দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ২৭
আফরোজা আশা
সকাল সকাল ফোনের ভাইব্রেটে ঘুম ভাঙলো দিগন্তের। হাতড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোন এনে চোখের সামনে ধরল। কাঙ্ক্ষিত নাম্বার দেখে দুচোখ কচলিয়ে উঠে বসল। ঘাড় ইষৎ বাঁকিয়ে পাশে মরার মতো হাত-পা ছাড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকা রায়হানকে দেখল একবার। ফোন একবার বেজে কেটে গেল। পুনরায় ভাইব্রেট শুরু হলে বেড ছেড়ে বেলকনির দিকে পা বাড়ালো দিগন্ত। তীব্র আলোক ছটা এসে পড়ল ওর পোশাকবিহীন উপরি উন্মুক্ত সুঠাম দেহেতে। চাওড়া লোমশ বক্ষের ফর্সা চামড়া জ্বলজ্বল করে উঠল। ঘুম চোখে তীব্র আলোর ছিটা লাগায় ভ্রুঁসহ চোখ কুঁচকে নিল ও। ফোন কানে তুলতেই অপরপাশ থেকে ভেসে এলো রতনের কণ্ঠস্বর,
‘ ভাই! চলে আসছি। কাজীর সাথে কথা বলেন। ’
কথাটুকু বলে পাশে বসে থাকা বৃদ্ধ কাজীর দিকে সেলফোনটা এগিয়ে দিল রতন। সাদা জুব্বা পরিহিত বয়স্ক লোকটা ফোন নিতেই নম্রভাবে সালাম দিল দিগন্ত। কাজী সালামের জবাব দিল। অতঃপর নিজের সমস্ত কথা একে একে শান্তভাবে কাজীকে বলল দিগন্ত। কাজী মনযোগ দিয়ে শুনল ওর কথা। সব কথা শেষে বয়স্ক লোকটা বলল,
‘ এই কাগজগুলো ওই ছেলেমেয়ে দুজনেরই তো? ’
‘ জ্বি। ওদের দুজনের পরিচয়পত্র। কাবিননামায় যা যা তথ্য মিসিং আছে ওগুলো থেকে তুলে নেন। আর আমার ছেলেরা বাকি সব ব্যবস্থা করে দেবে। আপনি শুধু ওদের সাথে চলে আসবেন। ’
কাজী অপরাধী গলায় মিনমিনিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ আমরা তো জানতাম না বাবা ছেলেটার সাথে তালুকদার বাড়ির সম্পর্ক আছে। মেয়েটাকেও কখনো এ গ্রামে দেখিনি। ওদের যে অবস্থায় গ্রামের লোকেরা পেয়েছিল তাতে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর অন্য উপায় ছিল না। আর ওরা নিজেদের কোনো তথ্যও দেয় নি। শুধু নাম আর বয়স জোর-জুলুম করে জানা হয়েছিল।’
দিগন্ত একটা ভারী শ্বাস ফেলে বলল,
‘ যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। তবে আমার কথাগুলো মাথায় রাখবেন। বাই চান্স আপনাকে রায়হান খুঁজে পেলেও সহজে স্বীকার করবেন না কিছু। ’
কাজী শুনল দিগন্তের কথা। আরো কিছুক্ষন কথাবার্তা বলে ফোন কাটল। রেলিং এ দুহাত ছড়িয়ে সীনা টান করে দাঁড়ালো দিগন্ত। দৃষ্টি নিবদ্ধ করল বাহিরের দিকে। মনসাপেটে ভেসে উঠল সেদিন রাইডে বের হওয়ার পরের কাহিনী।
