ধূসর রংধনু পর্ব ৩৮

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৮
মাহিরা ইসলাম

নিস্তব্ধ নিজের গাড়ি এসে থামালো তাদের কলেজ থেকে কিছুটা দূরে। ইশারায় সে তাসফিকে নামতে বলল।
তাসফি গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে দেখলো।
করুন দৃষ্টিতে সে চারিপাশটা দেখতে লাগলো।
জায়গাটা বস্তির মতো।পরপর ঘরবাড়ি লাইন ধরে সাজানো। গুহস্থদের মতো তাদের ঘরগুলোর সামনে কোনো জায়গা বা দীর্ঘ ফাঁকা উঠান নেই।
চারপাশে কিছু কিছু ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা খালি গায়ে হাফপ্যান্ড পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ কেউ দৌঁড়াচ্ছে। কেউ কেউ খেলছে।

মধ্যবয়স্ক নারী-পুরুষ তাদের নিত্যদিনের কর্মে ব্যস্ত।
সময়টা তখন দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল।ঘড়িতে টিকটিক করে সময় জানান দিচ্ছে চারটা অলরেডি পেরিয়ে গেছে।
নিস্তব্ধ’র সঙ্গে নতুন যাত্রা শুরু হতেই তাসফি যেন সব নতুন নতুন পরিস্থিতি, ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে সঙ্গে নিজের চোখে সব অবলোকন করছে।
চারিদিকে সব তার নতুনত্বের অস্তিত্ব ছোঁয়া। যা আগে কখনো সে এভাবে চক্ষুদর্শন করেনি।
নিস্তব্ধ হাতের ইশারায় সব বাচ্চাদের কাছে ডাকলো।
নিস্তব্ধ কে তাদের চোখে পড়তেই ডাক্তার আঙ্কেল বলে বলে সবাই ছুঁটে আসলো।
তাসফি অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” ওরা আপনাকে চেনে?”
নিস্তব্ধ মুচকি হেঁসে জবাব দিলো।
-” জ্বী। দেশে আসার পর এখানে আমার মাসে কয়েকবারই আসা হয়।ব্যস।ওরাও চিনে গেল।আজ আমার মিসেস কে ওদের সঙ্গে পরিচয় করাতে আনলাম।তা কেমন লাগছে আপনার মিসেস নিস্তব্ধ ইয়াসার? ব্যাপার টা দারুন না?”
তাসফির মনের কোণে লজ্জারা এসে উঁকি মারলো।
মুচকি হেঁসে মাথা নিচু করে।ঘাঁড় কাঁত করে হুম বোঝালো।
নিস্তব্ধ বাচ্চাগুলোর উদ্দেশ্য বলল,

-” বাচ্চারা শান্ত হও।আজ তোমাদের ডাক্তার আঙ্কেলের একমাত্র বউয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।
আজ তোমাদের আন্টি তোমাদের জন্য ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার নিয়ে এসেছে। ”
তাসফি অপলক চোখে চেয়ে রইলো তার প্রাণপুরুষের হাঁসিখুশি মুখের দিকে।যেই লোকটা বউ বলে মানবে না বলে এত কাহিনি করলো আজ সেই কতসহজে এদের কাছে তাকে নিজের বউ বলে পরিচয় দিচ্ছে। সত্যি সময় পরিবর্তনশীল।কার ভাগ্যের চাকা ঘুরে কোথায় মোড় নেবে বলা যে বড্ড মুশকিল। যার উতকৃষ্ট উদাহরণ সে নিজে।
নিস্তব্ধ’র ডাকে তাসফি ভাবনাচূত হলো।বলল,
-” কি হলো বউ প্যাকেট গুলো ধরো ওদের দাও।কি ভাবছো।”
তাসফি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে চোখের কোণে জমা হালকা জলকণা খুব সন্তর্পণে আঙুলের সাহায্য মুছে ফেললো।
নিস্তব্ধ দিকে ফিরে হাসি মুখে বলল,

-” কই দিন দিন।খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তো।”
নিস্তব্ধ প্যাকেটগুলো তাসফির হাতে ধরিয়ে দিলো।
তাসফি এক এক করে হাসি মুখে ওদের সেগুলো দিতে লাগলো।
খাবার পেয়ে তাদের মুখে সে কি আনন্দ।
এসব ছোট ছোট বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলে নিজের মাঝে কেমন অন্যরকম আনন্দ অনুভব হয়।
বাচ্চা গুলো খাবার পেয়েই ছুঁট লাগিয়েছে পুনরায়।
-” এই যে ডাক্তার সাহেব এই দিকে আহেন দেখিনি। ”
তাসফি চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখতে পেল একটা টিনের ঘরের দরজায় এক বুড়িমা লাঠি ভর দিয়ে বসে আসে।তিনি ডাকলেন বোধহয়।
তাসফি নিস্তব্ধ’র দিকে তাকালো প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে। নিস্তব্ধ মুচকি হেঁসে বলল

-” চলো।এনাকে আমি চিনি।ওনার অপারেশন করেছিলাম।বৃদ্ধা এখমো ভারী মজবুত বুঝলে।এখানে এলেই ওনার সঙ্গে দেখা করে যাই।”
তাসফি ঠাট্টার ছলে বলল,
-” কি করে বুঝলেন মজবুত হুম? আপনি কি ধরে দেখেছেন? ”
নিস্তব্ধ তাসফির কপালে দু আঙুলের সহিত টোকা মেরে বলল,
-” মাই মিসেস আপনি কিন্তু দিন দিন বড্ড দুষ্টু হচ্ছেন।
প্রশ্ন সোজা ভাবে করলেই হতো।আপনার উত্তর জানিয়ে দেই।এই নিস্তব্ধ ইয়াসারের তো তার বউ ব্যতীত অন্য কোন নারী কে ছোঁয়াই হলো না।খুব খারাপ ব্যাপারটা তাই না বলুন। অন্যদের বোধহয় একটু খানি ছোঁয়া উচিত ছিল।কি বলেন? তাতে আপনি খুশি হতেন তাইনা?”

তাসফি চোখ গরম করে তাকালো।
লোকটা কি করে বুঝলো তার অভিসন্ধি।
সে তো কথা কে কাটছাট করে প্রশ্ন করেছিল।
নিস্তব্ধ গাঁ দুলিয়ে হাঁসতে লাগলো।
হাসতে হাসতেই নিস্তব্ধ বৃদ্ধার সামনে বরাবর সিঁড়িতে বসে পড়লো।
বৃদ্ধা তাসফির হাত টেনে তাকে পাশে বসিয়ে দিলো।
বাহ সত্যি এখনো বুড়ির গায়ে বড্ড জোড়।
নিস্তব্ধ হাঁসিমুখে বলল,

-” কি খবর তোমার দাদি?”
বৃদ্ধা লাঠি দিয়ে তাসফিকে খোঁচা মেরে দেখিয়ে বলল,
-” হ্যাঁ তা ভালোই।তোমার কি খবর লো ডাক্তার সাহেব।এই জনকি আমার সতিন লাগে নাকি হুম।আমার থেকে অনুমতি না নিয়াই বিয়া কইরা ফেললা।এইডা কিন্তু একদম ঠিক করো নাই”
তাসফি লজ্জা পাচ্ছে ভীষণ। এরকম পরিস্থিতিতে সে আগে কখনো পরে নি।
নিস্তব্ধ সঙ্গে বৃদ্ধা ওও হাসছে গা দুলিয়ে
বৃদ্ধা আবারো বলল,

