দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪২
আফরোজা আশা
রক্তচক্ষু নিয়ে দিগন্তকে দেখছে রহমান। বেলা কাঁদছে। রহমান আর রাসেল মিলে টেনেও দিগন্তকে সরাতে পারছিল না। দিগন্ত বারংবার বেলার কাছে উত্তর চাইছে। অপরদিকে বেলা নিরুত্তর। মুখ দিয়ে টু শব্দটিও বের করেনি।
মিতালী ধরে বেঁধে দিগন্তকে বেলার কাছ থেকে সরিয়েছে। রাগে ফুঁসছে দিগন্ত। ওর থেকে কয়েক হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে জ্বলন্ত চোখে চেয়ে আছে রহমান। বেলা যেভাবে পড়ে ছিল সেভাবে থেকেই নিরবে চোখের পানি ফেলছে। বৃষ্টি এসে ওকে টেনে উঠালো। বেলার নজর একবার রহমানকে দেখছে আবার দিগন্তকে। দুজকেই ভীষণ ভয় পাচ্ছে ও। এর মাঝে রহমান হুংকার ছুঁড়লো দিগন্তের উদ্দেশ্যে,
‘ তোমার সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না। আমার বাড়িতে এসে, আমার সামনেই, আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলো। অত্যন্ত বাজে একটা ছেলে তুমি। কোনো ম্যানার্স নাই তোমার মধ্যে। উগ্র, বেপরোয়া, অসামাজিক আচরণ নিয়ে আবার আমার মেয়ের দিকে হাত বাড়ানোর সাহস দেখাও? খুব তো বড় বড় কথা বলেছিলে, দিগন্ত তালুকদার কথার খেলাপ করে না। এই তার নমুনা? তোমার মতো ছেলের হাতে আমি কোনোদিনও আমার মেয়েকে দিবো না। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। ’
কয়েকটা বড় শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালালো দিগন্ত। অতঃপর রহমানের সামনা-সামনি দাঁড়ালো। গাম্ভীর্যতার সহিত বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ মার খাওয়ার কাজ করেছে, তাই মেরেছি। বাপের কাছে ছোট বাচ্চা আর আমার কাছে এসে বাঘ সাজে। প্রয়োজন ছিল এটা। আর রইল আমার কথার খেলাপ! ’
বলে কিঞ্চিৎ ঠোঁট বাঁকালো দিগন্ত। ইশারায় বেলাকে দেখিয়ে বলল,
‘ আপনার ছোট মেয়ে, যাকে ছোট বাচ্চা বানিয়ে কোলে রাখতে চান ও আদোতে ততোটাও ছোট না। আমি আমার কথাতে পাকা। আপনি পারেননি আপনার মেয়েকে সামলাতে। ’
গমগমে স্বরে রহমান প্রশ্ন ছুড়ল,
‘ কি বলতে চাইছো; বেলা তোমাকে ভালোবাসে? ’
‘ ওর কাছেই শুনেন। আমিও শুনতে চাই ওর উত্তর। জিজ্ঞেস করেন ওকে, ও আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথায় ছিল। শুনেন ওর কাছে, রোজ রাতে মায়ের ফোন থেকে কার সাথে কথা বলে। এতোকিছু করার সাহস দেখাতে পারে, তাহলে যখন সব কথা শুনল তখন কেনো আপনার মুখোমুখি হলো না? কেনো কিছু বলতে পারলো না? দু’নৌকায় পা দিয়ে চলতে চাইছে বেলা পাটোয়ারী। আর সব ভোগান্তি আমার। ওর কারণে দুই পরিবারের ঝামেলা চলছে। বসে বসে মজা নিচ্ছে বেয়াদব মেয়ে। ’
দিগন্তের লম্বা ব্যক্তব্যে কিছুক্ষন ঠায় দাঁড়িয়ে রইল রহমান। দিগন্তের কথায় স্পষ্ট, বেলা দিগন্তের সাথে যোগাযোগ রাখে। মানতে কষ্ট হলো রহমানের। আমেনার দিকে চেয়ে নিভে যাওয়া গলায় বলল,
