তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৯

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৯
নওরিন মুনতাহা হিয়া

আদ্রিয়ান মেঘের হাত ধরে তার পাশে ছোফায় বসে থাকে। মেঘ ঘুমিয়ে পড়েছে, অনেক আগে৷ আদ্রিয়ান মেঘের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকায়, কি মায়াবী চোখ, মুগ্ধ করার মত রূপ। আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে, তার চোখ যেনো মেঘের উপর আটকে গেছে। রিসাের্টে আসার পর কয়েকবার, তার আর মেঘের দেখা হয়েছে৷ কিন্তু আদ্রিয়ান কখন মেঘকে মনোযোগ সহকারে দেখে নাই, কিন্তু আজ দেখছে৷ আর যত দেখছে, তত মেঘের প্রতি দুবর্ল হয়ে যাচ্ছে।

আদ্রিয়ান আজ মেঘের প্রতি যা অনুভব করছে বা তার যে আসক্তি কাজ করছে। অন্য নারীর প্রতি এই আর্কষণ কখন আসে নি তার, না তাদের এতো আগ্রহ আর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছে। মেঘ যখন প্রথমবার আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরেছে, তখন আদ্রিয়ানের হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায় । তার সারা শরীর আসাঢ হয়ে যায়। তার হাত মেঘকে ছুঁয়ে দেখার আগ্রহ দেখায়, মেঘের প্রতি নিষিদ্ধ আর্কষণ অনুভব করে আদ্রিয়ান। যে অনুভূতি তার আর কখনো অনুভব হয় নি। হাসপাতালে কেবিনে যখন জিয়া তাকে জড়িয়ে ধরেছিল, তখন আদ্রিয়ান তাকে এক সেকেন্ডের মধ্যে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়৷ তবে আজ কেনো, তার দ্বারা মেঘকে দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয় নি। বরং তার কাছে যাওয়ার জন্য, তাকে ছুঁয়ে দেখার জন্য আদ্রিয়ানের মন ছটফট করছিল তখন৷ কেনো? মেঘ নেশায় আসক্ত হয়ে, তাকে ভুল করে জড়িয়ে ধরেছে। শুধু মাএ এইজন্য কি, আদ্রিয়ান তাকে নিজ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে নাই। না এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে, কিন্তু কি কারণ থাকতে পারে?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘের সাথে আদ্রিয়ানের দেখা হয়েছে কাল। মেঘ তার কাছে অনেকটা অপরিচিত নারী, যার নাম ছাড়া আর কিছুই সে যানে না। তবে তার উপর কি করে আদ্রিয়ানের আর্কষণ কাজ করতে পারে, যা অন্য নারীর সংস্পর্শে কখন অনুভব হয় নি তা মেঘের কাছে গেলে কেনো হয়? শুধু মেঘই কেনো? আদ্রিয়ানের কাছে তার প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই, সে সব শুধু নিছক মায়া বলে উড়িয়ে দেয়। মেঘের থেকে আদ্রিয়ানকে দুরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনো নারীর প্রতি দুবর্লতা রাখতে চাই না, আদ্রিয়ান। সে শুধু নিজের কোরিয়ার আর সপ্নের উপর ফোকাস করতে চাই। সাত বছর আগে এক নারীর জন্য, তার মা বাবার থেকে দূরে চলে আসতে হয়েছে। পরিবারের ভালোবাসা, মায়া, মমতা থেকে বিছিন্ন হয়েছে, এখন আর অন্য নারীর জন্য তার কেরিয়ার বির্সজন দিতে পারবে না। তিলে তিলে ঘরে তোলা তার মেধা, সপ্ন, সে শুধু এক নিছক মায়ার কারণে হারাতে পারবে না অসম্ভব।

