তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২১
নওরিন মুনতাহা হিয়া
প্রায় দশ মিনিট পর অরণ্য রুমে ফিরে আসে ইনায়া তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার গলার আঘাত ভালো করে দেখতে থাকে, অরণ্যকে দেখে ইনায়া তার গলা থেকে হাত সরিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। অরণ্য রুমে ঢুকে বিছানায় বসা ইনায়ার কাছে যায়, ওর গলার দিকে তাকিয়ে দেখানে লাল হয়ে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। অরণ্য নিজের হাতে থাকা ঔষধের বাক্স থেকে ঔষধ বের করে এরপর বলে –
“- ইনায়া মাথা উঁচু করেন। ঔষধ লাগাতে হবে “।
অরণ্য কথাটা বেশ জোরে বলে যা ইনায়া শুনে ইনায়া তাড়াতাড়ি করে তার মাথা উঁচু করে। অরণ্য ইনায়ার সামান্য কাছে এগিয়ে যায় এরপর তার হাতে থাকা তুলার মধ্যে ঔষধ লাগিয়ে নেয়। এরপর ইনায়ার গলায় কেটেঁ যাওয়া স্থানে মলম লাগিয়ে দেয়, ইনায়ার ব্যাথায় শক্ত করে অরণ্যর হাত ধরে ফেলে। অরণ্য ঔষধ লাগানো শেষ হলে বলে
“- ইনায়া আপনি বরং এখন রেস্ট নেন। আমি নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসছি “।
অরণ্য কথাটা বলে ঔষধ টেবিলের উপর রাখে এরপর রুম থেকে বের হয়ে যায় ইনায়া এতোখন চুপচাপ বসে ছিলো, আজকে অরণ্যর এমন রাগী রূপ দেখে ইনায়ার প্রচুর ভয় কর ছিলো যার জন্য সে আর কোনো কথা বলে নাই অরণ্যর সাথে। অরণ্য নিচে যায় খাবার নিয়ে আসতে সেখানে বৃদ্ধ মহিলারা তাকে দেখে জিজ্ঞেস করে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- আরে অরণ্য বাবা তুমি এখানে রান্না ঘরে কি করছো? তোমার কি খিদে পেয়েছে আমি কি কিছু রান্না কর দিব “।
অরণ্য শান্ত গলায় বিনমের সহিত বলে –
“- না নানু আমি এখন কিছু খাব না। আসলে ইনায়া হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছে যার জন্য সে এখন নিচে এসে খাবার খেতে পারবে না। তাই রান্না ঘরে এসে ইনায়ার জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছি “।
অরণ্যর কথা শুনে বৃদ্ধ মহিলা বুঝতে পারে অরণ্য যথেষ্ট কেয়ার করে ইনায়ার। তবে ওনি অরণ্যকে খাবার বাড়তে না দিয়ে নিজেই রান্না ঘর থেকে খাবার বেড়ে অরণ্যকে দেয় অরণ্য ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে খাবার নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে চলে আসেন। ইনায়া বিছানায় শুয়ে ফোনে এসএসে কোম্পানির আগের কিছু ফাইল মনোযোগ সহকারে দেখ ছিলো। রূপনগর গ্রামে আসার লক্ষ্য সে ভুলে যায় নাই, তার মনে আগে নিজের মামার মৃত্যুর বিষয়ে তাকে জানতে হবে।
আদালতের সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে এসএস কোম্পানির এমডি হিসাবে , তাকে সকল দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইনায়ার ভাবনার মাঝে রুমে প্রবেশ করে অরণ্য ওর হাতে খাবার দেখে, ইনায়া সামনে থাকা টেবিলে কাগজ রেখে দেয়। অরণ্য বলে –
“- ইনায়া উঠে পড়ুন খাবার খেয়ে পরে ঔষধ খাবেন। গলায় ব্যাথা যা লেগেছে তার জন্য যদি রাতে জ্বর আসে তখন সমস্যা হতে পারে।
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে অরণ্য খাবারের থালা থেকে চামচ দিয়ে, ভাত মাখিয়ে ইনায়ার মুখে তুলে দেয়। ইনায়া অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি মানুষটা অদ্ভুত, যে অল্প সময় আগে তার সাথে রাগ করে তাকে মেরে ফেলতে চেয়ে ছিলো। এখন সেই তার গলায় ঔষধ লাগিয়ে দিয়েছে নিজের হাতে খাবার খায়িয়ে দিচ্ছে। অরণ্যকে বুঝতে হয়তো ইনায়ার হাজার জনম লেগে যাবে।
অরণ্য বুঝতে পারে ইনায়ার তার দিকে তাকিয়ে আছে তবে সে কোনো কথা না বলে শান্ত হয়ে নিজের কাজ করতে থাকে।খাওয়া দাওয়া শেষ হলে অরণ্য ইনায়াকে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বলে ইনায়া বাধ্য মেয়ের মতো তা করে। অরণ্য নিজের জন্য নিয়ে আসা খাবার খেয়ে, ইনায়াকে জ্বরের ঔষধ খায়িয়ে দেয়। ইনায়া বিছানায় শুয়ে পড়ে তবে অরণ্য সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে।
প্রায় দুই ঘণ্টা পর ইনায়া দেখে অরণ্য এখনো কাজ করছে। বিকালে অনেক সময় ঘুমানোর কারণে ইনায়ার চোখে এখন কোনো ঘুম নাই। ইনায়া অরণ্যর দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলে –
“- অরণ্য আপনি ঘুমাবেন না? প্রায় রাত এগারো টা বেজে গেছে কখন ঘুমাবেন আপনি?
ইনায়ার কণ্ঠ শুনে অরণ্য ল্যাপটপ থেকে নিজের মুখ উঁচু করে ইনাযার দিকে তাকায়। অরণ্য বলে –
“- অফিসের জরুরি কিছু কাজ আছে যা করতে হবে আমাকে। আপনি ঘুমান সময় হলে আমি ঘুমিয়ে পড়ব “।
অরণ্যর কথা ইনায়া শুনে না সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হেঁটে হেঁটে অরণ্যর সোফার কাছে যায়। এরপর ওর হাত থেকে ল্যাপটপ কেঁড়ে নিয়ে অরণ্যর হাত ধরে বিছানায় নিয়ে আসে এরপর বলে –
“- অরণ্য শুনুন না আই এম সরি আর কখনো এমন হবে না বিশ্বাস করেন। সরি অরণ্য আমাকে মাফ করে দিন “।
অরণ্য ইনায়ার কথা শুনে ও না শুনার ভাব করে সে যখন বিছানা থেকে উঠে চলে যাবে তার আগেই ইনায়া তার হাত ধরে ফেলে। ইনায়া শক্ত করে পিছন থেকে অরণ্যকে জড়িয়ে ধরে এরপর কান্না করে দিয়ে বলে –
“- আই এম সরি অরণ্য যার কখনো এমন হবে না। বিশ্বাস করেন আমি আর কখনো আপনার নাম ছাড়া অন্য কারো নাম নিজের মুখে উচ্চারণ করব না। আপনাকে কষ্ট দেয় এমন কাজ করব না “।
ইনায়ার জড়িয়ে ধরে ফেলে দেওয়ার কারণে অরণ্য থমকে যায় তার পা স্থির হয়ে যায়, অরণ্য নিজের পিঠে ইনায়ার হাতে উপস্থিত বুঝতে পারে তার মুখে একটা হাসি ফুটে উঠে। অরণ্য শান্ত হয়ে যায় ইনায়া এখনো কান্না কর৷ যাচ্ছে। ছোটবেলা থেকে যদি ইনায়াকে কেউ অবহেলা করে তাহলে তার বড্ড বেশি কষ্ট হয়।অবহেলা কথাটা ইনায়া খুব অপছন্দ করে, অরণ্য ইনায়ার মুখ উঁচু করে তুলে ধরে এরপর বলে –
“- ইনায়া কি হয়েছে? কান্না কেনো করছেন?
“- আপনি আমাকে ইগনোর কেনো করছেন অরণ্য? আপনি আমাকে বকা দেন আর রাগ করেন যাই করেন আমার সাথে কথা বন্ধ করবেন না। আপনার সাথে কথা না বললে কষ্ট হয় আমার “।
অরণ্য ইনায়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে দেয় এরপর বলে –
“- মিসেস ইনায়া আপনার কি হয়েছে বলুন তো। আগে যখন আপনাকে টার্চ করতাম তখন খুন করে ফেলার হুমকি দিতেন। আর এখন নিজ থেকে জড়িয়ে ধরছেন। সত্যি করে বলুন অরণ্য চৌধুরী প্রেমে পড়ে যান নাই তো আবার?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া ওকে ছেড়ে দেয় ইনায়া দূরে সরে যেতে চাইলে, অরণ্য আবার তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অরণ্য আলতো করে ইনায়ার চোখের পানি মুছিয়ে দেয় এরপর বলে –
“- ইনায়া আপনি যে আমাকে ঘুমাতে বলছেন কোথায় ঘুমাবো আমি? এখানে সোফ নাই আর আপনি আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবেন না?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার মাথার টনক নড়ে সত্যি যে আর অরণ্য কখনো এক বিছানায় ঘুমায় নাই। বাড়িতে থাকতে অরণ্য সোফায় ঘুমায় আর ইনায়া বেডে কিন্তু এখন কি করে ঘুমাবে। অরণ্য বলে –
“- আপনি বিছানায় শুয়ে পড়ুন আমি বরং সোফায় যায়।
অরণ্য যখন চলে যাবে তখন ইনায়া তার হাত ধরে ফেলে এরপর বলে –
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২০
‘- আপনি বরং এখানে ঘুমান। আর বিছানা যথেষ্ট বড়ো ঘুমাতে অসুবিধা হবে না। আপনি এক পাশে ঘুমাবেন আমি অন্য পাশে “।
“- আর ইউ সিউর?
“- হুম সিউর “।