দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪০

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪০
আফরোজা আশা

বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করে ছেলেপক্ষরা চলে গিয়েছে। এক সপ্তাহ পর বিয়ের তারিখ ঠিক করেছে। ফয়সাল খুব বেশি ছুটি নিয়ে আসেনি তাই তাড়াহুড়োতেই সব কাজ শেষ হবে। বৃষ্টি নির্বাক হয়ে ছিল পুরোটা সময়। সবাই চলে যেতেই নিজ রুমে এসে দরজা আটকে দিয়েছে। বাড়ির সবাই অনেকবার ডাকাডাকি করেছে খুলেনি। একবার শুধু উত্তর দিয়েছিল ও একা থাকতে চায়। ভয় নেই কোনো।

রহমান সবাইকে বলেছে ওকে একা ছাড়তে। একবার যে ভুল করেছিল সে পথ আর বেছে নিবে না তা নিয়ে ভরসা আছে মেয়ের উপর। এদিকে আদরের নাতনীকে এখনি বিয়ে দিতে চায় না রূপজান। বিছানা থেকেই চেঁচামেচি শুরু করেছে। শয্যাগত রুপজান পাটোয়ারী বাড়ি মাথায় তুলেছে চেঁচিয়ে। তার হাঁক-ডাক থামাতে রহমান সেদিকে পা বাড়ালো। এর মাঝে বেলা এসে তার কাছে পারমিশন চাইলো রাইমার সাথে আশপাশ ঘুরবে। রহমান মানা করলো না। বেলাকে রংপুর পাঠিয়ে দিবে তার আগে একটু ঘুরতে চাইলে ঘুরুক। তবে অনেক সাবধানী বাণী আওড়ে তবেই যেতে দিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে। টং ঘরের সামনে বসে চা খাচ্ছে দিগন্ত, রায়হান আর ওদের কয়েকজন ছেলে। রায়হান বিরস মুখে বকবক করছে আর চা খাচ্ছে। দিগন্তের মেজাজ ভালো নেই। ফাহাদের বেলাকে ধরে রাখা দৃশ্যটা চোখে ভাসলেই মাথার রগ ছিঁড়ে যাচ্ছে। শক্ত মুখে একবার চা খাচ্ছে আরেকবার ধোঁয়া উড়তে থাকা সিগারেট এ টান বসাচ্ছে।
হঠাৎ রায়হান ওকে ধাক্কা মারলো। দিগন্ত রাগী চোখে ওর দিকে তাকাতেই রায়হান বলে উঠলো,

‘ সামনে দেখ। তোর লায়লা আসছে সেজেগুজে। ’
দিগন্ত সামনের দিকে তাকালো। বেলার দিকে দৃষ্টি আটকাতে যেয়েও আটকালো না। একপলক দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে আবারো রায়হানের দিকে তাকালো। কণ্ঠে আক্রোশ ঢেলে খিঁচয়ে বলে উঠলো,
‘ তোর চোখ ওদিকে যাবে কেন? কে আসছে না আসছে আমি দেখবো। তোকে দেখতে বলেছি? শয়তানের দল! চোখ সমলায় রাখতে পারিস না শালা। সবার নজর একটা বেয়াদব এ যায়ে থামে। অসহ্য! ’
রায়হান কুটিল হাসলো। দিগন্তের কথা ওকে উস্কে দিল কয়েকদফা। চায়ের কাপটা টেবিলে রাখলো। হাত বাড়িয়ে দিগন্তের বুকে ডলা দিতে দিতে পিঞ্চ করে বললো,
‘ জ্বলে বন্ধু। জ্বলে! খুব জ্বলে না। আমারো এরকম জ্বলে বুঝলি। দেখছিস না জ্বললে কেমন লাগে। চল! আমার বউকে উঠায় দিবি আমার হাতে। ’

ঝটকা মেরে রায়হানের হাত সরিয়ে দিল দিগন্ত। রায়হান ধুপ করে চেয়ার সমেত মাটিতে উল্টে পড়লো। দলের ছেলেরা হু হা করে হাসলো। পরপরই রায়হানকে টেনে উঠালো। রায়হান কোমড়ে হাত রেখে দিগন্তকে বললো,
‘ তোর বুদ্ধি আমি বুঝি দোস্ত। এতো ভালোবাসিস কেন শালা? বউয়ের কোমড় ভাঙা তাই আমারও কোমড় ভাঙে দিলি। দুজনেই একসাথে বেডে পড়ে থাকবো আর তোকে তাড়াতাড়ি মামা বানাব, তাই তো! চাপ নিস না রে পাগলা। তোর ইচ্ছা আমি খুব তাড়াতাড়ি পূরণ করবো। ’
দিগন্ত কড়া চোখে রায়হানের দিকে তাকালো। তা দেখে রায়হান বাঁকা হেসে বললো,
‘ যাহ। তোর লায়লা চলে এসেছে। হেল্প লাগলে আমাকে ডাকিস। আফটার অল আমি তোর থেকে বেশি এগিয়ে আছি। আমার অভিজ্ঞতা বেশি। ’

দিগন্ত রায়হানের দিক থেকে চোখ সরাতে সরাতে বললো,
‘ বা*ল জানো তুমি। ভাদাইম্মা কোথাকার! ’
তারপর হাতের সিগারেটটা কয়েক টানে শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। বড় বড় পা ফেলে বেলার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
রুক্ষ গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ এদিকে কি? ’
সামনের খ্যাটখ্যাটে পুরুষটাকে দেখে হাঁটা থামালো বেলা। চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে নাক ফোলালো। ওড়নার কোণা টেনে নাকে চেপে বলেলে উঠলো,

‘ ছিহ! সরেন। কি দূর্গন্ধ। কি ছাইপাশ গেলেন? বমি আসছে। ’
দিগন্ত বুঝলো বেলা সিগারেটের গন্ধে এরকম করছে। পাশের দোকান থেকে একটা সেন্টার ফ্রুট মুখে পুড়ে আবার আসলো বেলার কাছে। পুনরায় ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
‘ কোথায় যাচ্ছিস? ’
বেলা দিগন্তের দিকে তাকায়নি। চোখ অন্যপাশে রেখে ত্যাড়ছা গলায় জবাব দিল, ‘ বলব না। ’
‘ ব্লক মেরেছিস আমাকে, অসভ্য মেয়ে। ’
‘ আমি মারি না কাউকে। ব্লক অপশন ছিল হাত দিয়ে সেটা করে দিয়েছি। ’
‘ বাড়ি গিয়ে খুলে আমাকে ফোন দিবি। ’
‘ পারব না। ’ তারপর আবার মুখ বাঁকিয়ে ভাব নিয়ে দিগন্তের মতো বললো বেলা,
‘ কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন আমার কাজ আছে। ’

দিগন্ত সরু চোখে বেলার তেজ দেখছে। এমনি সময় বেড়াল আর ওর সামনে এলে বাঘ হয়ে যায় বেলা পাটোয়ারী। ছোট একটা মেয়ে দিগন্ত তালুকদারকে ভাব দেখাচ্ছে। দিগন্ত ভারী গলায় বললো,
‘ এতো সেজেছিস কেনো? মেয়ে মানুষ, রাস্তায় এভাবে বের হবি না। তোর বাপ তোকে এখনো বোরখা ধরায় না কেন? মুখে শুধু বড় বড় কথা। ’
‘ আমার বাপকে বলেন তাহলে। আমি ঘুরতে বের হয়েছি। সামনে থেকে সরে দাঁড়ান। রাইমা অপেক্ষা করছে। ’
মুখের ওপর কথা বলায় ধমকে উঠলো দিগন্ত,
‘ বেলায়ায়া! ’
দিগন্তের ধমক বিরক্তিমাখা গলায় বেলা বললো,

‘ দেখেন! আমি আপনার উপর খুব রেগে আছি। আপনার সাথে আমি কথা বলব না মানে বলব না। আপনি কিছু বুঝেন না, জানেন না। জানেন শুধু ‘বেলায়ায়া’ বলে একটা করে চিকুর দিতে। সরেন! ’
বেলার কথা বলার ধরণ দেখে রাগের মাঝেও হাসি এলো দিগন্তের। ঠোঁট কামড়ে ধরে সামনের লাল-সাদা থ্রি-পিস পরিহিত রমণীকে নরম গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি জানতে হবে? ’
চোখ উল্টানোর ভান করে বেলা বললো,
‘ আমি রেগে আছি দেখেন না? ’

দিগন্ত আদুরে গলায় বললো, ‘ দেখলাম। এখন কিভাবে রাগ ভাঙাবো বলে দেন? ’
দিগন্তের কথায় এতোক্ষনের তেজালো বেলা মিইয়ে গেল। সেকেন্ডের ব্যবধানে চোখজোড়া ছাপিয়ে গেল পানিতে। দিগন্ত নিরব চোখে দেখলো তা। সকাল থেকে মাথায় যে রাগ চেপে ছিল সেটা নিমিষেই গায়েব হয়ে গিয়েছে। এদিকে বেলা নাক টেনে অভিযোগ উগড়ে দিতে শুরু করলো,
‘ আমি ফোন দিলে আপনি বিরক্ত হোন খুব তাই না? আর কোনোদিনও দিবো না। প্রথমে আমার কথা না শুনেই আমাকে গালি দিয়ে ফোন কাটলেন। পরে আবার ফোন বন্ধ করে দিলেন। আমার জ্বর আসলো। সেসব ভুলেও বেহায়ার মতো আমি আবার ফোন দিলাম। পারতেন না তখন কথা বলতে? আপনি ব্যস্ততা দেখালেন। দিন-রাত সবসময় ব্যস্ত থাকেন আপনি। আমি আর বিরক্ত করবো না।’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৩৯

বলতে বলতে কেঁদে দিল বেলা। কান্নারত কাঁপা কাঁপা স্বরে আবার বললো, ‘ আমার রুমে এতোগুলো রিং কেনো রেখেছিলেন? কে হই আমি? মাইশা আপুকে নিয়ে আপনার কত চিন্তা। আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করেন? করবেন কেনো! আমি ছোট মানুষ। কিছু বুঝি না। মাইশা আপু ব্যাথা পেয়েছে বলে আপনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আমার জ্বর এসেছিল তখন তো একবারো খোঁজ নেননি। আপনি খুব খারাপ লোক। ’

দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪০ (২)