তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২১

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২১
Raiha Zubair Ripti

ভোরের আলো ফোটার আগেই পাহাড়ি রাস্তার বুকে জিপ ছুটছিল। চারপাশের ঘন কুয়াশা, রাস্তার পাশে গাঢ় সবুজ বন আর মাঝে মাঝে পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেওয়া মেঘের ঢেউ—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত মোহ ছড়িয়ে ছিল বাতাসে। জিপে বসে ঘুমে ঢুলছে আরু। আরাধ্য ঘুমন্ত আরু কে টেনে সাথে নিয়ে এসেছে কাংলাক পাহাড়ে উঠে সুন্দর এক দৃশ্য দেখার জন্য। জিপ টা পারভেজ ভাইয়ের। পেছনে বসেছে পারভেজ ভাই আর সুমি। তারা মুগ্ধ হয়ে আশেপাশে দেখছে অথচ আরু টা মনের সুখে ঘুমাচ্ছে। আরাধ্য বাঁকা চোখে আরু কে দেখে পায়ের কাছ থেকে পানির বোতল নিয়ে বোতলের মুখ খুলে হাতে সামান্য পানি নিয়ে আরুর চোখ মুখে ছিটিয়ে দেয়। আরু ধরফরিয়ে উঠে। ঝাপ্সা চোখ দিয়ে এদিক ওদিকে তাকিয়ে বলে-

-” বৃষ্টি পড়তেছে!
আরাধ্য পানির বোতলে মুখ লাগিয়ে বলে-
-” বৃষ্টি পড়ছে না ম্যাডাম।
-” তাহলে পানি আসলো কোথা থেকে?
কথাটা বলেই আরু সামনে তাকিয়ে ইয়া বড় পাহাড় টা দেখে চোখ মুখ হাত দিয়ে ঢেকে বলল-
-” আল্লাহ গো পাহাড় ভেঙে পড়লো।
আরাধ্য আরুর মাথায় চাটি মেরে বলল-
-” নেশাখোরের মতন কথা বলছিস কেনো? চোখ মুখে পানি দে বেয়াদব। কোথায় পাহাড় ভেঙে পড়ছে। বেশি দেখা শুরু করছিস।
আরু পানির বোতল নিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটা দিলো। আরাধ্য রুমাল বের করে দিলো। আরু মুখ মুছে বলল-
-” এখানে আমরা কি করতে এসেছি?
পেছন থেকে সুমি বলল-
-” তুমি এই পাহাড়ের সম্পর্কে জানো না আরু?
-” না কেনো এই পাহাড়ের কোনো বিশেষত্ব আছে নাকি?
-” হ্যাঁ।
-” কি?
-” পুরো সাজেক কে এক নজরে দেখতে পারবে।
আরু শুকনো মুখে বলল-

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ওহ্।
-” শুধু ওহ্? তুমি এক্সাইটেড না?
-” না।
আরাধ্য তপ্ত শ্বাস ফেললো আরুর কথা শুনে। পাহাড়ের কাছে এসে গাড়ি থামালো।
এই কাংলাক পাহাড়, সাজেকের অন্যতম চমৎকার স্থান। এই পাহাড়টি তার শান্ত, প্রকৃতির মাঝে লুকিয়ে থাকে এর আদিম সৌন্দর্য।
কাংলাক পাহাড়ে উঠতে শুরু করার মুহূর্তে মনে হবে আপনি অন্য এক পৃথিবীতে প্রবেশ করছেন। রাস্তা আর পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে উঠতে শরীরের ক্লান্তি অনুভব হয়। আরু পাহাড় টার সামনে দাঁড়িয়েই ক্লান্তি অনুভব করছে। এখন এই এত বড় পাহাড় কি না পায়ে হেঁটে উঠতে হবে! আরাধ্য আরু কে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-
-” কি রে উঠবি না?
আরাধ্যর হাতে লাঠি৷ এই লাঠির সাহায্যে নাকি উঠতে হবে। সুমি পারভেজ অলরেডি হাটা শুরু করে দিছে। আরু মুখ টাকে কাচুমাচু করে বলল-