-” তা কেমন আছো লো সতিন।জামাই আদর সোহাগ করে তো হুম?”
তাসফি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো।
নিস্তব্ধ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার অর্ধাঙ্গিনীর রিয়াকশন দেখছে।আর মিটিমিটি হাসছে। প্রেয়সীর নাস্তানাবুদ মুখখানা দেখলে আজকাল তার মাঝে আনন্দ অনুভূতিরা ঘীরে ধরে।
বৃদ্ধা হাক ছেড়ে তার ছেলের বউকে ডাকলো,
-” কই রে আব্দুলের মা এই দিকে আহো ওগো নাস্তাপানি দাও।”
-” যাই আম্মা”
কথার মাঝেই বৃদ্ধার ছেলের বউ বাটিতে করে নাড়ু, মুড়ি, সরবত, বাতাসা নিয়ে এলো।
তাসফি তা দেখে বলল,

-‘ এগুলোর কি দরকার ছিল দাদী আমরা খানিকক্ষণ আগেই খেয়ে এসেছি।”
বৃদ্ধা তাসফির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
-” আরে খাও লো।ওগুলান তো ভারী খাবার এগুলান হালকা খাবার নাও খাইয়া লও।গরিবের ঘরে এগুলানই ছিল। খাও খাও।”
নিস্তব্ধ তার তাসফি কিছু কিছু খেল।
তাসফি নাড়ু টা মুখে দিয়ে বড্ড ভালো লাগলো।
শেষ কবে মায়ের হাতের বানানো নাড়ু খেয়েছিলো মনেও নেই।স্বাদ ওও স্মরণে নেই।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো তাসফি।
বৃদ্ধা ও বাচ্চাদের থেকে বিদায় নিয়ে তারা গাড়িতে উঠলো।
বৃদ্ধা হেঁসে বলল

-” আবার আইসো গো তোমার জামাই লইয়া সতিন।”
তাসফি মাথা নাড়লো।
সকাল থেকে আজকের দিনটা তার ভীষণ ভালো কাটছে। বাবা গত হওয়ার পর এত সুন্দর সে কোন দিনটি উপভোগ করেছে জানে না।
ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলে বুঝি সবকিছু এমন সুন্দর লাগে।
অদ্ভুত ভালোলাগে।
তাসফি দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইলো নিস্তব্ধ’র পানে।
নিস্তব্ধ সামনে তাকিয়েই দুষ্টুমির ছলে বলল,

-” কি ব্যাপার? মনে হচ্ছে আপনার ডাক্তার সাহেবের চেহারার মাধূর্য বেড়ে গিয়েছে হুম?”
তাসফি আনমনেই মাথা নাড়লো।
তা দেকে নিস্তব্ধ ঠোঁট টিপে হাসলো।
নিজের ভুল বুঝতে পেরে তাসফি আমতা আমতা করে সামনে তাকালো।
কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে তাসফি অন্য কিছু বলতে লাগলো।
তাসফি বলল
-“কি মিষ্টি ওদের ব্যবহার দেখেছেন।ইশশ! আমি এখানে আবারো আসবো বুঝেছেন।
প্রেয়সীর কথন নিস্তব্ধ মন দিয়ে শুনছে।
তাসফি আবারো বলল

-” আমাদের যখন বেবি হবে।তাকে ওদের সঙ্গে খেলতে দেব।কি দারুন না ব্যাপার টা বলুন।”
নিস্তব্ধ ঠোঁট টিপে হেঁসে বলল,
-” হ্যাঁ ভীষণ দারুন।আমার ওয়াইফ যেহেতু আমার থেকে একধাপ এগিয়ে তাই প্রসেসটা দেখছি দ্রুতই শুরু করতে হবে। কি বলেন?আপনার পিরিয়ড ক্লোজের লাস্ট ডেট কবে বলুন তো?”
তাসফি ড্যাব ড্যাব করে নিস্তব্ধ’র দিকে তাকিয়ে রইলো কথার সারাংশ বুঝতে।যখন বুঝতে পারলো একটু আগে ঘোরের বশে সে আবারো কতবড় বোকামি করেছে।
মুহুর্তে সে মুখ হাত দিয়ে ঢেকে পাশে ঘুরে গেল।
ইশশ তাসফি দিন দিন তুইও বড্ড লাগামহীন হয়ে যাচ্ছিস।ছিঃ ছিঃ।
তাসফিদের বাসার সামনে এসে নিস্তব্ধ ব্রেক কষলো।
তাসফি কথায় কথায় বুঝতেই পারেনি কখন চলে এলো।
নিস্তব্ধ এগিয়ে এসে তাসফির সিট বেল খুলতে লাগলো।
তাসফি শুষ্ক ঢোক গিললো।

নিস্তব্ধ কাছাকাছি আসলেই তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়।
সন্ধ্যার আলো আধারীর খেলা চারিদিকে। মাগরিবের আজান পরবে কিছুক্ষণের মাঝেই।
কোথাও গাছের শুকনো পাতা ঝরে পড়ছে বাতাসে।
মাধুরী সুভাস চারিদিকে। প্রেমের উত্তাল হাওয়া বৈছে কপোত-কপোতীর মাঝে।
নিস্তব্ধ নিঃশব্দে তাসফির মুখের ভাবগতি লক্ষ করছে।
মুহুর্তের সে তাসফির কোমড় আঁকড়ে ধরলো।
মুখে ফু দিলো।তাসফি চোখ বন্ধ করে নিল।
নাম না জানা অনুভূতির দল ঘিরে ধরলো তাকে।
নিস্তব্ধ তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

-” পরশু শুক্রবার। আপনাকে আমি নিজে থেকে ওসমান ভিলায় দেখতে চাই মিসেস নিস্তব্ধ। আপনি যেমন করে একা একা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন ডিভোর্সের।তেমনি একা একা ওই বাড়ি চলে যাবেন ব্যাগ গুছিয়ে।গট ইট।
আপনাকে ছাড়া থাকা আমার আর এক মুহুর্ত ওও সম্ভব না। আজ রাতটা কি করে থাকবো বলুন তো?”
তাসফি বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকালো।
হতভম্ব হয়ে সুধালো,
-” মানেটা কি।আমি একা যাবো মানে। পাগল হয়েছেন আপনি? কখনো সম্ভব নয়।”
-” এটা আপনার পানিশমেন্ট। ”
-” রাখুন আপনার পানিশমেন্ট। আর রাতে একা থাকতে পারবেন না মানে কি হুম? এতো দিন একা থাকেন নি।”
নিস্তব্ধ বাঁকা হেঁসে বলল,

-” উহু।ছিলাম তো। কিন্তু কাল থেকে তো অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে গেল।এখন তো আপনাকে ছাড়া ঘুম আসবে না বুঝলেন।”
কথার মাঝেই নিস্তব্ধ তাসফির কপালে অধর ছোঁয়ালো।তাসফি খানিকটা কেঁপে উঠলো।
তাসফি পুনরায় কিছু বলতে নিবে সেই সুযোগ নিস্তব্ধ দিলো না। মুহুর্তে দু জোড়া অধর একত্রিত হল কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
তাসফি নিস্তব্ধ’র শার্ট আঁকড়ে ধরলো।

-” কথাটা মাথায় রাখবেন। শুক্রবার আপনাকে ওসমান ভিলায় দেখতে চাই।”
দরজার লক খুলে তাসফি ছিটকে বেরিয়ে গেল।
দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল।একবারো পেছন ফিরে তাকালো না।
নিস্তব্ধ তাসফির কাজে আনমনেই হাঁসতে লাগলো।তাসফি নিজের রুমে এসেই দম নিলো।
লোকটা দিনদিন হুটহাট অসভ্য কাজ করে বসে।
সে কিছু বলারই ফুসরত পায় না। উফফ!
নিস্তব্ধ পুনরায় গাড়ি ঘুরিয়ে হসপিটালের দিকে চলল।
রাত তখন প্রায় দশটার কাছাকাছি। নিস্তব্ধ মাত্র হসপিটাল থেকে ফিরে ফ্রেস হয়ে বসলো।
তখনি মেসেঞ্জার গ্রুপে কল আসলো।
নিস্তব্ধ আস্তে ধীরে কলটা রিসিভ করলো।
ওপাশ থেকে সুজন চিল্লিয়ে বলল,

