তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১২
নওরিন মুনতাহা হিয়া
রিসাের্টের বরাদ্দকৃত রুমে দৌড়ে ছুটে যায় মেঘ, তার সারা শরীর রাগে ঘৃণায় কষ্ট জ্বলে যাচ্ছে। মেঘ রুমের দরজা শব্দ করে বন্ধ করে দেয়, এরপর এগিয়ে যায় টেবিলের সাথে রাখা বিশাল আয়নার দিকে। আয়নার মধ্যে মেঘের প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে, মেঘ তার প্রতিবিম্বর দিকে তাকিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠে ___
এই আয়নার প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে তুই, কাকে দেখছিস মেঘ? নিজকে? না তুই এই বেহায়া, নিলর্জ্জ, ন্যাকা, মেয়েকে দেখছিস। যে নিজের জীবনের সাতটা বছর, এমন একজনকো ভালোবেসে কাটিয়ে দিয়েছে। যে তার পরিচয় অবধি যানে না। তুই কেনো সাত বছর ধরে আদ্রিয়ান রেদোয়ানকে ভালোবেসে গেলি মেঘ? কে হয় আদ্রিয়ান রেদোয়ান তোর? তোর স্বামী? যে তোকে কখন স্ত্রী পরিচয়ই দেয় নি? ওনি তো বিয়েটা মানে না, স্ত্রী হিসাবে তোকে কি মানবে? তবে তুই কেনো বিয়েটা মেনে, সাতটা বছর তার পরিচয়ে বাঁচতে গেলি? কেনো মেঘ? কবুল তো শুধু তুই বলছিস নি, ওনি ও বলেছেন। যদি আদ্রিয়ান রেদোয়ান বিয়ের নিয়ম রীতি, না মানে তবে তুই কেনো সব মানতে গেলি? সব দায় কি শুধু তোর একা মেঘ?
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“- আজ ছাদে নিজ চোখে, আদ্রিয়ান আর জিয়ার ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত দেখেছিস না তুই মেঘ? তবুও তুই কান্না করছিস কেনো মেঘ? কার জন্য কান্না করছিস? কেনো কান্না করছিস? তোর কি একবার ও ঘৃণা জন্মায় না তার প্রতি? আদ্রিয়ান রোদয়ানকে ঘৃণা কর তুই মেঘ। জিয়া আর আদ্রিয়ানকে আর কতটা কাছাকাছি দেখলে, তোর বিশ্বাস হবে যে আদ্রিয়ান তাকে ভালোবাসে? ঠিক কতটা? যদি আদ্রিয়ান আর জিয়াকে, একসাথে বিছানায় দেখিস তখন তোর শিক্ষা হবে? তুই কেনো বুঝিস না মেঘ, যে আদ্রিয়ান জিয়াকে ভালোবাসে তোকে না? কেনো বুঝিস না তুই বল কেনো?
“- আদ্রিয়ান আর তোর ডিভোর্সের আগে থেকেই হয়ত, জিয়া আর তার সম্পর্ক ছিল। তখন তো তোদের ডিভোর্স হয় নি, নিয়ম অনুসারে তুই আদ্রিয়ানের স্ত্রী ছিলি তখন? কোথায় তখন তো আদ্রিয়ান জিয়ার সাথো সম্পর্ক করার আগে, তোর কথা ভাবে নি। বাংলাদেশে ওনি বিয়ে করেছেন, তার একজন স্ত্রী রয়েছে কোথায় সেটা তো আদ্রিয়ান একবার ও মনে করে নি। সে যদি ডিভোর্সের আগেই, জিয়ার সাথে পরকীয়া করতে পারে। তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুললে পারে, তবে তুই কেনো মেঘ সাতটা বছর ওনার জন্য অপেক্ষা করলি? কার জন্য প্রতিনিয়ত কষ্ট পেলি? দিনের পর পর শুধু মাএ একটা ছবির দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিলি?
