তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৯

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৯
Raiha Zubair Ripti

সুমিদের বাসায় এসেছে ঘন্টা দুয়েক হবে আরাধ্য আর আরু। আরু চেয়ারে বসে আছে৷ সুমি এখনও পার্লারে। আরাধ্য আরুর পাশে বসেই ফোন স্ক্রোল করছে। আরু চারিপাশ দেখছে। দূরে গেটের দিকে তাকাতেই আরু দেখলো সৌরভ মাথার চুল ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসছে। চোখাচোখি হলো আরু সৌরভের। আরু কানে হেডফোন গুজে গান শুনতে লাগলো। সৌরভের মুখে এতক্ষণ ধরে লেগে থাকা হাসি উবে গেলো। ভাবতেই কষ্ট লাগছে এই মেয়ের জামাই আছে। এত সুন্দর সুন্দর মেয়েদের কেনো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায়? সৌরভ বিষন্ন মন নিয়ে এগিয়ে আসলো। আরাধ্যর পাশের চেয়ারে বসে আফসোসের সুরে বলল-

-” তোর বোনের জামাইকেও কি ইনভাইট করেছে সুমি?
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো।
-” আমার বোনের জামাই মানে? আমার বোনের বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি শা’লা।
-” আশ্চর্য তোর পাশেই তো তোর বোন।
আরাধ্য পাশে তাকালো। আরু কে দেখে বলল-
-” ওহ্ আরুর কথা বললি? ওর স্বামী ইনভাইটেড দেখেই তো আরু আসতে পারলো।
-” সুমির পরিচিত নাকি?
-” ভীষণ।
-” কিভাবে?
-” একই সাথে পড়াশোনা করেছে। সে হিসেবে।
-” ওহ্ আমাকে তোর বোনের স্বামী কে দেখাস তো। আমি শুনেছি সুন্দরী মেয়েদের স্বামী সুন্দর হয় না।
আরাধ্য দাঁত চেপে বলল-
-” আরু কে তোর সুন্দরী মনে হয়?
-” নিঃসন্দেহে।
-” ভুল ধারণা তোর। সুন্দর ছেলেদের অসুন্দর বউ হয়। আরুর স্বামী আরুর চেয়েও বেশি সুন্দর।, হ্যান্ডসাম। সেই তুলনায় আরু অসুন্দর। কি রে আরু তাই না বল?
আরাধ্য আরুর বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলল।আরু কান থেকে হেডফোন খুলে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” কিছু বলছেন?
-” না। ঐ দেখ সুমি চলে এসেছে জামাই সাথে নিয়ে।
আরু তাকালো সামনে। সুমির আর সুমির স্বামী একে ওপরের হাত ধরে এগিয়ে আসছে৷ লাভ ম্যারেজ তাদের। দুজনের গায়ে হলুদ এক সাথেই হবে। সুমি তার স্বামী কে নিয়ে এগিয়ে আসলো আরুদের কাছে। আরু বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সুমি জড়িয়ে ধরে বলল-
-” তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে আরু। লেহেঙ্গা টা দারুন তো।
আরু বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
-” দেখতে হবে না পছন্দ করে দিছে কে।
বোকা সৌরভ বোকা চাহনি দিয়ে বলল-
-” আরুর স্বামী বুঝি? আফসোস আজ আমার কেউ নাই বলে তাকে নিজের পছন্দ মতন জামাকাপড় কিনে দিতে পারি না।
সুমি সৌরভের ভোলাভালা মুখ টা দেখে থুতনিতে হাত রেখে বলল-
-” আহাগো সোনা টা আমাদের। বিয়ে কর তাড়াতাড়ি।
-” ধূর আমাদের হ্যান্ডাসাম আরাধ্যই তো বিয়ে করলো না। সেখানে আমি অসুন্দর বেডা কিভাবে বিয়ে করি।
-” সৌরভের কথা রাখ। দুলাভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দে। আমাদের তো কিছুই বলিস নি যে তলে তলে টেম্পো চালাতি।
সুমি আরাধ্যর কথায় হেসে হবু স্বামীর হাত ধরে বলল-

