ধূসর রংধনু পর্ব ৪৬
মাহিরা ইসলাম
প্রকৃতি জুড়ে মৃদু সমীরণ বইছে।পাখিদের কন্ঠস্বরে আকুলতা। মেঘে ঢাকা আকাশ এখন উন্মুক্ত। উম্মাদের ন্যায় চলছে নিস্তব্ধ’র চার চাকার গাড়িটি।
শত তাড়া তার গন্তব্যে পৌঁছানোর।
এইমাত্র নীলপদ্ম নামের আইডি থেকে আরাধ্য তার দ্বিতীয় ভিডিওটি পাবলিশ করলো তাদের কলেজের গ্রুপে।
সেখানে সে মাথা নিচু করে বসে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে।
সেখানে সে স্পষ্ট করে বলেছে সে নিজের সুবিধার্থে তাসফি এবং নিস্তব্ধ স্যারের ভিডিওটি করেছিল এবং পাবলিশ করেছিল। সে জানতো তারা বিবাহিত তবুও তাদের দুর্নাম ছড়াতে সে এমনটা করেছে। সে এখন সকলের নিকট ক্ষমা প্রার্থী।সে তার অপরাধ বুঝতে পেরেছে।
এই ভিডিও দেখার পর সকল শিক্ষার্থী আরো আফসোসের সুর তুলছে। শুধু শুধু তারা নিস্তব্ধ স্যার আর তাসফিকে জরিয়ে কতগুলো নোংরা কথা বার্তা বলল।
নিস্তব্ধ আর তাসফি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে আরাধ্যদের বাসার সামনে।
আরাধ্য’র নামটা শুনে সেও কিছুটা থমকে গিয়েছিল প্রথমে।বিশ্বাস করতে খানিকটা কষ্ট হয়েছিল তারও।
আরাধ্য কে নিজের ভাইয়ের স্থানে বসিয়ে ছিল সে।এই প্রথমবার তাসফি বোধহয় ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে ঠকে গেল।আরও কি কেউ আছে সেই লিষ্টে? ছেলেটা এক নিমিষেই কেমনে তাদের বন্ধুত্বের ফাটল ধরিয়ে দিলো। কেন করলো ওও এমনটা? কি ক্ষতি করেছিল তাসফি তার। তার জবাব নিতেই তাসফি এসেছে।
নিস্তব্ধ আরাধ্য’র নাম ধরে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো।
আরাধ্য বাবা মা সে সময় কেউই বাড়িতে ছিলেন না দুজনেই কর্মজীবী মানুষ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আরাধ্য, আরাধ্য বেরিয়ে এসো। বেরিয়ে এসো কুইক।”
নিস্তব্ধ রাগে ফুঁসছে।
নিস্তব্ধ’র কন্ঠ পেয়ে আরাধ্য ভয়ে কাঁপতে লাগলো।
আজকে বোধহয় তার নিস্তার নেই। তবুও সে তো অপরাধী।
আরাধ্য এক পর্যায়ে ছুটে বের হলো আর সহ্য করতে না পেরে।
আরাধ্য’র দেখা পেতেই নিস্তব্ধ’র ভেতরের আগুন যেন দাউদাউ করে বেড়ে গেল।
সে তেড়ে গেল ওর দিকে।হাতে মুখে কিল ঘুসি মেরে অস্থির করে তুললো।
তাসফি থামাতে চেয়েও পারছে না নিস্তব্ধ কে।টেনেও সরাতে পারছে না।
এমনটা হবে জানলে সে আসতো না কিছুতেই। সে তো রক্তারক্তি চায় নি।
লোকটা বেজায় ক্ষেপে আছে।
সুজন গাড়ি থেকে নেমে দৌঁড়ে এলো।
-” নিস্তব্ধ কি করছিস থাম।ছেলেটা ওর ভুল স্বীকার করেছে। থাম ভাই।”
সুজন কোনো রকমে নিস্তব্ধ কে থামালো।
-“ছাড় আমায় সুজন। আজ ওকে চরম শিক্ষা দেব।সব জানার পরেও এতবড় স্পর্ধা ওও পায় কি করে।”
আরাধ্য তখন ও দুহাত পেছনে মাটিতে ঠেকিয়ে বসে রয়েছে ক্লান্ত ভঙ্গিতে ।
ধস্তাধস্তি করে কিছুরা জখম ওও হয়েছে সে।
সুজন ওদের থামিয়ে আরাধ্য’র দ্বিতীয় ভিডিওটি ওপেন করে দেখালো।
সুজনকে নিস্তব্ধ আসার পথেই মেসেজ করেছিল আরাধ্য’র কথা বলে।তাইতো ছুটে এসেছে। সে ঠিক জানে নিস্তব্ধ এখানে এসে কি করতে পারে।বন্ধুকে সে হারে হারে চেনে।
তাসফি ভিডিও দেখা শেষে আরাধ্য’র দিকে একপলক চেয়ে এগিয়ে গেল।বসে থাকা আরাধ্য’র শার্টের কলার ঝাঁকিয়ে
কন্ঠে বিষাদ ঠেসে সুধালো,
-” কেন করলি এমনটা বল? বল কেন করলি? কি লাভ হলো তোর এতে বল? ”
তাসফি এই পর্যায়ে আরাধ্য’র গালে থাপ্পড় মেরে বলল,
-” চুপ করে থাকিস না আরাধ্য বল প্লিজ ভাই। এই আরাধ্য বল না।”
ভাই ডাক শুনে আরাধ্য ছলছল নয়নে তাকালো তাসফির পানে।তাসফির চোখেও জল।
আরাধ্য স্পষ্ট ঠাহর করতে পারলো তার জীবন থেকে দমকা হাওয়ার ন্যায় নিজ হাতে কিছু সুখ বিসর্জন দিয়ে ফেলেছে সে।পুনরায় চাইলেও সে আর তা ফিরিয়ে আনতে পারবে না। বিশ্বাস একবার ভঙ্গ হলে পুনরায় গড়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।পুনরায় গড়লেও মনের মাঝের সেই চিড় থেকেই যায়। ঝোঁকের বসে করা কাজ আজ তার নিকট হতকারিতা।
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল আরাধ্য।
অতঃপর খুলে বললো কালকের ঘটনা।
আরাধ্য মান্সাকে পছন্দ করে।কলেজের শুরু থেকেই সে মান্সাকে দেখে নিজের মন হারিয়েছে। তার প্রতি প্রবল ঝোঁক তার। কিন্তু ভয়ে সে কখনো নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারেনি ওকে।তারপর মান্সার করা কর্মকান্ডে আরাধ্য কিছুটা আহত হয়েছিল। সে বুঝেনি মান্সা এততাও খারাপ একটা মেয়ে হয়ে উঠবে।
কাল যখন মান্সা তাসফির নিকট ক্ষমা চাইলো।আরাধ্য যেন নতুন করে আশার আলো দেখতে পেল।ভেবেছিলো তার পছন্দের মানুষটার বোধহয় এবারে সুমতি হয়েছে।
তাই তো আরাধ্য সেই সময় ক্লাসের বেল শেষে মান্সা যখব বাইরে বের হলো সেও বের হয়েছিল তাসফিদের আড়ালে এক ফাঁকে। ওয়াশরুমের সামনেই দোনোমনা করতে করতে শেষমেশ মান্সাকে আরাধ্য প্রপ্রোজই করে বসে।
সে কিছুটা হীনমন্যতায় ভুগছিল। তবে এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে ও ইচ্ছে হয় নি।
আরাধ্য বোধহয় তখন ঘোরের মাঝে ছিল।
কি থেকে কি করছে নিজেই জানে না।
মান্সা তখন মুচকি হেঁসে আরাধ্যর কাঁধ ধরে বসা থেকে দাঁড় করালো।মান্সার স্পর্শে আরাধ্য’র বুকের মাঝে ধুকপুক শব্দের ঢোল বৃদ্ধি পেল যেন। তার মনের মাঝে থাকা প্রণয়ের দহন তাতে আশকারা পেয়ে দাউদাউ করে জ্বলে উঠে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো।
মান্সা তখন মুচকি হেঁসে বলল,
-” আরাধ্য আমি তোমায় এক্সেপ্ট করতেই পারি।তবে জানো তো এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় এমনি এমনি কিছু পাওয়া সম্ভব নয়।তোমাকেও যে আমার জন্য কিছু করতে হবে।কি সোনা করবে তো?”
