তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ১৫

তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ১৫
আঁধারিনী(ছদ্মনাম)

অভ্রের এমন রুপ দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।হ্যাঁ মিহির সাথে কাপল পিকে অভ্রই ছিলো।চার চারটা বছরের সব কিছুই কি তাহলে মিথ্যে ছিলো।এভাবে আমার সাথে এতো গুলো বছর যাবত সবই প্রতারণা ছিলো সবই মিথ্যে অভিনয় ছিলো!ভাবতেই কান্না দলা পাকিয়ে আসছে।কিন্তু আমি তো কখনো অভ্রের মধ্যে মিথ্যে কিছু দেখিনি তবে কি সবই আমার ভুল ধারণা ছিলো।আমার জন্য অভ্রের প্রত্যেকটা ফিলিংস তাহলে মিথ্যে ছিলো।আমাকে চুপ হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিহি ভ্রু কুঁচকালো।

” ভাবী তুমি কি আকিব কে চেনো?”
” আগে বলো তো তোমাদের সম্পর্ক কতো দিনে?”
” এইতো ছয় মাসের মতো। কিন্তু ভাবী তুমি কি আকিব কে চেনো? ”
” মিহি তুমি আর আমি দুজনেই এই লোকটার প্রতারণার শিকার হয়েছি।ওর সাথেই আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো আমাদের চার বছরের সম্পর্ক ছিলো।আর ওর নাম আকিব না ওর নাম তো অভ্র পুরো নাম অভ্র চৌধুরী।”
মিহির থেকে কোনো কিছু লুকিয়ে না রেখে সোজাসাপ্টা সত্যিটাই বলে দিলাম।মিহি আমার কথাগুলো শুনে চুপ হয়ে গেলো।কিছুক্ষণ ঠায় একভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” ভাবী আমি তোমাকে খুব পছন্দ করি তাই বলে তুমি আকিবের নামে যা নয় তাই বলবে তা কিন্তু আমি মেনে নিবো না।তোমাকে আমি আপন মনে করে পিকটা দেখালাম আর তুমি আমার সাথে এরকম করলে।” মিহি গম্ভীর মুখে বলেই মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো।

” ওকে তোমার প্রুফ লাগবে তো! আমার সাথে আসো।”
বলেই হাত ধরে হাত ধরে টেনে ছাঁদ থেকে নামিয়ে আমার রুমের দিকে অগ্রসর হলাম।আমার এমন কাজে মিহির মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে উঠলো।আমার রুমে এসে থামতেই মিহি হাত ঝাঁকিয়ে সরিয়ে নিলো।
” আমার কোনো প্রুভ লাগবে না।আমার ভালোবাসার উপর আমার বিশ্বাস আছে।আদিব কখনো এমন করবে না।আপু ঠিকই বলে তুমি মোটোও ভালো না আমাদের বাড়িতে তুমি আমাদের সবার জীবন তছনছ করতেই এসেছো।”
মিহির কথায় আমার খারাপ লাগলেও কিছু বললাম না।আমার উদ্দেশ্য এখন মিহিকে সত্যি বোঝানো।অভ্রের পড়ানো চোখের উপর থেকে কালো পর্দাটা সরিয়ে ফেলা।

” মিহি আলমুনকে এসব কি বলছিস তুই?” রাগ মিশ্রিত কন্ঠে শুভ্র বলে উঠলো।
শুভ্রের কথার জবাবে মিহি কিছু বলতে নিলে আমি ওকে থামিয়ে দিলাম ” এসব নিয়ে পরে বলা যাবে।এখন বলো মিহি তুমি আমাকে বিশ্বাস না করলেও নিশ্চয়ই তোমার ভাইয়াকে বিশ্বাস করো।উনি নিশ্চয়ই মিথ্যে বলবে।”
” কিসের সত্যি মিথ্যে? ” ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো শুভ্র।
আমি মিহির থেকে ফোন নিয়ে সেই কাপল পিক টা শুভ্রকে দেখালাম ” আগে বলুন এই লোকটাকে আপনি চিনেন কিনা?

শুভ্র পিকটা একবার দেখেই কুঁচকে যাওয়া ভ্রু জোড়া আরো একটু কুঁচকে নিয়ে বললো ” ওকে না চেনার কি আছে ও তো অভ্র।কিন্তু মিহি তোর সাথে এই ছেলের পিক কেনো?” শেষ কথাটা রেগেমেগেই বললো শুভ্র।
মিহির জেনো এবার টনক নড়লো।ও অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে ” ভাইয়া তুমিও ভাবীর মতো ওকে অভ্র কেনো বলছো?”

