ধূসর রংধনু পর্ব ৫৭ (২)

ধূসর রংধনু পর্ব ৫৭ (২)
মাহিরা ইসলাম

সময়টা রাত্রী ভাগের প্রথম ধাপে।
জব্বার চাঁচার চায়ের দোকানে বসে আছে চার বন্ধু।
সকলের হাতে একটা করে সিগারেট। সকলে নিজেদের নিশ্বাস বন্ধ করে ভেতরে টেনে নিচ্ছে নিকোটিনের ধোঁয়া। খানিকক্ষণ পরেই তা মুখমণ্ডলের ফাঁক ফোকর দিয়ে বের করে দিচ্ছে বাহিরে।
বিষাক্ত ধোঁয়াগুলো মিশে যাচ্ছে বাতাসের সঙ্গে। ফলে দূষিত করে তুলছে সেই নির্ভেজাল বায়ুকে।
সিগারেটে ছাঁইটুকু অ্যাস্ট্রেটে ফেলানোর প্রয়োজন নেই, বেঞ্চের সামনে ফাঁকা থাকা মাটিতেই ফেলা যাচ্ছে তা চমৎকার ভাবে।

জব্বার চাঁচা ওদের দেখে মুচকি হাঁসে আহা কদিন আগেই ছেলেগুলো অবিবাহিত ছিলো।
এখন কেমন সবগুলোর ঘরে এক একজন বউয়ের প্রদিপ জ্বলছে। আহাঃ। কি চমৎকার। সকলের ঘর এখন পরিপূর্ণ। এখন একখানা নাতিপুতি হলেই সম্পূর্ণ। ভাবলেই মনের আনন্দেরা ঝিলমিল করে পাখা মেলে।
বিরাজমান নিরবতা ভেঙে সৃজন আওয়াজ তুললো,
” তৃপ্তির পরিবর্তন সত্যিই প্রশংসনীয়।কি বলিস।”
নিস্তব্ধ, সুজন কেউ কোনো জবাব দিলো না।
মাহীন ওদের খোঁচা দিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” মনব্রত পালন করছিস নাকি তোরা বুঝলাম না।”
সৃজনের কথায় নিস্তব্ধ জবাব দিলো,
” ওর বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না।”
” আমার বোন কে একা রেখে এসে এখানে কি করছিস তুই?”
নিস্তব্ধ’র কথায় মাহীন থতমত খেল,
” যাহ বাবা, এখন আবার এই ব্যাটা তার পিছে কেন পরলো।”
মাহীম মেকি হেঁসে প্রত্যুত্তর করলো,
” কি যে বলিস। তোর বোন কি একা আছে নাকি। তার সঙ্গে মা, পারুল সবাই আছে।”
” উহু তাদের থেকে এখন ওর তোকে প্রয়োজন বেশি।
তাছাড়া মামা ডাক দ্রুত শুনতে চাচ্ছি।ধৈর্যের আর বাঁধ মানছে না বুঝলি।যা বাড়িতে যা।”
মাহীন হতভম্ব চোখে চেয়ে রইলো।

” আর ইউ সিরিয়াস ভাই?”
সুজন আর সৃজন মিটিমিটি হাসছে।
নিস্তব্ধ গম্ভীর কন্ঠে বলল,
” এখানে সিরিয়াস না হওয়ার তো কোনো কারণ দেখছি না।আমার বউ পিচ্চি হতে পারে কিন্তু তোর বউ তো পিচ্চি নয়।তাই না?”
” ভাই ওও তোর বোন হয়, একটু তো থাম।”
” উহু কোনো থামাথামির নাম নেই মামা ডাক শুনতে চাই দ্রুত।আমার বোন তোর বউ।সো বাড়িতে যা।”
মাহীন আর একটা কথারও জবাব দিলো না।
” বন্ধু তার নিরামিষ থেকে এমন আমিষ হয়েছে বর্তমানে তার মুখে আর কিছুই আটকাচ্ছে না।তাসফি বোন তুই কি জাদু করলি,তার ফল এখন আমাদের ভুগতে হচ্ছে। আহারে জীবন।”
সুজন বলে উঠলো,

