তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২০
Raiha Zubair Ripti
রাতের আকাশ এক বিস্তীর্ণ অথচ নিঃশব্দ ক্যানভাস, যেখানে অগণিত নক্ষত্র জ্বলছে—নিস্তব্ধ অথচ অর্থবাহী। তারারা কীসের সাক্ষী, কে জানে? হয়তো কোনো হারিয়ে যাওয়া প্রেমের, হয়তো কোনো অতল অশ্রুর। চাঁদ—সে যেন আকাশের একমাত্র পথিক, একা অথচ দীপ্ত। তার আলো কখনো রূপকথার মতো মায়াবী, কখনো শূন্যতার মতো নিঃসঙ্গ।
মাঝেমধ্যে একগুচ্ছ মেঘ ভেসে আসে, কুয়াশার মতো ধীর, কিংবা অভিমানের মতো আকস্মিক। আলোছায়ার এই খেলা রাতকে এক আশ্চর্য গভীরতা দেয়—যেন কোনো বিস্মৃত ইতিহাস, যে গল্পের পাতা কেউ উল্টে দেখে না, তবু যার অস্তিত্ব অনস্বীকার্য। হঠাৎ কোনো দূরাগত পাখির ডানার শব্দ কিংবা বাতাসে দুলতে থাকা গাছের পাতার মৃদু নড়াচড়া—সবকিছু মিলে এক অদৃশ্য কবিতার জন্ম দেয়।
রাতের আকাশ শুধুই আকাশ নয়, সে এক অতল রহস্য, এক অনির্বচনীয় স্বপ্ন। কেউ হয়তো তাকিয়ে থাকে, উত্তর খোঁজে, অথচ আকাশ কোনোদিন উত্তর দেয় না—শুধু নক্ষত্রেরা জ্বলে, নিভে যায়, আর চাঁদ একাকী পথ চলতে থাকে।
-” কিরে ঘুমাবি না? সকালে উঠতো হবে তো ভোরে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরাধ্যর কথায় ঘোর ভাঙে আরুর। বেলকনিতে বসে ছিলো। বাসার ভেতর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা বলতে এই বেলকনিই। খাবার টেবিলেই জানতে পেরেছে কাল তারা সাজেক যাচ্ছে।
আরাধ্য আরু কে নীরব দেখে কফির মগ হাতে নিয়ে আরুর পাশে বসে বলল-
-” কিরো বোবায় ধরলো নাকি তোকে?
আরু আড়চোখে তাকালো। আচমকা আরাধ্যর বাহু জড়িয়ে ধরে বলল-
-” আচ্ছা আপনি নীরা কে কেনো বিয়ে করলেন না?
আকস্মিক নীরার নাম শুনে আরাধ্যর কপাল কুঁচকে আসলো।
-” হঠাৎ নীরা কে টানছিস কেনো?
-” বলুনই না। বিয়ে কেনো করলেন না?
আরাধ্য আরুর মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল-
-” যাকে দেখলে নিজের নিজের লাগে না। যাকে দেখলে আমার অনুভূতি জাগে না। তাকে কি করে বিয়ে করবো আমি?
আরু মাথা উঁচু করে আরাধ্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল-
-” আমাকে দেখলে নিজের নিজের লাগে? অনুভূতি জাগে?
-” মেয়ে যদি বলি হ্যাঁ তাহলে?
-” তাহলে বলুন ভালোবাসেন আমায়।
-” কেনো বলবো এ কথা?
-” আমি শুনতে চাই সেজন্য।
-” আমি তো বলতে চাই না।
-” হোয়াই?
-” বিকজ আমিও শুনতে চাই।
আরু আরাধ্যর বাহু ছেড়ো দিয়ে বলল-
-” আমি কখনই বলবো না।
-” তাহলে আশা করিস কি করে আমি বলবো হু?
-” মেয়েরা দমবন্ধ হয়ে ম-রে যাবে তারপরও বলে না। মেয়েরা শুনতে পছন্দ করে।
-” সেম ছেলেরাও।
-” নীরা কিন্তু আসলেই একটা ভালো মেয়ে।
-” আমি কখন বললাম নীরা বাজে মেয়ে।
-” ও আপনার থেকে বেটার ডিজার্ভ করে।
-” আমিও তাই মনে প্রাণে মানি।
-” জামাকাপড় গুছাতে গেলাম। আপনি আসুন।
আরু চলে গেলো। আরাধ্য পায়ের উপর পা তুলে পকেট থেকে ফোন বের করলো সময় দেখার জন্য। সময় টা দেখে পকেটে ফোনটা ভরতেই ফোনটা বেজে উঠলো। আরাধ্য দেখলো আয়ুশ ফোন করেছে। আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো। রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে আয়ুশ বলল-
-” হেই ব্রো হোয়াটসঅ্যাপ?
-” গুড।
-” একটা কথা আমার কানে এসেছে ব্রো৷ ক্যেয়া এ ট্রু?
-” কি কানে গেছে তোর?
-” ব্রো আই হেয়ার, ইউ গো টু সাজেক।
-” ইয়েস।
-” বাট হোয়াই?
আরাধ্য কফিতে চুমুক দিয়ে বলল-
-” তোর বোনের সাথে হানি খেতে সাথে মুন দেখতে।
আয়ুশ উৎফুল্ল হয়ে বলল-
-” আমাকেও নিয়ে চলো ব্রো। আই লাভ হানি।
উইথ সি নাইট মুন। আই লাভ ট্যুর।
আয়ুশের কথা শুনে আরাধ্যর কপাল কুচকে আসলো।
-” তোর বয়স হয় নি হানি খাওয়ার আয়ুশ। আরো
বড় হ বিয়ে কর। তারপর হানি খাস আর সাথে মুন ও দেখিস।
-” হানি খাওয়ার সাথে আর মুন দেখার সাথে
বিয়ের কি সম্পর্ক ব্রো? আমাকেও নিয়ে চলো
সাথে। আমি নিজের পকেট থেকে টাকা দিব।
সেই টাকা দিয়ে হানি কিনে দিও।
আরাধ্য কপাল চাপড়ালো। কোন কুলক্ষণে
এমন ভাব দেখিয়ে হানি খাওয়ার কথা বললো সে!
-” দেখ আয়ুশ তুই ছোট মানুষ। এই হানি সেই হানি না।
-” তাহলে কি ভেজাল হানি? চিনি দিয়ে ফেক
হানি খেতে যাচ্ছো?
আরাধ্য এবার রেগে বলল-
-” নারে ভাই। আমি কোনো হানি খেতে যাচ্ছি না।
-” তাহলে কি করতে যাচ্ছো?
-” তোর বোনের সাথে হানিমুন করতে। শালা
এবার বুঝেছিস?
আয়ুশ লজ্জা পাওয়ার ভান করে মুখে হাত দিয়ে বলল-
-” ব্রো হানিমুন করতে যাচ্ছ! ছি ছি ছি। এসব
তো লুকিয়ে যেতে যেতে হয়। তোমার দেখছি
লজ্জা নেই ব্রো ছি ছি ছি।
-” এই ছি ছি ছি করছিস কেনো শালা? আমি
কি পরনারীর সাথে যাচ্ছি নাকি। আর হানিমুন ছি ছি
করার মতন ব্যপার নাকি হু!
-” আমি লজ্জা পেয়ে গেছি ব্রো।
-” বেলেহাজ কি না লজ্জা পাচ্ছে হাস্যকর!
-” ব্রো একটা কথা শুনো।
-” বল।
-” বলছি কি আমি..
-” দেখ তুই যাওয়ার কথা বলিস না আয়ুশ।
-” না ব্রো আমি যাওয়ার কথা বলছি না। বলছি
আমি আর আরশিও তো একদিন যাব তাই না
বলো? আমি আরশি কে নিয়ে দেশের বাহিরে
যাব। উমম পাকিস্তানের কাশ্মিরে যাব।
-” থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফেলায় দিব আয়ুশ।
এই টুকু পুলা এখনই হানিমুনের কথা ভাবছে।
ফোন রাখ শালা। নাক টিপলে দুধ বের হয়। সে
আবার বিয়ে, হানিমুন নিয়ে প্ল্যান করে।
আরাধ্য ফোন কেটে রুমে আসলো। আরু জিজ্ঞেস করলো-
-” কে ফোন করেছিল?
-” তোর বেয়াদব ভাই।
-” কি বললো আয়ুশ?
-” ওর যা ভাষা তাই বললো।
-” কি ভাষা?
