর সেই সন্দেহই ঘরে একটা আনন্দের ভারসাম্য নিয়ে আসে। তিয়াশার হাত জোর করে টেনে নিল,
__” ১২ টা বেজে গেছে কেক টা তো কাটো ।”
কেক কাটার সেই মধুর তাগিদে তারা দু’জনে মিলে কেক কাটে। কেক খাওয়ানোর মধ্যেই জায়নের বুকটা কাঁপছে কোমলতা আর কৌতূহল একসঙ্গে মিশে যায় তবে এখনও যা আসছে তার কথা সে বুঝতে পারেনি। কেকের টুকরো ঠিকঠাক খাওয়ানোর পর তিয়াশা হেসে একটি মোচমোল বক্স হাতে ধরিয়ে দেয়,
__” এই নাও তোমার গিফ্ট ।”
জায়ন গিফ্ট বক্স টা হাতে নিয়ে গোমরা মুখ করে বলে উঠল ,
__” তুই বললি বেস্ট গিফ্ট , এইটা বেস্ট গিফ্ট এই বক্স?”
তিয়াশা হাসতে হাসতে জায়ন এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
__” আগে খুলে তো দেখো তারপর মুখের চেহারা এরকম করো ।”
জায়ন বিরক্ত মুখে গিফ্ট র্যাপ ছিঁড়ে যখন বক্স খুলল, হঠাৎই চোখের সামনে ভেসে উঠল এক জোড়া ছোট্ট, নিটোল বেবি সুস। মুহূর্তের ভেতরেই তার বুকটা কেমন করে উঠল, শ্বাস রুদ্ধ হয়ে গেল যেন হৃদস্পন্দন থেমে যাবে। হাতে ধরা বক্সটা থরথর করে কাঁপতে লাগল, আর তার বড় বড় চোখ বিস্ময়ে ভরে গেল।
ধীরে, অজান্তেই, কাঁপা কাঁপা গলায় সে তিয়াশার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
__” এ এটা কি জান ?”
তিয়াশা তখন নরম, শান্ত, কিন্তু আনন্দে কেঁপে ওঠা চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। বক্সটা আলতো করে জায়নের হাত থেকে নিয়ে টেবিলে রাখল। তারপর নিঃশব্দে, খুব যত্ন করে জায়নের হাত নিজের পেটে এনে রাখল। আর এক অশেষ খুশির আলোয় ভরা চোখে বলল,
__” তোমার ব্লাড লাইন এখন এখানে বর।”
মুহূর্তেই যেন জায়নের পুরো পৃথিবী বদলে গেল। সেই একটি বাক্য তার কানে পৌঁছাতেই চোখের কোনা ভিজে উঠল, আর অজান্তেই অশ্রু ঝরে পড়ল। তিয়াশা প্রথমে চমকে উঠল, বুকের ভেতর দুশ্চিন্তার কাঁপন নেমে এলো। তার মনে হচ্ছিল তবে কি উনি খুশি নন? কাঁপা কণ্ঠে, ভীত দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করল,
__” তুমি খুশি না বর?”
এরপরই জায়নের সব বাঁধ ভেঙে গেল। সে দু’হাত দিয়ে তিয়াশার হাত আঁকড়ে ধরল, হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল তার সামনে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রু ভিজিয়ে দিল তিয়াশার আঙুল। বুক কাঁপতে কাঁপতে সে কোমরে জড়িয়ে ধরল তিয়াশাকে, আর উন্মত্ত ভালোবাসায় তার পেটে বারবার চুমু খেতে খেতে বলল,
__” আমি এরকম খুশি আমার লাইফ এ কখনো হয়নি বউ।”
তিয়াশার বুকের ভার হঠাৎ যেন লাঘব হলো। যে ভয়টা একটু আগে তাকে গ্রাস করেছিল, সেটা মিলিয়ে গিয়ে জায়নের নিঃস্বার্থ উল্লাসে এক শান্ত দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। চোখ ভিজে উঠল তারও, কিন্তু সেই জল খুশির, প্রশান্তির।
ঠিক সেই সময় হঠাৎই জায়ন এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে উঠল। তিয়াশাকে কোলে তুলে নিল, আর ঘুরতে ঘুরতে যেন খুশির পাগল হয়ে গেল। চারদিক কাঁপিয়ে উল্লাসে চিৎকার করে উঠল,
__” জান জান জান তুই সত্যি আমায় আজ আমার লাইফের বেস্ট গিফ্ট দিয়েছিস, লাভ ইউ লাভ ইউ জান, লাভ ইউ সো মাচ, আমার ব্লাড লাইন, আমার ব্লাড লাইন আসবে জান।”
কিন্তু জায়নের চোখে তখনো সেই উন্মত্ত আনন্দ চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, বুকের ভেতর অঝোর ভালোবাসার ঢেউ।
তিয়াশা তখন হাসতে হাসতে তার গলায় জড়িয়ে ধরল। উচ্ছ্বাসে তার চুল এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মুখে শুধু মিষ্টি হাসি। সে মৃদু প্রতিবাদে বলল,
__” বর আমার মাথা ঘুরাচ্ছে, নামাও।”
খুশিতে উন্মত্ত হয়ে বারবার ঘোরাতে ঘোরাতে হঠাৎই জায়নের মাথায় চিন্তার ঝড় বয়ে গেল। তিয়াশা কি কষ্ট পাচ্ছে না তো? মুহূর্তেই তার মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল, চোখে ছুটে এল দুশ্চিন্তার ছাপ। তাড়াতাড়ি তাকে কোলে থেকে নামিয়ে এনে সোফায় আলতো করে বসিয়ে দিল। তাড়াহুড়ো করে কাঁপা গলায় বলে উঠল,
