তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১৩
নওরিন মুনতাহা হিয়া
আমেরিকার এক শহরের বরাদ্দকৃত, এক রিসোর্টে বিয়ে হচ্ছে দুই নব দম্পতির। একজনের নাম আবিহা, আর অন্যজন কারান। বিয়ের সম্পর্ক সবচেয়ে পবিত্র আর মধুর সম্পর্ক। যার দ্বারা দুইজন নবদম্পতি, তাদের নতুন জীবন শুরু করে। সারাজীবন একে অন্যর পাশে, থাকার প্রতিজ্ঞা করে। সুখে, দুঃখে, জীবনের প্রতিটা ক্ষেএে, তারা ছায়া হয়ে একে অন্যর পাশে থাকে।
সময় প্রায় দুপুর ২: ০০। রিসোর্টের এক রুমে সাদা শুভ্র রঙের, শাড়ি পড়ে মাথায় অবধি ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আবিহা। তার গলায় সাদা হীরের হার, কানে সবুজ আর গোলাপি রঙের ইয়ারিং, হাতে ডায়মন্ডের রিং। সারা শরীরে হীরা আর মুক্তার গয়না থাকলে, তার নাকে রয়েছে স্বর্ণর নথ। সাধারণ সাজসজ্জায় আবিহাকে, ভীষণ সুন্দর লাগছে। আবিহার ফর্সা মুখে, লজ্জার রক্তিম আভা ফুটে উঠেছে, আর তার চোখে রয়েছে শত – খানিক সপ্ন। আজ তার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূর্চনা হতে যাচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
অপরপক্ষে মেঘ তার রুমের, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে, আজ সকলে সাদা রঙের শাড়ি বা জামাকাপড় পড়বে। আমেরিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে, প্রায় সকলে সাদা রঙের ড্রেস পড়ে থাকে। যার জন্য, এই বিয়ের অনুষ্ঠানের সকলের ড্রেসিং কোড সাদা ঠিক করা হয়েছে। মেঘ সাদা রঙের এক গোল রাউন্ডের জামা পড়েছে, তার মধ্যে হালকা সোনালী রঙের পুঁতি দিয়ে কাজ করা। আজ সে শাড়ি পড়বে না, কারণ বিয়ের অনুষ্ঠানে তার অনেক কাজ। সকালে কাজিনদের সাথে মিলে, যে দুষ্ট পরিকল্পনা করছে তা সফল করতে হবে।
তাছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানে, মেঘ আজ ডান্স করবে। যদি শাড়ির মধ্যে, পা আটকে পড়ে যায়। বা ভুল করে সকলের সামনে, তার শাড়ির কুঁচি খুলে যায় তবে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মেঘ তাই কোনো প্রকার রিস্ক নেয় না, সে শাড়ি পড়া বাদ দিয়ে সাধারণ জামা পড়ে নেয়। মেঘ তার হাতে পড়ে লাল কাঁচের চুড়ি, পায়ে এক জোড়া রূপার নুপুর পড়ে। যা তার মৃত মায়ের, শেষ সৃতি। মেঘ সাধারণ সাজসজ্জা নিজেকে, মানানসই সাজায়। এরপর ঠোঁটের কোণে, এক মিষ্টি হাসি বজায় রাখে। মেঘ রেডি হয়ে, আবিহার রুমে যায়। সকালে নাচের অনুশীলন শেষে, একবার আবিহার রুমে গিয়েছিল। এরপর আর যাওয়া হয় নি। আবিহাকে বউ সাজে দেখার ভীষণ আগ্রহ হলো, মেঘের।
মেঘ আবিহার রুমে গিয়ে দেখে, আবিহা মাথা নিচুঁ করে বিছানায় বসে আছে। আত্মীয় স্বজন, সকলে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, মূলত তারা নতুন বউকে দেখছে। আর কারানের বাড়ির লোকজন যেহেতু, আগে থেকেই এই রিসোর্টে অবস্থান করছে৷ তাই অনেক মানুষ হয়েছে। মেঘ সকলের ভিড় উপেক্ষা করে, আবিহার কাছে যায়। বিছানার পাশে বসে, আবিহাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।
নববধূ সাজে আজ আবিহাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আবিহা মেঘকে দেখে, বলে __
“- মেঘ তুই এতোখন কোথায় ছিলি?
“- রুমে ছিলাম। তোর বিয়ের জন্য তৈরি হচ্ছিলাম __.