আরাধ্য দাঁত চেপে বলল-
-” অশুদ্ধ ভাষা। লাইট নিভিয়ে আয় ল্যাগেজ গুছানো শেষ হলে।
আরু তপ্ত শ্বাস ফেলে ল্যাগেজ টা সাইডে রেখে লাইট নিভিয়ে বিছানায় আসলো। আরাধ্য আরুকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমালো।
খুব ভোরের দিকে আরাধ্য আরু বাসার সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয় সাজেকের উদ্দেশ্যে। সুমি রা গতকাল রাতেই চলে গেছে। ভালোমতো ব্রেকফাস্ট করে বের হয় নি আরু। তাই বাসে ওঠার আগে আরুর জন্য হোটেল থেকে পরোটা ডিম আর পানি নিয়ে নিলো। গাড়িতে বসে খেতে পারবে। কিন্তু আরু খেলো না। আরাধ্য কয়েকবার বলল খেতে শোনে নি। আরাধ্য আরুর ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে এসে পৌঁছাতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগলো। দুপুর হয়ে যাওয়ায় একটা রেস্টুরেন্টে বসলো। আরাধ্য জিজ্ঞেস করলো-
-” কি খাবি?
-” যেটা খুশি অর্ডার দেন।
আরাধ্য কাচ্চি অর্ডার দিলো। আরু চুপচাপ খেলো। খাওয়া শেষে আরাধ্য বিল পে করে আরু কে নিয়ে গাড়িতে বসলো। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা – ৩০-৪৫ মিনিট তারপর দীঘিনালা থেকে সাজেক ২-৩ ঘণ্টার জার্নি করে অবশেষে আরুকে নিয়ে আরাধ্য সাজেক এসে পৌঁছালো। কটেজের বাহিরেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলো সুমি আর পারভেজ। আরাধ্য দের গাড়ি থেকে নামতে দেখে সুমি এগিয়ে আসলো আরুর কাছে।
-” তোদের জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আরাধ্য। চল ভেতরে। ফ্রেশ হয়ে নে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো যে।
আরাধ্য আরু কে নিয়ে রুমে আসে নিজেদের। আরুকে ফ্রে হতে বলে আগে। তারপর আরাধ্য ঢুকবে। আরু ল্যাগেজ থেকে জামা বের করে ওয়াশরুমে যায়। কটেজের সার্ভেন্ট এসে সন্ধ্যার নাস্তা দিয়ে যায়। আরু ভের হতেই আরাধ্য ঢুকে৷ মিনিট দশেকের মত সময় নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আরু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে টাওয়াল দিয়ে। শরীরের পেছনের জামার অংশ ভিজে গেছে। চুল নিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। শরীরে ওড়নাটাও নেই। আরাধ্য এক ঢোক গিললো। গুটিগুটি পায়ে আরুর পেছনে দাঁড়িয়ে আয়নায় দৃষ্টি রেখে আরুর দিকে তাকালো। আরু পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আয়নায় তাকিয়ে দেখলো আরাধ্য তার পেছনেই। আরু ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-” কি দেখেছেন ওভাবে?
আরাধ্য জবাব দিলো-
-” আমার বউকে।
-” কেনো আগে দেখেন নি বউ কে?
-” দেখেছি। তবে সেভাবে পুরোপুরি ভাবে নয়।
-” মানে?
আরাধ্য বিছানা থেকে ওড়না এনে আরুর গলায় দিয়ে বলল-
-” বেয়াদব মেয়ে আমাকে সিডিউস করার চেষ্টা করছিস এই ভরসন্ধ্যায়?
আরু মুখ বাঁকিয়ে বলল-
-” আমার কি খেয়েদেয়ে কাজ নেই নাকি?
-” তাহলে খাস নি কেনো?
-” কি?
-” নাস্তা যে দিয়ে গেছে সার্ভেন্ট।
-” খেয়াল করি নি।
আরু খাবার খেয়ে রুম থেকে হয়ে গেলো। আরাধ্য বুকে ফু দিলো। এতদিন ধরে নিজেকে কন্ট্রোলে রেখেছে আর আজ কিনা এতেই কন্ট্রোল লেস হয়ে যাচ্ছিল! হুমায়ুন আহমেদ ঠিকই বলেছেন। গোসলের পর মেয়েদের মারাত্মক লাগে। আসলেই। এখনই আরাধ্যর ইচ্ছে করছিল আরুকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সন্ধ্যা দেখে গুটিয়ে আসলো। বুকে ফু দিয়ে বলল— কন্ট্রোল আরাধ্য কন্ট্রোল।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাজেক এক অদ্ভুত রূপ নেয়। কটেজগুলোর জানালায় উষ্ণ হলুদ আলো জ্বলতে থাকে, আর বাইরে পাহাড়ি বাতাসে গাছের পাতাগুলো মৃদু দোল খায়। চারপাশের নিস্তব্ধতার মাঝে দূরে কোথাও একলা ঝিঁঝি পোকা ডাকছে, মাঝে মাঝে বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে তার সুর।
কটেজের বারান্দায় বসে থাকলে দেখা যায়, মেঘেরা ধীরে ধীরে উপত্যকার গা বেয়ে নেমে আসছে, কখনো মনে হবে তারা বারান্দা পর্যন্ত চলে এসেছে, আবার কখনো নিখোঁজ হয়ে গেছে অন্ধকারের গহ্বরে। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে চাইলে উষ্ণ নিশ্বাসের মতো মিলিয়ে যায়।
হঠাৎ কোথাও কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক ভেসে এলো। পাহাড়ি পথে পর্যটকদের আনাগোনা কমে গেছে, কিন্তু কটেজগুলোর ভেতরে গল্প এখনো চলছে—কেউ কাঠের চেয়ার টেনে বসে এক কাপ কফিতে চুমুক দিচ্ছে, কেউবা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অন্ধকার পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে একান্তে কিছু ভাবছে।
রাত যত গভীর হয়, সাজেক ততই যেন রহস্যময় হয়ে ওঠে। এই পাহাড়ি নির্জনতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো ধীরে ধীরে জেগে ওঠে, কেউ হয়তো হারানো ভালোবাসার কথা ভাবে, কেউবা জীবনের নতুন কোনো অর্থ খোঁজে। আর যদি কপাল ভালো থাকে, আকাশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত নক্ষত্রের মাঝখানে হুট করে একটা উল্কাপাতের দৃশ্যও ধরা দিতে পারে—যেন পাহাড়ের নিঃসঙ্গ রাতেও কেউ একটা ইচ্ছেপূরণের বার্তা দিয়ে গেল।
কটেজের বাহিরে চেয়ার পেতে বসে আছে আরু,আরাধ্য, সুমি পারভেজ। টুকটাক গল্প হচ্ছে তাদের মাঝে। পারভেজ বর্ণনা করছে কিভাবে তাদের প্রথম দেখা থেকে শুরু করে প্রপোজ তারপর বিয়ে অব্দি আগানো। আরু মনোযোগ দিয়ে শুনলো। পারভেজ আরাধ্য কে জিজ্ঞেস করে উঠলো-
-” তা তোমাদের প্রেম ভালোবাসা কি করে হলো? কে কাকে আগে জানিয়েছিলে মনের কথা?
আরু কেশে উঠলো। সুমি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো আরু পানি খেলো। আড়চোখে তাকালো আরাধ্যর দিকে।
-” কি হলো বলবে না নাকি?
পারভেজের কথায় আরাধ্য নেড়েচেড়ে বসে বলল-
-” তেমন কোনো গল্প নেই। জাস্ট দু লাইনের।
-” ভেরি ইন্টারেস্টিং তো। শুনতে চাই।
-” আমাদের মধ্যে সেভাবে বাহ্যিক ভাবে কোনো ভালোবাসা গড়ে উঠে নি।
-” মানে? তাহলে বিয়ে কি করে হলো?
-” ঐ যে মনের চাওয়া+ ভালোবাসা। মন থেকে কাউকে চাইলাম। তারপর ছলেবলে কৌশলে তাকে নিজের করে নিলাম।
-” তারমানে আরু কে তুমি ফাঁসিয়ে বিয়ে করছো?
-” একদম ঠিক ধরেছেন।
-” এটা করতে হলো কেনো?
-” আমি অনুভূতি বুঝাতে ভীষণ কাঁচা। কোনো কাব্যিক ভাষায় কবিদের মতন গুছিয়ে বলতে পারি না। আমার পছন্দ হয়েছে নিজ থেকে বলতে পারি নি সবার সামনে। বিশেষ করে এটা বড়দের সামনে হয়ে থাকে। বাড়ির সকলের সামনে আমি একজন আদর্শ ভদ্র সন্তান। তো সরাসরি বলতে পারি নি আমার একজন কে চাই। লাইফে সুখ দুঃখ ঝড় ঝাপ্টা সুনামি যাই বয়ে যাক আমার তাকে আমার পাশে চাই। কিন্তু এই পরিবারের বাহিরে জাস্ট একজনের কাছে আমি বেয়াদব, ফাজিল। সেটা আমার বউ৷ ছোট থেকে যাকে নিজের ভেবে এসেছি আমি তাকেই আমার বউ করেছি। এন্ড নাও আমি আসলেই একজন সুখী ব্যক্তি। আরু সুখী কি-না আমার সাথে তা বলতে পারবো না। তাতে আমার কি। আমি তো সুখী। এদিক দিয়ে আবার আমি ভীষণ সেলফিশ।
আরু আরাধ্যর দিকেই তাকিয়ে ছিলো এতক্ষণ। এই বেয়াদব তাকেই চেয়ে এসেছে৷ আর এমন ভাব ধরতো সবার সামনে যে আরু আরাধ্য কে চাচ্ছে। পারভেজ চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে বলল-
-” ভীষণ চালাক তুমি।
-” তা বলতে পারেন। চালাক না হলে ঠকতে হয়। আমি আবার ঠকতে রাজি নই।
-” অবশ্যই। তা আরু তুমি কেমন আছো আরাধ্যর সাথে বিয়ের পর? সুমি বলেছে তোমরা নাকি সবসময় শুধু ঝগড়াই করো।
আরু আরাধ্যর দিকে তাকালো। আরাধ্য তাকিয়ে আছে তার দিকে। কি নেশালো সেই চাহনি বাপ্রে। আরু চোখ সরিয়ে নিলো। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল-
-” টক ঝাল মিষ্টি, এই সম্পর্কের রঙ,
কখনো উদাস, কখনো অনুরাগে ঢঙ।
একদিন হাসি, পরদিন অভিমান,
তবু ভালোবাসা থাকে অবিরাম।
ঝাল ঝাঁজালে কথার খেলা,
তবু না হারায় মায়ার মেলা।
টক অভিমান, মন খারাপের সুর,
একটু মিষ্টি হাসিতেই ফুর।
এই টানাপোড়েন, মান-অভিমান,
তাতেই তো গাঁথা হৃদয়ের গান।
টক ঝাল মিষ্টি সব রইল মিশে,
সম্পর্ক বাঁচে ভালোবাসার নীড়ে।
পরিশেষে আমি তার সাথে সুখী।
পারভেজ সুমির দিকে তাকিয়ে বলল-
-” বাহ্ দু’জনেই দুজনের সাথে বেশ সুখী আছো।
-” জ্বি দোয়া করবেন।
-” দোয়া সব সময়ই আছে। কাল সকালে কিন্তু আমরা বের হবো। তৈরি হয়ে থেকো দু’জন। সাজেক মানে বসে থাকার জায়গা না। এটা ঘুরে দেখার জায়গা।
পারভেজ সুমি কে নিয়ে চলে গেলো কটেজে। আরাধ্য এগিয়ে এসে আরুর গা ঘেঁষে চেয়ারে বসলো। আরু চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিতেই আরাধ্য আরুর চায়ের কাপ টা নিয়ে নিজে চুমুক বসিয়ে বলল-
-❝ মেয়ে তোর চায়ের কাপের স্বাদ যেন তোর ঠোঁটের মিষ্টি ভাষা,
যতই করি পান ততই বাড়ে পিপাসা, আর ততই গভীর হয় নেশার রাস্তা। ❞
আরু মুচকি হাসলো। আরাধ্য আর আরু কটেজের ভেতর গেলো না৷ বাহিরে বসেই আরাধ্যর কাঁধে মাথা রেখে মধ্য রাত অব্দি চাঁদ দেখলো আরু। প্রায় পনে একটার দিকে আরাধ্য রুমে যাওয়ার জন্য আরুকে ডাকতেই তাকিয়ে দেখলো আরু ঘুমিয়ে গেছে। বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে মুখ জুড়ে ঢেকে আছে। আরাধ্য সন্তপর্ণে চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিলো। আসলেই জীবনে ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে গেলে জীবনে বেঁচে থাকার সুখ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। আরাধ্য আরুর ঘুমটা ভাঙালো না। আরুকে পাঁজা কোলে করে রুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে কাঁথা জড়িয়ে দিলো৷ তারপর দরজা লাগিয়ে রুমের লাইট নিভিয়ে আরুর পাশে ঘুমন্ত আরুকে দেখতে লাগলো৷ চাঁদের আলো জানালা দিয়ে রুমে এসেছে। সেই আলোয় আরুর মুখ স্পষ্ট। পরশু আরুর বার্থডে। আরাধ্য দিনটাকে ভীষণ স্পেশাল করে দিবে। সেজন্যই তো আসা সাজেক। আরাধ্য মুচকি হেঁসে আলতো করে আরুর গালে দু হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল-
তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৯
-❝ভালোবাসা হলো এক অদৃশ্য নেশা, যা সঙ্গীহীন থাকলে পৃথিবী শূন্য, আর একসাথে থাকলে পৃথিবীও অপ্রতুল।❞
আরাধ্যর পৃথিবী অপ্রতুল লাগতে শুরু করলো আরু কে নিজের করে পাওয়ার দিন থেকেই। সে ভীষণ ভালোবাসে অগোচরে এই মেয়েটাকে। না পেলে তো পাগলই হয়ে যেত।
