তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১২

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১২
অহনা আক্তার

রাতে বাড়ি ফিরে মুসকানের জায়গায় তাজমহল কে বসে থাকতে দেখে কপালে ভাজ পরে ফারিশের। হাত-মুখ ধুয়ে এসে চেয়ারে বসতে বসতে মাকে প্রশ্ন করে,
— আজ তুমি যেহ! মুসকান কোথায়? ওহ কি ঘুমিয়ে পড়েছে?
তাজমহল ছেলের পাতে খাবার বাড়তে বাড়তে বলেন,
— আগে বলো ফোন বন্ধ কেনো তোমার?
ফারিশ শার্টের হাতা গুলো আরেকটু ভালো ভাবে গুটিয়ে খাবার প্লেটটা নিজের দিকে আনতে আনতে বলে,

— চার্জ ছিল না। ফোন দিয়েছিলে বুঝি?
— তা আর বলতে! আমি কতবার দিলাম। তোমার বাবা কতবার দিল!
ফারিশের ভ্রু কুঁচকে এলো। সন্দিহান গলায় শুধালো,
— এতো কল দেওয়ার কারণ? বেশি আর্জেন্সি ছিল কি?
— হ্যা আর্জেন্সিই বলতে পারো। তোমার দাদু এসেছিলেন আজকে।
ফারিশের অবাক কণ্ঠ,
— তাই নাকি কখন?
— ওইতো দুপুরের দিকে। মুসকানকে নিয়ে গেলোতো সাথে করে।
সবেমাত্র ভাতের লোকমাটা মুখের সামনে তুলেছিল ফারিশ। মায়ের মুখ থেকে কথাটা শুনামত্রই থমকে গেল। খাওয়ার রুচি আর হলো না। চোখ সরু করে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— মানে?
তাজমহল ছেলের ক্রোধে লাল হয়ে যাওয়া চোখ খেয়াল করেননি। তিনি নির্বিকার হয়ে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলেন,
— এইজন্য ইতো তোমাকে এতোবার ফোন করা কিন্তু তুমিতো….
মুখের কথা শেষ করতে পারলেন না তাজমহল। ফারিশ রেগে খাবার প্লেট সামনে থেকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তাজমহল ছেলেকে এভাবে না খেয়ে উঠে যেতে দেখে অবাক হলেন,
— কি হলো? তুমি এভাবে খাবার রেখে উঠে দাঁড়ালে কেন?
— খিদে নেই।
বলেই গটগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো ফারিশ।
তাজমহল এতো,,,, পিছু ডাকল। খাবার জন্য বলল। রেগে যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করল। কিছুই শুনলো না। হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে তিনি একা একাই বিড়বিড় করতে লাগলেন,, ‘ এই ছেলের রাগ সবসময় নাকের ডগায় নিয়ে ঘুরবে। বউ না বলে চলে গেছে দেখে খেলোই না! আস্ত ব’জ্জা’ত! প্রথমে বউ থাকবে বলে রাগ দেখিয়েছে আর এখন বউ থাকবে না বলে রাগ দেখাচ্ছে। আমার হয়েছে যত জ্বালা। বিয়ে করিয়েও শান্তি নেই…’

ঘরে এসে হাত ঘড়িটা বিছানার উপর আছরে ফেলল ফারিশ। পরপর বন্ধ হয়ে যাওয়া ফোনটাও। শার্টের উপরের দিকের কয়েকটা বোতাম খোলে সমানে পায়চারি করতে লাগল,,
—‘এতোবড় সাহস! এতোওওও !! আমাকে না বলে চলে গিয়েছে! সামনে পাই শুধু একবার,,,
ভীমরতি ছুটিয়ে দিবো একদম! চেনে না আমায়! এর পা যদি আমি না ভে’ঙেছি! অসহ্যকর মেয়ে মানুষ! রাতে যা বলেছে তাই করে দেখিয়েছে! হাতের নাগালে পাই একবার আমাকে জ্বালানোর মজা হারে হারে টের পাওয়াবো….’
চুলে হাত চালিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে ফারিশ। না পেরে টাওয়াল হাতে সুইমিংপুলের দিকটায় চলে গেল। সেখানে গিয়ে পানিতে ঝাপ মেরে সাঁতার কাটতে লাগলো। কিছুক্ষণ বাদে গায়ের শার্টটা ছুঁড়ে ফেলে আবার ডুব দিল। অতিরিক্ত রেগে থাকলে এটাই করে ফারিশ। ঠান্ডা পানিতে ফারিশের মাসল করা ফর্সা বডি ঝলমল করছে।

