ধূসর রংধনু পর্ব ১৩
মাহিরা ইসলাম
দিনটা শুক্রবার।নিস্তব্ধ আজ বাড়িতেই। তবুও যখন তখন তার হসপিটালে যেতে হতে পারে।কখন ইমার্জেন্সি রুগী এসে হাজির হয় বলা তো যায় না।
সকালে ব্রেকফাস্টের পরে তাসফি বাসন্তীর রুমে বসে পরেছে বইখাতা নিয়ে।হাজারটা পড়া মুখস্থ করা তার বাকি।সে ডাক্তারী পড়াটা যতটা সহজ ভেবেছিলো সেটা মোটেও এতটা সহজ নয়। হুহ।
পড়তে পড়তে তার পাগল হবার যোগাড় । ছুটির দিন কই আজ সকলের সঙ্গে বসে সে একটু সুখ দুঃখের আলাপ করবে তার সেই সময়টাও নেই।
বই খাতা নিয়ে তার পাগল হবার জোগাড়। প্রতিদিন আইটেম দেওয়া। প্রতিদিন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মুখস্থ করা কি আর যে সে কাজ।লিখতে লিখতে হাত খসে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা। এর মাঝে সে ঠিকঠাক মনের গোপন খবরটা পড়ার ওও ফুসরত পাচ্ছে না।তার তো এই দুমাসে নাজেহাল অবস্থা।
তবে যত কঠিনই হোকনা কেন, যত কষ্টই হোক না কেন তাকে তো ডাক্তার হতেই হবে।তার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।সঙ্গে নিজের স্বপ্ন কে বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাসফি এখন বুঝতে পারছে ডাক্তাররা কেন এত খিট খিট মেজাজের হয়। দীর্ঘ পাঁচটি বছর তারা ধরাবাঁধা নিয়মের মাঝে বদ্ধ থেকেই মেজাজটা তাদের এমন খিটখিট স্বভাবের হয়ে যায়।মুখস্থ, প্রতিদিন আইটেম দিতে দিতে তাদের হাতের সাথে সাথে তাদের কোমল মনটাও তেমনি বদ্ধ খাঁচায় বন্দি হয়ে যায়।
আর সবাই কর্কশ হয় কোথায়। এই যে সুজন ভাইয়া,মাহীন ভাইয়া,সৃজন ভাইয়া।কই তারা তো কর্কশ নয় কি সুন্দর হাসিখুশি তারা।তারপর তাদের কলেজের হাবিব স্যার সেও তো হাসি খুশি।ক্লাসে সব সময় হাসি খুশি ভাবে কথা বলে।
তার ডাক্তার বর মহাশয়ের ভাবসাব একটু অতিরিক্ত। হুহ!
তাসফি একমনে পড়ে যাচ্ছে। তার মাঝে পান্না এলো নিলয় সাহেবের ফোন হাতে।
সে তার মিষ্টি কন্ঠে তাসফির উদ্দেশ্যে সুধালো,
-” কাকিয়া মাওইমা কল করেছে।নাও নাও কথা বলো।”
তাসফি হতাশ চোখে চেয়ে ফোনটা হাতে নিলো।ব্যস্ততায় তার দুদিন বাড়িতে ফোন করা হয়নি।কদিন আগেই তার শ্বশুর মশাই তাকে নতুন একখানা স্মার্ট ফোন কিনে দিয়েছে।তা কোথায় পড়ে আছে কে জানে।তার খোজ খবর রাখার কি আর তাসফির সময় আছে।
এই ফোন কেনা নিয়েও তার বর মহাশয় কিছুদিন তাসফির দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে থেকেছে। বলেছে ল্যাপটপ আছে ফোনের কি দরকার।ল্যাপটপেই তো সে তার সব কাজ করতে পারছে।পুঁচকে একটা মেয়ের হাতে এখনই কেন তাদের ফোন ধরিয়ে দেওয়া লাগবে।
তাসফি বুঝে পায় না এই লোকের সমস্যাটা ঠিক কোথায়।বউকে মানবে না।তার সঙ্গে সারাক্ষণ ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে অথচ তার উপরেই অধিকার ফলাতে আসে।
সে যা খুশি করুক। সেই কথা নাহয় পরে ভাবা যাবে।আপাতত তার দাদির সঙ্গে কথা বলা যাক।
ফোন কানে দিয়ে তাসফি খাতায় ইংরেজিতে কিসব লিখতে লিখতে বলল,
-” হ্যাঁ বুড়ি বলো?”
