দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৯

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৯
অবন্তিকা তৃপ্তি

গুড়ুমগুড়ুম মেঘের গর্জন। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে ভীষণ শব্দে। আবহাওয়ায় নেমে এসেছে ভীষণ শীতলতা। অরূপ-নিধি আজ আবারো বাইরে বেরিয়েছিল। নিধিকে কেমো দিয়েছে আজ। এখন বাইক দিয়ে ওরা বাড়ি আসছিল।আচমকা বেনামী বৃষ্টির খপ্পরে পরে ওরা দুজনেই কাকভেজা। নিধির সুতির শাড়িটা ভিজে লেপ্টে গেছে গায়ের সঙ্গে। অরূপের সাদা শার্টটাও ভিজে চিপচিপে একদম। অরূপ বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিয়েছে, যত দ্রুত পারে পৌছানো লাগবে বাসায়। নিধি শাড়ির আঁচলটা টেনে গা ঢেকে আবারও আশেপাশে তাকাল। কেউ কেউ তাকাচ্ছে নিধির দিকে। ওই চাওয়া যে কেমন সেটা নারী নিধি ভালোই বুঝে। নিধি এসব দেখে নিধির আরও খারাপ লাগছে। ও অরূপের কানের কাছে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো- ‘আমাদের আর কতক্ষণ লাগবে?’

অরূপ এক হাতে মুখের পানি মুছলো, বললো-‘আর পনেরো মিনিট হায়েস্ট।’
নিধি আবারও আশেপাশে তাকাল, অনেক বুড়ো লোকও শেষ অব্দি অদ্ভুত চোখে তাকাচ্ছে। নিধি এবার একেবারেই অতিষ্ট হয়ে গেল। বয়স হলেও কিছু পুরুষের ছুকছুক স্বভাব যায়না। ও তাই অরূপের দিকে ঝুঁকে বললো-‘একটু তাড়াতাড়ি যান প্লিজ, সবাই দেখছে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অরূপ বুঝল না, আশেপাশে গাড়ি-ঘোড়ার ভীষণ শব্দ। ও একটু জোরে জিজ্ঞেস করলো-‘দেখছে? কী দেখছে?’
নিধি এবার আরো অস্বস্তিতে পরে গেল। অরূপ স্বামী, কিন্তু এখনও ওরা নিজেদের নিকট ততোটা স্পষ্ট নয়। জড়তা এখনও রয়ে গেছে নিধির মধ্যে। অরূপ চাইছে সেটা কাটানোর জন্য। নিধিও তেমনি ভাবে সমান চেষ্টা করছে।
নিধি এবার ঠোঁট চেপে শাড়ির আঁচলটুকু আরো কাঁধে টেনে বললো-‘আমি ভিজে গেছি ভীষণ। ভেজা শাড়িতে হয়তো সব বুঝা যাচ্ছে।’

অরূপ এবার ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল, নিধির কাচুমাচু অবস্থা দেখে যা বোঝার বুঝলো। ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বললো-‘আমাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।’
বলা বাহুল্য, অরূপ-নিধির সম্পর্কটা ‘আপনি’ থেকে ততদিনে ‘তুমি’ তে নেমে এসেছে।
অরূপের কথায় নিধি থামল, অবাক হলো; বললো-‘কী?’’
অরূপ আবারও বলে উঠল-‘জড়িয়ে ধরো। ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকো, আমরা পৌঁছে গেছি অলমোস্ট।’

নিধি কী করবে ভেবে পেল না। অরূপ আবারো তাড়া দিলো।
এবার লজ্জাগুলো কে গলা টিপে মেরে নিধি একসময় অরূপকে জড়িয়ে ধরলো। অরূপ কিছুটা থমকে গেলো। ও একটু সামনে ঝুঁকে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার ঘাড়ে লুকানো বৌটাকে একবার দেখে নিল। তারপর হালকা হেসে আবারও সামনে তাকালো। নাজুক বৌ তার, এটুকুতেই অস্থির। অরূপ যখন ছুবে, কোথায় পালাবে? পালানোর রাস্তা অরূপ পাথর ঢেলে বন্ধ করে দিবে সেদিন, আশেপাশে নিধি কাউকে পাবে না। চোখের সামনে দেখনে অরূপের চোখ-দুটো।

