তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ শেষ পর্ব || Suraiya Aayat

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ শেষ পর্ব 
Suraiya Aayat

আজ আমাদের পরিবারে এক নতুন সদস্য আসবে তাইনা!
আরিশ সামনের খোলা পরিবেশের দিকে তাকিয়ে বলল
হ্যাঁ ৷
আপনি কি খুশি নন?
আরিশ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মুচকি হেসে একইভাবে শান্ত হয়ে বলল
আমি খুশি তবে পুরনো দগদগে ঘা গুলো যেন আজকে বড্ড জ্বলন্ত হয়ে উঠছে , মনে করিয়ে দিচ্ছে সব কিছু ৷
আরু আরিসের হাতের উপর হাত রেখে বলল

তা কেন করলেন না আর দ্বিতীয়বার বিয়ে, আমার থেকে তো কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না ৷
আরুর কথা শুনে আরিশ আরুর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে খানিকটা অভিমানী কন্ঠে বলল
আমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করলে তুমি কি সত্যিই খুশি হতে আরুপাখি?
আরু আরিশের কাছে সরে এসে ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল
__” খুশী না হতে পারলেও খুশি হওয়ার চেষ্টা করতাম, এটুকু তো জানতাম যে আপনি ভালো আছেন ৷”
আরিশ আরুর দিকে তাকিয়ে বলল

__” তুমি ভাবলে কি করে যে আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকবো ! আর আমি যদি তোমাকে তোমার একটা ত্রুটির কারণে ছেড়ে দিতাম তাহলে সেটা তোমার প্রতি আমার কোন ভালোবাসা না,সেটা তাহলে শুধুমাত্র আমার ভালোলাগা ৷ ভালোবাসাটা সেদিনও ছিল আজও আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে তা হাজার ঝড় ঝাপটা আসুক না কেন ৷ ভালোবেসেছি একসাথে পথ চলার জন্য ছেড়ে যাওয়ার জন্য নয় এটা মনে রেখো বারবার ৷
__” আজ যদি আমি মা হতে পারতাম তাহলে আমাদেরও এমন একটা বেবি হতো তাইনা , সেও হয়তো এই তিন বছরের মধ্যে গুটি গুটি পায়ে হাটতে শিখে যেত , আদো আদো কন্ঠে আপনাকে পাপা বলে ডাকতো আর আমাকে মামমাম কিন্তু সবার কপালে হয়তো সুখ থাকে না , তবুও দেখুন আল্লাহ আমাদেরকে কোনো-না-কোনোভাবে সে সুখের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৷”
আরিশ কিছু বলছেন না চুপচাপ রয়েছ, মনের মধ্যে বয়ে যাচ্ছে অজানা এক ঝড়,পুরোনো কথাগুলো নতুন করে সব মনে পড়ছে ৷

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরিশ আরূর হাতে হাত রেখে বলল
__” আজ তুমি আমার পাশে আছো এটাই আমার কাছে অনেক, আমার আর অন্য কিছু চাই না ৷ তোমাকে ভালোবেসেছি তোমার সাথে সারা জীবন সুখে থাকার জন্য , বাহ্যিক চাওয়া পাওয়া আজ আমার কাছে ম্যাটার করে না আরুপাখি ৷ আমাদের একটা বেবি নেই তো কি হয়েছে দুজনে দুজনের প্রতি ভালোবাসা আছে এটাই বড় কথা ৷আমাদের সম্পর্কে বেবিটাই বড়ো কিছু হতে পারে না ৷”
আরূ যে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছে, তা আরিশ জানে, আর আরূর কষ্ট সহ্য না করতে পেরে আরুকে এসব সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলছে ৷ বাচ্চা যে আরিশের কত প্রিয় সেটা হয়তো আরুর থেকে আর কেউ ভালো জানে না ৷
আরু একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলে উঠল

