তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৫
নওরিন মুনতাহা হিয়া
ইনায়া অবাক চোখে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে থাকে শাফায়াতের কথা অরণ্য কি করে যানে। ইনায়া এই বিষয়ে অরণ্যর সাথে কোনো কথা বলে নাই বা আলোচনা করে নাই। তাহলে কি অরণ্য ইনায়ার উপর গুপ্তচর লাগিয়ে নজর রাখছে আর ইনায়ার নানার ঠিকানা অরণ্য কোথা থেকে জানলো। এই সব ঘটনার পিছনে কোথাও অরণ্য আসল অপরাধী না তো। ইনায়া মনে সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে –
“- অরণ্য আপনি কি করে শাফায়াতের বিষয়ে যানতে পারলেন? আপনি কি আমার উপর লুকিয়ে নজর রাখছেন? আমি আপনার শএু তাই এইসব ঘটনার পিছনে আপনার কোনো ষড়যন্ত্র নাই তো “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর দিকে থেকে দূরে সরে যায় এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালো করে দেখতে থাকে। অন্যদিকে ইনায়া অরণ্যর উত্তরের অপেক্ষা করছে কিন্তু সেই বিষয়ে অরণ্যর কোনো ধ্যান নাই। ইনায়া এইবার ভ্রু কুঁচকে অরণ্যকে জিজ্ঞেস করে –
“- অরণ্য আপনি আমার কথার কোনো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো? আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা কি দেখ যাচ্ছেন?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- অবশ্যই আমার এই সুদর্শন চেহারা দেখছি সত্যি আমি এতো সুন্দর কোনো? কোথাও আমার উপর সুন্দরী মেয়দের নজর না লেগে যায় “।
অরণ্যর কথায় ইনায়া যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছে সে কি জিজ্ঞেস করছে আর অরণ্য কি উত্তর দিচ্ছে। ইনায়া এগিয়ে গিয়ে আয়ানার সামনে থেকে অরণ্যর হাত ধরে পিছনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়। অরণ্য শান্ত হয়ে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু ইনায়া রাগী কণ্ঠে বলে –
“- অরণ্য আমার কথার উত্তর দেন আপনি কি সত্যি আমার বিরুদ্ধে এইসব ষড়যন্ত্র করেছেন? আর শাফায়াত মামার বিষয়ে আপনি কি যানেন? নানু বাড়ির ঠিকানা কে দিয়েছে আপনাকে?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর দিকে এগিয়ে যায় এরপর ইনায়ার কাছে গিয়ে শান্ত গলায় বলে –
“- ইনায়া আপনার সাথে আমার কোনো শএুতা নাই তাই আপনাকে শাস্তি ও আমি দিতে চাই না। আর শাফায়াতের বিষয়ে সব তথ্য আমার কাছে আগে থেকেই আছে। কারণ আপনার বিষয়ে সকল ইনফরমেশন বিয়ের আগে আমি জেনে নিয়েছি। রূপনগর আপনার নানা বাড়ি সেখানে গেলে অনেক তথ্যর বিষয়ে যানতে পারবেন।
“- অরণ্য রুপনগর গেলে কি তথ্য পাওয়া যাবে? শাফায়াত মামা গেছে এক্সিডেন্ট আর পাঁচ বছর আগে বাধ্যর্ক কারণে নানা ও মারা গেছে। এখন সেখানে গেছে কার কাছ থেকে কি তথ্য পাওয়া যাবে?
“- ইনায়া আপনার মামার মৃত্যু স্বাভাবিক না কারণ ওনার মৃত্যুর পর ও কেউ অফিসের এমডির দায়িত্ব পালন করেছে। হয় আপনার মামার মৃত্যুর ঘটনা সাজানো না হয় আপনার আড়ালে অন্য কোনো শএু আছে যে এখনো আগন্তুক “।
অরণ্যর কথায় সম্মতি জানায় ইনায়া অরণ্যর বলা প্রতিটা কথায় যুক্তি আছে। সত্যি তার মামার মৃত্যুর বিষয়ে সঠিক তথ্য তাকে জানতে হবে। শাফায়াতের মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই তার কবর দেওয়া হয়েছে রূপনগরে সেখানে গেলে আসল সত্যি জানা যাবে। আর গ্রামের মানুষ তার নানা আর মামার বিষয়ে তাকে নতুন তথ্য দিতে পারে। আর সব থেকে জরুরি বিষয় ইনায়া কখনো তার নানার বাড়ি যায় নাই তাই সেখানে বেরিয়ে আসা ও হবে।
ইনায়া কথাটা ভাবে এরপর সে বিছানায় বসে এসএসে কোম্পানির কাগজ আরো ভালো করে দেখতে থাকে। রাত প্রায় বারোটা অরণ্য সোফায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু ইনাযার চোখে ঘুম নাই। সারাদিন এই শাফায়াত নাম নিয়ে এতো চিন্তা করেছে যে তার এখন ম্যাথা ব্যাথা করছে। যদি এখন এক কাপ কফি না খায় তাহলে সে শান্তি পাবে না। ইনায়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় এরপর ধীরে ধীরে দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
ইনায়া সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার সময় অনুভব করে তার পিছনে একজন মানুষের ছায়া আসছে৷ ইনায়া ভয় পেয়ে শুকনো ঢুক গিলে সে অতি সাবধানে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যায়। ইনায়া দেখে সেই মানুষ সিঁড়ি দিয়ে তার সাথে নিাে নেমে আসছে। ইনায়া একটু দাঁড়িয়ে নিজেকে শান্ত করে এরপর পিছনে ফিরতে গেলে সে কারো বুকের সাথে ধাক্কা খায়। ইনায়া চোখ খুলে দেখে তার সামনে অরণ্য দাঁড়িয়ে আছে। অরণ্য –
“- ইনায়া কি করছেন আপনি এতো রাতে এখানে?
“- অরণ্য আপনি? তাহলে কি এতোখন আপনি আমার পিছনে আস ছিলেন?
“- হুম আমি। আসলে আমার ঘুম আসছিলো না তাই চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলাম। তখন আপনাকে রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখলাম। যার জন্য আপনার পিছনে এসেছি.
“- ওহ আমি আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম “।
ইনায়া কথাটা বলে সামনের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু তার ভয় করছে একা যেতে। ইনায়া আবার ফিরে আসে অরণ্যর কাছে ওর হাত ধরে বলে –
“- অরণ্য চলুন না কফি খেয়ে। আমার অনেক মাথা ব্যাথা করছে প্লিজ চলুন “।
ইনায়ার কথা অরণ্যর কান অবধি পৌঁছায় নাই কারণ অরণ্য এখন তার হাতে থাকা ইনায়ার হাতকে দেখে যাচ্ছে। ইনায়া খুব শক্ত করে অরণ্যর হাত ধরে আছে যেনো অরণ্যর হাত ছেড়ে দিলে সে পালিয়ে যাবে। ইনায়ার চেহারার কি অদ্ভুত মায়া আছে যা সবসময় অরণ্যকে মুগ্ধ করে। ইনায়ার প্রতি নেশা কাজ করে অরণ্যর। অরণ্যর ভাবনার মাঝে ইনায়া তার হাত শক্ত করে ধরে রান্না ঘরে নিয়ে যায়।
ইনায়া রান্না ঘরের চুলায় চায়ের কাপ বসিয়ে দেয় অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকে৷ ইনায়া মাথার চুল সুন্দর করে বেঁধে নেয় এরপর কফি তৈরি করতে থাকে। ইনায়া বলে –
“- অরণ্য আপনি কফি খাবেন? আমি কি আপনার জন্য এক কাপ কফি তৈরি করব “।
“- ইনায়া আপনি দিলে আমি বিষ ও খেতে নিতে পারি “।
“- যদি কি সত্যি সত্যি কফির মধ্যে বিষ মিশিয়ে দেয়?
“- হুম আমি ও সত্যি সত্যি আমার হাতে বিষ খেয়ে নিবো “।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া মুখে লজ্জা মিশ্রিত হাসি ফুটে উঠে এরপর সে কফি তৈরির দিকে আবার মনোযোগ দেয়।প্রায় দশ মিনিট পর কফি তৈরি হয় ইনায়া কফির কাপ অরণ্যর হাতে দেয়। এরপর নিজের এক হাতে কফি নিয়ে খেতে থাকে। ইনায়া বলে –
“- অরণ্য কফি কেমন হয়েছে?
“- হুম অনেক ভালো “।
“- দেখতে হবে না কে তৈরি করেছে?
“- আমার বউ তৈরি করছে “।
সকলের দৃষ্টি আর্কষণ করছি আমার গল্প অনেক মানুষ কপি করে। এতো আমার কোনো সমস্যা নাই কিন্তু একজন লোক আমার গল্পের পর্ব নামে তার লেখা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। সর্বপ্রথম আমার গল্প আমার পেজ নওরিন মুনতাহা হিয়া এই নামে সার্চ করলে পেয়ে যাবে সেখান দেওয়া হয়। তাই প্রতারক থেকে বিরত থাকুন গল্প মাএ ১৫ পর্ব ]
অরণ্য আর ইনায়ার খুনসুটির মধ্যে তারা কফি খাওয়া শেষ করে এরপর রুমে ফিরে আসে সেখানে এসে ইনায়া বেডে শুয়ে পড়ে। অরণ্য গিয়ে তার সোফায় শুয়ে পড়ে অরণ্য আর ইনায়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে তাদের এক জোড়া চোখের মিলন হয়। ইনায়া চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ে অরণ্য অল্প সময় ইনায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সত্যি কি নিষ্পাপ মুখ যেনো অজস্র মায়া তৈরি কোনো হূর পরী।
সকাল হয়ে যায় অরণ্য আর ইনায়া ঘুম থেকে উঠে পড়ে ইনায়া কার্ভার থেকে কাপড় নিয়ে নিজের ব্যাগে গুছিয়ে রাখতে থাকে। অরণ্য গোসল করতে ওয়াশরুমে যায় এর প্রায় দশ মিনিট পর অরণ্য দেখে সে কাপড় নিয়ে আসতে ভুলে গেছে। অরণ্য বাহিরে থাকা ইনায়াকে ডাক দেয় –
“- ইনায়া আমার কার্ভার থেকে কাপড় এনে দেন একটু? আমি জামা কাপড় নিয়ে আসতে ভুলে গেছি “।
অরণ্যর ডাক শুনে ইনায়া কাপড়ি নিয়ে আসে এরপর অরণ্যর ওয়াশরুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকে ডাক দেয়। অরণ্য হাত বাড়িতে দেয় ইনায়া তার হাতে কাপড় দেয় কিন্তু অরণ্য ভুল করে ইনায়ার হাত ধরে ওকে সহ ওয়াশরুমের ভিতরে নিয়ে আসে। ইনায়া অবাক হয়ে বলে –
“- অরণ্য কি করছেন আপনি?
অরণ্য যখন বুঝতে পারে সে ভুল করে ইনায়ার হাত ধরে তাকে ভিতরে নিয়ে এসেছে। তখন অরণ্য বলে –
“- সরি সরি ইনায়া আসলে আমি খেয়াল করি নাই “।
ওয়াশরুমের ঝর্ণা থেকে পানি পড়তে থাকে যার কারণে অরণ্য আর ইনায়ার কথার মধ্যে ওরা দুইজন ভিজে যায়। ইনায়ার রাগী দৃষ্টিতে অরণ্যর দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক তখন অরণ্যর চোখ যায় ইনায়ার ভিজে যাওয়া শরীরের দিকে। ইনায়া ভিজে যাওয়ার কারণে তার শরীরে শাড়ি শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। ইনায়াকে দেখতে অনেক আর্কষণীয় লাগছে যা দেখে অরণ্য শুকনো ঢুক গিলে ।
অরণ্য জীবনের প্রথম কোনো নারীকে এমন করে দেখছে। অরণ্য নিজের সরিয়ে নেয় ইনায়ার উপর থেকে তবে তার চোখ যায় ইনায়ার ভিজে যাওয়া ঠোঁটের দিকে। ইনায়ার ভিজে যাওয়া ঠোঁট অরণ্যকে বড্ড বেশি আকৃষ্ট করছে অরণ্য হাত দিয়ে ইনায়ার গাল টার্চ করে। ইনায়া কিছুটা কেঁপে উঠে। অরণ্য ইনায়ার কপালে ভিজা চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয়। অরণ্য যখন ইনায়ার ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যাবে তখন ইনায়া কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে –
“- অরণ্য কি করছেন আপনি?
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৪
ইনায়ার কণ্ঠ শুনে অরণ্যর হুঁশ ফিরে আসে সে দূরে সরে যায় ইনায়ার থেকে। ইনায়া তাড়াতাড়ি করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে যায়। অরণ্যর নিজের উপর রাগ হচ্ছে সে কি করে ছিলো একটু আগে। নিজের স্ত্রীকে এতো কাছে দেখে হয়তো কোনো পুরুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অরণ্যর সাথে হয় তো তাই হয়েছে।