দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১২

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১২
আফরোজা আশা

রাতের মধ্যভাগ চলছে। পাটোয়ারী বাড়ি জ্বলজ্বল করছে ভিন্ন রঙের ছোট ছোট বাতিতে। দোতালা বিশিষ্ট বাড়ির ছাদে এতোক্ষন হই-হুল্লোড় চলছিল। বাণীর গায়ে হলুদ শেষ হয়েছে কিছুক্ষন আগে। মেহমানরা যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়েছে নির্ধারিত রুমে। নিজ রুমে একাকি বসে খাতা হাতে হিসাবে ব্যস্ত রহমান পাটোয়ারী। সারাবিয়ে বাড়ির খরচ খুব বেশি না হলেও কমও না। বাণীর বিয়েটা সাধারণভাবেই হচ্ছে। যেটুকু না করলে নয় সেটুকুই করছে রহমান। খুব একটা জাঁক-জমক নেই। বড় মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। সাধ্যের মধ্যে যা সম্ভব তাই করছে। প্রত্যকটা জিনিসের হিসাব খুঁটেখুঁটে খাতায় তুলছে রহমান। সম্পূর্ণ মনযোগ সেখানেই নিবদ্ধ। নতুন শাড়ি পরিহিত আমেনা শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ব্যস্ত পায়ে রুমে ঢুকল। স্বামীর কাছাকাছি গিয়ে নমনীয় গলায় বলে উঠল,

‘ শুনছেন? ’
খসখস শব্দ তুলে লিখতে থাকা হাতখানা থেমে গেল রহমানের। নাকের কাছে হেলে পড়া চশমাটা ঠেলে তাকালো আমেনার দিকে। বড় পাড়ের জামদানি শাড়িটা বেশ মানিয়েছে আমেনাকে। বয়স চল্লিশের কোটায় হলেও সারাদিন সাংসারিক কাজের চাপে নিজের শরীরের খুব অযত্ন করে ফেলেছে। যার দরুন টান টান ফর্সা চামড়াগুলো গলার দিকে হালকা কুঁচকে গিয়েছে। খানিক সময় নিয়ে আমেনাকে দেখে ভারী গলায় রহমান বলে,
‘ শাড়িটা মানিয়েছে। মাঝেমধ্যে নিজের একটু যত্ন নিলেও পারো।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শত ক্লান্ত থাকার পরও রহমান পাটোয়ারী এই কথাটুকু আমেনার ক্লান্তিতে বাঁধা দিল। এক পশলা বৃষ্টির ন্যায় শীতল হলো মন। হয়তো কোনো ভালো কাজ করেছিল যার জন্য রহমান পাটোয়ারীর মতো একজন আর্দশ মানুষকে জীবনসঙ্গি হিসেবে পেয়েছিল। লোকটা ভালোকে ভালো, খারাপকে খারাপ! ঠিককে ঠিক, ভুলকে ভুল বলতে কখনো পিছপা হোন না। মুচকি হাসল আমেনা। তারপর আবার এসব বাদ দিয়ে ঝরঝরে গলায় বলল,
‘ একটু আম্মাকে বোঝান! ’
ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে রহমান উত্তর করল, ‘ কি হয়েছে? ’

‘ না খেয়ে আছে। গো ধরে আছে বৃষ্টিকে ছাড়া খাবে না। রাত অনেক হয়ে গেল যে। এতোক্ষন না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে। সারাবাড়ির এতো এতো কাজ সামলে ওদিকে যেতে পারছি না আমি। রিনা গিয়েছিল কিন্তু আম্মা খায়নি কিছু। যদি একটু বৃষ্টিকে…’
সহসা থেমে গেল আমেনার কথা। রহমানের রাগী দৃষ্টিতে ভয় পেল সামান্য। ভেসে এলো রহমানের গমগমে স্বরের কথা,