-” মিট মাই উডবি হাসবেন্ড পারভেজ। উনি পেশায় একজন ব্যাংকার।
আরাধ্য হ্যান্ডশেক করলো পারভেজের সাথে। সুমিকে নিজের দিকে টেনে আরাধ্য ফিসফিস করে বলল-
-” দুলাভাই বোধহয় অনেক বড়লোক তাই না?
-” কি করে বুঝলি?
-” মাথার মাঝখানে টাকে চুল নেই তো সেটা দেখেই বুঝলাম।
-” চুপ থাক। মাদ্রাজে গিয়ে চুল লাগিয়ে আনবো।
আরাধ্য হেঁসে ফেললো। সুমি পারভেজ কে নিয়ে স্টেজে চলে গেলো।
নাচগানের আয়োজন হলো। সুমির কাজিন গুলো নাচলো। আরুর ইচ্ছে হলো নাচার। সেজন্য আরাধ্যকে ফিসফিস করে বলল-

-” এই শুনুন না।
-” বল শুনছি।
-” নাচবো।
-” খবরদার নাচা নট এলাও।
-” আশ্চর্য নাচি না।
-” নো।
-” আমি কি একা নাচতে চেয়েছি নাকি?
-” তাহলে?
-” আপনার সাথেই তো নাচতে চেয়েছি।
-” আমি নাচ টাচ পারি না।
-” কি পারেন তাহলে?
-” কিছুই না। চুপচাপ অন্যের নাচ দেখ।
আরু মন খারাপ করে নাচ দেখলো। নাচের শেষে হলুদ লাগানো হলো সুমি পারভেজ কে। আরাধ্য আরু লাগালো। সুমির এক কাজিন আরুর মুখে হলুদ লাগাতে আসলে আরু মুখ ঘুরাতে গিয়ে হলুদ গালের সাথে চোখেও চলে যায়। আরু মৃদু আওয়াজ করে চোখ ধরে বসে পড়ে। পাশেই আরাধ্য ছিলো আরু কে। আচমকা বসে পড়তে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো-

-” এনি প্রবলেম?
-” আমার চোখে হলুদ ঢুকে গেছে। জ্বলছে ভীষণ।
পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল সুমির কাজিন রুমি। অপরাধীর মতন মুখ করে বলল-
-” সরি ভাইয়া আমি বুঝতে পারি নি চোখে চলে যাবে।
আরাধ্য আরু কে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে বলল-
-” দেখে লাগানো উচিত হলুদ। ওয়াশরুম টা কোথায় দেখিয়ে দাও।
-” নিচে গিয়ে সোজা ঢুকে ডান দিকে।
আরাধ্য আরু কে নিয়ে ঐ মেয়ের বলা কথা মতন ডানে ঢুকে দেখলো একটা রুম আছে। আরাধ্য আরুকে নিয়ে সেই রুমে ঢুকলো। এটাচ করা ওয়াশরুম আছে এই রুমে। আরাধ্য আরু কে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে যত্ন সহকারে মুছে ধুয়ে দিলো। তারপর বিছানায় বসিয়ে ওয়ারড্রবের উপর থাকা টাওয়াল টা দিয়ে চোখ মুখ মুছে বলল-