” তুই যখন আদ্রিয়ান রেদোয়ান ছবির দিকে তাকিয়ে, সারারাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছিস? তখন ওনি অন্য কারো শরীরে সুখ খোঁজার চেষ্টা করেছে? তোর ভালোবাসার কোন মূল্য নাই, ওই মানুষটার কাছে। ওনি শুধু জিয়াকো ভালোবাসে, তার শরীরের ছোঁয়ায় ওনি সুখ ভালোবাসা খুঁজেন। মেঘ বলে কোন নারীর অস্তিত্ব তার জীবনে নেই? তুই এই কথাটা কেনো বুঝিস না মেঘ? তুই কেনো এতো বোকা মেঘ? যেখানে অন্য মেয়েটা পুরুষ মানুষের, চেহারা দেখে, তার চাকরি টাকা পয়সা দেখে প্রেমে পড়ে। সেখানে তুই কেনো, এক অপরিচিত ব্যক্তিকে ভালোবাসতে গেলি? শুধু মাএ দেয়ালে ঝুলন্ত, এক ছবি দেখে তার জন্য মনের মধ্যে অনুভূতির জন্ম দিতে গেলি মেঘ কেনো?
” তুই ভীষণ স্বার্থপর মেঘ? তুই সারাজীবন শুধু আদ্রিয়ান রেদোয়ানকে ভালোবেসে গেলি? তার জন্য এখন তোর কেরিয়ার ধ্বংস করে, সারাক্ষণ তুই তার কথা ভেবে যাচ্ছিস? কিন্তু তোর ডক্টর হওয়া তোর বাবার সপ্ন ছিল মেঘ, ওই মৃত ব্যক্তি যিনি কবরে শুয়ে আছেন তার ইচ্ছা ছিল যে তুই বড় হয়ে ডক্টর হবি? যে মানুষটা তার মৃত্যুর আগ অবধি তোকে আগলে রেখেছে তার জন্য তুই কি করছিল? যে বড় আব্বু, তোকে সাতটা বছর বাবার ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া মমতা দিয়ে নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসেছিল৷ তার ভালোবাসার প্রতিদা৷ স্বরুপ কি দিলি তুই? যদি আজ থেকে আদ্রিয়ান রেদোয়ানকে ঘৃণা করতে না পারিস, তবে তোর কেরিয়ার, তোর জীবন সব ধ্বংস হয়ে যাবে। ওই আদ্রিয়ান রেদোয়ান নামক, মানুষটার জন্য তোর বাবার সপ্ন, তোর বড় আব্বুর ভালোবাসার কথা তুই ভুলে যেতে পারিস না মেঘ?
মেঘ তার হাতে থাকা, মেহেদী দিয়ে লেখা আদ্রিয়ানের নাম লেখা দেখে। মেঘের রাত দিগুণ বেড়ে যায়, মেঘ তার পাশে থাকা টেবিল থেকে ছুরি বের করে৷ তার হাতের তালুয়, দশ থেকে বারো বার আঘাত করে৷ মেঘের হাত থেকে রক্ত, নদীর স্রোতের মতো প্রবাহিত হচ্ছে। রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে, মাটিতে। কিন্তু এইটা নিয়ে, মেঘের কোনো কষ্ট নাই। বরং সে পাগলের মতো, শব্দ করে হাসতে থাকে৷
রক্তের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা যখন, হাতের শিরা বেয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়ে। তখন মেঘের সমস্ত শরীর অবশ হয়ে যায়, ছুরির আঘাতে তার হাতের চামড়া উঠে ভিতরের থকথকে মাংস বেরিয়ে পড়ে। ঠিক তখন মেঘ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, হাউমাউ করে কাঁদতে লাগে। মেঘ চিৎকার করে বলে উঠে __
জন্মের তোর মা মারা গেছে, চৌদ্দ বছর বয়সে বাবা ও মারা গেছে। যখন বিয়ে হয়, তখন তোর স্বামী ও তোকে ছেড়ে চলে যায়। এতোকিছুর পর ও তোর কেনো শিক্ষা হয়নি মেঘ? তুই কেনো বুঝার চেষ্টা করিস না যে, তোর জীবনে সুখ নাই, তোকে কেউ ভালোবাসবে, তোর কেউ যত্ন করবে। এমন ভাগ্য তোর না। তবুও তুই কেনো আদ্রিয়ানকে নিয়ে সপ্ন দেখতে গেলি মেঘ কেনো? কেনো? সব দোষ তোর মেঘ? তোর? তুই কেনো এত বোকা মেঘ কেনো?
