তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৪

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৪
নওরিন মুনতাহা হিয়া

আদ্রিয়ান হাঁটু নিচু করে টেবিলর কাছে বসে। টেবিলে এখন পানির গ্লাস আর কাগজ ছাড়া আর কিছুই নাই। আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসার সময় প্রায় অনেকটা, এতটুকু সময় জার্নি করে আসার পর আদ্রিয়ানের প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিল। যার জন্য সে মাথা ব্যাথার ঔষধ খায়। ঔষধ খাওয়া শেষ করে, পানির গ্লাসটা টেবিলের উপর রাখে [ যা কিছুখন পূর্বের ঘটনা ]। শার্লিন বেগমের নজর যায় পানির গ্লাসের উপর, আদ্রিয়ান প্রায়ই সাইন করে ফেলবে। তখনই শার্লিন বেগম খুব সাবধানে, তার হাত দিয়ে পানির গ্লাস ডিভোর্স পেপারের উপর ফেলে দেয়। আদ্রিয়ান পেপার সাইন করার আগেই, পানি দিয়ে সম্পূর্ণ কাগজ ভিজে যায়।

হঠাৎ এমন আকস্মিক পানি পড়ে যাওয়ায় আদ্রিয়ান সহ বাড়ির সকলে অবাক হয়ে যায়। আদ্রিয়ান সাইন করা থামিয়ে ডিভোর্স পেপার হাতে নেয়। পানি দিয়ে ভিজে যাওয়ার কারণে, কাগজ ছিঁড়ে যায়। জামান সাহেব সবটা দেখে, ওনি যানেন পানিটা শার্লিন বেগম ইচ্ছাকৃত ভাবেই ফেলেছে। জামান সাহেব রাগী দৃষ্টিতে, শার্লিন বেগমের দিকে তাকায়। শার্লিন বেগম যদিও কিছুটা ভয় পায়, তবে ওনি মেঘ আর আদ্রিয়ানের ডিভোর্স হওয়া থেকে আটকাতে পেরে খুশি হন। সৃষ্টি ও যানে ডিভোর্সের কাগজে পানি শার্লিন বেগম ফেলেছেন, তবুও সে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে ___
“- ডিভোর্স পেপার পানি পড়ে ছিঁড়ে গেছে। এখন তো আদ্র ভাইয়া ডিভোর্স দিতে পারবে না? ভাইয়ার কি আর ডিভোর্স হবে না?
সৃষ্টির কথা শুনে জামান সাহেব রাগী কণ্ঠে বলে উঠে ___
“- একটা ডিভোর্স পেপার ছিঁড়ে গিয়েছে তো কি হয়েছে? আমি কালকে উঁকিলকে বলব নতুন কাগজ তৈরি করতে। আদ্রিয়ান আর মালিহার ডিভোর্স অবশ্য হবে __.

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

জামান সাহেবের কথা শুনে শার্লিন বেগম বলে ___
“- আবার নতুন করে ডিভোর্স পেপার তৈরি করার কি দরকার? ও [ মেঘ ] যখন এই বাড়ি ছেড়ে আর আদ্রর জীবন থেকে চলেই গেছে, তখন আর ডিভোর্স দেওয়ার কি দরকার? যদি ভবিষ্যতে টাকার লোভে, ও আবার আদ্রর বউয়ের অধিকার নিয়ে এই বাড়িতে আসে। তখন ডিভোর্স দিয়ে দিলেই হবে। এখন আর এইসব ঝামেলা করার প্রয়োজন নাই
শার্লিন বেগমের কথায় সম্মতি জানায় আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান বলে __
“- আব্বু। আম্মু যা বলেছে তার সঠিক। মালিহা যখন একবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, তখন আর ডিভোর্স দেওয়া প্রয়োজনই বা কি? তবে বিয়ের সময় যে কাবিন দার্য করা হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ টাকা ওকে দেওয়া হবে। খুব শীঘ্রই আমি তোমার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিব। এখন ডিভোর্সের বিষয় নিয়ে, আর কথা না বাড়ায় ___.

আদ্রিয়ানের কথা শুনে জামান সাহেব তার রুম থেকে বের হয়ে যায়। তালুকদার বাড়ির সকলে আদ্রিয়ানের রুমে বসে, কিছুসময় আড্ডা দেয়। এরপর রাত এগারোটার সময় সকলে তাদের রুমে ফিরে এসে, ঘুমিয়ে পড়ে। আদ্রিয়ান ও তার রুমের দরজা, আর লাইট বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। অন্যদিকে মেঘ রাত সাতটার দিকে তার রাতের খাবার রান্না করে, এখন সে বই নিয়ে টেবিলে বসে আছে। যদিও মেঘের এডমিশন টেষ্ট শেষ, কাল তার ভর্তি। রাত জেগে এতো সময় পড়ার প্রয়োজন নাই, তবে যদি অগ্রীম কিছু পড়া শেষ করে রাখে তবে তা ভালোই হবে। আর কাল ভর্তি হলে, পরশু থেকে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। তখন পড়াশোনার চাপ বেড়ে যাবে, যার জন্য কিছু অধ্যায় এখন পড়ে নিতে পাড়লে ভবিষ্যতে পড়ার চাপ কমে যাবে।

রাত ১১ : ১০ মিনিট জামান সাহেব তার রুমে পায়চারি করছে। আদ্রিয়ান আর মেঘের ডিভোর্স হয় নি, এইটা মূলত তার অশান্তির মূল কারণ। মেঘ এখন আদ্রিয়ানের স্ত্রী, ইসলামি শরিয়তে বা আইনি ভাবে তাদের তালাক হয় নি। তালুকদার বাড়ির সকল চাই মেঘ আর আদ্রিয়ানের ডিভোর্স না হোক, তারা একসাথে সংসার করুক। কিন্তু এইটা কি কখন সম্ভব? আদ্রিয়ান কি মেঘকে কোনো দিন তার বউ হিসাবে মেনে নিবে? আর এক সপ্তাহ পর আদ্রিয়ান আমেরিকায় চলে যাবে, তার কেরিয়ান স্যাটেল করার জন্য।
বাংলাদেশে কবে ফিরবে, তার কোনো ঠিক নাই। আর আমেরিকায় থাকা অবস্থায় যদি আদ্রিয়ান কোনো নারীকে পছন্দ করে বিয়ে করে ফেলে তখন মেঘের কি হবে? মেঘ তো তার স্ত্রী।

আর মেঘ কতদিন আদ্রিয়ানের জন্য অপেক্ষা করবে। ডক্টরী পড়া শেষ করে, মেঘ ডক্টর হবে। ডক্টর হয়ে চাকরি করবে, এইটা জামান সাহেব চাই। কিন্তু এরজন্য কি মেঘ কখন বিয়ে করবে? ওর কি স্বামীর সংসার করার সপ্ন থাকতে পারে না। সারাজীবন কি মেঘ একাই থাকবে? যদিও মেঘ অনেক সট্রং তবে, বর্তমান সমাজে নারীর চলার জন্য, একজন পুরুষের সহায়তা অবশ্যই প্রয়োজন। আর জামান সাহেব নিশ্চয়ই চিরকাল বেঁচে থাকবেন না, ওনি মারা যাওয়ার পর মেঘকে কে আগলে রাখবে? ভবিষ্যতে যদি মেঘের বিয়ে কি করে হবে, যদি তার সাথে আদ্রিয়ানের ডিভোর্স না হয়। স্বামীর থেকে তালাক না নিয়ে, অন্য পুরুষকে বিয়ে করা কি উচিত? এইটা কি অন্যায় বা অপরাধ হবে না। যতই হোক আদ্রিয়ান তার স্বামী, বিয়ে হয়েছে তাদের।