-” কি দরকার এই পাহাড়ে উঠার বলুন। বাই এনি চান্স একবার পা পিছলে গেলে ইহকালে বেঁচে থাকা সাঙ্গো হয়ে যাবে। জীবন নিয়ে রিস্ক নেওয়ার কোনো মানে হয়?
আরাধ্য জোর করে আরুর হাতে লাঠি দিয়ে বলল-
-” আমি জীবনে রিস্ক নিয়ে যদি তোকে বিয়ে করতে পারি তাহলে তুইও পাহাড়েও চড়তে পারি। কথা না বলে আগে আগে হাট। আমি পেছনে আছি। পা পিছলে গেলে তুই একা পরবি না। আমাকেও সাথে নিয়ে পরবি।
আরু হাটা ধরলো। কিছুক্ষণ হেঁটেই এক পাথরের উপর বসে পড়লো। আরাধ্য জিজ্ঞেস করলো-
-” কিরে বসে পড়লি কেনো?
-” একটু জিরিয়ে নেই।
-” এভাবে জিরাতে থাকলে তো আর চূড়ায় ওঠা এই জনমেও হবে না। ওঠ বলছি। দেখ সুমিরা কতদূর চলে গেছে। তোরে কিন্তু আমি ধাক্কা দিয়ে ফেলে চলে যাব।

আরু উঠে দাঁড়ালো। ২৫ মিনিটের রাস্তা আরু এক ঘন্টার মতন সময় নিয়ে উঠলো। পুরো পথ জুড়ে নানা গাছপালা এবং পাহাড়ি বুনো ফুলের গন্ধ শুকতে শুকতে এসেছে। কম করে হলেও পাঁচ বারের মতন জিরিয়েছে। আরু কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে হাঁটু তে দু হাত ঠেকিয়ে ঝুঁকে শ্বাস ফেলে সামনে তাকাতেই হা হয়ে যায়। কিছুটা দূরের পাহাড়ের মাথা গিলে ফেলা মেঘ, আর নিস্তব্ধতার মাঝে হালকা বাতাস আপনার আত্মা পর্যন্ত শীতল করবে। মেঘগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে মাথার ওপর প্রায় ছুঁয়ে আছে, আর নিচে সাজেকের সবুজ উপত্যকা। সামনে বিস্তীর্ণ সবুজ গাছপালা, ঘন মেঘের প্রাচীর, আর পাহাড়ি ফুলের সুরভি।
আরাধ্য আরু কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
-” হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো? মশা ঢুকবে তো।
আরু একবার আরাধ্য কে তো আর একবার মেঘ গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। আরাধ্যর বাহু ধরে লাফিয়ে বলল-
-” আল্লাহ গো কি সুন্দর জায়গা।
-” হাভাতের মতন করিস না আরু। চল ছবি তুলি।

আরাধ্য আরু কে নিয়ে সুমিদের কাছে গিয়ে বলল-
-” এ সুমি আমাদের কাপল ছবি তুলে দে সুন্দর করে। ফেসবুকে প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করে ক্যাপশন দিব সাজেকের কংলাক পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের মাঝে আমার ব্যাক্তিগত মেঘকন্যার সাথে।
সুমি আরু আর আরাধ্যর ছবি তুলে দিতে দিতে বলল-
-” সৌরভ হার্ট অ্যাটাক করবে সেটা দেখে।
-” করে মরে যাক।
বেশ কিছুক্ষণ ওরা ঘুরাঘুরি করে রেস্টুরেন্টে দুপুরের লাঞ্চ করে হেলিপ্যাড আসে। এটা সূর্যাস্তের জন্য উপযুক্ত। কংলাক পাহাড়ও উপযুক্ত তবে এক জায়গায় এতক্ষণ থাকার মানে হয় না। হ্যালিপ্যাডে সূর্যাস্ত দেখে আরাধ্য রা কটেজে ফিটে এলো। কটেজের বাহিরে বাগানে এক লোক গিটার নিয়ে গান গাইছে। আর কটেজে আসা লোকজন চেয়ার পেতে বসে শুনছে। আরাধ্য আরুকে নিয়ে রুমে আসলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে বাহিরে আসলো। গানের ওখানে চেয়ার টেনে বসলো। সুমি আরাধ্য কে দেখেই বলল-

-” আরাধ্য তুই তো জোশ গান গাইতে পারিস গা না আজ।
লোকটা আরাধ্যর দিকে তাকিয়ে বলল-
-” গাইতে পারেন?
কথাটা বলে গিটার টা এগিয়ে দিলো। আরাধ্য আরুর দিকে তাকালো। আরু ফিসফিস করে বলল-
-” কোনো হিন্দি গান গাইবেন না। খাঁটি বাংলা গান গাইবেন।
আরাধ্য গিটার টা নিয়ে বলল-
-” যথা আজ্ঞা ম্যাডাম।
আরাধ্য গিটারে টুংটাং করে গাইতে লাগলো—

-” সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরেছি পাগল হয়ে
সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরেছি পাগল হয়ে
মরেমে জ্বলছে আগুন আর নেভে না
সে মানুষ চেয়ে চেয়ে ফিরেছি পাগল হয়ে
মরেমে জ্বলছে আগুন আর নেভে না
আমায় বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
দেখেছি
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
পথিক কয়, ভাবো নারে, ডুবে যেও না রূপসাগরে
পথিক কয়, ভাবো নারে, ডুবে যেও না রূপসাগরে
বিরলে বসে করো যোগ-সাধনা
পথিক কয়, ভাবো নারে, ডুবে যেও না রূপসাগরে
বিরলে বসে করো যোগ-সাধনা
একবার ধরতে পেলে মনের মানুষ
ছাড়তে যেও না
ধরতে পেলে মনের মানুষ
ছাড়তে যেও না
দেখেছি
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
তারে ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলাম আর পেলাম না
ধরি ধরি মনে করি
ধরতে গেলাম আর পেলাম না
দেখেছি
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা।
সবার করতালির শব্দ শোনা গেলো। আরু জোরে জোরে করতালি দিলো খুশি তে। তার জামাই কত টেলেন্টেড! বাপ মায় এক্কেবারে যোগ্য পুলার হাতে তাকে সঁপে দিছে। নিজে হোক ফেল্টুস অকর্মা তাতে কি। জামাই তো তার ফাস্ট ক্লাস। আরু চোখ থেকে কাজল হাতে লাগিয়ে আরাধ্যর কানের পাশে লাগিয়ে দিতে আরাধ্য বলল-

-” কি করলি এটা?
-” বদ নজর থিকা বাঁচাচ্ছি আপনায়। সেজন্য কালি লাগিয়ে নজর কেটে দিলাম।
-” তাও ভালো কালি দিলি৷ থুথু যে দিস নি এই অনেক।
আরাধ্য পকেট থেকে ফোন বের করে কটেজের ম্যানেজার কে ফোন করলো। ফোন রিসিভ হতেই আরাধ্য বসা থেকে উঠে সামনে গিয়ে বলল-
-” সব করেছেন যা যা বলেছিলাম?
-” হ্যাঁ স্যার। ছাঁদ টা একদম আপনার বলা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে।
-” আর রুম?
-” রুম টাও সাজানো হয়েছে। আপনি ম্যাডাম কে নিয়ে আসতে পারেন।
আরাধ্য ফোন কেটে আরুর কাছে আসলো। হাই তুলতে তুলতে বলল-
-” আরু ঘুম পাইছে আমার।
-” আমারও। চলুন।
আরু আগে আগে হাটলো। আরাধ্য পেছন পেছন আসলো। আরু দোতলায় এসে তাদের রুমের দরজা খুলতেই রুম অন্ধকার দেখে বিস্ময় হলো। যাওয়ার সময় তো রুমের লাইট জ্বালিয়ে গিয়েছিল। আর বাহিরেও তো কারেন্ট আছে। তাহলে বাতি নেভানো কেনো? আরু দেওয়াল হাতরে সুইচ খুঁজে লাইট জ্বালিয়ে সামনে ঘুরতেই হা হয়ে যায়। বেডের উপর গোলাপের পাপড়ি। লাভ শেফের। আরু পেছন ফিরলো। আরাধ্য দরজায় হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।

-” এসব কি?
আরাধ্য দরজা বন্ধ করে এগিয়ে আসলো। আরুকে পেছন থেকে জড়িয়ে কানে ফিসফিস করে বলল-
-” আজ আমাদের লেট নাইট।
-” মানে?
-” ফাস্ট নাইটে তো হলো না। তাই লেট করে হতে যাওয়ায় লেট নাইট নাম দিলাম। তোর জন্য একটা উপহার আছে।
আরু উৎসাহিত হয়ে বলল-
-” কি এনেছেন আমার জন্য? তাড়াতাড়ি দিন।
আরাধ্য আলমারি থেকে একটা শপিং ব্যাগ বের করে আরুর হাতে দিয়ে বলল-
-” ইট’স ফর ইউর মাই লাভলি ওয়াইফ।
আরু প্যাকেট টা নিলো। বিছানায় বসে অতি আগ্রহের সাথে খুলতে লাগলো। আরাধ্য মুচকি হাসতে লাগলো। আরু প্যাকে টা খুলেই ভেতরে থাকা জিনিস টা খুলে মেলতেই যা দেখলো এক চিৎকার দিয়ে জিনিস টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো। আর সেটা গিয়ে পড়লো আরাধ্যর মুখের উপর। আরাধ্যর মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো। মুখ থেকে কাঙ্ক্ষিত জিনিস টা সরিয়ে আরুর দিকে তাকিয়ে বলল-
-” আমার মুখের উপর ফেললি কেনো বেয়াদব।
আরু চোখ মুখ কুঁচকে বলল-

