তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ৭

তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ৭
আঁধারিনী(ছদ্মনাম)

মেয়েরা বিয়ের পর শশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি আসে কয়েকদিন একটু রিল্যাক্সে থাকার জন্য। আর আমি কিনা একদিনের জন্য বাবার বাড়ি এসে সারারাত জেগে দৌড়াদৌড়ি করি!কাল সারাটা রাত আমি ঘুমাতে পারিনি।শুভ্র নামক এক মহান ব্যক্তির সেবায় নিয়জিত ছিলাম যে।নিজে ঘাড়ত্যাড়ামি করে নিজে নিজের পা ভাঙ্গলো মাথা ফাটালো কোমরটাও বাদ রাখলো না।আর শাস্তি কিনা পেলাম আমি।আমাকে সারাটা রাত দৌড়ের উপর রেখেছে।একটু পর পর নাকি ব্যাথা করে তাই সারারাত জেগে আমাকে গরম পানি ছ্যাক দিতে হইছে।

অথচ ডাক্তার কিন্তু ব্যথার ঔষুধ দিয়ে গেছে।সেগুলো খাওয়ার পরও নাকি ব্যথা করে আমাদের গ্রামের ডাক্তার ভালো না ভালো ঔষুধ দেয়নি।শুধু গরম পানির ছ্যাকই না কিছুক্ষণ পর পরই নাকি তাঁর খিদেও পায়।তাই একটু পর পর মহাশয়ের জন্য আমাকে খাবার গরম করে আনতে হইছে।পানি আনা খাবার গরম করে না গরম পানির ছ্যাক আরো কতো কি!সারাটা রাত আমি মহাশয়ের এসব সেবাই করে গেছি।ভোরের দিকে একটু চোখ লেগেছিলো।পাঁচ মিনিট মনে হয় চোখ দুটো বুঁজে ছিলাম তারমধ্যে মহাশয়ের ডাক শুরু করে দিলেন।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এই মেয়ে তাড়াতাড়ি উঠো!বাবা ফোন দিছে তোমাকে না নিয়েই ফিরতে হবে।এখন না গেলে পরে জেমে আটকে যাবো।এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো আমার কথা?এই মেয়ে…”
” এই পোলা একদম চুপ!সারারাত আমারে খাটাইছোছ এখন যদি ঘুমাইতে না দেস মইরা পেতনি হইয়া তোর ঘাড়ে চাপমু!”
শুভ্রের এই মেয়ে এই মেয়ে ডাক শুনে এতোই মেজাজ গরম হয়ে গিয়েছিলো যে কি বলেছি না বলেছি নিজেও জানি না।শুভ্র আমার কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলো।এমন কিছু বলবো হয়তো ভাবে নি।কিছুক্ষণ আমার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

” তুমি আমাকে তুই তুই করে বললে কেনো?” শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো।
এই মুহূর্তে শুভ্রকে আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগছে তাই ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না।আমার থেকে উত্তর না পেয়ে শুভ্র আবার বললো,
” এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো না…”

” আর একবার যদি এই মেয়ে ডাক টা শুনছি না তাহলে সত্যি বলছি আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।কয়বার বলছি আমার নাম আছে না ধরে ডাকবেন।”পুনরায় আবারো এই মেয়ে ডাক টা শুনে আর চুপ থাকতে পারলাম না।
” আচ্ছা আর বলবো না।আসলে তোমার নাম টা মনে থাকে না তো। কি জেনো নাম তোমার?” মাথা চুলকে একটু ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারো নাম জিজ্ঞেস করলো।

টেবিলের উপর থেকে একটা খাতা নিয়ে তাতে নিজের নাম টা বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখে শুভ্রের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।মেজাজ টা পুরোই বিগড়ে আছে।এখন আবার বাড়িও ফিরতে হবে তার আগে কিছু খেয়ে নিতে হবে।আমার আবার যতো যাইহোক না খেয়ে কখনো থাকতে পারি না।যাই হয়ে যাক খাওয়া আমার লাগবেই।পেটে খিদে মুখে লাজ আমার এসব নেই।একবার এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছিলাম। বাবার কেমন যেনো কাকা লাগে সেই কাকার মৃত্যুর খবর পেয়েই বাবা ছুটে গিয়েছিলো সঙ্গে আমাকেও নিয়ে গেছিলো।

শোকের বাড়ি সবাই কান্নাকাটিতেই ব্যস্ত।কেউ খাওয়া দাওয়ার কোনো কথাই বলছে না।সকাল গড়িয়ে দুপুর কিন্তু খাওয়া দাওয়ার নাম গন্ধও নাই।এইদিকে আমার পেটে খিদেতে ইদুর ছানা দৌড়ানো শুরু করে দিছে।বাবাও ছিলো না সেই কাকাকে দাফন করার কাজে চলে গেছে বাকিদের সাথে।আমি বাড়িতে একা।অচেনা জায়গা কাউকে চিনিও না।তখন অনেকটা ছোটো ছিলাম।বাড়ির চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে একজন মহিলাকে দেখলাম সবাই ঘিরে বসে সান্ত্বনা দিচ্ছে আর মহিলা একে ওকে ধরে এটা ওটা বলে বিলাপ দিয়ে কান্না করছে।মনে হয় এই বাড়ির কেউই হবে।আর ওখানে যেহেতু অনেক মানুষ বসে আছে তাই খাবারের কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।কিন্তু ওদের কাছে আসতেই দেখলাম ওদের নিজেদের অবস্থাই ভালো না কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা নাজেহাল।এই অবস্থায় ওদের থেকে খাবার চাওয়াটা মনে হলো ঠিক হবে না তাই খাবার চাইলাম না।

” এ বাড়ির রান্নাঘর টা কোথায়?”
সবার মাঝখানে হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে সবার আকর্ষণ পরলো এবার আমার দিকে।সবাই একটু কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে ছিলো।আমি রান্নাঘরের কথা এই কারণেই জিজ্ঞেস করেছিলাম যাতে নিজেই খাবার খুঁজে নিতে পারি।আসলে একটু বেশিই খিদে পেয়েছিলো।ওদের এমন দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা করে বললাম,
” খুব খিদে পেয়েছে তাই যদি বলতেন রান্নাঘর টা কোথায় আমি নিজেই খাবার খুঁজে নিবো।”
” কিন্তু আজ তো রান্না হয়নি।”

ওদের মাঝ থেকে একজন জবাব দিলো।পরে একজনকে ডেকে আমাকে ঘরে থাকা কিছু বিস্কুট খেতে দিয়েছিলো।ওগুলো দিয়েই কোনোরকমে ক্ষুদা মিটিয়েছি।সেদিনের পর থেকে আমি আর কোনো মরা বাড়িতেই যাই না।তবে সেইকথা গুলো ভাবলে এখন খুব লজ্জা লাগে। কিন্তু এখন লজ্জা পেলে চলবে না বেরতে হবে তাই তাড়াতাড়ি খেতে হবে এখন।
খাবার টেবিলে এসে খেতে বসবো তার আগেই আকাশ ভাইয়া কোথ থেকে যেনো এসে খপ করে হাত টা ধরে ফেললো।
” বোইন তোর সাথে অনেক জরুরি কথা আছে।”এইদিক ওইদিক তাকিয়ে বললো আকাশ ভাইয়া।
” হ্যা বলো।” কৌতূহলী নিয়ে বললাম

” এখানে না আয় আমার সাথে।”বলেই হাত ধরে বাড়ির এক কোণায় নিয়ে এলো ভাইয়া আমায়।
ওর এমন কান্ডকারখানায় একটু অবাক হলাম তাও মুখে প্রকাশ করলাম না।কিন্তু খুব কৌতূহল হচ্ছে কি এমন বলবে যাতে কোণায় নিয়ে আসতে হলো।তাই কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি এমন বলবে ভাইয়া বলতো?”
” তেমন কিছু না ওই আরকি..” মাথা চুলকে আমতা আমতা করতে লাগলো ভাইয়া।
” কি?”

” তোর ছোটো ননদ ওই যে মিহি ও কি সিঙ্গেল?”
” আমি জানি না।”
” তো জানোস কি?ওর ফোন নাম্বার আছে তোর কাছে?”
” না সেটাও নেই।
” তোরে দিয়া কোনো কিছু হবে না।নিজের ননদের খবর রাখোছ না কেমন ভাবীরে তুই?”
” দেখো ভাইয়া একদিনে কি এতো কিছু জানা যায় নাকি!আর আমি এসব জানতে যাবো কেনো হুম।” মুখ বাকিয়ে দুষ্ট হাসি ঝুলিয়ে বললাম।

ভাইয়ার মুখটা এখন দেখার মতো হইছে।ভাই যে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তা বুঝতে বাকি রইলো না।কিন্তু এমনি এমনি তো আর আমি কিছু করবো না তাই একটু কাশি দিয়ে ভাইয়ার মনযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে বললাম,
” সব খবরই জোগাড় করে দিতে পারি কিন্তু তার বিনিময়ে আমি কি পাবো?”
” বোইন তুই যা চাইবি তাই দিমু শুধু একটু আমাকে ও-ই দুইটা ইনফরমেশন কালেক্ট করে দে।”
” দুইটা না তুমি চাইলে আরো অনেক ইনফরমেশন এনে দিতে পারি শুধু আমার কমিশন গুলো ঠিকঠাক একটু পেলেই হবে।”

তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ৬

” নো প্রবলেম যা চাইবি তাই দিবো।”
এরমধ্যে কোথা থেকে যেনো অধরা এসে পরলো।আর এসেই সন্দেহের দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
” তোমরা দুইজন আমাকে ছাড়া কি মিটিং করছো লুকিয়ে লুকিয়ে? ”
” কিছু না যা এখান থেকে।আর সব কথাই তোর শুনতে হবে পিচ্চি পোলাপাইন বেশি পাইকা গেলে যা হয় আরকি।খাড়া আব্বুকে বলে তোর ব্যবস্থা করতেছি আমি। ” অধরার উপর একটু রাগ দেখানোর ভান করে কেটে পরলো আকাশ ভাইয়া।
” কি হলো এটা আমি কি এমন বললাম যে ভাইয়া এভাবে রেগে গেলো।”
অধরা কিছুই না বুঝে আকাশ ভাইয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।আর এই সুযোগে আমিও কেটে পরলাম।নাহয় এখন ওর হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে যা এই মুহূর্তে আমি চাই না।আর যাইহোক পেটে ইদুর দৌড়ানি নিয়ে তো আর প্রশ্নের জবাব দেওয়া যায় না।

এ বাড়িতেও খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে বেরতে আটটাই বেজে গেছে।শুভ্র এখন অনেকটা সুস্থ। পরে গিয়ে বেশি লাগেনি তাই তেমন কিছু হয়নি।কালকের মতো আজ আর কাউকে ধরে ধরে আনতে হয়নি।নিজেই পায়ে হেটে গাড়ি পর্যন্ত আসছে।তবে আজকে প্রত্যেকটা পাই ফেলছে মেপে মেপে যদিও আজ রাস্তাঘাট সব কিছু শুকনোই তাও খুব সাবধানে পা ফেলছে।যদি কালকে এই সাবধানের একটুখানিও পালন করতো তাহলে হয়তো পা দুইটা বেঁচে যেতো।
কালকের মতোই আজো পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা এগারোটা বাজলো।পায়ে বেশি না লাগলেও মাথায় বেশকিছু টা লেগেছে তাই মাথায় এখনো ব্যান্ডেজ। বাড়ি ফিরে শুভ্রের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখলে বাড়ির সবাই কেমন রিয়াকশন হবে সেটা ভাবতেই গলা শুকিয়ে এলো।

তোর মায়ায় আবদ্ধ পর্ব ৮