-” ঠিক আছে?
আরু টাওয়াল দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলল-
-” এখনও জ্বলছে। তাকাতে পারছি না।
আরাধ্য আরুর চোখে ফু দিলো। টাওয়াল দিয়ে ভেতর টা হাল্কা মুছে বলল-
-” আর কিছুই নেই চোখের ভেতরে৷ এবার চেষ্টা কর খোলার।
আরু চোখ মেলে তাকালো। চোখ তার লাল হয়ে গেছে। আয়নায় নিজেকে দেখলো। মুখের সব সাজ উঠে গেছে।
-” আমাকে তো ফকিন্নির মতন দেখা যাচ্ছে।
আরাধ্যর ইচ্ছে করলো এই মেয়েকে তুলে আছাড় দিতে। এই মেয়ে এখন সাজ নষ্ট হয়ে গেছে বলে সেটা নিয়ে আফসোস করছে। আরাধ্য দাঁত চেপে বলল-
-” তুই কবেই বা জমিদারী ছিলি?
-” আমি এভাবে বাহিরে যাব না।
-” তাহলে কি এই রুমেই থাকতে চাচ্ছিস?

আরু আশেপাশে তাকাতেই দেখলো ড্রেসিং টেবিলের উপরে ফেস পাউডার আর লিপস্টিক পড়ে আছে। আরু ফটাফট সেগুলো লাগিয়ে নিলো মুখে ঠোঁটে । আরাধ্য হা হয়ে হয়ে গেল। ম্যানারলেস মেয়ে কার না কার জিনিস না বলেই ইউজ করে দিলো!
আরুর হাত টেনে আরাধ্য রুম থেকে বের হতে হতে বলল-
-” ম্যানারলেস মেয়ে ম্যানার শিখিস নি?
আরু ফোনে নিজের ফেস দেখো বলল-
-” কেনো কি করছি আমি?
-” অন্যের জিনিস না বলে জিজ্ঞেস করলি কেনো?
-” আপনার জিনিস ছিলো ওগুলো?
-” না।
-” তাহলে আপনার এত গায়ে লাগছে কেনো? বাসায় ফিরবেন এখন? নাকি পরে?
-” একটু পর।
আরাধ্য আরু কে নিয়ে স্টেজের কাছে আসলো। সৌরভ আরাধ্যর কাছে এসে বলল
-” হেরে আরাধ্য তোর বোনের স্বামী কে তো দেখলাম না।
আরাধ্য বিরক্ত হলো।
-” তুই আরশির জামাই দেখে কি করবি? তোর আর কাজ নেই? এসে থেকে আরশি আরশি করছিস।
-” মনের শান্তির জন্য দেখতে চাচ্ছিলাম রে। জীবন টা কি আমি সিঙ্গেল হয়েই কাটিয়ে দিব?
-” চেহারার যা সুরাত তোর সাথে কে প্রেম করবে?
-” আমার চেহারা কি দোষ করলো।
-” পার্লারে যা,নাইট ক্রিম ইউজ কর আরুর মতন।তাহলে প্রেমের লাইন লেগে যাবে।
-” তোর বোন এসব ইউজ করে।
-” হ।আমার আরু ক্রিম সুন্দরী।

-” জিজ্ঞেস করে জানাস তো কোন কোম্পানির প্রডাক্ট ইউজ করে।
-” অবশ্যই। এখন গিয়ে আনন্দ কর যা। আমার মাথা খাস না।
সৌরভ চলে গেলো। আর কিছুক্ষণ থেকে আরাধ্য আরুকে নিয়ে বাসায় আসলো। আরু বাসায় এসেই ড্রেস চেঞ্জ করে মুখ ভালো মতন ধুয়ে আয়নার সামনে বসে। আরাধ্য ভ্রু কুঁচকায়। বিছানায় শুতে শুতে বলল-
-” কি করবি তুই এখন?
আরু মুখে ক্রিম লাগাতে লাগাতে বলল-
-” স্কিন কেয়ার করছি। কাল বিয়ে,সুন্দর হতে হবে না। আর তাছাড়া আজ মুখে মেক-আপ করছিলাম। এখন একটু তো মাখতেই হবে।
-” আল্লাহর দোহাই লাগে মুখে এসব মাখিস না। পরে ছেড়ে দিলে বাজে অবস্থা হবে।
-” ছেড়ে দিব কেনো?
-” কে কিনে দিবে তোকে?

