তোর নেশালো শহরে পর্ব ১১

তোর নেশালো শহরে পর্ব ১১
লেখিকা:ঈশিকা খানম

রাহি যখন অনুভব করল একটা ট্রাক তার দিকেই আসছে তার শরীর যেন কেমন পাথরের মতো হয়ে গেল। রাস্তার মাঝে এখন দাড়িয়ে সে। মাথায় হাজার চিন্তা ভর করল তার। সে সরে যেতে যাবে ঠিক তখন ট্রাক তার খুব কাছাকাছি এসে পড়ে এবং তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। লোক জড় হয়ে পড়ে সেখানে। রাহির রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে মাঝ রাস্তায়। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। সেই রাস্তাটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাহির রক্তাক্ত দেহের সামনে এখন মানুষের ভিড়। কিছু লোকেরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিতে থাকে।

আর কতক্ষন এভাবে চুপ করে বসে থাকবে তুমি মিহি? বিরক্ত হয়ে বলল এরোন। মিহির কোনো হেলদোল নাই। খুব গভীর চিন্তায় ডুব দিয়েছে সে।
এরোন আবার মিহিকে ডাকল, “এই মেয়ে?”
নাহ মিহি এখনো কোনো উত্তর দিচ্ছে না এরোনকে। এরোন নিজের হাতটা মিহির দিকে বাড়িয়ে মিহির নাকটা ধরে দিল টান। এতে চমকে উঠে মিহি। রেগে গিয়ে সে বলে উঠে,
“আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার নাক ধরে টানেন? আমার নাকটা ব্যথা করে দিল রে!” এটা বলে নিজের নাকে হাত বুলাতে লাগলো মিহি। এরোন ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল,
আমার সাহসের দেখেছ কি জান?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-আমি আপনার কোন জন্মের জান হই?
-আল্লাহ চাইলে এই জন্মের।
-যত্তসব ফাউ কথা।
-ব্যথা পেয়েছিলে?
-না খুব আরাম পেয়েছি।
-ওহ তাহলে তো আমি তোমার নাক টেনে কোনো ভুল করিনি।
-আপনি!
-এরোন।
-কি?
-হুম তুমি বললে আপনি তাই আমি বললাম আমি এরোন।
-ধ্যাৎ!

-আচ্ছা আমায় এটা বলো কোন ভাবনার মহাসাগরে ডুব দিয়েছিলেন ম্যাডাম।
-মনটা কেমন যেন আনচান করছে।
-কেন? কি হয়েছে?
-আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আজ খুব খারাপ কিছু একটা হবে।
-কি হবে? শুনো মাথায় নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা রাখবা না একদম।
-সকাল থেকেই এমনটা লাগছে।
-কিছু হবে না চিন্তা কইরো না।
-আল্লাহ যাতে সব কিছু ঠিক রাখে।
-হুম। তা কি খাবে তুমি বলো? সেই কখন থেকে রেস্টুরেন্টে এসে বসে আছি।
-নিন আপনার পছন্দমতো। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
-ইচ্ছে না করলে তো হবে না মিহি। আমার সাথে এসেছো, মানে আমি নিয়ে এসেছি, এখন খেতে হবে। আমি অর্ডার দিয়ে আসছি।
-ওকে।
এরোন উঠে গিয়ে চলল অর্ডার দিতে। মিহি নিজেরনখ খোটা শুরু করল। তার মন আজ কিছুতেই সায় দিচ্ছে না কোনো কিছুতে। একটাই দোয়া তার, আল্লাহ যাতে সবকিছু ঠিক রাখে, সবাইকে বিপদমুক্ত রাখে।

কিছু লোক রাহিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। রক্ত চুইয়ে পড়ছে তার শরীর থেকে। রাহিকে দেখে ডক্টর তাকে ইমার্জেন্সী রুমে নিয়ে যেতে বলল। সে পেশেন্টের আত্মীয়কে খুজলে লোকেরা জানায় যে সে রাস্তায় এক্সিডেন্ট করে পড়ে ছিল। তারা তাকে নিয়ে এসেছে। ডক্টর জিজ্ঞেস করে পেশেন্টের সাথে কোনো মোবাইল বা কার্ড আছে নাকি? তখন একটা লোক এগিয়ে এসে বলে সে পেশেন্টের ফোন নিয়ে এসেছে। ডক্টর রাহির ফোনটা নিয়ে কল লগ চেক করলেন এবং তাতে সে দেখলেন মিহি নামের একটা নাম্বার সেভ করা আছে আর সেটা থেকেই শেষ কলটি এসেছে। ডক্টর সেই নাম্বারে একটা কল দিল। অপরদিকে মিহি রাহির নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে জলদি জলদি তা রিসিভ করে। কিন্তু ফোনের ওপাশে থেকে সে যা শুনে তার জন্যে সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। রাহির কল রিসিভ করে সে একটা অচেনা কণ্ঠস্বর শুনতে পায়। মিহি ফটাফট প্রশ্ন করে,

আমার বোনের ফোন দিয়ে কে কল দিয়েছেন আমায়? ব্যাপারটা কি?
তখন ওপাশে থেকে ডক্টর উত্তর দেয়,
ওহ পেশেন্ট তাহলে আপনার বোন। সে মারাত্মক গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে। জলদি আমাদের ……… হাসপাতালে এসে পড়ুন। পেশেন্টের অনেক ব্লেডিং হয়েছে।

মিহি বাকরুদ্ধ হয়ে গেল এই কথা শুনে। তার হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে ভেঙে যায়। আর ওপাশে থেকে তাই ডক্টর দেখেন যে কল কেটে গিয়েছে। তাই সে নিজের কাজে সে মন দিয়ে দেয় আবার। অপরদিকে মিহির শরীর যেন অসাড় হয়ে আসছে এই কথা শুনে। ধীরে ধীরে কান্না শুরু করে সে। সে বারবার খারাপ কিছু হওয়ার ভয় পাচ্ছিল। আর সেই ভয়টা সত্যি হয়ে গেল। এরোন মিহিকে ডেকেই যাচ্ছে কি হয়েছে তা জানার জন্যে। কিন্তু মিহি কান্না করেই যাচ্ছে। এরোনের কোনো প্রশ্নের উত্তরই দিচ্ছে না মিহি। এরোনের উঠে গিয়ে মিহির সামনে দাঁড়ায়। এরপর সে মিহির দুই কাধ ধরে কাধ ঝাকিয়ে ধরে বলে,
কি হয়েছে মিহি? তুমি কান্না করছ কেন? আর কে কল দিয়েছিল?

-রা..রা..রাহি..র
-কি রাহি? বলো আমায়? কে বলেছে তোমায় রাহি?
-রা..রাহি কি..কিছু বলে..বলেনি। রা..রাহির
-কি রাহির?
-রা..রাহি এক্সিডেন্ট করেছে!
-কি? কিভাবে?
-আমি জানিনা।
-কোথায় এখন রাহি?
– একজন ডক্টর কল দিয়েছিলেন রাহির মোবাইল থেকে। রাহি এখন …… হাসপাতালে আছে।
– চল জলদি চল, এখনই আমরা ওখানে যাব।

– হুম।
মিহি আর এরোন সেই হাসপাতালে পৌছায়। মিহি রাহির সাথে দেখা করতে চাইলে একজন নার্স বলে তার এখন অবস্থা ভালো না। তার সাথে এখন দেখা করা যাবেনা। মিহি এটা শুনে আবার কান্না করে দেয়। এরোন মিহিকে স্বান্তনা দিতে থাকে। এরোন এরিককে কল দেয়। এরিক কল রিসিভ করে বলল,
হ্যাঁ কি হয়েছে বল।
-তুই এখনই …….. হাসপাতালে এসে পড়।
-কেন কি হয়েছে? মিহির কিছু হয়েছে?
-না মিহির কিছু হয়নি। রাহি ট্রাক এক্সিডেন্ট করেছে।
-কি? দেখ এরোন একদমই বাজে মজা করবা না আমার সাথে। রাহিকে নিয়ে একদমই এমন মিথ্যে মজা করবে না। (কান্নামিশ্রিত স্বরে)

তোর নেশালো শহরে পর্ব ১০

-আমি একদম মজা করছি না এরিক। মিহি কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। রাহির অবস্থাও ভালো না। তুই জলদি চলে আয়।
-আমি আসছি, আমি এখনই আসছি।
এরিক কল কেটে দেয়। সে হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি নিয়ে ছুট দেয় হাসপাতালের দিকে। রাস্তার মাঝখানে গাড়ি চালাতে চালাতে কাদতে থাকে সে। সে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকে যাতে সবকিছু ঠিক হয়ে যায়, রাহির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।

আর অন্যদিকে মিহি কান্না করতে করতে হঠাৎ করে একদম চুপ হয়ে যায়। তখন সে আর কিছুতেই রেস্পন্স করেনা। এরোনের কোনো কথা বা কাজে সে রেসপন্স করেনি আর। এরোন ভয় পেয়ে যায়। সে স্থির হয়েই বসে রয়েছে, শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে তার, কিন্তু কোনো রেস্পন্স করছেনা কিছুতেই। এরোন মিহিকে ঝাকাতে লাগলো কিন্তু মিহি একদৃষ্টে একদিকেই তাকিয়ে রয়েছে। তার কোনো নড়চড় নাই, কোনো ভান প্রকাশ করছেনা সে। পাথরের মতো হয়ে গিয়েছে যেন। এরোন ছুটে গিয়ে ডক্টরকে ডাকে। ডক্টর এসে মিহিকে চেক করে। কিন্তু ডক্টর এমন কিছু জানায় যাতে এরোন পুরো নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এরোনে পুরো দুনিয়াটাই যেন বদলে গিয়েছে।

তোর নেশালো শহরে পর্ব ১২