ধূসর রংধনু পর্ব ১৮

ধূসর রংধনু পর্ব ১৮
মাহিরা ইসলাম

সকালের নাস্তা শেষে নিস্তব্ধ বসে আছে ড্রয়িংরুমের সোফায়।তার হাতে ডজন খানেক টিস্যু।।সে যে হারে হাঁচি দিয়েই যাচ্ছে। তাতে টিস্যুর গোটা প্যাকেটটা শুদ্ধ হাতে রাখলে বোধহয় হয় আরো ভালো হতো।
কিছু মিনিট পর পর সে সারা রুম কাঁপিয়ে হাঁচি দিয়ে যাচ্ছে। তার হাঁচির শব্দে সবাই কেঁপে কেঁপে উঠছে।মনে হচ্ছে এই কোথাও বর্জ্যপাত হলো বুঝি।
ছোট্ট চাঁচি তো ভয় পেয়ে তার হাত থেকে কাঁচের বাটিটাই ভেঙে পড়ে গেল।
মেজ চাঁচি পানি খেতে গিয়ে পানি নাকে মুখে সে কি অবস্থা। তাসফি তো রুমে ঢুকতে গিয়ে দরজার সাথে বারি খাবার যোগাড়।

পান্না তো ভয়ে কাকাইয়ের কাছেই যাচ্ছে না।
আহারে বেচারার জন্য তাসফির এবারে সত্যিই মায়া হচ্ছে। কিভাবে হাঁচি দিয়ে যাচ্ছে সমানে। বেচারার ফর্সা নাকটা লাল টুক টুকে হয়ে গেছে।ছিঁলেও গেছে বোধহয় কিছুটা টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে। জ্বালা পোড়া করছে কি?
রাহেলা এর মাঝে এক ফাঁকে নিস্তব্ধ কে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” দুলাভাই আপনি কি জীম করেন?”
নিস্তব্ধ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-” কেন?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাহেলা এমন গম্ভীর কন্ঠ শুনে অবাক হলো, কি এমন জিজ্ঞেস করেছে যে এমন চোখ মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করতে হবে।মনে হচ্ছে যেন তাকে কেউ জিজ্ঞেস করেছে দুলাভাই আপনি কি মরিচ বাটা খাবেন।কই না তো তা তো জিজ্ঞেস করে নি।
রাহেলা লজ্জা নিয়ে বলল,
-” এই যে দুলাভাই কি সুন্দর আপনার ফিটফাট বডি।কোথায়ও একটু ভুঁড়িবের হয় নি।জানেন তো আমাদের পারার মোড়ে মুদি দোকানদারের মাত্র পঁচিশ বছর বয়স।তার তো ইয়া বড় একখানা ভুড়ি বুঝলেন।”
নিস্তব্ধ বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে নিলো।এই অসভ্য মেয়েটার বাড়ির সবাই কি এমন তার মতো বাঁচাল নাকি আশ্চর্য।
রাহেলা আর কিছু বলতে নিবে তার আগে নিস্তব্ধ আবারো ঘর কাঁপিয়ে হাঁচি দিয়ে বসল।
রাহেলা তো শব্দে দূরে ছিটকে গিয়ে দাঁড়ালো।
বেশ ভয় পেয়েছে সে।আগাম বার্তা নেই হুট করে যদি কেউ এমন অদ্ভুত শব্দ করে বসে তাও পরপর দু তিন বার তাহলে তো ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক।

তার মাঝেই তাসফি এসে বসলো ওপর সোফায়
তার হাতে হেয়ারড্রায়ার।চুলগুলো তার কিছুতে শোকাচ্ছেই না। সকালে তার গোসল করা টাই ঠিক হয় নি। আবার না করেও মন ভালো হচ্ছিল না।
আয়েশা এসে বসল নিস্তব্ধ’র পাশে।
নিস্তব্ধ আর তাসফি দুজনের উদ্দেশ্যই ঠাট্টা করে বলল,

-” তা আমার দেওর জি চুল দেখছি ভেঁজা।আমার নতুন জায়ের চুলগুলোও সকাল সকাল ভেঁজা।কি ব্যাপার হুম হুম।নানির তাইলে এতদিনের দুঃখ ঘুছবে বুঝি।আর তাছাড়া নিস্তব্ধ বাবু রাউন্ড কি একটু বেশি হয়ে গেল নাকি।মনে হচ্ছে কাল সারারাত ভর দুজন মিলে শুধু গোসলই করে গেছ।যে হারে হাঁচি দিয়ে যাচ্ছেন।কোনো প্রতিযোগিতা ছিল নাকি আবার কাল।”
আয়েশা ভাবীর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে তাসফি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে। ইয়া খোদা মাটি ফাঁক হোক সে ভিতরে ঢুকে যাক জীবিত অবস্থাই।

তাসফি চোখ কটমট করে তাকালো নিস্তব্ধ দিকে।যেন চোখ দিয়েই ভষ্ম করে দিবে।সব দোষ এই অসভ্য ডাক্তারের।কে বলেছিল কাল সারারাত বেলকনিতে ভিজে গায়ে বসে থাকতে।কে বলেছিল তাসফিকে এভাবে রেলিংয়ে জাপ্টে ধরে রেখে ভেজাতে।তাই জন্যই তো তার গোসল করতে হলো।আর ভাবীর ঠাট্টা শুনতে হচ্ছে এখন।
এই লোকের জ্বর বাধে নি এই তো ভাগ্য।
নিস্তব্ধ আয়েশার দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাঁসি দিয়ে বলল,
-” কেন ভাবী আর একটু দরকার ছিল নাকি? দেখ তো গায়ের উজ্জ্বলতা বাড়ে নি নাকি।”
নিস্তব্ধ এমন লজ্জাহীন জবাব শুনে আয়েশা আর তাসফি এক সঙ্গে চোখ বড় বড় করে ফেলল।
আয়েশা হতবাক। সে যেন আকাশ থেকে পড়লো।একরাতের ডোজেই কি তাসফি তার দেওর কে লজ্জাহীন করে ছাড়লো নাকি।নিস্তব্ধ তো কখনো এভাবে কথা বলে না। নানি ব্যতীত এমন ইয়ারকি ফাজলামি তো সে কখনোই করে না।

যখনি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে সকলকে চোখ গরম করে চুপ করিয়ে দেয়।
আয়েশা তো তাই নিস্তব্ধ কে রাগাতে ফাজলামি করছিলো।কিন্তু তার দেওর তো উল্টো সুর গাইছে।
আয়েশা রসাত্মক ভঙ্গিতে আশ্চর্যান্নিত কন্ঠে সুধালো,
-” কি আর একটু দরকার ছিল দেওর জি?”
নিস্তব্ধ ভ্রু নাঁচিয়ে বলল,
-” গোসল ভাবী । আমি গোসলের কথা বলছিলাম।”

আয়েশা একবার তাসফির দিকে একবার নিস্তব্ধ দিকে তাকালো।অতঃপর তাসফির দিকে চোখ রেখে বলল,
-” কি গো মেয়ে। কি করেছ আমার দেওর কে। কি টিপস দিলে। একরাতে তাকে নিরামিষ থেকে আমিষ বানিয়ে ছাড়লে।বাহ খুব ভালো তো।বাড়িতে গিয়েই খবরটা লিক করতে হচ্ছে। ”
তাসফি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে। লোকটা তাকে সহ নিজেকে সকাল থেকে নির্লজ্জ প্রমাণ করতে উঠে পরে লেগেছে এর কারণ টা কি?
তাসফি রেগে নিস্তব্ধ’র দিকে তেড়ে গেল,তেজ নিয়ে বলল,
-” এই আপনার সমস্যা কোথায়।এমন নির্লজ্জের মতো বিহ্যাভ করছেন কেন।”
নিস্তব্ধ ভ্রু নাচিয়ে বলল,
-” আমি কখন কি করলাম ম্যাডাম তাই তো বুঝলাম না।”

-” আপনি বুঝবেন ও না অসহ্য। আমরা বিকালেই বাড়ি যাচ্ছি। আপনাকে আর শ্বশুর বাড়ি থাকতে হবে না।অনেক হয়েছে।আশার পর থেকে আপনি একটার পর একটা,একটার পর একটা অসভ্য কাজ কারবার করেই যাচ্ছেন। ”
নিস্তব্ধ যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো যাক বাবা এই অত্যাচার থেকে তো সে এবার বাঁচতে পারবে।
মেজ চাঁচি রান্না চাপিয়েছেন দ্রুত।হঠাৎ তাসফি এসে বলল তারা নাকি বিকালেই চলে যাবে।
মেজ চাঁচি আঁতকে উঠলেন এই মেয়ে বলে কি।একরাত যেতে পারলো আজকেই তারা চলে যাবে।এ কেমন কথা।ঘরে মেয়ে কতগুলো দিন পর ঘরে ফিরলো।আবার এত দ্রুতই চলে যাবে।
মোস্তফা সাহেব খুব মন খারাপ করলেন।
তাসফি বলেছে আবার খুব তাড়াতাড়ি আসবে।তবুও বাবার মন কি আর তা মানে।
রান্নার মাঝেই রাহেলা তার মা কে বলল,,

“দেখেছো মা আজ তাসফির সঙ্গে ওনার বিয়ে না হলে আমি পেতাম তাকে।আমার সঙ্গে বিয়ে হতে পারতো।কেন তাসফির সঙ্গে তোমাদের ওনার বিয়ে দেয়া লাগলো।”
মেজ চাচি রাহেলা কে মৃদু ধমক দিলেন,
” এক থাপ্পড়ে তোমার দাঁত ভেঙে দেবো অভদ্র মেয়ে।এসব কি কথা।আর ওনার কি, ওনার কি। দুলাভাই হয় তোমার। এই শিক্ষা দিচ্ছি তোমায় আমরা।মুখ সামলে কথা বলবে।আর তোমার বয়স হয়েছে বিয়ের।এখনি কিসের বিয়ে। পড়াশোনা করো মন দিয়ে।”
রাহেলা মুখ বাকিয়ে বলল,

-” তো তাসফির কি বয়স হয়েছে নাকি।আমরা একই বয়সী।তাহলে ওকে কেন বিয়ে দিলে শুনি।”
মেজ চাঁচি গভীর ভাবনায় ডুব দিলেন।
-” তাসফিকে যে কেন এত দ্রুত বিয়ে দেওয়া হলো তা তো শুধু সে, ভাইজানই জানে।তাসফির শ্বশুর শ্বশুড়ী আর তাসফির শ্বশুর বাড়ির গুটি কয়েক মানুষই জানে আংশিক সত্যি টা।মেয়েটা সে কথা জানলে তো মেনে নিতে পারবেনা।তাদের ফুলের মতো, ফড়িংয়ের মতো চঞ্চল মেয়েটা যে একদম ভেঙে পড়বে।ভাইজান পই পই করে নিষেধ করে দিয়েছে এই বিষয়ে তাসফিকে কিছু না জানাতে। মেয়ে টা যে তা সইতে পারবে না।
সময়টা দুপুরের আগ মুহুর্ত। তাসফির মনটা বিশেষ ভালো নেই।বাবার জন্য মন কেমন করছে।
মানুষটা কেমন যেন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালি জমেছে।আবার তাসফির যাওয়ার খবর শুনে মনটা খারাপ করে নিলেন।সেই বা কি করবে যেতে তো হবেই।তাছাড়া ক্লাসই বা কদিন মিস দেবে।এখান থেকেও যাতায়াত করা যায় তবে সেটা একটু বেশি দুরুত্বের পথ হয়ে যায়।
হঠৎ তাসফির ভাবনার মাঝেই তার কোলের মাঝে থাকা ফোনটা বেজে উঠলো।
দেখা গেল আশা আবারো কল করেছে।
সে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আশার উদ্ধিগ্ন কন্ঠ ভেসে এলো।

-” কিরে তাসফি? কাল ফোনটা ওভাবে কেটে দিলি কেন।তোর জামাই যেমনি হোক আর জানতে চাইবোনা যাহ।শুধু ট্রিট টা দিয়ে দিও দোস্ত। তোর জামাইকে আমিই খুঁজে বের করে তোকে সারপ্রাইজ দিবো দেখেনিস।”
আশার পাগলামো কথা বার্তায় তাসফি না চাইতেও মুচকি হাসলো।মেয়েটা সত্যি পাগল।
আশা আবারো বলল,
-” আরে তাসের ঘর তোকে যে কারণেফোন দিয়েছিলাম সেই গুরুত্বপূর্ণ আসল কথাটাই তো বলা হয়নি।”
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কি কথা?”
আশা হেঁসে হেঁসে বলতে লাগলো,
-” জানিস কি হয়েছে। কাল আমি কি শুনেছু জানিস?”
তাসফি বিরক্তি নিয়ে বলল,

-” আরে বাবা না বললে জানবো কিভাবে আগে বলতো।”
-“আরে বলছি বলছি শোন। কাল আমি শুনতে পেলাম মান্সা আর ওর সাঙ্গ পাঙ্গুর দল বলাবলি করছে মান্সা নাকি নিস্তব্ধ স্যার কে পছন্দ করে।”
এই তো তাসফি ঠিক ভেবেছিলো। ওই অসভ্য মেয়েটা ঠিক তার বরের দিকে নজর দিয়েছে।
তাসফি আশা কে ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে সুধালো,
-” তো এতে নতুনত্বের কি আছে।ওনাকে তো প্রায় সবাই পছন্দ করে।”
-” আরে সেটা হলে তো হতোই এর থেকেও বড় টুইস্ট আছে। মান্সা নাকি ওর বাবা, অর্থাৎ আমাদের কলেজে একজন ফাউন্ডার তাকে দিয়ে নাকি নিস্তব্ধ কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে।”
তাসফি চোখ বড় বড় করে ফেলল, বসা থেকে সে ঠাস করে দাঁঠিয়ে পড়লো। উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
-” কি বলিস।সত্যি নাকি।”
-” তো আর বলছি কি।এতবড় মাপের একজন মানুষ স্যারের কাছে যদি মেয়ের জন্য স্যারের হাত চায়,স্যার কি নিষেধ করতে পারবে বল?
ওমন জল্লাদ একটা মেয়ে যদি স্যারের বউ হয় ব্যাপারটা কেমন হবে বলতো।”
তাসফি মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ বের করে গালি ছুরলো মান্সার উদ্দেশ্যে।সালী এমনিই তার বর তাকে এখনো হৃদয়ে জায়গা দিলে না এর মাঝে একের পর ভীলেন গুলো তার জীবনে আসতেই আছে।আর এখন নাকি সোজা বিয়ের প্রস্তাব।ও মাই গড।ওও মাই গড।
সালার জিন্দেগীই ত্যাঁড়া ব্যাকা।
করুক তাকে তো মানে না নতুন আরেকটা বিয়ে করুক সে নাহয় চলে যাবে তার জীবন থেকে।যেখানে তার মূল্যই নেই সেখানে থে্কেই বা কি করবে।
তাসফি হৃদয় কেমন বিষাক্ত হয়ে উঠলে।মুখের ভেতরটা কেমন তেঁতো তেঁতো লাগছে।একটু পানি খাওয়া দরকার কি?
আশা আবার বলল,
-” আর শোন ওই সয়তান মেয়ে আর কি কি বলেছে।সেদিন নাকি তুই ওই মেয়েকে থাপ্পড় মেরেছিলি? তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নাকি মুখিয়ে আছে।তুই কাল আসিসনি দেখে তো সেই আফসোস করলো। তুই আসলেই নাকি তোর খেল খতম করে দেবে।আমি তো ভীষণ চিন্তায় আছি দোস্ত কই থেকে কি করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। তুই কিন্তু কলেজে এসে সাবধানে থাকবি বুঝলি।”
তাসফি মেজাজ চড়ে যাচ্ছে। এই মেয়ে শুরুটা করেছে কি।একের পর এক জামেলা তার সাথে করেই যাচ্ছে। দুরে থাকতে চাইছে।আর ওই অসভ্য মেয়েটা তার সঙ্গে জামেলা করতেই যেন তৎপর।কেমন উঠে পড়ে লেগেছে দেখ।কি শত্রুতা ওর সাথে তার।তাসফির চারিপাশ কেমন অসহ্য ব্যাথায় বিষাক্ত হয়ে উঠছে।
তাসফির রাগের আগুনে মাঝে ঘি ঢালতে তৎক্ষনাৎ উদয় হলো নিস্তব্ধ’র।

মুহুর্তেী মাঝে তাসফির কিছু বুঝে ওঠার আগের তার হাত থেকে ছো্ মেরে মোবাইলটা নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-“কি ব্যাপার বলোতো তোমার।সারাক্ষণ দেখি মোবাইলে কথা বলতে থাকো।এক ধ্যানে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকো। মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলতে থাকো শুনি। আবার মিট মিট করে হাসতে থাকো।
কি ব্যাপার কি চলছে বলুন তো । স্বামীকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছেন না তো ম্যাডাম।খোদা কিন্তু আপনায় প্রচুর গোনা দেবে।”
তাসফি রক্ত চক্ষু নিয়ে নিস্তব্ধ’র দিকে তাকালো।
যেন এক্ষুনি তাকে ভীষ্ম করে দিবে।
খেয়ে ফেলবে টাইপ চাউনি।

নিস্তব্ধ ভরকে গেল কিছুটা।কি হলো মেয়েটার হঠাৎ এত রেগে গেল কেন।
তাসফি নিস্তব্ধ চারদিকে গোল গোল ঘুড়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে,শক্ত কন্ঠে সূধালো,
-” স্বামী? কিসের স্বামী? আপনি আমায় কখনো স্ত্রী হিসাবে মেনেছেন নাকি? না মানলে স্বামী হলেন কেমন করে মিস্টার নিস্তদ্ধ ইয়াসার।স্বামীর কোন দ্বায়িত্ব টা পালন করেছেন শুনি?বিয়ের রাতে বউকে মানবেন না বলেছেন।দুদিন পর ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন।
এমন কি আমায় আজ পর্যন্ত নিজের স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন? সবার থেকে বিয়ের খবর লুকিয়ে রেখেছেন।আমার বান্ধবী আশা আমার নাম দিয়েছে তাসের ঘর।নামটা না একদম আমার সাথে ঠিকঠাক ম্যাচ করে।আসলেই তো আমার একটা ত্যাসের ঘর আছে।
যেখানে আমার হাসবেন্ড আমায় বলবে ইচ্ছে হলে কাছে টেনে নেবো ইচ্ছে হলে ছুঁড়ে ফেলবো।
কি মনে হয় আপনার মিস্টার নিস্তব্ধ ইয়াসার? সব কিছু এত সহজ? ফারদার আর কখনো নিজের অধিকর কর্তৃত্ত আমার উপর ফলাতে আসবেন না। যেদিন সবার সামনে আমাকে নিজের স্ত্রী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার যোগ্যতা রাখবেন সেদিনই এই স্বামী শব্দটা উচ্চারণ করবেন আপনি।তার আগে না এই পবিত্র শব্দ টা আপনার মুখে মানায় না।”

তাসফি বেরিয়ে গেল রুম ছেড়ে।
তার চোখ গড়িয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু বেরিয়ে এলো।তাসফি সেটা সংগোপনে মুচকি হাসি দিয়ে মুছে নিলো।
যাক এতদিনের তার ভেতরে জমে থাকা দীর্ঘ পাহাড় সমান জমানো কথা ওই অহংকারী লোকটার কাছে উগড়ে দিতে পারলো।
এতেই যেন তার মন থেকে দীর্ঘ দিনের গড়ে তোলা বুঝা গুলো নেমে গেল এক নিমিষেই।
নিস্তব্ধ অপলক চোখে তাসফির যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।
অতঃপর সে কিছুসময় সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে রইলো।
আজ যদি তাসফি তার হৃদয়ের ভিতরের লুকানো প্রত্যেকটা কথা গম্ভীর নিস্তব্ধ না বলতেও বুঝতে পারতো তাহলে সে এই কথা গুলো বলতে পারতো না।
হ্যাঁ নিস্তব্ধই তো ভুল।নিস্তব্ধ যা চেয়েছিলো তাই হচ্ছে। তবে নিস্তব্ধ’র বেঁছে নেওয়ার পথটা যে ভুল ছিল সেটা সে আজ বুঝতে পারলো।

তাসফি এতটা কষ্ট চেপে রেখেছিলো সে ভাবেনি।
ভুল পন্থা বেঁছে নেওয়া টা তার একদমি উচিত হয় নি।
তার একটি ভুল সিদ্ধান্তে সকলে কষ্ট পাচ্ছে।
একজন বুদ্ধিমান পুরুষ হয়ে সে কি করে এই ভুলটা করতে পারলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ১৭

এখন আদ্যত্ত্বেও কি সে তাসফি কে তার ভেতরে লোকানো সত্যি রহস্য বলার পর তাসফি কি বুঝবে তাকে?
নাকি পুরো পরিস্থিতি তার হাতের বাহিরে চলে যাবে।
পরিস্থিতি বোধহয় সব পাল্টে যাবে। হঠাৎ করে যেমন রৌদ্রুরে মেঘ হয়।তেমনি করে তাদের জীবনেও বোধহয় হঠাৎ মেঘেরা হাতছানি দেবে।জীবনটাই তো এমন গোলকধাঁধা মোড়া । কখনো সুখ কিংবা কখনো দুঃখ।

ধূসর রংধনু পর্ব ১৯