“- যতটা ভালোবেসে, সাতটা বছর আদ্রিয়ান রেদোয়ানের জন্য অপেক্ষা করেছি। এখন ঠিক ততটা ঘৃণা করব, আদ্রিয়ানক নামক মানুষের অস্বস্তি জীবন থেকে মুছে দিব আমি। আদ্রিয়ান রেদোয়ান কখন যানবে না, যে যে মেঘকে সে ছাএী হিসাবে পড়িয়েছে৷ সেই তার তালাক দেওয়া বউ। কখন জানবে না। ঘৃণা করি, আদ্রিযান রেদোয়ানাকে।আজ, এই মুহূর্ত থেকে আদ্রিয়ানক নামক মানুষের থেকে, নিজের মনকে মুক্ত করলাম আমি।
ছাদে যখন জিয়া, আদ্রিয়ানোর ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হবে৷ তখন আদ্রিয়ান তাকে এক ঝটকায়, তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। জিয়া কিছু বলার আগেই, তার গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আদ্রিয়ান। বাম গালে দেয় তিনটা থাপ্পড়, আর ডান গালে দেয় চারটা। প্রায় পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে, জিয়ার গালে গুণে গুণ সাতটা থাপ্পড় বসে। তাও আবার আদ্রিয়ানের শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে, জিয়ার গালে থাপ্পড় দিয়েছিল।
আদ্রিয়ানের হাতে থাপ্পড় খেয়ে, জিয়ার গাল লাল হয়ে গেছে। তার কান সহ সম্পূর্ণ শরীর অবশ হয়ে গেছে। পুরুষ মানুষের দেহের সকল, শক্তি দিয়ে যদি থাপ্পড় দেয় তবে এমন অবস্থায় হওয়ার কথা। জিয়া দুই – পা পিছিয়ে যায়, আদ্রিয়ান তার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে থাকে। আদ্রিয়ানের সারা শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে, জিয়ার তাকে স্পর্শ কথা মনে হতেই রাগের পরিমাণ দিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। জিয়া তখন কথার মধ্যে, হঠাৎ করে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আদ্রিয়ান তাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সর্বত্তম চেষ্টা করে, জিয়াকে নিষেধ ও করে। কিন্তু জিয়া শুনে না, মেঘ দূরে দাঁড়িয়ে থাকায় তখন সে আদ্রিয়ানের নিষেধাজ্ঞা শুনতে পায় না।
আদ্রিয়ান জিয়ার অসভ্যতা, আর উগ্র আচরণ সয্য করেছে, শুধু মাএ জিয়ার বাবার জন্য। জিয়ার বাবার নাম ইরফান খান, যিনি পেশায় একজন ডক্টর। আদ্রিয়ান বর্তমানে যে হাসপাতালে ডক্টর হিসাবে জব করে। ইরফান সাহেব ওই, হাসপাতালের মালিক। আদ্রিয়ানের বিনয়ী ব্যবহার, তার ডক্টরি পেশার প্রতি সম্মান সব দেখে ইরফান সাহেব মুগ্ধ হয়। আদ্রিয়ান যখন প্রথমবার ডক্টর হিসাবে, হাসপাতালে জয়েন করেন। তখন ইরফান সাহেব ছিলেন তার সিনিয়র ডক্টর।
প্রায় দেড় বছর আদ্রিয়ান ইরফান সাহেবের আন্ডারে কাজ করেছেন, বিভিন্ন অপরারেশন, সার্জারি সহ সকল বিষয় ওনার দক্ষতা তাকে মুগ্ধ করেছে। আদ্রিয়ান তার ডক্টরি ক্যারিয়ার, ইরফানের সাহেবের অবদান ছিল অসামান্য। আদ্রিয়ান ইরফান সাহেবকে ভালোবেসে, গুরুর আসনে বসিয়েছে।
আদ্রিয়ান যখন ইন্টনিং শেষ করে, ডক্টর হয়েছিল। তখন কার জীবনে আসে, ইরফান সাহেবের বড় মেয়ে জিয়া৷ জিয়া তখন ইন্টার্ন হিসাবে জয়েন করেছিল হাসপাতালে, এবং তার সিনিয়র ডক্টর ছিল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান ডক্টর হওয়ার আগে থেকেই, নারী জাতির থেকে দূরে থাকত। তবে জিয়া তার স্যারের মেয়ে ছিল, আর তার ছাএী তাই সে জিয়ার সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলত। যদিও তা কাজ রিলেটেড বা, জিয়ার পড়াশোনার বিষয়ে৷ শুরু থেকেই জিয়ার প্রতি, তার কোনো ধরণের অনুভূতি ছিল না তার।
কিন্তু হাসপাতালে ইন্টানিং করার, সময় থেকে জিয়া আদ্রিয়াকে পছন্দ করত। আদ্রিয়েন কথাবার্তা, তার বক্তিত্ব, তার ব্যবহার জিয়াকে মুগ্ধ করে। ধীরে ধীরে জিয়া আদ্রিয়ানের প্রেমে পড়ে যায়, তাকে ভালোবেসে ফেলে। জিয়া বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে আদ্রিয়ানের কাছে, আসার চেষ্টা করত। তার ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাইত। কিন্তু আদ্রিয়ান সবসময় জিয়ার থেকে দূরে থাকত, তার ভালোবাসা নামক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইত৷
জিয়া যখন ইন্টানিং শেষ করে, ডক্টর হয়ে হাসপাতালে জয়েন করে। তখন থেকে তার অত্যাচার দিগুণ বেড়ে যায়, সে হুটহাট করে আদ্রিয়ানের কেবিন চলে আসত। তাকে জড়িয়ে ধরত, আদ্রিয়ান তাকে হাজার বার নিষেধ করেছে।কিন্তু সে শুনে নি, জিয়ার এমন অত্যাচারে আদ্রিয়ান বিরক্ত হতো। কিন্তু সে ইরফান সাহেবকে, জিয়ার কথা জানায় নি। ওনি হয়ত মেয়ের এমন বেয়াদবির কথা শুনে কষ্ট পাবেন। আর জিয়ার বয়স কম, এই বয়সের মেয়েরা সাধারণ ভালোবাসা নামক পাগলামি একটু করেই থাকে __.
জিয়ার সকল বেয়াদবি, আদ্রিয়ান সয্য করে নিয়েছে। কিন্তু আজ সব ধৈর্যর সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে, আদ্রিয়ানের। জিয়া আর আদ্রিয়ান, এতোখন হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলছিল।ইরফান সাহেব এখন হাসপাতালে, খুব বেশি উপস্থিত থাকেন না। যার জন্য হাসপাতালের যাবতীয় কাজ, জিয়া আর আদ্রিয়ানকে দেখতে হয়। জিয়া আর আদ্রিযান যখন কথা বলা শেষ করে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য নিচে যাবে। তখন জিয়া হঠাৎ করে আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে, খুব শক্ত করে __.