দু’দিন ধরে মুসকান বইয়ে নাকমুখ ডুবিয়ে পড়ছে। আশেপাশে তাকানোরও সময় নেই তার। পড়তে হবে প্রচুর পড়তে হবে। কিছুক্ষণ বাদেই পরীক্ষার জন্য বেড়িয়ে পরতে হবে। বিয়ের চক্করে সে একদম পড়ালেখা ভুলতে বসেছে। রাহিলা মেয়ের পছন্দের ভুনাখিচুড়ি আর গরুর গোস্তো প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে মেয়ের রুমে ঢুকলেন। মুসকান না করার আগেই তিনি এক লোকমা তুলে মেয়ের মুখে ঢুকিয়ে দিলেন। ‘কোনো না শুনবো না। চুপচাপ খেয়ে তারপর পরীক্ষা দিতে যাবি।’
মুসকান মুখের খাবারটা কোনো মতে গিলে বলল,
— দেরি হয়ে যাচ্ছে তো আম্মা। এসে খাওয়া যেত না?
— হোক দেরি। খাবার না খাইয়ে নড়তে দিব না আমি তোকে। পেট ঠান্ডা না থাকলে পরীক্ষায় মাথাও ঠান্ডা থাকবে না।
মুসকান আর কথা বাড়ালো না। বইয়ে মুখগুজে মায়ের হাতে লোকমা খেতে লাগলো।

___এতোদিন পর স্কুলে আসায় বন্ধু-বান্ধবিরা সবাই মিলে মুসকানকে জেঁকে ধরেছে। কিভাবে বিয়ে হলো? কখন হলো? এতোদিন কোথায় ছিল? স্কুলে আসেনি কেন ? এসব প্রশ্ন করে বেচারির মাথা অবশ করে দিয়েছে। রেহাই পেল এক্সামের ঘন্টা পরায়। নাহলে যা পড়ে এসেছিল সবই খেয়ে ফেলতো এই বিচ্ছুদের ঠেলায়। বাংলা ফাস্ট পার্ট এক্সাম গিয়েছে আজ মুসকানের। বেশ ভালো দিয়েছে। ফেরার পথে বান্ধুবিদের সাথে চটপটি আর ফু্চকা খেয়ে আড্ডা মাস্তি করে এসেছে। স্কুল ড্রেসে দুই বিনুনি করা পরিপাটি মুসকান কে আজকে যেন আরো সুন্দর লাগছে।
এক্সাম ভালো হওয়ার খুশিতে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে ঘরে ঢুকলো মুসকান ।

দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে ডানে-বামে না তাকিয়ে সোজা গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়াল। আয়নায় স্কুল ড্রেসে নিজের প্রণবন্ত রূপটা দেখে এখন নিজেরই শান্তি লাগছে। লম্বা করে একটা নিশ্বাস টেনে কোমর সমান চুলগুলোর বিনুনি খোলতে লাগল মুসকান। আরেকটু খেয়াল করলেই হয়ত দেখতে পেত একজোড়া নেশাক্ত চোখ তাকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে। মুসকানের সেই দিকে খেয়াল নেই। সে আপন মনে নিজের খোলা চুলগুলো পিঠ জুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে স্কার্ফ আর ভি-বেল খোলে ফেলল। ড্রেসের সামনের দিকে দু’টো হুক খোলে চেঞ্জ করার জন্য পেছনে ঘুরতেই ফারিশকে দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো। শরীরের জোরে এক চিৎকার দিতে যাবে ঠিক তখনই ফারিশ ছুটে এসে মুসকানের মুখ চেপে ধরে। এতো জোরেই চেপে ধরেছে যে সে শ্বাসও নিতে পারছে না। এক হাতে মুসকানের কোমর অন্য হাতে মুসকানের মুখ শক্ত করে চেপে দাড়িয়ে আছে ফারিশ। মুসকানকে সমানে ছটফট করতে দেখে ঘর কাঁপিয়ে গর্জে উঠলো,

—‘ আমাকে না বলে এখানে চলে আসার সাহস কি করে হলো তোমার ?? বলো ??? ‘
ফারিশের গর্জনে আর হিংস্র চোখের দিকে তাকিয়ে মুসকান আরো কুঁকড়ে গেল। ভয়ে হাটু কাঁপছে তার। ফারিশ শক্ত করে ধরে না রাখলে এতোক্ষণে পরেই যেত। মুসকানকে ভয়ে কাঁপতে দেখে ফারিশ রেগে বলল,
— এখন কাঁপছো কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কাঁপতেও পারবে না তুমি !!
মুসকানের গলায় শব্দ আঁটকে গেছে। সে ফ্যালফ্যাল চোখ করে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে।
দু’দিন পর মুসকানকে নিজের সামনে দেখে ফারিশ যেন ঘোরে চলে গেল। মুগ্ধ হয়ে কেবল স্ত্রীর নজরকাড়া চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে রইল।

মুসকানের ফর্সা গলার খোলা অংশের দিকে চোখ পরতেই ফারিশের শান্ত মস্তিস্ক অশান্ত হয়ে গেল। মুখ থেকে হাত নামিয়ে গলায় ঠোঁট এগিয়ে নিল সে। শ্বাসনালীতে দাঁড়ির খোঁচা পেতেই মুসকানের সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। পরপর শ্বাস টেনে ফারিশের বুকের দিকের শার্ট মুঠি বদ্ধ করে ধরল। অস্পষ্ট স্বরে ফরিশকে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই ফারিশ তার অল্পসংখ্যক খোলা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিল। আচমকা এমন হওয়ায় মুসকান থরথর করে কাঁপছে । ফারিশের এক হাত ততক্ষণে মুসকানের চুলের মুঠিতে। নেশায় হারিয়ে গেছে ফারিশ। মুসকানের নরম ঠোঁটে উন্মাদ হয়ে আক্রোশ মিটাচ্ছে। মুসকান ছটফট করে কয়েকবার মাথা ঘুরিয়ে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু সফল হয়নি।

বেশ সময় নিয়ে মুসকানকে ছেড়েছে ফারিশ। দু’জনের নেওয়া ঘনঘন নিশ্বাস এখনো একে অন্যের মুখে
পড়ছে। মুসকান ভুলেও তাকাচ্ছে না ফারিশের দিকে। গালে গরম আভা নিয়ে চুপচাপ নিচে তাকিয়ে আছে। ফারিশ মুসকানের থুতনিতে হাত রেখে মুসকানের লাজুক মুখটাকে উঁচু করে ধরল। মুসকান খিঁচে চোখ বুঝে আছে। ফারিশ বাঁকা হাসলো। মুসকানের ভেজা লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁটটা আলতো করে ছুয়ে দিয়ে বলল,
—‘ মুড চেঞ্জ হয়ে গেছে তাই বেঁচে গেলে। দ্বিতীয়বার এই ভুল করলে তোমায় আস্ত রাখবো না আমি। কা’মড়ে কা’মড়ে খেয়ে ফেলবো একদম। ‘

মুসকান আর পারছে না। লজ্জায় বুঝি এবার বেহুশই হয়ে যাবে। ফারিশ বিছানায় গিয়ে আয়েশ করে বসে বলল,
— যাও গিয়ে তৈরি হয়ে নাও। তোমাকে নিয়ে যেতে এসেছি আমি। এসব পরীক্ষা ফরীক্ষা সব বাদ। বউ ছাড়া এক মুহূর্তও চলবে না আমার।
মুসকান যেন আকাশ থেকে পড়ল। পরীক্ষা বাদ মানে। পড়ালেখা ইতো তার সব। এটা বাদ দিবে কি করে। সে সময় নিয়ে শ্বাস টেনে নিজেকে ঠিক করল। ফারিশের দিকে তাকিয়ে হালকা আওয়াজে বলল,
— আমি পড়ালেখা করতে চাই।
ফারিশ আয়েশি ভঙ্গিতে তাকালো। ভ্রুর মাঝে ভাজ ফেলে বলল,

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১১

— লাভ কি এতে? আমিতো তোমায় চাকরি করতে দিবো না!
মুসকান বেক্কল বনে গেল। তড়িৎ গতিতে প্রশ্ন করল,
— কেন? চাকরি করতে দিবেন না কেন?
— কারণ আমি চাই না আমার বউ অন্যকারো জন্য কাজ করোক!
— কিন্তু আমিতো নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই !
ফারিশের এবার মেজাজ খিঁচে গেল,
— আশ্চর্য! তোমার কি পা নেই?
মুসকান হতভম্ব, বিস্মিত, বিমুঢ়, অত্যাশ্চার্য….

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৩