‘ তোমার মোবাইল আনো। ’
ব্যস কথাটা শুনে ভয়ে অন্তর-আত্মা শুকিয়ে গেল বেলার। আগের কল হিস্টোরিগুলো কাটা হলেও, দুদিন থেকে কাটে নি ও। ব্লক দিয়েছে,খুলেছে আবার কথা বলেছে, এসবের মাঝে কাটতে ভুলে গিয়েছিল। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা বরফে পরিণত হলো বেলার। রহমান জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিবে ও। ওর আব্বু যে দিগন্তকে পছন্দ করে না সেটা জানা সত্ত্বেও দিগন্তকে ভালোবেসে ফেলেছে। কথা বলতে নিষেধ করার পরেও প্রতিনিয়ত কথা বলেছে। আকুল হয়ে থেকেছে দিগন্তের সাথে কথা বলার জন্য। জ্বালিয়েছে ওকে; এটেনশন পাওয়ার জন্য ছটফটিয়েছে।
এসব দেখলে রহমান কষ্ট পাবে। আর আদর করবে না বেলাকে; ভালোবাসবে না আগের মতো। ভেবেই ডুকরে কেঁদে উঠলো বেলা। কোন দোটানায় পড়েছে ও! একদিকে দিগন্ত রেগে আছে, অন্যদিকে রহমান এখনি সব জেনে যাবে। ও যে মিথ্যা বলেছিল তাও জানবে। তারপর! তারপর খুব কষ্ট পাবে ওর আব্বু, ওকে আর বিশ্বাস করবে না। বেলার ছোট মস্তিষ্ক আর নিতে পারল না। ভয়ে,আতংকে হাত-পা ছেড়ে দিল। বৃষ্টি চেঁচিয়ে উঠে ধরলো ওকে। জ্ঞান হারিয়েছে বেলা। সবাই ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
দিগন্ত ওবাড়িতে যতক্ষন থাকলো, না বেলার জ্ঞান ফিরল আর না পাওয়া গেল আমেনার ফোন। সারাবাড়ি খুঁজেছে বাণী আর বৃষ্টি৷ ফোনের খোঁজ নেই। পাবে কিভাবে! দিগন্তকে ফোন করতে নিয়েছিল বেলা, তখনি ওর হাঁক-ডাক শুনে তড়িঘড়ি করে ফোন বালিশের নিচে রাখতে গিয়ে, বালিশের কভারের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে। সে বালিশেই মাথা রেখে এখন আবার শুয়ে আছে।
রহমান দিগন্তের সাথে আর কথা বাড়ানোর প্রয়োজন মনে করলো না। দিগন্ত যা বলছে তা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়! এদিকে অসময়ে বেলার অসুস্থ হয়ে পড়াতে পুরো পরিস্থিতিই ঘেটে ঘ হয়ে গিয়েছে। শেষমেষ দিগন্ত বিরক্ত হয়ে পাটোয়ারী বাড়ি ছাড়ল। তবে যাওয়ার আগে রহমানকে বলে গেল, যদি ওকে নাচিয়েছে তাহলে দুই বাপ-মেয়ের শেষ দেখে ছাড়বে।
পরদিন জুনায়েদ আর জয়নাল আবার এলো রহমানের কাছে। প্রথমদিকে মাফ চেয়ে ভালোভাবে কথাবার্তা বলল। রহমানও স্বাভাবিক ভাবে থাকলো। যাওয়ার সময় মিতালী আর বাণীকে নিয়ে যেতে চাইলে ওদের ওপর চড়াও হলো রহমান। গম্ভীর হয়ে বলল,
‘ আপনারা নিজেরা আগে ঠিক হোন তারপর ওরা যাবে। এ বাড়িতে আমার মেয়ে,বোন আজীবন থাকলেও আমার সমস্যা নাই। ওরা কিছুদিন এখানেই থাকবে। ’
রহমানের কথা শুনে তালুকদারদের গা-পিত্তি জ্বলে উঠলো। তাও কিছুক্ষণ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করল। রহমানের এক কথা সে এখন কাউকে তালুকদার বাড়িতে পাঠাবে না। ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল জুনায়েদের। দিগন্ত যেন ত্যাড়ামি না করে তাই বাধ্য হয়ে এসেছে। এখানে এসে রহমানের একগুঁয়ে দাপটি ভাবভঙ্গিমায় আঁতে ঘা পড়ছে ওর। দাঁতে দাঁত পিষে চুপ ছিল। কিন্তু নিজেকে খোলসের আড়ালে রাখতে পারলো না আর। মুখ খুললো সে।