__” সেদিনের পর যদি আমি আর বেঁচে না ফিরতাম আপনি কি সত্যিই বিয়ে করতেন না?
কথাটা শুনে আরিশ এর বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো ৷ আরূ সমস্ত পুরনো কথাগুলো টেনে আনছে, অবশ্য পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করে , আরুর মনের কথাগুলো বলে যদি ও নিজেকে হালকা অনুভব করে তাহলে সেটুকু সুযোগ আরিশ আরূকে দেবে ৷
আরিশ আরুর বিয়ের প্লশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে চুপ করে রইলো , প্রশ্নের একটাই উত্তর আর তা হলো
__” না ৷”

আরু হল আরিশের জীবনের প্রথম রমনী যাকে আরিশ ভালবেসেছে, আজো ভালোবাসে আর ভবিষ্যৎ এও ভালোবাসবে ৷ আর সেদিন আরূর কিছু হয়ে গেলে হয়তো আরিশ ও নিজেকে শেষ করে দিতে কিন্তু আল্লাহর রহমতে তেমনটি হয়নি , সবকিছু ঠিকঠাক হলেও মাতৃত্বের অধিকারটুকু হারিয়েছে আরু ৷
__” যানেনতো যখন জ্ঞান ফেরার পর আপনাকে প্রথম দেখেছিলাম তখন খানিকটা সময়ের জন্য আমি ভেবেছিলাম এটা হয়তো আমার স্বপ্ন বা কোন হেলুসিনেশন কিন্তু যখন আপনি আপনার কাঁপা কাঁপা হাতে আমার গালে আলতো করে হাত রেখে বললেন ভালোবাসি আরূপাখি সেই মুহূর্তটা বুঝেছিলাম যে তখন তা স্বপ্ন নয় , আমার প্রানটা এখনো আছে ৷
আমি যখন আপনার কথার পরিপেক্ষিতে উত্তর দিতে পারিনি যে আমি আপনাকে খুব ভালবাসি তখন আপনি আমার হাত ধরে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ছিলেন ৷”

কথাটা বলতে বলতেই আরুর চোখ বেয়ে নোনাজল গুলো বেয়ে পড়লো ৷
সেদিন
আরিশ আরুর হাত ধরে বলতে লাগলো
__” এই আরুপাখি বলোনা ভালোবাসি , তুমি তো আমাকে ভালোবাসো সেটা বলতেই তো আমার কাছে গেছিলে বলো তাহলে এখন কেন চুপ করে আছো, বলোনা একবার ভালোবাসি , তোমাকে এমন চুপচাপ মানায় না তা কি তুমি জানো না , তুমি তো জানো বলো তাহলে এখন কেন চুপ করে আছো বলো ! সারাদিন তুমি কত কথা বল তবুও আমি শুনতে শুনতে কখনো ক্লান্ত হই না , তবে আজ তোমার এই নিস্তব্ধতায় আমি ক্লান্ত ৷ একবার বলো না যে ভালোবাসি ! তোমার মি ঃ অভদ্রটা যে বারবার তা শুনতে চাই ৷”
সেদিন ” আমি আপনাকে ভালোবাসি ” কথাটা বলার ক্ষমতা থাকলে আরুর থাকলে তাহলে হয়তো আরু চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলত যে “আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি , অনেক অনেক !”

আরুর হাত ধরে শক্ত করে মুঠি বুদ্ধ করে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আরিশ বলল
__” এখন তুমি কি আমার সাথে কথা বলবে না বলো? তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো ? আমি তোমাকে বলেছিলাম যে তোমার ভালোবাসাটা আমার কাছে পৌঁছায় না বলে সেই জন্য ? আরে আমি তো তোমার থেকে বেশি বেশি ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কথাগুলো বলতাম তা কি তুমি বোঝনা, আমার সানশাইন কি এতটাই নির্বোধ যে তার প্রিয় মানুষটার কাছে ভালোবাসা পৌঁছাচ্ছে কি না সেটা সে বুঝতে পারছে না ৷ তুমি তো তোমাকে বেশি ভালোবাসো তাহলে আজকে কেন বলছোনা বলো ?”
আরশির কেবিন থেকে এরকম কান্নার আওয়াজ পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে এলেন আরিশের মা আর আরুর বাবা ৷ উনাদের রীতিমতো খারাপ অবস্থা , আরু ওনাদের জীবনের একটা অংশ , মেয়েটাকে এভাবে এই অবস্থায় দেখে নিজেদেরকেঠিক রাখাটা খুব কঠিন তবুও আরিশ যখন হসপিটালে ফুলের তোড়া নিয়ে টলতে টলতে ঢুকলো তখন সকলে নিজেদেরকে পাথরের মতো বানিয়ে নিয়েছিল আর এই প্রতিজ্ঞা করেছিল যে আরিশের সামনে তারা কোনভাবেই কাঁদবে না ৷ ওনারা কাঁদলে ছেলেটা ভেঙে পড়বে ৷

