তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৫
নওরিন মুনতাহা হিয়া
সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইনায়া আবার রুমে ফিরে আসে। এরপর রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। অন্যদিকে অরণ্য নিজের রুমে বসে আছে, অসুস্থতার জন্য অফিসে যেতে পারছে না। কিন্তু এখন তার রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না, সে যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছে। হঠাৎ অরণ্যর মাথায় সয়তানি বুদ্ধি চলে আসে, সে বিছানায় রাখা তার ফোন হাতে নেয়। এরপর অপরিচিত এক নাম্বারে কল করে, অল্প সময় অতিক্রম হয়ে গেছে যাওয়ার পর ফোন রিসিভ করে। অরণ্য বলে ___
___ “- কি ব্যাপার আমার প্রিয় শএু কেমন আছেন আপনি? সাতদিন পর বউকে নিয়ে মালদ্বীপে হানিমুনে যাব। সেখানে কি খুন করার চেষ্টা করবেন না?
____ °★ অপরিচিত মানুষটা অরণ্যর কথা শুনে হাসে। যতই সে অরণ্যর শএু হোক না কেনো, তাকে খুন করার শত চেষ্টা করুক না কেনো। অরণ্যর সাহসিকতার প্রশংসা সে সবসময় করে, যদি মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার কথা অরণ্য না বলতো তবুও সে জেনে যেতো। অপরিচিত মানুষটা বলে —–
____ “- সাতদিন পর মালদ্বীপে হানিমুনে যাবে, কিন্তু এর আগে যদি তোমার বউ এক্সিডেন্টের আসল ঘটনা জেনে যায় তখন কি হবে? ইনায়া কি স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা সয্য করতে পারবে? যদি সাতদিনের মধ্যেই তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
____ °★ অপরিচিত শএু কথাটা অরণ্যকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে। কিন্তু অরণ্য ভয় পায় না বরং সে শব্দ করে হেঁসে উঠে। যেনো তাকে কেউ হুমকি না বরং কৌতূহল শুনিয়েছে। অরণ্যর হাসির শব্দে শএুর সমস্ত শরীর রাগে জ্বলে যায়, অল্প সময় পর অরণ্য হাসি থামায় এরপর বলে ——–
______ “- দয়া করে পরের বার থেকে এমন মজার কথা বলবেন দেখা যাবে আপনার কথা শুনে আমার হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হয়ে যাবে। কামন অন আই ডিয়ায় এনেমি অরণ্য এতোটা কাঁচা খেলোয়াড় নয়। যে সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে ভয় পেয়ে যাবে, তাই আমাকো ভয় দেখানোর ভুল একদম করবেন না —–.
°★ অরণ্যর কথা শুনে অপরিচিত লোক রাগী কণ্ঠে বলে —–
_____ “- তোমার সাহসের প্রশংসা করছি অরণ্য। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো রক্ত কিন্তু তোমার আর আমার একই। আর এক্সিডেন্টের ঘটনার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে, যদি এই প্রমাণ ইনায়ার কাছে যায় তখন কি হবে? তুমি কি পারবে ইনায়ার চোখে তোমার জন্য ঘৃণা সয্য করতে?
°★ অপরিচিত মানুষের কথা শুনে অরণ্য হাসি খুব কষ্ট করে থামায়। এরপর বলে ——-
_____ “- প্রিয় শএু যদি এক্সিডেন্টের ঘটনা ইনায়া যানতে পারে, তবে আপনার এসএস কোম্পানির বিষ মিশানোর কথা সমস্ত শহর যানবে। যদি ইনায়ার চোখে আমি ঘৃণা দেখি, তবে আপনার চোখে মৃত্যুর ভয় থাকবে। আর ইনায়া যদি আমায় ডিভোর্স দেয়, তবে আদালত আপনাকে ফাঁসি দিবে। আগন্তুক শএু ভুলে যাবেন একই রক্ত কিন্তু আমার শরীরে ও রয়েছে, আর আপনার সকল অপকর্মের প্রমাণ আমার কাছে আছে। সো চয়েস ইজ ইউরস মৃত্যু বরণ করবেন, না এক্সিডেন্টের ঘটনার সত্যি লুকিয়ে রাখবেন ———–.