‘ ওর বিষয়ে আর কোনো খাতির নেই আমার কাছে। ওর ভালোর জন্য যখন যা করা দরকার তাই করব। আম্মাকে আমি দেখছি। তার আস্কারা পেয়েই বিগড়ে গিয়েছে আমার মেয়ে। ওসব আহ্লাদে আর কাজ নেই। তুমি তোমার কাজ করো। আম্মাকে আমি খাইয়ে দিবো। ’
আঁখিজোড়া ছলছল করে উঠল আমেনার। মাতৃ হৃদয় হুট করেই কেঁদে উঠল।
‘ ভরা বাড়িতে অন্য বাচ্চারা এসে নাচছে-গাইছে, আনন্দ করছে আর আমার মেয়েকে আপনি আটকে রেখেছেন! ’
‘ অবুঝের মতো কথা বলবে না। ’
‘ ঘরে আটকে রাখলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? ’
‘ না। ’
‘ তাহলে কি করতে চাইছেন? ’

‘ জানি না কি করব! আগে বাণীর বিয়েটা শেষ হোক তারপর এসবে যাবো। আপাতত ওকে সবার থেকে দূরে রাখাই ভালো। কিছু একটা নিয়ে বেলার প্রতি ওর চোখে হিংস্রতা দেখেছি আমি। এক মেয়ের জন্য আরেক মেয়ের কোনো ক্ষতি আমি চাইনা। আর শোনো! কাল বাণীর বিয়ের আগে বৃষ্টি থাকবে সবার সাথে। ওকে চোখে চোখে রাখবে। ’
স্বামীর কথা সায় জানালো আমেনা। চোখের পানি মুছে আবার ছুট লাগালো নিজের কাজে।

রাতের নিস্তব্ধতার মাঝে ফাঁকা রাস্তায় এক-দুটো গাড়ি মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে দুটো গাড়ি রাস্তার মাঝ দিয়ে স্ব-গতিতে ছুটছে। দুটো প্রায় সামনা-সামনি চলে এসেছে অথচ কারো বিন্দু পরিমাণও ভাবাবেগ নেই। মাঝ রাস্তাটা দুজনেরই দখলে। সোজা মাঝ বরাবর চলছেই। এক পর্যায়ে একদম মুখোমুখি এসে দুটোই জোরে ব্রেক টানল। আশপাশ ধুলোয় ছেয়ে গেল। একটা কালো কার আর একটা লাল-কালো মিশেলের জীপের মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চি ব্যবধান মাত্র। আর এক সেকেন্ড এদিক-ওদিক হলে দুটোতেই মারাত্মক সংঘর্ষ ঘটত। একই সঙ্গে দুটো থেকে দুজন নামল। দিগন্ত জীপ থেকে নেমে জীপের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।

কার থেকে নেমে একই ভঙ্গিমায় কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো ফাহাদ। দিগন্ত পকেট থেকে সিগারেট বের করে লাইটার দিয়ে আগুন ধরালো। তারপর অভস্থ হাতে সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে ধরল। দুজনের মাঝে নিস্তব্ধতা। কারো মুখে টু শব্দটি নেই। দিগন্ত নিজের মতো সিগারেট ফুঁকতে ব্যস্ত। ফাহাদও পকেট থেকে সিগারেট বের করল কিন্তু লাইটার পেল না। হয়তো তখন মেয়েগুলোকে মারতে গিয়ে পরে গিয়েছে। দিগন্তের দিকে তাকিয়ে শিষ বাজালো। নাক-মুখ দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল ওর দিকে দিগন্ত। ভ্রু নাচিয়ে বলল কি! ফাহাদ হাত দিয়ে লাইটার জ্বালানোর ভঙ্গিমা দেখালো। বুঝল দিগন্ত! পকেট থেকে লাইটারটা বের করে ফাহাদের দিকে ছুড়ে দিল। ফাহাদ কেঁচ ধরল সেটা। সিগারেটে আগুন দিয়ে সুখটান দিল। পাশ থেকে ভেসে আসল দিগন্তের কটাক্ষ ভরা বাণী,

‘ রাস্তা কি তোর বাপের? ’
ফাহাদ সিগারেটটা ঠোঁটে চেপে ধরে কপালের কাছে পড়ে থাকে চুলগুলো পেছনের দিকে ঠেলে বলল,
‘ সরকারি রাস্তা না হলে আমার বাপ আর আমার দুজনেই ক্ষমতা ছিল রাস্তা নিজের নামে করার। ’
ঠোঁট বাঁকালো দিগন্ত। সিগারেটের শেষাংশটা পায়ের কাছে ফেলে দিল। তারপর সেটা পায়ের তলে নিয়ে পিষে ফেলতে ফেলতে বলল,
‘ এসব সস্তার ফুটানি দেখিয়ে মেয়েদেরকে বশ করিস? ’
‘ আমার কথা ছাড়। দিগন্ত তালুকদার ইদানীং মেয়ে নিয়ে ভালোই চলেফেরা করছে! ’
চোখজোড়া সরু হলো দিগন্তের। রাশভারি গলায় বলে উঠল,
‘ সবাইকে নিজের মতো মেয়েবাজ ভাবিস? ’
নিরুদ্দেগ ভাবে উত্তর করল ফাহাদ,