ছোটবেলায় বাধ্য হয়ে বিয়ের ঘটনায়, মেঘ আর আদ্রিয়ান দুইজনের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের ভবিষ্যতে নষ্ট হতে, জামান সাহেব দিবে না কখন না। সাতদিনের মধ্যে হয়ত ডিভোর্স পেপার রেডি হওয়া সম্ভব নয়, তবে তাদের ডিভোর্স ভবিষ্যতে হলে ও হবে। মেঘের পড়াশোনা শেষ হলে, আদ্রিয়ানের সাথে মেঘের ডিভোর্স হবে। ডিভোর্সের পর নতুন করে মেঘকে বিয়ে দিবেন ওনি, একজন যোগ্য পাএের হাতে মেঘকে তুলে দিবেন। তবে মেঘ এখন যানবে তার আর আদ্রিয়ানের ডিভোর্স হয়ে গেছে, আদ্রিয়ান তার ইচ্ছায় ডিভোর্স পেপারে সাইন করছে। এইটা মিথ্যা হলে ও, জামিন সাহেব চাই মেঘ এইটাই সত্যি বলে জানুক।

ডিভোর্সের কথা শুনে মেঘ আদ্রিয়ানকে প্রচুর ঘৃণা করবে, তার সৃতি মন কে মুছে ফেলবে। মেঘ শুধু তার পড়াশোনা, আর কেরিয়ারের কথা ভাববে। আর আদ্রিয়ান কখন যানবে না মেঘ তার বউ, মেঘের পরিচয় যাতে কখন আদ্রিয়ানের সামনে না আসে এই চেষ্টাই জামান সাহেব করবেন। জামান সাহেব তার পকেট থেকে ফোন বের করে, মেঘকে কল করে। মেঘ এখন টেবিলে বসে পড়াশোনা করছিল, হঠাৎ করে ফোনের রিং করার শব্দ শুনে সে সেইদিকে তাকায়। ফোনের স্কিনে জামান সাহেবের নাম্বার দেখে, মেঘ ফোন রিসিভ করে আর বলে ___

“- আসসালামু আলাইকুম বড় আব্বু।
জামান সাহেব উত্তর দেন ___
“- ওয়ালাইকুম সালাম মেঘ। ফ্লাট একা থাকতে কি ভয় করছে?
মেঘের যদিও কিছুটা ভয় করছিল একা থাকতে, তবে সে মিথ্যা বলে __
“- না বড় আব্বু ভয় করছে না। আচ্ছা তুমি কেমন আছো? বড় আম্মু আর সৃষ্টি ওরা কেমন আছে?
“- সকলে খুব ভালো আছে। আর তোমাকে ভীষণ মিস করছে সবাই __.
জামান সাহেব মেঘের সাথে অন্য বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলেন। এরপর ওনি আদ্রিয়ানের বাড়ি ফিরার কথা মেঘকে বলে __
“- মেঘ আজ আদ্রিয়ান বাড়িতে ফিরে এসেছে? ওহ ডিভোর্স পেপার সাইন করে দিয়েছে। কাল উঁকিলের কাছে কাগজ জমা দিব। খুব শীঘ্রই তোমার আর আদ্রিয়ানের ডিভোর্স হয়ে যাবে ___.
আদ্রিয়ানের বাড়ি ফিরে আসা, আর ডিভোর্স দুইটা শব্দ শুনে মেঘ চুপ হয়ে যায়। আদ্রিয়ান তাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে, কথাটা বিশ্বাস হয় মেঘের। মেঘের চোখ দিয়ে দুই – ফোঁটা অশ্রু জল গড়িয়ে পড়ে। মেঘ শান্ত হয়ে বলে
“- ওহ। তোমার যা ইচ্ছা তাই কর বড় আব্বু। আমি এইসব বিষয়ে কিছু জানতে চাই না __.

জামান সাহেব যানে আদ্রিয়ানের ডিভোর্স দেওয়ার কথা শুনে মেঘ কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ওনি অপকারক, মেঘ যদি আদ্রিয়ানকে ভুলে না যায় তবে সে তার ভবিষ্যত জীবনের উপর মনোযোগ দিতে পারবে না। এখন শুধু তার পড়াশোনা, আর কেরিয়ার নিয়ে ভাবা উচিত। আদ্রিয়াকে যত ঘৃণা করবে, তত মেঘ তার কেরিয়ারের উন্নতি করবে। জামান সাহেব ফোন রেখে দেয়, এরপর ওনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। রাত অনেক হয়ে গেছে, যার জন্য ওনি ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। শার্লিন বেগম মেঘকে বলা জামান সাহেবের সব কথা শুনেন, তবে কিছু বলেন না।

অপরপক্ষে মেঘের চোখ বেয়ে অনবরত পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। পড়াশোনায় আর মনোযোগ বসাতে পারে নি, যার জন্য টেবিল থেকে উঠে পড়ে। বিছানায় শুয়ে আদ্রিয়ানের কথা ভাবছে, আজ থেকে মেঘের জন্য সে পরপুরুষ। তার প্রতি কোনো অধিকার আর মেঘের রইল না, যদিও কখন ছিল না। মেঘ সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু আদ্রিয়ান তাকে ডিভোর্স দিয়েই দিয়েছে তখন আর তার কথা সে ভাববে না।

জামান সাহেব যানে আদ্রিয়ানের ডিভোর্স দেওয়ার কথা শুনে মেঘ কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু ওনি অপকারক, মেঘ যদি আদ্রিয়ানকে ভুলে না যায় তবে সে তার ভবিষ্যত জীবনের উপর মনোযোগ দিতে পারবে না। এখন শুধু তার পড়াশোনা, আর কেরিয়ার নিয়ে ভাবা উচিত। আদ্রিয়াকে যত ঘৃণা করবে, তত মেঘ তার কেরিয়ারের উন্নতি করবে। জামান সাহেব ফোন রেখে দেয়, এরপর ওনি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। রাত অনেক হয়ে গেছে, যার জন্য ওনি ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। শার্লিন বেগম মেঘকে বলা জামান সাহেবের সব কথা শুনেন, তবে কিছু বলেন না।

অপরপক্ষে মেঘের চোখ বেয়ে অনবরত পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। পড়াশোনায় আর মনোযোগ বসাতে পারে নি, যার জন্য টেবিল থেকে উঠে পড়ে। বিছানায় শুয়ে আদ্রিয়ানের কথা ভাবছে, আজ থেকে মেঘের জন্য সে পরপুরুষ। তার প্রতি কোনো অধিকার আর মেঘের রইল না, যদিও কখন ছিল না। মেঘ সিদ্ধান্ত নেয়, যেহেতু আদ্রিয়ান তাকে ডিভোর্স দিয়েই দিয়েছে তখন আর তার কথা সে ভাববে না। আদ্রিয়ান নামক মানুষটার নাম, তার সৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলবে। এখন শুধু সে তার কেরিয়ার, আর তার বাবার সপ্ন ডক্টর হওয়ার উপর মনোযোগ দিবে।

প্রায় তিনদিন পর মেঘ মেডিক্যালের ভর্তি হয়। এরপর থেকে তার নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। প্রতিদিন ক্লাস, প্রাইভেট, আর বাসা এইটাই এখন মেঘের জীবন। সারাদিন ক্লাস শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে আসে, এরপর রান্না করে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সাতদিনের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল আদ্রিয়ান, তার ছুটির মেয়াদ শেষ হবার পর সে চলে যায় আমেরিকায়। তালুকদার বাড়ির সকলে তাকে থেকে যাওয়ার কথা বলে ছিল, কিন্তু আদ্রিয়ান কারো কথা শুনে নাই। তার কেরিয়ার তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

[ প্রায় ১ বছর পর ]

মেঘ আর ভীষণ খুশি, কারণ সে স্কলারশিপ পেয়েছে, বিদেশে যাওয়ার জন্য। ময়মনসিংহ মেডিক্যালে প্রতিবছর মেধাবী স্টুডেন্টের জন্য, স্কলারশিপে বিদেশে পড়ার সুযোগ থাকে। মেঘ স্কলারশিপ পেয়েছে, এখন সে পিএইচডি করার জন্য বিদেশে যেতে পারবে। জামান সাহেব যখন মেঘের স্কলারশিপের কথা শুনেন, তখন ওনি ভীষণ খুশি হয়। তবে মেঘ স্কলারশিপে পড়াশোনা করতে যাবে আমেরিকারয় কথাটা শুনে জামান সাহেব নিষেধ করে দেন মেঘকে। কারণ আমেরিকায় আদ্রিয়ান রয়েছে।