ছটফটে নিধি সেদিন ওর চোখে নিজের মরণ দেখবে। ও মরণ সুখের, আনন্দের, এবং তৃপ্তির।
মনেমনে এসব ভেবে অরূপ ফেলল একটা দীর্ঘশ্বাস! কাউকে না পাওয়ার, কাউকে আপন না করার আফসোস বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাসে!
এসব চিন্তা ভাবা অব্দিই আটকে আছে এতদিন ধরে।

ওরা বাড়িতে পৌঁছালো দশ মিনিটের মধ্যেই। ওয়াহিদা বসার ঘরে ওদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন। কলিং বেল বাজলো, উনি উঠে দরজা খুলে দিলেন। নিধি শাশুড়িকে দেখে শাড়ির আঁচল মাথায় তুললো ঝটপট। ওয়াহিদা ছেলের বউকে দেখে, ছেলের দিকে তাকালেন। অরূপ তখন বাইকের চাবি পকেটে ঢুকাচ্ছে।
ওয়াহিদা ছেলেকে কাকভেজা দেখে মুহূর্তেও হইহই করে উঠেন-‘জ্বর উঠবে রে আজকে দুটোর। দ্রুত রুমে যা, ফ্রেশ হ। আমি উপরে চা পাঠচ্ছি।’

অরূপ এগিয়ে গেলো। মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আহ্লাদ দেখিয়ে মায়ের শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথাটা মুছে ফেলল। ওয়াহিদা এতেই যেন গলে গেলেন। ছেলে দুটো মস্ত ফাজিল ওয়াহিদা জানেন। কিম্তু সন্তান তো। বুকের নাড়ি ছেড়া ধন। ওয়াহিদা মিষ্টি হেসে আঁচল টেনে অরূপের চুল মুছে দিলেন। বলতে লাগলেন-‘এখনো বড় হলি না, কদিন পর বাচ্চার বাপ হবি।’

অরূপ মায়ের আঁচল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে মৃদু হেসে নিধির দিকে চাইলো। নিধি কোনঠাসা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো মা-ছেলের আহ্লাদ।অরূপের ওমন দুষ্টু চাওনি দেখে ও চমকে উঠে সঙ্গেসঙ্গে মুখ লুকিয়ে ফেললো। ওয়াহিদা ছেলের চুল মোছা শেষে হেসে বললেন-‘এবার যা ফ্রেশ হো। ঠান্ডা লেগে যাবে তো বাবা।’
ওয়াহিদার কাতর গলা। অরূপ হাসল। মা-কে হালকা করে জড়িয়ে ধরে আবার ছেড়ে দিয়ে বললো-‘অভ্যাস আছে, মা কিছু হবে না।’

ওয়াহিদা তবুও তাড়া দেখালেন। অরূপ নিধিকে নিয়ে উপরে এলো।
বাইরে মেঘের ভীষণ গর্জন দিচ্ছে। নিধি দ্রুত শাড়ি-তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে দৌঁড় দিল। অরূপ তাই গেস্ট রুমের বাথরুমে গেলো গোসল নিতে।
তারপর- তারপর অরূপ যখন রুমে আসলো, নিধি তখন চুল তোয়ালে দিয়ে ঝাড়ছে। হাত-পা শীতে অত্যাধিক ফ্যাকাশে হয়ে আছে, কিছুটা কুচকেও গেছে। নিধি শীতে কাঁপতে কাঁপতে চুলের পানি ঝাড়ছে।
অরূপ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অদ্ভুত চোখে নিধিকে দেখেই যাচ্ছে। ওর হাতে তোয়ালে। চুল ঝাড়ার সময় শাড়ি সরে হঠাৎ নিধির উন্মুক্ত পেট দেখা গেলো।

অরুপ থমকে গেল। করছেটা কী নিধি? অরূপের দম বন্ধ লাগছে। মেরে ফেলবে এই মেয়ে আজকে অরূপকে। অরূপ শুকনো গলা ভিজিয়ে নিলো লালায়। হালকা কেশে নিধিকে সতর্ক করার চেষ্টা করে রুমে ঢুকে সিটকিনি দিলো। নিধি অরুপকে দেখে মৃদু হাসি দিয়ে আবারো চুল ঝাড়ায় ব্যস্ত হয়ে গেল।
অরূপ তোয়ালে বারান্দায় মেলে বিছানায় গিয়ে বসলো। বিছানায় বসে ফোনে চোখ রাখার বাহানায় চুরি করে বারবার নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে দেখছে। দেখছে স্ত্রীর সুগঠিত আকর্ষণীয় কায়া, নারীদেহের আবেদনমী ভাঁজ!অরুপ হঠাৎ করেই উপলব্দি করলো, নিধি ভীষণ, ভীষণ সুন্দর। যাকে বলে অরূপের মাথা ধরিয়ে দেবার মতো সুন্দর। চোখের সামনে নিজের সুন্দরী বৌকে দেখে বুকটা লাফাচ্ছে অরূপের।

যা ওর মন চাইছে, তা হবে না ভেবে ও মাথা ঝাড়া দিয়ে বাজে চিন্তা দূর করার চেষ্টা করলো। কিন্তু ও আর তাকাবে না ভাবলেও; বারবার , বারবার তাকাচ্ছে। অভদ্র-চূড়ান্ত অসভ্যের মতো করে বারবার চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে বউটিকে।

একসময় ভীষণ গর্জন হলো, তারপর আচমকা সমস্ত বাড়ির আলো বন্ধ হয়ে গেলো।
অন্ধকারে নিধি আঁতকে উঠল যেমন। ও অন্ধকারে ড্রেসিং টেবিল একহাতে ধরে আশেপাশে তাকাল। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নিধি ভয়ে ভয়ে বললো-‘অরুপ,আপনি রুমে আছেন? অরূপ?’
অরূপ শোনে ! ও সেভাবেই বসে আছে, নড়লো না জায়গা থেকে। বসে থেকেই কান দিয়ে অনুভব করলো নিধির ছটফটানি।

নিধি জবাব না পেয়ে হাত বাড়িয়ে ধীরে ধীরে পা এগোতে এগোতে খুঁজতে খুঁজতে বিছানা অব্দি এলো।হঠাৎ হাতে স্পর্শ পেলো একটা রুক্ষ মুখের, খোঁচা খোঁচা দাড়ির। অরূপ শ্বাস আটকে বসে আছে। নিধি অরূপের মুখ স্পর্শ করা মাত্রই লজ্জায় সঙ্গেসঙ্গে সরে গেলো। কাপা গলায় বললো-‘আপনি এখানে?’
অরূপ উঠে দাঁড়ালো। অন্ধকারের মধ্যেই নিধি অনুভব করল, তার গালে ছোট্ট চুমুর। নিধি চমকে উঠল। চোখ বড়বড় করে ফেলল। অরূপ চুমু খেয়ে ধরা গলায় বললো-‘নাহ, আমি এখানে।’

নিধি কথা বলতে পারল না। ওর গলার কথা ফুরিয়ে গেলো। বিস্মিত ভাবে গালে হাত দিয়ে থম মেরে বসে রইলো। কী যেন হলো অরূপের। আজ রাতেই ওর সমস্ত সংযম ভেঙে গেলো। অরূপ এবার নিধির ঘাড়ে মুখ ডুবালো, ঘাড়ে ছোট ছোট চুমু খেয়ে ধরা গলায় বললো-‘এখানে আমি,তোমার এই নরম ঘাড়ে।ঘাড়ের ওই শক্ত ক্ল্যাভিকলের খাঁজে।’
নিধি শাড়ির আঁচল খামছে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।অরুপের ওমন গাঢ় চুমুতে বারবার ঘাড়টা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। অরূপ চুমু খেতে খেতে নিধির গলায় আসল, নিধি ততক্ষণে চোখ বুজে ফেলেছে আবেগে। সুখের আতিশয্যে মুর্ছা যাওয়ার পথে। ও এসব অত্যাচার সইতে না পেরে অরূপের পেটের কাছের টিশার্ট দুহাতে খামছে ধরল। অরূপ গলায় মুখ ঘষে মিহি স্বরে বললো-‘আমি এখানেও। তোমার গলার নিচে,আরো নিচে। আরো আরো নিচে।’