” হ্যাঁ তাই তো সঙ্গে আমরাও একটু নাহয় চাঁচা, মামা ডাক শুনে ফেললাম কি বলিস সৃজন।ক্ষতি নেই তো। সৃজনের মেয়ের থেকে তো শুনছি।আরো একটার থেকে নাহয় শুনলাম।”
মাহীন সুযোগ পেয়ে সুজনের কাঁধ শক্ত করে চেপে ধরে তীর্যক কন্ঠে বলল,
” হ্যাঁ তাই তো, তাই তো।একদম ঠিক বলেছ বন্ধু। তবে তুমিও ফিল্ডে নেমে পড়ো কেমন।তুমি শুধু একা কেন মামা,চাঁচা ডাক শুনবে হুম? আমাদেরও একটু শোনাও আমরাও একটু শুনি। সঙ্গে নিজেও একটু বাবা ডাক শুনো।কি বলিস তোরা।”
নিস্তব্ধ আর সৃজন শয়তানি হেঁসে সায় দিলো।
সুজন শুষ্ক ঢোক গিললো।

আশার কাছে পৌঁছাবে কি করে সে। এখন পর্যন্ত ঠোঁটে একটু চুমু খাওয়ার সুযোগ পেল না।
আর তো বাবা ডাক। সে ডাক বোধহয় শোনার অপেক্ষা করতে করতে তার বোধহয় বছর পেরিয়ে যাবে।
নাকি উপর ওয়ালা তার জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা করে রেখেছে কে জানে।
কথার মাঝেই সুজনের ফোনে কল এসেছে।আশার ফোন।
সুজন দূরে যেতে নিতেই মাহীন তার হাত টেনে ধরে বসিয়ে দিলো।
শুধু তাকে পঁচানো হুম। এবার সে পচাবে।

” আহাঃ কোথায় যাচ্ছো চাদু এদিকে এসো এখানেই বসে কথা বলো।
আচ্ছা এই যে আমরা কানে হাত দিচ্ছি দেখ।”
বন্ধুদের দিকে সুজন করুণ চোখে চেয়ে ফোন রিসিভ করলো।
” কোথায় আছেন? কখন আসবেন।”
ওপাশে আশার কথার জবাবে সুজন প্রত্যুত্তর করলো,
” একটু পরেই। কেন?”
মাহীন ওর কানে ফিসফিস করে বলল,
” বুঝো না কেন বন্ধু? বউ বাড়িতে ফোন করে কেন ডাকে বুঝো না,চুপিচুপি প্রেম ভালোবাসা দেখাতে বুঝলা।”
সুজন চোখ গরম করে চাইলো।
মাহীম মুখে হাত দিলো।”
আশা জবাব দিলো,

” আশার সময় মায়ের জন্য একটু সাবুদানা কিনে নিয়ে আসতে পারবেন? কাল আমার ক্লাস নেই আমি বের হতে পারবোনা।
তাছাড়া এত কষ্ট করার কি দরকার বলুন,তার জন্য তো আপনি আছেনই। ”
বলেই আশা হাঁসলো।
” আচ্ছা আনবো।”
বলেই সুজন কোনো রকমে তড়িঘড়ি করে ফোনটা কাটলো।
উফফ বজ্জাত মেয়ে বন্ধুদের সামনে তার পেস্টিস এখনই পাঞ্চার করে দিচ্ছেলো।
ফোনে এভাবে কেউ বলে।
মাহীন আর সৃজন ড্যাবড্যাব করে সুজনের দিকে চেয়ে আছে।
নিস্তব্ধ’র এদিকে মন নেই।
সে ফোনে কাউকে মেসেজ করতে ব্যস্ত।
তার মুখাবয়বে ফুটে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে এক টুকরো সুখের হাসি।
সৃজন তাকে ধাকা দিলো।সুধালো,

” আরে ব্যাটা কি করছিস বলতো ফোনে? আমাদের সিজন বাবু কে দেখ। ব্যাটা মনে হয় বউয়ের কাছে বিড়াল সেজে আছে। আদ্যত্বেও আমরা মামা ডাক শুনবো তো।”
নিস্তব্ধ মুচকি হেঁসে কথার প্রত্যুত্তর করলো।
” সৃজন বউয়ের কাছে বেড়াল সেঁজে আছে তুই কেমন করে জানলি? আর তাছাড়া যদি হয়েও থাকে তবে ঘরের গিন্নির কাছে সামান্য মাথা নত করা দোষের কোনো কাজ নয়।
ঘর টাকে সামলে রাখে তো সেই।সঙ্গে আমাদের কত খেয়াল রাখে। স্বামী – স্ত্রীর মাঝে ভয়ডরের সম্পর্ক কেন গড়ে উঠবে বলতো? বরং তাদের মাঝে বজায় থাকা উচিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আবার শুধু বন্ধু্ত্ব হলেও সম্পর্ক টা পরিপূর্ণ হবে না।

সঙ্গে দরকার একের অপরকে সম্মান করা, বিশ্বাস করা।তোর মাঝে এগুলো যখন চলে আসবে দেখবি ভালোবাসা তখন এমনিতেই চলে আসবে।
তখন একটা কেন হাজারটা বাচ্চা কাঁচা হবে।ঘরে রাখারই জায়গা হবে না।
এই আমাকেই দেখ না। তাসফিকে প্রথম থেকেই ভালোবেসে বসে আছি। কিন্তু নিজের ইগোর জন্য সেটা বুঝতে কতটা সময় লেগে গেল।
কত অঘটনের, কাহিনির সম্মুখীন হতে হলো।
এই জন্যই বলে ইগো তুমি বাইরে দেখাও ব্যাটা। ঘরের গিন্নির কাছে গিয়ে মোটেও তা দেখিও না। কারণ দিন শেষে তার নিড়েই তোমার ফিরতে হবে।
তার কোলে বা বক্ষমাঝে মাথা রেখেই তোমার শান্তির ঘুম ঘুমাতে হবে।
বউ, মা, কিংবা বোন।এদের কাছে নিজেদের ইগো কে রাখো দশহাত দূরে।
গম্ভীরতা যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু করো আয়োজন।”

সৃজন, মাহীন, সুজন নিস্তব্ধ’র কথা শেষে চার জনেই মুচকি হাঁসলো।
নিস্তব্ধ’র কথায় জব্বার আমার হৃদয় ওও শীতল হলো।
নিস্তব্ধ’র প্রতি তার হৃদয় আবারো আপ্লুত হলো
এই জন্যই তো এই ছেলেটাকেই তার বেশি ভালো লাগে।
কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে।
নিস্তব্ধ ওসমান ভিলায় পৌঁছে নিজের রুমে প্রবেশ করতেই তাসফি দৌঁড়ে এসে নিস্তব্ধ’র গলা জরিয়ে ধরলো।
আদুরে স্বরে বলল,

” এত দেরী করলেন কেন? কখন মেসেজ দিয়েছি।”
” কথা বলতে বলতেই দেরী হয়ে গেল বা,বা।”
তাসফি নিস্তব্ধ’র মুখে কাছে নাক নিয়ে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে তীক্ষ্ম চোখে চেয়ে সুধালো,
” এই আপনি স্মোক করেছেন তাই না?”
নিস্তব্ধ শুষ্ক ঢোক গিললো।
এই রে বউ তার ধরে ফেলেছে।
নিস্তব্ধ লোকালো না।সত্যি টাই স্বীকার করলো।
মেয়ে মানুষের থেকে কথা লুকানো মানেই ঝামেলা।
বরং সত্যিটা বললে কিছুক্ষণ হুমবি তুমবি করলেও পরক্ষণে একটু আদরেই গলে জল হয়ে যায়।
বরং লুকালেই রেগে লাল হয়ে যায়।
” বিশ্বাস করো জান একটা খেয়েছি মাত্র। আচ্ছা তুমি বলো আমি কি স্মোক করি? মাঝে মাঝে তো মাত্র। ”
নিস্তব্ধ টুপ করে তাসফির এগিয়ে রাখা ঠোঁটে চুমু খেল।
তাসফি বিরক্তিকর স্বরে বলল,

” ইয়াক ছিঃ।যান ব্রাশ করে আসুন খাইষ্টা লোক। ফ্রেস হয়ে আসুন।ডাক্তার মানুষ যে এতটা পিচাশ হয় আমি আগে জানতাম না।”
নিস্তব্ধ তাসফিকে কোলে তুলতে তুলতে ফিসফিস করে সুধালো,
” উহু তা তা তো হবে না সুইটহার্ট। এবারে এই খাইষ্টা লোকের মাঝেই আপনি নিজেকে বিলীন করবেন।”
তাসফি আঁতকে উঠলো।
” এই না শুনুন। সম্ভব নয় এখন। শুনুন। হবে না। কিছুতেই সম্ভব নয়। আপনাকে আমার কিছু বলার আছে।তাই তো দ্রুত আসতে বললাম।”
নিস্তব্ধ প্রেয়সীর ভয়ার্ত মুখের পানে ভ্রু কুঁচকে চাইলো।
তাসফিকে খাটে বসে সে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসলো।
” কি ব্যাপার বলোতো? শরীর খারাপ তোমার?”
তাসফি মাথা নাড়লো।
নিস্তব্ধ চোখে মুখে হাত ঠেকিয়ে দেখলো।

