তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ১০
নওরিন মুনতাহা হিয়া
আদ্রিয়ান মেঘের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সূর্যের কিরণের ন্যায়, তার সারা শরীর আলোয় ঝলমল করে উঠে। হলুদ শাড়ি পরহিত অবস্থায় মেঘকে, কতটা আবেদনময়ী আর মায়াবী লাগছে তা হয়ত আদ্রিয়ান ভাষায় বর্ণনা করতে পারবে না। আদ্রিয়ানের চোখ যায়, মেঘের কাজল কালো নেএপল্লবের উপর, সাথে সাথে হৃদ – স্পন্দন বেড়ে যায়। এই চোখে মায়ায় সে আগেও পড়েছে, এই দুই – জোড়া আঁখি সে আগে কোথাও দেখেছে। কিন্তু তার স্বরণ হচ্ছে না।
মেঘের গোলাপি ওষ্ঠ জোড়ায় চোখ যায় তার। কাল রাতে যখন মেঘ তার ভিজা ঔষ্ঠ জোড়া দিয়ে, আদ্রিয়ানের বুকের পশমে স্পর্শ করে।কিছুক্ষণের জন্য আদ্রিয়ান থমকে গিয়ে ছিল, হৃদয় আর শরীর জুড়ে সুপ্ত অবৈধ চাহিদা জেগে উঠে ছিল। যা আদ্রিয়ান এর আগে কখন অনুভব করে নি, অন্য কোনো নারীকে ছোঁয়ার আর্কষণ কাজ করে নি। কিন্তু মেঘের প্রতি এমন আর্কষণ বৈধ নয়, মেঘ তার বউ বা প্রেমিকা নয়। যাকে ছুঁয়ে দেখার বাসনা বা কামনা তার অনুভব হবে। তবুও আদ্রিয়ানের বেহায়া চোখ, শুধু মেঘের উপর সীমাবদ্ধ থাকে। মেঘ পার্লার থেকে বের হয়ে আসে, গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা আদ্রিয়ানের উপর চোখ যায় তার। আদ্রিয়ান কেমন নেশাময় চাহনি নিয়ে, তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যা দেখার সাথে সাথেই মেঘ থমকে যায়, তার পা সিথিল হয়ে যায়।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
আদ্রিয়ান যখন মেঘকে দেখায় ব্যস্ত, তখন কারান তাকে ডাক দেয়। কারণ ফোন স্কিনে শুধু মেঘের উপর ছবি দেখা যাচ্ছে, যা দেখে কারান বিরক্ত হয়ে যায়। কারান বলে _
“- আদ্রিয়ান। আমি গায়ে হলুদের সাজে আবিহাকে দেখার জন্য, ভিডিও কল দিয়েছি। মেঘকে দেখার জন্য না __.
কারানের কথায় আদ্রিয়ানের ঘোর কাটে, সে দ্রুত তার চোখ সরিয়ে নেয় মেঘের উপর থেকে। এরপর ফোন আবিহার দিকে ঘুরিয়ে দেয়, কারান গায়ে হলুদের সাথে আবিহাকে দেখে থমকে যায়। তার বুকের বা – পাশে হাত রাখে, এরপর বলে উঠে __
“- ওয়াও আজ আমার বউটাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আদ্রিয়ান বল তোর হবু ভাবীকে কেমন লাগছে?
কারান কথাটা বলে ফোনের স্কিনে, শুধু আবিহাকে দেখে যায়। তবে আদ্রিয়ান কারানের প্রশ্নটা শুনতে পায়, তবে তার ধ্যান এখন সম্পূর্ণ রূপে মেঘের উপর। আদ্রিয়ান তার ঠোঁট জোড়া দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে __
“- সত্যি ভীষণ সুন্দর লাগছে __.
মেঘ আর আদ্রিয়ান একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে, দুইজনের মধ্যে কারো চোখের পলক পড়ছে না। মেঘকে হঠাৎ করে এমন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে, আবিহা বলে
“- মেঘ কি হয়েছে তোর? হঠাৎ করে হাঁটা থামিয়ে, দাঁড়িয়ে পড়লি কেনো? তোর কি শরীর খারাপ লাগছে?