” ওকে অভ্র না বলে কি বলবো?ওর নাম তো অভ্রই আর এই অভ্রের সাথেই তো আলমুনের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।তোদের তো সবটাই বাবা বলেছিলো।”শুভ্র এখনো ভ্রু কুঁচকেই রয়েছে।
” আমি বিশ্বাস করি না তোমরা সবাই মিথ্যে বলছো আমার সাথে।” বলেই কেঁদে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো মিহি।
শুভ্র কিছুই বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে মিহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
” ওর কি হলো হঠাৎ?”
শুভ্রের এই প্রশ্নের জবাবে আমি সবটা বুঝিয়ে বললাম শুভ্রকে।সব শুনে চোয়াল শক্ত করে ফেললো শুভ্র।
” ওই শয়তানটার এতো বড় সাহস আমার বোনের দিকেও হাত বাড়িয়েছে।আজ ওর হাত যদি আমি কেটে টুকরো টুকরো না করছি! ”

রেগে সামনে থাকা ছোট্ট একটা ট্রি টেবিলে পায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে লাথি মেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আর আমি হতভম্ব হয়ে সেখানেই বসে রইলাম।কিছুই ডুকছে না মাথায়।অভ্র এতো খারাপ হবে আমার কল্পনাতেও ছিলো না।অন্তত অভ্রের থেকে এমন টা আশা করিনি।এই চার বছরে অভ্রের মধ্যে আমি কখনো খারাপ কিছু দেখিনি।অভ্র অন্যসব ছেলেদের মতো না।ওর সাথে আমার চার বছরের সম্পর্কে ও আমার হাতটাও কোনোদিন ধরেনি।বিয়ের সেই রাতেই প্রথম আমার হাত ধরেছিলো।আমি সব সময়ই ওর প্রত্যেকটা কাজে মুগ্ধ হতাম।আর সেই মানুষ টার এমন কিছু দেখতে হবে ভাবিনি কখনো।
বাড়ির কাছের মসজিদ টা থেকে মাগরিবের আযান কানে ভেসে আসতেই আমার সব ভাবনার ছেদ ঘটলো। উঠে ওজু করে নামায পড়ে নিলাম।নামায পড়াতে মন কিছুটা হালকা হলো।এখন একবার মিহির কাছে যাওয়া প্রয়োজন মেয়েটা না জানি কি করছে।ভালোবাসার মানুষের প্রতারণা সহজে নেওয়া যায় না।কথাটা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠলো মিহি আবার খারাপ কিছু করবে না তো!

এক প্রকার দৌড়েই মিহির রুমের সামনে আসলাম।দরজাটা আটকানো নেই শুধু ভিড়িয়ে রাখা।ভেতর থেকে কান্নার গুনগুন শব্দ ভেসে আসছে।দরজা একটু ফাঁকা করতেই দেখলাম মিহি উপর হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে একনাগাড়ে কেঁদেই চলেছে।এটা ভেবে একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম যে মেয়েটা খারাপ কিছু অন্তত করেনি।এভাবে হুট করে ঢোকা টা ঠিক হবে না। তাই আগের মতো দরজাটা ভিড়িয়ে নিয়ে দরজায় নক করলাম।
” মিহি আসবো ভিতরে!”

মিহি বালিশ থেকে মুখ তুলে ধরা গলায় জবাব দিলো ” অনুমতি নিচ্ছো কেনো।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলাম।মেয়েটার চোখমুখ কান্নার ফলে ফোলা আর রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে।আমি ওর পাসে এসে বসতেই মাথা নিচু করে বললো ” সরি ভাবী তোমাকে তখন রাগের মাথায় অনেক বাজে বাজে কথা বলেছি।”
” রাগ হলে কারোরই মাথা ঠিক থাকে না।আর প্রিয় মানুষকে নিয়ে কিছু বললে তো সহ্যই করা যায় না। তোমার পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমাকে বলা কথা গুলো স্বাভাবিক।তুমি ভালো বলে তো তেমন কিছুই বলোনি তোমার জায়গায় যদি অন্য কেউ থাকতো না জানি আমার কি অবস্থা হতো তখন!