-” আমি কি করে জানবো ওটা আপনার মুখের উপর গিয়ে পড়বে? আর এটা কোনো উপহার হলো ছিঃ।
-” কেনো কি হয়েছে? তুই আমার বউ লাগিস। তোকে আমি দিতেই পারি নাইটি। যা চেঞ্জ করে পড়ে আয় এটা।
আরু চোখ বড় বড় করে বলল-
-” কিহ! আমি এটা পড়ে আসবো তাও আবার আপনার সামনে! জীবনেও না। আমি মরেই যাব লজ্জায়।
-” লজ্জায় মরে যা তাও তোকে পড়ে আসতে হবে।
-” কেনো ওটা পড়ে আসতে হবে?
-” আশ্চর্য উই আর এডাল্ট পিপল জান। এটা পড়ে আসলে আমায় বেশি খাটতে হবে না। ডিরেক্ট একশনে নামতে পারবো।
-” না দেখুন আমি এটা পড়তে পারবো না। এসব তো পড়ে বলিউডের নায়েকা রা।
-” আমার কাছে তো তুই ই আমার বলিউডের নায়েকা সোনা। এবার যাও স্বামীর কথা শুনে পড়ে এসো।
-” আমি না হয় ওটা পড়ে আসবো। আপনি কি পড়বেন?
-” আমাকে কি পড়ায় দেখতে চাস? যদি বলিস উইদাউট জামাকাপড়ে আই হ্যাভ নো প্রবলেম। দেখতে চাস?
আরু ওড়না দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে বলল-
-” আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ। লজ্জা সরমের মাথা খেয়েছেন নাকি?
-” হোয়াট ইজ লজ্জা সরম? গায়ে মাখে নাকি খায়?
-” বেলেহাজ লোক।
-” আর কিছু? বকবক না করে চেঞ্জ করে আয়।

আরাধ্য নাইটি টা আরুর দিকে ছুঁড়ে দিলো। আরু ক্যাচ করে ধরে নেয় নাইটি টা। তারপর আরাধ্য কে বকতে বকতে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আরাধ্য রুমের ভেতর পায়চারি করতে করতে আরুর জন্য অপেক্ষা করে। অনেকক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন আরু বের হচ্ছে না তখন আরাধ্য দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল-
-” কিরে ওয়াশরুমের ভেতরই কি লজ্জায় মরে গেছিস নাকি? বের হ।
-” আপনি লাইট নেভান রুমের। আমি আলো তে যেতে পারবো না।
-” ওয়েট অ্যা মিনিট।
আরাধ্য টেবিল থেকে লাইটার নিয়ে রুমের ভেতর থাকা মোমবাতি গুলো জ্বালিয়ে নিলো। তারপর লাইট নিভিয়ে বলল-
-” বের হ। লাইট নিভিয়েছি।
আরু আরাধ্যর কথা বিশ্বাস করে দরজা খুলে বের হতেই চোখ কপালে উঠে গেলো। কিড়মিড় করতে করতে বলল-
-” আপনাকে যে বলেছিলাম লাইট নেভাতে।
-” লাইট তো নেভানোই।
-” মোমবাতি জ্বালানো কেনো তাহলে?
-” বাহ্ রে সব বন্ধ করে রাখলে তোকে দেখবো কি করে? আর তুই নাইটির পরে উপর দিয়ে ওড়না দিয়ে বডি ঢেকে রেখেছিস কেনো?