আরাধ্য’র চোখ চকচক করে উঠলো।
-” কি করতে হবে বলো তোমার জন্য আমি সব করতে রাজি। ”
এই পর্যায়ে আরাধ্য মান্সার হাত ধরে ফেলল।
মান্সার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
-” বিশ্বাস করো যা বলবে আমি তাই করবো আমি।”
মান্সা তখন মুচকি হাঁসলেো। বলল,
-” চিন্তা করো না সোনা আমি তোমায় সঠিক সময় সব বুঝিয়ে দেব। যাও এখন ক্লাসে যাও দুষ্টু ছেলে।”
মান্সা চলে যেতে নিলে আরাধ্য পিছু ডেকে সুধালো,
-” তবে কি আমি ধরে নেব তুমি আমার প্রস্তাবে রাজী?”
মান্সা পিছু ঘুরে রহস্যময় ভাবে হেঁসে সুধালো,
-” সেটা নাহয় তোমায় রাতেই বোঝাবো কেমন।”
আরাধ্য যেন তখন আকাশে উঁড়ছিল।
ক্লাসের একফাঁকে মান্সা তার ফোন নম্বরটাও দিয়ে যায়। ফেসবুক আইডি তো সে প্রতিদিন ফলো করে মান্সা কে সবার আড়ালে।
রাতে যখন মান্সা তাকে নিজে থেকে মেসেঞ্জারে নক দিলো সে যেন আকাশে ভাসছিলো।
প্রথমে মেসেজের মাধ্যমে মান্সার মিষ্টি করার তোড়ে আরাধ্য হারিয়ে যাচ্ছিলো ওর মাঝে।
তারপর যখন ওও ভয়েস কল দিলো আরাধ্য যেন তখন পুরো মান্সার বশে।
আরাধ্য’র তখন মনে হচ্ছিল মান্সাই তার সব। ওর জন্য সে সব করতে পারবে।
মান্সা হঠাৎ তখন তাকে নিস্তব্ধ আর তাসফির সেই ভিডিওটি পাঠালো।এবং কি করতে হবে বুঝিয়ে দিলো।
আরাধ্য তখন এতটাই মান্সায় ডুবে ছিল যে কি থেকে কি করছে সেই খেয়ালই ওর ছিলো না।
আরাধ্য আর মান্সা ভোর পর্যন্ত দীর্ঘ আলাপ কার্য চালিয়ে গেল।
অতঃপর ঘোরের বশেই সে ভিডিওটা পাবলিশ করে ঘুমিয়ে গিয়েছিল।
ওই যে কথায় আছে না প্রথম প্রথম প্রেমে পড়ে মানুষ। ন্যায় অন্যায় নীতি বোধ সব হারিয়ে ফেলে।চারপাশে মানুষজন তখন থমকে দাঁড়ায়, চলতে তাকে তখন শুধু সে আর তার নতুন প্রেমিকা।
আরাধ্যর ওও হয়েছিল তাই।
আরাধ্য’র যখন ঘুম ভাঙলো তখন যেন সে হুঁশে ফিরলো।
ভিডিও এর কমেন্ট বক্সে মানুষের ছিঃ ছিঃ বার্তায় তার বুকের মাঝের ঘুমিয়ে থাকা বিবেকবোধ যেন আসতে আসতে জাগ্রত হতে লাগলো।
খানিকক্ষণ বাদে তার এক বন্ধু নিস্তব্ধ’র সম্পূর্ণ বক্তব্য রেকর্ড করে তাকে পাঠালো।
মাথা চেপে বসে রইলো সে।
নিস্তব্ধ’র বক্তব্য সম্পূর্ণ শুনে আরাধ্য’র যেন মনে হলো সে ঝোঁকের বশে কতবড় অপরাধ টাই না করেছে। তার মনে হচ্ছে সে এখন গলা পানিতে দাঁড়িয়ে সাঁতার না পারায় ছটফট করছে।ঢেউয়ের তোপে সে নির্ঘাত এখন তাকে ভেঁসে যেতে হবে।এবং একটা সময় সে বোধহয় সেই মাঝ নদিতে হাজারো জলরাশির মাঝেই চিরতরে হারিয়ে যাবে।
আরাধ্য হাওমাও করে কাঁদতে লাগলো।সে এখন কি করবে।কি করে এর সমাধান করবে।কেন তার সকালে এই কথা গুলো মনে বাজলো না।
কথায় আছে না ঠুস খেলেই মানুষের হুশ ফেরে।তার হয়েছে সেই দশা।
আরাধ্য চোখ মুখ মুছে ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলো।
অতঃপর সে ক্যামেরার সামনে বসে পরবর্তী ভিডিওটা বানিয়ে পাবলিশ করে দিল।তার যা হয় হবে।
তার জন্য নিস্তব্ধ স্যার তার যা শাস্তি দেবে সে সব মাথা পেতে নেবে।
প্রণয়ের তাগিদে আরাধ্য তার দ্বিতীয় ভিডিওটিতে মান্সার নাম উল্লেখ করেনি।শত হোক সে তার প্রথম প্রেম।তার ছোট্ট মস্তিষ্কে যা এলো তাই করলো।
সে চায় না মান্সা আর মানুষের চোখে ছোট হোক।দোষ তো তারও আছে শতভাগ। সে কেন মান্সার কথায় মজলো।
আরাধ্য’র কথা শেষ হতেই নিস্তব্ধ সুজনকে আদেশ করলো,
-” সুজন এই মুহুর্তে ওর থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে ওর মা বাবা কে আমার রেস্টুরেন্টে আসতে বলে দে।”
আরাধ্য কে টানতে টানতে নিস্তব্ধ নিজের গাড়িতে নিয়ে বসালো।
আরাধ্য চুপচাপ বসে রইলো। টু শব্দটি করলো না। কিই বা বলার আছে তার।
নিস্তব্ধ ততক্ষণাৎ ফোন লাগালো আরিফুল হকের নম্ববরে।
-” মেয়েকে নিয়ে যেথায় থাকেন না কেন মিস্টারএই মুহুর্তে আমার রেস্টুরেন্টে আসবেন। আই রিপিট
এই মহুর্তে।”
সুজনের পানে তাকিয়ে নিস্তব্ধ শক্ত কন্ঠে বলল,
“সুজন তাসফিকে ওসমান ভিলায় দিয়ে আয়।”
তাসফি প্রতিবাদ করে এগিয়ে এসে উৎকন্ঠা মিশ্রিত কন্ঠে সুধালো,
-” কিন্তু আপনি কোথায় যাচ্ছেন ওকে নিয়ে। আমিও যেতে চাই ডাক্তার সাহেব। আমায় ও নিয়ে চলুন।”
নিস্তব্ধ তাসফির মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বলল,
-” একটা বিশেষ কার্যে যাচ্ছি বউ।তোমায় বাড়ি ফিরে জানাবো।সুজনের সঙ্গে বাড়িতে চলে যাও কেমন।আমায় নিয়ে টেনশন করো না।”
তাসফি অভিমান করে আর যেতে চাইলো না নিস্তব্ধ’র সঙ্গে। চলে এলে বাড়িতে।
সেই অভিমান তার এখনো স্থায়ী।
রাত তখন অনেকটা হয়েছে।
ঘুমানোর তাগিদে তাসফি মাত্রই শুতে যাচ্ছিলো।
বাসন্তী ফোন স্ক্রল করছিলো সেও শুয়ে পড়বে।
তখনি চোখে মুখে তীব্র গাম্ভীর্য নিয়ে রুমে আগমন ঘটলো নিস্তব্ধ’র।
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে কাপড় ঠিক করে সোজা হয়ে বসলো।
নিস্তব্ধ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
-“আপা মা তোকে নিচে ডেকেছে । ”
বাসন্তী চোখ ছোট ছোট করে বলল,
-” সত্যিই ডেকেছে? মিথ্যা বলছিস না তো।”
-” মিথ্যা বলিনা আমি জানিস তুই আপা।”
বাসন্তী বিরবির করে বলল,
-” হ্যাঁ সে তো সেদিনই দেখেছি।আমার ভাই কেমন মিথ্যা বলতে পারে।”
নিস্তব্ধ কথার বিপরীতে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
বাসন্তী কে থামিয়ে তাসফি কিছু বলতে চাইলো।
নিস্তব্ধ আঙুলের ইশারায় তাকে চুপ থাকতে বলল।
তাসফি মুখ কাচুমাচু করে বসে রইলো। করুন চোখে বাসন্তীর দিকে চাইলো।
বাসন্তী তাকে বাঁচাতে বলল,
-” তাসফি তুই ওও আমার সঙ্গে আয়।”
নিস্তব্ধ থমথমে কন্ঠে বলল,
-” তোকে ডেকেছে আপা। ওকে তো ডাকেনি ওও কেন যাবে।”
বাসন্তী একবার তাসফির পানে অসহায় চোখে চেয়ে আর উপায় না পেয়ে একাই বেরিয়ে গেল।
বাসন্তী চলে যেতেই নিস্তব্ধ তাসফির দিকে কদম বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো।
তা দেখে বিছানায় বসে থাকা তাসফি শুষ্ক ঢোক গিললো।আরো জড়োসড়ো হয়ে বসলো।
জিহ্বা সহিত ঠোঁট ভিজিয়ে সুধালো,
-” আপনি আপনার রুমে যান না। আমি আসলে এখন ঘুমাবো তো।যান না।”
তাসফি দীর্ঘ হাম ছাড়ার ভঙ্গিমা করলো।
-” আপনি রুমে গিয়ে ঘুমান কেমন।”
নিস্তব্ধ এগিয়ে আসতে আসতে অদ্ভুত কন্ঠে বলল,
-” ঘুমাবেন। ঘুমাবেন তো অবশ্যই।তবে এখানে নয় তো ম্যাডাম। ঘুমাবেন তবে আমার জিম্মায়।”
-” মা.মা.মানে? ”
নিস্তব্ধ তাসফির একদম গাঁ ঘেঁসে দাঁড়ালো।
-” মানে খুবই সিম্পল। ”
মুহুর্তের মাঝে তাসফি নিজেকে শূন্য আবিষ্কার করলো।
আতঙ্কে চেঁচিয়ে উঠলো সে,
-” কি.কি.কি কি করছেন।”
-” হুশশ।আসতে, চেঁচাচ্ছেন কেন।মানুষ কি বলবে ম্যাডাম।”
তাসফি চোখ পিটপিট করে চাইলো।লোকটার ভাবগতি তার একদম সুবিধার ঠেকছে না।
নিশ্চয়ই কোনো মতলব এটেছে।সে নিশ্চিত।
নিস্তব্ধ তাসফি কে পাঁজা কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
তাসফি মৃদু স্বরে বলল,
-” কোথায় নিচ্ছেন আমায়? আপনাকে তো বললাম ডাক্তার সাহেব আমি ঘুমাবো।”
-” সো হোয়াট? প্রবলেম কিসে, আমিও তো ঘুম পাড়াতেই নিয়ে যাচ্ছি। সঙ্গীহীন ছিলেন, এখন সঙ্গী পাবেন। আপনারই তো লাভ।আপনার আজ সহ প্রতি রাতের ঘুম গুলো এখন থেকে স্পেশাল হবে।আই প্রমিস। স্পেশাল এই নিস্তব্ধ ইয়াসার নিজে করবে। আপনার প্রবলেম কোথায় শুনি? আপনি শুধু দেখবেন। ”
-” মানেটা কি?”
-” আপনি তো ভীষণ বুদ্ধিমতি।মানেটা নাহয় আপনিই বলুন।”
তাসফি ভয়ে শুষ্ক ঢোক গিললো ।
নিস্তব্ধ তাসফিকে রুমে এনে খাটে বসালো।
দরজা বন্ধ করলো।
এই সুযোগে তাসফি একদম বিছানার কোনায় গিয়ে বসে রইলো।
নিস্তব্ধ তা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কি ব্যাপার! এত দূরে গিয়েছেন কেন।পরে যাবেন তো।দেখি কাছে আসুন।”
তাসফি আরো সেঁটে বসলো।
নিস্তব্ধ তার গায়ে জড়ানো কালো টি-শার্ট খুলে ফেললো। নিস্তব্ধ কে উদোম গায়ে দেখে তাসফি চোখ ঘুড়িয়ে নিলো,
-” নির্লজ্জ পুরুষ মানুষ। ”
তাসফির ভাবভঙ্গি দেখে নিস্তব্ধ ভ্রু উঁচিয়ে চাইলো।
পরক্ষণেই ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
তাসফি হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে নিজের বক্ষে এনে ফেললো।
তাসফি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিলো।
নিস্তব্ধ ফিসফিস করে সুধালো,
-” দূরে দূরে কেন থাকছেন বলুন তো।বাড়িতে আসতে বলেছিলাম কি দূরে থাকার তাগিদে? ”
তাসফি মাথা নাড়লো।
-” তবে কেন দূরে দূরে থাকছিলেন? আমার অনুভূতি আপনি বুঝেন না? স্বামী কাছে ডাকলে সঙ্গে সঙ্গে হাজিরা দিতে হয় জানেন না? আপনার একটুখানি ছোঁয়া পেতে এই নিস্তব্ধ ব্যাকুল হয়ে থাকে বুঝেন না?”
