দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৮

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৮
আফরোজা আশা

‘ দিগন্ত ভাইইইই! দেখেন বাবু কাঁদছে। ’
বেলার আওয়াজ শুনে ভারি অবাক হলো দিগন্ত। চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখলো। নাহ! এটা তো ওর-ই রুম। তাহলে বেলার আওয়াজ পাচ্ছে কেন। আবারো ভেসে এলো একি ডাক। ডাকের উৎস খুঁজতে উৎসুক নজরে দরজার সামনে তাকালো দিগন্ত। এতেই যেন ঝটকা খেলো। মাথা ঘুরে গেল ৩৬০ ডিগ্রি এংগেলে। শুকনো কাশি উঠল। মাথায় থাবা মারতে মারতে বড় বড় কদম ফেলে পাক্কা গিন্নি রূপী বেলার সামনে এসে দাঁড়ালো। বেলার রূপ দেখে চক্ষু কোটর ছেড়ে হাত খুলে আসতে চাইছে ওর।

বেগুনি-সবুজ রাঙা জামদানি শাড়ি কোমড়ে গুজেছে। চুলগুলো ঢিলে করে হাত খোঁপা করা। ছোট ছোট চুলগুলো খুলে ছড়িয়ে রয়েছে। কপালের মাঝ বরাবর একটা কালো বিন্দি। কানে ছোট ছোট ঝুমকো। দুহাত একটা করে সোনালি চুড়ি। সবশেষে নজর আটকালো নাকের মধ্যিখানে। অবাক! চরম অবাক দিগন্ত। নাকের মাঝ বরাবর বিদ্যমান জ্বলজ্বলে ছোট্ট ফুল আকৃতির নাকফুলটা দেখে থমকে গেল। হৃদয়ের কোন গোপনে ধাক্কা লাগল প্রচন্ডভাবে। সব মিলিয়ে ছোট বেলার সৌন্দর্য্য যেন ঠিকড়ে পড়ছে। ছোট বেলা! আদোতে কি এটা দিগন্তের সেই ছোট, বোকা, বেয়াদব মেয়েটা। মুখাকৃতি তা হলেও ভাব-ভঙ্গিমা আর সাজ-গোজে তার বিন্দুমাত্র রেশ নেই। বেলার এই রূপে মত্ত্ব হলো দিগন্ত। দেখল মন ভরে। খুঁটে খুঁটে দেখল। কিন্তু হুট করে চোখ আটকালো বেলার কোল জুড়ে পড়ে থাকা ছোট একটা বাচ্চায়। উঁকি দিয়ে মুখ দেখার চেষ্টা করল কিন্তু ব্যর্থ হলো। সুবিধা করতে না পেরে মুখে ফুটে বলেই ফেলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ কার বাচ্চা এটা? কাঁদছে তো আমাকে বলছিস কেনো? ’
শান্ত-সুন্দর চোখ মুখ মূহুর্তেই ভয়ংকরী রূপ নিল। গর্জে উঠল সামনের রমণীটা। গর্জানি শুনে ভয় পেল দিগন্ত সাথে অবাক হলো। এ আবার কেমন রূপ!
‘ কার বাচ্চা মানে? ফাজলামো করছেন আমার সাথে? বাচ্চা জন্ম দিয়ে এখন বলছেন কার বাচ্চা। ’
সপ্ত আসমান থেকে ধপ করে মাটিতে পড়ল দিগন্ত। বিস্মিত ধ্বনিতে চেঁচিয়ে উঠল,
‘ কিহহহহ! এইই ভণ্ড। কে তুই? ’
দিগন্তের থেকে দ্বিগুণ কণ্ঠে চেঁচালো বেলা,

‘ এইই লোক! নিজের বউকে বলছেন কে তুই? লজ্জা লাগে না। আব্বু ঠিকি বলত, গুন্ডা-মাস্তানদের কোনো গ্যারান্টি নাই। এগুলো লেবাশধারী। বউ-বাচ্চাকে ভুলতে সময় নেয় না। আমার আদর্শ আব্বুর মতো সব পুরুষ হতে পারবে না। ভুল করেছি আমি আপনার সাথে বিয়ে বসে। ’
কথাগুলো ঝাঁঝালোভাবে বলে হাতের বাচ্চাটাকে এহাতে নিজের সাথে চেপে ধরে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস উঠিয়ে সজোড়ে ফিক মারল দিগন্তের দিকে।

চিৎকার ছুড়ে একলাফে উঠে বসল দিগন্ত। জোরের জোরে শ্বাস টানে বুক ডলতে লাগল। হৃদপিণ্ডে গতি অস্বাভাবিক। বুকে হাত রেখেই নজর বুলালো রুমে। নাহ, দরজা লক করা। সেরকম কিছু নেই। বুঝতে বাকি রইল না ইহা এক ভয়ানক স্বপ্ন। নিজেকে একটু শান্ত করে হাত দিয়ে চোখ-মুখ ডলে বিড়বিড় করে বলল,
‘ ছি ছি ছি! তওবা! তওবা! এ কেমন স্বপ্ন? যে স্বপ্নে ওই পুঁচকে বেয়াদব মেয়ে আমাকে এতো কথা শোনালো সেই স্বপ্নের চৌদ্দ গুষ্টিরে ওয়াক থুউউউ। ’

পাশ থেকে ফোন নিয়ে সময় দেখল। দুপুর বারোটা বেজেছে মাত্র। ফোনটা আবার সেখানে রেখে বলল,
‘ যদিও বিশ্বাস করি না ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয় কিন্তু এসব ব্যাপারে নো রিস্ক। ভাগ্য ভালো কাল রাতে ঘুমাইনি। ভোরে এসব ফাউল স্বপ্ন দেখলে!
না, না,আল্লাহ মাফ করুক! এমন রণচন্ডী বউ আমার চাই না। বেয়াদব হোক তাও ওই নাদানটাই ভালো। ’
পরক্ষণে আবার নিভে আসা গলায় বলল, ‘ বিয়ে নেই বাসর নেই সোজা বাচ্চা নিয়ে স্বপ্ন দেখলাম। এদিকে আমার বাচ্চা বড় হওয়ার বয়সে, বউ বড় হচ্ছে। সবই নসিবের খেলা। কবে বড় হবি বেলা? তোর জন্য আমার জীবন-যৌবন সব গেল রে গেল।’

হাতের ফোন দু’আঙুলের সাহায্য ঘুরাতে ঘুরাতে সিঁড়ি বেয়ে নামছে দিগন্ত। ডাইনিং এ এসে পদযুগল ধীর হলো। খিদেয় পেট ডাকছে। কিন্তু খাবার আদোও জুটবে কি না সন্দিহান। তবুও গলা পরিষ্কার করে ডাকল,
‘ মনিইই! ’
রান্নাঘর হতে বড় সর টিফিন ক্যারিয়ার হাতে বের হলো মিতালী। চোখ-মুখ থমথমে। দিগন্তের পাশ কেটে টেবিলের উপর রাখল সেটা। টেবিলে আগে থেকেই দুটো টিফিন ক্যারিয়ার। বুঝল দিগন্ত। এগুলো হাসপাতালে যাবে সব। কিন্তু এখন নিজেদের পেটে দুটো না দিলেই নয়। কাল দুপুরে লাস্ট খেয়েছে। তারপর আর দানাপানি পড়ে নি পেটে। একটা চেয়ার টেনে বসতে নিলে ভেসে এলো ক্যাড়ক্যাড়ে আওয়াজে বলা বাণী,

‘ এগুলো নিয়ে যেতে হবে। বাণী সকালেই চলে গিয়েছে। বাড়ির এক কর্তা আর দিহান অফিসে জরুরি মিটিং তাদের। আরেক কর্তা রাতে ফিরে নি। আমি একা যাবো কিভাবে? ’
চেয়ারে বসে মিতালীর মুখের দিকে ফিরে দিগন্ত বলল,
‘ আগে খেয়ে নেই তারপর নিয়ে যাচ্ছি। আমিও সেখানেই যাবো।’
-‘ হ্যাঁ! সেই। গো-গ্রাসে গেলো আর ফুটানি মারিয়ে বেড়াও। সাথে প্রতিদিন নাক-মুখ ফাটিয়ে আসো। ’
বিরক্ত হলো দিগন্ত সাথে রাগ লাগল প্রচুর। অন্য সময় হলে গায়ে মাখত না কিন্তু এখন খিদের চোটে মাথা ঠিক রাখতে পারছে না। কাচের গ্লাসে পানি ঢেলে ঢোক ঢোক করে খেলো। বাঁকা চোখে তা দেখল মিতালী। তারপর প্লেটে খাবার বেড়ে দিগন্তকে দিল। কিছু সময়ের মাঝে খাওয়া শেষ হলো দিগন্তের। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে মিতালীকে বলল,
‘ বাইরে অপেক্ষা করছি এসো তাড়াতাড়ি। ’