গতকালের কথার রেশ পুনরায় টেনে আনলো। আরেকদফা কথা কাটাকাটি হলো রহমান আর জুনায়েদের মাঝে। জয়নাল এবার চুপ মেরে ছিল। মিতালী এমনিই ওর ওপর অনেক রেগে আছে। আর বাড়াবাড়ি করতে চায় না ও। জুনায়েদকে ইশারায় কয়েকবার শান্ত হতে বললে শুনল না সে। এক কথা,দু কথায় জুনায়েদ আর রহমানের বিরাট ঝগড়া হলো। রাগ থেকে জেদে পরিণত হলো। এখন জুনায়েদের মুখে এককথা বেলার সাথে দিগন্তের বিয়ে দিয়েই ছাড়বে সে। রহমানও নাছোড়বান্দা,কারো কথা কানে তুলতে নারাজ সে। মেয়ের জন্য যেটা ভালো হবে সে শুধু সেটাই করবে।
জুনায়েদের এবারের ব্যবহারে ক্ষিপ্ত হলো মিতালীও। দিগন্তের জন্য বেলাকে চায় ও। কিন্তু রহমানের সাথে করা জুনায়েদের আচরণ রাগিয়ে দিল ওকে। মিতালী ভাইয়ের সাপোর্ট কেটে চড়াও হলো তালুকদারদের উপর। বউ ক্ষেপেছে দেখে জয়নাল, জুনায়েদকে টেনেটুনে নিয়ে চলে গেল।
ওরা চলে যেতেই রহমান রুমে চলে গেল। সোজা জহিরুল দেওয়ানকে ফোন লাগালো। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে জানালো তিনদিন পর বৃষ্টির বিয়ের দিনেই বেলার আকদ সারতে চান তিনি। তার কথা শুনে জহিরুল খুশি হলো। বিকেলের দিকে জহিরুলের বাড়িতে ফাহাদের বাবাসহ দুই বিয়ের বিস্তর আলাপে বসলো তারা।
ফাহিমের জের ধরে, ফাহাদের বাবার সাথে রহমানের রেশারেশি আছে। কিন্তু ফাহাদকে অপছন্দ করার মতো কিছু খুঁজে পায় নি সে। বাবার সাথে থাকে না ফাহাদ। ওর আলাদা বাড়ি আছে, ভার্সিটির কালচারাল ইন্সট্রাক্টর সে। তাছাড়াও ওর আলাদা মিউজিক ব্যান্ড আছে। খোঁজ-খবর নিয়ে খারাপ কিছু শুনেনি ওর ব্যাপারে, দেখতে-শুনতেও সুন্দর। ফাহাদের বিনয়ী ব্যবহারও রহমানের মনে ধরেছে। দিগন্তের মতো উগ্র নয় সে।
অবশেষে সব কথাবার্তা,ভাবা-চিন্তা শেষে সিদ্ধান্ত হলো তিনদিন বাদে দুই মেয়ের একসাথে বিয়ে দিবে রহমান। এর মাঝেই দুই পরিবার বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে ফেলবে। তবে শর্ত রাখল বিয়ের পরপর বেলা রংপুর চলে যাবে। পড়াশোনা কমপ্লিট করে তবেই বিদায় হবে তার। জহিরুল দেওয়ান আর ফাহাদের বাবা ফজলুল দেওয়ান মেনে নিল তার কথা।
তালুকদার বাড়ির অবস্থা খারাপ। মিতালী নেই, বাণী নেই ঘরবাড়িতে ছাতা পড়েছে। মাইশাও খুব বেশি উঠবস করতে পারছে না। দিশা কাজকর্ম পারে না। রান্না করতে গিয়ে রান্নাঘর এলোমেলো করে ফেলেছিল কিন্তু রান্না করতে পারেনি। দুদিন থেকে বাইরে থেকে খাবার আসছে সেগুলো খাচ্ছে। তৃপ্তি পাচ্ছে না। এমনি সময় মিতালী ডেকে ডেকেও খাওয়াতে পারে না। এখন মিতালী নেই পেটে যেন ওর বাঘ ঢুকেছে। কিছুক্ষণ পরপর খিদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মাইশা ব্যাথা কোমড় নিয়ে একবেলা রান্না করেছিল। সেটা খেয়ে দিন পার করেছে দিশা।