নিধি চোখে জল জমে গেছে। অরূপের মারাত্মক চুমু নিধির গলার মধ্যে ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। নিধি এত সুখ, এত যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না আর। ও এবার ঝাপটে ধরলো অরূপকে। অরূপও সঙ্গেসঙ্গে জড়িয়ে ধরলো তার আবেগে নুইয়ে পড়া বৌটাকে। নিধি অরূপের ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বড়বড় শ্বাস ফেলছে।ঘাড়ের কাছে শ্বাসের উত্তাপে অরূপের বেহাল অবস্থা। ও আবারো নিধির ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো। দুহাতে নিধির পিঠ আকড়ে ধরল। নিধি কাঁপছে। এমন মারাত্মক স্পর্শ ওর তন-মন-রুহ ওব্দি কাঁপিয়ে তুলছে।

হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে এলো। অরূপ তখনো থামছে না। ও বড্ড বেপরোয়া আজ। নিধি ততক্ষণে সম্বিত ফিরে পেয়ে তাৎক্ষনিক অরূপকে ছেড়ে দিয়েছে লজ্জায়। কিন্তু অরূপ ছাড়লো না। ওর মাথাতে আজ কিচ্ছু নেই, কিচ্ছু না।সম্পূর্ণ মাথা জুড়ে শুধু নিধি থেকে গেছে। নিধি, বউ ওর, বৌটা হালাল ওর জন্যে। এসব চিন্তা খুব বাজেভাবে উষ্কে দিচ্ছে অরুপকে।

অরূপ থামলো কিছুসময়ের জন্যে। পাঁজকোলে তুলে নিলো নিধিকে। নিধির হাত থেকে তোয়ালে মাটিতে পড়ে গেলো। আঁচল মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। অরূপ নিধিকে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বিছানায় শোয়ালো। নিধির এবার বড্ড ভয় লাগছ। অরুপকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। অরূপ যেন এই দুনিয়াতেই নেই। অন্য দুনিয়ায় হারিয়েছে।
অরুপ নিধির উপর আধোশোয়া হতেই নিধি দুহাতে আটকে দিল অরূপকে। অরূপ ওই বাঁধা একটুও মানলো না। বরং হাতদুটো নিজের একহাতে চেপে বালিশে ঠেসে ধরে আবারো গলায় মুখ ডুবালো। গলায় গাঢ় চুমুর উপলব্ধিতে হার মেনে চোখ বুজে ফেললো নিধি।

একটাসময় নিধি যখন পুরোপুরি ডুবে গেলো অরূপের মধ্যে, অরূপের তখন হুশ ফিরলো। ও আচমকা থেমে গেলো। নিধির গলা থেকে মুখ উঠিয়ে ফেললো দ্রুত। নিধি ধীরে ধীরে চোখ খুললো।অতি আবেশে টলমল করছে ওর চোখ-দুটো। অরূপ নিধির টলমলে ভেজা চোখের দিকে চেয়ে বড্ড খারাপ লাগা অনুভব করলো। এসব কী করতে যাচ্ছিল ও? অরূপ নরম গলায় বললো-‘আমি, স-সরি অনুমতি নিতে ভুলে গেছি।তুমি যদি না চাও—‘
নিধির বড্ড রাগ হলো।এতকিছু করে এখন ন্যাকামো হচ্ছে? ফাজিল পুরুষ! ও অরুপের টিশার্টের কলার চেপে ধরলো শক্ত করে, টেনে নিলো ওকে নিজের উপর। অরূপের বুকে নাক ঘষল আদুরে ভঙ্গিতে। অর্থাৎ ও বোঝাচ্ছে, অনুমতি আছে, নিজেকে পুরোটাই দখল করে নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে নিধি স্বামীকে।

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ২৮

অরূপ অবাক হল ভীষণ। তাকাল নিজের বুকের মধ্যে গুটিসুটি হয়ে লুকিয়ে থাকা আদুরে বৌটার দিকে। পরপর শব্দ করে হেসে উঠলো। নিধি এবার লজ্জায় পরে গেলো ভীষণ। লজ্জায় খামছে দিলো অরূপের বুকে। লাজুক গলায় কিছু একটা বলতে চাইলো-‘আ–আমি আপনাকে মেরে—‘
অরূপ আর নিধিকে কিছু বলতে দিলো না। আচমকা ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে বন্ধ করে দিলো কণ্ঠের সকল শব্দ।

দীঘির জলে কার ছায়া পর্ব ৩০