সেদিনের পর থেকে হাসপাতালের মেঝেতে বসে সারাটা দিন কাটাতো , মুখে কোন কথা ছিল না, কেবলমাত্র ফুলের তোড়া টাকে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখতো দিনরাত আর বলতো
__” বলোনা আরুপাখি তুমি আমাকে ভালোবাসো , বলোনা !”
ডক্টর আরিশকে আরুর থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আরিশকে বলল
__” আর ইউ ক্রেজি, আপনি আপনার অসুস্থ ওয়াইফ এর সামনে এভাবে কান্নাকাটি করছেন! পেশেন্টের এখন সেন্স আছে কি হচ্ছে না হচ্ছে তিনি সব বুঝতে পারছেন, এই মুহূর্তে যদি উনি যদি ছোটখাটো একটা ট্রমার মধ্যে চলে যান তাহলে উনাকে আর ঠিক করা কখনও সম্ভব হবে না ৷”
ডাক্তারের কথাশুনে আরিস ডক্টরের জামার কলার ধরে বলল,,,,

__” আপনার সাহস কি করে হয় আমার বউকে নিয়ে এসব উল্টোপাল্টা বলার ৷ কেমন চিকিৎসা করছেন যে আমার আরুপাখি আমাকে বলতে পারছে না যে সে আমাকে ভালোবাসে ৷ কিসের এত ডিগ্রি, কিসের এতো জ্ঞান, আপনাদের কিসের এত শিক্ষা যে একটা ওয়াইফকে তার স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিতে পারছেন না , যেখানে তার স্বামী তাকে বলছি বারবার বলছে যে সে তাকে ভালবাসে কিন্তু তার ওয়াইফ তার কথার কোন উত্তরই দিতে পারছে না !”
আরিসের এমন কাণ্ড দেখে ওর বাড়ির সবাই আরিশ এর কাছে ছুটে গিয়ে আরিশকে কোনরকম ডাক্তারের থেকে সরিয়ে আসলো ৷

ডাক্তার আরিশ কে নিয়ে বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা করলেন ৷
সেদিন ডাক্তার আরিশের এমন ভয়ঙ্কর রূপ দেখে ওকে বলার সাহস পাননি যে অ্যাক্সিডেন্টের গুরুতর আঘাতে আরু মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে ৷
এরপরে দিনের পর দিন যেতে লাগল আর আরু সুস্থ হতে লাগলো, তখনো ডাক্তার আরিশকে কিছুই জানাননি ৷ তবে যেদিন হাসপাতাল থেকে আরুকে রিলিজ করে দেওয়া হয় সেদিন ডাক্তারের কেবিনের উনি আরিশকে ডেকেছিলেন
আরিশ মুচকি হেসে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললো __” ডক্টর আপনাকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেবো তা বলার ভাষা নেই আমার ৷ আই এম রিয়েলি সরি , আর যেটা আমি আপনার সাথে করেছিলাম আসলে সেই মুহূর্তে মাথা ঠিক ছিল না তাই যা নই তা বলেছি, আপনার পেশা নিয়ে আপনার শিক্ষা নিয়ে অনেক কুটু কথা বলেছি , আই এম রিয়েলি সরি ৷তাই যা বলে ফেলেছিলাম প্লিজ কিছু মনে করবেন তার জন্য ৷”

ডক্টর ও আরিসের কথার পরিবর্তে একটা মিথ্যা হাসি দিয়ে বললেন
__” আমি তোমার মনের অবস্থাটা বুঝি , তোমাকে আমার একটা কথা বলার ছিল যা একটু সিরিয়াস ৷”
আরিশ মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে বলল
__” বলুন কি বলবেন !”
ডক্টর একটু কিন্তু কিন্তু করে বলল

