দুষ্টু বউয়ের ডেভিল বর পর্ব ৬+৭

দুষ্টু বউয়ের ডেভিল বর পর্ব ৬+৭
writer:Nurzahan akter allo

সাদনানের বাবা মা সাদনানের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে,সাদনান হুট করে এভাবে চিৎকার করে উঠলো কেন?সাদনানের মা বুঝতে পারছে নুর কিছু করছে,তাই সাদনানের দিকে না তাকিয়ে অন্য কথা তুললো।আর নুর সাদনানের পায়ে ওর পায়ের নখ বসিয়ে চেপে ধরে আছে।বেচারা সাদনান না পারছে বলতে আর না পারছে কি করতে?আজ ওদের রিসিপশনে জন্য পুরো বাড়িটা সাজানো হচ্ছে, চারপাশে বিভিন্ন রকমের লাইট আর বিভিন্ন কাপড় দিয়ে সাজানো হচ্ছে। চারদিকে বাচ্চারা হইচই, সবাই বিভিন কাজে ছোটাছুটি করছে।সাদনান ওর কিছু কাজের জন্য বাসার বাইরে গেছে।নুর বসে বসে সাদনানের ভাবিদের সাথে গল্প করছে,নুরকে ওরা বিভিন্ন কথা বলে লজ্জা ফেলার চেষ্টা করছে বাট নুর বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের থেকে এড়িয়ে যাচ্ছে। নুর মনে মনে ওদের গুষ্ঠী উদ্ধার করছে আর ওদের সামনে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখছে।

ভাবিরাঃআমার দেবর কিন্ত তোমাকে খুব ভালবাসে,কালকে রাতে যে সাদনান তোমাকে রুম থেকে বের করবে না।এটা আমরা খুব ভাল করেই জানি,,তবুও ওকে বকা দিলাম,,,
নুরঃ(হুমম দিয়ে আমার গুষ্ঠী উদ্ধার করছেন,), না মানে আসলে আমাকে খুব রাগিয়ে দিয়েছিল এজন্য বকা খাওয়ালাম।
ভাবিঃহুম তাহলে একসময় আদর দিয়ে পুষিয়ে দিও কেমন??
নুরঃআজ যদি আমার বাড়ি হতো তাহলে আপনাদের কি হাল করতাম?আল্লাহ গো আমার মুখে ব্রেক দাও,, না জানি মুখের ব্রেক কতটুকু সময় ধরে রাখবো।একবার আমার মুখের ব্রেক ছুটে গেলে না জানি এদের হাল কি হবে?(মনে মনে)??
ভাবিরাঃ আচ্ছা তুমি এখন একটু বিশ্রাম নাও,,একটু পর পার্লার থেকে লোক আসবে তোমাকে সাজাতে।আমরা গেলাম,,
নুরঃ(যাক বাবা বাচা গেল)জি ভাবি??
উফফ বাবা রে বাবা এই বিয়ে না বোঝা,বাপী তুমি আমাকে কোন গ্যাড়াকলে পাঠালো।উরি মা এই হুকোমুখোটা তো সেই handsam

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

দেওয়ালে লাগানো সাদনানের ছবি দেখে কথটা বললো,সাদনান খুব শৌখিন একটা ছেলে সেটা ওর রুম দেখলেই বোঝা যাই।রুমের মাঝখানে বেড,তারপাশে সেন্টার টেবিল,, একটা বই রাকা সেল্ফ, সেখানে বিভিন্ন ধরনের গল্প বই। একটা আলমারিও সাথে বিভিন্ন ধরনের আসবাব পএ দিয়ে রুমটা সাজানো।
রুমের প্রতিটা জিনিস লেটেস্ট মডেলের, ছেলেটার চয়েজ আছে বলতে হবে।
নুর ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখছে,আর মনে মনে ভাবছে একটা ছেলে এত গোছালো হয় কি করে?আমি নিজেই একটা মেয়ে হয়ে অগোছালোর চূড়ান্ত সীমানায়। আমার রুমটা আমি কোন কোনদিন গুছিয়ে রাখতে পারি নি,,।
নুরঃইসস আমার রুমটার জন্য এখন খুব কষ্ট হচ্ছে? থাক মন খারাপ করে কি হবে?একদিন তো মরেই যাবো রুম গুছিয়ে কি হবে?কি আর করা রুম গুছাতে তো পারি না এই বলে মনকে এখন শান্তনা দেয়।তবে এই ডেভিল টা তো সাজাতে পারে আমি আর শিখে কি করবো?ওকে দিয়েই সব কাজ করিয়ে নিবো??
সাদনানে বিভিন্ন পোজ দিয়ে তোলা অনেক ছবি দেওয়ালে ফ্রেম বন্ধী করা আছে,নুর একটা পিক নিয়ে পাশের টেবিল থেকে সিগনেচার পেন দিয়ে চোখ মুখ একে দিল,,,