‘ না। কিন্তু জানিস! মেয়েবাজিটা না হুট করে ছেড়ে দিলাম। ’
মূহুর্তেই জোড়ে হাসির আওয়াজ ভেসে এসে কর্ণকুহরে বাড়ি লাগল ফাহাদের। দিগন্ত ব্যঙ্গাত্মক ভাবে হেসে বলল,
‘ চরিত্রহীনের মুখে চরিত্রবান কথা! বেস্ট জোক। ’
‘ ইসস! হকিস্টিকটা আড্ডাখানায় ফেলে এসেছি রে। নাহলে তোর মুখ বরাবর মারতাম। শালা তোর ভাগ্য ভালো। ’
‘ ভাগ্যটা তোরও ভালো। আমার কাছে এখন কিছুই নেই। নাহলে আমার এলাকায় এসে আমাকেই দাপট দেখানো বের করতাম। ’
‘ কোনটা তোর এলাকা? এগুলো সব আমার আয়ত্বে। এখানকার আধি….’

বলতে পারল না আর। প্রকাণ্ড একটা ঘুষি এসে পড়ল নাক বরাবর। ঝরঝর করে রক্ত গড়িয়ে পড়ল। ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিল ফাহাদ। খানিক বাদে সেকেন্ডের মধ্যে আরেকটা ঘুষি আওয়াজ হলো সেখানে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল দিগন্ত। নাকের কোণা বেয়ে আস্তেধীরে গড়িয়ে পড়ল গরম তরল। হাত দিয়ে সেটা মুছতে মুছতে হুট করে ফাহাদের কোলার চেপে ধরল। ফাহাদও মূহুর্ত ব্যয় না করে দিগন্তের কলার মুষ্টিমেয় করে নিল। দুজনেই একসাথে এক হাত উঠিয়ে দুজনের মুখ বরাবর এনে থেমে গেল।
ফাহাদ হিসহিসিয়ে বলল, ‘ নিজের লিমিটের মধ্যে থাক দিগন্ত। টং ঘরের এদিকে পাও মারাবি না। পা কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো। ’

‘ আমার এলাকায় আমি কোথায় যাবো না যাবো সেটা তুই বলার কে? তোর ছেলেরা অতি বাড় বেড়েছে। ডানা ছেটে দিলে কেঁদেও কূল পাবে না। আর তোর এই সস্তার হুকমি তোর পকেটে রাখ। এগুলো দিগন্ত তালুকদার গুনেও দেখে না। ’
দুজনের চোখেই সমান হিংস্রতা। রাগে জোরে জোরে শ্বাস টানছে। কেউ কারো থেকে কম নয়। চোখ দিয়ে ভৎস্ম করছে নিজেদের। ফোঁস ফোঁস আওয়াজ আসছে দুদিক থেকেই। দুই জাতশত্র ফাহাদ দেওয়ান আর দিগন্ত তালুকদার রাতের আঁধারে ফাঁকা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে একে অন্যের নাক ফাটাতে ব্যস্ত।

বাড়িতে ঢুকতেই দিগন্ত মুখোমুখি হলো জুনায়েদ তালুকদারের সাথে। জুনায়েদের সামনে ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে দিগন্ত। এদিকে জুনায়েদ তালুকদার অগ্নিঝরা চোখে তাকিয়ে দিগন্তের দিকে। রাত প্রায় দুইটা বাজতে চলল এতো রাতে বাড়ি ফিরেছে দিগন্ত তাও মারামারি করে। শার্টের কলারের একপাশ ছিঁড়ে বেঁকে আছে। ঠোঁটের কণা ফেটে আছে, নাকটাও লাল হয়ে আছে। জুনায়েদ ছেলের ওই হাল দেখে যা বোঝার বুঝে গিয়েছে। ফুঁসে উঠে বলল,
‘ আর কত! এতো বড় একটা ছেলে হয়ে মারপিট বেছে নিয়েছো। এসব আর কত দেখতে হবে। অফিসে যাও না কেনো? কি সমস্যা? সারাদিন-রাত খাটছি আমি আর সেই টাকা উড়িয়ে রং-তামাশা করে বেড়াচ্ছো তুমি। ’

