তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৯

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৯
নওরিন মুনতাহা হিয়া

[ সকাল -১০:০০ ]
তালুকদার বাড়ির রুমের এক দরজায় অনেক সময় ধরে একজন নক করে যাচ্ছে, কিন্তু ভিতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ বা কোনো বক্ত্যি দরজা খুলে দিচ্ছে না। অরণ্য আর ইনায়া অনেক সময় ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে, মূলত তাদের রুমের দরজায় বারবার নক করে যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ মহিলা। সকাল দশটা বেজে গেছে কিন্তু অরণ্য আর ইনায়া ঘুম থেকে উঠে নাই, দরজা খুলে নিচে খাবার খেতে আসে নাই। যার জন্য বৃদ্ধ মহিলা টেনশন করছে, দরজার শব্দ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। ঘুমের মাঝে দরজায় এমন শব্দ শুনে যথেষ্ট বিরক্ত হয় অরণ্য, কপাল কুঁচকে চোখ খুলে দেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ইনায়া।

ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখে অরণ্যর বিরক্ত হয়ে যাওয়া চেহারা বদলে যায়, অরণ্য ইনায়ার দিকে এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ঘুমন্ত ইনায়াকে দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে, ইনায়ার কপালে আসা ছোট ছোট চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয় অরণ্য। কিন্তু দরজার শব্দের কারণে তাদের মধুর সময় খুব বেশি স্থায়ী হয়ে উঠে নাই। অরণ্য বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, এরপর শরীরে শার্ট জড়িয়ে দরজার কাছে যায়। অরণ্য দরজা খুলে দেয় সামনে কয়েকজন বৃদ্ধ মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে, অরণ্য সৌজন্যে রক্ষায় হাসি মুখে বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- কি হয়েছে নানু মণিরা কোনো সমস্যা?
বৃদ্ধ মহিলারা রুমের ভিতরে তাকিয়ে দেখে ইনায়া ঘুমিয়ে রয়েছে, আর অরণ্যকে দেখে মনে হচ্ছে সে সুস্থ আছে বৃদ্ধ মহিলারা বলে –
“- সরি অরণ্য বাবা তোমাদের বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত, আসলে সকাল দশটা বেজে গেছে কিন্তু তোমরা খাবার খেতে আসো নাই। যার জন্য ডাকতে এসেছি তোমাদের “।
অরণ্য বৃদ্ধ মহিলার চিন্তার কারণ বুঝতে পারে অরণ্য বলে –
“- আসলে কালকে বৃষ্টিতে ভিজার কারণে রাতে আমার অনেক জ্বর হয়, ইনায়া সারারাত জেগে আমার সেবা যত্ন করে। যার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যান, আপনারা যান ইনায়া আর আমি নিচে খাবার খেতে আসছি.
বৃদ্ধ মহিলা অরণ্যর মুখে জ্বরের কথা শুনে বলে –

“- জ্বর কি এখনো আছে তোমার অরণ্য? গ্রামে ডক্টর রয়েছে ওনাকে কি কল করব?
“- না জ্বর এখন কমে গেছে টেনশন করবে না আপনারা “।
বৃদ্ধ মহিলারা অরণ্যর জ্বর কমে গেছে শুনে সসত্ত্বির শ্বাস নেয়, তারা সকলে নিচে চলে যায় অরণ্য রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। অরণ্য আবার বিছানায় ফিরে আসে ইনায়ার কাছে, ওর কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ইনায়াকে এরপর ডাক দেয় ইনায়াকে –

“- ইনায়া ঘুম থেকে উঠুন ইনায়া। সকাল দশটা বেজে গেছে তাড়াতাড়ি উঠুন “।
অরণ্যর ডাক শুনে ইনায়ার ঘুম ভেঙে যায়, ইনায়া পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে থাকা অরণ্যর দিকে তাকিয়ে দেখে। অরণ্য তার দিকে ঝুঁকে রয়েছে, সকালে অরণ্যকে এমন করে জড়িয়ে ধরার কথা মনে হয়ে লজ্জায় গাল লাল হয়ে যায়। তবে কাল রাতে অরণ্যর জ্বরের কথা মনে হতেই ইনায়া তার হাত দিয়ে অরণ্যর কপালে ছুয়েঁ দেখে। অরণ্যর শরীরে এখন আর জ্বর নাই, কালকে রাতে অরণ্যর জ্বরের যে তীব্রতা ছিলো ইনায়া ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলো। সারারাত মাথায় পানি আর জল পট্রি দেওয়ার কারণে জ্বর কমর গেছে। ইনায়া বলে –
“- অরণ্য এখন আপনার শরীর কেমন লাগছে? আর সকালে জ্বরের ঔষধ খেতে হবে, আপনি ফ্রেশ হন আমি খাবার নিয়ে আসি “।

ইনায়া কথাটা বলে যখন ঘুমু ঘুমু অবস্থায় বেড থেকে উঠতে যাবে, তখন অরণ্য ওর হাত ধরে ফেলে। অরণ্য ইনায়ার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আর বলে –
“- কি ব্যাপার মিসেস ইনায়া কাল সারারাত এই অরণ্য চৌধুরীর সেবা করলেন? আবার সকালে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লেন? এখন তার শরীরের এতো চিন্তা করছেন? কোথাও অরণ্য রাজ চৌধুরী প্রেমে পড়ে গেলেন না তো আপনি?
অরণ্যর এমন কথায় ইনায়া বিরক্ত হয় না বরং সে হেঁসে জবাব দেয় –

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ২৮

“- যদি প্রেমে পড়ে যায় তাহলে অসুবিধার কিছুই দেখছব না আমি। বিয়ের পর স্বামীর প্রেমে পড়ে যাওয়া জায়েজ আছে, আর শএুর যত নিকটে যাবে তত তার দুর্বলতার বিষয়ে জানা যাবে “।
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য আর ইনায়া দুইজনে হেঁসে দেয় এরপর ইনায়া বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়। অন্যদিকে ইভানের গাড়ি অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩০