ধূসর রংধনু পর্ব ১৬
মাহিরা ইসলাম
সন্ধ্যাবেলার আকাশটা মৃদু উজ্জ্বল।সূর্যিমামা আজ দিনের বেলা দেখা দেয়নি বললেই চলে।তাই সে কখন অস্ত গিয়েছে বলাটাও ভারী মুশকিল। আকাশে স্পষ্ট গুমোট ভাব বিধ্যমান।মেঘে ঢাকা আকাশ।মাঝে মাঝে দুয়েক ফোঁটা বৃষ্টির ও দেখা পাওয়া যাচ্ছে। বাসন্তী একা বসে আছে ড্রয়িংরুমের বারান্দায় লাগোয়া থাই গ্লাসের পাশে।ইনায়া ভাবী আজ দুপুরেই বাপের বাড়ি গিয়েছে।রুম্পাটাও আজ আসবে বলে আসেনি। বাবা বাইরে। মা নিজের রুমে বই পড়ছে।
বাসন্তী থাইগ্লাসের মাঝ দিয়ে বাইরেটা দেখছে।এখন থাইগ্লাসের দিয়ে দেখা বাইরেটা যেমন অস্পষ্ট, তেমনি তার জীবনের বাকি ধাপগুলোও কেমন অস্পষ্ট।
কেমন করে কাটবে তার সামনের দিনগুলো।সে কি টিকে থাকতে পারবে এই সমাজে?কে জানে?
ভালোবাসার প্রতি তার দিন দিন কেমন গা শিউরে উঠা অনিচ্ছা জন্ম নিচ্ছে।যাকে ভালোবেসে হাত ধরলো সেই তো বেইমানি করলো।অন্যরা করবে না তারই বা কি গ্যারান্টি আছে।বিয়ে টিয়ে সে আর এই জনমে করছে না। ডিভোর্সি তকমা নিয়ে সারাজীবন পরে থাকবে এই বেশ ভালো।অন্তত কারো থেকে ঠকে যাওয়ার মতো তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে না। পুনরায় রাতের পর রাত চোখের কোন ভেঁজাতে হবে না।
হুহ ভালোবাসা।দুনিয়াতে সবাই যদি তার বাবার মতো হতো।সবাই যদি তার দাদার মতো হতো।যারা এখনো তাদের স্ত্রীকে যোগ্য সম্মান দিয়ে ভালোবাসছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যদি তাসফির বাবার মতো হতো।যে স্ত্রীকে ভালোবেসে তার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে কতগুলো বছর।কতগুলো বছর নিরামিষ জীবন পার করে যাচ্ছে।
সব পুরুষ যদি তাদের মতো হতো। সব পুরুষের যদি এমন মেন্টালিটি থাকতো খুব কি ক্ষতি হতো?
তাহলে তো তার মতো এমন গুটিকয়েক মানুষকে এভাবে দিন যাপন করতে হতো না।ভালোবেসে ঠকে যেতে হতো না।ভালোবাসা নিয়ে চারিদিকে এমন হাহাকার, হতাশা, বিষন্নতা জন্ম নিতো না।
বাসন্তীর হাজারো ভাবনার মাঝে হঠাৎ কলিংবেল বেঁজে উঠলো।তার শব্দে সে চমকে উঠলো।
মনে মাঝে উদয় হলো প্রশ্নের দানা।এই ভর সন্ধ্যা বেলায় কে এলো?
তাসফি ডাইনিং থেকে ছাড়া পেয়ে মাত্র একটু রুমে এসে বসলো।নিস্তব্ধ কে বসিয়ে দিয়ে এসেছে বিরাট বড় খাবারের আয়েজনের টেবিলে।তাসফি তো এতদিন শ্বশুর বাড়ির আদর আপ্যায়ন পেল এবার সে নাহয় একটু শ্বশুর বাড়ির বিশাল খাবারের স্বাদ গুলো নিয়ে দেখুক।
শ্বশুর বাড়ির খাবার মজাই মজা।উফফ। নিস্তব্ধ করুণ মুখখানা যদি কেউ দেখতো।তাসফির তো নিস্তব্ধ’র সেই অসহায় চাউনি খানা দেখলেই হাসিতে লুটিয়ে পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে।
তাসফি বাইরে তাকিয়ে দেখলো ইতোমধ্যে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে।আকাশ মেঘলা হলো কখন যে বৃষ্টি নামছে।সে খেয়ালই করলো না। সারাদিন কোন ধ্যানে ছিল সে।
হঠাৎ তাসফির বালিশের পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।
চট করে তাসফি তা হাতে নিয়ে দেখলো আশার ফোন।সঙ্গে সঙ্গে সে জ্বীবে কামড় দিলো।ইসস তার পাখির বাসাকে তো বলাই হয়নি দুদিন সে কলেজে যাবে না। তাসফি ফোন রিসিভ করতেই আশা যেন হামলে পড়লো তার উপরে,
-” কি ব্যাপার বল তো তোর মাইয়্যা।সকাল থেকে ফোন করে যাচ্ছি আপনার পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না।কি এমন মহান রাজ কার্য করছেন আপনি শুনি।”
তাসফি আমতা আমতা করলো।বিয়ের ব্যাপার টা আশাকে এখনো বলা হয়নি তার।
-” আসলে শোন না।ফোনে চার্জ ছিলো না তাই বন্ধ পেয়েছিস।আর আমি একটু বাসায় এসেছি।”
আশা অবাক হয়ে বলল,
-” বাসায় এসেছিস মানে? কোন বাসা কার বাসা।তুই তো বাসায়ই থাকিস।মানে কি?”
তাসফি ইতস্তত করে বলল,
-” আসলে শোন না দোস্ত। আমার আসলে বিয়ে হয়ে গেছে তো।শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসলাম আরকি।”
আশা বিস্ময় হতবাক হয়ে ঠাস করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চোখ দুটো বড় বড় করে চিল্লিয়ে উঠে বলল,
-” কি…..?”
তাসফি কানে হাত দিলো সঙ্গে সঙ্গে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” আসতে বল।এত চিল্লানোর কি আছে ভাই।”
আশা আগের থেকে দ্বিগুন জোড়ে চিল্লিয়ে বলল,
-” চিল্লাবো না মানে।চিল্লাবো না কেন আমি? আমি একশোবার চিল্লাবো।হাজার বার চিল্লাবো।
তুই আমার কলেজের একমাত্র কলিজার বান্ধবী। তোর সাথে আজ আমার দুই মাস ধরে ফেন্ডশিফ।আমার সব পেটের কথা তুই জানোস।আর তোর বিয়ে হয়ে গেছে সেটা আমার এই আজ, এই দুই মাস পরে এসে জানতে হলো?ওরে ফাজিলের ফাজিল তুই বিবাহিত মহিলা এই কথা কিনা তুই আমায় আজ বললি।ও মাই গড।ওও মাই গড।তুই শুধু ভার্সিটিতে আয়।তোর চুপা আমি ভেঙে রেখে দেব। তোমার সব কটা দাঁত না আমি প্লাস দিয়ে কট্টাট কট্টাট করে উঠিয়ে ফেলবো।
এই ছেমড়ি আর কি কি কথা তোর পেটের ভিতরে রেখে দিয়েছিস বলতো।আর কি কি কথা তোর ওইটুকুনু পেটে আছে। নিশ্চিয়ই আরো বহুত কিছু আমার থেকে লুকিয়ে গিয়েছিস তুই তাই না? বল।এখুনি পেটে সব কথা উগড়ে দিবি আমায়। বজ্জাতের বজ্জাত। হাড়ামির হাড়ামি উনার বিয়ে হয়ে গেছে অথচ এই কথাটা আজ আমায় শুনতে হলো।”
তাসফি হতভম্ব হয়ে গেল। এই মেয়ে এভাবে রিয়েক্ট করবে সে তো ভাবতেই পারেনি।মনে হচ্ছে একটা অনুষ্ঠানের বক্তৃতা দিয়ে শেষ করে ফেলেছে।মনে তো হচ্ছে এই পাখির বাসা সাতই মার্চের আঠারো মিনিটের ভাষণ কে পাঁচ মিনিটে দেওয়ার প্রাকটিস করছে।
তাসফি দিলো একধমক।
-” এই চুপপপপপ।স্টপ ইট দোস্ত কি শুরু করেছিস।বলিনি এখন তো বললাম।”
আশা চিরবিরিয়ে উঠে বলল,
-” এই তুই একদম কথা বলবি না।অসভ্য মাইয়া।আমি বলবো তুই শুনবি। বলিস নি মেনে নিলাম। তুই এখনই দুলাভায়ের পিক পাঠাবি।আর কলেজে আশার পরেই বিয়ের ট্রিট দিবি।এইটা তোর আমাকে না বলার শাস্তি।
দুলাভাইয়ের নাম কি এখুনি বল।
তাসফি শুষ্ক ঢোক গিললো।এই মেয়ে বিয়ের কথা শুনেই যে অবস্থা। নিস্তব্ধ’র স্যারের সঙ্গে বিয়ের কথা শুনলে হার্ট অ্যাটাক না করে বসে ইয়া খোদা।
তাসফি আমতাআমতা করে বলল,
– ইয়ে মানে।ছবি কি করে দেব বল।ছবি তো ফোনে নেই।তোকে আমি সময় হলেই ওনার সাথে দেখা করিয়ে দেব বুঝলি।
* নিস্তব্ধ করুণ চোখে তার সামনে থাকা শত শত খাবারের পদের দিকে তাকিয়ে আছে।এক ঘন্টা ধরে তাকে সবাই খাইয়েই যাচ্ছে, খাইয়েই যাচ্ছে। থামার আর নাম নেই।নিস্তব্ধ না পারছে সইতে না পারছে কিছু বলতে।এমন গ্যাড়াকলে বোধহয় সে আর কোনোদিন পড়ে নি।আজকের দিনটাই তার খারাপ।এই শ্বশুর বাড়ি আশার পর থেকেই তার একটার পর একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।ইহ জনমে মনে থাকতে বোধহয় না আর তার শ্বশুর বাড়ি পা পরবে।
ইয়া খোদা এবাবের মতো তাকে বাঁচিয়ে নাও।
পাশ থেকে রাহেলা বলে উঠলো,
-” দুলাভাই আপনাকে আর একটু মাংশ দেই?”
নিস্তব্ধ বিরবির করে বলল,
-” হ্যাঁ দাও না দাও দেখো আস্ত গরু এনে আমার পাতে দিয়ে দাও।খেয়ে অতঃপর কোমায় চলে যাই ইহ জনমের মতো।”
রাহেলা আবার বলল,
-” দুলাভাই কিছু বললেন।”
নিস্তব্ধ থতমত খেয়ে বলল,
-” কই, কই না তো।”
আয়েশা দেওয়ের নাস্তা নাবুদ হওয়া দেখে মিটি মিটি হাসছে। বাড়িতে রাজ করা ছেলেটা এখানে কেমন মিউ মিউ করছে। বাড়িতে সামান্য নুন বেশি হলে যে হুলস্থুল কান্ড বাধিয়ে দেয়
তার এই অবস্থা দেখে সে আর নিজের হাসি চেঁপে রাখতে পারছেনা।
নিস্তব্ধ ভাবীর দিকে করুণ চোখে চেয়ে ইশারায় বলল,
-” ভাবী প্লিজ কিছু একটা করো।আমাকে বাঁচাও প্লিজ। ”
আয়েশা যেন তা দেখলোই না। উল্টো মিষ্টির বাটিটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” আহাঃ দেওর জি তুমি তো মিষ্টি কিছুই খাচ্ছো না।
এই নাও নাও।একটু মিষ্টি খাও।”
নাহ আর পারা যাচ্ছে।
নিস্তব্ধ মাখানো খাবার রেখেই এবারে ছুটলো তাসফির রুমে।
তার দ্বারা আর সম্ভব না।
নিস্তব্ধ চলে যেতেই আয়েশা ফিক করে হেঁসে দিলো।
মায়ের হাসি দেখে পান্না ওও হাসলো।
নিস্তব্ধ কে এমন জব্দ হতে দেখে রাহেলা আর আনিকাও মিট মিট করে হাসতে লাগলো।
নিস্তব্ধ রুমে ঢুকে ওয়াশরুম থেকে হাত পরিষ্কার করে নিলো।
পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখলো তার অসভ্য বউয়ের টিকিটিও কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
বেলকনি থেকে তাসফির কথার আওয়াজ ভেসে এলো।ওও তার মানে বজ্জাত মেয়েটা তাকে ফাঁদে ফেলে এখানে এস কথা বলা হচ্ছে ফোনে রঙ ঢঙ করে। দেখাচ্ছে মজা।
নিস্তব্ধ বেলকনি তে গিয়ে বলে উঠলো,
-” ওও তাহলে ম্যাডাম আমাকে বিপদে ফেলে এখানে ফোনে কথা বলে ফর্তি করা হচ্ছে বুঝি? ”
পুরুষ কন্ঠ পেতেই আশা ফোনের ওপাশ থেকে চেচিয়ে উঠলো,
-” এই এই কে কথা বলল, কার কন্ঠ পেলাম।কেমন চেনা চেনা লাগল।”
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে জ্বীবে কামড় দিয়ে নিস্তব্ধ’র মুখ চেপে ধরলো একহাত দিয়ে।
নিস্তব্ধ থমকে গেল।হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তাসফির দিকে।মেয়েটা করছে কি হুশ আছে তো তার।
তাসফি অপর হাতে ফোন মিউট করে নিস্তব্ধ’র মুখ থেকে হাত সরিয়ে তাকে শাসিয়ে বলল,
-” এই একদম কথা বলবেন না। দেখছেন না কথা বলছি।নিজেই নিজের পরিচয় দিতে নিষেধ করেছেন। এখন আবার এখানে এসে গলা ফাটাচ্ছেন। আজব তো।”
নিস্তব্ধ কোনো কথা বলল না।একই ভাবে তাসফির দিকে তাকিয়ে রইলো।
তাসফি ফোনের মিউট অফ করে বলল,
-” আরে কে কথা বলবে, ওই যে আমার পিচ্চি চাচাতো ভাই আরকি।”
আশা সন্দেহ নিয়ে বলল,
-” পিচ্চি ছেলের গলা কি এমন পরিপূর্ণ পুরুষ মানুষের মতো শোনায় নাকি কখনো হ্যাঁ? পাগল পেয়েছিস আমায়।”
তাসফি মেকি রাগ দেখহিয়ে বলল,
-” আরে কি মুশকিল দেখতো। ওর গলাটা একটু এমনই। আর কে থাকবে।”
আশা ভারী কন্ঠে বলল,
-” ঠিক আছে,ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম এবারে দুলাভাইয়ের নাম টা বল শুনি।আর কি করে সে। বাড়ি কেথায়।”
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে আবারো মিউট করলো, নিস্তব্ধ দিকে তাকিয়ে বলল,
-” এই আপনার আর কোনো নাম নেই?”
নিস্তব্ধ তাসফির থেকে চোখ সরিয়ে বৃষ্টি দেখছিলো।
তাসফির কথায় ভ্রু কুচকে বলল,
-” কেন?”
তাসফি বিরক্ত নিয়ে বলল,
-” আরে ভাই আছে কিনা বলে ফেলুন তো।”
নিস্তব্ধ কপাল কুঁচকে বলল,
-” আমি তোমার ভাই লাগি কোন জনমের?”
তাসফি হতাশ হয়ে বলল,
-” ওকে ঠিকআছে।ভাই লাগেন না।জামাই লাগেন হয়েছে? এবার বলুন। ”
-” আছে।কি দরকার?”
-” আছে যখন একটু দয়া করে বলবেন কি? বলে আমায় কৃতার্থ করুন জনাব।”
নিস্তব্ধ থমথমে গলায় বলল,
-” অনুভব শেখ। আমার দাদি রেখেছিলো এই নাম।”
তাসফি ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,
-” মহৎ কাজ করে ফেলেছেন আপনার দাদি।”
ওপাশ থেকে আশা হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।
তাসফি মিউট অফফ করে বলল,
-” হ্যাঁ আশা বল।”
আশা বিরক্তি নিয়ে বলল,
-” মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যাস তুই বলতো।”
তাসফি আমতা আমতা করে বলল,
-” ওই আসলে বৃষ্টি হচ্ছে তো নেটওয়ার্ক, নেটওয়ার্ক ঠিকঠাক পাচ্ছে না বুঝলি তো।”
আশা জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো সত্যিই বৃষ্টি হচ্ছে। বিল্ডিংয়ের ভেতর কখন বৃষ্টি হয় আর থামে বোঝাই মুশকিল।
অতঃপর নিশ্বাস ছেড়ে বলল,
-” যাইহোক এবার বল দুলাভাইয়ের নাম কি।”
তাসফি ততক্ষনাৎ উত্তর করলো,
-” অনুভব,অনুভব শেখ।”
আশা উৎফুল্ল চিত্তে বলল,
-” ভারি সুন্দর নাম তো। আচ্ছা পিক যেহেতু নেই কেমন দেখতে বলতো।নিস্তব্ধ স্যারের মতো হ্যান্ডসাম। নাকি আমাদের ইয়াকুব স্যারের মতো বেকুব টাকলা।হুম হুম।”
নিস্তব্ধ’র নাম শুনে তাসফি খুক খুক করে কেশে উঠলো।
নিস্তব্ধ’র দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বলল, ‘নিস্তব্ধ স্যারের মতো না ছাই। গোটা মানুষটাই তো উনি।’
নিস্তব্ধ’র দিকে আবারো আড় চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলল,’দেখাচ্ছি মজা বাসর রাতে বউ চেনো না তাই না। দুদিন পর ঘর থেকে বের করে দাও। এবার তোমায় দেখাবো মজা চান্দু।তাসফির খেলা তো কেবল শুরু।
আশাকে বলল,
-” আরে কি যে বলিস।নিস্তব্ধ স্যার আবার হ্যান্ড সাম নাকি।ছেহ কি যে বলিস না।তুই ও না পাগল আশা। আর আমার বর কেমন দেখতে তাইতো। আর আমাদের ইয়াকুব স্যারের থেকেও বিচ্ছিরি দেখতে কি বলবো।ইয়াকুব স্যারের তো চুল নেই। আর এই লোকের পেটে ইয়া বড় ভুড়ি। দেখতে একদম জলহস্তির মতো। বাবা যে কি দেখে এই অসহ্য লোকটার সাথে আমার বিয়ে দিলো আমি তে সারাক্ষণ এই ভাবি।
নিস্তব্ধ ততক্ষনাই নিজের পেটে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে নিলো।
কি বলে এই মেয়ে।তার এত স্লিম বডিকে পেট মোটা বানিয়ে দিলো।আর সে কিনা জলহস্তি।
অপাশের আশা কেশে উঠলো,
-” কি বলিস সত্যি নাকি দোস্ত। ”
তাসফি বলতে গেল,” আরে হ্যা আমি কি মিথ্যা বলছি নাকি। বেটার গালে সারাক্ষণ দুর্গন্ধ থাকে জানিস তো। আর তার মুখটা কালো বানরের মতো। আর দাত গুলো বেড়ালের মতো। মনে হয় এখুনি এসে কামড়…
তাসফি আর বলতে পারলো না।তার আগেই নিস্তব্ধ খট করে তার হাত থেকে ফোনটা এক প্রকার কেড়ে নিয়ে কলটা কেটে দিলো ততক্ষনাৎ।
তাসফির দুইহাত মুহুর্তের মাঝে চেপে ধরলো রেলিংয়ের সাথে।
ঘটনার আকস্মিকতায় তাসফি কিছু বুঝে ওঠার ও সুযোগ পেল না।
সে চোখ বড় করে চাইলো।
নিস্তব্ধ তাসফির দুই হাত রেলিংয়ের সাথে জোড়ে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার। মেরে না সবগুলো দাঁত ভেঙে রেখে দেব। বার বার আমায় জ্বালাতন করায় কিন্তু তোমার বিরাট বড় শাস্তি পেতে হবে।এই নিস্তব্ধ ইয়াসার কে না চ্যালেঞ্জ করো না বোকা মেয়ে।পরে কিন্তু ভীষণ পশ্চাতে হবে। থাপ্পড়ে তোমার চোপা ভেঙে দেব। কি ভেবেছো আমায়? কিছু বলছি না দেখে মাথায় চড়ে বসেছো?”
নিস্তব্ধ রাগে ফেটে যাচ্ছে।
কত্তবড় সাহস এই অসভ্য মেয়ের দিনের পর দিন তাকে অবহেলা করে যাচ্ছে। তার নামে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে।
চারপাশে তখন তুমুল ঝড়।বাতাসের এলোমেলো ঝাপটা। ঝড় হওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে বিদ্যুৎ নিয়ে গেল হঠাৎ করে।বেলকনি তে এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার।
দুজনের মাঝের দুরত্ব এক ইঞ্চি সমান হবে বোধহয়।
নিস্তব্ধ’র ধমকে তাসফি সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।
হঠাৎ দূরে কোথাও বর্জ্যপাত হলো।
সেই আলোয় তাসফির গোলগাল।ফোলা ফোলা,মায়াবী, ফর্সা মুখশ্রী সেই বর্জ্যপাতের আলোয় স্পষ্ট দৃশ্যমান হলো নিস্তব্ধ’র সামনে।
নিস্তব্ধ থমকে গেল।
নিস্তব্ধ ও নিস্তব্ধ হলো।
তার রাগির চোখের পাতা হঠাৎ করে উত্তাল ঢেউ থামিয়ে নদীর মতো শান্ত হয়ে গেল। তার হাতের বাঁধন দৃঢ় থেকে একটু হালকা হলো।
হুট করে এক হাত তাসফির হাত থেকে ছুটিয়ে তার কোমড় চেপে ধরলো।মাঝে থাকা দূরত্ব টুকু মিলিয়ে গেল নিমিষেই।
তাসফি চোখ মেলে চাইলো।
তখনি আবারো পরপর চারবার বর্জ্যপাত হলো।
তাতে দুয়েক মিনিট যাবত চারপাশ টা আবারো মৃদু আলোকিত হলো।
দুজন মানব মানবী তাদের চোখে চোখ রাখলো।
চোখের অসীম গভীরতা মাপতেই যেন ব্যস্ত তারা।পরিবেশের মতো উথাল-পাতাল তাদের মন পবন।
মন মাঝি হারিয়েছে কোনো দূর পাহাড়ে। কুল পাওয়া দায়।
তাসফির গোলাপী অধর জোড়া থরথর করে কাঁপছে।নিস্তব্ধ মন্ত্র মুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছে সে দিকে। কোনো অদৃশ্য শক্তি তাকে চম্বুকের মতো টানছে।
নিস্তব্ধ ধীরে ধীরে তাসফির মুখের দিকে এগিয়ে যেতেই আবারো বর্জ্যপাত হলো।তাসফি কেঁপে উঠলো তার হুশ ফিরলো।অধরে অধর মিলিত হবার আগেই তাসফি সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নিতেই নিস্তব্ধ’র পুরুষালী ত্বপ্ত অধর জোড়া ঠেকলো তাসফি বাম গালে।
বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে নিলো তাসফি।
পুরুষালী স্পর্শে কিছুটা কেঁপে উঠলো সে।
মুহুর্তেই নিজেকে শক্ত করে হাত আলগা থাকায় সে ধাক্কা দিয়ে নিস্তব্ধ কে দূরে ঠেকে দিলো।
আঙুল উঁচিয়ে আগুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে শাসিয়ে বলল,
-” ডোন্ট ক্রস ইউস লিমিট মিস্টার নিস্তব্ধ ইয়াসার। খবরদার আমায় ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না।আপনি আমায় বউ হিসাবে মানেন না।আমিও চাইনা আপনি কোনো মিস বিহ্যাভ করেন।সো নিজের সীমার মধ্যে থাকবেন।যাস্ট মাইন্ড ইট।
বলেই সে ঠাস করে বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে ভেতরে চলে গেল।
খাটে বসে নিজের মাথা চেপে ধরলো।
উফফ সব কিছু এত অসহ্য ঠেকছে কেন তার।
নিজের অজানতেই তার হাত খানা গিয়ে ঠেকলো তার বাম গালে।সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে নিলো তাসফি।
নিস্তব্ধ অন্ধকারের মাঝেই দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।পাগলা হাওয়ার ঝাপটা লাগতে লাগলো তার গায়ে।উত্তাল বর্ষণ ভিজিয়ে দিতে লাগলো তার সারা শরীর।
নিস্তব্ধ ইয়াসারের চোয়াল বেয়ে বৃষ্টির ফোটা চুইয়ে চুইয়ে পড়তে লাগলো।
ধূসর রংধনু পর্ব ১৫
সুদর্শন মানবটির পড়নের কালো টিশার্ট টাওজার ভিজে যেতে লাগলো বৃষ্টির ঝাপটায়।
এই মুহুর্তে তার মস্তিষ্কে চলছে বুদ্ধিদীপ্ত কোনো অদ্ভুত রহস্য। যেই রহস্য নিস্তব্ধ ইয়াসাস ব্যতীত বুঝি কেউ জানে না।জানবে কেমন করে। সে তো কখনো জানতেই দেবে না।
অন্ধকারের মাঝে সেই সুদর্শন মানব টি প্রথমবারের মতন মন খুলে মিষ্টি করে হাসলো।
তার হাসিতে প্রকৃতির এতক্ষণের উত্তাল ঝড় ও যেন থামতে শুরু করলো।
নিস্তব্ধ বসে পড়লো বেলকনির ফ্লোরে। তাকিয়ে রইলো শূন্য আকাশের মাঝে।খুঁজে নিতে চেষ্টা করলো সেখানে নিজেকে।ছাপিয়ে দিতে চাইলো সকল শূন্যতাকে।