তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৩
নওরিন মুনতাহা হিয়া
সকাল প্রায় নয়টা বাজে অরণ্য খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে আসে ইনায়া অনেক আগেই রান্না ঘরে এসেছে, টেবিলে সকল খাবার সাজানো রয়েছে তবে খাবারের পরিমাণ অনেক। ইনায়া রান্না ঘর থেকে চলে আসে খাবার টেবিলের কাছে, অরণ্য আর ইনায়া খাবার খেতে বসে যায়। বৃদ্ধ মহিলারা তাদের খাবার বেড়ে দেয় তবে আজকে খাবারে হালকা সকালের নাস্তা দেওয়া হয়েছে, ইনায়া যেহেতু খাবার তৈরির আগেই রান্না ঘরে চলে গিয়ে ছিলো যার জন্য সে অতিরিক্ত খাবার তৈরি করতে নিষেধ করে দেয়।
খাবার খাওয়া শুরু করে ইনায়া আর অরণ্য বৃদ্ধ মহিলা তাদের সাথে বসে আছে। প্রায় দশ মিনিট পর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইনায়া উপরে চলে যায়, অরণ্য তার পিছনে পিছনে আসে রুমে। ইনায়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে আর বলে –
“- অরণ্য আপনি রেডি হন তাড়াতাড়ি? থানায় যেতে হবে তো?
ইনায়ার মুখে থানা কথাটা শুনে অরণ্যর মুখ গম্ভীর হয়ে যায় তার পা স্থির হয়ে যায়। অরণ্য ইনায়ার থেকে আসল সত্যি লুকিয়ে রাখতে পারবে না বেশি দিন, কিন্তু সে কি করবে ইনায়া যদি সব ঘটনার পিছনে কারণ আর উদ্দেশ্য জেনে যায় তাহলে তাকে ঘৃণা করবে। অরণ্য কি পারবে ইনায়ার চোখে তার জন্য ঘৃণা সয্য করতে। ইনায়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে অরণ্য এক ধ্যানে তাকিয়ে কি হয়েছে যেনো চিন্তা করে যাচ্ছে, ইনায়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- অরণ্য আপনি কি আমার কথা শুনেন নাই? যান রেডি হন বের হতে হবে?
অরণ্য শান্ত গলায় উত্তর দেয় –
“- এতো সকালে কি থানা খুলবে? মাএ খাওয়া দাওয়া শেষ করেছি একটু রেস্ট নেয় এরপর না হয় যাওয়া যাবে “।
অরণ্য কথাটা বলে দরজার কাছ থেকে হেঁটে রুমের মাঝে প্রবেশ করে, এরপর শরীর ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে যায়। অরণ্যর এমন আচরণ দেখে ইনায়া বলে –
“- অরণ্য গ্রামের মানুষ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাই থানায় পুলিশ তাড়াতাড়ি এসে পড়বে। আর আমাদের যেতে সময় লাগবে? রেস্ট পরে নিবেন এখন রেডি হন?
“- ইনায়া এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছেন? আর আপনার মামার বিষয়ে যদি থানায় কেনো তথ্য না খুঁজে পান তখন কি হবে?