কথাটা বলেই আরাধ্য একটানে আরুর ওড়না টেনে খুলে ফেললো। আরু চোখ বন্ধ করে ফেললো। আরাধ্য আপাদমস্তক আরু কে দেখলো। শর্ট, হাতা কাটা নাইটি তে আরু কে জাস্ট…।
আরাধ্য পাশ থেকে পানির গ্লাস থেকে আগে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নেয়। বুকে ফু দিয়ে নিজেকে সাহস দিলো— আরাধ্য তুই পারবি।
আরুর দিকে এগিয়ে আসলো। আরু এখনও চোখ বন্ধ করে রেখেছে। আরাধ্য আরুর কে সোজা পাঁজা কোলে নিতেই আরু চমকে উঠে৷ চোখ মেলে নিজেকে আরাধ্যর কোলে দেখে। আরাধ্য আরু কে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আরু পাশ থেকে চাদর টেনে নিতে গেলে আরাধ্য আরুর হাতে চাটি মেরে বলে-
-” শা’লি আবার চাদর টানিস কেনো? একদম পুতুলের মতন চুপ থাকবি। বলেছি না আজ আমাদের লেট নাইট।
-” আমার বুক ধকধক করছে তো।
-” হার্ট অ্যাটাক করবি যে সেজন্য। এখন কি চুপ করবি? আর এই ট্যিসু ধর।
-” কেনো?
-” লিপস্টিক মোছ ঠোঁটের। আগের বারের মতন লিপস্টিক সহ টেস্ট করতে চাই না।
আরু ট্যিসু দিয়ে লিপস্টিক মুছলো। আরাধ্য নিজের মুখ আরুর মুখের সামনে নিয়ে যায়। আরাধ্যর নিঃশ্বাস আরুর মুখের উপর আঁচড়ে পড়ছে। আরুর নিঃশ্বাসের গতি দ্রুততর করে পড়ছে। আরাধ্য আরুর ওষ্ঠ নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ করতেই আরু বিছানার চাদর খামচে ধরে। আরুকে তাল মেলাতে না দেখে আরাধ্য আরুর ঠোঁটে কামড় দেয়। আরু ব্যথায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। আরাধ্য ঠোঁট ছেড়ে বলে—

-” তোকে কি সব হাতো কলমে ধরে শিখিয়ে নিতে হবে নাকি?
-” কি করছি আমি?
-” তাল মিলাচ্ছিস না কেনো?
-” আচ্ছা মিলাচ্ছি।
আরাধ্য ফের আরুর ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আবদ্ধ করলো। আরু তাল মিলালো। আরাধ্য বা হাত দিয়ে আরুর নাইটির হাতা খুলে ফেলে। আরু লজ্জায় মরে যাচ্ছে। এই লোকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছিল তখন আরু! ভুল করে বলে ফেলছিল। আরাধ্য নিজের পড়নের শার্ট খুলে ফেললো। আরাধ্যর উন্মুক্ত বুক দেখে আরু এক ঢোক গিললো। ভীষণ দূর্বলতা আরুর এই বুক। আরাধ্য আরুকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল-
-” বেয়াদব তুই তাকিয়ে আছিস কেনো? তাকানোর কথা তো আমার। মনে হচ্ছে আমি কোনো স্টুডেন্ট কে ধরে ধরে শেখানের ক্লাস নিচ্ছি। হাওয়ায় বড় হয়েছিস নাকি তুই? কিচ্ছু জানিস না? ঢংগি কোথাকার।
-” আপনার মতন বেলেহাজ নাকি আমি?
-” তোকে বেলেহাজ হতে না করেছে কে? বেলেহাজ হলে তো আমার সুবিধাই হত। যাই হোক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। আরুর গাল স্লাইড করতে করতে বলল—
আর ইউ রেডি?
আরাধ্য ওয়েট করলো না আরুর উত্তরের। উত্তরের অপেক্ষা করলে রাত কেটে সকাল হবে। তারপরও উত্তর আসবে না। আরাধ্য আরুর সাথে আস্তে আস্তে মিশে গেলো। আরু লজ্জায় চোখ খিঁচে বন্ধ করলো। মোমবাতির আলোয় ঘর টা আলোকিত। আরাধ্য আরুর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল-
-” লজ্জা ভেঙে দেওয়ার পরও তোর এত লজ্জা! সারাজীবন সামলাবি কি করে বেডে আমায়? লজ্জা ভাঙতে শেখ। আজ থেকে তো শুরু হলো।
আরু অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল-