‘ হু। ’
‘ অফিস জয়েন করবে কবে থেকে? ’
‘ সময় হলে। ’
‘ মারামারি করার এতো সময়। অফিস যাওয়ার সময় এখনো হয় না তোমার? নিজে কামাই না করা পর্যন্ত এ বাড়ির একটা দানাও মুখে তুলবে না। ’
‘ আচ্ছা। ’
ব্যস এতটুকু বলে শব্দহীনভাবে জুনায়েদের পাশ কেটে চলে গেল দিগন্ত। এতে যেন আগুনে ঘি পড়ল। হুংকার ছুঁড়ে জুনায়েদ বলল,

‘ রাস্তায় রাস্তায় গুন্ডামি করে ভাব নেও আমার সামনে। তোমার মতো বেলাজ-বদমাশ ছেলে আমার জন্মা ভাবলেই ঘৃণা হয় নিজের উপর। বেরিয়ে যাবে আমার বাড়ি থেকে। অসভ্য গুন্ডা কোথাকার! ’
চলে গিয়েছে দিগন্ত ততক্ষনে। শুনেই না শোনার ভান করে থাকল।
রাগে গজগজ করছে আর দিগন্তের নাকের রক্ত মুছছে মিতালী। এদিকে নিরুত্তর হয়ে চুপচাপ বসে আছে দিগন্ত। মিতালী গজরাতে গজরাতে বলল,

‘ একদম বেলার থেকে দূরে থাকবি। তোর মতো গুন্ডা-বখাটের সাথে আমি আমার ভাতীজিকে আর কিছুতেই জড়াতে দিব না। তুই সারাজীবন মারামারি করে বেরা। যতদিন না এসব ছাড়তে পারনি ততদিন বিয়ে নেই তোর কপালে। আজীবন নাক-মুখ ফাটিয়ে আসবি আর অন্যের ঘরের আদরের মেয়েকে এনে দিবো তোর সেবা করার জন্য। তোর সুখের উপর ঝাড়ুর বারি! ’
দিগন্ত বিরক্ত মুখে বলল, ‘ সবসময় একজনে নিয়ে কথা বলবে না তো। ভালো লাগে না এসব। ’

‘ তোর ভালো দিয়ে আমার আর কাজ নেই। জাহান্নামে যা তুই। শুধু মনে রাখিস যতদিন অন্যের হাতে নাক-মুখ ফাটিয়ে বেড়াবি ততদিন তোর কপাল ফাঁকা। ’
উত্তর দিল না দিগন্ত। মিতালী আবারো বলতে শুরু করল,
‘ কাল বিয়ে। আজ এতো কাজ, এর মাঝে তুই এরকম করে বেড়াচ্ছিস। বড়ভাইকে ছেড়ে ছোটভাই বিয়ে করছে। লজ্জা নেই তোর মাঝে। ’
‘ নাহ। ’
‘ কেনো? ’

দিগন্ত ভারী গলায় বলল, ‘ কারণ আমি বখাটে আর তোমার ভাতিজী বেয়াদব। পারফেক্ট কম্বিনেশন! ’
‘ তুমি বাপু দিনে জেগে স্বপ্নই দেখতে থাকো। আমার ভাইকে চেনো না তাই কম্বিনেশন মিলছে তোমার কাছে। চুটকিতে তোমার কম্বিনেশন ভেঙ্গে দিবে, সাবধান। ’
‘ আমিও তার মেয়ে তুলে এনে বিয়ে করে ফেলব। ’
দিগন্তের দিকে বাঁকা চোখে তাকাল মিতালী। হুট করে একটা কথা মনে পড়ে গেল। দিগন্তের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওর ঘাড়ে হাত রাখল ও। দিগন্ত প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাল মিতালীর দিকে। মিতালী ধীরস্থির গলায় আওড়ালো,
‘ দিগু! মাথা ঠান্ডা রাখবি কাল। ’
ভ্রুঁ গুটালো দিগন্ত। রাশভারী গলায় বলল,
‘ কেনো? ’
‘ তোর বাবা কাল মনাদের নিয়ে আসতে চাইছে। ’