মেঘের থেকে যত দূরে থাকবে, তত তার আর মেঘের ভবিষ্যতের জন্য ভালো। আর মেঘকে তার প্রতি দুবর্ল হওয়ার চান্স সে দিবে না, কখন না। কাল থেকে আদ্রিয়ান তার কঠোর রূপ দেখবে, যাতে মেঘ তার থেকে দূরে থাকে। কিন্তু আজ রাত তাকে, মেঘের কাছেই থাকতে হবে বাধ্য হয়ে। এরপর আদ্রিয়ান বাধ্য হয়ে, মেঘের হাত ধরেই ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালের ঝলমলে আলোয় মেঘের ঘুম ভেঙে যায়। কাঁচের জানালা দিয়ে বাহির থেকে, সূর্যের কিরণ ভেসে আসছে। পিটপিট করে চোখ খুলে তাকায় মেঘ, তার মাথায় ভীষণ ব্যথা অনুভব হচ্ছে। মাথা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে, তাছাড়া শরীরে শীত লাগছে। মনে হয় জ্বর এসেছে, যার জন্য এমন লাগছে৷ মেঘ চোখ খুলে রুমটা কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে দেখে নেয়, কিন্তু এইটা তো তার রুম না। রিসোর্টে যে রুমে মেঘ থাকে, তার ডিজাইন আর এই রুমের আসবাপত্রের ডিজাইন সম্পূর্ণ ভিন্ন। মেঘের চোখ যায় টেবিলে থাকা, ফ্রেমের মধ্যে থাকা একটা ছবির দিকে। মেঘের দৃষ্টি কিছুটা ঝাপসা ছিল, মেঘ চোখ খুলে ভালো করে দেখে সেখানে আদ্রিয়ানের ছবি রয়েছে।

মেঘ আদ্রিয়ানের ছবি দেখা মাএই লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। আদ্রিয়ানের ছবি তার টেবিলের উপর কি করছে? তবে কি এইটা আদ্রিয়ানের রুম? মেঘ তার আনমনে করা প্রশ্ন শুনে, সে নিজেই অবাক হয়ে যায়। মেঘ তাড়াতাড়ি তার চারপাশে তাকায়, তার হাতের উপর শক্ত ভারী বস্তুর অনুভব করে। মেঘ তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে, আদ্রিয়ান তার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। মেঘেে বুকের ভিতর ধপ করে শব্দ হয়, এইটা কি সত্যি আদ্রিয়ান? কিন্তু সে এই রুমে কি করে আসল? কাল রাতে কি হয়েছিল?

কাল রাতের সম্পূর্ণ ঘটনা, মেঘের মনে পড়ে যায়। মেঘের লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে পড়তে ইচ্ছা করছে, সে কি করে এমন ভুল করতে পারল। মেঘ কাল রাতে নেশার ঘোরে, কোথায় বলে দেয় নি তো। যে সে আদ্রিয়ানের বউ? তার সাথেই সাত বছর আগে আদ্রিয়ানের বিয়ে হয়েছিল?
মেঘের এখন নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় দেয়। মেঘ খেয়াল করে, আদ্রিয়ান তার রাতের পোশাক পরিবর্তন করেছে। কাল মেহেদী অনুষ্ঠানে, যে কাপড় পড়েছিল। আজ সকালে তার পড়নে, ওই কাপড় নাই। মেঘের মনে হঠাৎ করে অজানা ভয় ঢুকে গেলো, কাল রাতে আবার নেশার ঘোরে কোথায় তার আর আদ্রিয়ানের মধ্যে। মেঘ আর কিছু ভাবতে পারে না, সে ভয়ে ভয়ে তার উপর থাকা চাদর সরায়। যা কাল রাতে আদ্রিয়ান, মেঘ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর তার শরীর ডাকতে দিয়েছিল। মেঘ চাদর সরিয়ে, তার পড়নে আগের কাপড় দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে।

আদ্রিয়ান এখন ঘুমন্ত, কাল রাতে সে কি কি কাণ্ড করেছে কে যানে। যদি এখন আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে পড়ে, তখন মেঘ তার চোখের দিকে তাকাতে পারবে না। ভীষণ লজ্জা করবে তার। তাই মেঘ সিদ্ধান্ত নেয়, সে আদ্রিয়ানের ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে যাবে তার রুম থেকে। মেঘ ধীরে ধীরে আদ্রিয়ানের হাতের শক্ত বাঁধন থেকে, তার হাত মুক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু মেঘ ব্যর্থ হয়, আদ্রিয়ান খুব শক্ত করে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে রেখেছে। মেঘ আবার যখন চেষ্টা করে, তার হাত সারানের তখন আদ্রিয়ানের ঘুম ভেঙে যায়। আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে, তার হাতে থাকা মেঘের হাতের দিকে তাকায়। আদ্রিয়ান ঘুম থেকে উঠে পড়েছে দেখে, মেঘ চোরের মত মাথা নিচুঁ করে বসে থাকে।

কাল রাতের ঘটনা আদ্রিয়ানের মনে আছে, যার কারণে সে মেঘকে তার রুমে দেখে অবাক হয় নি। আদ্রিয়ান একবার মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে __
“- সারারাত আমাকে জ্বালাতন করে, এখন সকালে উঠে চোরের মত পালিয়ে যাওয়া হচ্ছে? কাল রাতে তুমি কি কি উদ্ভট কাজকর্ম করেছ? তা কি তুমি যানো?
মেঘ আগের ন্যায় আবার, মাথা নিচুঁ করে ফেলে। আদ্রিয়ান মেঘের উত্তর না পেয়ে, ধমকের সুরে বলে উঠে __

“- কি সমস্যা কথা বলছ না কেনো? তুমি কি বোভা যে কথা বলতে পার না?
মেঘ আদ্রিয়ানের ধমক শুনে, ছোট করে বলে __
“- আই এম সরি। কাল রাতের ঘটনার জন্য, সত্যি আমি দুঃখিত। সব ভুল আমার __.
আদ্রিয়ান মেঘের কথা শুনে, আবার ও গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠে __ __
“- হুম অবশ্যই সব ভুল তোমার। সবসময় মানুষজন যা বলবে, বা জোর করবে তাই মেনে নিবে না। প্রতিটা নারীকে প্রতিবাদী হতে হয়, নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস রাখতে হয়। কাল কাজিনরা সকলে জোর করেছে বলে, মদ খেয়েছ। অন্যদিন যদি আবার অন্য কেউ, জোর করে তখন কি আবার মদ খাবে? শুনো মেঘ, আমি তোমার শিক্ষক হয়। শিক্ষক হওয়ার সুবাধে তোমাকে বলছি, সারাজীবন ন্যাকা কান্না আর ভয় নিয়ে কাটিয়ে দিও না। শক্ত হও, আত্মবিশ্বাসী হও, আর না হলে জীবনে উন্নতি করার কথা ভুলে যাও __.
মেঘ মাথা নিচুঁ করে আদ্রিয়ানের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে। সত্যি আদ্রিয়ান বা বলছে তা ঠিক, সে কেনো কাল কাজিনদের নিষেধ করতে পারল না। ওরা জোর করে মদ খায়িয়ে দিলো, আর মেঘ চুপচাপ খেয়ে নিল? মেঘকে মাথা চুপচাপ বসে থাকতে দেখে, আদ্রিয়ান বলে __

“- এখন নিজের রুমে যাও। বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন তোমার, কাল সারারাত ভিজে কাপড়ে থেকেছ জ্বর আসতে পারে। কিন্তু সাবধানে যেও, বাড়ির কেউ যদি তোমাকে আমার রুম থেকে বের হতে দেখে৷ তবে নেগেটিভ কিছু চিন্তা করতে পারে, সো কেয়ারফুল.
মেঘ ছোফায় থেকে উঠে, দৌড়ে রুমে থেকে বের হয়ে যায়। তবে রুমের দরজার থেকে বের হওয়ার আগে, একবার পিছনে ঘুরে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে _
“- ধন্যবাদ আদ্রিয়ান স্যার __.

আদ্রিয়ান মেঘের বাচ্চাসুলভ কাণ্ড দেখে শব্দ করে হেঁসে উঠে। তবে মেঘ তা শুনতে পায় না। এরপর আদ্রিয়ান ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। মেঘ ও তার রুমে চলে যায়।
রিসোর্টের বাহিরে খোলা মাঠে, কান ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেয়েদের এক দল। তারা ভয়ে, মাথা নিচুঁ করে রাখছে। আর তাদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বয়ং, আদ্রিয়ান রেদোয়ান। আদ্রিয়ান গম্ভীর আর রাগান্বিত চেহারায় সকলকে দেখে যাচ্ছে। তার সামনে থাকা, মেয়েরা আর কেউ না আবিহার সয়তান আর দুষ্ট কাজিনরা। আদ্রিয়ানের এমন লুক দেখে, প্রতৈকে ভয়ে ঢুক গিলছে। আদ্রিয়ান বলে __

“- ঠিক এইরকম কান ধরে সকলে রিসোর্টের চারপাশে, দশবার ঘুরে আসবে। আর বললে _ আমরা ভুল করেছি আদ্রিয়ান ভাইয়া, ক্ষমা করে দাও __.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে, সকালে মধ্যে থেকে একজন সাহস করে বলে __
“- সরি আদ্রিয়ান ভাইয়া আর এমন ভুল হবে না.
“- কোনো অযুহাত শুনতে চাই না আমি। চুপচাপ যা বলছি, তাই করবে। পরশু দিন আবিহা আর কারানের সাথে যা করেছ, তা ভুল হলেও তোমাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না। কিন্তু কাল মেঘকে জোর করে, মদ খায়িয়ে দিয়ে যে অন্যায় করেছ তার শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে।

“- কিন্তু __.
“- কোনো কিন্তু শুনতে চাই না আমি৷ যা বলছি, তাই কর। যত দেরি করবে, তত শাস্তির পরিমাণ বাড়বে.
আদ্রিয়ানের কথা শুনে, সকল কাজিনরা বাধ্য হয়ে কান ধরে রিসোর্টের চারপাশে ঘুরতে থাকে৷ আদ্রিয়ান যা করেছে, একদম ঠিক করেছে। এই কাজিনরা অতিরিক্ত সয়তান, আর দুষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যদি এখন এদের শাস্তি না দেওয়া হয়, তবে ভবিষ্যতে এর চেয়ে বড় কাণ্ড ঘটাবে। আদ্রিয়ান দূরে থাকা, একজন কাজের লোককে ডাক দেয়। কাজের লোক তার কাছে আসে, আদ্রিয়ান তার পকেট থেকে ঔষধ বের করে আর বলে __
“- শোন এই ঔষধ আর রান্না ঘর থেকে লেবুর সরবত বানিয়ে, মেঘের রুমে দিয়ে আসবে। বলবে আদ্রিয়ান স্যার দিয়েছে __.
“- ওকে স্যার __.

মেঘ তার রুমে শুয়ে ছিল, মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে। শরীরে জ্বর আসবে মনে হয়। মেঘ যখন রুমে শুয়ে ছিল, তখন তার রুমের দরজায় একজন কাজের লোক কড়া নাড়ে। মেঘ বিছানা থেকে উঠে, দরজার কাছে যায়। দরজা খুলে দেয়, কাজের লোক ঔষধ আর লেবুর পানি মেঘের দিকে এগিয়ে দেয় আর বলে __
“- ম্যাম আপনার জন্য আদ্রিয়ান স্যার, ঔষধ আর লেবুর জল পাঠিয়েছে __.
কাজের মহিলার কথা শুনে মেঘ হয়ে যায়, সত্যি আদ্রিয়ান তার জন্য লেবুর জল আর ঔষধ পাঠিয়েছে। আদ্রিয়ান তার খেয়াল রাখছে, যত্ন করছে? তবে আদ্রিযান একজন ডক্টর, ডক্টর হয়ে রোগীর খেয়াল রাখা অসম্ভব কিছু না। মেঘ ঔষধ খেয়ে নেয়, লেবুর পানি গ্লাস হাত দিয়ে ধরে বলে __
“- ধন্যবাদ আপনাকে __.

কাজের লোক রুম থেকে চলে যায়, মেঘের বিছানায় শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না। যার কারণে সে, রুমের বেলকনিতে যায়। লেবুর পানি মুখে দেয়, আর সামনের দিকে তাকায়। মেঘ হঠাৎ লক্ষ্য করে, সকল কাজিনরা কান ধরে রিসাের্টের চারপাশে ঘুরছে। মেঘ অবাক হয় প্রথমে, এরপর তার চোখ যায়। তপ্ত রোদ্রের মধ্যে গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, সুষ্ঠম দেহের এক পুরুষের দিকে। মেঘ পরক্ষণেই সব বুঝে যায়, তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।

আদ্রিয়ান খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে রযেছে, যেখানে অর্ধেক জায়গায় জুড়ে বিবাহের স্টেজ রয়েছে। আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে, মেঘ তার বেলকনি থেকে তাকে দেখছে। আর দাঁত বের করে আসছে, আদ্রিয়ান তার দিকে রাগী চোখে তাকায়। মেঘ আদ্রিয়ানের তাকানো দেখে, চোখ সরিয়ে নেয় তার উপর থেকে। আদ্রিয়ান ও মেঘের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, সকল কাজিনদের উপর রাখে। মেঘ মনে মনে আদ্রিয়ানকে গালি দেয় __