আদ্রিয়ান জিয়ার অন্য হাত ধরে, তাকে নিজ থেকে দূরে করার চেষ্টা করে। কিন্তু জিয়া জেদ করে, আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। জিয়া এর আগেও, আদ্রিয়ানাকে বহুবার জড়িয়ে ধরেছে। তাই এইবার যখন জিয়া জড়িয়ে ধরে, তখন আদ্রিযান তাকে নিষেধ করে তবে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় না।
আদ্রিয়ানাকে শান্ত থাকতে দেখে, জিয়া দুঃসাহসি এক কাজ করে ফেলে। সে আদ্রিয়ানকে ছেড়ে দিয়ে, তার মুখে, কপাল, গালে খুব দ্রুত কিস করতে থাকে। ঘটনা এত দ্রুত আর আকস্মিক ঘটে, যে আদ্রিয়ান কিছু সময়ের জন্য অবাক হয়ে যায়। জিয়া এমন কিছু করবে, তা আদ্রিয়ান কল্পনা অবধি করতে পারে নি। কিন্তু যখন জিয়া তার ঠোঁটে কিস করার, উদ্দেশ্য তার কাছে এগিয়ে যায়। তখনই তাকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে তার গালে গুণে গুণ সাতটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
আদ্রিয়ানের পুরুষালি হাতের, সাতটা থাপ্পড় খেয়ে। জিয়ার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে, তবে তার রাগ হয় ভীষণ। জিয়া বলে __
“- আদ্রিয়ান __.
“- চিকৎকার করবে জিয়া। সাতটা থাপ্পড় খেয়ে, কি তোমার শিক্ষা হয়নি। আরো খেতে চাও?
“- তুমি কোন সাহসে আমার গালে, সাতটা থাপ্পড় দিলে আদ্রিয়ান?
“- যে সাহসে তুমি আমাকে স্পর্শ করেছ, ওই সাহসে। আমাকে কিস করা সাহস কে দিয়েছে তোমাকে?
“- আমেরিকায় হাগ করা, কিস করা নরমাল একটা বিষয়। তুমি আমার বন্ধু হও, তোমাকে আমি কিস করতেই পারি। এর জন্য কি তুমি আমাকে থাপ্পড় মারবে?
“- অবশ্যই মারব। আমেরিকায় কি সাধারণ বিষয়, তা জানার কোনো আগ্রহ নেই আমার। কিন্তু আমার শরীর বিনা অনুমতিতে স্পর্শ করা, আমি একদম পছন্দ করি না। তোমাকে আর আগেও, আমি নিষেধ করেছি সে আমাকে টার্চ করবে না। কিন্তু তুমি শুনো নি, আজ তো তুমি সব সীমানা অতিক্রম করে ফেলছ জিয়া। ভবিষ্যতে যদি এমন, সাহস দেখানোর চেষ্টা কর। তবে তোমার গালে এর চেয়ে শত গুণ, জোড়ে যদি থাপ্পড় না বসায় তবে আমার নাম আদ্রিয়ান রেদোয়ান না মাইন্ড ইট __.
আদ্রিয়ান কথাটা বলে, ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে৷ বড় বড় পা ফেলে, তার রুমে চলে যায়। জিয়া পরে কতোখন ছাদে অবস্থান করেছে, তা আদ্রিযান যানে না। আর জানার আগ্রহ তাই নাই।
সকাল প্রায় নয়টা। আজ আবিহা আর কারানের বিয়ের অনুষ্ঠান। তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে আজ, দুইটি দেহ, আর আত্মার মিলন হবে। বিয়ে নামক এক পবিত্র, সম্পর্কে তারা আবদ্ধ হবে। কাল রাতের ছাদে ঘটে যাওয়া ঘটনা কথা, মেঘ, আদ্রিয়ান আর জিয়া ছাড়া অন্য কেউ যানে না। বাড়ির সকলে তখন নিচে ড্রয়িং রুমে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিল।
কাল বিকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, যার কারণে রিসোর্টের খোলা মাঠে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান না করে। ড্রয়িং রুমে ঘরোয়া পরিবেশে, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতি খুব বেশি ছিল না কাল, যারা এসেছিল তারা বেশিরভাগ কারানের পরিবারের পরিচিত লোক ছিল। আর আবিহার পরিবার আমেরিকায় এসেছে, মাএ ছয়মাস আগে যার জন্য এখানে তাদের খুব বেশি পরিচিত মানুষজন নেই।
কাল ছাদ থেকে ফিরে এসে, আদ্রিয়ান আর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যায় নাই৷ সারারাত রুম থেকে বের হয় নি। ফারহানা বেগম তার রুমের দরজায় এসে, অনেক বার ডাক দিয়েছিল। কিন্তু আদ্রিয়ান অসুস্থতার মিথ্যা অযুহাত দিয়ে, তাকে চলে যেতে বলে। ছাদে জিয়ার এমন অভদ্রতা, আর বেয়াদবির পর আদ্রিয়ানের ভীষণ রাগ হচ্ছে জিয়ার উপর। সারারাত জেগে ছিল সে, যখনই ঘুমানোর চেষ্টা করেছে। তখনই জিয়ার করা নোংরা স্পর্শ, তার ঠোঁটর ছোঁয়া কথা মনে পড়েছে। আদ্রিয়ানের শরীরে রক্ত রাগে, ঘৃণায় টগবগ করে গরম হয়ে উঠেছে।
ছাদ থেকে ফিরে আসার পর, ওয়াশরুমে গিয়ে গুণে গুণে পনেরো বার গোসল করেছে আদ্রিয়ান। শরীরের যে স্থানে জিয়ার ঠোঁট স্পর্শ করেছে, সব জায়গায় সাবন দিয়ে বহুবার পরিস্কার করেছে। অতিরিক্ত সাবান ব্যবহার করার কারণে, আদ্রিয়ানের মুখে, ঠোঁটে, বুকে রক্ত জমার মতো লাল হয়ে গেছে। তবু ও আদ্রিয়ানের রাগ এক বিন্দু পরিমাণ ও শান্ত হয়নি। জিয়ার নাপাক ছোঁয়ার কথা মনে পড়তেই, তার সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলে উঠে। আদ্রিয়ান ভুল করেছে কাল, জিয়ার গালে সাতটা নয় বরং এর দিগুণ থাপ্পড় বসিয়ে দেওয়া উচিত ছিল।
সূর্য়ের আলোর ঝলমলে রোদে, ঘুম ভেঙে যায় মেঘের। কাল রাতে মেঝেতে শুয়ে, ঘুমিয়ে পড়েছিল। সারারাত হাত থেকে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে। রক্তে মেঝে সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেছে। মেঘ যে অজ্ঞান হয়নি, এইটাই তার ভাগ্য। মেঘ মেঝে থেকে উঠার চেষ্টা করে, ব্যর্থ হয়। হাত থেকে অতিরিক্ত রক্ত পড়ার কারণে, তার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে সমস্ত দেহ অবশ। মেঘ প্রায় তিনবার চেষ্টার পর, বিছানা ধরে ধরে একটু উঠে দাঁড়ায়৷