বাড়ির পরিবেশও কেমন ছন্নছাড়া। জুনায়েদ, জয়নাল সারাদিন বাড়িতে থাকে না। দিহান রান্নার বুয়া এনেছিল, সে রান্না রুচেনি দিশার। তখনি বাদ দিয়েছে। দুদিন থেকে দিগন্তের কোনো খোঁজ-খবর নেই। হয়তো ক্লাবেই পড়ে আছে, নয়তো রায়হানের সাথে আছে। এসবে অতিষ্ট হয়ে, দিশা ভেবেছিল ও পাটোয়ারী বাড়ি চলে যাবে। কিন্তু মাইশা জার্নি করতে পারবে না এখন।
বিকালের দিকে বাগানের দিকে হাঁটতে বের হয়েছিল দিশা। নাস্তা হাতে সেখানে হাজির হলো রতন। রতনের হাতে ভাজাপোড়ার প্যাকেট দেখে চকচক হলো দিশার চোখজোড়া। ফোন রতনের হাতে ধরিয়ে, খাবার নিয়ে সেখানেই খাওয়া শুরু করে দিল।
দিশার কাজ দেখে হাসলো রতন। ঠাট্টার স্বরে বলল,
‘ এতো খাইস না মোটি; মোটা হয়ে যাবি দেখিস। ’
হাতের চপটা মুখে পুড়ল দিশা। পরক্ষনেই রতনের বাবড়ি চুলের এক গাছা মুঠো করে ধরে টান লাগালো। চোখমুখ কুঁচকে নিয়ে রতন বলে উঠল,
‘ এই জন্য তোর সামনে আসি না। চুল টানাটানি না করে মুখে বলতে পারিস না। ’
দিশা মুখের খাওয়াটুকু শেষ করে ঢেঁকুর তুলল। রতনের চুলে জোরে টানা দিয়ে ছেড়ে দিতে দিতে বলল,
‘ তোর এই পাখির বাসার মতো ঝাঁকড়া চুল দেখলেই আমার টানতে ইচ্ছা করে। এগুলা নিয়ে ঘুরিস কিভাবে? ভারী লাগে না। ’
প্রতিবার দিশার কথায় এই প্রশ্নটা থাকেই। এবারেও শুনে দুপাশে না ভঙ্গিতে মাথা নাড়াতে নাড়াতে হাসলো রতন। কিন্তু দৃষ্টি হাতে থাকা দিশার ফোনে পড়তেই মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেল। লক স্ক্রিনে বিরজমান পুরুষটাকে দেখে থমকালো ও। ক্ষুব্ধ হলো মন।
রতনের চাহনি দেখে দিশাও সেদিকে তাকাল। স্ক্রিনের আলো দেখে ঝট করে ফোনটা কেড়ে নিল রতনের কাছ থেকে। ফাহাদের একটা ছবি ওয়ালপেপার দিয়েছে ও। খাওয়ার তালে ভুলে গিয়েছিল সে কথা। রতন দেখেছে, এখন হয়তো ছেলেটার সম্পর্কে জানতে চাইবে। অবশ্য রতনকে বলতে সমস্যা নেই দিশার। সেই ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে। ছেলেটা দিগন্তের মতো বেপরোয়া, ছন্নছাড়া কিন্তু ভালো,বিশ্বাসযোগ্য। ওর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কোনো অবনতি ঘটেনি কখনো।
রতন গম্ভীর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল দিশার উদ্দেশ্যে,
‘ ফাহাদের ছবি তোর ফোনে কেন? ’
রতন ফাহাদকে চেনে দেখে অবাক হলো দিশা। মেকি হেসে বলল,
‘ চিনিস তুই? সুন্দর না ছেলেটা? এটার উপরেই সর্বশেষ ক্রাশ খাইছি। কিন্তু জানিস, ফ্লার্ট করতে পারতেছি না, প্রেম করতেও পারতেছি না। পোলাটা মেসেজ সীন করে নাই। ’
ভেতরে ভেতরে জ্বলে উঠল রতনের। দিশার দিকে রাগীভাবে তাকিয়ে বলল,
‘ ফাহাদ, দিগন্ত ভাই জাতশত্রু। ওই ছেলের সাথে কথা বলবি না। ভাইয়ের কানে গেলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে। ’
কথাটুকু বলে হনহন করে চলে গেল রতন। দিশা কপাল কোঁচকালো। পরক্ষণেই ভেংচি কেটে উড়িয়ে দিল রতনের কথা। কি হয় হোক! ওর মন কেড়েছে ফাহাদ। প্রেম তো করেই ছাড়বে।
বিয়ের তোড়জোড় চলছে পাটোয়ারী বাড়িতে। আজ বাদে কাল বৃষ্টির বিয়ে। বিকেলের প্রহর চলছে। সন্ধ্যার পর বৃষ্টির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। বাগানের দিকটা বেশ বড় সড় করে সাজানো হয়েছে। সবাই জানে বৃষ্টির বিয়ে। সেই আমেজেই মেতে আছে।রহমান আর রাসেল বেলার বিষয়টা বাড়ির কাউকে জানায়নি এখনো। মিতালীর কানে গেলে হয়তো তালুকদার বাড়িতে খবর পৌঁছে যাবে। ওরা এসে আবার ঝামেলা করবে। তাই একেবারে বিয়ের আগে আগে জানাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সেদিন বেলার জ্ঞান ফেরার পর, আগে কল ডিটেইলস ডিলিট করেছে। অবাক হয়েছিল বেলা! রহমান এখন পর্যন্ত ওকে কোনো প্রশ্ন করেনি। তালুকদাররা যাওয়ার পর থেকে পাটোয়ারী বাড়ির পরিবেশ স্বাভাবিক। সবাই নিজ নিজ কাজ সামলাতে ব্যস্ত। বিয়ে বাড়ির কাজ অনেক! বেলা আর বৃষ্টি বাদে সবাই ছোটাছুটি করে কাজ করছে।
সন্ধ্যার পর অনেকটা জাক-জমকভাবে বৃষ্টির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। দেওয়ান বাড়িতে থেকে হলুদের ডালা এলো। সবাই সেজেছে, বৃষ্টির গায়ে হলুদের ছোঁয়া দিচ্ছে।
অপরদিকে, শাড়ি পড়েছে বেলা। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও রিনা পড়িয়েছে ওকে। হালকা সাজিয়েও দিয়েছে। ভালো নেই বেলার মন। সেদিন রহমানের সাথে রাগারাগি করার পর থেকে দিগন্তের আর কোনো খোঁজ পায়নি ও। আমেনার ফোন থেকে অনেকবার ফোন দিয়েছে। রিং হয়েছে কিন্তু ধরেনি। দিগন্ত ওর ওপরে রেগেছে খুব। দিগন্ত চায় বেলা নিজে থেকে রহমানকে জানাবে, ও দিগন্তকে ভালোবাসে। কিন্তু বেলা সে সাহস করতে পারছে না। দিগন্তের সাথে দুদিন ধরে কথা বলতে না পেরে পাগলপ্রায় অবস্থা ওর। বুক ভার হয়ে আছে,দম বন্ধকর লাগছে সবকিছু,চঞ্চলতা নিভে গিয়েছে। আর না পেরে ভেবে রেখেছে বেলা বৃষ্টির বিয়ের পর দিগন্তকে নিয়ে ওর মনে যা আছে সব বলে দিবে রহমানকে।
দিগন্তবেলার প্রেমান্দোলন পর্ব ৪১
ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ফাহাদ। বৃষ্টিকে হলুদ দিতে গিয়ে বেলার ছবি পাঠিয়েছে ওর কাজিন। সেই থেকে অপলক চেয়ে আছে সেদিকে। কাঁচা হলদে রঙের শাড়িতে হালকা সেজেছে বেলা। এটুকু সাজেই মানিয়েছে ওকে। ফুটে উঠেছে ওর রূপ-সৌন্দর্য্য। ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি টেনে বারংবার ছবি জুম করছে আর দেখছে ফাহাদ। শান্তি পাচ্ছে না তাতে; মন-প্রাণ জুড়াচ্ছে না। আজ রাতটুকু শুধু। কাল পাশে বসিয়ে বেলাকে স্বীয় বধূরূপে দেখবে ফাহাদ। আর একরাতের কথা ভাবলেই এক যুগের ন্যায় ঠেকছে ফাহাদের কাছে।