” এই জ্বর টর এলো নাকি?”
তাসফি তাও মাথা নাড়লো।
নিস্তব্ধ এবারে রেগে গেল।
” আরে বাবা তবে বলবে তো কি হয়েছে।এভাবে ভাবনায় রাখলে ভাল্লাগে? ”
তাসফি ছোট্ট বাচ্চাদের মতো লজ্জায় দু হাতে মুখ ঢাকলো।
নিস্তব্ধ জোড় করে তার মুখ থেকে টেনে হাত সরালো।
” আহাঃ কি মুশকিল। আপনি কি এখন আমায় ঠিকমতো একটু লজ্জা পেতেও দেবেন না?”
নিস্তব্ধ শুষ্ক ঢোক গিললো। বউয়ের মতিগতি তার ঠিক লাগছে না। অজানা আশঙ্কার উত্তেজনায় তার বুক সামান্য কাঁপছে বোধহয়।

” না আগে আমায় সবটা ক্লিয়ার করো তারপর লজ্জা পেয়ো।”
” দুর আপনি বুঝতে পারছেন না। কদিন পর মা হলে তো এত লজ্জা পেতে পারবো না। এখন একটু পেয়ে রাখি।”
বলেই তাসফি জ্বিহ্বায় কাপড় দিলো।
নিস্তব্ধ’র মাথায় যেন বর্জপাত হলো।
মন চাইছে ইহা সত্য না হোক।
থতমত খেয়ে বলল,

” মা..মানে? কি বলছো? মাথা ঠিক আছে।”
তাসফি মুচকি হেঁসে নিস্তব্ধ কাঁধ জরিয়ে তার কানে কানে ধীর সরে সুধালো,
” ডাক্তার সাহেব, আপনার কার্বন কপি আসতে চলেছে।আই’ম প্রেগনেন্ট। আর ইউ রেডি মিস্টার হাসবেন্ড। ”
নিস্তব্ধ কানে যেন বর্জ্যপাত হলো ধুম করে।
তার এখন দুঃখ পাওয়া উচিত নাকি খুশি হওয়া উচিত এই মুহুর্তে তার অনুভূতি বোঝানো দায়।
খানিকক্ষণ আগেই সে বন্ধুদের বলে এলো তার বউ পিচ্চি, আর এখন সেই কিনা সেই….
নিস্তব্ধ করুণ কন্ঠে বলল,

” পিল খাইয়ে ছিলাম জান। কি করে সম্ভব হলো?”
” আমি কি জানি? আপনার দুই টাকার পিল কাজ না করলে আমার কি।”
তাসফি চরম মিথ্যা কথা বলল,
” আসল কথা হচ্ছে সে ইচ্ছে করেই ওষুধ খায় নি।”
” তোমার শরীরের কন্ডিশন এই মুহুর্তে বেবী ক্যারি করতে প্রস্তুত নয় বউ। অসুস্থ হয়ে পড়বে তুমি।বোঝার চেষ্টা চেষ্টা করো।”

” কি যে বলেন না। আমার বয়স একদম পার্ফেক্ট এইটটিন প্লাস, কিছুদিন পরেই নাইনটিন হবে। ওয়েট ফিফটি প্লাস, প্রেসার ওও একদম ঠিকঠাক।আর আপনি বলছেন প্রস্তুত নয়। আর এখন এসব বলেও লাভ নেই বুঝেছেন। আমাদের সন্টু সোনা এখন আমার পেটের ভেতর।”
তাসফি তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলল,
” এই আপনি আমায় কি বোঝার কথা বললেন? কোনো ভানে আবার.,
নিস্তব্ধ তাসফির মুখ চেপে ধরলো।
প্রেয়সীর পেটে মুখ গুঁজে ফিসফিস করে বলল,
” হুশশ আর একটা কথাও নয়। কিচ্ছু করতে হবে না। আমাদের সোনামনি দুনিয়ায় আসবে।এই রঙিন জগতে আলো দেখবে।”