__” আমি জানি না আপনাকে কিভাবে আমি কথাটা বলব তবে এটা না বললেই নয় যে আপনার ওয়াইফ আর কোনদিন মা হতে পারবেনা না , অক্সিডেন্ট এর গুরুতর আঘাতের কারনে উনি মা হওয়ার ক্ষমতাটা হারিয়েছেন ৷ অপারেশনের সময় ওনার জনন নালিটা কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে, আর আপনার ওয়াইফ দেড় মাসের প্রেগনেন্ট ছিলেন, এক্সিডেন্ট এর সাথে সাথে উনার বাচ্চাটাও নষ্ট হয়ে যায় , তার সাথে সাথে মৃত্যু হয় আপনার অনাগত সন্তানের ৷”
ডক্টর যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন আরিশ যেন কিছুতেই বিশ্বাস করছিল না তখন কেবলমাত্র একটা কথাই চিন্তা করছিল যে কথাটা ও আরূকে কিভাবে বলবে , আর আরু যখন কথাটা শুনবে তখন কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবে …
আরিশ ডক্টর দিকে থতমত মুখ নিয়ে বলল

__” ওকে ডক্টর ৷”
কথাটা বলে মাথা নিচু করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আরিশ, সেদিন ওর বলার মতো আর কিছুই ছিলো না ৷
কিছুদিন পর,,,,,
আরিশ আরুকে গালে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে আর আরিশ ওকে বলছে
__” আরুপাখি আমরা কিন্তু বেবি নেব না হ্যাঁ !”
আরুশি মুচকি হেসে আরিশের নাকটা টিপে দিয়ে বলল
__” আমি তো ঠিক করেছি আমরা প্রতি বছর বছর একটা বেবি নেব , দারুন আইডিয়া তাইনা!”
আরিশের দিকে চোখ মেরে ৷
আরিশ এবার রেগে চিৎকার করে আরূকে বলল
__” বলেছিনা বেবি নেব না তো নেব না এর থেকে আর একটাও বেশি কথা শুনতে চাই না আমি ৷ হয় বেবি নয় আমি , কোনটা চাও তুমি?”

আরিশের ব্যবহার দেখে আরূ এবার কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
__” আপনি হঠাৎই এসমস্ত কথা কেন বলছেন বলুন তো , আর এই সমস্ত প্রসংগ এখন আসছে না কেন?”
আরিশ উত্তেজিত হয়ে বলল
__” আসছে কারণ তুমি কখনো মা হতে পারবেনা, তোমার সে ক্ষমতাটুকু আর নেই ৷ তোমার অপারেশনের সাথে সাথেই সে ক্ষমতাটূকু নষ্ট হয়ে গেছে ৷”
আর বাকি কথাটা বলে আরিশ আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না , চোখ দিয়ে জল ঝরে পড়ার আগেই আরুর সামনে থেকে চলে গিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালো ৷

আরু হয়তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না হঠাৎ এমন একটা কিছু শুনবে বলে ৷ ও কোনদিন মা হতে পারবে না , ওর বাচ্চাকে নিজের হাতে বড় করতে পারবে না , নিজের হাতে খাওয়াতে পারবে না, তাকে গোসল করাতে পারবেনা , তার মুখ থেকে আর মা ডাক শোনা হবেনা এই কথাগুলো ভাবার পরে থেকে আরু যেন নির্বাক হয়ে গেল ৷ সেই দিনের পর থেকে বেশ কয়েক দিন আরু আর আরিশের সাথে কথা বলেনি ৷ সময় গুলো অনেক কষ্টে পার করেছে ও ৷ আরিশ ও আর ওর সাথে কথা বলে না এই ভেবে যে মেয়েটা নিজের কষ্ট গুলো নিজের মধ্যে জমিয়ে জমিয়ে রাখছে তা যদি একাকিত্বের মাধ্যমে খানিকটা দূর হয় সেই কারণে ৷ তাই আরিশ আর আরূকে কিছু বলেনি ৷