গাড়ি পার্ক করে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকল দিগন্ত। মিতালী অনেকক্ষন আগেই এসেছে। হয়তো তার হাঁড়ে বজ্জাত মায়ের কেবিনে গিয়েছে। দিগন্ত পা বাড়ালো বেলার কেবিনের দিকে। ওর কেবিনের কাছাকাছি আসতেই একটা মিষ্টি কণ্ঠস্বর শুনে থেমে গেল। চিনতে ভুল করে দিগন্তের চতুর মস্তিষ্ক। আপানা-আপনি ঠোঁট দুটো স্বীয় জায়গা থেকে আলাদা হলো। পিছু ঘুরে চোখে পড়ল ছোট বাচ্চা মেয়েটাকে। পা সমান গোলাপি ফ্রক পরিহিত, সিল্কি চুলগুলো দুপাশে উঠে ঝুটি গাথা। ফোলা ফোলা লালাভাব গাল। হাতে একটা তুলতুলে টেডি। শরীর হালকা ঝুঁকিয়ে দুহাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নিল বাচ্চাটাকে। টুপটুপ করে দুটো চুমু এঁকে নরম গলায় বলল,

‘ পতাসা বেবির দেখা পেলাম অবশেষে। ’
প্রত্যাশা খিলখিল করে হেসে উঠল। একহাত দিয়ে দিগন্তের গলা ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ পতাসা তোমাকে এতোগুলা মিস করেছে ভাইয়া। ’
ছোট বাচ্চা মেয়েটার এতো মিষ্টি গলার আওয়াজে মুগ্ধ হলো দিগন্ত। সাথে ভাইয়া ডাকটা শুনে মনে কেমন যেন একটা প্রশান্তি লাগছে। দিগন্ত হাত উঠিয়ে প্রত্যাশার নাক আলতো করে টিপে দিয়ে বলল,
‘ পতাসা বেবি আবারো একা একা ঘুরছে। মানা করেছিলাম না সেদিন। তোমার বাবা-মা বারবার একা ছেড়ে দেয় কেনো? ’
পাতলা গোলাপি রাঙা ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে প্রত্যাশা বলে উঠল,
‘ মাম্মা তো ওই আপুটার কাছে। আমি চুপ করে বেরিয়ে এসেছি বেলা আপুর কাছে যাওয়ার জন্য। ওখানে অনেক লোক ভালো লাগছিল না। ’

-‘ তাই! আমিও তোমার বেলা আপুর কাছেই যাচ্ছি। যাবে আমার সাথে? ’
মাথা ঝাঁকালো প্রত্যাশা। সাথে নড়ে উঠল দুপাশের ঝুঁটি দুটো। তা দেখে দিগন্ত দুষ্টুমি করে বলল,
‘ পতাসা বাচ্চা! তোমার দুপাশে দুটো শিং নড়ছে। ’
দিগন্তের কথা শুনে একপাশে ঝুঁটি টেনে ধরে আবারো খিলখিলিয়ে হাসল প্রত্যাশা।
বেলার কেবিনে ঢুকল দিগন্ত। কোলে প্রত্যাশা। দিগন্তকে দেখে রিনা বেলার পাশ থেকে উঠে দাঁড়ালো। হালকা হেসে দিগন্তের কাছে এসে বলল,
‘ ভালো হয়েছে বাবা এসেছো। তুমি একটু বেলার কাছে থাকো। ওতো এখনো ঘুমাচ্ছে। বৃষ্টিটার জ্ঞান ফেরার পর থেকে আর দেখা হয় নি আমার সাথে। আমি একটু ওর কাছে যাই। বেলাকে একা ছেড়ে যেতে পারছিলাম না। ’
দিগন্ত ছোট করে জবাব দিল, ‘ আচ্ছা। ’

চলে গেল রিনা। রিনা যেতেই প্রত্যাশাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বেলার কাছে এলো দিগন্ত। গভীর দৃষ্টি ফেলে আবলোকন করল ওকে। ঘুমাতে ঘুমাতে চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে। নাকের দুপাশ কিছুটা তৈলাক্ত হয়ে আছে। পকেট থেকে সাফেদ রুমালটা বের করে আস্তে করে মুছে দিল তা। হাত-পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা। কাল রাতটা এখানেই ছিল দিগন্ত। সামনে বেলার পরীক্ষা অথচ মেয়েটা ট্রমাটাইজ হয়ে আছে। এক হাত বাড়িয়ে বেলার গালে রাখল। বুড়ো আঙুল দিয়ে হালকা স্লাইড করল। তখনি টিপটিপ করে চোখ খুলল বেলা। ঘুম ভেঙেছে। চোখ খুলেই পাশে বসা দিগন্তের দিকে দৃষ্টি ফেলল। বেলাকে উঠতে দেখে আলগোছে হাতটা সরিয়ে নিল দিগন্ত। ঘুম জড়ানো গলায় ডেকে উঠল বেলা,