আবিহার ডাক শুনে মেঘের ঘোর কাটে, সে আদ্রিয়ানের থেকে চোখ সরিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে। গাড়ির দরজা থেকে, পার্লারের রাস্তার দুরত্ব খুব বেশি নয়। যার জন্য খুব শীঘ্রই মেঘ আর আবিহা, গাড়ির কাছে এসে পৌঁছে যায়। আদ্রিয়ান তার ফোনে ভিডিও কলে থাকা, কারানকে বলে _
“- আবিহাকে গায়ে হলুদের সাজে দেখা হয়ে গেছে তোর? এখন ফোন রাখলাম। পরে বাড়িতে ফিরে, সারারাত মনোযোগ দিয়ে আবিহাকে দেখিস। বউটা তো তোর __.
আদ্রিয়ান আর কারানকে কথা বলার সুযোগ দেয় না, ফোন কেটে দেয়। আবিহা আর মেঘ গাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল, আবিহা গাড়ির গ্লাসে নক করে বলে উঠে __
“- আদ্রিয়ান ভাইয়া কার সাথে কথা বলছিলেন আপনি? বাসায় থেকে কেউ ফোন করেছে?
আদ্রিয়ান জানালার গ্লাস নিচে নামায়, এরপর বলে __
“- আমার হাসপাতাল থেকে একজন জুনিয়র ডক্টর, ফোন করেছিল তার সাথে কথা কিছু জরুরি কথা ছিল __.
আবিহা আর মেঘ কথা বাড়ায় না, তারা গাড়িতে উঠে বসে। আদ্রিয়ান আবার ড্রাইভিং সিটে বসে, গাড়ি স্টার্ট দেয়। গাড়ি চলছে আপন গতিতে, সকলে এখন চুপচাপ। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে আদ্রিয়ান বলে উঠে __
“- আবিহা গাড়িতে বসে থাকতে কি তোমার বোর লাগছে? গান শুনবে?
আবিহা হ্যা সূচক সম্মতি দিয়ে বলে __
“- হুম গান কিন্তু শুনা যায়। মেঘ তুই গান শুনবি?
“- হুম শুনব __.
মেঘের সম্মতি পেয়ে, আদ্রিয়ান গাড়িতে থাকা রেডিওর মধ্যে চাপ দেয়। সঙ্গে সঙ্গে বাংলা রোমান্টিক বেজে উঠে _
“- তোকে বলব ভাবি __
“- কিছু অল্প কথায় __.
“- তুই সপ্নে ছিলি __
“- ছিলি গল্প কথায় __
“- আজ তোর নামে রাত নামে __
“- দিন কেটে যায় __.
“- আমার মন তোর পাড়ায় __
“- এসেছে তোর আশকারায় __
[ রাত _ ৬: ০০ টা ]
আবিহা বর্তমানে তার রুমে একা অবস্থান করছে। তার আশেপাশে কেউ নাই সকলে রেডি হতে গিয়েছে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য। আবিহা যখন তার রুমে একা বসে ছিল, তখন হঠাৎ করে তার রুমের দরজায় কেউ নক করে। আবিহা মনে করে হয়ত, তার কাজিন বা মেঘ এসেছে। কিন্তু আবিহার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে, রুমের ভিতরে প্রবেশ করে কারান। আবিহা কারানকে দেখে অবাক হয়ে বলে __
“- কারান তুমি?