নাতনির কন্ঠ পেতেই দাদি হাঁক ছেড়ে ছেলেকে ডাকলেন,
” কই রে মোস্তফা এই নে তোর ম্যাইয়ারে ফোনে পাওন গেছে”
অতঃপর তাসফির উদ্দেশ্যে ফুঁসে উঠে বললেন,
-” বলি ওই ছেমড়ি তোর ফোন হান রাহো কুনহানে।আজ দুইদিন ধইরা তুমারে ফোনে পাওন যায় না।বলি শ্বশুর বাড়ি যাইয়া কি আমাগো ভুইলা গেছ এক্কেরে।বিয়া তো করবার চাইছিলা না। আর এখন আমাগোই ভুইলা বসছো দেখতাছি।”
তাসফি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হতাশ কন্ঠে বলল,
-” ভুলি নাই দাদি।তোমাদের কি আর ভুলতে পারি বলো। এ যে আমার দ্বারা অসম্ভব। তোমরাই তো আছো আমার কিছু আপন জন।তোমাদের ফোনটা করবার আমি ফুসরত টুকু পাইনি দাদি।”
-” হ্যাঁ তা পাইবা কেমন করে।সেই যে গেলা। আর দুইদিন আইসা জামাই নিয়া থাইকা গেছ তুমি?ওই সক্কালে দুইদিন আইছা ঘন্টাখানেক থাইকা তুমি ফুরুত হয়ে গেছ।এই তোমার ভালোবাসা।”
মোস্তফা সাহেব ভিতরের ঘর থেকে বের হতে হতে বললেন,
-” মা থামো তো তুমি। মেয়েটার উপর দিয়ে পড়ার অনেকটা প্রেশার যাচ্ছে নিশ্চয়ই। ”
মোস্তফা সাহেব মায়ের হাত থেকে ফোনটা নিজের হাতে নিলেন।আদুরে স্বরে বললেন,
-” কেমন আছো তুমি মামনি? ওবাড়ির সব ঠিকঠাক তো?”
বাবার কন্ঠ পেয়ে তাসফির চোখ ছলছল করে উঠলো,
-” হ্যাঁ বাবা। আমি ভালো আছি খুব ভালো আছি।”
পুনরায় ফিসফিস করে বলল,
” তোমরা ভালো থেকো বাবা, বিশেষ করে তুমি ভালো থেকো।নিজের যত্ন নিও।তুমি ভালো থাকলেই তো আমি ভালো থাকবো বাবা।”
তাসফির ফিসফিসানো কথা ওপর পাশে থাকা মোস্তফা সাহেবের কর্ণ পর্যন্ত পৌঁছালো না।
তিনি আবার কিছুটা আমতাআমতা করে বললেন,
-” বলছিলাম মামনি মাস দুয়েক তো পার হয়ে গেল।এবার যদি জামাই বাবাজি কে নিয়ে একটু ঘুড়ে যেতে এবাড়ি থেকে।তাছাড়া পড়ার মাঝে তোমার ও তো কোথাও একটা ঘুরে এসে মাইন্ড ফ্রেস করা দরকার মামনি,তাইনা।”
– তাসফি উত্তর দিলো না। কি জবাব দেবে লোকটা কি তার সঙ্গে যেতে আদ্যত্ত্বেও কখনো রাজী হবে? কে জানে।
মোস্তফা সাহেব আবার বললেন,
-” মামনি আমি কি জামাই বাবাজির সঙ্গে একটু কথা বলবো।”
বলেই তিনি নিজের ভেজা চোখটা মুছলেন পাঞ্জাবির হাতায় ।
-” বলতে পারো বাবা।”
– “তুমি কি একটু তাকে ফোনটা দেবে মামনি? ”
তাসফি ছুটে গেল ও রুমে।নিস্তব্ধ বিছানায়ই বসা ছিল।
তাসফিকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে চোখ ছোট ছোট করে চাইলো।
তাসফি ফোন মিউট করে কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বলল,
-” বাবা। আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে ?”