-” কেনো আপনি। আমার দশটা না পাঁচ টা না একটা মাত্র জামাই।
-” এত আজাইরা টাকা আমার কাছে নেই। আমি কি ইনকাম করি নাকি সেভাবে।
-” তা জেনে আমি কি করবো। আমার ক্রিম মাখা শেষ। ঘাড়ে গাল আইসা আবার চুমু খাইয়েন না। অভ্যাস তো আবার ভালো। ঠোঁটে লেগে যাবে ক্রিম।
আরু লাইট নিভিয়ে এসে শুয়ে পড়লো। আরাধ্য রেগেমেগে উল্টোপাশ হয়ে ঘুমালো।
সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই আরাধ্যর ঘুম ভেঙে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে আরু কে ডেকে বলল-
-” আরু আমাকে এক কাপ ব্লাক কফি দে তো।
আরু আরাধ্যর ডাক শুনে কফির মগ নিয়ে রুমে এসে আরাধ্যর হাতে দিলো। আরাধ্যর চোখে এখনও ঘুম ঘুম ভাব। সেজন্য ঝপ্সা চোখে আরুর হাতের দিকে তাকিয়ে কফি টা নিয়ে চুমুক দিলো। আরু ধপাস করে আরাধ্যর পাশে বসলো চাদরের উপর। আরাধ্য মুখের সামনে থেকে কফির মগ টা সরিয়ে আরুর দিকে তাকাতেই হাত থেকে কফির মগ পড়ে গেলো ফ্লোরে। মুখের ভেতর থাকা কফি টা মুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে সোজা গিয়ে পড়লো আরুর মুখের উপর। আরু হতভম্ব হয়ে গেলো। আরাধ্য চাদর শরীরে নেওয়ার জন্য হাত আর পা দিয়ে চাদর জোরে টান দিতেই আরু ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।
আরাধ্য চাদর শরীরে নিয়ে বলল-

-” এ্যই তুই কে?
আরু ফ্লোরে বসে কোমরে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-” আমি কে মানে? নিজের বউ কে চিনতে পারছেন না বেয়াদব ছেলে?
আরাধ্য আরুর দিকে ঝুঁকে আসলো। ঘুম থেকে চোখ মেলেই আরুর কালো মুখ দেখে তো আরাধ্য রীতিমতো ভয়ই পেয়ে গেছিলো।
-” সিরিয়াসলি আরু তুই এটা! আমি না হয় তোকে কালি তারা বলতাম, গতকাল রাতে স্কিন কেয়ার নিয়ে কথা শুনিয়েছিলাম তাই বলে তুই আমার উপর রাগ করে মুখে কালি লাগিয়ে আসবি!
আরু বা হাত বাড়িয়ে দিলো৷ আরাধ্য টেনে উঠালো। আরু উঠার সময় মৃদু আওয়াজ করলো ব্যথায়। রাগে আরাধ্যর মাথার চুল এক হাত দিয়ে টেনে বলল-
-” একে তো মুখের উপর কফি ছিটকে দিলেন তার উপর আবার লাত্থি দিয়ে খাট থেকে ফেলে দিলেন। আর আমি মুখে কালি লাগাতে যাব কোন দুঃখে?
আরাধ্য চুল ছাড়াতে ছাড়াতে বলল-
-” তো মুখে কালো ওগুলো কি?
-” ব্লাক মাস্ক লাগিয়েছি আমি।
-” সেটা আবার কি?
-” নাকের সাইডে থুতনিতে হোয়াইট হেড হয়েছে সেজন্য।