‘ দিগন্ত ভাই।’
-‘ হু ’
-‘ আব্বু কোথায়? ’
সরু হলো দিগন্তের চোখ। ত্যাড়া ভাবে জবাব দিল,
‘ জানি না ’
-‘ ডেকে দিবেন? ’
-‘ পারব না ’
ফোলা ঠোঁট মূহুর্তেই উল্টে দিল বেলা। তা দেখে দিগন্তের ভালো লাগল। বেলার ঠোঁট উল্টানোটা বেশ উপভোগ করে। প্রত্যাশার দিকে ফিরে বলল,
‘ পতাসা বেবি! তোমার থেকেও বেলা ছোট বাচ্চা। ’

নিজের থেকে এতো বড় বেলা আপুকে ছোট বলায় হি হি করে হাসল প্রত্যাশা। বেলা এতোক্ষন খেয়াল করেনি ওকে। দিগন্ত কথা বলায় সেদিকে তাকালো। আস্তে করে হাত নাচিয়ে ওকে নিজের কাছে ডাকল। প্রত্যাশা চেয়ার থেকে নেমে গুটিগুটি পা ফেলে দিগন্তের কাছে দাঁড়ালো। দিগন্ত ওকে তুলে নিয়ে বেডে বেলার পাশে বসিয়ে দিল। বেলা প্রত্যাশার গাল টানার জন্য হাত উঠাতে গেলে ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠল।
‘ আহহহ ’
ঝট করে দিগন্ত ওর মুখ বরাবর চলে এলো। বেলার হাতের উপরে হাত রেখে অস্থির চিত্ত্বে জিজ্ঞেস করল,
‘ ব্যাথা পেয়েছিস বেশি? এতো নড়াচড়া করার কি আছে বেয়াদব। ’
বেলা চোখ বন্ধ করে নিয়েছিল। হাতের কুনুইয়ের কাছে বাজেভাবে কেটে গিয়েছে তাই এতো ব্যাথা। কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

‘ বুঝতে পারি নি। ’
দিগন্ত ভরাট গলায় বলল, ‘ কাঁদতে চাইছিস কেনো? আমি কি তোকে বকেছি না মেরেছি? ’
বেলার চোখের একবিন্দু পানি বিসর্জন দিয়ে সোজা গলায় বলল,
‘ এখনি তো বকলেন। ’
-‘ কখন? ’
-‘ বেয়াদব বললেন যে। ’
দিগন্ত কিছুক্ষন শান্ত চোখের বেলার দিকে চেয়ে থাকল। একে এখন কে বোঝাবে দিগন্ত তালুকদার এই নাদানটাকে ভালোবেসে বেয়াদব ডাকে। এতো সুন্দর ডাকটাকে কোন শালায় গালি উপাধি দিয়েছিল তার পশ্চাৎ দেশে দু-চার ঘা দিয়ে মনের আশ মিটাতো দিগন্ত।
ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে দিগন্ত নরম কণ্ঠে বলল,

‘ বকি নি। ’
তারপর আবার বেলার মাথায় হাত রাখল,
‘ কেমন লাগছে এখন? খাবি কিছু? ’
বেলা উত্তর দিল না। আবারো ডেকে উঠল,
‘ দিগন্ত ভাই ’
-‘ হু ’
-‘ ওই লোকগুলা অনেক বাজে। ’
মোচড় দিয়ে উঠল দিগন্তের অন্তঃস্থল। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই ঠান্ডা গলায় বলল, ‘ তোর এ অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের কাউকে ছাড়ে নি তোর দিগন্ত ভাই। ’
হুট করে বেলা হাত বাড়িয়ে দিগন্তে শার্টের এক কোণে জোরে চেপে ধরল। অভিমানী গলায় বলল,
‘ ওরা আমার ক্ষ..’
তাতক্ষনাৎ বেলার কাছাকাছি ঝুঁকে গেল দিগন্ত। ওর ঠোঁটে এক ইঞ্চি দূরত্বে আঙুল রেখে বলল,
‘ কিছু হয় নি। ভবিষ্যৎতেও আর কিছু হবে না। কেউ আর তোকে কোনো বাজে কথা বলতে পারবে। এখন থেকে নিজ ইচ্ছে মতো যেখানে খুশি ঘুরবি-ফিরবি কেউ তোর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পাবে না। যা হয়েছে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। ’

বেলা চুপচাপ দিগন্তের মুখের দিকে চেয়ে আছে। ওকে কথা বলতে না দেখে দিগন্ত আবার বলল,
‘ বললাম না। কোনো ভয় নেই তোর। পুরনো কথা মনে রেখে যদি কষ্ট পেয়েছিস তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। দুদিন বাদে পরীক্ষা। খাবি, ঘুমাবি আর পড়বি। বুঝেছিস? ’
মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো বেলা, ‘ হুম ’
বেলার চোখ গড়িয়ে পানি পড়তে নিলে ছোট ছোট হাত দিয়েছে মুছে দিল সেটা প্রত্যাশা। তারপর বেলার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ তুমি কাঁদছো কেনো? এতো বড় মেয়ে হয়ে কাঁদছো। আমি তো ছোট বেবি তাও কাঁদি না। ’
বেলা মুচকি হেসে প্রত্যাশার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
‘ প্রত্যাশা কার সাথে এসেছে? ’
প্রত্যাশা দিগন্তকে দেখিয়ে বলল, ‘ ভাইয়ার সাথে। ’
বেলা বেখেয়ালিতে প্রত্যাশার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে নিয়েছিল, ‘ ওহ! দিগন্ত ভাইয়….’
গর্জে উঠল দিগন্ত, ‘ বেলায়ায়ায়া ’
থেমে গেল বেলা। টুকুর টুকুর দৃষ্টি ফেলে বলল,
‘ কি? ’
দাঁতে দাঁত চাপলো দিগন্ত।
‘ তোকে বলেছি না এভাবে বলবি না ’
বেলা সরল গলায় বলল, ‘ কিভাবে? ’

রাগী চোখে তাকালো দিগন্ত। শান্ত থাকতে চাইলেও বেলা থাকতে দেয় না ওকে। দুনিয়ে উল্টে যাক অসভ্য মেয়েটাকে একটা না একটা বেয়াদবি করতেই হবে। স্বপ্নে বাচ্চা নিয়ে আসে আর বাস্তবে ভাইয়া ডাকে। হুট করে মেজাজের খেই হারিয়ে ফেলল। হিসহিসিয়ে বলল,
‘ তুই চরম বেয়াদব। সব তোর বাপের দোষ। তিনটা মেয়ে পয়দা করে সামলাতে পারে না। যখন পারবে না তখন আনে কেন বুঝি না। আর এনেছেই যখন, তখন বৃষ্টির জায়গায় তুই আসলি না কেন? এতোদিন আমার বিয়ে, বাচ্চা সব হয়ে যেতো। কোনো কাজের না তোর বাপ। দেখিস, দুটো মেয়ে নিবো আমি। তারপর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো মেয়েকে কিভাবে মানুষ করতে হয়। ’

দিগন্তের কথা শেষ হতেই বেলা সোজা প্রশ্ন করল,
‘ আপনার দুটো মেয়ের সাথে আমার আব্বুর কি সম্পর্ক? ’
দিগন্ত বাঁকা গলায় বলল, ‘ তোর বাপের সাথেই সব। আমার মেয়েরা তার মেয়ের থেকেই আসবে। তার জন্মানো নাদান আমার বাচ্চাদের জন্মাবে। ’
দিগন্তের ঘোর প্যাঁচ কথা মাথায় ঢুকল না সরল বেলার।
‘ কি বললেন? ’
মুখ দিয়ে চুউউ শব্দ বের করল দিগন্ত। কত সাধারনভাবে বলল তাও এই মেয়েটা বেয়াদবের মতো প্রশ্ন করছে। বিরক্তিতে চিরচিরিয়ে উঠে বলল,

‘ তুই গাধা। বুঝবি না। তোর বাপ আর আমি বুঝব। ’
বেলাও জোরসে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ ওহহ! আচ্ছা। ’
ভ্রুঁ গুটালো দিগন্ত। জিজ্ঞেস করল, ‘ কি আচ্ছা? ’
নির-ভেজাল জবাব এলো বেলার কাছ থেকে, ‘ আমি গাধা। বুঝব না। আমার বাপ আর আপনি বুঝবেন। ’
ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ল দিগন্ত। মনের ভেতর ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে,

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৭

‘ তুমি অসভ্য, বেয়াদব সাথে একটা আবাল। যা বুঝার তা বুঝো না বাকি সব বা* বুঝো ’। বেলার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে দিগন্তের মুখ ফুটে এটা বের হয়ে যেত। কিন্তু কপাল! বেলাকে এসব বলাও যা না বলাও তা। দেখা যাবে ওর লাইন টা-ই উল্টো ওকে শোনাচ্ছে।
তাই মুখ ফুটে কিছু বলল না। শান্ত চাহনি ফেলে বাহিরের দিকে গেল।

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ১৯