দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৩
আফরোজা আশা
তিন কবুলের জোরে জুড়ে যায় দুটি ভিন্ন মনে মানুষ একে অন্যের সাথে। সুখে-দুঃখে একে অন্যের সাথ দিবে, দুজন দুজনার জন্য ভরসার আশ্রয়স্থল হবে তারা। হাজারো রাগ-অভিমান আসবে যাবে কিন্তু সম্পর্কের ভীত কখনো নড়বড়ে হতে দেওয়া যাবে না। তবেই না স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অটুট থাকবে। একজন আগুন হলে আরেকজনকে পানি হতে হবে। একজন রেগে গেল আরেকজনকে ঠাণ্ডা মাথায় অপরজনে সামলাতে হবে। একই সময়ে দুজনেই যদি একি আচরণ করে তবে হিতে বিপরীত তো হবেই। একতরফা ভালোবাসা বা একতরফা ভুল বোঝাবোঝি, ঝগড়া-অভিমানে কখনোই কেউ সুখী হতে পারে না। ভালোবাসা, মান-অভিমান, দুষ্টু-মিষ্টি খুঁনশুটি মিলিয়েই না একটা দাম্পত্য জীবন সুখী হয়।
দিহান আর বাণীও জড়িয়ে গেল একে অন্যের সাথে। ওদের ভাগ্য জুরে গেল একসাথে। কিছুক্ষন আগেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে ওদের। একটা হালাল সম্পর্কের শক্ত বাঁধনে বেঁধে গিয়েছে ওরা।
বিয়েতে খুব একটা মানুষজন না হলেও যেটুকু হয়েছে তাতেই অবস্থা বেগতিক রহমান পাটোয়ারীর। জীবনে কখনো মেয়েদের নিয়ে আফসোস করেন নি কিন্তু আজ একটা ছেলের খানিক অভাববোধ করছেন। দুভাই মিলে এতোকিছু সামাল দিতে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। আগে বিয়ে হয়েছে, এখন খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চলছে। চতুরদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে রহমান আর রাসেল পাটোয়ারী। কাকে ছেড়ে কাকে সামাল দেবে, দুজন মানুষ সাথে ক্যাটারিং এর তিনটা ছেলে তবুও সার্ভিং এ সামাল দিতে পারছেন না। এক টেবিলে বিরিয়ানি শেষ। আবার ছুট লাগালেন নতুন বোল আনতে। সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন খাবারের বোলগুলোর মধ্যে বিরিয়ানির একটা বড় বোল হাতে তুলে নেয়। একই সময়ে আরো একটা হাত পাশ থেকে অন্য আরেকটা বোল নেয়। রহমান ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় সেদিকে। হকচকায়! কিছু অবাক হয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ কি করছো, বাবা? তোমার কিছু লাগবে? লাগলে আমাকে বলো এনে দিচ্ছি? ’
দিগন্ত নরম গলায় বলল, ‘ কিছু লাগবে না। হেল্প করতে এলাম। ’
‘ সেকি কথা! তোমাকে এসব করতে হবে না। আমরা তো করছি। বলেছোলেছো এতেই শান্তি পেলাম বাবা। তুমি তো সবার সাথে আসো নি। এখন এলে। এসেই এখানে চলে এসেছো! চলো তাহলে আগে খেয়ে নিবে। ’
‘ নাহ। কিছুটা হেল্প করার জন্যই এসেছি। নাহলে আসতাম না আজ কারণ নিশ্চয়ই আপনার জানা। ’
রহমান পাটোয়ারীর মুখটা খানিকটা অন্ধকারোচ্ছন্ন হয়ে গেল। নরম গলায় বলল, ‘ হুম জানি। যদিও এগুলো তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার তবে একটা কথা বলি শুনো! দোষ তোমার বাবার, এর জন্য মনা আর ওর বাচ্চাটাকে সাফার করতে দিও না। মনা মেয়েটার বয়সীই বা কত! তুমি…’
‘ এসব থাক। এগুলো থেকে দূরে থাকতে চাই। আমার মায়ের জায়গা অন্য কেউ নিতে পারবে না। তাই অন্য কাউকে নিয়ে ভেবে লাভ নেই আমার। চলুন দেরী হচ্ছে। ’
সায় জানালো রহমান। মুখের কথাটুকু গিলে নিল। দুজনে গেল ভেতরে। রহমান আরো বেশ কয়েকবার মানা করল কিন্তু শুনল না দিগন্ত। হাতে হাতে অনেক কাজ এগিয়ে দিল। কিছুটা স্বস্তি পেল রহমান। মনে মনে ভাবল, ছেলেটাকে যতটা খারাপ ভাবে ততোটা না।
ঘেমেনেয়ে একাকার দিগন্ত। বাগানের দিকে এসেছে ঠান্ডা বাতাস শরীরে লাগাতে। সাদা পাঞ্জাবিটা গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছে। আসার পর বেলাকে একবারো দেখেনি। মনটাও খানিক উতলা হয়ে আছে। দেখবেই বা কিভাবে! এসেই তো ছুট লাগিয়েছে ছাদে রহমান পাটোয়ারীর কাছে। খাওয়ার আয়োজনটা বাদে বাকি সব আয়োজন করেছে বড় লিভিংরুমে। সবাই সেখানে আছে। আগে নিজেকে ঠান্ডা করবে তারপর ভেতরে যাবে কি না সিদ্ধান্ত নিবে দিগন্ত। ভেতরে গেলেই ওই মেয়ের মুখোমুখি হবে যেটা চায় না দিগন্ত। ওর কথা মনে পড়তেই মুখ থেকে তাচ্ছিল্য একটা হাসি বের হলো দিগন্তের। এককালে বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। এখন বাপের বউ হয়েছে। বেস্ট ফ্রেন্ড কথা মাথায় আসতেই দাঁত দাঁত চাপলো। মুখ ঘুরিয়ে থু ছিটালো মাটিতে। থাকবে না আর এখানে। বিরক্ত লাগছে খুব। মনের ভেতর আগুন জ্বলছে। না জানি কখন কে এর শিকার হয়। মাথার চুলগুলো এখাতে টেনে ধরে পা বাড়ালো বাহিরের দিকে যাওয়ার জন্য কিন্তু হুট করে বাড়ানো পা জোড়া থেমে গেল। একটা কান্নার আওয়াজ শুনে সেদিকে এগিয়ে গেল দিগন্ত। চার-পাঁচ বছর বয়সী একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে পড়ে গিয়েছে। হয়তো চোট পেয়েছে খুব। কান্নাটা কেন যেন বুকে লাগল দিগন্তের। রাগটা এখনো মাথায় চেপে আছে। ঘুরে চলে যেতে চেয়েও পারল না। বাচ্চাটার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসল।
আলতো হাতে টেনে তুলে কোলের মাঝে নিল। মুখটা দেখতেই থমকে গেল। এতো সুন্দর একটা কিউট, গুলুমুলু বাচ্চা। গালগুলো ফুলোফুলো হওয়ার কারণে টকটকে ছোট গোলাপি ঠোঁটজোড়া ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। চোখগুলো গোল গোল মাঝে হালকা লাল-খয়েরি ধরণের চোখের মণি। সোজা সিল্কি চুলগুলো দুপাশে দুই জুটি বাঁধা। কালো মোটা ভ্রুঁজোড়া। গাল-নাকের আগা আবছা লাল। কান্নার কারণে হয়েছে নাকি এরকমি ধরতে পারল না দিগন্ত। দিবদিবে ফর্সা শরীরে লাল রঙের একটা সিম্পল গাউন। বেশ গোলুমলু তাই হাতে আর গলায় এক-দু ভাঁজ রয়েছে। চোখের পাতাগুলো বড় না হলে অনেক ঘন। কাজল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এমনিই কালো লাগছে। কোনো সাজ নেই অথচ ছোট একটা বাচ্চা মেয়ের কি সুন্দর রূপ দিয়েছে আল্লাহ। বাচ্চাটাকে দেখে দিগন্তের রাগ কখন হাওয়া হয়ে গিয়েছে টেরই পেল না। খুঁটে খুঁটে দেখছিল ওকে। ধ্যান ভাঙল আবারী কান্নার শব্দ পেয়ে। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো দিগন্ত। কি করবে মাথায় আসছে না। কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘ কোথায় লেগেছে বাবু? ব্যাথা করছে খুব? ’
গলার স্বর খুবই নমনীয়। নিজের আওয়াজ শুনে নিজেই হতভম্ব হলো দিগন্ত। বাচ্চা মেয়েটা হাত এগিয়ে হাতের কুনুই দেখিয়ে দিল। ছিলে গিয়েছে অনেকটাই। র’ক্ত জমাট বেঁধে আছে। ক্ষতটুকু দেখে ভালো লাগল না দিগন্তের। পকেটে ব্যান্ডেজ ছিল কারণ কাল ও নাক ফাটিয়ে এসেছিল। তাই সেটা বের করে ওর কুনুইয়ে লাগিয়ে দিল। কিছুক্ষন সেই জায়গায় ঘুরাঘুরি করার পর শান্ত হলো বাচ্চাটা। বাগানের এই দিকটাতে এখন কেউ নেই তাই দিগন্ত আরামে আছে। বাচ্চাটা হুট করে দিগন্তে গলায় জড়িয়ে ধরে ওর গালে চুমু খেল। রাগী, বদমেজাজি দিগন্তের মন হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গিয়েছে। রাগ, জেদ কিছুই আসছে। বাচ্চার কান্ডে গম্ভীর দিগন্তর ঠোঁট প্রসারিত হলো। কেনো হলো এটা ওর নিজেরও বোধগম্য নয়! মনে সুপ্ত ইচ্ছে জাগলো ওই ফুলোফুলো গালটাতে একটা স্নেহের আদর দিতে। দমালো না দিগন্ত। দিতে বাঁধা কিসের! কেউ তো নেই এখানে। টুপ করে আলতোভাবে একটা চুমু এঁকে দিল। তারপর বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ নাচিয়ে বলল,
‘ তোমার নাম কি বাচ্চা? ’
বাচ্চাটা উত্তর দিল না। পলক ঝাপটে দিগন্তের কাঁধে মাথা রাখল। তারপর মিষ্টি আওয়াজ ভেসে এলো,
‘ তুমি খুব ভালো ভাইয়া। এতোগুলা ভালো। আমার তোমাকে পছন্দ হয়েছে। ’
বেশ অবাক হলো দিগন্ত। চার-পাঁচ বছরের বাচ্চার একটু হলেও কথায় তোতলানো ভাবটা থাকে। কিন্তু এই বাচ্চার কথা এতো স্পষ্ট। দিগন্ত আবারো বলল,
‘ তোমার নাম কি? আর তোমার বাবা-মা কোথায়? ’ তারপর বিড়বিড়ালো, ‘ বাচ্চা মেয়েকে একা ছেড়ে দিয়েছে। জ্ঞানহীন মানুষ! ’
এদিকে বাচ্চাটা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ফুলিয়ে রেখেছে। চাহনিতে অসহায় ভাব। এই একটা জিনিস ও কাউকে বলতে চায় না কিন্তু সব বড় মানুষগুলো সবার আগে এটাই জানতে চায়। ওর নাম এতো কঠিন রেখে যে উচ্চারণ করতে পারে না। করলেও ভুল হয়।
‘ কি হলো? বললে না তোমার নাম! ’
‘ পতাসা। ’
‘ কি সা? ’
‘ পতাসা। ’
‘ পতাসা! এটা আবার কেমন নাম? এরকম নাম তো আগে কোনোদিনও শুনি নি। ’ ভাবুক গলায় বলল দিগন্ত। তারপর কিছু একটা মনে করে পতাসার দিকে চেয়ে বলল,
‘ প্রত্যাশা? ’
মাথা ঝাঁকালো প্রত্যাশা। দুপাশে ঝুটি বাঁধা ঘাড় সমান সিল্কি চুলগুলো নড়ে উঠল সমান তালে। দিগন্ত কিছু বলতে নিবে তখনি ওর সামনে এসে হাপাতে হাপাতে থামল বেলা। দিগন্তের কোলে প্রত্যাশাকে বলল,
‘ তুমি এখানে কেনো এসেছো? কতক্ষন থেকে খুঁজছি। হারিয়ে গেলে কি হতো? ’
সরু চোখে তাকিয়ে আছে দিগন্ত। ঠান্ডা মাথায় আগুন ধরতে সেকেন্ড সময়ও লাগল না। প্রত্যাশাকে কোলে নিয়েই ধমকে উঠল, ‘ এই বেয়াদব! ওড়না নিয়েছিস কেনো? ’
বেলা টুকুর টুকুর চোখে চাইলো দিগন্তের মুখের দিকে। আসার এক মিনিটও হলো কি না এসেছে তাতেই ধমকা-ধমকি শুরু। ওড়ানা নিয়েছে তো নিয়েছেই! এখানে ধমক দিল কেনো? বুঝল না বেলা। সোজা গলায় বলল,
‘ ওড়না নিবো না, দিগন্ত ভাই? ’
চোখ বন্ধ করে নিল দিগন্ত। ছোট বাচ্চা কোলে। চেঁচালে ভয় পাবে। চোখ বন্ধ রেখেই কর্কশ গলায় বলল,
‘ যে ওড়না বুকে থাকে না সে ওড়না নেওয়ার কি দরকার! একসাইডে নিয়েছিস আরেক সাইড? এই তোর বাপের আর্দশ গিরি! মেয়েকে বেপর্দায় ছেড়ে দিয়েছে। ’
নিজের দিকে তাকালো বেলা। খুব একটা খারাপ লাগছে না। কিন্তু দিগন্তের কথাটাও খারাপ লাগেনি। আসলেই ওড় দোষ! এভাবে কখনো ও নেয় না। আজও নেয়নি। জর্জেট ওড়না থাকছে না পড়ে যাচ্ছে। তাই কখন দুপাশ থেকে সরে গিয়ে একপাশে ঝুলে গিয়েছে খেয়াল করে নি। ঝটপট ঠিক করে নিল। মাথা নিচু করে কিছুটা অপরাধী গলায় বলল,
‘ খেয়াল করিনি। ’
চোখ খুলে তাকালো দিগন্ত। বেলার মন খারাপ করা দেখে বুকে চিনচিন ব্যাথা লাগল। একটা বড় শ্বাস ফেলে বলল,
‘ হুম। ঠিক আছে এবার।’
তারপর আবার বলল, ‘ বাচ্চাটা কে হয়? ’
‘ কে? প্রত্যাশা? ’
‘ হু। ’
‘ কি যেন নাম আন্টিটার, মনে পড়ছে না। ওনার মেয়ে। আর কিছু জানি না। আজকেই প্রথম দেখেছি। ’
চুপ করে রইল দিগন্ত। কোলে এখনো প্রত্যাশা আছে। বেলা প্রত্যাশাকে বলল,
‘ চলো প্রত্যাশা। তোমার আম্মু ডাকছিল তোমায়। ’
প্রত্যাশা আরো জোরে চেপে ধরল দিগন্তের গলা। জেদ ধরা গলায় বলল,
‘ না। কোথাও যাবো না আমি। ভাইয়ার কোলে থাকবো। ’
পরপর কয়েক বার পলক ঝাপটালো বেলা। কি যেন ভেবে বলে উঠল,
‘ ও আপনাকে ভাইয়া ডাকছে! তাহলে আমিও ডাকব আপনাকে দিগন্ত ভাইয়া বলে। ’
