তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৩

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৩
নওরিন মুনতাহা হিয়া

[ সকাল নয়টা চৌধুরী বাড়ি ]
সকাল নয়টার সময় চৌধুরী বাড়ির সকলে নাস্তা করার জন্য টেবিলে বসে রয়েছে, প্রভা আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে না বরং সে সবার আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। অন্যদিকে ইভান সারারাত ঘুমায় নাই, তার চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় ইভান, ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে। আজ ইনায়ার সাথে তার মিটিং রয়েছে, কতদিন পর ইনায়াকে দেখবে সে, তার অপেক্ষা প্রহর যেনো শেষ হচ্ছে না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইভান অনেক সময় ধরে নিজেকে তৈরি করে, এরপর রেডি হয়ে নিচে আসে। আজ ইভানের মন মেজাজ যথেষ্ট ভালো, সে হাসি মুখে সবাইকে গুড মনিং বলে আর সবার সাথে খেতে বসে যায়।

অরুণা বেগম ইভানের হাসি মুখ দেখে খুশি হয়, ওনি বুঝতে পারে ইভানের জীবনে প্রভার আগমন ঘটনার কারণ ইভান এতো পরিমাণে খুশি। প্রভার সাথে জীবন শুরু করলে ইভান ভালো থাকবে, অতীতে যা হয়েছে সব ভুলে যাওয়া উচিত। অরুণা বেগম সবাইকে খাবার দেয়, এরপর চৌধুরী বাড়ির প্রতৈক সদস্য সকালের নাস্তা খাওয়া শেষ করে। অফিসের জন্য বের হয়ে যায় প্রভা আর ইভান, প্রভা আজ নিজের গাড়িতে যাবে। প্রভা যখন তার গাড়িতে উঠতে যাবে তখন ইভান বলে –
“- প্রভা আপনি আমার গাড়িতে অফিসে যাবেন আজ। কয়েকটা বিষয় আপনার সাথে কথা বলা জরুরি আমার “।
“- ওকে “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইভানের কথা অনুসারে প্রভা তার গাড়িতে উঠে পড়ে, গাড়িতে বসে তারা অফিসের ফাইল আর মিটিং বিষয়ে কথা বলে। কাজের প্রয়োজনে ইভান আর প্রভার মধ্যে এখন ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, আর প্রভা ইভানের পিএ তাই ওর প্রতিটা বিষয়ে প্রভার মতামতের দরকার হয়।
অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামে ইনায়া আর অরণ্য, সায়মার সাথে সকলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে গাড়ি করে বেরিয়ে যায়। অরণ্যর অফিসে যাওয়ার জচৌধুরী কোম্পানি অতিক্রম করে যেতে হয়। যার জন্য অরণ্য ইনায়াকে লিফট দেয়, গাড়িতে যতখন সময় থেকেছে অরণ্য আর ইনায়া দুইজনে শান্ত ছিলো। অরণ্য ইনায়াকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে, ইনায়া শুধু হুম আর না এইরকম করে জবাব দিয়েছে। প্রায় তিরিশ মিনিট পর তারা চৌধুরী কোম্পানির সামনে এসে, ইনায়া নিজেকে রেডি করে গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার উদ্দেশ্য বলে –

“- ওকে অরণ্য আমি যায় “।
গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার আগে অরণ্য ওর হাত ধরে ফেলে, সামনে থাকা ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলে –
“- ড্রাইভার তুমি একটু বাহিরে যাও “।
ড্রাইভার অরণ্যর কথা অনুসারে বাহিরে চলে যায়, অরণ্য ইনায়াকে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অরণ্য যতটা কাছে নিয়ে আসা যায, ইনায়াকে ঠিক ততটা কাছে সে নিয়ে আসে। ইনায়া অরণ্যর এমন কাজে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়। অরণ্য হাসি মুখে বলে –
“- বউ এতো সময় ধরে আমার থেকে দূরে থাকবে তুমি। তোমাকে অনেক মিস করব, আমার অনেক কষ্ট হবে?
অরণ্যর এমন কথা শুনে ইনায়া বলে –