জামান সাহেব যখন মেঘকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য নিষেধ করে দেয়। তখন মেঘের মন খারাপ হয়ে যায়। জামান সাহেব চাই না আমেরিকায় গিয়ে মেঘের সাথে আদ্রিয়ানের দেখা হোক। আদ্রিয়ান আর মেঘ দুইজনে ডক্টর, তাই ভবিষ্যতে তাদের দেখা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। যদিও আদ্রিয়ান মেঘকে প্রথম দেখায় চিনতে পারবে না, কিন্তু মেঘ তো পারবে। যদি একবার মেঘ আদ্রিয়ানকে দেখে, তখন মেঘ কি পারবে আদ্রিয়ানের থেকে দূরে থাকতে। আদ্রিয়ানকে ভুলে, তার পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে। না মেঘ পারবে না, মেঘের মন তখন সবসময় আদ্রিয়ানের কথা ভাববে। যার ফলে সে তার কেরিয়ার ধ্বংস করে দিবে।

জামান সাহেব নিষেধ করে দেওয়ার পর মেঘ তাকে অনেক কিছু বুঝায়। যে সে তার বান্ধবীর বাসায় থাকবে। অন্য কোথাও যাবে না, শুধু হাসপাতাল আর বাসা। প্রায় নয় দিন পর জামান সাহেব মেঘকে আমেরিকা যাওয়ার অনুমতি দেয়। কারণ মেঘ তার বান্ধবীর বাসায় থাকবে বলে। আর মেঘ খুব শান্ত আর ভদ্র মেয়ে, কোথাও ঘুরাঘুরি করার অভ্যাস তার নাই। আর আমেরিকা অনেক বড়ো শহর, সেখানে হাজার হাজার হাসপাতাল রয়েছে। আদ্রিয়ান আর মেঘের দেখা নাও হতে পারে, আর মেঘ যানে যে আদ্রিয়ানের সাথে তার ডিভোর্স হয়ে গেছে। তাই আদ্রিয়ানের সাথে যদি তার দেখা ও হয়, তবে আদ্রিয়ানের থেকে দূরে থাকবে তাকে ইগনোর করবে। মেঘের আত্মাসম্মান বোধ রয়েছে।

আমেরিকায় মেঘ তার বান্ধবী আবিহার বাসায় থাকবে। মেঘের পাশের ফ্লাটে যে মেয়ে থাকত, তার নামই ছিল আবিহা। আবিহা আর তার পরিবার বাংলাদেশে থাকত, তবে গত ছয়মাস আগে তারা আমেরিকায় চলে গেছে। কারণ আবিহার বাবার ব্যবসার জন্য, তাদের সেখানে থাকতে হবে। তবে এই কয়েকদিনের মধ্যে আবিহা, আর মেঘ খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। যেহেতু তারা সমবয়সী, আর একই ফ্লাটে থাকত।
তবে আবিহা আমেরিকা যাওয়ার পর মেঘ আর তার মধ্যে কিছু দুরত্ব তৈরি হয়। কিন্তু তারা নিয়মিত ফোনে কথা বলত,মেসেজ করত একে অপরকে। মেঘের স্কলারশিপের কথা শুনে আবিহা অনেক খুশি হয়, তাকে অভিনন্দন জানায়। মেঘ যখন কোথায় থাকবে বলে চিন্তা করছিল, তখন আবিহা তাকে তার বাসায় থাকার কথা বলে। মেঘ প্রথমে রাজি হয় নি, এমন করে অন্যর বাসায় থাকার ব্যাপারে। কিন্তু আবিহার বারবার বলায় সে রাজি হয়ে যায়।

আজ বৃহস্পতিবার মেঘ আমেরিকায় যাবে। তার ব্যাগপএ সহ সকল প্রয়েরজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। জামান সাহেব সহ তালুকদার বাড়ির সকলে এয়ারপোর্টে তার জন্য অপেক্ষা করছে। মেঘ সবকিছু রেডি করে তার বাসা থেকে বের হয়, এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য। মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার পর মেঘ আর, কখন তালুকদার বাড়িতে যায় নি। তবে সৃষ্টি, শার্লিন বেগম, আর নীলিমা বেগম মাসে এক, দুইবার এসে তাকে দেখে যেতো। জামান সাহেব প্রতি সপ্তাহে অবশ্যই আসত, আর ফোনে সকলের সাথে যোগাযোগ ছিল তার।

গাড়িতে বসে আছে মেঘ। তখনই তাকে কল দেয় আবিহা, মেঘ কল রিসিভ করে। অপরপাশ থেকে আবিহা বলে উঠে __
“- মেঘ তুই কি রওনা দিয়েছিস?
“- হুম গাড়ি করে এয়ারপোর্টে যাচ্ছি। বিকাল দিকে ফ্লাইটে উঠব। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে আমাকে রিসিভ করবে কে?
“- তোকে রিসিভ করার জন্য লোক পাঠিয়ে দেব। হয় কারান আসবে, না হয় অন্য কেউ __.
“- ওকে __.
“- ওকে সাবধানে আসবি। আর প্রথমবার বিমানে উঠছিস বলে ভয় পাবি না কিন্তু।

মেঘ আর কিছু সময় আবিহার সাথে কথা বলে। কাল আবিহার এনগেজমেন্ট, তার বিয়ে হবে কারান নামের একজনের সাথে। কারান আর আবিহা একই রিসেন্টে হবে, যার জন্য তাদের পরিবার রিসেন্টো অবস্থান করছে। কারান তার বাবা – মা আর তার ফুফাতো ভাই এক বাসায় থাকে। কিন্তু কারানের এই ফুফাতো ভাই, আর কেউ না বরং আদ্রিয়ান রোদোয়ান। আর জামান সাহেব হলেন কারানের ফুফা, শার্লিন বেগম তার ফুপি।

জামান সাহেব আর কারানের বাবার মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছিল। তবে শার্লিন বেগম তার ভাইয়ের সাথে নিয়মিত কথা বলে, আর আদ্রিয়ান যখন রাগ করে বিদেশে যাওয়ার জেদ ধরে। তখন ওনি আদ্রিয়ানকে তার মামার বাসায় পাঠিয়ে দেন। কারানের মা – বাবা মেঘের বিষয়ে কিছু যানেন না। কারণ শার্লিন বেগম তাদের কিছু বলেন না মেঘের বিষয়ে। তারা এতো বছরের মধ্যে কখন বাংলাদেশে আসে নি, তাই মেঘকে তালুকদার বাড়িতে দেখে নি। আদ্রিয়ানের বিয়ের ব্যাপারটা শার্লিন বেগম লুকিয়ে রাখছে, তারা শুধু যানে আদ্রিয়ান পড়াশোনার জন্যই আমেরিকা গিয়েছে।

মেঘের সাথে কথা বলা শেষ করে আবিহা ফোন রাখে। এয়ারপোর্টে থেকে মেঘকে রিসিভ করতে, কাকে পাঠানো তাই ভাবছে। কারান সহ বাড়ির সকলে বিয়ে কাজে বিজি, যদিও তাদের বিয়ের সকল দায়িত্ব ইভেন্ট ম্যানেজারকে দেওয়া হয়েছে। আবিহা নিজে গিয়ে ও মেঘকে রিসিভ করতে পারবে না। আবিহা চিন্তা এই নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিল।

আদ্রিয়ান রিসেন্টে বরাদ্দকৃত রুমে বসে ছিল। কারানের বিয়ের জন্য হাসপাতাল থেকে কিছুদিনের লিভ নিয়েছে। আদ্রিয়ান তার ল্যাপটে ডক্টরি রিলেটেউ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেখছিল। তখনই তার রুমে আসে আবিহা, আদ্রিয়ান আবিহাকে দেখে ল্যাপটপ রেখে আবিহার দিকে তাকিয়ে বলে __
“- আবিহা তুমি হঠাৎ আমার রুমে?
আবিহা সাধারণ খুব একটা আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলে না। কারণ আদ্রিয়ান রাগী, আর গম্ভীর হয়ে থাকে। যার কারণে আবিহা তাকে ভয় পায়, আর আদ্রিয়ান সবসময় তার কাজ, হাসপাতাল, আর ডক্টরি নিয়ে বিজি থাকে যার কারণে আবিহার সাথে খুব একটা কথা হয় নি তার। আবিহা কিছুটা ইতস্ততা নিয়ে বলে _
“- আসলে আদ্র ভাইয়া আপনি কি বিকালে ফ্রী থাকবেন? বাংলাদেশ থেকে স্কলারশিপ নিয়ে আমার এক বন্ধু, পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকায় আসবে। ওকে বিমানবন্দর থেকো রিসিভ করতে হবে, আমিই যেতাম । কিন্তু বিয়ের সকল কাজের জন্য যেতে পারছি না। যদি আপনি একটু ওকে রিসিভ করে নিয়ে আসতেন __.

আবিহার কথায় আদ্রিয়ান সম্মতি দেয়। আদ্রিয়ান বলে __
“- ওকে নো প্রবলেম। বিকালে আমি ফ্রী থাকলে অবশ্যই তোমার বন্ধুকে এয়ারপোর্টে থেকে রিসিভ করে নিয়ে আসব __.
আবিহা খুশি হয়ে যায়, আবিহা ছোট করে বলে __
“- ধন্যবাদ আদ্র ভাইয়া __.
আবিহা আদ্রিয়ানের রুম থেকে চলে যায়। আদ্রিয়ান আবার তার কাজে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে মেঘ বিমানবন্দরে পৌঁছে যায়, তালুকদার বাড়ির সকলে সেখানে অপেক্ষা করছে তার জন্য। মেঘ সবার সাথে কথা বলে, তাদের থেকে বিদায় নেয়। জামান সাহেব মেঘের মাথায় হাত রেখে তাকে দোয়া করে। শার্লিন বেগম ও মেঘকে বিভিন্ন সূরা পরে ফু দেয়। মেঘ সবার থেকে বিদায় নেওয়া শেষে, বিমানে উঠে পড়ে।

মেঘ বিমানে উঠার পর আবিহা তাকে মেসেজ দেয়৷ আমেরিকার এয়ারপোর্টে তাকে রিসিভ করতে, তার ভাসুর ” আন যাবে। [ আদ্রিয়ান রেদোয়ান শর্ট ফর্ম আন ] ডক্টর আন বা এআর এই দুইটা নামেই সকলে তাকে চিনে। যার জন্য আবিহা এই নামই বলে। মেঘ মেসেজটা দেখে, সাইলেন্ট করে রাখে। যেহেতু সে বিমানে উঠেছে।
বিকাল প্রায় সাড়ে চারটা। দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর ফ্লাইটে করে মেঘ আমেরিকায় পৌঁছায়। মেঘ বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরের ভিতরে যায়। প্রথমবার বিমানে উঠার কারণে, তার মধ্যে কিছুটা ভয় কাজ করছিল। বিমানবন্দরের আশেপাশে সকল মানুষ বিদেশি, সকলে সাদা চামড়ার মানুষ। মেঘের মনে পড়ে, তাকে রিসিভ করার জন্য আন নামে একজন আসবে। মেঘ বিমানবন্দর থেকে বাহির হয়ে, খুঁজতে থাকে। হঠাৎ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরুষের দিকে তার নজর যায়। যে পিছনের দিকে পিঠ করে ফোনে কথা বলছে। যার বয়স আনুমানিক ছাব্বিশ বা সাতাইশ বছর হবে।

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৩

মেঘ এগিয়ে যায় তার কাছে। মানুষটার চুল, সহ দৈহিক গঠন দেখে বাঙালি মনে হচ্ছে তার। মেঘ তার পিছনে দাঁড়ায়, এরপর শান্ত হয়ে বলে __
“- এক্সকিউজ মি। আপনি কি মিস্টার আন?
মেঘের শীতল কণ্ঠ শুনে, পিছনে ঘুরে থাকা মানুষটা তার দিকে ফিরে তাকায়। মেঘ অবাক হয়ে বলে __
“- আপনি?

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here