” এই সোনামনি কেন বলছেন? সোনা বাবু বলুন
ইয়া খোদা আমার দোয়া তুমি কবুল করো।”
নিস্তব্ধ মুচকি হাঁসলো। সত্যিই বাবা হওয়ার আলাদা একটা অনুভূতি। সবাই তা উপলব্ধি করতে পারে না।
তাই তো এখনো সমাজে কেউ কেউ নিজের অবৈধ, জারজ সন্তানকে ফেলে দিয়ে আসে পঁচা নর্দমার মাঝে।
আহাঃ জীবন।এতই তুচ্ছ বুঝি একটা জীবনের মূল্য মানুষের বিবেকের কাছে?
সুজন বাড়ি ফিরলো সাবু দানা হাতে।
ড্রয়িংরুমে তা রেখে উপরে উঠে গেল নিজের রুমে।
বাইরে কেমন ঝড় হাওয়া দিচ্ছে।
বিদ্যুৎ নেই নাকি।ঘরটা এমন অন্ধকার কেন।

বেলকনি থেকে বাইরের ল্যাম্পোস্টের আলোর একটু খানি পরশ দেখা যাচ্ছে।
একি ইতোমধ্যে তো বৃষ্টি ফোঁটাও পরতে আরম্ভ করেছে।
তার বেলকনিতে কোনো সুন্দরী রমণী সেই বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে মেখে খিলখিল করে হাঁসছে। হ্যাঁ সেই রমণী তার প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনী।
সুজন মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় এগিয়ে গেল সেদিকে।
কানের কাছে বেঁজে চলেছে তার মধূর শ্রতি।
” ভালোবাসি, ভালোবাসি,ভালোবাসি, ভালোবাসি, সুজন তোমার একান্ত রমণীকে জরিয়ে ধরে গিয়ে বলো ভালোবাসি।”
সুজন বোধহয় বাতাসের সেই ফিসফিসানো ধ্বনি শুনতে পাচ্ছে।
সত্যিই সুজন তাই করলো।ধীর কদমে এগিয়ে সে তার একান্ত রমণীর কোমর জাপ্টে ধরলো।
কাঁধে মুখ ঘষলো।
মুখে উচ্চারণ করলো শুধু একটিই বুলি,

” ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।”
পুরুষালী স্পর্শে কেঁপে উঠলো রমণী।
সঙ্গে ভালোবাসির ধ্বনিতে হৃদযন্ত্রের লাভডাব হলো তার দ্রুত থেকে দ্রুততর।
বক্ষমাঝে চলছে শ্বাস টানার নিদারুণ প্রতিযোগিতা।
সুজনের অবাধ্য হাতের বিচরণে কন্ঠে রোধ হয়ে এসেছে তার।
কোনো মতে কন্ঠ টেনে সুধালো,
” কি..কি করছেন।”
” হুঁশশ।”

সুজন আশার কম্পন’রত শরীরটাকে হাতের সাহায্য সামনে ঘুরালো। তার ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাঁপছে।
সুজন আর ধৈর্য্য ধরতে পারলো না।
গভীর চুম্বন করলো সেই কম্পন’রত ওষ্ঠে।
আশা ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠলো।
হাত দিয়ে ঠেলে সরাতে চেষ্টা করে বলল,
” হুঁশ আছে আপনার কি করছেন। ”
কাজে বাধা দেওয়ায় সুজনের মেজাজ বিগড়ে গেল। আশার মুখ চেপে ধরে বলল
” দূর বা** সব সময় বড্ড বেশি কথা বলো মেয়ে।
বলেছিনা ভালোবাসি। শুনতে পাও নি। কতভাবে বোঝাবো আর? আমার চোখের চাউনি বুঝো না?
সে তোমাকে চায়। নিজের অস্তিত্বের সঙ্গে মেশাতে চায়।”
আশা শুষ্ক ঢোক গিললো।

ধূসর রংধনু পর্ব ৫৭

কেন বুঝবেনা সে। সে সব বুঝতেই পারছে।
তবে মনের মাঝে যে ভয়। সেটা সে কটাবে কেমন কর।
সুজন আশাকে কোলে তুলতে তুলতে বলল,
” কথা বলবে না। ভয় নেই আমি আছি তো।”
আশার উদ্ধিগ্ন হৃদয় শীতল হলো এই একটা বাক্যের বিপরীতে।
ভালোবাসা-বাসির রাতে।
সুজন মাঝি ও তার পাখির বাঁসার ভালোবাসা সকলভাবে পূর্ণতা পেল এই লগ্নে এই ক্ষণে।

ধূসর রংধনু শেষ পর্ব