“- খাটাশ লোক একটা __.
মেঘ আর সারাদিন আদ্রিয়ানের সামনে যায় না, তার যাওয়ার ইচ্ছা ও নাই। যত দূর থাকবে তারা একে অপরের থেকে, ততই মঙ্গল। রাতের দিকে আবিহার গায়ে হলুদ শুরু হবে, এখন প্রায় বিকাল হয়ে গেছে। কিন্তু এখন আবিহার পার্লারের লোক আসে নি, তাদের ফোন করা হয়েছিল তারা বলেছে আজ তারা আসতে পারবে না। আবিহাকে পার্লারে যেতে হবে। রিসাের্ট থেকে পার্লার বেশি দূরে, কারান তাদের সাথে যেতে পারবে না। যার জন্য ফারহানা বেগম আদ্রিয়ানকে বলেছে, আবিহা আর মেঘকে পার্লারে নিয়ে যেতে। আদ্রিয়ান রাজি হয়ে যায়৷

বিকাল প্রায় সাড়ে তিনটা, আদ্রিয়ান গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে। সে মূলত, মেঘ আর আবিহার আসার জন্য অপেক্ষা করছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর আবিহা আর মেঘ, রিসোর্টের দরজা দিয়ে বের হয়। মেঘের পড়নে রয়েছে কালো রঙের ড্রেস, আর আবিহার পড়নে সাদা শাড়ি। মেঘ আদ্রিয়ানকে দেখে, তার চোখ সরিয়ে নেয়। এরপর গাড়ির মধ্যে উঠে বসে, আবিহা আর মেঘ পিছনে বসে। আদ্রিয়ান সামনে ড্রাইভিং সিটে।

মেঘ আবিহার সাথে বলে ঠিক করে রেখেছিল, কিন্তু যখন শুনছে আদ্রিয়ান তাদের নিয়ে যাবে। তখন মেঘ নিষেধ করে দেয়, পরে আবিহা একা একা যাবে কথাটা ভেবে যেতে রাজি হয়। আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট করে, মেঘ আড়চোখে লুকিং গ্লাসে আদ্রিয়ানকে দেখে। আদ্রিয়ানের ও চোখ যায় আয়নার উপর, দুইজনের চোখ মিলিত হয়। মেঘ দ্রুত গতিতে তার চোখ সরিয়ে নেয়, আদ্রিয়ান ও তার দৃষ্টি সরিয়ে ড্রাইভ করার উপর মনোযোগ দেয়।
প্রায় এক ঘণ্টা কর গাড়ি এসে পৌঁছায় পার্লারের সামনে। আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়, পিছনের দরজা খুলে দেয়। মেঘ গাড়ি থেকে নামে, সাথে আবিহা ও। আদ্রিয়ান বলে __

“- তোমরা পার্লারের ভিতর যাও। আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি __.
আবিহা বলে __
“- ওকে আদ্রিয়ান ভাইয়া __.
মেঘ কিছু বলে না, সে পার্লারের ভিতরে চলে যায়। আদ্রিয়ান গাড়িতে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু অনেক সময় অপেক্ষার পর ও মেঘ আর আবিহা পার্লার থেকে বের হয় না। আদ্রিয়ান বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যায়, তখনই তার ফোনে কারানের কল আসে। আদ্রিয়ান ফোান রিসিভ করে, কারান বলে __

“- গায়ে হলুদের সাজে, আবিহাকে কেমন লাগছে?
“- আমি জানি না, এখন পার্লার থেকে বের হয় নি __.
“- আচ্ছা আবিহা বের হলে, আমাকে ভিডিও কল দিয়ে ওকে দেখাবি __.
“- কারান বিয়ের আগেই না, তুই বউ পাগল হয়ে যাচ্ছিস __.
“- হুম অবশ্যই হবো। আমার একটা মাএ বউ। তুই যখন বিয়ে করবি, তখন দেখবি তুইও বউ পাগল হয়ে যাবি.
“- আমার বিয়ে বা বউয়ের কোনো কিছুর দরকার নাই.
‘- আনরোমান্টিক তুই একটা। আচ্ছা এখন মনে হয়, আবিহা পার্লার থেকে বের হবে। তুই আমাকে ভিডিও কল দে, আমি আবিহাকে দেখব __.

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৮

আদ্রিয়ান বাধ্য হয়ে কারানকে ভিডিও কল দেয়, তার ফোনের ক্যামেরা সামনের দিকে ঘুরায়। তখনই পার্লার থেকে বের হয়, আদ্রিয়ান আর মেঘ। আদ্রিয়ানের চোখ যায়, মেঘের দিকে। হলুদ পাড়ের শাড়ি, কানে লাল দুল, হাতে সোনালি চুড়ি, আর চুলে লাল গাজরা পড়ে হেঁটে আসছে মেঘ। আদ্রিয়ান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।

তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here