দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৬ (২)

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৬ (২)
তাসফিয়া হাসান তুরফা

যতক্ষণে দোলার হুশ ফিরে ও সামনে তাকিয়ে দেখে নিশীথ ওর পাশে বসে। ওর গায়ে কাথা, মাথায় ঠান্ডা কিছু দেওয়া হচ্ছে। দোলা মিটিমিটি চোখ মেলে প্রশ্ন করে,
—কি হয়েছে?
—জ্বর
নিশীথ গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দেয়। দোলা এবার বাকিটা বুঝে। ওর গায়ে কাথা জড়ানো আছে, নিশীথ পাশে বসে মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টিতে হঠাৎ ভিজে জ্বর এসেছে হয়তো। ও বোকার মতো হেসে বলে,

—নাপা দিলেই হতো! এসব করতে গেলেন কেন?
—জ্বরের চোটে অজ্ঞান হয়ে গেছো আবার বলছো এসব করতে গেছি কেন? ফাইজলামি মনে হচ্ছে তোমার?
নিশীথ ধমকে উঠলে মেয়েটা চুপসে যায়। এর আগেও ত জ্বর হয়েছে কই তখন তো অজ্ঞান হয়নি। আজ এ সামান্য জ্বরে কিনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল? ছি ছি এত নাজুক ও কবে থেকে হলো! দোলা আনমনে ভাবে। এর মাঝেই নিশীথ বলে ওঠে,
—কেন এমন করো, দোলনচাঁপা? আমার কথা কি একবারো ভাবোনা?
—এভাবে বলছেন কেন?
—তো কিভাবে বলবো? বৃষ্টিতে একা একা আসবে ভেবে আমি তোমায় নিতে যাচ্ছিলাম আর এদিকে তুমি কাউকে কিছু না বলে একা ভিজতে ভিজতে বাড়ি এলে, এখন জ্বর বাধিয়েছো শরীরে। তোমাকে আমি ভালো রাখার এত চেষ্টা করি অথচ তুমিই আমায় ভালো থাকতে দাওনা!
নিশীথের কথায় দোলা হাফ ছেড়ে বাচলো। ও বুঝলো নিশীথ ওর প্রতি চিন্তা থেকেই ওকে শাসন করছিলো এবং সে পার্কে ওকে আর আয়মান সাহেবকে দেখেনি। এতক্ষণে ওর জ্বর ছেড়ে শরীর ঘেমে গেছে। কাথাটা গা থেকে সরিয়ে মিহি গলায় বল্লো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

—সরি, আমি বুঝিনি এমন হবে। আর করবোনা এসব
—তুমি প্রত্যেকবারই এটা বলো। পরে ভুলে যাও
—বললাম তো আর হবেনা। বিশ্বাস করুন!
—এভাবে বিশ্বাস করবোনা তো।
নিশীথ বলে। দোলা ভ্রু কুচকে বলে,
—তাহলে কিভাবে করবেন বলুন? আপনি যা বলবেন আমি করবো!
নিশীথ এবার মুচকি হেসে দোলার দিকে ঝুকে এলো। এই চাহনির সাথে দোলা বেশ ভালোভাবেই পরিচিত, তাই ও লাজুকতায় নেতিয়ে পড়ে। একটি রাত কেটে যায় ভালোবাসার মেলবন্ধনে!

আজকে নিশানের ফ্লাইট রাত ১২টায়। ও বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে রাত ৭টায়। এখন বাজে সন্ধ্যে ৬টা। বাসায় সকলেই উপস্থিত ওকে বিদায় জানাতে। নিশান বেজ ফুরফুরে মেজাজে আছে। এ কয়দিন বাংলাদেশে থেকে বোর হয়ে গেছিলো, অবশেষে কানাডায় ফিরে যাবে! এদিকে আয়মান সাহেবের মুখে বেশ গম্ভীরভাব। নিশান তা খেয়াল করে ভাবে, ও চলে যাচ্ছে দেখে বাবার মন খারাপ! তাই এগিয়ে এসে বলে,
—বাবা, তুমি কি মন খারাপ করছো?
—মন খারাপ কেন করবো?
—আমি চলে যাচ্ছি দেখে।
—তুই চলে যাওয়ায় আমার মন খারাপের কি আছে? প্রথমবার যাচ্ছিস নাকি!
আয়মান সাহেব শীতল কণ্ঠে বললেন। উনার কথায় নিশান একটু অবাকই হলো! সচারাচর বাবা ওর সাথে এভাবে কথা বলেনা। এখন হঠাৎ কি হলো? পরমুহূর্তে ভাবলো, হয়তো মন খারাপ ওকে বুঝতে দিতে চাইছেন না তাই এমন করছেন তাই ও হেসে বললো,

—আচ্ছা, তুমি মন খারাপ করোনা। আমি আবার কয়েক বছর পর আসবো। আর তখন না হয়…
—ছেলেমেয়ে নিয়ে দেশে ফিরবি?
আয়মান সাহেব কৌতুকের সুরে প্রশ্ন করেন। নিশান হকচকিয়ে যায়। বিস্ময়ের চোটে ওর কণ্ঠ নড়বড় করে। অনেকটা তোতলানো স্বরে বলে,
—এভাবে বলছো কেন?
—আর কিভাবে বলবো? তোর কথার ধরন শুনে যা মনে হলো সেভাবেই বললাম!
আয়মান সাহেব পাল্টা প্রশ্ন করেন। নিশান কিছু একটা ভেবে বলে,
—আমি তো বলতে চাচ্ছিলাম যে…কানাডায় লিভিং এক্সপেন্স কতটা বেড়ে গেছে তুমি তো জানোই। বিয়েশাদি হলে তো আরও বাড়বে! এজন্য বলছিলাম যে, তোমার অফিসের পাশের যে ল্যান্ডটা আমার নামে লিখে দিতে চেয়েছিলা ওটার জন্য বায়ার খুজা শুরু করো, ওই জমির অনেক দাম। ওটা যদি বেচতে পারতাম তবে আমার জন্য থাকাটা সহজ হতো!
আয়মান সাহেব হঠাৎ হেসে উঠলেন ছেলের কথায়! তাকে দেখে মনে হলো তিনি বেশ মজা পাচ্ছেন নিশানের কথা শুনে। তাই তিনি বললেন,

—একজন মানুষের থাকার জন্য কেমন খরচ হয় সেটা আমি জানি। ওই হিসেবে তোর ইনকাম থাকা সত্ত্বেও তোকে যথেষ্ট দেই প্রতি মাসে। আমার মনে হয়না তোর একা থাকার জন্য জমি বিক্রি করার কোনো দরকার আছে। তার মধ্যে এত দামি জমি, একদম অফিসের কাছে। এটা ফাইনান্সিয়ালি আমি প্রেফার করছিনা!
এতক্ষণ ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও এবার নিশানের চেহারা দেখে বুঝা গেলো, ও রুষ্ট হলো! আয়মান সাহেব স্পষ্ট ছেলের চোখমুখ দেখে তা উপলব্ধি করতে পারলেন। নিশান রেগে বললো,
—কিন্তু তুমি তো আমার নামে লিখে দিচ্ছো জায়গাটা, আর আমি দেশে থাকবোনা। তাই আমি ওই জমি বেচবো না রাখবো ওটা তো সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার, বাবা! তুমি এখানে কেন হস্তক্ষেপ করছো?
এতক্ষণ মুখে হাসি থাকলেও এবার আয়মান সাহেবের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। উনি থমথমে মুখে বললেন,

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৬

—জমিটা তোকে লিখে দিতে চেয়েছি, এখনো তোর নামে লিখে দেইনি। ওটা এখনো আমার নামেই আছে। দ্যাটস হোয়াই আমি ওই ব্যাপারে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবো।
এবার নিশান একটু নরম হলো। এদিকে নিশীথ এতক্ষন চেয়ে চেয়ে বাবা ও ভাইয়ের কথোপকথন শুনছিলো চুপচাপ। ও নিশানকে যত দেখছে ততটাই অবাক হচ্ছে! এবার নিশানের হঠাৎ দেশে আসা, ওর পরিকল্পনা সবকিছুই ওর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভাইয়ের প্রতি রাগে নিশীথের বুক কাপছে, হাত দুটো রাগে আপনা-আপনিই মুষ্টিবদ্ধ হচ্ছে! কিন্তু এখন আর সময় বেশি নাকি নেই। এবার নিশীথের মনে হচ্ছে ও বাবার থেকে সত্যটা লুকিয়ে বেশ বড়সড় একটা ভুল করে ফেলেছে। কিন্তু এখন ও বলেও বা কি করবে
এখন যে আর হাতে সময় বাকি নেই!

দোলনচাঁপার সুবাস পর্ব ৭৭