আরাধ্য আরুর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আরুর হাত চেপে ধরে পাশে বসিয়ে বলল-
-” কু’ত্তার পটি লাগাতে পারিস না শালি। স্কিন কেয়ারের জিনিস গুলো তোরে কিন্তু আমি পানির সাথে গলিয়ে খাওয়াবো বলে রাখলাম। তোর ফেস দেখেই তো আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম কালি তারা। আয়নায় দেখ তো তোকে দেখতে কীরকম লাগে। তোরে হুট করে দেখায় যে কেউই তো ভয় পাবে।
-” এতে ভয় পাবার কি আছে? এটা কি আমিই প্রথম ব্যক্তি নাকি যে ইউজ করেতেছে? প্রায় সবাই ইউজ করে এটা। এটা সিম্পল। আপনি কফি ঢেলে দিলেন তো নয়ম করে। কত কষ্টে শুকিয়েছিলাম।
-” আমি পাগল হয়ে যাব আরু তোর এসব দেখতে দেখতে ইয়ার। প্লিজ আমার সামনে এসব নিয়ে আসিস না। যা মুখ ধুয়ে আয়।

-” মুখ যদি ধোয়ারই হত তাহলে আমি এটা শুকাতে চাইলাম কেনো?
-” তো মুখ ধুবি না? এটা নিয়েই বসে থাকবি?
-” এটা টেনে টেনে উঠাতে হয়।
-” তাই? আচ্ছা বস আমি টেনে টেনে উঠাই।
-” শুকাতে হবে তো। ভিজিয়ে দিছেন।
-” রোদে বসে শুকিয়ে আয়।
-” আরে না বাতাসে শুকাতে হবে। আপনি ততক্ষণে ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আরাধ্য ফ্লোরে থাকা কফির মগ টার দিকে তাকালো। কফি টা ভুল জায়গায় ওয়েস্ট করে ফেলছে। আফসোস হচ্ছে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ততক্ষণে আরুর মুখে থাকা ব্লাক মাস্ক টা শুকিয়ে গেছে। আরাধ্য চেয়ার টেনে আরুর সামনে বসে বলল-

-” টেনে টেনে উঠাতে হবে তাই তো?
-” হুম।
আরাধ্য এক হাত আরুর কপালে রাখলো আরেক হাত ব্লাক মাস্কের উপর। তারপর ব্লাক মাস্ক ধরে টান দেওয়ার সময় যতটা টান না মাস্কে দিলো তার চেয়ে বেশি ধাক্কা সে আরুর কপালে দিলো। যার ফলে আরু বসা থেকে পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আরু ঝাড়া মেরে উঠে বসলো। আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে রেগেমেগে বলল-
-” এভাবে মাস্ক তুলে? আপনি তো আমাকে ফেলে দিচ্ছেন। আপনার তুলতে হবে না সরুন। অনেক তুলছেন। যত্তসব।
আরু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই তুলতে লাগলো। তোলার সময় ব্যথায় আহ্ সূচক শব্দ করতেই আরাধ্য বিরবির করে বলল-

-” ব্যথায় শব্দ করার কথা ছিলো কোথায়। আর বউ আমার শব্দ করছে কোথায়। সবই কপাল।
দুপুরে রেডি হয়ে আরু আরাধ্য বের হলো বিয়ে বাড়িতে। আরু গাড়িতে জিজ্ঞেস করলো-
-” আচ্ছা সুমি আপুকে গিফট কি দিচ্ছেন?
আরাধ্য গাড়ি চালাতে চালাতে বলল-
-” কিসের গিফট? ফ্রি দাওয়াত এটা। নো গিফট।
-” উইদাউট গিফটে বিয়ে খাচ্ছেন ফ্রেন্ড এর?
-” হুমম।
-” ছি গরীব লোক কোথাকার।
-” তুই তো বড়লোক তাহলে আমাকে কয়েক হাজার টাকা গিফট কর।
-” আমি তো আরো গরিবের চেয়েও ভিখারি।
-” তাহলে চুপ থাক।
আরাধ্য আরু বিয়ের বাড়িতে আসলো। আরু কে নিয়ে টেবিলে বসে আগে পেটে খাবার চালান করলো। খাওয়া দাওয়ার শেষে একটা কোক খেতে খেতে আরাধ্য সুমির কাছে গেলো। পকেট থেকে একটা খাম বের করে বলল-

-” ফর ইউর সিস্টার।
সুমি খুলে দেখলো। হানিমুনে যাওয়ার টিকেট পরশু সাজেক।
-” তোর টিকিট কোথায় আয়ুশ?
আরাধ্য গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল-
-” আমার আবার কিসের টিকিট?
-” তুই আর আরু যাচ্ছিস না হানিমুনে?
-” আমরা তো পুরোনো কাপল।আমাদের হানিমুনের জন্য রুম আছে বোন।
-” তাহলে তোর টিকিট তুই তোর নিজের কাছেই রাখ ভাই।
-” গিফট ফিরিয়ে দিচ্ছিস সুমি! মানলাম তোর জামাইয়ের সামর্থ আছে বাহিরে নিয়ে যাওয়ার। আমি না হয় দেশের ভেতরই ব্যবস্থা করলাম।

-” ভাব ধরিস না। তোরা না গেলে আমিও যাব না তোর দেওয়া জায়গায়।
-” আরে চিল। কাটছি টিকিট আমাদের জন্য।
-” সত্যি?
-” হুমম।
-” দেখি।
আরাধ্য আরেক পকেট থেকে তার আর আরুর টিকিট বের করে বলল-
-” এই যে।
-” তোর বউ জানে?
-” না।
-” বলিস নি কেনো?
-” সব কেনো বলতে হবে? সব বলে দিলে আগ্রহ কম থাকে। এখন আসছি রে। সেই একটা খাওয়া খাইছি। জোশ ছিলো।

-” এখনই চলে যাবি?
-” হুম। ম্যাডাম কে নিয়ে একটু ঘুরতে যাব বাহিরে।
-” যা তাহলে।
আরাধ্য সুমির থেকে বিদায় নিয়ে আরুর কাছে এসে বলল-
-” আরু চল।
আরু চমকালো।
-” চল মানে? কোথায় যাব?
-” বাসায়।
-” এখনই?
-” হুমম।
-” থাকি না আর একটু।
-” না চল দরকার আছে।
আরু চলে আসলো আরাধ্যর সাথে। গাড়িতে বসে আরু মুখ ফুলিয়ে রাখলো। আরাধ্য কে বাসার দিকে গাড়ি না নিয়ে বিপরীত দিকে গাড়ি নিতে দেখে বলল-
-” আরে কোথায় যাচ্ছেন? বাসা তো ঐ রাস্তায়।
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকে বলল-
-” আমি কি বলেছি আমরা বাসায় যাচ্ছি?
-” তাহলে কোথায় যাচ্ছেন?
-” হারাতে.. হারাবি আমার সাথে?
-” রঙ ঢং না করে বলেন কোথায় যাচ্ছেন?
আরাধ্য দাঁত পিষে বলল-

-” শালি আমি রোমান্টিক হতে চাইলে তখন তুই আনরোমান্টিক থাকিস। আর আমি আনরোমান্টিক থাকলে তখন তুই রোমান্টিক মুডে থাকিস। এরজন্যই আমরা সামনে আগাতে পারছি না। আমাদের কাছাকাছি আসা হচ্ছে না। বিয়ের পর আমাদের ঐ চুমু পর্যন্ত সব থেকে গেলো। শোন আরু তুই সব সময় রোমান্টিক মুডে থাকবি। আমার আবার মুড সুয়িং হয় সেজন্য কখনও রোমান্টিক তো কখনও আনরোমান্টিক থাকবো। বাট তোর মুড সুয়িং হওয়া চলবে না। বুঝেছিস?
আরু বোকার মতন চেয়ে রইলো আরাধ্যর দিকে। পাগল ছাগল লোক কোথাকার। আরাধ্য গাড়িটা নিয়ে সোজা একটা বিস্তার ময়দানে এনে থামালো। পুরো বিস্তার এই মাঠ টা সবুজ ঘাসে আবৃত। দূর পানির কলকল ধ্বনি ভেসে আসছে। শব্দ শুনেই আরু বুঝলো এখানে একটা নদী আছে। আরু হাঁটতে হাটতে বলল-

