তোর পরশে প্রেম পর্ব ১২

তোর পরশে প্রেম পর্ব ১২
নুসাইবা ইভানা

পুতুল আজ ভিষণ আনন্দিত। এইচএসসিতে সে পুরো কলেজে বেস্ট রেজাল্ট এনেছে৷ এক হাতে মার্কশীট। অপর হাত দিয়ে চোখের জল মু্ছতে ব্যস্ত।
কারো সাথে কথা না বলে,সোজা চলে আসলো বিচে। এই সময় তেমন মানুষ নেই। খোলা আকাশ সমুদ্রের তীরে মার্কশীট নিয়ে বসে পরলো বালির উপর। শান্ত সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কেঁদে বল,মিস ইউ আম্মু। আমি তোমাকে অনেক মিস করছি। তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

তোমরা কিভাবে আমাকে পর করে দিলে! বড় আম্মু, বড় আব্বু সবাই আমাকে ভুলে গেলো? আমি মানতে পারছি না। তিনটা বছর ধরে এই একি ব্যাথা আমাকে পিড়া দিচ্ছে।কেন করলে? আমি না হয় ভুল করেছি কিন্তু তোমরা সেটা ক্ষমা কেন করতে পারলে না! আমি ঠিকমত হাসতে ভুলে গেছি, ঠিকমতো কথা বলতে ভুলে গেছি। ভালেবাসা তো জীবন থেকে বিদায় দিয়ে দিয়েছি । এই যে আমি তোমাদের ভুলতে পারছি না৷ তোমরা আমাকে ভুলে গেলে কি করে? কি ভাবে মিটিয়ে দিলে আমার নামে লিখে রাখা স্মৃতি!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

পুতুলের কাঁধে কেউ হাত রাখলো । পুতুল ঝড়ের গতিতে হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,ডোন্ট ডু ডেয়ার?
আপনার কোন অধিকার নেই আমাকে টাচ করার। লিভ মি এলন। প্লিজ গো।
‘আমি তোমাকে একা ছাড়তে পারবো না। তিন বছর ধরে তোমার পাশে ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সামনের বাকি জীবনটা ও এভাবে দাঁড়াতে চাই৷

‘আপনার কি আমাকে অসহায় বেচারি মনে হয়?পুতুল নিজের জন্য নিজেই যথেষ্ট। আর রইলো ভালোবাসা, ছায়া হ্যানত্যান। এসবের কোনটাই পুতুলের প্রয়োজন নেই। আর আমাকে নিয়ে দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে নিজের জন্য ভালো কাউকে বেছে নিন।
‘পুতুল আই লাভ ইউ।
‘ আই হেইট ইউ।আর আমার কাছে ভালোবাসা চাওয়া বোকামি। আমি নিজের জন্য বাঁচবো আর নিজেকে ভালোবাসবো।

‘তোমার পাশে থাকার সুযোগ দাও।
‘আমার পাশে কাউকে দরকার নেই। মানুষ ছাড়াও মানুষ বাঁচে। আর আমি কোচিংয়ের জন্য ঢাকা ভর্তি হবো।সব ঠিকঠাক করে রেখেছি। এরপর চান্স পেলে আমার রাস্তা ভিন্ন আপনাদের রাস্তা ভিন্ন।
‘এটাই তোমার শেষ কথা?
‘এটাই আমার শেষ কথা। আর একটা কথা মনে রাখুন ‘যে মেয়ে নিজের বাবা,মা পরিবারের হতে পারেনি, সে আর কখন কারো হতে পারবে না।

নিলুফা বেগম পরশের সাথে তিন বছর ধরে কথা বলেন না। এমন কি পরশ যতক্ষণ বাসায় থাকে তিনি নিজের রুম থেকে বের হননা।
পলাশ সাহেব নিলুফা বেগমের দরজার সামনে এসে বলে,ভাবি আসবো?
‘জ্বি ভাইয়া আসুন।

‘বলছিলাম কি পরাণের সাথে জুলিয়ার বিয়েটা দিয়ে দিলে ভালো হতো।
‘জুলিয়া রাজি থাকলে আমার কোন আপত্তি নেই।
‘আচ্ছা তাহলে জুলিয়ার মায়ের সাথে আমি কথা বলে দেখছি। অনুমতি দিলে আরেকটা কথা বলতাম।
‘হ্যা বলুন।
‘পরশের ব্যাপারে আপনার কি চিন্তা?

‘ততদিনে পরশ নামের কাউকে আমি চিনি না যতদিন সে আমার পরিবার আগের মত করে না দিচ্ছে। ওরজন্য ছোট বাসা ছেড়ে চলে গেলো।পুতুলের কোন খোঁজ নেই। আমার সখের বাড়ি ছেড়ে আমরা এখন ভাড়া বাসায় থাকি। আমার স্বামী সব সময় নিজের পরিবারকে একসাথে বেঁধে রাখতে চেয়েছে। আর তার ছেলেরা হয়েছে! ভাই আপনি আমাকে ওর বিষয়ে কোন কথা বলবেননা।

‘পুতুলকে আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছি। গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার আমি সব রকম চেষ্টা করেছি। ওকে শেষ দেখা গেছে এয়ারপোর্টে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ওর কোন ডকুমেন্টস পাওয়া যায় নি।
‘ভাইয়া প্রিয়ার চার বছর বয়সে আমার ছেলে প্রিয়াকে ছাদ থেকে থাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেললো।তখন আমি সুফিয়ার কান্না দেখেছি। সন্তানহারা মা’ সারাদিন রাত মেয়ের শোকে কেঁদেছে। দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছে।

অনেক সাধনার পর আমাদের পুতুল আসলো। আমরা সবাই পুতুলকে আগলে রাখতাম। পুতুল ছিলো বেপারী বাড়ির অমূল্য রত্ন। আপনার ভাই একদিন বলেছিল পুতুলকে অন্য বাড়িতে পাঠাবো না৷ কারণ তারা যদি ওর খেয়াল না রাখে। তাই আমি চাই পুতুলের বিয়ে পরশের সাথে হোক। সে যখন মৃত্যু সজ্জায় তখন ও বিয়েটা দেয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলো। তার আপনার আমাদের সবার অমূল্য রত্ন হারিয়ে গেছে শুধু মাত্র পরশের জন্য।

ওর একটা ভুল ডিসিশন আমার পুতুলকে কেড়ে নিয়েছে। পুতুলকে সব সময় নিজের মেয়ে মনে করতাম। আজ তিন বছর ধরে আমার মেয়েটার কোন খোঁজ নেই। আমরা জানি না সে বেঁচে আছে নাকি মৃত! বলেই কান্নায় ভেঙে পরলেন৷

‘কিন্তু পরশ যেটা করেছে তাতে হাজার পুতুলের জীবন সেভ হয়েছে। আমরা একটা নারী পাচার চক্র কে ধরতে পেরেছি। আর কাজটা সুক্ষ ভাবে না করলো ওরা সতর্ক হয়ে যেতো।
‘আমি এসব বুঝতে চাইনা। এতো মহান হওয়ার ইচ্ছে ছিলো সেটা পুতুলকে বুঝিয়ে বলে দিতে পারতো!আমি শুধু জানি আমার মেয়েটাকে যার জন্য হারিয়েছি তার ক্ষমা নেই।

‘পলাশ সাহেব নিজের রুমে চলে আসলেন৷ মেয়ের কথা মনে পরলে তারও হৃদয় পুড়ে। বুকের ভেতর হাহাকার করে। কিন্তু কিছু তো করার নেই।নিজে একদম নিঃস্ব হয়ে গেছে। বউ ছেড়ে গেলো দুটো’ দুঃখের কথা ভাগ করার মতও কেউ নেই। বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরালেন, নিকোটিনের ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছেন দুঃখগুলো।অতীতের কথা মনে পরতেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসলো।………
সেদিন যখন পিয়াস সাহেবকে কবরে রেখে বাসায় আসলো। সাথে সাথে সুফিয়া বেগম বলেন, আমার কথার উত্তর দাও।

‘কি শুরু,করলে সুফিয়া বাড়ি ভর্তি মানুষ। আমরা পরে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো।
‘আমার মাথা ঠান্ডাই আছে। আমার মেয়ের কোন খোঁজ করেছো।
‘পরশ বলে,এখন সে-সবের সময় না ছোট আম্মু।
সুফিয়া বেগস ঠাসসসসসস করে পরশের গালে চড় দিয়ে বলে,তোর জন্য আমার মেয়ে বাড়ি ছেড়েছে। তোরা দুইভাই মিলে প্ল্যান করে আমার মেয়ে দুটোকে শেষ করেছিস। একজন খুন করেছে আরেকজন ফাঁদ পেতে আমার মেয়েকে বাড়ি ছাড়া করেছে৷

‘সুফিয়া কি সব কথা বলছো! মাথা ঠান্ডা করো পুতুলকে আমি খুঁজে বের করবো।
‘তুমি থাকো তোমার খুনি পরিবার নিয়ে। আমি চলে যাচ্ছি। যেদিন আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিবে সেদিন আমিও ফিরবো। এই বাড়িতে এদের সাথে থাকার মত অবস্থা আর নেই।
পলাশ সাহেব চোখ বন্ধ করলেন। এমন সময় পরশ এসে ডাকলো চাচ্চু।

পলাশ সাহেব অতীত থেকে ফিরলেন। মৃদু স্বরে বললেন,হ্যা বল….
‘পুতুলের খোঁজ পাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা চলছে। এবারের সব বোর্ডের এইচএসসি রেজাল্ট চেক করলে হয়তো আমরা ওকে ফিরে পাবো।
‘মেয়েটা বেঁচে আছে তো?
‘এভাবে বলছো কেন? আমার তো মনে হয় ও একদম ঠিক আছে। বরং আমরা ওরজন্য মিছে কষ্ট পাচ্ছি৷
‘তাই জেনো হয়।

‘পরশ নিজের রুমে আসলো সারাদিন কাজে ডুবে থাকে। নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় নেই তার৷ সেদিনের সেই ভিডিও অন করে আবার শুনলো। তারপর সেটা রেখে দিলো। জানালার কাছ ঘেসে দাঁড়িয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,আমি জানি তুই আর আমি একি আকাশের নিচে তবুও আমাদের দূরত্ব শত,শত কিলোমিটার। আমি তোকে ভুলে যাইনি না কখনো ভোলার চেষ্টা করেছি! আমি তোকে ভালোবেসে মনে রাখিনি।

তোর পরশে প্রেম পর্ব ১১

তোকে মনে রেখেছি বিষাদের স্মৃতি হিসেবে। “স্মৃতি হত্যা করতে পারলে মানুষ হয়তো নিজেকে হত্যা করতে না!! স্মৃতি বহন করা কঠিন তাই হয়তো মানুষ আত্মহত্যা করে! সবাই তো কঠিন জিনিস বয়ে যেতে পারে না। আমি সবাইকে প্রমাণ করে দিবো তুই ছলনাময়ী। তুই নিজের স্বার্থে আমাদের ছেড়েছিস নিজে ভালো থাকতে! তারপর আমি মুক্ত……..

তোর পরশে প্রেম পর্ব ১৩