-” সালা এক্ষুনি তুই মোড়ের চায়ের দোকানে আয় এক্ষুনি। ”
নিস্তব্ধ বিরক্তিতে ফোন দূরে সরিয়ে বলল,
-” চিল্লাসছিস কেন। শুনতে পাচ্ছি তো আসতে কথা বল।আর এখন কেন। আমি খুব টায়ার্ড।”
সুজন আবারো বলল,
-” টায়ার্ড তোমার ***** ভরে দেব। ”
নিস্তব্ধ রাগী স্বরে বলল,
-” ফালতু কথা বলবি না সুজন।”
সৃজন সুজনের হাত থেকে ফোন নিয়ে বলল,
-” দেখভাই দ্রুত আয়।কথা বাড়াস না। ”
-” ওয়েট ওয়েট।তোরা সবাই এক জায়গায় নাকি?”
সুজন ফোন কেড়ে নিয়ে বলল,
-” অবশ্যই এখন আপনি দয়া করে আসলে ষোলকলা পূর্ণ হবে।”
-” ওকে আসছি।”
ওরা তিনজন শয়তানি হেঁসে বলল,

-” আসো না বাছা ধন আসো।আজ তোমার ভবলীলা সাঙ্গ করবো আমরা।”
নিস্তব্ধ দোকানে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে ওরা চেপে ধরলো।
মাহীন নিস্তব্ধকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরলো।সুজন দুইহাত ধরলো,আর সৃজন বসালো ওর নাক বরাবর ঘুসি।
নিস্তব্ধ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো ওদের দিকে।
এসবের মানে কি?
নিস্তব্ধ আঁতকে উঠে বলল,
-” কি করছিস ভাই তোরা মরে যাবো তো আমি।আমার বউটা অকালে বিধবা হয়ে যাবে।ছাড় ভাই প্লিজ। তোদের পাতানো বোন ও বিধবা হবে। ছাড়।
কি হয়েছে টা কি বলবি তো।মাহীন হাত ছাড়।ভালো হবে না কিন্তু। এমন ল্যাং দেব না। পরবর্তী তে আর বাবা ডাক শুনতে পারবি না।”

কথার মাঝে সৃজন আরেকটা ঘুসি মারলো।
মাহীন নিস্তব্ধ’র হুমকি শুনে সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে দিলো।
সে মোটেও পঙ্গু হতে রাজী নয়।বাসন্তী আর তাদের ভবিষ্যৎ বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে সে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চায়।সঙ্গে মানুষের দাঁতের সেবা করবে।সবাইকে দাঁতের মর্ম বোঝাতে চায়।
নিস্তব্ধ হাত ঝাড়া মেরে সুজনের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
সুজনের নাক বরাবর ঘুসি মারলো।সৃজনের কাঁধ বরাবর ঘুসি মারলো
চারজন ধস্তাধস্তি করে হাঁপিয়ে গেল।
ঠাস করে বেঞ্চিতে বসে পড়লো।
দোকানদার চাচা। ওদের কান্ড দেখে মিটমিট করে হাসছে।এদের খুনশুটি সে ভালোই উপভোগ করে।
তারা দোকানে আসলে দোকানটার প্রতিটা কণা উৎফুল্লতায় ভরে উঠে।
সুজন হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

-” সালা, আমাদের না জানিয়ে বাসর সেরে ফেলো।কলিজায় কত্তবড় সাহস।”
নিস্তব্ধ সৃজনের কাঁধ মাথা রেখে বলল,
-” বাসর আর সারতে পারলাম কই তার আগেই তো নাক ভেঙে দিলি তোরা।”
সৃজন নিস্তব্ধকে ধাক্কা মেরে বলল,
-” সর একদম ছুবি না।তোর জন্য কতকিছু করলাম আর শেষ পর্যন্ত আমাদের না জানিয়ে বাসর সেরে ফেললি।না পেলাম বাসর সাজানের সুযোগ।না পেলাম টাকা পয়সা।”
নিস্তব্ধ মাহীনের মাথায় হাত রেখে বলল,
-” বিশ্বাস কর ভাই তোরা ওর দিব্বি সেরকম কিছু হয়নি।”
মাহীন ছিটকে দূরে সরে গেল।আহাজারি করে বলল,
-” কি ভাই তুই সবসময় আমাকেই কেন টার্গেট করিস।আমি অকালে মোটেও মরতে চাইনা।”
সুজন চোখ ছোট ছোট করে নিস্তব্ধ’র সামনে এসে বলল,
-” সত্যি বলছিস তো?”
নিস্তব্ধ মাথা নাড়লো।
মাহীন বলল,

-” তাহলে তাসফিকে কে নিয়ে ফার্মহাউসে কেন গিয়েছিলি।
-” এমনি ওকে একটু ঘোরাতে নিয়ে গিয়েছিলাম।”
সৃজন ব্যঙ্গ করে বলল,
-” তাই? তুমি জোড় করে তাকে ঘোরাতে নিয়ে গিয়েছিলে ফার্মহাউসে?”
নিস্তব্ধ আবারে মাথা নাড়লো
মুহুর্তেই সে ওদের দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে হুশিয়ারী কন্ঠে বলল,
-” এই এক মিনিট, এক মিনিট। তোরা কি করে জানলি?”
সৃজন বলল,

-” ভাই আমি কিছু জানিনা।মাহীন আর সুজনই আমায় জানিয়েছে। ”
মাহীন আর সুজন আমতাআমতা করতে লাগল।
এখন ওরা কি করে বলবে আশা আর বাসন্তীর কথা।
ওরা দুজনেই আমতা আমতা করে বলল,
-” সেটা তোর জানা লাগবে না। আমাদের তথ্য তো সঠিক। কই থেকে কিভাবে জানলাম এটা তোর জেনে কোনো কাজ নেই।”
-” হুমম! তাই না? দাঁড়া।”
নিস্তব্ধ উঠে ওদের দুুটোকে ধাঁওয়া করলো।
মাহীন বলল,ভাই ভাই বিশ্বাস কর সব দোষ এই সুজনের।
সুজন দৌঁড়াতে দৌঁড়াতেই মাহীনের পা বরাবর লাথি মারলো।
-” আমার দোষ না।”

রাত প্রায় একটার কাঁছাকাছি।দূরে কোথাও শেয়ালের ডাক শোনা যাচ্ছে।
সুদর্শন যুবকটি আজও দাঁড়িয়ে আছে তাসফির রুমের বেলকনির সামনে শিমুল গাছের নিচে।
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পড়ে মাজা সমান রেলিং টপকে ভেতরে প্রবেশ করলো সে। দরজা লাগাতে আজও ভুলে বসেছে বোকা মেয়েটা।
যুবকটি এগিয়ে গিয়ে তাসফির মাথার কাছে বসলো।
কপালে আলতো করে চুমু খেল।
তাসফি ঘুমের ঘোরেই কিছুটা কেঁপে উঠলো।
দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইলো সে।
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রস্থানের সময় হলো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৭

অতঃপর যুবকটি তার প্রেয়সীর বালিশের পাশে একখানা চিঠি রেখে বেরিয়ে এলো নিঃশব্দে। তার ভালোবাসার সাক্ষী এই রাত।রাতের তাঁরা ভরা আকাশ।ওই জ্বলজ্বল করা ধূসর চাঁদ।
সব থেকে বড় কথা তার ভালোবাসার সাক্ষী সে নিজে।

ধূসর রংধনু পর্ব ৩৯