ধূসর রংধনু পর্ব ৩৬

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৬
মাহিরা ইসলাম

ভালোবাসার অমর সুধা পানে ব্যস্ত কপোত-কপোতী।
আদরের মাঝে নিস্তব্ধ মাদকীয় স্বরে ফিসফিস করে সুধালো,
-” ইশশ! এত সফট কেন তুমি।”
তাসফি লজ্জায় দিশেহারা। এত এত লজ্জা বুঝি তার মাঝে আগে কখনো ভর করেনি।
নিস্তব্ধকে উদাম গায়ে দেখে তাসফি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো।তা দেখে নিস্তব্ধ দুষ্টু হাসলো।
দুহাত দিয়ে ইচ্ছে করে তাসফির দুচোখ টেনে ধরলো।
তাসফি খিলখিল করে হেঁসে দিলো।

-” আপনি এক নাম্বারের বদমাশ পুরুষ মানুষ বুঝলেন। ইশশ চোখ থেকে হাত সরান।”
নিস্তব্ধ হাত সরালো না।আলতো করে চুমু খেল চোখের ভাঁজে। তাসফি অনুভূতির শিহরণে মূর্ছা যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
রুমের চারিপাশের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় তখন আদিম উন্মাদনা।
পিপাসিত একজোড়া প্রেমিক যুগলের অনুভূতি তখন শীর্ষে।
নিস্তব্ধ তখন হঠাৎ কিছু অবলোকন করে থেমে গেল।
তাসফি অস্থির হয়ে উঠলো। উতলা হয়ে নিস্তব্ধকে জরিয়ে রেখে আদুরে স্বরে প্রশ্ন করলো,
-” কি হলো।থামলেন কেন।?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিস্তব্ধ জবাব দিলো না।
কোনো রকমে নিজের উত্তে*জনা দাবিয়ে তাসফির পাশে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো।
তাসফির মাঝে ভয় কাজ করলো।কোনো ভুল করে ফেলেনি তো সে। প্রশ্ন করলো,
-” কি হয়েছে ডাক্তার সাহেব?”
নিস্তব্ধ দাঁত কটমট করে বলল,
-” পিরিয়ড চলছে এটা তুমি আমায় আগে জানাবে না? রাবিশ!”
তাসফি চমকে উঠলো।হ্যাঁ তাইতো আজ তো তার পিরিয়ডের ডেট ছিল।অনুভূতি ক্ষুন্ন না হওয়ায় তাসফি রাগে কিছু বিরবির করলো।বিরক্তির স্বরে ক্ষোভ ঝেড়ে বলল,
-“হ্যাঁ তাইতো আপনি আগে কত জানতে চেয়েছেন। আমি আগে কখনো এই বিষয়ে ডিসকাস করেছি আপনার সঙ্গে যে আপনাকে আগে জানাবো। আশ্চর্য লোক। ”
নিস্তব্ধ তাসফিকে নিজের বক্ষের সঙ্গে মিশিয়ে জরিয়ে নিয়ে হাস্কি স্বরে সূধালো,

-” হুশশশ!”
তাসফি না থেমে আবারো বলল,
-” আপনি আমাকে আজ কেন তুলে নিয়ে আসলেন অসভ্য মানব।আমি বলেছিলাম আজ আমায় জোড় করে তুলে নিয়ে আসুন।তাসফির মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। ”
নিস্তব্ধ প্রেয়সীর ব্যথিত অবয়বের দিকে তাকিয়ে রইলো।সঙ্গে তার অধিক উম্মাদনায় ফিক করে হেঁসে দিলো।দেখা যাচ্ছে বউ তার চেয়েও অধিক লোভী অধিক অধৈর্যের।
তাসফি রাগী চোখে তাকালো।বলতে নিলো,

-” আপনি…”
মুহুর্তে দু জোড়া অধর একত্রিত হলো।তাসফি বাকি কথা বলাটুকু বলতে ফুসরত অবদি পেল না।
অধরসুধা পান করে নিস্তব্ধ ফিসফিস করে বলল,
-” বিশেষ মুহুর্তে শুধু মাত্র আমি কথা বলতে বললে তবেই বলবে।আই কান্ট রিপিট ইট। ওকে।”
তাসফি লজ্জায় মাথা নত করে রাখলো।
নিস্তব্ধ আবারো আদুরে স্বরে কথার ভাঁজে স্নেহ মিশিয়ে বলল,
-” এসব কোনো ব্যাপার নয় বউ।মন খারাপ করে না আমার তুমি হলেই চলবে।
বুঝলেন ম্যাডাম হুম?”
তাসফি লজ্জায় মুখ লুকালো তার অর্ধাঙ্গের বক্ষভাজে।কেমন অদ্ভুত সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে তার।কই আগে তো কখনো এমন লাগে নি। হালাল পুরুষের বক্ষে মাথা রাখার মাঝে বুঝি এতই সুখ।
চারপাশ কেমন স্বাধীন মনে হয়।এটাই তো তার একমাত্র ভরসাস্থল। নিস্তব্ধ’র প্রতি কৃতজ্ঞতায় তার চোখে অশ্রু জমে।
নাটক,সিনেমা,গল্প,উপন্যাসে।এমনকি কত বাস্তবতার ভীরে শুনেছে।পুরুষকে শারীরিক সুখ দিতে না পারলে অধিক অত্যাচারের স্বীকার হতে হয়েছে।

পিরিয়ড তা তো খোদার তরফ থেকেই অনেক বড় নিয়ামত।তবে কেন তা সব পুরুষ বোঝে না।কেন অহেতুক নারীকে গালমন্দ করে ছোট করে।শারীরিক নির্যাতনে জর্জরিত করে।এই তো সে যখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়াশোনা করতো।তখন তার এক বান্ধবী নতুন বিয়ে হয়েছিল।বরটা ছিল এক নম্বরের জানো*য়ার। ছোট মেয়েটাকে পিরিয়ডের মাঝে ওও ছাড় দিতো না।তাসফির তখন এসব শুনে ঘৃণায় গাঁ গুলিয়ে আসতো।ছিহ।মেয়েটা পরবর্তীতে পেটে ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাতো।আর তার বর নাটক বলে তা চালিয়ে দিতো।তাসফির তখন খুব করে ইচ্ছে হতো ওই পুরুষটির কাছে গিয়ে সকলের সামনে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে এসে থুথু ছিটিয়ে আসতে।
তখন নিজের প্রতি নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিল। ভবিষ্যতে তার বর যদি এমন হয় না সে যে কোন পরিস্থিতিতে তার মুখে ডিভোর্স পেপার ছুঁড়ে আসবে।

কিন্তু দেখ নিয়তির খেলা।তার বর তো তার সঙ্গে বাসর রাতে কথা তো দুর সামান্য ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখলোনা।
আজ তার বাবাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করছে।সে আবার উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলল,
-” বাবা।তোমায় অসংখ্য ধন্যবাদ আমায় এই অসম্ভব সুন্দর পুরুষটিকে নিজের জন্য বেঁচে দেওয়ার জন্য। তুমি যেখানেই থাকো আমাদের জন্য দোয়া করো।
তোমায় খুব ভালোবাসি বাবা।ভীষণ ভালোবাসি।”
তাসফির চোখ দিয়ে অশ্রুকণা গরিয়ে পড়তে লাগলো।
নিস্তব্ধ বুকে ভেজা অনুভব হতে দুহাতে তাসফির মুখ উঁচু করে ধরলো।
তাকে কান্না করতে দেখে অস্থির হয়ে পড়লেো। দুহাতের আঙুলের সাহায্য জল মুছে দিলো
তাসফি আদরে নুইয়ে বলল,

-” কিছুনা। বাবার কথা মনে পড়ছে।”
নিস্তব্ধ তাসফির সিঁথির ভাঁজে চুমু খেয়ে বলল,
-” হুশশ কাঁদেনা বোকা মেয়ে। তোমার বাবা যেখানেই থাকুক সে সর্বক্ষণ চায় তুমি হাসিখুশি থাকো।এভাবে বোকাদের মতো কান্না করতে বলেনি তো তোমায় সে।”
তাসফি মৃদু ধমক দিলো তাকে,
-” চুপপপ। আপনি বেশি বুঝেন।বাবা বলেছে কান্না করতে।বাবা চিঠিতে বলেছে তার জন্য কান্না করে করে ভাসিয়ে ফেলতে।”
নিস্তব্ধ হতভম্ব হয়ে তাকালো।
করুণ স্বরে হার মানার ভঙ্গিতে বলল,

-” আচ্ছা বাবা কান্না করো। বেশি বেশি করে কান্না করো।যাও।কিচ্ছুটি বলবো না আমি।তুমি কান্না করো।”
নিস্তব্ধ বিরবির করে বলল,
-“উফফ! ভাঙ্গবে তবুও স্বীকার করবে না।”
তাসফি চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” এই কি বললেন আপনি?”
বিস্তব্ধ আমতা আমতা করে বলল,
-” কককই কিছু না তো। তুমি কান্না করো তো।এতদিকে চোখ কান যায় কেন তোমার। ”
-” কারণ আমার চোখের জ্যোতি অনেক ভালো সঙ্গে কানের ফুটোও অনেক শার্ফ বুঝলেন।হুহ।”
-” আচ্ছা বুঝলাম।”

নিস্তব্ধ মনে মনে বলল,” মেয়েতো নয় গিরগিটি সঙ্গে সঙ্গে রং বদলায়।”
নিস্তব্ধ মিছে রাগ দেখিয়ে বলল,
-” দূর রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে দিলে।”
-” বেশ করেছি।”
নিস্তব্ধ অভিনয় করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
খানিকবাদে টের পেল দুটো হাত তার গলার ফাঁকে ও কাঁধে হাত দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরছে।
নিস্তব্ধ মুচকি হাঁসলো।
তাসফি নিস্তব্ধ’র কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-“আচ্ছা আপনি আমায় বললেন আমি নাকি আপনাকে ভালোবাসার আর্জি জানিয়েছি? কবে বলুন তো। কই আমার তো এমন কিছু মনে পড়ছে না। এই আপনি মিথ্যা বলে আমায় বোকা বানাচ্ছেন না তো?”
নিস্তব্ধ তাসফির কথা শুনে দুষ্টু হাসলো।
এপাশ ফিরে রমণীর কোমড় আকরে ধরলো।নাকের ডগায় কামড় মেরে বলল,
-” এই নিস্তব্ধ ইয়াসার কখনো বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলে না বুঝলেন।”
তাসফি নিস্তব্ধ’র উদোম পিঠে থাপ্পড় মেরে বলল,
-” উফপ।এত কামড়া কামড়ি করছেন কেন আশ্চর্য আগে তো এমন ছিলেন না।”
নিস্তব্ধ মাদকীয় স্বরে বলল,
-” আগে তো এমন কাছে এসে ভালোবেসে আদর করিছি ম্যাডাম।সুযোগটাই তো দেন নি। টেকনিক না খাটালে সেটাও বোধহয় আজ কপালে জুটতো কিনা সন্দেহ। ”
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,

-” কি টেকনিক খাটিয়েছেন? এই এক মিনিট।আশা তখন আমায় সারপ্রাইজের কথা বলে কোথায় চলে গিয়েছিল? আর আপনি ওখানে এলেন কি করে।তার মানে?
তাসফি কটমট করে বলল,’ কালকে শুধু একবার যাই কলেজে পাখির বাসার পিন্ডি চটকাবো আমি।”
নিস্তব্ধ তাসফির কথার ভঙ্গিতে জোড়ে জোড়ে হাসতে লাগলো।
তাসফি এতে আরো রেগে গেল।নিস্তব্ধ’র কাধে খামছি বসালো।
নিস্তব্ধ আর্তনাদ করে বলল,
-” উফফ কি করছো বোকা মেয়ে।আমার ফর্সা পিঠখানা ঝাঁঝড়া করে দিলে তো।”
-” বেশ করেছি।আপনি হাসবেন কেন।”
নিস্তব্ধ করুন চোখে তাকিয়ে বলল,

-” এখন কি হাঁসাও যাবে না?”
-” না।”
-” ওকে।ওকে বাবা। তবে শুনো সেদিন কি বলেছিলে।”
তাসফি মুহুর্তে সমস্ত রাগ পানিতে মিশিয়ে কোতুহল চিত্তে বলল,
-” কি বলেছিলাম।”
নিস্তব্ধ ফিসফিস করে তাসফির সেদিনের বলা বাক্যগুলো আওড়ালো ধীর স্বরে,
-“ডাক্তার সাহেব।আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন না প্লিজ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।।আ..মি আ..মি আপনার সঙ্গে সারাটাজমন কাটাতে চাই।আমি এখনি মরতে চাইনা। আপনাকে ভীষণ করে ভালোবাসি ডাক্তার সাহেব।কথা দিন আমার সঙ্গ ব্যতীত কখনো কারো হবেন না।”
তাসফি চোখ বড় বড় করে বলল,

-” এই কথাগুলো আমি বলেছিলাম?”
-” অবশ্যই। ”
-” কোথায় বলেছিলাম?”
-” সেদিন মর্গে অজ্ঞান হওয়ার আগে।”
তাসফি লজ্জায় নিস্তব্ধ কে ছাড়িয়ে ওপাশ ফিরে শুলো।তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলল,
-” কখনোই না। অসম্ভব আমি এগুলো মোটেও বলিনি।আপনি বানিয়ে বলছেন।”
নিস্তব্ধ রেগে গেল।
পেছন থেকে তাসফির কোমড় চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল,
-” আপনাকে বলেছি তো আমি বানিয়ে বলা, মিথ্যা বলা পছন্দ করিনা। ”
তাসফিও ইষৎ ব্যাথা পেল। হার স্বীকার করে নিলো সে।

কপোত-কপোতীর ভালোবাসার গভীরতা দেখে যেন ওই দূর আকাশের চাঁদ ও হিংসা করছে। তাকে তো কেউ এভাবে ভালোবাসে না।কে বলবে উক্ত রমণী সন্ধ্যায় ও জেদ করে গো ধরে বসেছিল পুরুষটির সঙ্গে আসবে না বলে। কে বলবে এতদিন তারা ভালেবেসেও না স্বীকার করে মান অভিমানের পাল্লা ভারী করে বসেছিল।এমনকি গত কয়েকদিন যাবত তাদের মাঝে কোনো কথাই হয় নি।
কে বলবে আজ তাদের দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গনের প্রথমরাত।ভালোবাসা এমনই।শতযুগ দূরে তাকলেও মনের মাঝে একে অপরে যে জায়গা করে নিয়েছে শত যুগ পরেও তার স্পর্শ প্রথম হোক কিংবা হোক শেষ মনে হবে এ স্পর্শ তার কত দিনের চেনা। তার কত আপন। তাদের কথার ভাঁজে নেই কোনো জড়তার প্রলেপ।কেমন নিঃসঙ্কোচে কথা বলে চলেছে তারা একের পর এক।কজন যুগলের মাঝে দেখা যায় তা।
হাজারো কথার ভীরে কখন নিস্তব্ধ’র উদোম বক্ষে মাথা রেখে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো টের ওও পেল না।
বাহিরে সূর্যিমামা এখনো দেখা দেয়নি।তার সোনালি রশ্মি ছড়িয়ে পড়েনি ধরণীতে। তবে চারপাশ আবছা আলোকিত।রাতে চাঁদমামার দেখা গেলেও এখন ভোরের শুভ্র আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সমীরণে কেমন শীতল হাওয়া বইছে।

ফজরের আজানের পরে নিস্তব্ধ’র ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ধর্মীয় ইবাদত শেষে জায়নামাজে বসে পশ্চিমে মুখ করে রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলো সে ।হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করলো।
আজকের মনটা তার প্রফুল্লতায় মোড়া।
ঘুম ভেঙে যখন প্রেয়সীর অবয়ব কে নিজের বাহু বন্ধনীতে পেল।পৃথিবীর সর্বসুখ তখন তার দোরগোড়ায় বোধহয়েছিল।বিয়ের সময়টাতেও কি সে কখনো ভেবেছিলো আজকের এই মধুর রজনী তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল।তাই কথায় আছে।খোদা যা করেন তার সৃষ্টির কল্যাণের জন্যই করেন।তার সকল কর্মের মাঝে লুকায়িত আছে কল্যাণ।কারো প্রথমেই বোধগম্য হয়। কারো হয় ধীরে ধীরে।
বাহিরে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। আকাশের মেঘলাভাব কেটে গিয়ে বাতাবরণে সূর্যের উত্তপ্ত তীক্ষ্ণ রশ্মি ছড়িয়ে পড়েছে।

তাসফি পিটপিট করে চাইলো।বেডে নিজেকে শূন্য আবিষ্কার করলো।তার ডাক্তার সাহেবের দেখা নেই।
পাশে তাকিয়ে তাসফি চমকে গেল।
বেডের সঙ্গে লাগোয়া বিশাল জানালা।কই রাতে তো খেয়াল করেনি।
অবশ্য খেয়াল করবে কেমন করে এখানে তো পর্দা টানানো ছিল।
বাইরের দৃশ্য দেখে তাসফির মন প্রফুল্লতায় ভরে উঠলো।কোতুহল জাগলো বাইরে বের হওয়ার জন্য।
মিনিটের মাঝে কোনোরকমে ফ্রেস হয়ে সে টিপটিপ পায়ে সদরদরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো।
বাইরে বেরিয়ে চারিদিক ঘুরে সে অবাক হয়ে গেল ইশশ বাইরেটা কি সুন্দর। চারপাশে সবুজ আর সবুজ।
ইটের বাউন্ডারির বাহিরে যে রাস্তায় যানবাহনের কোলাহল তা এখানে দাঁড়িয়ে বোধার সাধ্যি নেই কারো। রাতে তো সে খেয়ালই করেনি ঘোরের বশে।
বিভিন্ন গাছগাছালির সমাহার।কোথা থেকে যেন ফুলের মিষ্টি সুভাস ভেসে এলো।কৌতুহল চিত্তে তাসফি সামনে এগিয়ে গেল।

পেছন থেকে আবু তখন তাসফিকে ওদিকে যেতে দেখপ মুখ কাচুমাচু করে বলল,
-” ছোট বউদি মনি।ওদিকে যাওয়া বারণ আছে।”
ছেলে কন্ঠ শুনে তাসফি অবাক চোখে তাকালো।সঙ্গে সম্মোধনে আরো অবাক হলো।প্রশ্ন করলো,
-” তুমি আমায় চেনো?”
আবু আমতাআমতা করে বলল,
-” হ্যাঁ মানে ওই আরকি।”
তাসফি খুশি হলে।জিজ্ঞেস করলো,
“তুমি কে? আর ওদিকে যাওয়া নিষেধ কেন বললে?”
আবু মুখ কাচুমাচু করে বলল,
-” আমি আবু ছোট সাহেবের ফার্মহাউসের দেখাশোনা করি ছোট সাহেব তার বাগানে কাউকে যাইতে দেন না।”
তাসফি তা পাত্তা না দিয়ে বলল,

-” দূর।কিছু হবে না।”
তাসফি আবুর নিষেধ না শুনে এগিয়ে চলল সে দিকে।
বাগানের কথা শুনে তা দেখার কৌতুহল তার আরো বাড়ছে। ফুল সে ভীষণ পছন্দ করে।
ফুলের বাগানে এসে তাসফি নিজেই যেন ফুলের সঙ্গে মিশে গেল।কতখানি যায়গা জুড়ে শুধু হরেক রকমের ফুল আর ফুল।ইশশ সকাল সকাল এতসুন্দর মনোরম দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য হবে তার সে ভাবতেই পারেনি।
-” এখানে কি করছেন?”
ভাবনার জগৎ এ বিচরণ করার মাঝে হঠাৎ পিছন থেকে পুরুষালী কন্ঠস্বর পেয়ে চমকে তাকালো।
নিস্তব্ধকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে সুধালো,
-” এগুলো আপনার?”
-” উহু।”
তাসফি মন খারাপ করে বলল,

-” তবে আপনি যে বললেন এটা আপনার টাকায় গড়া ফার্মহাউস?”
নিস্তব্ধ মুচকি হাঁসলো। এগিয় তাসফিকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো।
তাসফি চেঁচিয়ে উঠে বলল,
-“এই আপনি এমন গায়ে পড়া হয়ে যাচ্ছেন কেন। কাল থেকে কথায় কথায় সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরছেন শুধু। ”
নিস্তব্ধ নির্লিপ্ত স্বরে বলল,
-” আমার জিনিস আমার যখন ইচ্ছা ধরতেই পারি।”
তাসফি লজ্জা পেল। অসভ্য পুরুষটা তাকে শুধু থেকেই লজ্জা দিতে ওস্তাদ। প্রথমে কটু কথা বলে লজ্জায় ফেলত।আর এখন কাছে ঘেঁসে লজ্জা দেয়।
তাসফি কথা ঘোরাতে চেষ্টা করলো,
-” কচু ছাড়ুন।আর বলুন না এটা আপনার নয় কেন?”
নিস্তব্ধ তাসফির কানের সঙ্গে ঠোঁট মিশিয়ে চুমু খেল ফিসফিস করে বলল,
-” আমার ছিল বাট এখন থেকে এর দখনদার আপনার ম্যাডাম।যত্নে গড়া এই সজ্জা এই মুহুর্ত থেকে আপনার কব্জায়।”

তাসফি আনন্দে উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” সত্যিই?”
-“হুমমম তো।”
পরমুহূর্তেই তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কিন্তু ওই ছেলেটা যে বলল এখানে প্রবেশ নিষেধ।”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে আরো আদুরে কন্ঠে ফিসফিস করে বলল,
“তা অন্যের জন্য।আপনার জন্য এই নিস্তব্ধ ইয়াসারের সমস্ত উদান উন্মুক্ত বুঝেছেন? তার পদচারণায় আপনার বিচরণ সার্থক।”

তাসফি চোখ বন্ধ করে নিলো।নিস্তব্ধ মাদকীয় স্বরে প্রতিবার সে কেমন ঘোরের মাঝে ডুবে যায়।আদ্যত্ত্বের এখান থেকে আর কখনো সাঁতরে উঠা সম্ভব নয়।উহু কখনো নয়।
নিস্তব্ধ তাসফি কে ছেড়ে দিয়ে বলল,
-” থাকুন আমি আসছি। একটু কাজ বাকি।”
তাসফি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” আপনি আবার কাজও করেন নাকি।”
নিস্তব্ধ চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” কি মনে হয়।”

নিস্তব্ধ গমনের পর তাসফি অনেকটা সময় প্রকৃতি উপভোগ করলো।ফুলেদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখলো।
নিস্তব্ধ সন্তর্পনে তার কয়েকটা ছবি ক্যামেরা বন্দি করে নিল।
অনেকটা সময় পর তাসফি ভেতরে আসলো।
কোথাও থেকে টুংটাং শব্দ গোচর হলো তার।
মনে হচ্ছে ওদিকে কিচেন। তাসফি এগিয়ে গেল সে দিকে।
কিচেনে পৌঁছে হতভম্ব হয়ে নিস্তব্ধ’র দিকে তাকিয়ে রইলো তাসফি।
পরমুহূর্তেই খিলখিল করে হাসিতে মেতে উঠলো তার দেহমন।
তার হাসি কিছুতেই থামছে না।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৫

হাসির শব্দে নিস্তব্ধ পেছনে তাকালো।
কিছুটা ভ্রু কুঁচকে বিরক্তের চোখে চাইলো তাসফির পানে।
ভ্রু নাচিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে প্রশ্ন করলো,
-” হেয়াট হ্যাপেন্ড?”
তাসফির হাসার দমকে উত্তর করতে পারলো না। সে হাসতেই থাকলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৭