আরিশ আরুর. সাথে কিছু কথা বলে না দেখে আরু ভাবলো যে আরিশ হয়তো ওকে আর চায় না , সময়ের সাথে ওর প্রয়োজনটাও বুঝি ফুরিয়েছে ৷ আরিশের জীবনে বাচ্চাটাই হয়তো সব ছিল ৷ এতদিন কথায় শুনেছে যে বাচ্চা এলে সংসারের বাঁধন নাকি মজবুত হয় , কথাটা আরুর যেন এখন বড্ড বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে, তাই একদিন সাহস করে আরিশকে বলেই ফেলল
__”আপনি আবার দ্বিতীয়বারের মতো একটা বিয়ে করুন , তারপর আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো না হলে আমার সাথে থাকলে আপনি কখনো পৃতিত্বের সুখ অনুভব করতে পারবেন না কারণ আমি শেই সুখটুকু হোক আপনাকে দিতে পারবো না , তাই আপনি যদি নতুন একটা বিয়ে করেন,,,,, ”

কথাটার পর আর কিছু বলতে পারলো না আরু তার আগেই আরিশ আরূকে করে একটা চড় মারলো ,এই প্রথম হয়ত আরিশ আরুকে চড় মারলো ৷ আরিশের চোখে আগুন জ্বালছে , আরু যে এত কিছু ভেবে নেবে সেটা ও ভাবেনি ৷
জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলল
__” তোমাকে বিয়ে করেছি যখন তোমার সাথেই থাকবো , সারাটা জীবন তোমার সাথেই চলবো হাতটা ধরেছিলাম ৷ হঠাৎ তুমি মা হতে পারবেনা বলে তোমাকে ছেড়ে দেব এরকম পুরুষত্ব আরিশ খানের নয় , আর রইল বাকি ডিভোর্সের কথা , তোমাকে তো আমি কখনো ডিভোর্স দিব না আর না তুমি আমার থেকে কোথাও যেতে পারবে না , না চাইলেও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে ৷”

কথাটা বলে আরিশ চলে যেতে নিলেই আরু ওর হাত ধরে ফেলল তারপর আরিসের বুকে অঝোরে কাঁদতে লাগলো ৷ আরিসের ভালোবাসাটা হয়তো বুঝতে পারিনি ও তাই এমন ভুলটা করেছে ৷ ও নিজেও যে মানুষটার সাথে সুখে থাকতে চাই সারাটা জীবন , তার হাত ধরেই বাকিটা পথ চলতে চাই…
কথাগুলো আবার আরিশকে শোনাতেই আরুর চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল তা আরিসের চোখে এড়ালো না, এই মুহূর্তে আরু প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছে তা কমানোর জন্য আরিশ বলে উঠলো
__” চলনা আইসক্রিম খেতে যাই, অনেকদিন যাওয়া হয়না ৷”
আরু চোখের জলটা মুছে বলল

__” আজ নয় অন্য দিন, আজ আমার যেতে ভালো লাগছে না ,আর তাছাড়া আমাদের সংসারে নতুন অতিথি আসবে সেটা কি আপনি ভুলে গেলেন !”
__” ও হ্যাঁ তাইতো , আমিও না বড্ড ভোলামন, দেখেছো তো আজকাল আর কিছুই মনে থাকেনা, সব তোমার থেকে আবার নতুন করে ট্রেনিং নিতে হবে দেখছি তা আমি বুঝতে পেরেছি আরুপাখি ৷”
( আরুর নাকে নাক ঘষে দিয়ে)
__” বেবিকে পেয়ে যেন আমার ভালোবাসাটা না কমে, যদি কমেছে তাহলে কিন্তু হাড্ডি পাসলি সব এক করে দেবো ৷ আমার ভালোবাসাটা কিন্তু সবার আগে এটা মনে রাখবেন হু ৷”
আরিশ আরুকে জড়িয়ে ধরে বলল,,,,