সেকেন্ডের ব্যবধানে চোয়ালজোড়া শক্ত হয়ে গেল দিগন্তের। চোখগুলো লাল হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে অন্য দিকে মুখ ফেরালো। মিতালী নিরব চোখে দেখল দিগন্তকে। তারপর ওর মাথায় হাত রেখে নরম স্বরে বলল,
‘ শুধু কালকের জন্য দিগু। যত যাই হোক! দিনশেষে এটা সত্য সেও এ পরিবারের সদস্য। আমি চাইলেও বারণ করার স্পর্ধা রাখি না। দিহানের বিয়ের জন্য আসা হবে তার। আশা করি কোনো ঝামেলা বাঁধাবি না। ’
দিগন্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘ এ কারণেই আজ এতো বড় বড় লেকচার দিল। বেরিয়ে যেতে না বলে সরাসরি বলতে পারত কাল বাড়িতে থাকবি না। ’

‘ তুই ভুল ভাবছিস। ’
‘ এতো ভেবে কাজ নেই আমার। ও মহিলা এ বাড়িতে আসলে আমার এখানে থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না। ’
‘ দিগু! কাল দিহানের বিয়ে। কোনো ঝামেলা করবি না। শুধু একদিনের জন্যই তো বাবা। ওর তো কোনো দোষ নেই। দোষ না করেও সবকিছু থেকে বঞ্চিত। বাচ্চা মেয়েটাও পরিবার থাকতে মায়ের কাছে একা মানুষ হচ্ছে। ’
নিরব রইল দিগন্ত। বাবার প্রতি অভিমান, বিতৃষ্ণা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। সাথে বাড়ছে ওর রাগ, জেদ, বেপরোয়া জীবন-যাপন।
দিগন্তের মনোভাব বেশ বুঝতে পারছে মিতালী। কথা ঘুরানোর জন্য হুট করে বলল,
‘ জানিস! আজ কি হয়েছে? ’
ছোট করে জবাব এলো দিগন্তের, ‘ কি? ’

মিতালী হু হা করে হেসে দিল। মেজাজ আরো খারাপ হলো দিগন্তের। কর্কশ গলায় বলল,
‘ এভাবে হাসার কি হয়েছে? ’
‘ কি হয় নি তাই বল! আমার বেয়াদব ভাতিজী তোর নামের ইন্নালিল্লাহ করে দিয়ে গিয়েছে। ’
ফেরানো মুখটা আবার মিতালীর দিকে ঘুরল। ভ্রুঁ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল দিগন্ত, ‘ কি? ’
মিতালী ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে দরজার দিকে হাঁটা ধরল। দিগন্তের নজর ওর দিকে। জানার জন্য কান পেতে আছে। দরজার কাছে গিয়ে মুখ ঘুরিয়ে মিতালী বলল,
‘ হ আকার গু। ’

ঠিক বুঝল না দিগন্ত। মিতালী বলে আর দাঁড়ায় নি। চলে গিয়েছে। এদিকে দিগন্ত কয়েক সেকেন্ড সময় নিল। হঠাৎ চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে উঠল,
‘ অসভ্য মেয়ে। কাল তোকে দেখে নিবো। ’
তখনি দরজার সামনে থেকে আবার ভেসে এলো মিতালীর আওয়াজ।
হাসছে আর দিগন্তে বলছে, ‘ দিগু রেএএ! বাবু কফি খাবি। ও দিগুউউ।’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১১

চেঁচিয়ে উঠল দিগন্ত, ‘ খবরদার মনি! আর এভাবে ডাকবে না। ডাকলে কিন্তু সব দূর্ভোগ তোমার বেয়াদব ভাতিজীর কপালে জুটবে। ওর বাপ নাকি খুব আর্দশ বাপ! মেয়েকে ভালো শিক্ষা দিচ্ছে। এই তার নমুনা! বড়দের সম্মান দেয় না, অসভ্য মেয়ে মানুষ। কাল পাই চোখের সামনে, কানের গোড়া নড়িয়ে দিবো বেয়াদবের।’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৩