নুর সাদনানের ছবিটা নিয়ে নিজ ইচ্ছে মত কালি দিয়ে একে আবার ঠিক করে সাজিয়ে রেখে দিল।নুর বসে বসে সাদনানের রুমের যে একুরিয়াম আছে ওটার মাছগুলো কে দেখছিলো।
একবার উঠে খাবার দিল তারপর আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে শুয়ে মাছ দেখতে দেখতে একসময় ঘুমিয়ে গেল?।সাদনান বাসায় ফিরে ওর রুমে চলে গেল,রুমে ঢুকে দেখে নুর বাচ্চাদের মত করে ঘুমাচ্ছে।
সাদনান হেসে নুর দিকে এগিয়ে গেল,হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা বিছানায় রেখে দিল।
সাদনান নুরের মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,নামের মত নুরের মুখে নুর আছে আর খুব মায়াবি একটা মুখ।
এই মেয়েকে দেখলে কেউ বলবে না এই মেয়েটা এত দুষ্টু। সাদনান আর একটু এগিয়ে নুরের কপালে ঠোঁট ছোয়ালো,,।
সাদনান একটু মুছকি হেসে আবার ঠোঁট ছোয়াতে যাবে তাকিয়ে দেখে,,নুর ওররদিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে,??সাদনান এবার

সাদনানঃইয়ে মানে তোমার মুখে মশা বসেছিলো,তাই তাড়ানোর জন্য এখানে বসেছি??
নুরঃঢপ মারার জায়গা পাস না লুচু পোলা।তুই লুচুপোলা সেটা আমি খুব ভাল করেই বুঝে গেছি।
সাদনানঃ আচ্ছা বাদ দাও তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও, এখুনি নাকি পার্লার থেকে মেয়ে আসবে,মা আমাকে তোমাকে ডাকার জন্য পাঠিয়েছে??
নুরঃএই যে আপনার নাম টা কি যেন?
সাদনানঃবিয়ে করছে অথচ বরের নাম জানো না??।যাই হোক এলিয়েনদের কিছু মনে থাকে না।আমার নাম সাদনান,,
নুরঃসে যাই হোক,আপনার নাম মনে রাখতে আমার বয়েই গেছে
সাদনানঃ???

নুর উঠে ওয়াশরুমে গেল আর সাদনান ওর ড্রেস বের করে নিল,নুর ওয়াশরুমে থেকে বের হলো।নুরের মুখে ফোটা ফোটা পানি,তার উপরে কেবল ঘুম থেকে উঠছে,নুরকে যেন সদ্য ফোটা গোলাপের মত লাগছে।
সাদনান নুরকে যত দেখছে,বার বার একেক রুপে একেক রকম লাগছে।নুর এগিয়ে আসতেই সাদনান নুরের হাতে একটা প্যাকেট তুলে দিল।
নুর কিছু বলার আগের সাদনান ওর ড্রেস নিয়ে শুভোর রুমে চলে গেল।নুর প্যাকেট খুলে দেখে খুব সুন্দর ডিজাইন করা একটা লেহেংগা,পেষ্ট কালারের পুরো ভারি কাজ করা,পেষ্ট কালারের উপর গোল্ডেন পাথরের কাজ।
সাদনান নিজে হাতে ডিজাইন চুজ করে দিয়েছে, ওদের দুজনের ড্রেসের ডিজাইন একই রকম।নুর লেহেংগাটা দেখে খুশি তে উরাধুরা নাচানাচি শুরু করলো??।

দরজায় কে যেন নক করলো,আর নুর ভদ্র মেয়ের মত বিছানায় দুম করে বসে পড়লো।পার্লার থেকে মেয়েরা এসেছে নুরকে সাজাতে,ওরা নুরকে সাজাতে বসলো।সাদনানকে ওর বাবা নুরের বাবার সাথে কথা বলার জন্য ডেকেছে,সাদনান হাসিমুখে সবার সাথে কথা বললো।সাদনানের মা সাদনানকে রেডি হয়ে আসতে বলো,সাদনান ওর ওয়াচ টা নিতে ভুলে গেছে, তাই ওর রুমে ঢুকে পড়ে।সাদনান রুমে ঢুকে ওর চোখছানাবড়া হয়ে গেছে,নুর লেহেংগার উপরের ব্লাউজ টা পড়ে নিচে লেহেংলাটা পড়ে ওড়না ছাড়া দাড়িয়ে আছে।
পার্লারের মেয়েরা সাদনানকে দেখে দাড়িয়ে গেছে,আর নুর উল্টো ঘুরে বার বার বলছে হুক গুলো লাগিয়ে দিন প্লিজ, উফফ দিন তারাতারি,নুর সাদনানকে দেখে নি,কারন নুর উল্টো ঘুরে ছিলে তখন,,।
সাদনান নিজেই থতমত খেয়ে গেছে,,সাদনান মাথা নিচু করে নেয়।
সাদনানঃসরি আমি জানতাম না আপনারা এসে গেছেন।আমিই ভুল করে ঢুকে গেছি, আমার রুম তো তাই নক না করেই ঢুকে পড়ছি,,
পার্লারের মেয়েঃit’s okk sir
সাদনানের কথা শুনে নুর চুলগুলো পেছনে দিয়ে দেয়,আর সাদনান ওর ওয়াচ,হেয়ারের জেল আর কিছু জিনিস নিয়ে দ্রুত পায়ে হেটে যাই।

আর নুর সাদনানের চৌদ্দ গুষ্ঠীকে গালি দিয়ে উদ্ধার করতে থাকে,সাদনান খুব ভাল করেই জানে নুর এর শোধ তুলেই ছাড়বে।
সাদনান তো আর ইচ্ছে করে করে নি,এটা তো আর ফাজিল মেয়েটা বুঝবে না।সাদনান শুভোর রুমে গিয়ে ডোর লক করে, বিছানায় দুম করে চার হাত পা ছাড়িয়ে শুয়ে পড়ে।আর মনে মনে ভাবতে থাকে,,
সাদনানঃওর সামনে আর কিছুক্ষন থাকলে, আমি মরেই যেতাম।
omg আমি কল্পনা করতে পারি নি আমার দুষ্টু বউকে এতটা ভাল লাগবে,আমার চুজ করে দেওয়া লেহেংগাতে।উফফ নুর আমি তোমাকে কি করে বোঝায়,তোমাকে এই লুকে দেখে আমি কনফিউজড।আমি তোমাকে হুট করে দেখে সত্যি অবাক হয়ে গেছি।
অামি অনেকের মুখে শুনেছি প্রিয় মানুষ টা নাকি সামনে থাকলে নাকি দ্রুতগতিতে হার্টবিট চলতে শুরু করে।আমি এটাতে এখন বিশ্বাসী তোমাকে এই লুকে দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।আমার নুর মনিটা যে কবে আমাকে বুঝবে,??।
যে আমি আমার দুষ্টু রানী টাকে এতটা ভালবাসি?
(নাআআআ এই সাদনানকে মেরে দিবো আমি,নুরকে মনি ডাকলে,কারন এটা শুধু লেখিকাকে ডাকবে,,,,আলোমনি বলে ,কারন আলোমনি ডাকলে লেখিকা খুশি হয়।তাই নুর কে কেউ নুর মনি ডাকবে না?)

সাদনান উঠে সাওযার নিয়ে শেরওয়ানি সাথে চুরিদার, হাতে ওয়াচ আর চুল গুলো জেল দিয়ে (ওই যে ছেলেরা যেমন করে না ওমন) একটু স্পাইক করে নিলো।সাদনান নিজেকে একবার দেখে নিল,মন্দ লাগছে না দেখতে বলে নিজেই হেসে দিল,??।
নুরকে সাদনানের মা এক বড় বক্সে করে গয়না দিয়ে গেল,আর নুরের কাপালে একটা চুমু দিয়ে দোয়া করে গেল,যাতে কারো নজর না লাগে।
(উনি তো জানে না উনার বলদ টা, না মানে ছেলের(সাদনানের) নজর পড়ে গেছে অনেক আগেই)
নুর ছটপট করতেই আছে,ওকে সাজাতে গিয়ে পার্লারের মেয়ে দুইটার নাজেহাল অবস্থা।
নুরের সাজ কমপ্লিট, নুরের ভারি মেকাব পছন্দ না এজন্য হালকা সাজ সাথে কপালে টিকলি,নাকে নোলক,কানের দুল,দুই হাত ভর্তি চুড়ি,গলায় নেকলেট,কোমরে কোমর বন্ধনী আর খোঁপাতে রজনীগন্ধার গাজরা, টানা করে চোখে কাজল আর লিপস্টিক।
এক কথায় চোখ ধাধানো একটা সাজ।নুর আয়নায় নিজেকে নিজে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো,ওকে এই লেহেংগার সাথে এই সাজটাতে দারুন মানিয়েছে।

দুষ্টু বউয়ের ডেভিল বর পর্ব ৫

(আপনারা নজর দিয়েন না যেন,তাহলে আপনাদের মুখে ব্রণ উঠবে??)
নুরকে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাদনানের ভাবিরা এলো, নুর হাটতে পারছে না ঠিকমত,নুর রুম থেকে বের হয়ে সিড়ির কাছে আসতেই,সাদনানও শুভোর রুম থেকে বের হলো।নুর আর সাদনানের চোখাচোখি হয়ে গেল।
নুর আজ কেন জানি সাদনানকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিল।
আর সাদনান হা করে তাকিয়ে আছে
(ছেলেরা একটু বেহায়া হয় আর কি??,দেখেন কেমন করে তাকিয়ে আছে?)
ভাবিদের খোঁচা খেয়ে সাদনানের হুশ আসে,আর ওরা দুইজনকে এক সাথে নিচে নামতে বলে,,আর ওখান থেকেই,,,, ঠাস ঠাস,,,,,
(আরো ভয় পাবেন না,ঠাস ঠাস করে ফটোশুট শুরু হয়??,আমি এটাই বলতে চাচ্ছি ??)

নুর সাদনানের সাথে নামতে নামতে সাদনান হঠাৎ করে,নুরের,,,,,
,(বলবো না আর কি হলো???)

দুষ্টু বউয়ের ডেভিল বর পর্ব ৮