দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৫

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৫
আফরোজা আশা

লাইভে কমেন্ট করে তখনি চোখ লেগে গিয়েছিল রায়হানের। ঘুমিয়ে পড়েছিল। ভোরের দিকে হুট করে ঘুম ভেঙেছে। উঠেই এলোমেলো শরীরে ছুটছে দিগন্তের বাড়িতে। ঘুমের কারণে ভুলে বসেছিল দিগন্তের কথা। আরেকবার ফোনে ট্রাই করলো ফলাফল একি তাই আর দেরী করলো না। ফোন পকেটে গুজে ছুটলো।
বিশাল ছাদের শেষাংশ জুরে সিগারেটের ছোট ছোট অসংখ্য ঠুটো ছড়িয়ে রয়েছে। মাঝ বরাবর একের পর এক পুশ আপ দিচ্ছে দিগন্ত। কপাল-গলা বেয়ে ঘাম ছুটেছে তবুও থামার নাম নেই। অলস পায়ে এক এক করে সব সিঁড়ি বেয়ে ছাদের দ্বারেপ্রান্তে এসে থামলো বেলা। সারারাত ঘুম চোখে ধরা দেয় নি। তাই ভোর সকালে আর শুয়ে থাকতে পারলো না।

মিতালীর সাথে রান্নাঘরে কিছুক্ষন ঘুরঘুর করে ছাদের দিলে এলো। কিন্তু এসে আরেক বিপদে পড়লো। সামনের দৃশ্য দেখে মাথা ঘুরে উঠল। হাত দিয়ে দেয়াল ধরে মাথা দুদিকে ঝাঁকালো কয়েকবার। অতঃপর আবার সামনে দিকে তাকলো। চোখের কালচে মণিজোড়া ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দিগন্তের আপাদমস্তক আবলোকন করলো। উপরিভাগে অর্ধ-আবৃত বিশাল ঢিলেঢালা গেঞ্জিতে দিগন্তের প্রসস্থ বক্ষ ঠাওড় করতে পারলো। ফোলা-ফাঁপা মাংসল পেশি আর হাঁফ ধরে যাওয়ার দরুন গলার মাঝের ফুলো অংশটুকুর অনবরত ওঠানামা দেখে আরেকচোট মাথা ঘুরলো বেলার। পড়তে পড়তে সামলালো নিজেকে। অদ্ভুত অস্থিরতার উপলব্ধি করলো নিজের মাঝে। গাল ফুলিয়ে শ্বাস টানলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিচ থেকে কারো পায়ের আওয়াজ কানে ঠেকলো। হয়তো সিঁড়ি ভেঙে উপরে আসছে। চট করে মাথা হেলিয়ে নিচের দিকে তাকালো। মাইশা ব্রাশ হাতে উপরের দিকে আসছে। মাইশাকে দেখে ঘাড় ইষৎ বাঁকিয়ে আবার অদূরের শেষপ্রান্তে কসরত করা দিগন্তকে দেখলো। তাতক্ষনাৎ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ‘ নো! ’
পরক্ষনেই দূর্বল শরীরটা ঝটকা মেরে টান টান করলো বেলা। পা চালিয়ে দ্রুত কদমে সিঁড়ি বেয়ে সোজা মাইশার কাছাকাছি এসে ব্রেক কোষলো। বেলাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে হকচকালো মাইশা।
‘ এভাবে ছুটছো কেনো? পড়ে ব্যাথা পাবা তো! ’
বেলা ঝটপট গলায় বললো,

‘ আপু, একটু বাগানের দিকে যাও না। দ্বিতীয় সারির লেবু গাছটাতে দুটো পাকা লেবু দেখলাম। আমার কি যে লোভ লেগেছে ওগুলো উপর। এনে দেওয়া না গো! ’
মাইশা অল্প বিস্তর হাসলো।
‘ আচ্ছা চলো আমি পেড়ে দিচ্ছি। ’
বেলা না ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ আমি যাবো না। এতো সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করতে করতে কোমড় ভেঙে যাবে। একটু ছাদে থাকি কিছুক্ষণ। দিশা আপুর ফুলগুলো দেখি তুমি ততোক্ষণে নিয়ে আসো। ’
মাইশা রাজি হলো বেলার কথায়। ঘুরে আবার নিচে নেমে বাগানের দিকে পা বাড়ালো। মাইশাকে চলে যেতে দেখে বিজয়ের হাসি হাসলো বেলা। নিজের চালাকিতে নিজেই বাহাবা দিল। দিন দিন বেশ চালাক হচ্ছে। অহমিকায় ফুলে-ফেঁপে উঠলো ভেতরে। আবারো ধুপধাপ পা ফেলে সোজা চলে এলো দিগন্তের কাছাকাছি।
চোখ সরু করে আওড়ালো, ‘ মেঝেতে এতো জোরে মাথা ঠুকছেন কেনো দিগন্ত ভাই? ’
যদিও দিগন্ত পুশ আপ দিচ্ছে কিন্তু বেলার কাছে দেখতে লাগছে ও ঢুসঢাস করে মেঝে কপাল ঠুকছে। বেলার কথা শুনেও শুনল না দিগন্ত। বিক্ষিপ্ত মেজাজে নিয়ে পুশ আপ দিতে দিতে বলল,

‘ চলে যা এখন। ’
সরু চোখজোড়া আরো খানিকটা সরু হলো। চলে যাবে মানে! এলোই তো মাত্র। আপমানিত হলো বেলা। মাথার মধ্যে জেদ চাপলো।
‘ যাবো না। ’
‘ চলে যেতে বলেছি। ’
‘ বললাম তো যাবো না। ’
‘ বেয়াদবি করবি না, বেলা। একা ছাড় আমাকে! ’
বেলার জেদ যেন তড়তড় করে বাড়লো। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
‘ যাবো না মানে যাবো না। ’
দিগন্তের হাত থামলো। ঘাড় বাঁকিয়ে বেলার দিকে তাকালো। চোখ গরম করে বলল,

‘ মুখের ওপর কথা বলছিস, অসভ্য মেয়ে। ভয় নেই জানে? ’
বেলাও সোজা উত্তর দিল, ‘ ভয় লাগে না। ভালো লাগে। ’
‘ বেশি সাহস দেখাচ্ছিস। ’
কিছুটা তেজী গলায় বলল বেলা,
‘ দেখাচ্ছি। ’
বলেই দিগন্তের সামনে এসে ওর গেঞ্জির হাতা টানে নামানোর চেষ্টা করল। বেলার কাজ দেখে মুখ থেকে চুউউ শব্দ বের করলো দিগন্ত। ইদানিং একদম পায় না ওকে। যা বলছে সব সময় তার উল্টোটা করছে। আবার জেদ দেখিয়ে মুখের উপর জবাব দিচ্ছে। পুশ আপ ছেড়ে মেঝেতেই বসলো দিগন্ত। বেলা ওর দিকে ঝুঁকে গেঞ্জির হাতা ধরে টানাটানি করছে এখনো।
খানিকটা ধমকে উঠল দিগন্ত,

‘ এই! সর। ’
বেলাও দিগন্তের মতো করে খিঁচিয়ে বলল,‘ চুপ করেন। ’
অবাধ্যতা দেখে দাঁতে দাঁত পিষলো দিগন্ত। রাশভারি গলায় ডাকলো,
‘ বেলা! ’
পাত্তা নেই বেলার। হাতা টেনে ধরে দিগন্তের চোখে চোখ রেখে রাগী গলায় বলল,
‘ আপনার কি জামা-কাপড়ের অভাব? এতো ছোট-খাটো জামা কেনো পড়বেন? এ বাড়িতে না অন্য একজন আছে। আপনি আপনার ফোলা ফোলা হাত ওকে দেখান। ’
বলতে বলতেই চোখ জোড়া ছাপিয়ে এলো বেলার। নিশ্বাস ভারী হলো। নাকের ডগা ফুলে উঠলো। ভ্রুজোড়া বেঁকে গিয়েছে কিছুটা। গালদ্বয় হালকা লালাভাব হয়েছে। বেলার এহেন মুখশ্রী দিগন্তের তপ্ত মেজাজ কিছুটা শান্ত করতে সক্ষম হলো।
এক আঙুল তুলে বেলার কপালে ঠেকিয়ে রুক্ষ স্বরে বললো,

‘ কথায় কথায় চোখে পানি আসে কেনো? বলেছি না আমার সামনে এসে কাঁদবি না। চরম বেয়াদব, তুই! চোখ থেকে যদি পানি বেরিয়েছে, কানের নিচে পড়বে এখন। ’
বেলা নাক টেনে দৃঢ় গলায় জবাব দিল,
‘ একবার থাপ্পড় খেয়েছিলাম তো। দুদিন পর ব্যাথা সেরেছিল। এখন, মারলে মারবেন আবার দুদিন পর সেরে যাবে। ’
বেলার মাত্রাতিরিক্ত সাহস দেখে তাজ্জব হলো দিগন্ত। জ্বলন্ত দৃষ্টি ছুড়ে বলল,

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৪

‘ মুখের উপরে জবাব দিচ্ছিস অসভ্য। এই তোর বাপের কেরামতি! খুব তো অহংকার নিয়ে ঘুরে। এসব শেখাচ্ছে? ’
হুট করে আব্বুকে টানায় বিরক্ত হলো বেলা। বাঁকানো ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিল। নাকের কাছে কতক ভাজ পড়ল তাতে। দিগন্তের হাতাটা এখনো হাতের মুঠোয়। সেটাতে একটা জোড়ালো টান দিল। পরপরই হিসহিসিয়ে বলল,
‘ ফুল হাতা শার্ট পড়বেন সব সময়। আমি যেমন ফুল হাতা জামা পড়ি, আপনিও তেমন ফুল হাতা জামা পড়বেন। ’
‘ তোর সাথে আমার কি! ’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৫ (২)