তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৩৭

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৩৭
অহনা আক্তার

সোনিয়ার বিয়েতে শুধু জহির আর তাজমহল গিয়েছে। যেহেতু সোনিয়ার বিয়েটা সপ্তাহিক ছুটির দিন হচ্ছে না তাই জহির সময় ম্যানেজ করতে না পেরে যেতে নিষেধ করেছিল। ছেলের বলায় এখন যেতে হয়েছে। একটা দিন নাকি সে ই কাজকর্ম সামলে নিতে পারবে। মুসকানের জোরাজুরিতে ফাইজা প্রথমে মামার বাড়ি যেতে রাজি হলেও এখন আর গেলো না। তার নাকি কোচিং এ একটা ইম্পরট্যান্ট এক্সাম হবে। এক্সাম দেওয়া তো বাহানা মাত্র। ফাইজা মূলত আজ রিশাদের সাথে দেখা করতে চায়। আজ বাড়িতে বাবা, মা নেই। ফারিশ ভাইয়াও বাবার কাজে ব্যস্ত থাকবে। যার জন্য সুযোগ টা হাতছাড়া করতে চাইছে না ফাইজা।

এক মাস আগে রিশাদের বাবা মোকলেস শেখের বা’জে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়। এই এক্সিডেন্টে মোকলেস নিজের দুই পয়ে খুব গুরুতর আ’ঘা’ত পায়। মাথায় আর হাতেও পেয়েছে। কিন্তু পায়ের আ’ঘাতটা যেন অনেকটাই বেশি। এতোটাই বেশি যে তাকে এখন হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতে হয়। পায়ের জন্য এখনো ট্রিটমেন্ট চলছে মোকলেসের। বাবার এই অবস্থার জন্য ফেমিলির পুরো দায়িত্ব এখন রিশাদের কাঁধে। বাবার চিকিৎসা থেকে শুরু করে পরিবারের এতোগুলো মানুষের ভরণপোষণ এখন সে বহন করে। কাজের চাপ, পরিবারের চাপ, টেনশন সব মিলিয়ে রিশাদ ক্লান্ত। যার জন্য ইদানীং ফাইজার সাথেও তেমন একটা যোগাযোগ করতে পারে না সে। ফাইজার সাথে কথা বলাও আগের তুলনায় খুব কমিয়ে দিয়েছে। ফাইজা রিশাদের সমস্যা টা বুঝে। কিন্তু তাও তার ছোট্ট মনে অভিমান বাসা বাঁধে। যে ছেলেটা একসময় রাতদিন তার সাথে কথা বলত সে ছেলেটা এখন পাঁচ মিনিটের জন্যও তার সাথে ঠিক মতো কথা বলে না। সে ফোন দিলে ব্যস্ততার জন্য রেখে দেয়। দেখা করতে বললে হাজারটা এক্সকিউজ যেন আগে থেকেই রেডি থাকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আজ ফাইজা জিদ ধরেছে। যে করে হোক রিশাদের সাথে দেখা করবেই। যার জন্য সকাল থেকেই ফোন দিয়ে দিয়ে রিশাদকে পা’গল করে ফেলছে। ছুটি নিয়ে এক ঘন্টার জন্য হলেও যেন তার সাথে দেখা করে রিশাদ। ফাইজার কান্নাকাটির জন্য রিশাদ খুব কষ্টে দুপুরের দিকে সময় ম্যানেজ করেছে। তা শুনে ফাইজা যেন খুশিতে উড়ছে। কোন ড্রেসটা পরে যাবে এটা সিলেক্ট করার জন্য পুরো কাবার্ড এলোমেলো করে ফেলেছে। বিছানার উপর দশ পনেরো টা ড্রেস ছড়িয়ে ছিটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বারবার গায়ে মেলে দেখছে। অবশেষে গাঢ় নীল রঙের একটা থ্রি পিস সিলেক্ট করল ফাইজা। রিশাদ তাকে থ্রি পিসে দেখতে খুব পছন্দ করে। সাওয়ার নিয়ে এসে ড্রেসটা পরে নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ফাইজা। মাথায় ঘুমটা পরে আনমনে হাসছে, লজ্জা পাচ্ছে, দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলছে আবার মেলছে। দিনদিন রিশাদের জন্য পা’গল হয়ে যাচ্ছে সে। রিশাদের একটু অবহেলাও স’হ্য হয়না এখন। আবার একটু ভালোবাসা পেলেই দিশেহারা হয়ে যায়।

রাহিলা এসেছে। কাল পরশু মেয়ের সি’জার করাবে। তাই ফারিশের আর তাজমহলের কথায় আজই চলে এসেছে। এরশাদ তালুকদার পরিবারের লোকদের যাতায়াতের জন্য বেশ কিছুদিন আগে একটা গাড়ি কিনেছেন। গাড়ি চালানোর জন্য একজন ভালো বিশস্ত ড্রাইভারও নিয়োগ করেছেন। ওই ড্রাইভারই রাহিলাকে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে। মাকে পেয়ে ভিষণ খুশি মুসকান। সকালেই এসেছে রাহিলা। আর তখন থেকেই মুসকান মায়ের সাথে চিপকে। মুসকানের মা আসায় নিশ্চিন্তে ফারিশ বাবার ইন্ডাস্ট্রিতে চলে গেছে। যাওয়ার আগে মুসকান কে কড়াকড়ি ভাবে বলে গেছে কোনো প্রবলেম হলে যেন সাথে সাথে তাকে ফোন করে। রাহিলার সাথেও নমনীয় ব্যবহার করে একই কথা বলে গেছে ফারিশ। আর এও বলে গেছে সে দ্রুত ফিরে আসবে।
দুপুরের দিকে মায়ের পাশে শুয়ে মায়ের কোমর পেচিয়ে ঘুমাচ্ছে মুসকান। রাহিলা আধ শোয়া হয়ে মেয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মুচকি হেসে ক্ষণেক্ষণে মেয়ের কপালে চুমু দিচ্ছে। ভাবতেই অবাক লাগে তার ছোট্ট মেয়েটাও নাকি এখন মা হতে যাচ্ছে। মেয়েটার আব্বা বেঁচে থাকলে যে কতো খুশি হতো।
বাড়িতে মুসকান আর তার আম্মা ছাড়া কেউ নেই। ফারিশ চলে যাওয়ার পরপর ফাইজাও বেড়িয়ে গেছে।

রেস্টুরেন্টে বসে রিশাদের জন্য অপেক্ষা করছে ফাইজা। রিশাদের সাথে দেখা করতে করতে এখন আর আগের মতো ভয় পায় না সে। এতোবার দেখা করেছে একবারও যখন ভাই,বাবা বা অন্যকারো কারো সামনে পরে নি। তাই ভেবেই নিয়েছে এবারও তেমন কিছু হবে না। সে নিশ্চিন্তে চেয়ারে বসে রিশাদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
ঘর্মাক্ত শরীর, ক্লান্ত মুখশ্রী, উসকোখুসকো চুল নিয়ে ফাইজার সামনে এসে হাজির হলো রিশাদ। পরনে ফুলহাতা সাদা শার্ট। অফিস থেকে ডিরেক্ট এখানে এসেছে। ঘাড় গলা ঘেমে নেয়ে একাকার। তড়িঘড়ি করে আসার জন্য এখনো হাঁপাচ্ছে। ফাইজার বরাবর চেয়াটায় বসতেই ফাইজা ঠান্ডা পানির বোতল টা এগিয়ে দিল রিশাদের দিকে। ঢকঢক করে কয়েক ঢুক পানি গিলে বড় করে নিঃশ্বাস নিল রিশাদ। শার্টের হাতা দুটো গুটিয়ে নিয়ে টিশু দিয়ে কপাল আর মুখের ঘাম মুছল। ফাইজার দিকে তাকিয়ে তপ্ত কণ্ঠে বলল,

— সরি। খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে না? অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছিলে ?
ফাইজা স্থির দৃষ্টিতে রিশাদকে দেখছিল। এমন ঘামে ভেজা ক্লান্ত অবস্থায়ও ছেলেটাকে দেখতে কী অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। সে লাজুক কণ্ঠে বলল,
— সমস্যা নেই।
রিশাদ একটা ওয়েটার কে ডাক দিয়ে খাবার ওর্ডার দিল। ফাইজার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল,
— আজ থ্রি পিস পড়ে এসেছো যে?
ফাইজা মুচকি হেসে কানের পিছে চুল গুজে বলল,
— চোখে পড়েছে তাহলে।
— আমার জন্য সেজেছো আর আমার চোখে পরবে না? চোখে এমন গাঢ় করে কাজল দিতে কে বলেছিল? আমার যে চু’মু খেতে ইচ্ছে করছে।
ফাইজা লজ্জা পেল। লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নত করে ফেলল। রিশাদ মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,

— খুব সুন্দর লাগছে তোমায়। নীল জামায় একদম নীল অপ্সরী লাগছে।
ফাইজা শুকনো কেশে রিশাদের দৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটাতে চেষ্টা করল। কিন্তু রিশাদ একবার পলকও ফেলেনি। এক দৃষ্টিতে ফাইজার দিকে তাকিয়ে আছে।
ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো। রিশাদ নিজের হাতে ফাইজার মুখে খাবার তুলে দিল। পাশাপাশি চলতে থাকল তাদের দুষ্টু মিষ্টি আলাপচারিতা। মুগ্ধতার মাঝে দুজনের একজনও বুঝতে পারল না কেউ একজন দূর থেকে তাদের ছবি তুলছে।

কুদ্দুস ফোন করছে ফারিশ কে। তিন বারের মাথায় কল রিসিভ করল ফারিশ। হ্যালো বলতেই কুদ্দুস উদ্ধিগ্ন স্বরে বলল,
— তোর বোন ফাইজার কি বিয়ে শাদি দিয়ে ফেলেছিস?
ফারিশ ধমক দিল,
— কি সব আবোলতাবোল বকছিস? ফাইজার বিয়ে হলে কি তোরা জানবি না!
— তাও ঠিক। আচ্ছা ফাইজা কোথায়?
— কেন? ওরতো এখন কোচিং এ থাকার কথা। তুই হঠাৎ আমার বোন নিয়ে পড়লি কেন ?
— না মানে আসলে আমি তোকে একটা কথা বলতে চাইছিলাম। কথাটা আমি বেশ কয়েকদিন আগেই তোকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলা হয়নি।
অপর পাশে ফারিশের স্বর গমগমে শুনাল,

— এভাবে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে কি বলবি সোজাসুজি বলতো। আমার কাজ আছে।
কুদ্দুস ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে বলল,
— তুই কিভাবে নিবি জানিনা তাও বলছি, ‘ আই থিংক,, তোর বোন ফাইজা কারো সাথে রিলেশনে আছে।’
ফারিশের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল,
— তোর এমন মনে হওয়ার কারণ?

— দেখ ফারিশ আমি বেশ কয়েকদিন ফাইজাকে একটি ছেলের সাথে ঘুরতেফিরতে দেখেছি। সে এমন ভাবে ছেলেটার হাত ধরে ঘুরেছে যে,, যেকেউ দেখলে বলবে তারা রিলেশনে আছে। ইভেন এখনো ফাইজা আমার চোখের সামনে বসে সেই ছেলেটির হাতে খাবার খাচ্ছে। প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে আমি ফাইজার পিছনের টেবিলে বসে আছি। সে একবারের জন্যও আমাকে খেয়াল করেনি ছেলেটার প্রতি এতোটাই মগ্ন হয়ে আছে!
ফারিশের কপালের রগ দপদপ করে উঠে। আর যাই হোক বন্ধুর মুখ থেকে ছোট বোনের সম্পর্কে এমন কথা শুনে নিজেকে ঠিক রাখার কথা না। কুদ্দুস তার খুব ঘনিষ্ঠ এবং বিশস্ত বন্ধু। সে কখনো এই ব্যাপারে মজা বা মিথ্যা বলবে না। বন্ধুর কাছ থেকে ছোট বোনের এমন নি’র্লজ্জ কাজ সম্পর্কে জানাটা বড় ভাই হিসেবে তার জন্য অবশ্যই লজ্জাজনক। যে ভাই নিজের বোনকেই সামলে রাখতে পারে না সে আর কি পারবে। রাগে রি রি করতে করতে কুদ্দুস কে প্রশ্ন করল ফারিশ,

— ফাইজা সত্যিই এখন তোর সামনের বসে আছে?
— হ্যা দোস্ত ট্রাস্ট মি।
— আমাকে ছবি পাঠাতে পারবি?
— আলবাত পারবো। তুই বলার আগেই আমি তিন চারটা ছবি ক্লিক করে রেখেছি। এক্ষুনি পাঠাচ্ছি।
কুদ্দুস ফোন রেখে দ্রুত ফারিশ কে ফটো সেন্ড করল।
ফোনে টুংটাং শব্দ হতেই ফারিশ ওয়াটসআপ এ ঢুকলো। একটা পিকে ক্লিক করতেই যা দেখলো তার পায়ের নিচের জমিন সরে গেল যেন। মাথার রক্ত গরম হ’য়ে গেলো তড়াক। কম্পিত হাতে একের পর এক পিক দেখতে লাগল সে। রাগে তিরতির করে কাঁপছে সমস্ত শরীর। তার বিশ্বাস করতে ক’ষ্ট হচ্ছে তার বোন রিশাদের সাথে রিলেশনে আছে।
রক্তিম চোখ নিয়ে ফাইজাকে ফোন করল ফারিশ। একবার ফোন করতেই কল রিসিভ করল ফাইজা।
আগে ইচ্ছাকৃত ফোন না তুলে যেই ভুল করেছিল সেই ভুলটা এখন আর করল না । একবার কল আসতেই সাহস করে রিসিভ করে ফেলল। আস্তে করে
‘ হ্যালো ভাইয়া ‘ বলতেই ফারিশের শান্ত অথচ উত্তাপ কণ্ঠস্বর শুনতে পেল,,

— তুই এখন কোথায়?
বাক্যটি শুনে কেঁপে উঠল ফাইজা। ঢুক গিলে বলল,
— আমিতো এখন কোচিং এ ভাইয়া। কেন কোনো দরকার?
বোনের মিথ্যে শুনে দাঁতে দাঁত খিচে রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করল ফারিশ। রাশভারী স্বরে বলল,
— বাসায় কখন আসবি?
— এইতো আর ঘন্টা খানেকের মতো লাগবে।
— তুই তো বলেছিলি তোর এক্সাম আছে। এক্সাম দিতে এতো সময়?
ফাইজা থম মেরে গেলো। সে তো ভুলেই গিয়েছিল বাসা থেকে যে কোচিং এর এক্সাম এর কথা বলে বেড়িয়ে ছিলো। এখন কি হবে! কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামটুকু মুছে পুনরায় ভাইকে মিথ্যে বলল ফাইজা,
— এক্সাম ছিলো তো। এক্সামের পর স্যার এখন এক্সট্রা ক্লাস নিচ্ছে।
ফাইজার একেরপর এক মিথ্যে ফারিশের প্রতিটা লোমকূপ জ্বলে উঠছে। সে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,

— তোর এক্সট্রা ক্লাস শেষ হলে আর কোনো ক্লাস আছে?
— ন না ভাইয়া।
— তাহলে সোজা বাসায় আয়।
ফাইজা আচ্ছা বলার আগেই ফারিশ ফোন রেখে দিল। ফাইজা বড় করে হাফ ছেড়ে রিশাদের দিকে তাকাতেই দেখল রিশাদ রাগী ভাব নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
— এতোগুলো মিথ্যে বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। একদিন না একদিন তোমার ভাই এটা জানতোই। তাই ভালো ছিলো এখনই সত্যি টা বলে দেওয়া। (রিশাদ)

— পা’গল নাকি! ভাইয়াকে সব জানিয়ে দিতে বলছো তুমি? কে’য়া’ম’ত বাঁধিয়ে দিবে…
— তো কি হয়েছে? এখন শুনলেও ঝামেলা করবে পরে শুনলেও ঝামেলা করবে। ঝামেলা তো করবেই তাই না?
— না। পরে শুনলে ওতোটাও ঝামেলা করবে না এখন যতটা করবে। কারণ তুমি আগের রিশাদ নও। ভাইয়াকে দেখাতে হবে তোমার ভালো রূপটা কে। ভাইয়ার কাছে তোমাকে ভালো লাগতে হবে। আর এইসব কিছুই এখব সম্ভব নয়। আস্তে আস্তে সম্ভব। বুঝেছো?
— কিন্তু….
আঙুলের ইশারায় থামিয়ে দিল ফাইজা,
— কোনো কিন্তু না। আগে নিজের অবস্থান মজবুত করো। বাবা ভাইয়ার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার মতো সাহস তৈরি করো। তারপর সব।
— তোমার কি মনে হয় আমার সেই সাহস নেই?
— সাহস আছে কিন্তু পরিস্থিতি নেই। এমন পরিস্থিতি তৈরি করো যেন ভাইয়া তোমাকে মেনে নেয়। আমি আসি। জলদি বাসায় ফিরতে হবে। আর হ্যা প্লিজ আমার সাথে এভাবে হঠাৎ করে কথা বলা কমিয়ে দিও না। আমার ক’ষ্ট হয়। দম বন্ধ লাগে।
রিশাদ হাসে,
— খুব বুঝদার হয়ে গেছো। আর বেশিদিন অপেক্ষা করাবো না তোমায়। খুব শিঘ্রই আপন করে নিব….
ফাইজাও হেসে রিশাদের থেকে বিধায় নিয়ে চলে যায়।

আকাশ তুম্বি রাগ নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছে ফারিশ। এসেই আগে উচ্চকণ্ঠে ফাইজাকে ডাকতে লাগল,
— ফাইজা,,, ফাইজা,,,
ফারিশের গলা শুনে রুম থেকে দ্রুত বের হলো মুসকান। স্বামীর এমন গরম মুখ দেখে আঁতকে উঠে বলল,
— কি হয়েছে? ফাইজা তো এখনো ফিরে নি!
ফাইজা এখনো ফিরেনি শোনে ফারিশের রাগ আরো বেড়ে গেল। সে ড্রয়িং রুমের সোফায় ধপ করে বসে ফাইজার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। মুসকান ভয়ে ভয়ে ফারিশের কাছে এসে উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করল,
— আপনি এমন রেগে আছেন কেনো? ফাইজা কি করেছে?

ফারিশ উত্তর দিল না। হিংস্র চোখ নিয়ে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে রইল। মুসকান একটা গ্লাসে পানি ভরে ফারিশকে খেতে দিল। ফারিশ খেল না। মুখের সামনে থেকে মুসকানের গ্লাস ধরে রাখা হাতটা সরিয়ে ফেলল। অজানা আশঙ্কায় বুক কাঁপছে মুসকানের। আজ এতো রেগে কেনো এসেছে বুঝতে পারছে না !!
হাসোজ্জল মুখ নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করল ফাইজা। ডিঙ ডিঙিয়ে সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই ফারিশ হাত ভাজ করে ফাইজার মুখোমুখি দাঁড়াল। ভাইকে এভাবে সামনে দাঁড়াতে দেখে ফাইজার হাসি খুশি মুখ নিমিষেই নিভে গেল। ভয়ে ভয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকাতেই ফারিশের ভয়ংকর রাগান্বিত চেহারা দেখে তার অস্তিত্ব কেঁপে উঠলো। ফাইজার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে অত্যন্ত রুক্ষ মেজাজে বলল ফারিশ,

— বলেছিলি আসতে ঘন্টা খানেকের মতো লাগবে। তাহলে এতো দেরি হলো কেন?
ভাইয়ের এমন রুক্ষ স্বর শোনে ফাইজার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। কপাল, গলা, শরীর বেয়ে ঝর্ণার মতো ঘাম ছুটতে লাগল। আমতাআমতা করে বলল,
— রা..রাস্তায় অনেক জে..ম ছিলো ভাইয়া***
****ঠা*সসসসসস*****
বাক্য শেষ হওয়ার আগেই ফারিশ শরীরের বেগে ফাইজার গালে থা’প্প’ড় ব*সাল। এক থা’প্প’ড়ে’ই ফাইজার কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন! সব কিছু অন্ধকার দেখছে মনে হচ্ছে।
ঝাঁঝাল স্বরে চেচিয়ে উঠল ফারিশ,,

— মিথ্যে, মিথ্যে, মিথ্যে,,,,, একেরপর এক মিথ্যে বলে যাচ্ছিস তুই আমায়? ক*লিজায় এতো সাহস আসলো কি করে ??
ভয়ে আর কান্নায় ফাইজার অবস্থা করুন। গা*লে মনে হচ্ছে আ*গুনের লাভা পড়েছে। ব্যথায় ঝাঁ ঝাঁ করছে। কথা বলার মতোও শক্তি খোঁজে পাচ্ছে না। মুসকান স্ফুরিত হয়ে দ্রুত ফাইজাকে ধরতে গেলে ফারিশ তাকেও ধমক দিল,,

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৩৬

— খবরদার ছুবে না ওকে। দূরে যাওও !!
ফাইজার কাছে গিয়েও মুসকান দু’পা পিছিয়ে গেল। রাহিলা সরগম শোনে ছোটে রুম থেকে বেড়িয়ে আসল। বাড়িতে দু’ একজন কাজের লোক ছিল। তারাও ভয়ে এক কোণায় জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

তোমার মুগ্ধতায় পর্ব ৩৮