তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২০

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২০
নওরিন মুনতাহা হিয়া

রাত প্রায় দশ মিনিট পর রুমে এসে দেখে অরণ্যকে রুমে দেখতে না পেয়ে সে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখে। ওয়াশরুমের দরজা খোলা দেখে ইনায়া বুঝতে পারে অরণ্য ফ্রেশ হয়ে বাহিরে চলে এসেছে। ইনায়ার হাতে থাকা কফি টেবিলের উপর রাখে এরপর বেলকনিতে উঁকি দিয়ে দেখে অরণ্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। অরণ্যর হাতে সিগারেট যা দেখে ইনায়া ভ্রু কুঁচকে অরণ্যর দিকে তাকায়৷ অরণ্য হাতে থাকা সিগারেট যখন ঠোঁটের কাছে নিয়ে এক টান দিতে যাবে।তার আগেই ইনায়া ওর হাত ধরে ফেলে এরপর হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেয়।

ইনায়ার সিগারেট ফেলে দেওয়ার কারণে অরণ্য বিরক্ত হয় তবে সে চুপচাপ থাকে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইনায়া শুধু দেখে যাচ্ছে অরণ্যর এই নীরব শান্ত ব্যবহার। আজ অনেক দিন পর অরণ্যকে এমন শান্ত চুপচাপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছে। ইনায়া বেলকনি থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসে এরপর রুমে এসে টেবিলের উপর রাখা কফির মগ নিয়ে আবার ফিরে আসে। অরণ্য ইনায়ার পায়ের শব্দ শুনে তবুও সে তার দিকে ফিরে তাকায় না বা ইনায়া চলে যাচ্ছেন কি? এই কথাটা জিজ্ঞেস করে না। ইনায়া কফির মগ অরণ্যর মুখের সামনে ধরে আর শক্ত গলায় বলে –
“- অরণ্য আপনার কফি এখন গরম আছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নেন পরে ঠান্ডা হয়ে যাবে আবার। আর পুরুষ মানুষের সিগারেট খাওয়া আপনার পছন্দ না তাই ফেলে দিয়েছি। আই এম সরি “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরণ্য ইনায়ার হাত থেকে কফির মগ নেয় অরণ্যর এমন চুপ করে থাকা তার ভালো লাগছে না। হয়তো ইভানের সাথে ইনায়ার কথা বলা পছন্দ হয় নাই অরণ্যর যার জন্য সে রাগ করে চুপ হয়ে গেছে। অরণ্য যখন একা সময় কাটাতে চাই তখন ইনায়া আর তাকে বিরক্ত করে না সে বেলকনি থেকে রুমে আসার জন্য পা বাড়ায়। অরণ্য তখন বলে উঠে –
“- ইনায়া সিগারেট খাওয়া পছন্দ না আপনার না সিগারেট খাওয়া পুরুষকে পছন্দ না কোনটা সঠিক?
অরণ্য কথা শুনে ইনায়ার পা থমকে যায় পিছনে ফিরে অরণ্যর দিকে দেখে সে নিজের বলা কথা শেষ করে কফিতে মুখ দেয়। অরণ্যকে যে তাকে খোঁচা দিয়ে কথাটা বলেছে তা বুঝতে ইনায়ার খুব বেশি দেরি হয় নাই। ইনায়া মৃদু হাসি মুখে বজায় রেখে বলে –

“- এই পৃথিবীতে ইনায়ার পছন্দের কেউ নাই কারণ যত বেশি সম্পর্ক জড়ায় তত বেশি কষ্ট সয্য করতে হয়। আর আপনি আমার শএু অবশ্যই আমার বড্ড অপছন্দ মানুষ আপনি “।
অরণ্য কফির মগ থেকে ঠোঁট সরিয়ে ফেলে এরপর বলে –
“- মানুষ চাহিদা অনুযায়ী আমাদের ব্যবহার করে আর আমরা মনে করি তারা আমাদের ভালোবাসে। এইটাই হলো জীবনের ধ্বংসের অধ্যায় “।

“- অতৃপ্ত এই পৃথিবীতে আজ যা আয়োজন অর্ধেক তার মায়া, আর বাকি অর্ধেক প্রয়োজন “।
ইনায়া কথাটা বলে নিজের রুমে ফিরে আসে সেখান অরণ্য শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার হাতে থাকা গরম কফির মগে আবার চুমুক বসায়, অরণ্যর যখন অধিক মন খারাপ থাকে তখন সে শান্ত হয়ে আকাশ দেখে। রাতে বেলা গ্রামের আকাশ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে, কি অপরুপ দৃশ্য এক ঝাঁক তারা ফুটেছে তারা সমগ্র আকাশ জুড়ে ছুটাছুটি করছে। অরণ্য যখন অনেক ছোট ছিলো তখন তার বাবা তাকে নিয়ে আসতো ছাদে এরপর থেকে তার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে বড্ড বেশি লাগে।

অরণ্য যখন একা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখে তখন তার মনে হয় পাশে তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসের সুপ্ত ছোঁয়ায় বাবার অস্বস্তি অনুভব করে, সকল বিপদ কষ্টের মাঝে বাবার ছায়া সবসময় তার পাশে থাকে নিজেকে শান্ত রাখতে এই আকাশ আর তার বাবার অস্তিত্ব তাকে সাহায্য করে। অরণ্য কফির মগে হাত দিয়ে এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে –
“- আমার মনে এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেনো তৈরি হচ্ছে খোদা। ইনায়ার প্রতি নিজের ফিলিংস নিয়ন্ত্রণ কেনো করতে পারছি না আমি? যে আমাকে অসম্ভব ঘৃণা করে তার মায়ায় আসক্ত হয়ে কেনো যাচ্ছি আমি। নিজেকে সামলে রাখা বড্ড দায় হয়ে যাচ্ছে আজকাল “।
অরণ্য অসহায় হয়ে কথাটা বলে কিন্তু তার কথার মাঝে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সে প্রতিনিয়ত তিলে তিলে ইনায়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইনায়ার মায়ার বেড়াজালে সে জড়িয়ে যাচ্ছে যেখান থেকে বেড় হওয়ার কেনো উপায় তার জানা নাই। অরণ্য আনমনে বলে উঠে –

“- আমার কাছে তুমি অন্যরকম, ভালোবাসি বেশি প্রকাশ করি কম “।
অরণ্য নিজের একাকিত্ব উপভোগ করতে থাকে অন্যদিকে ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুলের বিনুনি করে যাচ্ছে। প্রায় দুই ঘটনা পর অরণ্য রুমে আসে ইনায়া নিজের ফোনে মেসেজ কর ছিলো নাতাশার সাথে। চৌধুরী বাড়ি থেকে বিয়ে হয়ে চলে আসার পর নাতাশার সাথে তার আর ভালো করে কথা হয় নাই।অরণ্য একবার ইনায়ার দিকে তাকিয়ে দেখে ইনায়া ও ফোন রেখে অরণ্যর দিকে দেখে। দুই জোড়া চোখের মিলন হয় অরণ্য তার ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ বের করে, অফিসের কাজ করতে থাকে।

ইনায়া অরণ্যর ব্যবহার অনেক সময় ধরে লক্ষ্য করে যাচ্ছে অরণ্য যে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে তা ইনায়া বেশ বুঝতে পারে। ইনায়া ফোনে নাতাশার সাথে মেসেজ করা বন্ধ করে দেয় পড়াশোনার কথা বলে, নাতাশাকে বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে দেয়। বিছানায় ফোন রেখে ইনায়া অরণ্যর সামনে আসে, তবুও ও অরণ্য ইনায়ার দিকে না তাকিয়ে ল্যাপটপে কাজ করে যাচ্ছে। অরণ্যর এমন শান্ত রূপ দেখে ইনায়া বেশ বিরক্ত হয় সে অরণ্যর হাত থেকে ল্যপটপ নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে দেয়।
ইনাযার এমন কাজে অরণ্য বিরক্তি নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ইনায়ার দিকে তাকিয়ে বলে –

“- সমস্যা কি আপনার ইনায়া সব জিনিস আমার হাত থেকে কেঁড়ে নিয়ে ফেলে কেনো দিচ্ছেন। বেলকনিতে থাকতে সিগারেট ফেলে দিলেন এখন ল্যাপটপ, এখন কি ল্যাপটপে ও আপনার সমস্যা হয়?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া রেগে গিয়ে বলে –
“- না সমস্যা ল্যাপটপে না সমস্যা হলেন আপনি? এই ইনায়ার জীবনে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা আপদ বিপদ হলো অরণ্য রাজ চৌধুরী “।

“- ইনায়া প্রায় তিনঘণ্টা ধরে আপনার সাথে আমার কথা হয় না। তাহলে কি করে সব সমস্যা কারণ আমি হয়ে গেলাম?
“- হুম অবশ্যই সমস্যার কারণ আপনি। তিনঘণ্টা ধরে আমার সাথে কথা বলেন না কেনো? কি করেছি আমি যে রাগ করে মুখ ভার করে রেখেছেন? ইভান ভাই “।
ইনায়া মুখে ইভানের নাম শুনার আগেই অরণ্যর মাথায় রক্ত উঠে যায়। অরণ্য সোফায় বসে ছিলো আর ইনায়া দাঁড়িয়ে যদিও অরণ্যর উপর একটু ঝুঁকে ছিলো ইনায়া। অরণ্য রাগী দৃষ্টিতে ইনায়ার দিকে তাকায় যেনো চোখ দিয়ে আগুন বের হবে। অরণ্য সামনে ঝুঁকে থাকা ইনায়ার হাতে শক্ত করে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অরণ্যর এমন কাছে ইনায়া হতভম্ব হয়ে যায় হঠাৎ করে এমন করে হাতে টান পড়ায়। ইনায়া সোজা এসে পড়ে অরণ্যর কোলে অরণ্যর রাগী দৃষ্টি দেখে ইনায়া শুকনো ঢুক গিলে।

অরণ্য ইনায়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে আজ অবধি হয়তো অরণ্য ইনায়ার উপর এতো রাগ কখনো দেখায নাই। আর না সব ইচ্ছায় কখনো ইনায়াকে নিজের কোলে বসিয়েছে। অরণ্য ইনায়ার গালে শক্ত করে ধরে বলে –
“- একদম চুপ যদি আর কখনো ওই মুখে ইভানের নাম শুনি, তাহলে কিন্তু আপনাকে খুন করে ফেলবো। ইভান চৌধুরীর কবর খুঁড়তে বাধ্য করবেন না আমাকে ইনায়া “।
“- আ আ আমি শুধু “।
“- কি আমি শুধু? শুনন ইনায়া আপনি শুধু এই অরণ্য রাজ চৌধুরীর আমার বিবাহিত বউ। আর নিজের স্বামীর নাম ছাড়া অন্য কারো নাম মুখে নেওয়া আপনার জন্য পাপ। অতীত থাকা দোষের না কিন্তু অতীতে পড়ে থাকা অবশ্যই খারাপ।
“- অরণ্য আমার গালে ব্যাথা করছে “.
“- ব্যাথা করার জন্যই এমন করে ধরেছি। যদি আপনার মুখে ইভানের নাম আরেকবার শুনি, তাহলে ওই চৌধুরী বাড়ি আর ইভান চৌধুরী কি অবস্থা করব আপনি চিন্তা ও করতে পারবেন না, শএু আমি আপনার আর শএুর ক্ষমতা আর রাগ সম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে “।

অরণ্যর এমন রাগ ইনায়া বিয়ের পর প্রথম দেখেছে। আজ যেনো সেই পুরনো অরণ্য রাজ চৌধুরীকে দেখছে যে তার শএু ছিলো। প্রতিটা বিজনেস মিটিং সহ সব জায়গায় অরণ্যর এমন রাগী চেহারা দেখতো। যদিও বিয়ের পর তার থেকে এমন ব্যবহার কখনো পায় নাই তবে আজ অরণ্যর রাগ দেখে বুক কেঁপে উঠে। অরণ্য আবার বলে –
“- শুনন ইনায়া আমি ওই ইভান চৌধুরীর মতো কাপুরুষ না যে নিজের বউকে ঘৃণা করে বিয়ে করে অন্যর হাতে তুলে দিবো। বউ আপনি আমার তাই রাগ, জেদ,ঘৃণা সব সয্য করতে বাধ্য। মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে রাখুন বউ হন এই অরণ্য রাজ চৌধুরী বউ আপনি “।
অরণ্য ইনায়াকে নিজের কোল থেকে সরিয়ে দেয় এরপর সোফা থেকে উঠে পড়ে। ইনায়া গলায় হাত দিয়ে দেখে সেখানে ব্যাথা হয়ে লাল দাগ বসে গেছে। অরণ্যর বেরিয়ে যাওয়া দেখে ইনায়া বলে –

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ১৯

“- কোথায় যাচ্ছেন আপনি অরণ্য?
“- জাহান্নামে যাবেন আপনি? আর শুনুন যখন আপনার মুখ থেকে আমার জন্য কবুল বের হয়েছে তখন ভালোবাসি কথাটাও বের হবে। আর না হলে কি করে জোর করে ভালোবাসতে হয় তা অরণ্য ভালো করে যানে। ভবিষ্যতে আমার সামনে ওর নাম নেওয়ার সাহস করলে গলায় লাল দাগ না বরং গলায় থাকবে না “।
কালকে আমার পরীক্ষা ইংরেজি যার জন্য গল্প আসবে না। তবুও চেষ্টা করব লিখার আশা করা যেতে পারে তবে সিউর না।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২১