বেলার কাজ যেন একটাই। দিগন্ত শান্ত থাকতে চাইলেও উল্টাপাল্টা কিছু বলে ওকে রাগিয়ে দিতেই হবে। রাশভারি গলায় আবারো ধমক দিল দিগন্ত। এবারের ধমকটা বেশ জোরেই দিয়েছে। প্রত্যাশাও চমকে উঠল।
‘ চুপ কর বেয়াদব। ভুল করেও ভাইয়া ডাকবি না। অসভ্য মেয়ে, কাকে কি বলতে হয় সে জ্ঞান নেই আবার পণ্ডিতি! একবার নাম নিয়ে মজা উড়ায়, তো একবার ভাইয়া ডাকে। তোকে থাপড়ে সোজা করা দরকার। ’
মুখ লটকালো বেলা। সহজ-সরল গলায় সোজা উত্তর করল,
‘ আচ্ছা, দিগন্ত ভাইইই। ’
চুপ করে গেল দিগন্ত। কাকে কি বলছে? এর থেকে গাধাও ভালো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ঠান্ডা গলায় বলল,
‘ আমি কানে শুনতে পাই। এতো টেনে বলতে হবে না। বুঝেছিস?’
‘ হুমউউ। ’
‘ কি বুঝলি? ’
‘ আপনি কানে শুনতে পান। ’
এখন দিগন্তর খুব অসহায় লাগছে। সব কপালের দোষ! না বেলার বাপের দোষ। কারোই দোষ না দোষ দিগন্তের। নাদান জেনেও এর সাথে কথা বলতে আসে। শান্ত চোখের চাহনি দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডা গলায় আওড়ালো,
‘ পরের কথাটুকু বোঝার ছিল বেলা। বড় হোস না কেনো এখনো?’
‘ আচ্ছায়ায়া! ’
একটা ঢোক চেপে রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে গম্ভীর গলায় বলল দিগন্ত,
‘ সত্যি আমার ধৈর্য্যের তুলনা নেই। তুই মেয়েটা বেয়াদব হলেও কাজের। দিগন্ত তালুকদারকে ধৈর্য্য শিখিয়েছিস। এরজন্য আজ থেকে পরবর্তী দুদিন আমার চোখের সামনে পড়বি না। পড়লেন কানের নিচে বারি খাবি। ’
বেলা ঠোঁট উল্টিয়ে অবুঝ গলায় বলল,
‘ কিন্তু আমি তো কিছুক্ষন পর বড় আপার সাথে আপনাদের বাড়ি যাবো, দিগন্ত ভাই। ’
রাগের কারণে চোখজোড়া সরু হয়ে থাকলেও এখন শিথীল হয়ে গেল। বেলার কথা শুনে হয়তো শান্তি পেল। তাই আর টু শব্দও ব্যয় করল না ওর সাথে। প্রত্যাশাকে কোল থেকে নামিয়ে আবারো হাঁটু গেড়ে বসল ওর সামনে। আদুরে গলায় বলল,
‘ বেলার সাথে ভেতরে যাও। একা একা আর কখনো বাইরে বের হবে না। ’
প্রত্যাশা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘ আমি তোমার সাথে খেলব ভাইয়া। ’
স্মিত হাসল দিগন্ত। নরম গলায় বলল, ‘ আজ তো ভাইয়ার অনেক কাজ পতাসা বাবু। আবার কোনোদিন দেখা হলে খেলবো কেমন! ’
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১২
সায় জানালো প্রত্যাশা। বেলার হাত ধরে ওর সাথে ভেতরে চলে গেল। এদিকে দিগন্ত নিজের কাজে হকচকালো। হুট করে একটা বাচ্চা মেয়ের উপর এতো মায়া হলো কিভাবে ওর। কেমন যেন একটা আপন আপন টান পেল। এতোক্ষন ধরে করা নিজের কাজে এবার নিজেই বিরক্ত হলো। চোখ-মুখ কুঁচকে সিগারেট টানা শুরু করল।