শেষ কথাটা খুব আপসোসের সুরে বললাম।যা দেখে মিহি হালকা হাসলো।কান্নার মাঝে হাসিটা অসম্ভব সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে।মিহির সাথে কথা বলার মাঝে রোকেয়া এসে চা দিয়ে গেছে।তাই আরো চা খেতে খেতেই আরো কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে চলে আসলাম।

রুমে এসে পড়তে বসলাম।রাতে আর আমাকে রান্না করা লাগে না সকালে ভার্সিটি যাওয়ার আগে ব্রেকফাস্ট এর সাথে দুপুরের আর রাতের রান্নাটা করেই বের হই।তাই দুপুরে আর রাতে রান্নার ঝামেলা নেই।মিথিলা আপুরাও কয়েকদিন আগে চলে গেছে তাই আমাকে এ বাড়িতে এখন কথা শোনানোর মতো কেউ নাই।শ্বাশুড়ি মাও আগের থেকে একটু সহজ হয়েছে।রান্নার কাজে টুকটাক হেল্প করে আমাকে একটু আগটু কথাও হয় এখন।মোটকথা এখন খুব ভালো আছি সংসার আর পড়াশোনা দুটোই ভালো ভাবে যাচ্ছে।শুভ্রও এখন একটু একটু স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে শুভ্রের হঠাৎ এমন পরিবর্তন আমাকে ভাবায়!

একটা মানুষ হুট করেই এতোটা পরিবর্তন কি করে হতে পারে।সেইদিনের অভ্রের কথায় জেলাস হয়ে এতো পরিবর্তন হয়ে গেলো।ব্যপার টা একটু অদ্ভুত না!থাক এতো ভাববার দরকার নেই। অদ্ভুত হলেও সব কিছু ভালো ভাবে চলছে এটাই অনেক।আবার পড়ায় মন দিলাম।

দশটা বাজার একটু আগেই পড়ার টেবিল থেকে উঠে পড়লাম।একটু পর সবাই রাতের খাবার খেতে বসবে।তাই খাবার গরম করতে হবে।রান্না ঘরে এসে রোকেয়ার সাথে হাতে হাতে সব খাবার গরম করে টেবিলে এনে রাখলাম। সময় মতো সবাই এসে পড়েছে।শুভ্রও এসেছে শুধু মিহি আসেনি তাই ওকে ওর রুম থেকে ডেকে নিয়ে আসলাম।মেয়েটা এখনো আপসেট।জোর করেই আনতে হয়েছে।খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে যে যার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
প্রতিদিনের মতো আজো সকালে উঠে রোকেয়ার সাথে ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি। দুপুরের আর রাতের রান্নাটাও সেরে ফেললাম।রান্না শেষ করে ঘরেরই যাচ্ছিলাম হঠাৎ মিহি দৌড়ে এসে বললো আমার ফোন বাজছে।তাই ওর হাত থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করলাম একটা অপরিচিত নাম্বার।

তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ১৪

” হ্যালো!আপনি কি শুভ্রের ওয়াইফ আলমুন?
” জি কিন্তু আপনি এগুলো কেনো জিজ্ঞেস করছেন?আর আপনি কে?”
” আমি শুভ্রের বন্ধু আপনি আমাকে চিনবেন না। আপনি প্লীজ এখুনি চলে আসেন। শুভ্রের গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে।আমি ঠিকানা দিচ্ছি আপনি প্লীজ ঠিকানা অনুযায়ী চলে আসেন।ওর অবস্থা ভালো না।”
তারপর লোকটা ঠিকানা দিয়েই ফোন কেটে দিলো।আমার হাত পা কাঁপছে।মিহি আমার অবস্থা দেখে বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।বহু কষ্ট মিহিকে বললাম,
” মিহি তোমার ভাইয়ার এক্সিডেন্ট হয়েছে।”

মিহি আমার কথা শুনে চমকে দু কদম পিছিয়ে গেলো।বাড়িতে এখন কেউ নেই ফারহান আংকেল আরো আগেই অফিসে চলে গেছেন। আর শাশুড়ী মা আরেকটু আগে কোথায় জেনো বেরোলেন।তাই মিহিকে নিয়েই দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম।
শুভ্রের বন্ধুর বলা সেই জায়গায়তে এসে কোনো এক্সিডেন্টের চিহ্ন পেলাম।বরং একটা নির্জন জায়গা এটা কোনো মানুষ জনেরই চিহ্ন নেই।কেউ আমাদেরকে মিথ্যে বলে এখানে নিয়ে এসেছে তা বুঝতে পেরেই মিহিকে নিয়ে আমি দ্রুত এই জায়গায় থেকে চলে যেতে নিয়েও পারলাম না তার আগেই কেউ আমার মুখে রুমাল চেপে ধরলো।সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।

তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ১৬