নিস্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নিয়ে সালাম দিলো।
মোস্তফা সাহেব সালামের উত্তর দিয়ে কুশল বিনিময় করলেন।অতঃপর একফাঁকে বললেন,
-” বাবা জীবন, মেয়েটা তো আমার অনেকদিন যাবত এ বাড়িতে আসে না। তুমি কি তাকে নিয়ে একটু এ বাড়ি থেকে ঘুরে যাবে?না না আমি ও বুঝতে পারছি, তুমি ডাক্তার মানুষ তোমার তো সব সময় ছুটি হয় না।তবুও যদি একটু চেষ্টা করতে আমার ভালো লাগতো। তাছাড়া মেয়েটাকে কতদিন কাছে বসিয়ে একটু ভালো করে দেখিনা।তুমি আমার কথা বুঝেছো তো বাবা।”
নিস্তব্ধ কি বলবে ভেবে পেল না। একজন বাবার করুণ আকুতি মেশানো আবদার কি করে হেয় করা যায়।তার উপর এমন নরম স্নেহ মিশ্রিত কন্ঠে।নিস্তব্ধ কি জবাব দেবে ভেবে পেলনা।
কিছুটা শান্ত স্বরে শুধু বলল,
-” আমি চেষ্টা করবো আঙ্কেল। যদি ছুটি পাই আমি অবশ্যই যাওয়ার চেষ্টা করবো।আপনি চিন্তা করবেন না।”
-” তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বাবা। অনেক ধন্যবাদ।একটু চেষ্টা করে দেখো হ্যাঁ?”
-” জ্বী আঙ্কেল। ”
** বিকালে নিস্তব্ধ বসেছিল বই নিয়ে হঠাৎ মেসেঞ্জারে টোন বেঁজে উঠলো।আজব গুষ্টির কল এসেছে।ধরবে কিনা ভাবছে।ধরলেই তো শুরু হবে ওদের প্যানপ্যানানি।
কেটে দিতে গিয়ে সে কোন মনে রিসিভ করে ফেলল।
নিস্তব্ধ নিজের উপর নিজেই বিরক্ত। আজ কাল সে কিছু কাজ নিজের অজান্তেই করে ফেলছে।মস্তিষ্ক বলছে একটা অথচ সে করে ফেলছে আরেকটা।মহা মুশকিল।
ফোন রিসিভ করতেই সৃজন বলে উঠলো
-” এই নিস্তব্ধ শুনেছিস,ওও তুই তো নিস্তব্ধ শুনবি কেমন করে হা হা হা, তবুও শোন কাল নাকি তৃপ্তির বাসার নিচে সুজন এক গার্লফেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।বুঝেছিস।এই বলদটা দিন দিন উচ্ছন্নে যাচ্ছে। ”
আরশী বলে উঠলো,
“তোরা কোনোদিন ভালো হবি না তাইনা।সারাদিন মেয়েদের পিছনে পরে থাকিস।ডাক্তারী সামলাস কখন তোরা ভাই।”
মাহীন রাগড় করে বলল,
” এই একদম তোরা তোরা করবি না।আমি মোটেও মেয়েদের পিছনে ঘুরি না।এই সুজন মাঝির মাঝেই যত ঝামেলা বুঝলি।”
সুজন ফুঁসে উঠে বলল,
-” এখন যত দোষ নন্দঘোষ তাই না।তোরা কোনোদিন প্রেম করিস নি।তা ছাড়া ওই অতৃপ্ত আত্মা যতটা রসিয়ে রসিয়ে তোদের বলেছে ব্যাপারটা মোটেও তেমন নয়।আর তাছাড়া আরশী তুই কতটা ভালো সেটা আমরা সবাই জানি।এই নিস্তব্ধ দোস্ত শোন ওও কি করেছে।পরশু দিন তার হবু জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বেচারার টাকে ডিম ফাটিয়ে দিয়ে এসেছে। তোরা মেয়ে মানুষ সবগুলো এক নম্বারের বজ্জাত। আমাদের মতো ভোলাভালা ছেলেদের সব সময় ফাঁসিয়ে দিস তোরা।”
আরশী ফুঁসে উঠলো,
-” এই একদম বাজে কথা বলবি না। তোর কি মনে হয় ওই টাকলা পটকা, ভুরি মোটা লোকটাকে আমি বিয়ে করবো। নো নেভার।প্রশ্নই উঠে।”
নিস্তব্ধ মাথা ধরে গেল।তার মনে হচ্ছেনা সে তার কোনো বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছে।
মনে হচ্ছে সে কোর্টের জর্জ।আর তার সামনে বিচারের আসর বসিয়েছে।একের পর এক ভুক্তভগি তাদের সাক্ষ্য পেশ করছে তার সামনে। সাক্ষ্য তো পেশ করা নয় এ যেন আদালত ভেঙে যাওয়ার মতো তুমুল বেগে ঝগড়ার গান চলছে।এখন সে কি রায় দেবে তা নিয়েই ভাবনা।
নিস্তব্ধ সুজন কে ঠাট্টা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-” সত্যিই গার্লফেন্ড এর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছি তো।নাকি তৃ…?”
সুজন চেঁচিয়ে উঠলো।
-” নিস্তব্ধ সালা চুপ থাক। তুই আরো সব সময় বেশি বুঝিস। আর শোন আমি কারো কাছে ওই ধরাটরা খাই নি বুঝলি।আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই গিয়েছি।তোদের কি বে।
-“হ্যাঁ সেটাই আমাদের কি।”
মাহীন সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বলল, এই তোরা থামতো আমার কথা শোন। আমি আর এই যশোরে থাকছি না। তোদের থেকে এত দূরে থেকে আমার আর ঠিক পোষাচ্ছে না বুঝলি।ভাবছি ঢাকায় কোনো ডেন্টাল হসপিটালে সিফট করে যাবো।নাহয় নিজেই চেম্বার করে বসব।
নিস্তব্ধ এতক্ষণে গম্ভীর স্বরে কথা বলল,
-” হ্যা তাই কর। তাছাড়া বাড়িতে শুধু মাত্র তোর বোন আর মা একা থাকে।তুই মাঝে মাঝে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিলেও তাদের কাছে থাকার মতো, ভরসার জন্য তো তাদের তোর কাছে চাই।
তুই বরং এবার একটা বিয়ে করে নে দোস্ত। এতে আন্টি আর পারুল দুজনেরই ভালো হবে।তাছাড়া পারুলটাও বড় হয়েছে ওর বিয়ে সাধিও দিতে হবে। তখন আন্টি তো একদম একা হয়ে যাবে বুঝলি।বিয়েটা এবার তুই করেই ফেল।”
বাকি সবাই ও তাতে সায় দিলো।
বিয়ের কথা শুনতেই মাহীন শান্ত হয়ে গেল।
কি করে বোঝাবে সে তার বন্ধুদের। তার মনে যে অন্য কারো বাস। একজন নারীকে মনের মাঝে রেখে আরেকজন নারীকে মনে ঠাই দেওয়া যে তার পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়।
নিস্তব্ধ’র কথা বলার মাঝেই সেখানে তাসফি হাজির হলো।
-” এই শুনছেন আপনাকে দাদু ডাকছে……..?”
মোবাইলে তাসফির অবয়ব দেখতেই সবকটা হইহই করে উঠলো।টপিক ঘুরে গেল।
সুজন সূর করে বলল,
-” ভাবববীইই,কেমন আছেন? সব ভালো তো।এই বেটা আপনায় বিরক্ত করছে না তো?”
নিস্তব্ধ চোখ রাঙালো।কতবার করে নিষেধ করেছে তার হাটুর বয়সী একটা মেয়েকে ভাবী ডাকার দরকার টা কি!
সুজন তা কেয়ার করলে তো ইশশ।
সে চোখ রাঙালেই তারা বুঝি ভয় পাবে।
তাসফি হাসিখুশি মুখে বলল,
“এই তো ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালো,আপনারা কেমন আছেন”
বলেই তাসফি তৎক্ষনাৎ নিস্তব্ধ’র হাত থেকে খপ করে ফোনটা নিয়ে কথা বলতে বলতে বেলকনি তে চলে গেল।
নিস্তব্ধ হতবাক হয়ে তাসফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।কি আশ্চর্য ফোনটা তার নাকি ওইটুকুনি মেয়েটার।আর বন্ধু গুলো মনে হচ্ছে তার নয়,তার বউয়ের আর সে হচ্ছে পাশের বাসার ভাড়াটিয়া,তাকে একটু অনুগ্রহ করে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে এই যা।অদ্ভুত।
সন্ধ্যে বেলায় একটু ফুসরত পেয়ে তাসফি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে বসে ফোন ঘাটছিলো একটুখানি সময় পেয়ে।
ফেসবুক স্টলিং করতে করতে হঠাৎ তার বর মহাশয়ের আইডি খানা সামলে এলো। আইডির নাম ডাঃ নিস্তব্ধ ইয়াসার।
তাসফি চোরা চোখে এদিক ওদিক পরোখ করে চট করে ভেতরে ঢু্কে পরলো।আইডি লক করা নেই দুদিন আগেই বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত একটা প্রোফাইল পিক ছাড়া হয়েছে বাহ তাতে কত মানুষের লাইক কমেন্ট ওও রয়েছে।তাসফির হঠাৎ কৌতুহল জাগলো নিস্তব্ধ’র ফেন্ডলিস দেখার। হঠাৎ তার এই ইচ্ছে মনে উদয় হওয়ার কারণ কি সে জানেনা।কিন্তু দুঃখের বিষয় ফেন্ড লিস্ট অনলি মি করা। কেন রে ব্যাটা আইডি যখন লক নয় তখন ফেন্ড লিস্ট কেন হাইড করবি। আচ্ছা যারা পোস্টে রিয়েক্ট দিয়েছে তারাই তো ফেন্ড। তাসফি চেক করতে শুরু করলো।
তার মাঝে একটা আইডি তে তার চোখ আটকে গেল।মান্সা আবসার।বাহ লাভ রিয়েক্ট, এই অভদ্র অসভ্য মেয়েটা তার বরের পিছনে ওও লেগেছে দেখছি।আবার কমেন্টে লিখেছে ওসাম।বাহ বাহ। তার ডাক্তার বর মহাশয় আবার তাতে লাভ দিয়েছে।বাহ চমৎকার।
আজ পর্যন্ত তাকে একটা ফেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো না।আর এখনে সব লাভের বন্যা বইয়ে যাচ্ছে।
তাসফি চেক করে দেখলো তাদের সেমিস্টারের অনেকেই এখানে আছে।
আচ্ছা সে কি ফেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেবে?
উহু কখনো না। প্রশ্নই আসে না।
যেই অহংকারী লোক আজ পর্যন্ত তাকে রিকোয়েস্ট পাঠায় নি সে কেন সেধে সেধে রিকোয়েস্ট পাঠাবে। এতটাই ফেলনা নাকি সে হুহ।
তাসফির ভবনার মাঝে ইয়ানা এসে তার সামনের সোফায় বসলো।
তাসফিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
-” রুম্পা কোথায় বলোতো।দুপুর থেকে দেখছি না।আমায় বিকালের চা টাও দিয়ে এলো না।”
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” রুম্পা দি বাড়ি গিয়েছে কাল আসবে।”
ইয়ানা আবার বলল,
-” ওহ।আচ্ছা তাসফি তুমি কি আমায় এককাপ চা করে খাওয়াতে পারবে।মাথাটা খুব ধরেছে বুঝলে।”
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলল,
-“পারবো না ভাবী আ’ম ভেরী ভেরী সরি।তাছাড়া সেকি ভাবী আপনার হাতে কি সমস্যা হয়েছে নাকি।কই নাতো হাত তো একদম দিব্বি ঠিক আছে। বরং আমি দেখতে পাচ্ছি ভালোর থেকে একরু বেশিই ভালো আছে। কি সুন্দর ফোন স্টল করছেন।নিজের চা নিজেই হাতেই বানিয়ে খান না প্লিজ। জানেন তো ভাবী নিজের হাতের খাবার না একটু বেশি স্পেশাল হয় বুঝলেন
আর আমার মাথাটাও না খুব ধরেছে ভাবী।আমার জন্য এক্সটা এককাপ বানাবেন প্লিজ।”
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাসফির দিকে চাইলো।
তাসফি সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতে গিয়ে আবার পিছে ফিরে বলল,
-” ও হ্যাঁ কাইন্ডলি একটু আমার রুমে দিয়ে আসবেন চা টা কেমন আমার মিষ্টি জা।”
ইয়ানা হতভম্ব হয়ে তাসফির যাওয়া পানে চেয়ে রইলো।এই মেয়ে কি বললো তাকে চা বানিয়ে খেতে।আবার উপরে সার্ভ ওও করে আসতে।
কত্ত বড় সাহস মেয়ের।যেখানে তাকে তিন বেলা খাবার দেওয়া হয় ঘরে সেখানে এই মেয়ে তাকে চা বানিয়ে দিয়ে আসতে বলল।কি সুন্দর করে তাকে অপমান করে গেল।
এই মেয়ে তো সেয়ানার উপরে সেয়ানা।
ধূসর রংধনু পর্ব ১২
ইয়ানা ভেবেছিলো বোকা সোকা হবে। আয়েশার মতো একেও খাটিয়ে নেওয়া যাবে।
কিন্তু এ তো দেখা যাচ্ছে তার থেকেও ডাবল।
দুরন্ত সেয়ানা।