আবিহার কথা শুনে কারান, সয়তানি হাসি দিয়ে তার কাছে এগিয়ে আসে। আবিহা কিছু বুঝে উঠার আগেই, কারান তার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যে, আবিহা হুমড়ি খেয়ে কারানের বুকের উপর পড়ে। কারার মৃদু হাসি দেয়, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবিহাকে। আবিহা আজ প্রথম কারানকে জড়িয়ে ধরছে, তার জীবনে কারানই প্রথম পুরুষ যাকে সে মন থেকে ভালোবাসে। তার মাঝেই তার সমস্ত সুখ নিহিত রয়েছে। কিছুক্ষণ অতিবাহিত হয়ে যায়, আবিহা আর কারান একে অপরকে জড়িয়ে ধরে থাকে।
হঠাৎ করে আবিহার তার গায়ে হলুদের কথা মনে পড়ে যায়। আবিহা কারানের হাতের বাঁধন থেকে মুক্তি লাভের জন্য ছটফট করতে থাকে, কারান ও তাকে ছেড়ে দেয়। আবিহা কোমড়ে হাত রেখে, রাগী কণ্ঠে বলে উঠে __
“- কারান তুমি এই রুমে এখন কি করছ? বাড়ির অন্য সদস্যরা, যদি এখন তোমাকে আমার রুমে দেখে নেয় তখন কি হবে? আর আমার কাজিনরা কত দুষ্ট তুমি তো যানো কারান __.
আবিহার কথা সম্পূর্ণ অগ্রার্য করে, কারান সাধারণ ভাবে বলে উঠে __
“- গায়ে হলুদের সাজে, তোমাকে দেখতে এসেছি আবিহা __.
“- আর একটু পর, নিচে আমাদের দেখা হবে কারান __.
“- হুম তা সকলের ভিড়ে, কিন্তু আমি তোমাকে একান্তে আলাদা করে দেখতে চাই। একটু ভালোবাসার মুহুর্ত কাটাতে চাই তোমার সাথে __.
আবিহা কারানকে আর ও কিছু বলতে যাবে, তার আগেই কারান ওকে কোমড় ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। আবিহা চুপ হয়ে যায়। কারান আবিহাকে পাশে থাকা, এক দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে। আবিহার কপালে থাকা, ছোট ছোট তার কানের পিছনে গুঁজে দেয়। এরপর তার পকেট থেকে, হলুদের বাটি বের করে। আবিহা চোখ বড় বড়ে করে, কারানের কাণ্ড দেখে যাচ্ছে। আবিহা অবাক হয়ে বলে __
“- কারান গায়ে হলুদের বাটি কেনো নিয়ে এসেছ তুমি?
“- কারণ তোমার গায়ে সর্বপ্রথম, আমি হলুদ লাগাতে চাই __.
“- কিন্তু কারান? __.
আবিহার কথা শেষ হওয়ার আগেই, কারান তার হাতে থাকা হলুদের বাটি থেকে হলুদ নিয়ে। আলতো হাতে আবিহার দুই গালে, ছুয়িঁয়ে দেয়। আবিহা প্রথমে কারানকে নিষেধ করতে চাই, কিন্তু কারানের হাতের ছোঁয়া পেয়ে আবিহা চুপ হয়ে যায়। কারান প্রথমে আবিহার গালে হলুদ ছোঁয়ায়, এরপর তার মুখ আবিহার কাছে নিয়ে যায়। তার গাল দিয়ে, আবিহার গাল স্পর্শ করে। যার ফলে কারানের গালে ও, হলুদ লেগে যায়।
আবিহা চোখ বন্ধ করে, কারানের ছোঁয়া অনুভব করে। তার শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যায়। কারান এরপর আবিহার কপালে ছোট করে চুমো খায়, আবিহা এখন ও শান্ত। কারান এই সুযোগে তার আঙ্গুল নিয়ে রাখে, আবিহার ওষ্ঠর উপর। আবিহার কম্পিত ওষ্ঠ জোড়ায়, আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে কারান। আবিহা কিছুটা কেঁপে উঠে, তারা দুইজন এখন ঘোরে মধ্যে রয়েছে। কারানের মধ্যে এখন অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছে, সে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অবশ্য কারান চেষ্টা ও করে না, সে আবিহার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। আবিহা চোখ মুখ খিঁচকে বন্ধ করে ফেলে, কারান যখন আবিহার গালে হাত দিয়ে তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিবে৷ তখনই হঠাৎ করে দরজায়, কেউ নক করে __.