তাসফির মাঝে হঠাৎ করেই যেন তীব্র লজ্জায় রাঙা প্রজাপ্রতির দল হানা দিয়েছে। যাতে অবস করে দিয়েছে তার পুরো অঙ্গ।
নিস্তব্ধ আঙুলের সাহায্যে তাসফির মুখখানা উঁচিয়ে দৃঢ় ভাবে চাইলো।
সুধালো,
-” এখনো কেন লজ্জা পাচ্ছেন বলুন তো? অর্ধেক লাজ তো আপনার সেদিন ফার্মহাউসে..
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে নিজ হাতের সাহায্যে নিস্তব্ধ’র মুখ চেপে ধরলো।
কন্ঠে অস্পষ্ট বাব ফুটিয়ে সুধালো।
-” আমি.. আমি এই মুহুর্তে প্রস্তুত নই ডাক্তার সাহেব। ”
নিস্তব্ধ তাসফির তার মুখে চেপে ধরা হাতে চুমু খেল।
তাসফি চোখ বন্ধ করে নিলো।
নিস্তব্ধ প্রেয়সীকে আরো খানিকটা গভীর করে জরিয়ে ধরলো।
কোমরে হাতের বাঁধন গাঢ় করলো।
তাসফির কপালে আদুরে চুমু খেল।তাসফির মাথা নিজ বক্ষে চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,
-” ভয় নেই। আপনার অনুমতি ব্যতীত এই অদমের কিছু করার সাহস আছে কি বলুন?
শুধু এই অবলা প্রাণীর বক্ষে প্রতি রাতে মাথা রেখে তার উষ্ণ হৃদয়টাকে শীতল করুন তাতেই হবে।দূরে থাকবেন না। যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ফল মোটেও ভালো হবে না।”
তাসফি আস্কারা পেয়ে আদুরে ভঙ্গিতে দৃঢ়ভাবে নিস্তব্ধ’র বক্ষে মাথা ঠেকালো। পুরুষটার উদম বক্ষে ঠোঁট ছুঁয়ে লজ্জায় চুপসে গেল।
বুকের মাঝে হৃদযন্ত্রটা যেন বড্ড বেপরোয়া।
উষ্ণ উস্কানি দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
নিস্তব্ধ হৃৎস্পন্দনের ধ্বনি তাসফি মন দিয়ে শুনছে।ভালে লাগছে তার
নিস্তব্ধ ফিসফিসিয়ে বলল,
-” ম্যাডান আপনি কিন্তু আমায় সিডিউস করার চেষ্টা করছেন।কেন উস্কানি দিচ্ছেন হুম।”
তাসফি সঙ্গে সঙ্গে মাথা উঠিয়ে না বোধক মাথা নাড়লো।
নিস্তব্ধ প্রেয়সীর পানে গভীর চোখে চাইলো।
রুমের লাইট অফ।অথচ এখন তাসফি অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে না।
নিস্তব্ধ তাসফিকে পুনরায় বক্ষে টেনে নিলো।
তাসফি কিছু মনে করার ভঙ্গিতে মাথা উঁচিয়ে চাইলো।
অভিমানী কন্ঠে সুধালো,
” আপনি কিন্তু আমায় এখনও বলেন নি ডাক্তার সাহেব কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন আরাধ্য কে। বলেছিলেন রাতে ফিরে বলবেন।”
নিস্তব্ধ ভাবুক স্বরে বলল,
-” ওও আচ্ছা এই কথা বলেছিলাম নাকি।”
তাসফি জোড়ে জোড়ে বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়লো।
নিস্তব্ধ দুষ্টুমি করে বলল,
-” ওকে তবে সকালে বলি কেমন। বড্ড ঘুম পাচ্ছে বুঝলে।”
তাসফি রাগী চোখে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।
ধূসর রংধনু পর্ব ৪৫
-” আপনি এক নম্বারের বদলোক।কোনোদিন ভালো হবেন না। অসভ্য লোক।”
নিস্তব্ধ মৃদু হাসতে লাগলো প্রেয়সীর ছেলেমানুষীপনায়।
-” এই?শুনুন না!”
-“হুমম।”
-” বলুন না প্লিজ।প্লিজ।”