মেঘ মিষ্টি হাসি দিয়ে, কথাটা বলে উঠে। আজ কতদিন পর, মেঘের মুখে সেই চিরচেনা হাসি দেখছে আবিহা। বাংলাদেশে থাকতে, যখন মেঘ আর সে একই ফ্লাটে থাকত৷ তখন তারা একসাথে কত মজা করত, বাহিরে খাবার খেতে যেত, ছুটির দিন রুমে বসে টিভি দেখত। মেঘ তখন সবসময় হাসি খুশি থাকত। কিন্তু আমেরিকায় আসার পর থেকে, মেঘ কেমন যানি নীরব আর মনমরা হয়ে গিয়েছিল।
আবিহা মনে করেছিল মেঘ হয়ত, তার পরিবার বা দেশ ছেড়ে নতুন জায়গায় এসেছে। যার জন্য তার মন খারাপ, কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। মেঘের পরিবার বলতে সে, জামান তালুকদার, আর শার্লিন বেগম, সৃষ্টি এদের জানত। যদিও মেঘ তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে, মেঘ খুব একটা কথা বলেনি। তবুও আবিহার মনে হতো, মেঘের জীবনে হয়ত কোনো কষ্ট আছে৷ যার জন্য মেঘ সবসময় লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করত, কষ্ট পেতো।
মেঘকে আজ হাসিখুশি দেখে, আবিহা শান্তি পায়। হঠাৎ নিচে মানুষের হড্ড গোল শুনা যায়, সকলে উচ্ছাসিত কণ্ঠে বলে উঠে __
“- বর এসেছে, বর এসেছে। আবিহা আপুর বর এসেছে __.
বর মানে কারান এসেছে। যদিও কারান আর আবিহার বিয়ে একই রিসোর্টে হচ্ছে। তবে কারানের মা ফারহানা বেগম বলেছে, কারান আজ তার বাড়ি থেকে বর সেজে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসবে। কিন্তু আত্মীয় স্বজন আর বাসায় যায় নি, তারা রিসোর্টে থাকে। যেহেতু এখানে বিয়ে হবে, কারান আর আদ্রিয়ান সকাল এগারোটার দিকে তাদের বাসায় চলে যায়। কারানের পরিবারের নিয়মন অনুসারে বর, তার নিজ বাসা থেকে গাড়ি করে বের হয় বউ আনতে। যেহেতু পারিবারিক নিয়ম, আর ফারহানা বেগমের আদেশ তাই আর কেউ মানা করেনি _.
“বর এসেছে ” কথাটা শুনে আবিহার ঘরে থাকা, আত্মীয় স্বজন সকলে নিচে চলে যায়। ঘর এখন সম্পূর্ণ ফাঁকা, মেঘ আর আবিহা ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি উপস্থিত নাই। আবিহা মেঘকে কিছু বলার উদ্দেশ্য তার দিকে তাকায়, হঠাৎ আবিহার চোখ যায় মেঘের হাতে কাটা স্থানের দিকে। যেখানো বেন্ডেজ করা, আবিহা বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠে __
“- মেঘ তোর হাতে কি হয়েছে? বেন্ডেজ করা কেনো?
মেঘ তার হাতের দিকে তাকায়, কালকে রাতের ঘটনার কথা মেঘের মনে পড়ে৷ সাথে সাথে তার চোখে – মুখে থাকা, হাসি বিলীন হয়ে যায়। মেঘ সত্যি কথা বলতে পারবে না আবিহাকে, তাই মিথ্যা অযুহাত দিয়ে বলে উঠে __
“- কাল রাতে হঠাৎ করে, ওয়াশরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। ওয়াশরুমের দরজার চিপায়, হাত চলে যায় জন্য সামান্য একটু কেটে গিয়েছে __.
আবিহা মেঘের কেটে যাওয়া হাত, আলতো হাতে ধরে বলে __
“- তোর নিশ্চয়ই অনেক ব্যাথা লেগেছে মেঘ?
শরীরের ব্যাথা সকলে দেখতে পায়, কিন্তু মনের ক্ষত না৷ মেঘের মনে যে ব্যাথায়, প্রতিনিয়ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা শুধু মেঘ অনুভব করে। মেঘ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠে __
“- কিছু কিছু আঘাত, সবসময় কষ্ট আর ব্যাথা দেয় না। জীবনে আঘাত পাওয়া, খুব জরুরি। যখন কষ্ট, দুঃখে, ব্যাথায় মানুষের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। মনের সকল বাঁধা বিপত্তির সাথে একাই লড়াই করে, আবার একাই নতুন জীবন শুরু করে __.
মেঘের কথা আবিহা বুঝতে পারে না, তার বুঝার কথা ও না৷ আবিহা শুধু মেঘকে সান্তনা দেয়, যাতে সে তার মনে কোনো দুঃখ, কষ্ট লুকিয়ে না রাখে৷ যদি কোনো কষ্ট থাকে, তবে যেনো তার সাথে শেয়ার করে৷ কিন্তু মেঘ মুখে ফুটে কিছুই বলে না, সে মিষ্টি হাসি দিয়ে বুঝায় তার মনে কোনো কষ্ট নাই।
মেঘ আর আবিহার কথার মাঝে নিচ থেকে, সকল কাজিনরা মেঘকে ডাকতে থাকে৷ বর এসেছে, মেঘকে যেতে হবে, সকালে যা পরিকল্পনা করেছে তা সফল করতে হবে। মেঘ আবিহার রুম থেকে বের হয়ে, নিচে চলে যায়।
রিসোর্টের গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কারান আর আদ্রিয়ান সহ আরো বন্ধু বান্ধব। আবিহার মা তৃপ্তি বেগম, তাদের গাড়ি থেকে মিষ্টি আর আংটি দিয়ে নামায়। কারান আর আদ্রিয়ান একই গাড়িতে রয়েছে, তারা একসাথে নামে। কারান গাড়ি থেকে নেমে, গেইট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে যাবে৷ তখন আবিহার কাজিনরা তাদের আঁটকে দেয় __
“- আরে কারান ভাই কোথায় যাচ্ছেন?
কারান যেহেতু কাজিনদের আগে থেকেই চিনে, আর তাদের সাথে সে যথেষ্ট ফ্রি। তাই কারান বলে __
“- বিয়ে করতে এসেছি, বউয়ের কাছে যাচ্ছি _.
কারান বেহায়ার মত বলে উঠে কথাটা, কাজনিরা সকলে হেসে উঠে। কাজিনরা বলে __
“- বউয়ের কাছে অবশ্যই যাবেন। কিন্তু তার আগে, পকেট থেকে সামান্য পাঁচ লাখ টাকা বের করে দিবেন __.
“- পাঁচ লাখ টাকা? আর পাঁচ লাখ টাকাকে সামান্য বলত তোমরা?
“- জি কারান ভাই, অতি সামান্য টাকা৷ পাঁচ লাখ টাকার চেয়ে, এক টাকা কম হলে ও এই গেইট খুলা হবে না। না আপনি বিয়ের আসরে যেতে পারবেন __.
“- পাঁচ লাখ টাকায়, কতটা শূন্য থাকে তোমরা তা যানো? এতো টাকা আমি দিতে পারব না _.
“- তবে আজ আপনার বিয়ে করা ও হবে না কারান ভাইয়া __ সকলের ভিড়ে পিছন থেকে, একজন কথাটা বলে উঠে। সব কাজিনরা সামনে থেকে সরে যায়, মেঘ পিছন থেকে বের হয়ে আসে। কারান মেঘকে দেখে অবাক হয়ে বলে __
“- মেঘ তুমি ও?
“- আমি ও মানে? আজ আমার বান্ধবীর বিয়ে, আর আমি গেইট ধরব না? তাড়াতাড়ি পাঁচ লাখ টাকা দেন, না হলে কিন্তু আপনার আজ বিয়ে করা হবে না _.
মেঘের কথা শুনে, কারান বলে __
“- মেঘ পাঁচ লাখ টাকা দিলে, আমার কাছে এক টাকাও থাকবে না। বিয়ের পর তোমার বান্ধবীকে কি খাওয়াব বলো? পরে আবিহা আর আমাকে, না খেয়ে থাকতে হবে __.
“- ওহ্ আমার গরিব কারান ভাই। আচ্ছা আপনাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে না, একটু ছয় লাখ টাকায় দেন __.
“- পাঁচ লাখ টাকার চেয়ে, ছয় লাখ কম?
“- হুম অবশ্যই কম৷ আপনি যদি এখন টাকা না দেন, তবে এইরকম করে আরো কমতে থাকবে৷ যেমন – ছয় লাখ থেকে সাত লাখ, এরপর আট লাখ, নয় লাখ _.
কারান আর মেঘ সহ সকলের কথায়, আদ্রিয়ান ভীষণ বিরক্ত বোধ করছে। মেঘ মনে হয় আদ্রিয়ানের বিরক্তি মাখা মুখে দেখে নাই, অবশ্য তার দেখার ইচ্ছা ও নাই। সে তার হাসি, আনন্দে, মজায় ব্যস্ত। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে __
কারান যত টাকা চাইছে তা দিয়ে দে। মামার ব্যবসা থেকে কোটি, কোটি টাকা আসে, ওরা তো মাএ পাঁচ লাখ টাকায় চেয়েছে। এমন কিপ্টামি করছিস কেনো?
