তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১৬

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১৬
নওরিন মুনতাহা হিয়া

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায় মেঘ। আদ্রিয়ান ও তার পিছুপিছু নিচে নামে, তার ও ভীষণ খুদা লাগছে। টেবিলে বসে প্রতৈকে, সকালের নাস্তা করছে। আবিহা আর কারান দুইজনে পাশাপাশি এক চেয়ারে বসে আছে, আর ফারহানা বেগম সকলের প্লেটে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। আবিহা নতুন বউ, তাই ওকে কোনো কাজ করতে নিষেধ করে দিয়েছে ফারহানা বেগম। মেঘ টেবিলের কাছে যায়, ফারহানা বেগম মেঘকে দেখে বলে __
__ __ “- আরে মেঘ তুমি এসে পড়েছ? এতো দেরি করলে কেনো ঘুম থেকে উঠছে? এখন তাড়াতাড়ি খাবার খেতে বসো, নিশ্চয়ই অনেক খুদা লাগছে __.
মেঘ মিষ্টি হাসি দিয়ে উত্তর দেয় __
__ __ “- জি আন্টি __.

মেঘ খাবার টেবিলে বসে পড়ে, ফারহানা বেগম তার প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়। আদ্রিয়ান ও খাবারের টেবিলে উপস্থিত হয়, সকলকে গুড মনিং জানিয়ে খাবার খেতে বসে যায়। আদ্রিয়ান যখন প্লেট থেকে, খাবার তার মুখে তুলবে তখন হঠাৎ এক মেয়ের কণ্ঠ শুনা যায়। কণ্ঠটা পরিচিত লাগে, আদ্রিয়ানের কাছে। এইটা তো জিয়ার কণ্ঠ, কিন্তু জিয়া এতো সকালে এখানে কি করছে? আদ্রিয়ান খাবার খাওয়া থামিয়ে, মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকায়। তার সামনে টেবিলের কাছে, দাঁড়িয়ে আছে জিয়া।
জিয়াকে দেখা মাএ, আদ্রিয়ানের মেজাজ বিগড়ে যায়। মুখের অঙ্গভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে যায়, চেহারায় রাগী আর গম্ভীর্যতা ফুটে উঠে। কাল রাতে জিয়া বলেছিল, যে বাসায় চলে যাবে। তবে এতো সকালে সে কি করে চলে আসল? আদ্রিয়ান লক্ষ্য করে, জিয়ার পড়নে রাতের আগের জামা। তবে কি জিয়া কাল বাসায় যায় নি, সারারাত রিসোর্টে থেকেছে? অবশ্য ও যে নির্লজ্জা আর বেহায়া মেয়ে, ও এখানে থেকে যেতেই পারে অসম্ভব কিছু না। আদ্রিয়ান জিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে __

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

__ __ “- জিয়া তুমি এতো সকালে এখানে? কাল রাতে বাসায় যাও নি?
আদ্রিয়ানের প্রশ্ন শুনে জিয়া উত্তর প্রদান করতে যাবে, তার আগেই ফারহানা বেগম বলে উঠে __
__ __ “- কাল রাতে জিয়া যখন, সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছিল। তখন হঠাৎ আমার সাথে, ওর দেখা হয়৷ এতো রাতে মেয়েটা একা একা বাড়ি ফিরবে, সেটা ভালো দেখায় না। আর আজ সকালে যেহেতু, বউভাতের অনুষ্ঠান আছে। তাই জিয়াকে আমি কাল, যেতে দেয় নি। জোর করে রিসোর্টে থাকতে বাধ্য করেছি __.
ফারহানা বেগমের কথায়, জিয়া ও সম্মতি দিয়ে বলে __
__ __ “- আমি কাল রাতে চলে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আন্টি যেতে দেয় নি। আদ্রিয়ান তুমি কি আমার, থেকে যাওয়ার কথা শুনে খুশি হও নি?
আদ্রিয়ান টেবিলে বসে থাকা, সকলের সামনে জিয়াকে কড়া কথা শুনাতে পারবে না। তার সুযোগ হয়তো জিয়া নিয়েছে, আদ্রিয়ান জিয়ার দিকে দাঁত কটমট করে তাকিয়ে, ছোট করে জবাব দেয় __