-” এখানে এনেছেন যে?
আরাধ্য আরুর হাত ধরে আরুর পায়ের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল-
-” এই জায়গা টার সন্ধান বাবা আমায় দিয়েছিল।
-” কেনো এই জায়গা টা স্পেশাল নাকি?
-” হুম। বিয়ের আগে বাবা মা কে নিয়ে এই জায়গায় এসেছিল। ঘুরেছে নৌকায় চড়েছে। তাই ভাবলাম আমিও তোকে নিয়ে আসি।
-” সুন্দর কিন্তু জায়গা টা।
-” হুমম। চল নদীর ধারে বসি।
আরাধ্য আরু নদীর ধারে বসলো। আরু নদীর পানিতে পা ভেজাচ্ছে। আরাধ্য তাকিয়ে রইলো আরুর পায়ের দিকে। পায়ে বড্ড নুপুরের অভাব। আরু আরাধ্য কে তার পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
-” পায়ে ক্রিম মাখি না বাপু। সেজন্য ফেসের থেকে একটু কালো। তাই বলে এভাবে কেনো দেখছেন।
আরাধ্য মুখ ঘুরিয়ে হেঁসে ফেললো। আরু মাথা ঝুঁকে আরাধ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-

-” হাসছেন কেনো?
আরাধ্য সাথে সাথে মুখ গম্ভীর করে বলল-
-” হাসছি না।
আরু মাথা সোজা করে পাশে তাকাতেই একটা কিউট বাচ্চা মেয়ে কে দেখলো। সবে বোধহয় হাঁটা শিখেছে। গুটিগুটি পায়ে হেঁটে এদিক টায় আসছে। আশেপাশে আর কাউকে দেখতে পেলো না আরু। আশ্চর্য এই টুকু বাচ্চা কে একা ছাড়লো কি করে বাবা মা। আরু বসা থেকে উঠে বাচ্চাটার কাছে গেলো। আরাধ্য আচমকা আরু কে উঠে যেতে দেখে বলল-

-” আরে কোথায় যাচ্ছিস?
আরু পেছন ফিরে বলল-
-” দেখুন কি কিউট বাচ্চা। ওর বাবা মা নেই আশেপাশে।
আরাধ্যও উঠে এগিয়ে আসলো। আরু মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বলল-
-” হেই কিউটি।
মেয়েটা তাকিয়ে রইলো আরুর মুখের দিকে। কথা বোধহয় বলা শিখে নি।
-” কথা বলতে পারো না? তোমার বাবা মা কোথায়?
-” দেখছিস তো কথা বলতে পারে না। তার উপর ওর বাবা মা কোথায় এটা জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে ও?
-” আমি তো জাস্ট কথা বাড়ানোর জন্য বললাম। ভুল ধরেন কেনো? ওর বাবা মা কে খুঁজি চলুন। পানিতে পড়ে টড়ে গেলে একেবারো শেষ।
আরু আর আরাধ্য মিলে সামনে এগিয়ে আসতেই দেখলো একজন মহিলা এদিক সেদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজছে। সামনে তাকিয়ে আরু কে দেখেই এগিয়ে এসে আরুর কোল থেকে বাচ্চা টাকে নিয়ে বলল-
-” কোথায় গিয়েছিলে মাম্মাম? তোমাকে খুঁজছিলাম আমি।
আরু প্রথমে জিজ্ঞেস করলো-