“- দেয়ালে ভর দিয়ে, ওয়াশরুমে যায়। মুখে পানি দেয়, কাল রাতে কান্নার ফলে চোখ লাল হয়ে গেছে। এরপর রুমে ফিরে আসে, আলমারি থেকে ঔষধের বাক্স বের করে মলম লাগায়। মেঘের মুখ – চোখ ভীষণ চুপসে গেছে। ব্যাথার ওষুধ খেয়ে নেয়। ঘরের সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে চুড়ে গেছে, যা মেঘ ধীরে ধীরে ঠিক করে।
সময় প্রায় দশটা। আদ্রিয়ান তার রুম থেকে বের হয়, কারানের রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্য। বিয়ের অনুষ্ঠানে কারান কি পড়বে তা জানার জন্য। আদ্রিয়ান যখন দরজা খুলে বের হয়, তখন মেঘ ও বের হয়। তাদের রুম পাশাপাশি থাকায়, আদ্রিয়ান মেঘকে দেখে। তবে মেঘ তাকে দেখে না, খেয়াল ও করে না।
মেঘের সম্পূর্ণ মনোযোগ তার, হাতে থাকা ফোনের দিকে। আদ্রিয়ান তার সামনে দিয়ে হেঁটে যায়, মেঘ তাকায না। এইবার আর আদ্রিয়ানকে দেখে, তার চোখে পানি জন্মায় না। তার পা স্থির হয়ে যায় না, সে রুমের দরজা খুলে আবার রুমে চলে যায় না। মেঘ সাধারণ ভাবে, আদ্রিযানের পাশ দিয়ে হেঁটে যায়। যেনো আদ্রিয়ান নয়, এইটা কোনো সাধারণ মানুষ তার কাছে। আদ্রিয়ান ও মেঘের সাথে কথা বলে না, যদিও একবার মনে হয়েছিল মেঘ তাকে ইগনোর করছে। কিন্তু মেঘের ইগনোর করায়, আদ্রিয়ানের কি যায় আসে।
আদ্রিয়ান মেঘের পাশ কাটিয়ে চলে যায়, কারানের রুমের উদ্দেশ্য। মেঘ ও তার হাতে থাকা, ফোন দেখতে থাকে। আর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়, নিচে সকল কাজিনরা নাচের অনুশীলন করছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ করবে বলে। তবে মেঘকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে দেখে, তারা থমকে যায়। মেহেদী অনুষ্ঠানের, মদ খাওয়ার বিষয়টা নিয়ে সবাই অনেক অনুতপ্ত।
মেঘকে দেখে তারা দূরে সরে যায়, মেঘ সকলের এমন ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে যায়। মেঘ বলে __
“- কি হয়েছে তোমরা? আমাকে দেখে দূরে সরে গেলে কেনো? নাচের অনুশীলন করবে না?
মেঘ কাজিনদের কাছে এগিয়ে যায়, এরপর এই কথা বলে। মেঘকে নিজ থেকে, কথা বলতে দেখে। সকলে বলে __
“- সরি মেঘ, ওইদিন রাতে তোমাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর জন্য। সত্যি আমরা সরি __.
মেঘ এখন বুঝতে পারে, সকলে তার থেকে কেনো দূরে চলে গেছে। মেঘ হাসি মুখে বলে __
“- এখানে সরি বলার কি আছে? এক বন্ধু অন্য বন্ধুর সাথে মজা করতেই পারে।
“- সত্যি মেঘ তুমি আমাদের মাফ করে দিয়েছ?
“- হুম অবশ্যই। আচ্ছা আগের ঘটনা বাদ দাও। এখন বলো তোমরা বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য কি নাচের অনুশীলন করছিলে?
“- মেঘ তুমি ও কি নাচ করবে আমাদের সাথে?
“- হুম অবশ্যই করব। আমার প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে বলে কথা।
তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১১
মেঘ আর কাজিনরা নাচের অনুশীলন করে। এরপর বিয়ের অনুষ্ঠানে তারা কি কি করবে, সবকিছুর পরিকল্পনা করে। মেঘের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি আসে, যা সে সবাইকে বলে। মেঘের বুদ্ধি শুনে, সকলে রাজি হয়। প্রতৈকে মেঘের পরিকল্পনা শুনে হাসে, সকলের সাথে মেঘ ও খিলখিল করে হেসে উঠে। আজ কতদিন পর, মেঘে হাসছো প্রাণ খুলে আনন্দ করছে। মেঘ এখন সকল অতীত ভুলে, শুধু তার কেরিয়ার, আর খুশির উপর মনোযোগ দিবে।