__ __ “- হুম __.
___ মেঘ এতোখন সব চুপচাপ শুনছিল। মেঘ তাকায়, আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। জিয়াকে দেখে আদ্রিয়ান খুশি হয়েছে, কথাটা স্বীকার করলে ও। তার মুখে খুশির ঝলক দেখা গেলো না, বরং তার চোখ মুখ শক্ত করে রেখেছে। আদ্রিয়ান জিয়ার প্রেমিকা,কিন্তু তাকে দেখে আদ্রিয়ান খুশি হয়নি কেনো? হয়ত জিয়া আর আদ্রিয়ানের মধ্যে মান অভিমান চলছে। কাল রাতে জিয়া, তাদের দুইজনে একসাথে দেখেছিল। তাই হয়ত ঝগড়া করেছে দুইজনে, যদিও এতে মেঘের কোনো দোষ নাই। সে ইচ্ছা করে, আদ্রিয়ানের কাছে যেতে চাই নি।

__ জিয়া আদ্রিয়ানের প্রেমিকা, তাই তাদের মধ্যে মান অভিমান, আর ঝগড়া স্বাভাবিক বিষয়। এইটা মেঘের দেখার বিষয় না। মেঘ তার খাবার খাওয়ার উপর মনোযোগ দেয়। ___ জিয়া আদ্রিয়ানের পাশের চেয়ারে বসে। ফারহানা বেগম তাকে খাবার বেড়ে দেয়, জিয়া খেতে শুরু করে। ফারহানা বেগম জিয়াকে বেশ পছন্দ করেন, আদ্রিয়ানের বউ হিসাবে। ওনি মনে করেন, আদ্রিয়ান হয়ত জিয়াকে ভালোবাসে। অবশ্য জিয়ার মতো এমন মর্ডান মেয়ে, আদ্রিয়ানের যোগ্য। তাই ওনি চান, জিয়া যেনো আদ্রিয়ানের বউ হয়।

__ মেঘ সহ সকলে খাবার খাওয়ার উপর মনোযোগ দেয়। তবে জিয়া তার খাওয়া বাদ দিয়ে, আদ্রিয়ানের প্লেটে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। বাটি থেকে কখন ভাত, তরকারি সহ অন্যান্য সবজি, আদ্রিয়ানের প্লেটে তুলে দিচ্ছে। জিয়ার কাণ্ডে আদ্রিয়ান যথেষ্ট বিরক্ত, ইচ্ছা করছে একটা থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে ফেলতে। তার জীবনে সে অনেক মেয়ে দেখেছে, তবে জিয়ার মতো এমন বেহায়া, আর ফাযিল মেয়ে দেখে নাই। জিয়া আদ্রিয়ানের চুপ থাকার সুযোগ নিয়ে, ওর প্লেটে যখন ডাল দিতে যাবে৷ তখন আদ্রিয়ান ধমক দিয়ে বলে উঠে ___

__ __ “- জিয়া বেয়াদবির একটা লিমিট থাকে, তুমি নিজের প্লেটে খাবার না নিয়ে আমার প্লেটে খাবার দিচ্ছো কেনো? তোমাকে কি বলেছি যে আমার ডাল, ভাত বা অন্য তরকারি লাগবে? অতিরিক্ত পাকনামি করতে যাও কেনো তুমি? আমি তোমার সিনিয়র ডক্টর হয়, সিনিয়রের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় তা কি তোমার জানা নাই। ইরফান স্যারের মতো ভালো মানুষের ঘরে, তোমার মতো বেয়াদবের কি করে জন্ম হয়েছে? আরেকবার যদি এমন ফাইজলামি করতে দেখি আমার সাথে, থাপ্পড় দিয়ে তোমার সব দাঁত ফেলে দিব। ফাযিল, বেয়াদব কোথাকার ___.