আবিহার রুমের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেঘ, কিন্তু দরজা বন্ধ। মেঘ দরজায় নক করে, আর বলে __
“- আবিহা দরজা বন্ধ করে বসে আছিস কেনো? দরজা খোল। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে তো, আবিহা __.
মেঘের কণ্ঠ শুনে আবিহা আর কারানের হুঁশ ফিরে আসে। কারান থেমে যায়, আবিহা ও চোখ খুলে ফেলে। মেঘের ডাক শুনে কারান বিরক্ত হয়, আবিহা কারানকে ধাক্কা দিয়ে তার থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এরপর কারানের দিকে রাগী চোখে তাকায়, আবিহা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। মেঘ ভিতরে প্রবেশ করে, তবে রুমের ভিতরে কারানকে দেখে প্রথমকে অবাক হয়ে যায়।
এরপর যখন আবিহা আর কারানের দিকে, সে খেয়াল করে দেখে তখন সব বুঝে যায়। আবিহার ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন, কিন্তু কারান নিলজ্জের মতো বলে উঠে __
“- মেঘ তুমি যদি এখন দরজায় নক না করতে, বা আর একটু দেরি করে আসতে তাহলে
কারানের কথা বলা শেষ করার আগেই, আবিহা রাগী কণ্ঠে বলে উঠে __
“- কারান তুমি কি এখন রুম থেকে বাহিরে যাবে? না আমার হাতে খুন হবে?
আবিহার রাগী কণ্ঠ শুনে, কারান চুপ হয়ে যায়। মেঘ তাদের কাণ্ড দেখে, মিটমিট করে হাসছে। কারান রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই, মেঘ আবিহার কাছে যায়। এরপর আবিহাকে আরেকটু লজ্জা দেওয়ার উদ্দেশ্য বলে উঠে __
“- কাল বিয়ে অবধি তো অপেক্ষা কর আবিহা। না অধৈর্য হয়ে, বিয়ের আগেই বাসর করার চিন্তা ভাবনা করে ফেলছিস। হুম সত্যি করে বলে? কি করছিলি এতোখন তুই আর কারান ভাই?
মেঘের কথা শুনে আবিহা মিথ্যা অযুহাত দিয়ে বলে __
“- কি আর করব? কথা বলছিলাম।
“- রুমের দরজা বন্ধ করে,কথা বলছিলি?
“- কেনো রুমের দরজা বন্ধ করে কি? কথা বলা যায় না?
“- হুম অবশ্যই যায়, আবার গালে হলুদ ও মাখানো যায় __.
মেঘের কথা শুনে আবিহা লজ্জা পেয়ে যায়, যা দেখে মেঘ শব্দ করে হেঁসে উঠে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয় জিয়া, রিসোর্টের সদর দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। জিয়ার বাবা আর কারানের বাবা বিজনেস পার্টনার, যার জন্য জিয়ার পরিবারকে ইনভাইট করা হয়েছে অনুষ্ঠানে। জিয়ার বাবা আজ আসতে পারবে না, ওনি কাল আসবেন বিয়ের দিন। জিয়ার চোখ যায় আদ্রিয়ানের দিকে, সে মূলত বিয়ের জন্য না আদ্রিয়ানের জন্য এসেছে। জিয়া এগিয়ে যায়, আদ্রিয়ানের কাছে। পিছন থেকে আদ্রিয়ানের হাত ধরে বলে __
“- আদ্রিয়ান __.
হঠাৎ করে আদ্রিয়ানের হাত কেউ ধরে ফেলায়, আদ্রিয়ান পিছনে ফিরে তাকায়। তার হাত শক্ত করে ধরে, দাঁড়িয়ে রয়েছে জিয়া। আদ্রিয়ান জিয়াকে দেখে বিরক্ত হয়ে যায়, এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে ফেলে। কিন্তু জিয়া বেহায়ার মতো আবার, তার হাত ধরে। আদ্রিয়ান জিয়াকে কিছু বলতে যাবে, তখনই সেখানে ফারহানা বেগম চলে আসে। ফারহানা বেগম বলে __
“- জিয়া তুমি এসেছ? কিন্তু তুমি একা কেনো? তোমার আব্বু আম্মু কোথায়? ওনারা আসেন নি?