“- তো এখন কি করব আমি?
ইনায়া কতটা কর্কশ গলায় বলে, অরণ্যর রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজাতে ইনায়ার এমন কথায় যথেষ্ট। তার বউ বড্ড আনরোমান্টিক যখন একটু রোমান্স করার চিন্তা ভাবনা করে, তখন তার বউ সবসময় দূরে সরিয়ে রাখে তাকে। বিয়ের এতোদিন পর বউয়ের আদর ভালোবাসা পাওয়ার সৌভাগ্য অরণ্য হয় নাই। অরণ্য বলে –
“- তুমি একটা কাজ করতে পারো দশ বিশটা চুমু খেতে পারো, আবার চাইলে গাড়িতে বাসর ও করতে পারো। বলো এই দুইটার মধ্যে কোনটা তুমি করতে চাও বউ?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়ার বিরক্তি মাখা মুখ আরো বিরক্তিকর হয়ে যায়, এই লোকটার মাথায় যে কখন কি চলে কেউ যানে না। ইনায়া বলে –

“- হঠাৎ করে আপনি এতো রোমান্টিক কি করে হয়ে গেলেন অরণ্য? আর আমি আপনাকে কেনো দশটা বিশটা কিস করব? গাড়িতে বাসর বা করব কেনো? কে হন আপনি আমার?
ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য ওর মাথায় হাত দেয় আর বলে –
“- হায়রে আমার বউয়ের কি সৃতি শক্তি লোভ পেয়ে গেলো না কি? বাসর করার আগেই যদি বউ বিয়ের কথা ভুলে যায় তাহলে তো সর্বনাশ। বউ তুমি না আমাকে ভালোবাসো? লক্ষী বউ আমার তোমার স্বামীকে চার পাঁচটা চুমো দেও বউ?
অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া বলে –

“- অরণ্য আমি গেলাম আপনি থাকেন। অসভ্য লোক, জঘন্য পুরুষ “।
ইনায়া কথাটা বলে গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, অরণ্য শব্দ করে হাসে। ইনায়ার মুড খারাপ ছিলো কিন্তু অরণ্যর কথা শুনে তার হাসি চলে আসে, তার মন ভালো হয়ে যায়। ড্রাইভার গাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে গাড়ি আবার চলতে থাকে। অরণ্যর ফোনে তখন একটা কল আসে যা দেখে অরণ্য সিরিয়াস হয়ে যায়। অরণ্য ফোন রিসিভ করে বলে –
“- হুম আমার কাজ কতদূর হয়েছে “।
একজন লোক ফোনের রিসিভ হয়, আর বলে –
“- জি স্যার কাজ হয়ে গেছে।
“- তুমি শুধু রূপনগর গ্রামে ইনায়ার যাওয়ার খবর ওনার কানে একবার পৌঁছে দাও। এরপর যা করার আমি করছি “।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩২

চৌধুরী কোম্পানির ভিতরে ইনায়া ঢুকে যায়, ইনায়া নিজেকে শান্ত করে। যদিও অরণ্যর কথার কারণে ইনায়ার হাসি পায়, তবুও সে ইভানের সাথে কথা বলবে দেখা হবে যার কারণে তার মন খারাপ হয়ে যায়। ইনায়া নিজেকে শান্ত করে, এরপর অফিসের ভিতরে চলে যায়। কোম্পানির ভিতরে যায়, ইনায়া তার পিএকে আসতে বলে। তার সকল কাজ তার পিএ সামলায়, ইনায়া মিটিং কেবিনে ঢুকে যায। যেখানে ইভান আর প্রভা উপস্থিত ছিলো। ইভান ইনাযার দিকে তাকায়।

তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৩৪