__ আদ্রিয়ানের এমন ধমক শুনে, জিয়া সহ টেবিলে থাকা সকলে ভয় পেয়ে যায়। জিয়া মুখ ভয়ে কাচুমাচু হয়ে গেছে, আদ্রিয়ান আগে ও জিয়াকে ধমক দিয়েছে। তবে কখন সকলের সামনে এমন করে দেয় নি। ফারহানা বেগম জিয়ার পক্ষে কোনো কথা বলতে গিয়েও, আদ্রিয়ানের রাগ দেখে থেমে যায়। মেঘ ও আদ্রিয়ানের ধমক শুনে, তবে সে তার খাবারের প্রতি মনোযোগ দেয়। আদ্রিয়ান খাবার শেষ না করে, রাগ করে টেবিল থেকে উঠে চলে যায়। তবে যাওয়ার আগে একবার, মেঘের দিকে তাকায়। কিন্তু মেঘ সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে, তার খাবার খাচ্ছে। আশেপাশের ঘটনার বিষয়ে, তার খেয়াল নাই।

__ আদ্রিয়ান বড় বড় পা ফেলে, সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। ফারহানা বেগম পিছন থেকে, খাবার খাওয়া শেষ করার জন্য আদ্রিয়ানকে ডাক দিলেন।কিন্তু সেই ডাক আদ্রিয়ান শুনল না, সে তার রুমে চলে গেলো। কারান এতোখন এই সব ঘটনা দেখছিল, তার জিয়ার উপর ভীষণ রাগ হয়। আদ্রিয়ান ঠিকই বলে, এই মেয়েটা সত্যি ভীষণ বেয়াদব, আর নির্লজ্জ। কারান যানে আদ্রিয়ান জিয়াকে ভালোবাসে না, তার হৃদয়ে জিয়ার জন্য কোনো অনুভূতি নাই। বরং তার ধারণা, আদ্রিয়ান হয়ত মেঘকে পছন্দ করে। ভালোবাসে না কিন্তু মেঘের জন্য, আদ্রিয়ানের মনে একটা সফট কর্ণার আছে। আর মেঘ মেয়েটা যথেষ্ট নম্র, ভদ্র আর শান্ত মেয়ে, এই জিয়ার মতো এমন বেহায়া নয়। আদ্রিয়ানের জীবনে, মেঘের মতো একজনকে প্রয়োজন। তাই সে চাই, যেনো জিয়া না মেঘ যেনো আদ্রিয়ানের বউ হয় __
__ জিয়ার এমন ব্যবহারে, আদ্রিয়ান বিরক্ত হয়ে চলে গেলো। ছেলেটা শান্তিতে খাবার ও খেতে পারল না, কারান জিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে __

__ __ “- জিয়া আদ্রিয়ান ঠিকই বলেছে, একজন সিনিয়র ডক্টরের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয়। তা তোমার শিক্ষা দরকার? তোমার জন্য সকালের খাবার অবধি খেতে পারল না ও? আদ্রিয়ানের রাগের ধরণ নিশ্চয়ই তুমি যানো, তবুও ওর সাথে এমন বেয়াদবি করার সাহস তোমার কি করে হয়?
কারান জিয়াকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দেয়, ফারহানা বেগম কিছু বলতে গেলে। কারান তার মাকে ধমক দিয়ে, চুপ করিয়ে দেয়। মেঘ এতোখন সব শুনেছিল, তার মনোযোগ খাওয়ার উপর থাকলে ও সে কান দিয়ে সব শুনতে পায়। তবে মেঘ কিছুই বলে না সে শান্ত থাকে। অবশ্য তার বলার ও বা কি আছে, আদ্রিয়ান আর জিয়ার বিষয়ে কথা বলার সে কে? আজ জিয়াকে আদ্রিয়ানকে বকা দিয়েছে, কাল আবার তাকে জড়িয়ে ধরে কিস করে। তবে মেঘের একটা বিষয়ে সন্দেহ হয়, জিয়া কি সত্যি আদ্রিয়ানের প্রেমিকা?

__ মেঘ খাওয়া দাওয়া শেষ করে, তার রুমে চলে যায়। আদ্রিয়ান তার পাশের রুমে থাকে, তাই মেঘ যাওয়ার সময় একবার উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু আদ্রিয়ানের রুমের দরজা বন্ধ, তাই মেঘ তার রুমে চলে যায়।
____ ___ বিকাল প্রায় সাড়ে চারটা। আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির মধ্যে অবস্থান করার, এক রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বউভাতের অনুষ্ঠান। কারান ও আবিহার, বিয়ের পর প্রথম অনুষ্ঠান এইটা। যদিও বউভাতের অনুষ্ঠান বাংলাদেশে প্রচলন থাকলে ও, আমেরিকায় নাই। কিন্তু বিয়ের সকল রীতিনীতি, বাংলাদেশি নিয়ম মেনে হচ্ছে তার এই অনুষ্ঠান ও একই নিয়মে হবে। মেকআপ আর্টিস্ট আবিহাকে, তার রুমে সাজিয়ে দিচ্ছে।আজ আবিহার সাজসজ্জা সম্পূর্ণ, বাঙালি বধূর মতো। আবিহার পড়নে রয়েছে, লাল রঙের জামদানি শাড়ি, আর গলায় স্বর্ণের হার, নাকে নোলক, আর কানে সোনার দুল।

__ __ বিয়ের দিন ডায়মন্ডের নেকলেস, সহ যাবতীয় গয়না প্রায় হীরের ছিল। কিন্তু আজ ভিন্ন, তার পরহিত সকল গয়না আর খাঁটি স্বর্ণ। আবিহকার বিয়ে উপলক্ষে, তা মা আগে থেকেই গয়না বানিয়ে রেখেছিল। সাধারণ বাংলাদেশের মায়েরা, মেয়ে সন্তান বড়ো হওয়ার আগেই তার বিয়ের গয়না কথা চিন্তা করেন। তাই বাংলাদেশ থাকার সময়, সকল গয়না সেকড়া দিয়ে বানিয়ে নেয়। আবিহাকে বাঙালি বধূ সাজে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আর লাল শাড়ির পরহিত অবস্থা, আবিহার সৌন্দর্য যেনো দিগুণ বেড়ে যায়। বাঙালি নারী হোক বা বিদেশি, সকলে শাড়িতে ভীষণ সুন্দর মানায়।

__ অন্যদিকে মেঘ তার আলমারি থেকে, নীল রঙের সুতি শাড়ি বের করে। নীল রঙ মেঘের ভীষণ প্রিয়। তাই সে আজ নীল রঙের শাড়ি পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মেঘ ওয়াশরুম থেকে শাড়ি পড়ে আসে, এরপর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়ায়। মেঘের চুল কোমড় অবধি ছাড়া, তার চুল বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে। মেঘ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, নিজেকে মানানসই সাজায়। চোখে কাজল পরে, মুখে হালকা মেকাপ করে, আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দেয়। মেঘ তার চুল আজ বেণী করবে না, ভিজা চুল ছেড়ে রাখে। মেঘের সাজসজ্জা বরাবরই ভীষণ সাধারণ আর হালকা হয় ___.

___ মেঘ রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়, দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নামে যাবে। তখন তার সাথে দেখা হয় জিয়ার, মেঘ জিয়াকে দেখে। জিয়া ও বউভাতের অনুষ্ঠান উপলক্ষে সেজেছে, তবে অদ্ভুত বিষয় হলো জিয়ার পড়নে ও নীল শাড়ি। জিয়া হঠাৎ নীল শাড়ি পড়ল কেনো? হয়ত ওর নীল রঙ পছন্দ তাই পড়েছে, মেঘ আর কিছু ভাবে না। জিয়া ও হয়ত মেঘকে দেখে, সত্যি বলতে মেঘকে ভীষণ সুন্দর লাগছে? এতো হালকা সাজে, মেঘকে এতো সুন্দর কেনো লাগছে? সে তো অনেক মেকআপ করছে, তবুও তাকে এতো সুন্দর লাগছে না কেনো? জিয়ার মেঘের উপর হিংসা হয়। জিয়া নীল রঙের শাড়ি পড়েছে, কারণ আদ্রিয়ানের প্রিয় রঙ নীল। যদিও জিয়া কখনো আগে শাড়ি পড়েনি, আজ প্রথমবার আদ্রিয়ানকে আর্কষণ করার উদ্দেশ্য পড়েছে। কিন্তু শাড়ি সামলাতে জিয়ার নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে

__ __ আদ্রিয়ান নিচে দাঁড়িয়ে ছিল, তার বন্ধু ও পরিচিত লোকজনের সাথে কথা বলেছিল। হঠাৎ করে তার চোখ যায় সিঁড়ির দিকে, জিয়া নিচে নামছে। আদ্রিয়ান মুগ্ধ হয়ে, সেইদিকে তাকিয়ে থাকে। জিয়া আদ্রিয়ানের এমন তাকিয়ে থাকা দেখে, লজ্জা পায়। ফাইনালি তার কষ্ট সার্থক হয়েছে, আদ্রিয়ান তার প্রেমে পড়েছে। কিন্তু জিয়ার ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল, আদ্রিয়ান তার দিকে নয় বরং তার পিছনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসা মেঘকে দেখছে। মেঘের উপর থেকে, আদ্রিয়ানের চোখ সরছে না। নীল রঙের শাড়িতে মেঘকে পরীর চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে, আকাশে জমে থাকা এক খণ্ড মেঘ। এই মেয়েকে যখনই আদ্রিয়ান দেখে, তখনই তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যায় কারণে অকারণে বারবার, শতবার তার কাছে ছুটে যেতে মন চাই। কেনো এমন অনুভূতি হয় তার, এই মুগ্ধতা, আর ভালোলাগার নাম কি দিবে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান মেঘের দিকে তাকিয়ে, ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠে

__ __ “- ~~ মেঘবালিকা~~.
___ আদ্রিয়ানের তাকিয়ে থাকার মাঝে, জিয়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। সে আদ্রিয়ানের সম্মুখে এসে দাঁড়ায়, আদ্রিয়ানের দৃষ্টি এখনো মেঘের উপর সীমাবদ্ধ। জিয়া বলে
__ __ “- আদ্রিয়ান কেমন লাগছে আমাকে? আমি তোমার প্রিয় রঙের শাড়ি পড়েছি?
আদ্রিয়ান মেঘের দিকে তাকিয়ে, ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠে
__ __ “- ভীষণ সুন্দর লাগছে। আকাশ জমে থাকা এক খণ্ড মেঘের ন্যায় লাগছে তোমায় __.
আদ্রিয়ানের মুখে প্রশংসা শুনে, জিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলে উঠে __
__ __ “- সত্যি আদ্রিয়ান আমাকে এতো সুন্দর লাগছে?
জিয়ার প্রশ্ন শুনে আদ্রিয়ানের হুঁশ ফিরে আসে, সে তার সামনে জিয়াকে দেখে অবাক হয়ে বলে __
___ __ “- জিয়া তুমি?
__ __ “- হুম আমি। তুমিতো এতোখন আমার দেখছিলে, আর আমাকে আকাশে জমে থাকা মেঘের সাথে তুলনা করছিলে?

জিয়ার কথা শুনে, আদ্রিয়ান বুঝতে পারে সে কতো বড়ো ভুল করে ফেলেছে। মেঘের প্রশংসা করতে গিয়ে, জিয়ার করে ফেলেছে। তবে জিয়াকে আকাশে জমে থাকা মেঘের সাথে তুলনা না করে, তেতুঁল গাছে থাকা সাতচুন্নি, পেত্নীর সাথে তুলনা করা উচিত ছিল। বেয়াদব। আদ্রিয়ান কিছু না বলে, জিয়ার সামনে থেকে দূরে সরে যায়।
__ প্রায় তিরিশ মিনিট পর, কারান আর আবিহা নিচে আসে। সকল অতিথিরা তাদের দেখে হাততালি দেয়। কারান আবিহার হাত ধরে ছোফায় নিচে যায়, অনুষ্ঠান ড্রয়িং রুমে হয়েছে, খুব ঘরোয়া পরিবেশে। কারান আর আবিহাকে ঘিরে সকলে, ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। মেঘ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। আবিহার কাজিনরা সকলে জেদ করে, আবিহা আর কারানকে কাপল ডান্স করার। কিন্তু আবিহা রাজি নয় নি, পরে বলা হয় পার্টির মধ্যে উপস্থিত সকলে ডান্স করবে কাপল ডান্স __.