জিয়া হাসি দিয়ে বলে __
“- না আন্টি ডেডের আজ জরুরি কিছু মিটিং রয়েছে, যার জন্য ওনি আসতে পারবেন না। তবে কাল বিয়ের দিন, অবশ্যই আসবেন __.
জিয়া এখন আদ্রিয়ানের হাত ধরে আছে, আদ্রিয়ানের ভীষণ রাগ হচ্ছে জিয়ার উপর। কিন্তু এখন সকলের সামনে সে সিনকিয়েট, করতে চাই না। আদ্রিয়ান চুপচাপ, জিয়ার অসভ্যতামি সয্য করে নেয়। জিয়াকে দেখে কারান ও তার কাছে আসে, মেঘ আদ্রিয়ান আর হাত ধরার বিষয়টা দেখে। মেঘের চোখ শুধু, তাদের মুষ্ঠিবদ্ব হাতের উপর সীমাবদ্ধ। মেঘের মনে হঠাৎ করে অজানা ভয় জন্ম নেয়।
আবিহা মেঘকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, হাতের ইশারায় তাকে ডাক দেয়। মেঘ আবিহার কাছে যায়, তার পাশে বসে। মেঘ আর সংশয় দূর করতে, সাধারণ ভাবে আবিহাকে জিজ্ঞেস করে __
“- আবিহা। আদ্রিয়ান স্যারের হাত ধরে রাখা, মেয়েটা কে? ওনার বন্ধু?
আবিহা মৃদু হেসে বলে __
“- ওর নাম জিয়া, ও একজন ডক্টর। আদ্রিয়ান ভাইয়া আর জিয়া একই হাসপাতালে জব কর। সম্পর্কে জিয়া আদ্রিয়ান ভাইয়ের প্রেমিকা, তারা একে অপরকে ভালোবাসে __.
মেঘের কানে আবিহার শেষ কথা ছাড়া, অন্য কোন কথায় পৌঁছায় না। ” জিয়া আদ্রিয়ানের প্রেমিকা “।আদ্রিয়ান জিয়াকে ভালোবাসে? মেঘের কণ্ঠ দিয়ে, সম্পূর্ণ কথাটা উচ্চারণ হয় না। মেঘ আদ্রিয়ান আর জিয়ার দিকে তাকায়, জিয়া শক্ত করে আদ্রিয়ানের হাত ধরে রেখেছে। আর আদ্রিয়ান চুপচাপ শান্ত হয়ে, দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু বলছে না? তবে কি আবিহার কথায় সত্য, আদ্রিয়ান জিয়াকে ভালোবাসে? এর জন্য কি সে এতো বছর বাড়িতে ফিরে যায় নি? তার আর মেঘের বিয়ে কখন মেনে নেয় নি? মেঘ আর কিছু ভাবতে পারছে না,সারা শরীর অবশ হয়ে যায়।
তোমার নামে নীলচে তারা পর্ব ৯
মেঘ শুধু আদ্রিয়ান আর জিয়ার দিকে ফ্যালফ্যল করে তাকিয়ে থাকে, তার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানির বিন্দু গড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই মানুষটার অপেক্ষা সে করছে, যে অন্য একজনকে ভালোবাসে? যাকে চোখে না দেখে, কণ্ঠ না শুনে তার প্রেমে পড়েছে, তার মায়ার জড়িয়ে অন্য সকল কিছুকে তুচ্ছ করছে। সে আজ অন্য কারো? তার তিনবার কবুল বলা স্বামী আজ, অন্য কারো প্রেমিক? তার ভালোবাসা, অপেক্ষা,কান্না, মায়ার কি কোনো মূল্য নাই। মেঘ কি এতোটা খারাপ যে, তাকে কেউ ভালোবাসতে পারে না। এক বিন্দু ও না? মেঘের মূল্য কি কারো জীবনে নাই? মেঘ কি তবে ফেলনা?