-” ওর নাম কি?
-” কুমকুম।
আরু এবার গম্ভীর গলায় বলল-
-” এইটুকু বাচ্চা মেয়ের হাত কেউ ছাড়ে? গুটিগুটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নদী অব্দি চলে এসেছিল।আমরা না থাকলে তো গিয়ে পানিতে চলে যেত খেলতে।
-” ধন্যবাদ বোনটি। আসলে বুঝতে পারি নি। কুমকুম কে পাশেই বসিয়ে রেখেছিলাম। ওর বাবা ফোন দেওয়ায় ফোন টা রিসিভ করে কথা বলছিলাম। এর ভেতরই কখন যে ও হেঁটে চলে আসলো বুঝি নি।
-” আচ্ছা এরপর থেকে সাবধানে রাখবেন মেয়েকে।
মহিলা টা চলে গেল। আরাধ্য আরুর দিকে তাকিয়ে রইলো।আরু আরাধ্য কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
-” আশ্চর্য এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?
-” একটা কথা ভাবছি।
-” কি?
-” আমরা প্রতি বছরে বছরে বাচ্চা নিব বুঝলি? গুনেগুনে ১১ টা বাচ্চা নিব আমরা।
আরু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল, তারপর বিরক্ত হয়ে বলল—
-“একটু বুঝিয়ে বলবেন? ১১ টা মানে?!”
আরাধ্য গম্ভীর গলায় বলল—
-“মানে, প্রতি বছর একটার হিসেব করলে ১১ বছরে ১১ টা! ফর্মুলাটা খুব সহজ।”
আরু চোখ কপালে তুলে বলল,

– “আপনি কি আমাকে বাচ্চা তৈরির সরকারি প্রকল্প ভেবেছেন?”
-” না, না! আমি ভেবেছি তুই এক্সপ্রেস ট্রেন! একটা নামাবি, আরেকটা আসবে! বাচ্চা ক্রিকেট টিম বানাবো। আমি কোচ, তুই ম্যানেজার!”
-” মাথা ঠিক আছে আপনার?
আরাধ্য স্বপ্নময় চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল—
-” একদম ঝাক্কাস আমার মাথা। ভাব তো, ১১ টা ছোট ছোট আরু-আরাধ্য ঘরের এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে। নামে কী হবে ভাবছিস? আমি ঠিক করেছি, প্রথমটার নাম রাখবো প্রথমা,তারপর দ্বিতীয়তমা,তারপর তৃতীয়তমা,তারপর..
আরু সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে আরাধ্যর মুখ চেপে ধরে বলল-
-” নদীতে নিয়ে চুবিয়ে নিয়ে আসবো বলে রাখলাম।
আরাধ্য খুব ভাবলেশহীনভাবে বলল-
– “ঠিকাছে, নাম না হয় পরে ঠিক করলাম। কিন্তু প্রতি বছরে বছরে প্ল্যানটা কনফার্ম?!”
-” তাই বলে ১১ টা! ১১ বছর ধরে শুধু আমি বাচ্চাই পয়দা করবো!
-“আরে বোকা, মাঝে মাঝে যমজও তো হতে পারে! তাহলে দুই বছরে তিনটা! ক্যালকুলেশন ঠিক রাখিস।
-” সরেন ফালতু বেডা। নিজে পেটে বাচ্চা রাইখা জন্ম দেন গা ১১ টা।
-“তাহলে এক কাজ কর, আগে ট্রায়াল দিয়ে দেখ, একটা নিয়ে কেমন লাগে। যদি ভালো লাগে, তখনই সিরিজ শুরু করবো আমরা ওকে?

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৮

আরু বিরক্তির চরম পর্যায়ে চলে গেল। দু হাত তুলে চোখ বন্ধ করে বলল-
-” হে খোদা প্লিজ আমার স্বামী কে নারীদের মতন মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ করে দাও। নারীদের মতন সেও যেন দশ মাস দশ দিন বাচ্চা লালন করতে পারে তার পেটের ভেতর।
আরু চোখ মেলে আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“আমিন বলুন।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২০