-” সামলে নিব তখন।
আরাধ্য মুচকি হেঁসে দিলো। রাত যখন সাড়ে ১১ টা তখন আরাধ্য আরুর থেকে সরে বলল-
-” গোসল করে আয় আরু।
আরু চাদর টেনে নিয়ে বলল-
-” সকালে করবো। এত রাতে সম্ভব নয়।
-” সব সম্ভব যা গোসল করে আয়।
আরু বাধ্য হয়ে গোসল করে আসলো। আরু বের হতেই আরাধ্য একটা প্যাকেট আরুর হাতে ধরিয়ে দিতেই আরু বলল-
-” আবার কি নাইটি নাকি?
-” তর মাথা। রেডি হয়ে নে। আমি গোসল করে আসছি।
আরাধ্য চলে গেলে আরু প্যাকেট টা খুলে দেখলো লাল একটা শাড়ি। আরাধ্য হঠাৎ এত রাতে তাকে শাড়ি পড়তে বলায় অবাক হলো। কোনো রকমে শাড়ি পড়তেই আরাধ্য বেরিয়ে আসলো।
-” উইদাউট ঠোঁটে লিপস্টিক না নিয়ে হাল্কা সাজ।
-” সাজবো কেনো এত রাতে?
-” দরকার আছে।
আরু সেজে নিলো। আরাধ্য নরমাল পোষাক পড়ে ১১ টা ৫৫ তে আরুর হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। আরুকে নিয়ে ছাঁদে যেতেই আরু বলল-
-” ছাঁদের দিকে যাচ্ছেন কেনো? আপনার উপর কি ভুতে আছড় কেটেছে? আমাকে কি ছাঁদ থেকে ফেলে দিতে চাচ্ছেন?

-” হ্যাঁ কারন তুই আমাকে শান্তি দিস না সেজন্য। এখন চুপ কর।
আরাধ্য ছাঁদের কাছে আসতেই আরুর চোখ দু হাত দিয়ে চেপে ধরলে আরু বলে-
-” চোখ কেনো চেপে ধরলেন?
-” বললাম তো ফেলে দিব সেজন্য। কথা না বলে হাঁটতে থাক।
আরাধ্য আরু কে নিয়ে ছাঁদের মাঝে এসে আরুর চোখ খুলে দিলো। আরু ঝাপ্টানি দিয়ে চোখ খুলতেই সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে যায়। পারভেজ ভাই সুমি হাত তালি দিয়ে আরু কে হ্যাপি বার্থডের উইশ করছে। আজ তার জন্মদিন! আরু তো ভুলেই গেছে। আরু তাকালো আরাধ্যর দিকে। আরাধ্য আরুকে কেকের সামনে দাঁড় করিয়ে বলল-
-” শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা। কেক টা কাট এবার।
আরু কেক কাটলো। আরাধ্য কে খাইয়ে দিলো। আরাধ্য আরু কে খাইয়ে দিলো। সুমি পারভেজ ওরা এসে খাইয়ে দিলো। সুমি একটা গিফটের প্যাকেট আরুকে দিলো। কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে আরু আরাধ্য কে একাকী থাকতে দেওয়ার জন্য ওরা চলে গেলো। আরু আরাধ্য কে জড়িয়ে ধরলো।

-” ধন্যবাদ।
আরাধ্য আরু কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল-
-” শুধু ধন্যবাদে হবে না মিসেস আহমেদ।
-” তাহলে কি করতে হবে আর?
-” আমাকে আবার সময় দিতে হবে। আমার আবার প্রেম প্রেম পাচ্ছে। আমার আবার তোকে চাই।
-” তাহলে ছাড়লেন কেনো তখন?
রাগান্বিত হয়ে বলল আরু।
-” ১২ টা বেজে যাচ্ছিলো। সেজন্য।
-” আমাকে গোসল করিয়ে সাজিয়ে এখন আবার বলছেন আবার চাই! মে’রে মা’থা ফা’টিয়ে ফেলবো।
-” এত কথা শুনতে চাই না। রাজি থাকলে হ্যাঁ বল। নাহলে না বল। মনুষ্যত্ব থাকলে নিশ্চয়ই না বলি না জানি আমি।
আরু আরাধ্য দিকে একবার তাকিয়ে হাঁটা ধরে বলল-
-” চলুন বেয়াদব।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২০

আরাধ্য বাঁকা হেঁসে আরুর পেছন পেছন আসলো। তারপর? তারপর দ্বিতীয় বারের মতন তারা আবার মিলিত হলো একে ওপরের সাথে একান্তভাবে। প্রথমবার শিখিয়ে পড়িয়ে রাগারাগি ঝগড়া করে আর দ্বিতীয় বার না শিখিয়েই।
এক রাতেই দু বার বাসর সেরে ফেললো দ্যা গ্রেট আরাধ্য আহমেদ।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ২২