বেশ জোরে বাইক ছাড়ায় রায়হান দিহানের থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছিল ও। রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে একটা চায়ের টং এর সামনে দাঁড়িয়েছিল। চা খাওয়ার ফাঁকে সেখানে দুজন লোকের কিছু কথপোকথন ওর কানে গেলে; কেমন যেন একটা খটকা লাগে ওর। তাই সন্দেহবশত ফোন থেকে রায়হানের ছবি বের করে দেখায় তাদের। লোকগুলো সায় জানিয়ে বলে এই ছেলেটাই ছিল। এর সাথেই একটা মেয়েকে অপ্রীতিকর অবস্থায় ধরেছিল তারা। লোকগুলোর কথা শুনে দিগন্ত মাত্রাতিরিক্ত অবাক হয়। চরম বিস্ময় নিয়ে থম মেরে ওদের থেকে পুরো ঘটনা শুনে। সব শোনার পর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল সে।
পরবর্তীতে মেয়েটা সম্বন্ধে জানার জন্য অনেক চেষ্টা করে। সবশেষে মেয়েটাকে বেঁধে রাখা দুজন মহিলার থেকে শুধু নামটা জানতে পারে। সাথে কেমন দেখতে তারও কিছু ধারণা পায়।
নামের সাথে সাথে বাকি সবকিছুও ওর চেনা মাইশার সাথে মিল পায় দিগন্ত। বাড়ি ফিরে মাইশাকে একা ডেকে কথা বের করার জন্য বেশ কড়াভাবে চেপে ধরে। দিগন্তের রাগ আর ধমকের চটে প্রথমে গাঁইগুঁই করলেও পরবর্তীতে মুখ খুলতে বাধ্য হয় মাইশা। ব্যাথাতুর মন নিয়ে শুরু থেকে শেষে রায়হানের করা ব্যবহার পর্যন্ত সব জানায় দিগন্তকে। সব শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল দিগন্ত। অবাকতার রেশ কাটাতে বেগ পেতে হয়েছিল ওকে।
মাইশার মাথায় বড়ভাইয়ের মতো একটা ভরসার হাত রেখে ওকে বোঝায় অনেকক্ষন। রায়হানের সাথে সবকিছু ঠিক করে দিতে চায়। কিন্তু মাইশাকে রাজী করাতে পারে না। রায়হান ওকে চেনে না জানে না; মাইশা চায়ও না জানুক। অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনার জন্য ওর মতো এতিম মেয়েকে কেনোই বা মেনে নেবে রায়হান! নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে মাইশা। তাছাড়া রায়হানের শেষদিকে বলা কটু কথাগুলো এখনো জ্বলজ্বল করে ওর কানে বাজে। নিজের প্রতিই ঘৃণা কাজ করে তখন। ওর জন্যই এতো সব কিছু হয়েছিল। শর্টকার্টের জন্য জঙ্গলের রাস্তায় না গেলে এতো ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এতে রায়হানের কি দোষ! ও তো ওকে বাঁচাতে এসে ফেঁসে গিয়েছিল।
তাই দিগন্তকে বারংবার মানা করে রায়হানকে যেন না জানায় কিছু। খেটে খাওয়ার মতো মনোবল আছে ওর। কারো জীবনে বোঝা হতে চায় না। দিগন্তও আর জোর করে না। রায়হানের করা কাজে ওর উপর ক্ষুব্ধ হয় সেও। তাই মাইশা যা চায় তাই মেনে নেয়।
বেলকনি ছেড়ে রুমে এসে ফ্রেশ হলো দিগন্ত। রায়হান এখনো গরুর মতো ঘুমাচ্ছে। কোনো হুশ-জ্ঞান নেই ওর। সারারাত দুজনে নিজেদের সুখ-দুঃখের আলাপে কাটিয়েছে। শেষ প্রহরের দিকে এসে ঘুমিয়েছে। রায়হান আর বাড়ি ফেরেনি। দিগন্তের রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়েছে।
সরু চোখে বেডের কর্নিশ ঘেঁষে চিৎপাটাং হয়ে ঘুমিয়ে থাকা রায়হানকে দেখলো দিগন্ত। অতঃপর পা উঠিয়ে রায়হানের পশ্চাৎদেশ বরাবর দিল জোরে এক লাথি। লাথি খেয়ে ঘুমন্ত রায়হান দুম করে শব্দ তুলে ফ্লোরে আছাড় খেলো। কোমড়ে হাত রেখে ক্যাড় ক্যাড়ে স্বরে চেঁচিয়ে উঠল তাতক্ষনাৎ,
‘ শালা! এটাকে প্লে গ্রাউন্ড পেয়েছিস। লাথা-লাথি কি অভ্যাস? মুখ নেই তোর? ডাকতে পারিস না! ’
দিগন্ত রুমের বাহিরে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল, ‘ বেলা হয়েছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। কাজ আছে অনেক। ’
রায়হান দিগন্তের কথা কানে তুলল না। কোমড় ডলতে ডলতে ফ্লোরেই আরেক চপট ঘুমের জন্য চোখ বুজল।
দিগন্ত নিচে আসতেই সামনে পড়ল দিশা আর মাইশা। দুজনে তৈরি হয়ে বেড়িয়েছে। আজ ওদের এডমিশন টেস্ট রয়েছে। দিগন্ত হাসলা হেসে কথা বলল ওদের সাথে। দিহান ওদেরকে ভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে যাবে।
দিহান দিগন্তের কাছে এসে ইতস্ত করে বলল,
‘ অফিসে আজ গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে ভাই। পরীক্ষা শেষে তুমি যদি ওদের নিয়ে আসতে তাহলে ভালো হতো। ’
পেছন থেকে বাণী আর মিতালী ঘনঘন মাথা নাড়িয়ে দিহানকে মানা করছে কিন্তু শুনল না সে। দিগন্তকে আবারো বলল,
‘ বড় আব্বু, আব্বু ওরাও থাকবে মিটিং এ। প্লিজ ভাই! তোমাকে ভেতরে যেতে হবে না শুধু গেট থেকে ওদের পিক করে নিও। ’
দিগন্ত কিছুক্ষন নীরব রইল। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলল,
‘ ঠিক আছে। ওদের নিয়ে যা সাবধানে। দেরী হচ্ছে। ’
দিশা ছলছল নেত্রে দিগন্তের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। দিশার দিকে চোখ পড়তেই নিজের মনের ভেতরে চলা ঝড়কে খানিকের জন্য থামালো দিগন্ত। বোনের গাল টেনে শান্ত গলায় বলল,
‘ ঠিক আছি আমি। ভালোভাবে পরীক্ষা দিবি দুজনে। ’
বোরখার আড়ালে মুচকি হাসল মাইশা। সবার থেকে দোয়া নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল ওরা।
এদিকে রায়হান গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে দিগন্তের রুম থেকে বের হলো। সিঁড়ির কাছাকাছি এসেই মুখোমুখি হলো জুনায়েদ তালুকদারের। হাসি মুখটা নিমিষেই আঁধারে ভরে উঠল ওর। জুনায়েদের সাথে ভদ্রতার খাতিরেও টু শব্দটি করল না। পাশ কেটে চলে যেতে নিলে জুনায়েদের কথায় পা থামালো।
‘ দিগন্তের সাথে কথা বলেও পারা যায় না। তুমি তো একটু মনার সাথে…’
রায়হান আর বলতে দিল না তাকে। গম্ভীর গলায় বলল,
‘ এ নামের কাউকে চিনি না আমি। ’
বলে চলে গেল। রায়হানের এহেন বেয়াদবিতে চোখ-মুখে রাগের আভাস ফুটে উঠল জুনায়েদের। উপর থেকেই রক্তচক্ষু নিয়ে একবার রায়হানকে দেখল আরেকবার দিগন্তকে।
ফাঁকা রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে কোমড়ে ওড়না পেঁচিয়ে এক রমণী কাজে ব্যস্ত। কিছুক্ষন আগে সবাই নাস্তা করেছে। নাস্তা শেষ করে বেলা একা একা এসেছে রান্নাঘরে। ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে একে একে বাকি সব সরঞ্জামাদি নিয়ে চা বানানোর কাজে লেগে পড়ল। সবার জন্য চা বানাবে তাই পুরো দুধটুকু দিয়ে দিল। চা পাতা দিয়ে এক ধ্যানে প্যানের দিকে তাকিয়ে আছে সেই কখন থেকে। কিন্তু দেখে মনে হলো এখনো গরম হয় নি। অধৈর্য্য হলো চঞ্চল বেলা। চা থেকে ধ্যান সরিয়ে হাত-পা ছাড়িয়ে দিয়ে ছটপটে গলায় গান গাইতে গাইতে তিড়িংবিড়ং নাচ শুরু করল। একটা গোল পাক দিয়ে ঘুরতেই হুট করে থেমে গেল।
গোল গোল চোখ জোড়া সামনের দৃশ্য লক্ষ্য করতেই বড় হয়ে গেল মুহূর্তে। চায়ের প্যান থেকে চা উতলে পড়ে গ্যাস স্টোভের নিচে পর্যন্ত চলে গিয়েছে। আগুনের ফুলকিগুলো কেমন শব্দ তুলে জ্বলছে নিভছে। ভয়ে গ্যাস চুলার কাছ থেকে ঝটপট কদমে পেছনের দিকে সরে গেল বেলা। জোর গলায় চেঁচিয়ে উঠল,
‘ আব্বুউউউ! ’
রহমান চেয়ারে বসে পেপাড় পড়ছিল। রান্নাঘর থেকে বেলার এরকম ভয়ানক আওয়াজ শুনে পেপাড় ফেলে রেখে তড়িঘড়ি করে সেদিকে ছুটল সে। রান্নাঘরে ভেতরে ঢুকে চুলার অবস্থা দেখে আগে স্টোভ বন্ধ করল। তারপর বেলার কাছে এসে অস্থির গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ কি হয়েছে আম্মা? হাতে আঁচ লেগেছে? ’
বেলা তড়িৎ গতিতে দুপাশে মাথা নাড়িয়ে না বলল। ততোক্ষনে আমেনা আর রিনাও এসে দাঁড়িয়েছে রান্নাঘরের সামনে। দুজনে শ্বাশুড়ির রুমে ছিল। বেলার আওয়াজ পেয়ে দ্রুত পায়ে এসেছে। রহমান বেলাকে পুনরায় বলল,
‘ তুমি এখানে কেনো এসেছো? ’
বেলা সোজা জবাব দিল, ’ বড় হয়েছি তো এখন। ভাবলাম; সবার জন্য চা বানাই। তাই চা বানাতে এসেছিলাম। ’
আমেনা বেলার কাছে এসে রান্নাঘরের অবস্থা দেখে বেলার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। ধমকের সুরে বলল,
‘ কি করেছিস এটা? পুরো চুলায় চা পড়ে কি হয়েছে! তোকে আমি বলেছি রান্নাঘরে আসতে। এসে আবার গ্যাসের চুলোয় হাত দিয়েছিস। ’
বেলা মায়ের দিকে তাকিয়ে লাজুক গলায় বলল, ‘ তাতে কি হয়েছে! আমাকে কাজ শিখতে হবে না। দেখো! কত বড় হয়েছি। কদিন পর তো বড় আপার মতো আমারো বিয়ে দিবে। তাই আগে ভাগে কাজ শেখা শুরু করেছি। ’
ছোট মেয়ের কথা শুনে রহমানের বুকের ভেতর ধক করে উঠল। হুট করে দিগন্তের কথা মনে পড়ে গেল। তাতক্ষনাৎ বেলার উদ্দেশ্যে গুরুগম্ভীর গলায় বলল,
‘ তোমাকে এসব করতে হবে না। আজ গিয়ে যা যা বই লাগে সব কিনে আনবে। পড়াশোনা শুরু করো আগে থেকে। তুমি এখনো ছোট। এগুলো ভাবনা মাথায় আনবে না। ’
বলে রান্নাঘর ছেড়ে চলে গেল। রহমান যেতেই আমেনা কটমট চোখে বেলার দিকে চেয়ে বলল,
‘ উতলে পড়ল কিভাবে? চা চাপিয়ে দিয়ে কি করছিলি? ’
বেলা মায়ের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলল,
‘ দুধ উতলে পড়ে জানি কিন্তু তাই বলে যে দুধ চা-ও উতলে পড়বে তা তো জানতাম না, আম্মু। কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম গরম হয় নি। যেই না একটু মন খুলে গান গাওয়া শুরু করলাম ওমনি উতলে পড়ে গেল। ’
বেলার কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল রিনা। হাসতে হাসতে বলল,
‘ হয়েছে! তোকে আর শ্বশুড়বাড়ি যেতে হবে না বেলা। এগুলা কাজ দেখলে যে ছেলে আসবে সব দৌড় লাগাবে উল্টো দিকে।’
বেলা রিনার শাড়ির আঁচল চেপে ধরে উৎসুক গলায় বলল,
‘ ছোট আম্মু আজ থেকে আমাকে রান্না শেখাবে হ্যাঁ। ’
রিনা মুচকি হেসে বলল, ‘ ঠিক আছে। চা খাবি না? আমি বানিয়ে আনছি। তোর দাদীর ঘরে যা। বৃষ্টি একা আছে ওখানে। ’
আমেনা মেয়ে-জায়ের কথা শুনছে আর ব্যস্ত হাতে চুলা পরিষ্কার করছে।
‘ কোথায় যাবি? ’
‘ ভার্সিটি। ’
দিগন্তের কথা শুনে রায়হানের চোখমুখে অবাকতার রেশ ছড়িয়ে পড়ল। পরক্ষনেই বিরক্তিমাখা গলায় বলল,
‘ আর ইউ সিরিয়াস? ভার্সিটি যাবি? ওই জায়গাটাতে আবার যাবি? হোয়াই? ’
‘ দিশা আর মাইশার এডমিশন টেস্ট। ওদের নিতে যাবো। ’
‘ অন্য কাউকে পাঠা। ’
ক্ষিপ্ত মেজাজে দিগন্ত বলল, ‘ চুপচাপ উঠে বস। মাথা খারাপ করিস না। ’
রায়হান জীপে বসল। তাচ্ছিল্য হেসে দিগন্তকে বলল, ‘ পরে আবার নিজের উপর জুলুম করিস না। ’
দিগন্ত সে কথা শুনেও না শোনার ভান করে চুপ রইল।
উত্তপ্ত দুপুরের মাঝে জীপ চালিয়ে চলে এলো গন্তব্যে। রাস্তা শেষ করে ভার্সিটি থেকে একটু দূরে জীপ থামালো দিগন্ত।
গাড়ি থামতেই চোখের সানগ্লাস নামিয়ে রায়হান বলল,
‘ এসেছিই যখন, পি.জে স্যারের সাথে একবার দেখা করে যাই? ’
দিগন্ত গম্ভীর গলায় বলল, ‘ আমাদের দেখা পেলেই স্যার কি বলবে তোর জানা নেই? ’
স্মিত হাসল রায়হান। জীপ থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ আমরা কি সেই আগের স্টুডেন্ট আছি নাকি! এখন হয়েছি গুন্ডা। সবাই এই গুন্ডাদেরই চেনে। এরকম ছেলেদের আর পড়ানোর কথা বলবে বলে মনে হয় না। ’
দিগন্ত কথা বলল না। জীপ থেকে নেমে স্ব-ভঙ্গিতে সামনের দিকে হাঁটা ধরল। দিগন্তকে ভার্সিটির দিকে যেতে দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল রায়হান।
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ২৬
দিগন্ত চলন থামিয়ে রায়হানকে বলল, ‘ দাঁড়িয়ে কেনো? আয়! ’
রায়হান ভারমুখে বলল, ‘ থাক! যাস না। পুরনো ক্ষত তাজা হবে।’
‘ পুরনো ক্ষত তো ভুলি নি কখনো। নতুন করে তাজা হওয়ার কিছু নেই। কাম! ’
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আবারো ভার্সিটির গেটে পা পড়ল দিগন্তের। গেটের সামনে আসতেই পাশ থেকে একজন কেউ একজন ডেকে উঠল ওকে।