__” সরি জান সরি। কষ্ট হচ্ছে সোনা?”
সে কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই জায়নের দুই হাত যেন অস্থির হয়ে উঠল। তিয়াশার পেটে সযত্নে হাত রেখে এক অদ্ভুত মমতা আর শ্রদ্ধায় ভরা কণ্ঠে বলল,
__” সরি জানমাম্মা, সরি জানপাপা… আমি জানিনা তুমি কোন রূপে আমার কাছে আসবে , কিন্তু তোমার সুস্থতা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি।”
তার চোখে-মুখে তখন শুধুই এক বাবা হতে চলা মানুষের অস্থিরতা, আনন্দ আর এক অদ্ভুত ভয় যেন নিজের ভালোবাসার মানুষ আর তাদের আসন্ন সন্তানকে আগলে না রাখলে পৃথিবীটাই ভেঙে যাবে।
কোনো কিছু আর না ভেবেই পকেট থেকে ফোন বের করল। হাত কাঁপছে, তবু কণ্ঠ দৃঢ়। জেমসকে কল লাগাতেই রুদ্ধশ্বাস কণ্ঠে বলল,
__” জেমস, কালকে ঢাকার যত অনাথ আশ্রম আছে, সেই অনাথ আশ্রমের সব বাচ্চাদের হাতে তাদের জামা কাপড় আর খাবার পৌঁছে যাওয়া চাই।”
জেমসের জবাব শোনার জন্য এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করল না, সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দিল। যেন তার খুশি আর কৃতজ্ঞতা আজ পৃথিবীর সব বঞ্চিত শিশুর সঙ্গেও ভাগ করে নিতে চায়।
এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারল না। তিয়াশার দিকে ঝুঁকে পড়ল, তার গালে, চোখে, কপালে, ঠোঁটে অজস্র চুমু এঁকে দিল। সেই চুমুতে ছিল একসাথে খুশির উল্লাস, অপরাধবোধের ভার, আর অনন্ত ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি।
কণ্ঠ কাঁপতে কাঁপতে জায়ন বলল,
__” এই আমি আবরার জায়ন চৌধুরী আমার বউ, আমার বাচ্চার মা কে প্রমিজ করছি আজ থেকে আর কখনো আমি তাকে আঘাত করব না গায়ে হাত তুলব না। আমি প্রমিজ করছি নিজের রাগ কন্ট্রোল করব। আমি প্রমিজ করছি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এক ফোঁটা আঘাত আমি আমার পরিবারকে আসতে দেব না। বেস্ট থেকে বেস্ট দেওয়ার চেষ্টা করব শুধু মাত্র আমার ব্লাড লাইনের জন্য শুধু মাত্র আমার ব্লাড লাইনের জন্য জান, আর তোর জন্য জান ।”
তোমার ছোঁয়ায় আসক্ত আমি পর্ব ৭৪ (২)
এই অঙ্গীকারের প্রতিটি শব্দ যেন তিয়াশার হৃদয়ের গভীরে গিয়ে বাজল। তার বুক কেঁপে উঠল, চোখ জলে ভরে গেল। সেই জল ছিল না দুঃখের ছিল খুশির, ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষার শান্তি। সে নিঃশব্দে চোখ মুছে নিল, আর ভেজা চোখে তার বরের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসল।
এই মুহূর্তে যেন দু’জনার হাসি, কান্না, ভালোবাসা, অপরাধবোধ, প্রতিশ্রুতি সব মিলে এক হয়ে গিয়ে তৈরি করল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত।