°★ আজ অরণ্যর কথায় আত্মবিশ্বাস রয়েছে যা শএুর মনে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। ফোনের অপর পাশে অবস্থান করা মানুষের বুকের ধুকপুক আওয়াজ অরণ্য শুনতে পারছে। যা শুনে অরণ্যর মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠে। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আগেই যদি শএু হেরে যাওয়ার ভয় পায় তবে তার চেয়ে আনন্দের বিষয় কি হতে পারে। আর যদি এক্সিডেন্টর সত্যিটা ইনায়া জেনে যায়, তবে অরণ্য খুব ভালো করে যানে তার বউকে কি করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভিনয় করায় অরণ্য এক নিখুঁত অভিনেতা, আর বর্তমানে ইনায়া অন্ধ বিশ্বাস করে অরণ্যকে। হাজার তথ্য প্রমাণ যদি ইনায়ার সামনে থাকে, তবুও ইনায়া অরণ্যকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবে।
°★ অপরিচিত শএু মুখে রহস্যকর হাসি বজায় রেখে বলে ——
_____ “- যদি ইনায়াকে তোমার সামনে খুন করি আমি। তখন তোমার এতো জেদ, আর অহংকার কোথায় থাকবে? তুমি ভীষণ স্বার্থপর অরণ্য, শুধু মাএ নিজের খেলার গুটি হিসাবে ইনায়াকে ব্যবহার করে গেলে?
অপরিচিত কণ্ঠে ইনায়ার হত্যার কথা শুনে, অরণ্যর প্রচুর রাগ হয়। অরণ্য বলে —-
____ “- সাহস থাকলে আমার বউয়ের শরীর একটা আঁচড় কেটে দেখান।আর শুনুন ইনায়া আমার খেলার গুটি না বরং ও আমার ভালোবাসা। যদি ইনায়ার কিছু হয়, তবে ভুলে যাব আপনার সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। আমার ইনায়া যদি খুন হয়, তবে আপনার পরিবারের প্রতিটা সদস্যর কবর খুড়ঁব আমি। প্রতিটা লাশকে এমন করে খুন করব যে, রাস্তার কুত্তা অবধি ভয়ে দশ হাত দূরে চলে যাবে।
____ °★ অপরিচিত মানুষটা বলে —
____ “- এতো ভালোবাসো ইনায়াকে? তবে তো ওকে খুন করতে হয়? তোমার বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনো গিফট দেওয়া হয় নাই, কিন্তু হানিমুনে ইনায়ার লাশ উপহার দিব তোমাকে আমি _______.
_____ “- শুনুন বউ হয় আমার ইনায়া সারাজীবন আগলে রাখব ওকে আমি। যতদিন অরণ্য রাজ চৌধুরীর নিঃশ্বাস রয়েছে, ততদিন তার বউয়ের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। আর শুনে রাখুন যদি ইনায়াকে খুন করার চেষ্টা করেন, তবে আপনার কাফনের কাপড় কিনার চিন্তা ভাবনা করে রাখবেন —.
°★ ফোন রেখে দেয় অরণ্য, ভীষণ রাগ হচ্ছে এখন তার। মালদ্বীপে আবার নতুন কোনো বিপদ অপেক্ষা করছে, যা অপরিচিত শএুর কথা শুনে সে বুঝতে পারে। তবে এখন সমস্ত ঝামেলা শেষ করা উচিত, এইবার সকলের সামনে আসল খুনির পরিচয় নিয়ে আসা হবে। সব রহস্য শেষ করে অরণ্য একটা সুন্দর সুস্থ জীবন কাটাতে চাই ইনায়ার সাথে। এতো চিন্তা আর ভয় নিয়ে থাকতে পারবে না, আর ইনায়াকে তার জীবন থেকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দিবে না অসম্ভব ——-.
°★ সময় দ্রুত গতিতে ছুটে যায়। প্রায় সাতদিন চলে যায়, অরণ্য এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে ইনায়ার কাছে নয়, এই সাতদিনে একবার ও অফিসে যাওয়ার অনুমতি দেয় না অরণ্যকে ইনায়া। ঘরে বসে অফিসের কিছু কাজ সে সম্পূর্ণ করে, কারণ ইদানিং ইনায়ার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাচ্ছে। আজ ইনায়া আর অরণ্য মালদ্বীপে যাবে, অনেকদিন পর একসাথে কোথাও ঘুরতে যাবে—–.
তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব ৪৪
°★ ইনায়া অনেক খুশি, কিন্তু অরণ্যর মনে ভয় রয়েছে। মালদ্বীপে যাওয়ার পর কি হবে, তা সে ভাবে নতুন আবার কোন ঝড় অপেক্ষা করছে তার জন্য।