আদ্রিয়ানের কথা শুনে কারান বলে __
“- এই আদ্রিয়ান তুই কি আমার ভাই না শএু।বিয়ের গেইটে কোথায়, বরের বন্ধুরা ঝগড়া করে টাকা কমায়। আর তুই টাকা দেওয়ার কথা বলছিস?
“- কারণ তোর এইসব বকবকে আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। দয়া করে টাকা দে, না হয় গেইট খুলে আমাকে ভিতরে যেতে দে __.
“- আদ্রিয়ান তুই না আসলে, একটা বুইড়া খাটাশ।, রস, কস, সিঙ্গারা, বুলবুলি তোর মধ্যে কিছুই নাই __.
কারান আর উপায় না পেয়ে, পকেট থেকে টাকা বের করে মেঘ সহ সকল কাজিনদের দেয়। এরপর তারা গেইট খুলে, বরকে ভিতরে নিয়ে যায়।
মেঘ আদ্রিয়ানের দিকে ফিরে ও তাকায় না, তার মনে আর ইচ্ছা ও জাগে না। আদ্রিয়ান ও মেঘকে এতো মনোযোগ দিয়ে দেখে না।
বিয়ে বাড়ির সকলে খাওয়া দাওয়া শুরু করে, মেঘ তার তার সাথীরা বরের জন্য খাবার নিয়ে যায়। বিয়ে বাড়ির সকল অনুষ্ঠান, সাধারণ বাঙালি নিয়মে হবে। কারান সহ সকল বন্ধুদের হাত ধুঁয়ার জন্য মেঘ সহ সকলে তাদের হাত বাড়িয়ে দেয়। ভাগ্যক্রমে আদ্রিয়ান যখন হাত বাড়িয়ে দেয়, তখন মেঘ বেখায়ালীভাবে তার হাত ধরে।
মেঘ যখন বুঝতে পারে, এইটা আদ্রিয়ান। তখন সে হাত ছেড়ে দিতে চাই, কিন্তু পরক্ষণে আবার হাত ধরে। কারণ আদ্রিয়ান এখন শুধু তার, বন্ধুর দেবর অন্য কিছু না। মেঘ সযত্নে আদ্রিয়ানের হাত ধুয়িঁয়ে দেয়, যেমন অন্যরা করে। মেঘের চোখে পানি জমে না, তার মনে কষ্ট বা ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হয় না। সে সাধারণ ভাবে সবকিছু করে,যেনো আদ্রিয়ান তার কেউ হয় না৷
সময় তখন বিকাল ৪:০০। কারান বর সেজে, বসে আছে স্টেজে। তার আশেপাশে তার বন্ধু, আর আদ্রিয়ান উপস্থিত রয়েছে। ফারহানা বেগম বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেন নি, ছেলের বিয়ের দিন মা যায় না। এইটাই নিয়ম। যদিও আমেরিকায় এই নিয়ম, কেউ মানে না।
বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে, বধূ সাজে আবিহা নিচে নেমে আসে। তার মাথায় উড়না, যা মেঘ সহ অন্য কাজনিরা ধরে রেখেছে। বিয়ে বাড়ির সকলে, সিঁড়ির দিকে তাকায়। মেঘ সহ সকল কাজনিরা, আবিহাকে নিচে নিয়ে আসে। কারান আবিহাকে বউ সাজে দেখে, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর লাগছে তার বউ পরীকে, কারান যেনো চোখ সরাতে পারছে না। আবিহার স্টেজ আসার, সম্পূর্ণ রাস্তায় ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবিহা স্টেজে বসে থাকা, বর সেজে থাকা কারানকে দেখে। কারান তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে, দেখে আবিহা লজ্জামিশ্রিত হাসি দেয়। মেঘ শুধু তাকিয়ে থাকে, আবিহার দিকে। ভালোবাসার মানুষের সাথে, যখন বিয়ে হয় তখন মানুষ কতটা হাসি খুশি থাকে। তবে পূর্ণতা যে সবসময়, প্রেমের বিয়ের মধ্যেই আসবে তা কিন্তু ভুল। পারিবারিক ভাবে ও বিয়ে হলে, মানুষ সুখী হতে পারে। প্রতিটা মানুষ তার জীবনে উত্তম, একজন জীবনসঙ্গীকে চাই। যে মানুষটা শুধু তার হবে, একান্ত, ব্যক্তিগত তার।
আবিহাকে স্টেজে নিয়ে যাওয়া হয়, কারানের পাশে বসায় আবিহাকে। আবিহা মাথা নিচুঁ করে বসে আছে, সকল কাজিনরা ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। কারান আবিহার সামান্য কাছে যায়, এরপর ধীরে ধীরে বলে উঠে __
“- ইস আজ আমার বউকে দেখতে কতো সুন্দর লাগছে, বউ এতো সুন্দর হয় ও না। আমার তো নজর লেগে যাবে __.
কারানের কথা শুনে আবিহার লজ্জার পরিমাণ দিগুণ হয়ে যায়, সে মাথা আরো নিচুঁ করে ফেলে। কারান শব্দ করে হেসে উঠে। একটু পর কাজি আসে, বিয়ের স্টেজে পাশাপাশি বসে থাকা বর বউয়ের সম্মতি নিয়ে বিয়ে পড়ানো শুরু করে দেয়। কাজী প্রথমে আবিহাকে জিজ্ঞেস করে __
“- আবিহা মা, তুমি কি কারান চৌধুরীকে বিয়ে করতে রাজি আছো? রাজি থাকলে বলো কবুল?
আবিহা নিচুঁ কণ্ঠে বলে উঠে __
কবুল, কবুল কবুল __. [ ওয়েট কবুল বলার সময় যে আমি লেখিকা, আবিহার জায়গায় কবুল বললাম। তবে কি আমার বিয়ে হয়ে গেছে, কিন্তু আমার জামাই কয়? ]
কাজী আবার কারানকে জিজ্ঞেস করে __
“- কারান তুমি কি আবিহাকে বিয়ে করতে রাজি আছে?
“- জি আমি রাজি। কবুল, কবুল কবুল __.
“- আলহামদুলিল্লাহ। বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে, আজ থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী __.
আবিহার কবুল বলার সময়, মেঘ একবার তাকায় আদ্রিয়ানের দিকে। চৌদ্দ বছর বয়সে, সে ও এই মানুষটার জন্য কবুল বলেছিল। তাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করেছিল, কিন্তু সাত বছর পর ওই মানুষটা। তার জন্য ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছে, তার মুখ দিয়ে তালাক শব্দটা উচ্চারণ করেছে। অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক করে, তার প্রতি সত্যি মনে কোনো মায়া বা ভালোবাসা রাখা উচিত? মেঘ এতো বোকা না, যে মানুষ তার না তার ভালোবাসার লোভ করবে৷
মেঘ ঘৃণায় তার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এরপর আবার বিয়ের অনুষ্ঠানের উপর মনোযোগ দেয়। বিয়ে শেষ হবার পর, রিসোর্টের মাঠে গান বেজে উঠে। সকল কাজনিরা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে নাচ শুরু করে দেয়, মেঘের গান শুনে মনে তার নাচের কথা। মেঘ তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে যায়, এরপর গানের তালে তালে ডান্স করতে থাকে। মিউজিক বেজে উঠে ___
” – Ae dil, chalega ab na koi bahana “.
“- Gori ko hoga ab saajan ke ghar jaana”.
“- Maathe ki bindiya “—.
“- Kya bole hai sun, sun, sun, sun –.
“- Saajan ji ghar aaye, saajan ji ghar aaye
“- Dulhan kyun sharmaye? Saajan ji g “.
মেঘ আর কাজিনদের সাথে সকল, আত্মীয় স্বজন ও যোগ দেয় নাচে। মেঘ কারান, আর আবিহাকে স্টেজ থেকে নিচে মাঠে নিয়ে আসে, কারান আদ্রিয়ানকে নাচার জন্য আসতে বলে। কিন্তু আদ্রিয়ান নিষেধ করে দেয়, পরে কারান জোর করে তাকে মাঠে নিয়ে আসে।
তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১২
মেঘ সহ সকলে নাচতে থাকে, আদ্রিয়ান ও ডান্স করে। মেঘ আবিহার সাথে, ডান্স করে যখন অপর পাশে ফিরে। তখন তার সাথে দেখা হয় আদ্রিয়ানের, যে তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। মেঘ কিছুক্ষণের জন্য থমকায়, এরপর সে আদ্রিয়ানের থেকে দূরে চলে যায়। অন্য কাজিনদের সাথে নাচতে থাকে, মেঘের এমন ব্যবহার আদ্রিয়ানের কাছে অদ্ভুত লাগে। তবে সে কিছু বলে না, তার কি যায় আসে মেঘের ইগনোরে।
মেঘ মনের আনন্দে, সকলের সাথে ডান্স করতে থাকে। ফাইনালি আবিহা আর কারানের বিয়ে সম্পন্ন হয় __