__” এটা তুমি বলছো, রিয়েলি , বিশ্বাস হয় না,একটা চিমটি দাও তো !”
__” ধ্য৷ত !”
পাঁচ বছর পর….
__” আম্মু তলোনা আমলা আইসক্রিম খেতে যাই , অনেক দিন যায় না… ”
__” আচ্ছা একটু ওয়েট করো তোমার পাপা এক্ষুনি চলে আসবে তখন আমরা একসঙ্গে যাব কেমন !”
__” আত্তা মাম মাম….”
কথাটা বলে আরশিয়ান আবার ফোনে গেম খেলতে ব্যস্ত হয়ে গেল ৷ আরু এতক্ষণ ধরে ছেলের দিকে নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে ছিল , কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল ছেলেটা ৷ কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে আরু ছুটে গেল ভাবলো হয়তো আরিশ এসেছে ৷ দরজা খুলে দেখল জেরিন আর ওর হাজবেন্ড আহনাফ দাঁড়িয়ে রয়েছে আর কোলে রয়েছ ছয় মাসের সদ্যোজাত শিশু ৷

আরু জেরিনকে দেখে আনন্দে চেচিয়ে উঠে বলল,,
__” আরে আপু তুমি , আমাকে আগে বলতে বলে যে তোমরা আসছো ৷”
(জেরিনের হাত থেকে বেবিটা কোলে নিয়ে)
__” আপু ভাইয়া ভিতরে আসো,বাইরে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
জেরিন রুমের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পরলো আরশিয়ানের দিকে , ছেলেটা একমনে মোবাইলে গেম খেলছে ৷ নিজের ছেলেটাকে দেখে ওর চোখের কোণে একটু হলেও জল চলে এলো, নিজেকে সামলানোর জন্য আরূকে বলল
__” আরিশকে কোথাও দেখছি না, ও কোথায় ? ও কি বাড়িতে নেই?”
আরু মুচকি হেসে বলল

__” উনি একটু পরেই বাড়িতে চলে আসবে, আর আরশিয়ান একটু আইসক্রিম খাবে বলে বাহানা করছিলো তাই ভাবলাম উনি আসলে একসাথে আইসক্রিম খেতে যাব , তা তোমরাও এসেছে যখন ভালই হল একসঙ্গে যাব সবাই !”
জেরিন খানিকটা ফিকে কন্ঠে বলল
__” আমি গেলে আরিশ যেতে রাজি হবে কি?”
কথাটা শুনে আরুর মুখের হাসি রেখাটা ছোট হয়ে এলো , সেদিনের ঘটনার পর আরিশ এখনো জেরিনকে ক্ষমা করতে পারেনি ৷
আরু ঘটনাটা সামলাতে বলল

__” আরে আপু যাবে না কেন , অবশ্যই যাবে তাছাড়া উনি না গেলে আমি আর আরশিয়ান বললে ঠিক যাবে চিন্তা করো না !”
জেরিন আরুর দিকে তাকিয়ে বলল
__” দেখো তোমার ছেলেটা কত পাকা পাকা কথা বলছে, পুরো আরিশের মতোই ৷”
( আহানাফ আরশিয়ানের সাথে কথা বলছে সে দিকে লক্ষ্য করে ৷)
আরু একবার আসিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল
__” শুধু কি আমার ছেলে ও কি তোমার ছেলে নয়?”
জেরিন খানিকটা মুচকি হেসে বলল

__”আমার থেকেও তোমার ও ছেলে বেশি , তুমি ওকে ছোটবেলা থেকে মানুষ করেছো, মাতৃ স্নেহ দিয়েছো , এর থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না ৷ আমি তোমার সাথে যা করেছি তার অনুশোচনা আজও কাজ করে আমার মাঝে , আর সেই ভুলের জন্য হয়ত আরিশ এখনো আমাকে ক্ষমা করেনি আর হয়তো কখনো করবেও না, আমার জন্য তোমার সন্তান নষ্ট হয়েছে সেটা আমি কি করে ভুলি বলো তাই নিজের সন্তানকে তোমার হাতে তুলে দিতে আমি দুবার ও ভাবি নি , তাই তোমার মন খারাপ করাটা মানায় না গো ৷”
আরু মুচকি হেসে বলল
__” আপু ছাড়োনা পুরনো কথা , যা হয়েছে তা হয়েছে আর দেখো আমাদের এই ছোট্ট পরীটা কত সুন্দর হয়েছে একদম রাজকন্যা ৷”
জেরিন মুচকি হেসে বললো,,,,
__” সত্যিই আরু, আজ তুমি বলে আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছো অন্য কেউ হলে হয়তো ক্ষমা করতো না কখনো….”
আরু কেবল মুচকি হাসলো ওর কথার পরিবর্তে ৷ এই কয়েক বছরে পুরনো সবকিছু ভুলে নতুন করে জীবনটাকে বাঁচতে শিখেছে আরু, নিজের স্বামী সংসার পরিবার নিয়ে খুব খুব খুশি ও , পুরনো সব কথা মনে করে নিজেকে আর কষ্ট দিতে চাইনা….
রাত 11:30,,,,

আরশিয়ান ঘুমোচ্ছে, আরুর চোখে ঘুম নেই, বারবার এপাশ ওপাশ করছে কারণ আরিশ বিছানা ছেড়ে উঠে গেছে অনেকক্ষণ আগেই সাথে করে একটা বইও নিয়ে গেছে তার মাধ্যমে দেখাতে চাইছে যে রাত জেগে উপন্যাস পড়বে কিন্তু তেমনটা হওয়ার নয় তা তো আরু বেশ ভালই জানে তাই উঠে গিয়ে ব্যালকনিতে গেল গিয়ে দেখল বরাবরের মতোই আরিশ শান্ত দৃষ্টিতে ইনুর খাঁচার দিকে তাকিয়ে আছে, সেই খাঁচাতে আজ ইনুর সাথে ইনুর একটা পরিবার আছে আর সেই পরিবরটাকে আরিস খুব যত্ন করে প্রতিপালন করে ৷
আরু আরিশের পাশে গিয়ে বইটা হাতে তুলে নিয়ে কোলের উপর রেখে আরিশের কাঁধে মাথা রেখে বলল __” হঠাৎ উঠে এলেন যে ঘুমাবেন না?”
আরিশ নিজের গায়ে থাকা চাদরটাটা দিয়ে নিজের সাথে আরুকে জড়িয়ে নিয়ে বেশ শক্ত করে জাপ্টে ধরে বলল

তোমার নেশায় আসক্ত সিজন ২ পর্ব ৪০

__” এমনিই, আজ ভাবলাম একটু জোছনা বিলাস করি ৷”
__” আজকাল একা একাও জোছনা বিলাস করেন , আমাকে কি আর ডাকার প্রয়োজন বোধ করেন না নাকি সময়ের সাথে সাথে আমারও প্রয়োজন শেষ হয়ে আসছে !”
আরিশ মুচকি হেসে বলল
__” প্রয়োজন শব্দ টা অনেক বড় আরূপাখি , সেটা কখনো ভালবাসার মধ্যে টেনে এনো না, তাহলে ভালোবাসাটা আর মধুর থাকে না সেটা তিক্ততাময় বলে মনে হয় , তাই আমি চাইনা তোমার আর আমার ভালোবাসার মাঝখানে প্রয়োজন নামক শব্দটা বাধা হয়ে আসুক , তাই এমন কথা টা আর কখনো বলবে না ৷”
আরিশ কে থামিয়ে দিয়ে আরু বলল

__” ভালোবাসি !”
আরিস আরুর কপালে ভালোবাসার পরশ একে বলল
__” আমিও ভালবাসি আরুপাখি তাই বার বার তোমার কাছে ফিরে আসি তোমার নেশায় আসক্ত হতে ৷
আজও সেই পুরোনো দিনের নেশাটার মতই তুমি আমার ভালোবাসা নামক সেই জ্বলন্ত নেশা যেটা থেকে আমি কখনো মুক্তি পেতে চাইনা, এভাবেই তোমাতেই আশক্ত হতে চাই !”
আরু আরিশের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল __” চিরকাল কি এভাবেই আমার নেশাতে নিজেকে আসক্ত করবেন?”
আরিশ মুচকি হেসে বলল তা
__” তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না আরুপাখি, আমি যে #তোমার_নেশায়_আসক্ত ৷”
__” তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রুপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার ৷”

(লেখাঃ সুরাইয়া আয়াত) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন