তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৫

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৫
অহনা আক্তার

মুসকানের জ্ঞান ফিরলে এরশাদ তালুকদার স্পষ্ট জানিয়ে দেন আজ কোনো ভাবে তাদের যাওয়া চলবে না। যেতে হলে কাল যেতে হবে। কেউ আর এরশাদ তালুকদারের কথা অমান্য করেনি। ফারিশও চায় মুসকান এই অবস্থায় আজকে না যাক। মেয়েটা এমনিতেই দূরের জার্নি করতে পারে না। আজ গেলে আরো দুর্বল হয়ে পরবে।
নিজের রুমে আধশোয়া হয়ে বসে আছে মুসকান। রাত প্রায় দশটা। ফারিশ রাতুল কে নিয়ে হাটের দিকে গিয়েছিল। সবে মাত্র ফিরেছে। হাতে মুসকানের জন্য গরম গরম চটপটি। চটপটি দেখে মুসকান বেড থেকে লাফিয়ে নামলো। খুশি হয়ে বলল,

— আপনি বুঝলেন কি করে আমার এখন চটপটি খেতে ইচ্ছে করছে?
ফারিশ মুচকি হাসল। দুষ্ট স্বরে বলল,
— কি করে যেন বুঝে গেলাম। না বুঝার উচিৎ ছিল।
মুসকান একটা স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে চটপটে হাতে চটপটির প্যাকেট খোলতে শুরু করল। তার এখন ফারিশের টিটকারি শোনার সময় নেই। চটপটি খেতে হবে। জিভে জল চলে আসছে। মুসকান হাক ছেড়ে মিন্নি, তিন্নি, রাতুল, ফাইজাকে ডাকতে লাগল। ফারিশ বাঁধা দিল,
— ওদের জন্যও এনেছি। খাচ্ছে ওরা। তুমি খাও।
এতটুকু বলে ফারিশ ফ্রেশ হতে চলে গেল। গরমে আর ঘামে ভিজে চুবচুবে হয়ে আছে সে। এখানে এসিও নেই যে ঠান্ডা হবে। সাওয়ার না নিলে শান্তি লাগবে না তার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতুল মুসকান কে ডাকতে ডাকতে তার ঘরে এলো। এসে দেখে মুসকান চোখ বুঝে সেই রকম ফিল নিয়ে চটপটি খাচ্ছে। রাতুল মেকি হাসল। মুসকানের প্লেট থেকে গপাগপ কয়েক চামচ নিজের মুখে চালান করে দিল। মূলত এটার জন্যই এসেছে সে। নিজের প্লেটের থেকে খেয়ে মিন্নি, তিন্নি থেকে খেয়ে এবার এসেছে মুসকানের কাছে। মুসকান চোখ খোলে রাতুল কে নিজের প্লেট থেকে চটপটি খেতে দেখে দ্রুত প্লেট আড়াল করে ধরল। রাতুল আরো নিয়ে খাওয়ার জন্য মুসকানকে জ্বালাচ্ছে। এমন না যে সে চটপটি বেশি খায় বা আরো খেতে ইচ্ছে করছে। মুসকানকে জ্বালানোর জন্যই সে এমন করছে। তাদের গ্রামের হাটে বসা জামাল চাচার চটপটি সব থেকে মজার। অনেক দূরের থেকেও মানুষ এসে পরে এই চটপটি খাওয়ার জন্য। বিয়ের আগে রাতুলই হাটে গিয়ে মুসকানকে চটপটি এনে খাওয়াতো। এখন ফারিশ খাওয়ায়। মুসকানের সাথে ফারিশ যতদিন ঘুরেছে ততদিনই মুসকান ফুচকা, চটপটি খেয়েছে। পরীক্ষার মাঝে রেগুলার এগুলো খেয়েতো সে একদিন ভয়ংকর পেটে ব্যাথা তুলে ফেলেছিল। কিন্তু ভুলেও সে কথা ফারিশ কে বলেনি। তাহলে দেখা যাবে তাকে আর খেতেই দিবে না। বাড়ি বয়ে নিয়ে আসবে তো দূর।
ফারিশের ডাকে দু ভাইবোন শক্ত হয়ে দাঁড়াল। ফারিশ ওয়াশরুম থেকে মুসকানকে ডাকছে টাওয়াল দিয়ে যাওয়ার জন্য।
মুসকান রাতুলের হাতে টাওয়াল ধরিয়ে দিয়ে বলল,

— ধর তোর ভাইয়াকে গিয়ে দিয়ে আয়। আমি গেলে তুই আমার চটপটি পুরোটা ফিনিশ করে ফেলবি।
রাতুল মুসকানের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে টাওয়াল হাতে ওয়াশরুমের কাছে আসল। হাত বাড়িয়ে টাওয়ালটা ফারিশের দিকে এগিয়ে দিতেই ফারিশ মুসকান ভেবে খপ করে রাতুলের হাত চেপে ধরল। মুসকান চোখ ছোটছোট করে রাতুলকেই দেখছিল। ফারিশকে রাতুলের হাত চেপে ধরতে দেখে বি*সু*ম খেয়ে ওঠল। ‘ ফারিশ মুসকান ভেবে রাতুলের হাত ধরে টানাটানি করছে। রাতুল দুষ্ট হেসে মুসকানকে ভ্রু নাড়াচ্ছে। ‘ মুসকান গরম মুখ নিয়ে দ্রুত দরজার সামনে আসল। কিছু বলতে গিয়ে লজ্জায় কথা আটকে গেল। রাতুল মজা নিচ্ছে। এদিকে ফারিশও হাত ছাড়ছে না। রাতুল দুষ্ট হেসে বলল,

— ভাইয়া দয়া করে এই হাতটা ছেড়ে দিন। এটা আমার হাত। মুসকানের হাত টেনে নিয়ে ফারিশের হাতে দিয়ে বলল,
— এটা আপনার বউয়ের হাত।
ফারিশের কি হলো বুঝা গেল না টাওয়াল নিয়ে ঠা*সস করে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিল। এদিকে রাতুল মুসকানের দিকে তাকিয়ে হাসছে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে। মুসকান রাতুলের হাসি দেখে একটা ভেঙচি কাটে,
— এতো হাসার মতো কিছুই হয়নি এখানে হুহ্।
রাতুল তাও হাসছে। ফারিশ দু’মিনিটের ব্যবধানে ওয়াশরুমের দরজা খোলে বের হলো। টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে রাতুলকে বলল,

— তোমরা ভাইবোন সব এমন পাটকাঠির মতো কেন বলোতো? কোনটা কার হাত বুঝাই যায় না! এবার থেকে ভিটামিন খাবে বেশি করে।
মুসকান রেগে বলল,
— আপনাকে হাত ধরে টানাটানি করতে কে বলেছে?
— কে বলবে আবার! আমার বউয়ের হাত ধরে আমি টানাটানি করতেই পারি ! তুমি টাওয়াল দিয়ে রাতুল কে পাঠিয়েছো কেন? নিজে আসতে পারলা না?
মুসকান আর কথাই বলল না। রাতুল এখন থেকে এটা নিয়ে তার সাথে মজা নিবে উফফফ!
____সকাল হতেই সবাই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। যাবার পথে মুসকান, ফারিশ আর জহির মুসকানের আব্বার ক*বর জিয়ারত করে গেছে। বাবার ক*বরে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পরে মুসকান। বারবার তার আব্বার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসতে থাকে। গাড়িতে ওঠেও কান্না থামাতে পারেনি সে। পুরাটা রাস্তা বাবার স্মৃতিচারণ করে এসেছে।

পুরোদিন ব্যস্ততায় কাটিয়ে সন্ধ্যার আগে আগে বাসায় আসে ফারিশ। আর এসেই মুসকানকে তাড়া দিতে লাগলো। তার ব্যাচমেটরা মিলে একটা গেট টুগেদারের আয়োজন করেছে। সেখানে ফারিশের বন্ধুরা বারবার বলে দিয়েছে মুসকান কে নিয়ে যেতে। কিছু বলা নেই কওয়া নেই ফারিশ হুট করে এসে মুসকানকে বলছে তৈরি হতে। মুসকান বিস্ময় নিয়ে বলল,
— তৈরি হবো কেন?
— গেট টুগেদার আছে একটা। সবাই ফোন করছে। জলদি তৈরি হও। আমি একটা কল এ্যাটেন্ট করে আসছি।
মুসকান সাবলীল ভাবে না করে দিল,
— দেখুন আমার না আজকে খুব ক্লান্ত লাগছে। আমি যাব না।
ফারিশ গম্ভীর স্বর প্রয়োগ করল,
— হ্যা, না এসব শুনতে চাইনি আমি। তৈরি হয়ে এসো জলদি। আর হ্যা অবশ্যই শাড়ি পরবে।
মুসকান মুখ লটকিয়ে বলল,

— সেখানে নিশ্চয়ই আপনার মে’ন্টাল এক্স হিয়া থাকবে!
— ফ্রেন্ডদের গেট টুগেদারে ফ্রেন্ড থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
মুসকান তেতে উঠল,
— এইজন্যই যাব না আমি। ওই মহিলার সামনেও পরতে চাই না আর । দেখা যাবে এবার গ্লাসের বদলে ছু’রি ছুড়ে মেরেছে।
হিয়াকে মহিলা বলায় ফারিশের একটু হাসি পেল। সে হাসিটাকে দমিয়ে নিয়ে বলল,
— কার এতো সাহস আমার বউয়ের গায়ে আ’ঘাত করবে। হাত ভে’ঙে গুড়িয়ে দিব না।
মুসকান মুখ মুচরে বলল ,
— ইসস ঢং। আমি যাব না বলেছি তো যাব না।
ফারিশ আচমকা মুসকানের একদম কাছে চলে আসল। মুখের সামনে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বলল,
— কি বললে আরেকবার বলো?
ফারিশের উষ্ণ নিঃশ্বাস মুসকানের চোখে মুখে আছরে পরছে। মুসকানের শ্বাস আটকে গেল। ফারিশ আবার বলল,
— দু’মিনিট এর মাঝে চেঞ্জ করতে না গেলে আই সয়ার আমি নিজের হাতে চেঞ্জ করাবো তোমায় । লজ্জায় যদি ম’রেও যাও না তখন আই ডোন্ট কেয়ার।
মুসকান ফুসিয়ে উঠল। হন্তদন্ত হয়ে বলল,

— আমি এক্ষুণি যা..যাচ্ছি চে ঞ্জ করতে।
ফারিশ সোজা হলো। বাঁকা হেসে বলল,
— গো..
মুসকান দ্রুত আলমারি থেকে কালো রঙের একটা ঝরঝেটে সুন্দর শাড়ি বের করল। ফারিশের দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলল,
— শাড়িই পড়তে হবে কেন?
ফারিশের সোজাসাপ্টা জবাব,
— এমনিতেই তো লিলিপুট তার উপর আবার বাচ্চা। পুলিশ যদি আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে নির্ঘাত বাল্যবিবাহের তাকমা লাগিয়ে জেলে নিয়ে যাবে আমায়। তাই শাড়ি পরো। একটু বড়সড় লাগবে। আর আমার সাথেও মানানসই হয়ে যাবে।
মুসকান নাক ফুলিয়ে বলল,

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৪

— আমি মোটেও লিলিপুট নই। পাঁচ ফুট দুই। আপনার কাঁধে পরি। একদম পারফেক্ট। আপনাকে ওমন খাম্বার মতো লম্বা হতে কে বলেছে। পায়ের নিচ থেকে দু’ ইঞ্চি কেটে নিতে পারেন না।
ফারিশকে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুসকান হনহন করে তাজমহলের রুমে চলে গেল। শাশুড়ি কে বলবে শাড়ি পরিয়ে দিতে। ফারিশ তাজ্জব বনে দাড়িয়ে রইল। পায়ের নিচ থেকে দু ইঞ্চি কি করে কা’টবে সে। দিনদিন মেয়েটার কথাবার্তা যেমন মহাকাশ থেকে পরছে…

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ১৬