অরণ্য কি সত্যি বুঝতে পারছে না ইনায়া এমন কেনো করছে? তার মামলার রায়ের তারিখ দ্রুত চলে আসছে? আর এসএস কোম্পানির আসল অপরাধী বিষয়ে জানার আগ্রহ ইনায়ার রয়েছে? যদি শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে সঠিক তথ্য না পাওয়া যায় তাহলে কতো বড়ো সমস্যা হতে পারে? অরণ্য শুরু থেকে ইনায়াকে সাপোর্ট করছে? তাহলে এখন তার এমন উদাসীনতার কারণ কি? ইনায়া বলে –
“- অরণ্য শাফায়াত মামার মৃত্যু সাধারণ বলে মনে হয় না? নিশ্চয়ই মামার মৃত্যুর পিছনে কেনো আগন্তুকের ষড়যন্ত্র রয়েছে। থানায় গিয়ে যদি মামার মৃত্যুর বিষয়ে অল্প তথ্য পাওয়া যায় তবে তা অনেক উপকার হবে? যতখন না আসল অপরাধীকে খুঁজে শাস্তি দিতে পারব ততক্ষণ এই ইনাযার মনে শান্তি হবে না।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হালকা ঢুক গিলে ইনায়ার দিকে তাকায়, ইনায়ার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠছে সে তার মামার খুনির বিষয়ে জানার জন্য কতো আগ্রহী। অরণ্য ইনায়াকে যথেষ্ট ভালো করে যানে, যদি ইনায়া কেনো কাজ করার জন্য একবার জেদ ধরে তবে তা সে অবশ্যই করে ছাড়বে। ইনায়ার এমন জেদ অরণ্য জেদ অরণ্যর ভয়কে আরো দিগুণ বাড়িয়ে দেয়, তার এখন গা বেয়ে ঘাম পড়ছে। ইনায়া অরণ্যকে জোর করে রেডি করে এরপর তারা প্রায় বিশ মিনিট পর বেরিয়ে পড়ে থানার উদ্দেশ্য।
তালুকদার বাড়ির সামনে থাকা রিকশায় করে ইনায়া আর অরণ্য থানার উদ্দেশ্য রওনা দেয়, পাশাপাশি সিটে একে অপরে বসে আছে। গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করছে ইনায়া সত্যি রূপনগর গ্রাম, কেনো রূপকথার থেকে কম সুন্দর না। ছোটবেলা থেকে শহরে বড়ো হওয়ার কারণে গ্রামে কখনো আসা হয় নাই ইনায়ার, আজ প্রথম সে গ্রামে ঘুরতে এসেছে আর গ্রামের মনোমুগ্ধকর পরিবেশের প্রেমে পড়ে গেছে।
ইনায়া আর অরণ্য যে রিকশা করে যাচ্ছে সেই রিকশা ওয়ালার সাথে ইনায়া গল্প করছে, তালুকদার বাড়ির নাতি যানার পর রিকশা ওয়ালা তাকে অনেক সম্মান জানায়। ইনায়া তালুকদার বাড়ির ইতিহাস ঐতিহ্য তার নানার স্বভাব, এরপর তাদের পূর্ব পুরুষদের কথা জিজ্ঞেস করছে রিকশা ওয়ালার কাছে। শফিক তালুকদারের সম্পত্তির পরিমাণ বিশাল যা ইনায়া বুঝতে পারে, গ্রামের প্রায় সকল জমির মালিক তার নানা। বর্তমানে উত্তর অধিকারী সূএে তার নামে হয়েছে, গ্রামের অনেক জমি দেখিয়ে রিকশাচালক বলে এইটা তার নানার জমির।
শফিক সাহেবের প্রশংসা শুনে অনেক ইনায়া সারা রাস্তা জুড়ে তার নানার বীরত্ব আর উদার মন মানসিকতার কথা শুনে ইনায়া। ইনায়ার মনে ভীষণ খুশি অনুভব হয়, যদি ও অরণ্য যথেষ্ট শান্ত থাকে তার কণ্ঠ দিয়ে কেনো স্বর উচ্চারীত হয় নাই। বরং অরণ্যর শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে, তার মুখে চিন্তা বিষাদ আর গম্ভীরতার ছাপ ফুটে উঠে। অরণ্যর এমন আচরণ ইনাযার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে রিকশা দিয়ে যাওয়ার কারণে হয়তো অরণ্য বিরক্ত হচ্ছে। যার জন্য সে চুপচাপ তা মনে করে ইনায়া।
সকাল দশটা রুপনগর থানার সামনে রিকশা এসে থামে ভাড়া পরিশোধ করে গাড়ি থেকে নেমে, মাটির উপর দাঁড়ায় ইনায়ার আর অরণ্য। ইনায়ার মুখে নতুন রহস্য আর আসল অপরাধী খোঁজার প্রবল ইচ্ছার আনন্দ ফুটে উঠে, অরণ্যর চোখে মুখে ভয় থানার সামনে দাঁড়াতে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সময় ব্যয় না করে তারা থানার ভিতরে ঢুকে যায় পুলিশের কেবিনে ঢুকে, পুলিশ তাদের দেখে চেয়ারে বসার জন্য অনুরোধ করে। ইনায়া বসে যায় অরণ্য ও বসে যদি ও তার হাত পা কাঁপছে, তবে সব প্রমাণ সে লুকিয়ে রেখেছে ইনায়া আসল সত্যি জানবে না।
তবে এতো অল্প সময়ের মধ্যে সান পুলিশকে মেনেজ করছে পেরেছে না কি তা নিয়ে অরণ্যর যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ইনায়া বলে –
“- রূপনগর গ্রামের পূর্ব জমিদার মৃত শফিক তালুকদারের নাতনি আমি ইনায়া তালুকদার। শফিক সাহেবের একমাত্র ছেলে শাফায়াত তালুকদার অনেক বছর আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তার মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কিছু তথ্য জানার আছে?
ইনায়ার কথা শুনে পুলিশ শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে ধারণা লাভ করে, যদি ও তালুকদার বাড়ির প্রতৈক সদস্যর পরিচয় তার জানা রয়েছে। পুলিশ অফিসার বলে –
“- দেখুন মিসেস ইনায়া শফিক সাহেব এই রূপনগরের যথেষ্ট সম্মানীয় লোক ছিলেন, তবে তার ছেলে শাফায়াত সাহেব এই গ্রামে বেশি থাকেন নাই যার কারণে তার বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। তবে শাফায়াত সাহেবর মৃত্যুর বিষয়ে রূপনগর থানায় কেনো তথ্য নাই “।
পুলিশের মুখে না কথাটা শুনে ইনায়া অবাক পুলিশ তার নানার বিষয়ে যদি জেনে থাকে, তাহলে শাফায়াতের মৃত্যুর বিষয়ে কেনো যানবে না। আর শাফায়াত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় নিশ্চয়ই মৃত্যুর পর থানায় কেনো ফাইল করা হয়েছে, বা তার মৃত্যুর তদন্ত করা হয়েছে। তবে পুলিশের না শুনে অরণ্য মনে মনে খুশি হয়, সানভি যে টাকা দিয়ে সব প্রমাণ লোভ করে দিয়েছে তা অরণ্য বুঝতে পারে। অরণ্য শান্ত হয়ে যায় সে ইনাযার দিকে তাকিয়ে দেখে। ইনায়া বলে
“- শাফায়াত মামার মৃত্যুর পর কি তার মৃত্যুর কেনো তদন্ত হয় নাই? তার মৃত্যুর কারণ কি শুধু গাড়ির এক্সিডেন্ট না অন্য কিছু তা কি জানা হয় নাই? শাফায়াত মামার কি মৃত্যুর কেনো ফাইল কি এই থানায় নাই।
ইনাযাার কথা শুনে পুলিশ অরণ্যর দিকে তাকায়, অরণ্য শান্ত হয়ে বস আছে পুলিশ অরণ্যকে ভালো করে যানে।কারণ সানভি তাকে টাকা দিয়েছে যেখানে অরণ্যর নাম সামনে আসে নাই। পুলিশ অফিসার বলে –
“- না শাফায়াত তালুকদারের মৃত্যুর বিষয়ে কেনো তথ্য থানায় নেই।
পুলিশ অফিসারের এমন শান্ত গলার জবাব ইনায়ার শরীরে রাগ দিগুণ বাড়িয়ে দেয়, ইনায়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় তার রাগ হচ্ছে। অরণ্য যানে এখন ইনায়া কি করবে তবে সে শান্ত হয়ে বসে থাকে৷ ইনায়া যদি একবার আসল অপরাধীর কথা জেনে যায় তাহলে অরণ্যর এতো বছর ধরে করা সমস্ত পরিকল্পনা বৃথা যাবে, শাফায়াত মৃত্যু আর এসএস কোম্পানির আসল মালিকের নাম কখনো সামনে আসবে ন। ইনায়া আর অরণ্য আবার শএু হবে একে অপরে সব রকম চেষ্টা করবে সত্যি আর মিথ্যা আড়ালে রাখতে।
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২২
আজকে আমার পরীক্ষা ছিলো যার জন্য গল্প দিতে পারি নাই। পর্ব যথেষ্ট ছোট হয়েছে তবে কালকে বিকালে বড়ো আর রহস্য গল্প হবে আর ইভান ইনায়া অরণ্যর প্রেমের এিকোণ সমীকরণ আসবে। অপেক্ষা করবেন সবাই।