____ আবিহা আর কারানে নিয়ে যাওয়া হয়, ড্রয়িং রুমের মাঝে ডান্স করার জন্য। জিয়ার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে, সে ও আদ্রিয়ানের সাথে কাপল ডান্স করবে। তাই জিয়া আদ্রিয়ানকে বলে __
__ __ “- আদ্রিয়ান চলো আমরা ও ডান্স করি __
__ __ “- ডান্স আর আমি। তাও আবার তোমার সাথে অসম্ভব __.
জিয়া আদ্রিয়ানের হাত ধরে, জোর করে ওকে ড্রয়িং রুমের মাঝে নিয়ে যায়। সকল মানুষের ভিড়ে, আদ্রিয়ান জিয়াকে কিছু বলতে পারছে না। জিয়ার মান সম্মান না থাকলে ও, তার আছে। মেঘ দূরে দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু কাজিনরা তাকে হাত ধরে নিয়ে আসে ডান্স করার জন্য। মেঘের সাথে এক অপরিচিত ছেলে, কাপল হিসাবে ডান্স করবে। মিউজিক বাজছে, চারপাশে গানের শব্দ। জিয়া, আদ্রিয়ানের হাত ধরে রেখছে, আর মেঘর সাথে অন্য ছেলে। আদ্রিয়ান মেঘের দিকে তাকায়, মেঘ ও তাকায় তার দিকে।

__ মিউজিক শুরু হওয়ার সাথে সাথেই, জিয়া আদ্রিয়ানের সাথে ডান্স করা শুরু করে। তার হাত ধরে, গোল হয়ে ঘুরতে থাকে, কখনো আদ্রিয়ানের থেকে দূরে গিয়ে আবার তার কাছে ফিরে আসে। আদ্রিয়ান জিয়ার এমন ব্যবহারে ভীষণ বিরক্ত। অন্যদিকে মেঘ অন্য ছেলের সাথে ডান্স করছে, তবে তার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। এমন করে সে কখনো ডান্স করেনি, আর আমেরিকান ছেলেদের কাছে জড়িয়ে ধরা, হাত ধরা সাধারণ বিষয়। তাই সে যখন ডান্সের জন্য, মেঘের কোমড় ধরে মেঘ বিরক্তি নিয়ে চোখ – মুখ কুঁচকে ফেলে __.
___ আদ্রিয়ান মেঘের এমন বিরক্তি লক্ষ্য করে। যখন সকল কাপলরা, একবার দূরে গিয়ে আবার কাছে আসতে হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন আদ্রিয়ান জিয়ার না, বরং মেঘের হাত ধরে তাকে কাছে নিয়ে আসে। আদ্রিয়ানের এমন কাণ্ডে মেঘ অবাক হয়ে যায়, আদ্রিয়ান মেঘের হাত তার কাঁধে রাখে। শাড়ি দিয়ে মেঘের কোমড়ের পিছনে অংশ জড়িয়ে দেয়, এরপর মেঘের কোমড়ে হাত দিয়ে তার কাছে নিয়ে আসে। মেঘ কিছুটা কেঁপে উঠে, আদ্রিয়ানের এমন ছোঁয়ায়। মেঘ বলে __

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১৫

__ __ “- আদ্রিয়ান স্যার কি করছেন?
আদ্রিয়ান স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠে __
__ __ “তোমার সাথে কাপল ডান্স করছি __.
__ __ “- কিন্তু আমি আপনার সাথে ডান্স করতে চাই না। ছাড়ুন আমাকে __.
আদ্রিয়ান কিছুটা অধিকার বোধ দেখিয়ে বলে উঠে __
__ __ “- কিন্তু আমি চাই __.
আদ্রিয়ান কথাটা বলে, মেঘকে আরো কাছে নিয়ে আসে। মেঘের নিশ্বাস তার গায়ে পড়ছে, আদ্রিয়ান মেঘের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কি অদ্ভুত নেশা তার চোখে, অদ্ভুত মায়া। যে চোখের অতল গভীরে মেঘ হারিয়ে যায়, তার আত্মা স্থান পায় সেথায় –

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here